স্বাস্থ্যখাতের সংস্কার আন্দোলন
স্বাস্থ্যখাতের সংস্কার দাবিতে বরিশালে ফের ছাত্রজনতার বিক্ষোভ, চিকিৎসকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার
স্বাস্থ্যখাতের সংস্কার দাবিতে সোমবার (১৮ আগস্ট) দুপুরে দুই ঘণ্টা বরিশাল জেলা প্রশাসক (ডিসি) কার্যালয়ের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে ছাত্রজনতা। সড়ক অবরোধ করায় জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়।
বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম) চিকিৎসকসহ কয়েকজনের হামলার ঘটনায় জড়িতদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার না হলে আবারও ধর্মঘটের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
সোমবার (১৮ আগস্ট) বেলা ১১টায় শেবাচিম হাসপাতালে সংবাদ সম্মেলন করে এই দাবি জানান, অন্যথায় লাগাতার ধর্মঘটের হুঁশিয়ারি দেয় চিকিৎসকরা। এর আগে রবিবার দুপুর ৩টা থেকে কর্মবিরতিতে যান চিকিৎসকরা।
আন্দোলনরত ছাত্রজনতা দুপুর ১২টার দিকে নগরীর অশ্বিনী কুমার হলের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে যায়। সেখানে গিয়ে সামনের সড়ক অবরোধ করে দুপুর ২টা পর্যন্ত বিক্ষোভ করে।
এ সময় তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে সারা দেশের সরকারি হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা দূর, রোগী হয়রানি ও স্বাস্থ্যখাতের সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ার দাবি জানায়। পাশাপাশি আন্দোলনরত ছাত্রজনতার উপর হামলার ঘটনার দ্রুত বিচার দাবি করেন।
হাসপাতালের মিড লেভেল ডক্টরস অ্যাসিসেয়শনের সভাপতি ডা. শাখাওয়াত হোসেন সৈকত বলেন, তারা কাজে ফিরে গেছে। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার না করা হলে আবার ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হবে।
বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, হাসপাতালের পরিবেশ স্বাভাবিক রয়েছে। হাসপাতাল এলাকা পুলিশের নজরদারিতে রয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এর আগে ২২ দিন ধরে চলা আন্দোলনের মধ্যে গত সোমবার (১১ আগস্ট) শেবাচিম হাসপাতালের জরুরি গেটে আমরণ অনশনে বসেন কয়েক শিক্ষার্থী। বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়ে অনশন থেকে তুলে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।
এ ঘটনায় দুই পক্ষের একাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে দাবি করা হয়। এরপর শেবাচিম হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার কোতোয়ালি মডেল থানায় বৃহস্পতিবার রাতে ৪২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়।
এরপর রবিবার শেবাচিম হাসপাতালের কর্মকর্তা কর্মচারীরা নিরাপদ কর্মস্থলের দাবিতে আন্দোলনে নামে। একই সময় ছাত্রজনতা শেবাচিমের প্রধান গেটে অবস্থানকালে দুইপক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তখন ছাত্রজনতার ছোড়া ইটে চিকিৎসকসহ কয়েকজন আহত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠে।
এরপর রবিবার দুপুর থেকে হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ডাক দিয়ে জড়িতদের বিচার দাবিতে হুঁশিয়ারি দেয়। চলমান এই আন্দোলনের নেতৃত্বে রয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কয়েকজন নেতা।
১১০ দিন আগে
স্বাস্থ্যখাতের সংস্কার দাবিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও, পুলিশের ধাওয়া
স্বাস্থ্যখাতসহ শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের সংস্কারের তিন দফা দাবিতে বরিশালে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল শেষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করেছে ছাত্রজনতা। এর আগে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দেয় পুলিশ।
রবিবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে বরিশাল নগরীতে এই কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনকারীরা। এর আগে তারা শেবাচিম হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভ করতে গেলে বাইরে থাকা আন্দোলনকারীরা হাসপাতালের ভিতরে থাকা কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দেয় পুলিশ।
এরপর আন্দোলনকারীরা সেখান থেকে সরে গিয়ে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয় ঘেরাও করে এবং বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। জেলা প্রশাসকের একজন প্রতিনিধি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলতে রুমে ডাকেন। এ সময় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রধান ফটক আটকে দেওয়া হয়। গেট আটকে দেওয়ায় আন্দোলনের সংগঠক মহিউদ্দিন রনিসহ অন্যরা মনক্ষুন্ন হয়ে ফিরে যান।
দেশের সব সরকারি হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা দূর, রোগীদের হয়রানি বন্ধ এবং স্বাস্থ্যখাতের সিন্ডিকেট ভাঙার দাবিতে ২০ দিন ধরে এই আন্দোলন চলছে। ছাত্রজনতার ব্যানারে এই কর্মসূচি হলেও আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্রআন্দোলনের কয়েকজন সাবেক নেতা।
অভিযোগ রয়েছে, আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শেবাচিম হাসপাতালের প্রধান গেট আটকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অবস্থান নিয়েছে। হাসপাতালের অভ্যন্তরে বেশ কয়েকজনকে মুখে মাস্ক পরে হাতে লাঠি নিয়ে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে। এতে রোগীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে এবং স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
