যুক্তরাষ্ট্র-চীন
চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধবিরতি আরও ৯০ দিন বাড়ালেন ট্রাম্প
চীনের ওপর পাল্টাপাল্টি শুল্কারোপসহ অন্যান্য বাণিজ্যনীতি কার্যকর করার দিনক্ষণ আরও ৯০ দিনের জন্য পিছিয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পক্ষান্তরে একই ধরনের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে চীনও। এতে করে বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতির মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ কিছুদিনের জন্য হলেও বিরতি পেয়েছে।
স্থানীয় সময় সোমবার (১১ আগস্ট) ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে এ তথ্য জানান ট্রাম্প।
পোস্টে তিনি জানান, বাণিজ্য যুদ্ধবিরতি ৯০ দিন বাড়িয়ে একটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন তিনি। তবে এটি ছাড়া চুক্তির অন্যান্য বিষয় অপরিবর্তিত রয়েছে।
বেইজিং থেকেও বাণিজ্য যুদ্ধবিরতির সময় বাড়ানোর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
এর ফলে চীনা পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত ৩০ শতাংশ শুল্কই বহাল থাকছে। মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) বাণিজ্য যুদ্ধবিরতির আগের সময়সীমা শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে তার আগেই সময় বাড়িয়ে নতুন নির্বাহী আদেশে সই করলেন ট্রাম্প। ফলে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের মধ্যে পাল্টাপাল্টি শুল্কারোপের পরিস্থিতি আপাতত হচ্ছে না।
এই সময়ের মধ্যে দুই দেশই নিজেদের মধ্যকার মতপার্থক্যের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার সুযোগ পেল। এর মাধ্যমে এ বছরের শেষের দিকে ট্রাম্প ও শি জিনপিংয়ের মধ্যে এক শীর্ষ বৈঠকের পথও সুগম হতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকদের অনেকে।
এদিকে, নতুন এই সিদ্ধান্তে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন দুই দেশের মধ্যে ব্যবসায় পরিচালনাকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
চীন-যুক্তরাষ্ট্র ব্যবসায় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট শন স্টেইন বলেছেন, এই সময়সীমা বৃদ্ধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এতে দুই দেশের সরকার একটি বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে আলোচনা করার সময় পাবে।
দেশদুটির মধ্যে চুক্তি হলে তা চীনা বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের আশানুরূপ প্রবেশাধিকার বাড়াবে। সেইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলোকে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করার জন্য প্রয়োজনীয় নিশ্চয়তা দেবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
আরও পড়ুন: সবে তো শুরু, আরও দেখতে পাবেন: শুল্কারোপ নিয়ে ট্রাম্প
ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফেরার পরই চীনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের খড়গ নেমে আসে। এর জবাবে চীনও পাল্টা শুল্ক আরোপ করে। বিশেষত চীনের কাছে বিরল খনিজ ও চুম্বক থাকায় তারা একে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে।
চলতি বছরের মে মাসে চীনা পণ্যে ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্কারোপ করেন ট্রাম্প। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে ১২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করে চীন।
দীর্ঘমেয়াদে এই শুল্ক সংঘাত কোনো দেশের জন্যই সুখকর হতো না বলে সতর্ক করে আসছিলেন বিশেষজ্ঞরা। এরপর মে মাসে জেনেভায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে শুল্ক কমিয়ে আনতে সম্মত হয় দুই দেশ। তাতে চীনা পণ্যে শুল্কহার কমিয়ে ৩০ শতাংশ নির্ধারণ করে যুক্তরাষ্ট্র, আর ১০ শতাংশে নামিয়ে আনে চীন।
পরে জুন মাসে উত্তেজনা প্রশমনে একটি চুক্তিতে পৌঁছায় চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। ওই সময় কম্পিউটার চিপ প্রযুক্তি ও পেট্রোকেমিক্যাল উৎপাদনে ব্যবহৃত ইথেনের ওপর রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা শিথিলের ঘোষণা দেয় ওয়াশিংটন। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর জন্য বিরল খনিজ পাওয়ার পথ সহজ করতে রাজি হয় বেইজিং।
তবে ওয়াশিংটন ও বেইজিং বড় কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারবে কি না, তা এখনো অনিশ্চিত। বিভিন্ন বিষয়ে দেশদুটির মধ্যে মতপার্থক্য রয়েই গেছে।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন না করলে কম্পিউটার চিপে ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের
আর্নল্ড অ্যান্ড পোর্টারের জ্যেষ্ঠ পর্ষদ ও যুক্তরাষ্ট্রেও চীন-বিষয়ক সাবেক মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির সহকারী ক্লেয়ার রিড বলেন, দেশদুটির মধ্যে সীমিত আকারে একটি চুক্তি হতে পারে। যেমন চীন বলবে যে তারা আরও বেশি আমেরিকান সয়াবিন কিনবে, ফেন্টানিল তৈরিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক প্রবাহ বন্ধে আরও পদক্ষেপ নেবে এবং বিরল খনিজ চুম্বকের প্রবাহ অব্যাহত রাখবে।
তবে কঠিন বিষয়গুলো থেকে যাবে এবং বাণিজ্যযুদ্ধ আগামী বহু বছর ধরে ধীরে ধীরে চলতে থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক মার্কিন কূটনীতিক ও বাণিজ্য কর্মকর্তা এবং বর্তমানে ‘চায়না মুন স্ট্র্যাটেজিস’ পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রধান জেফ মুন।
১১৪ দিন আগে