পড়ুন: লালবাগে সংঘবদ্ধ পিটুনিতে যুবক নিহত
স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের আন্দোলনকারীরা বলেন, শেবাচিম হাসপাতালের সামনে অনশনে বসা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা হয়েছে। উল্টো থানায় মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ঠেকাতে নানান ষড়যন্ত্র হচ্ছে, কিন্তু এসব কর্মকাণ্ড দিয়ে আন্দোলন থামানো যাবে না।
অন্যদিকে হাসপাতালের কর্মচারীরা অভিযোগ করেছেন, আন্দোলনের নামে সহকর্মীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে এবং স্বাভাবিক কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে। তাই তারা নিরাপত্তার দাবি জানিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, হাসপাতালসহ নগরীর কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
১১১ দিন আগে
বরিশালে মহিউদ্দিন রনি ও কাফিসহ ৪২ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ
বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম) চিকিৎসক নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মানববন্ধন কর্মসূচিতে হামলার অভিযোগে স্বাস্থ্যখাতের সংস্কার আন্দোলনের সংগঠক ছাত্র মহিউদ্দির রনি ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর কাফিসহ ৪২ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) গভীর রাতে হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার জুয়েল চন্দ্র শীল বাদী হয়ে কোতয়ালী মডেল থানায় এ অভিযোগ করেন। শুক্রবার বিকাল পৌঁনে চারটার দিকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, অভিযোগে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ৩০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
অভিযুক্তরা হলেন— আন্দোলনের প্রধান নেতা মহিউদ্দিন রনি (৩০), রাকিন (২৫), সুনান (২৪), সিফাত (২৩), শামিম (২৫), আল মুসা (২৬), বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেত্রী সিফা (২২), হাসপাতালে অনশন করে অসুস্থ হয়ে পড়া শিক্ষার্থী দাইয়ান (২১), কনটেন্ট ক্রিয়েটর কাফি (৩০), এইচ এম আবুল খায়ের (৫০), হাসপাতালের দালাল নুরুন নাহার (৪০) ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর মো. সিয়াম ওরফে ন্যাভাই (৩৮)।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, বৃহস্পতিবার (১৪ আগষ্ট) বেলা সাড়ে ১১টায় শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের সুষ্ঠু কর্ম পরিবেশের দাবিতে হাসপাতালের গেটের সামনে চিকিৎসক, নার্স এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।
এ সময় অভিযুক্তরা চাপাতি, লোহার রড, এসএস পাইপ, হকিস্টিক, লাঠি-সোটাসহ দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে চিকিৎসক, নার্স এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর অতর্কিত হামলা করে। এর মধ্যে মহিউদ্দিন রনি লোহার রড দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে পরিচ্ছন্নতা কর্মী রফিকুল পাটোয়ারী মাথায় আঘাত করে রক্তাক্ত জখম করে।
এ ছাড়া মামলায় ২-১১ নম্বরসহ অজ্ঞাত অভিযুক্তরা হত্যার উদ্দেশ্য হাতে থাকা চাপাতি, লোহার রড, এসএস পাইপ, হকিস্টিক, লাঠি দিয়ে এলোপাথারি আঘাত করে। এতে অফিস সহায়ক পারভেজের ডান হাতে, আয়া সেলিনার ডান হাতের কনুর উপরীভাগে, অফিস সহায়ক রাব্বির বাম হাতের কব্জিতে এবং পরিচ্ছন্নতা কর্মী শামীসের ডান হাতে হাড় ভাঙা জখম হয়।
এ ছাড়াও তাদের হামলায় পরিচ্ছন্নতা কর্মী হাসান, সাকিব, জাকারিয়া রুবেল, অফিস সহায়ক ফয়সাল রাব্বি, আয়া সুমরত মন্ডল, লিফট অপারেটর শাকিলসহ মানবন্ধনে অংশ নেয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আহত হন। এমনকি কর্মসূচিতে অংশ নেয়া নারী নার্স ও আয়াদের সেলোয়ার-কামিজ ছিড়ে শ্রীলতাহানী ঘটানো হয় বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।
এই সময় পথচারী ও স্থানীয় লোকজন এসে অভিযুক্তদের কবল থেকে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্ধার করে। পরবর্তীতে ওই স্থানে পুনরায় মানববন্ধন করলে তাদের খুন-জখমের হুমকি দিয়ে অভিযুক্তরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এরপর আহত ১১ জন কর্মচারীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করানো হয়।
এ বিষয়ে কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, হাসপাতালের কর্মচারীদের ওপর হামলার ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে এ বিষয়ে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এর আগে কর্মচারীদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ৷ উপপরিচালক ডা. এসএম মনিরুজ্জামান শাহীনকে প্রধান করে গঠিত কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম মশিউল মুনীর।
অপরদিকে ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার বিকেলে হামলার ঘটনা নিয়ে সদর রোড অশ্বিনী কুমার হল চত্বরে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেন স্বাস্থ্যখাত সংস্কার আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া মহিউদ্দির রনি।
তিনি অভিযোগ করেন হাসপাতালের কর্মচারীরা তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন, শান্তিপূর্ণ অনশন কর্মসূচিতে হামলা করেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের উস্কানিতে এ হামলার ঘটনায় তাদের অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। এরপরও স্বাস্থ্যখাতে সংস্কার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন মহিউদ্দিন রনি।
১১২ দিন আগে