ক্রেডিট কার্ড
ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন বহির্ভূত চার্জ নয়: বাংলাদেশ ব্যাংক
ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন বহির্ভূত কোনো চার্জ আরোপ না করতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
লেনদেন বহির্ভূত চার্জ বাকি থাকার কারণে যেসব গ্রাহককে খেলাপির তালিকা ভুক্ত করা হয়েছে তাদের নাম সংশোধন করতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
মঙ্গলবার এ বিষয়ে নির্দেশনা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কিছু ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন বহির্ভূত চার্জ আরোপ করে আসছে।
এর আগে ২০২০ সালের অক্টোবরে, বাংলাদেশ ব্যাংক ক্রেডিট কার্ডের জন্য সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ সুদের হার নির্ধারণ করেছিল। এরপরও ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কাছ থেকে বিভিন্ন উপায়ে চার্জ আদায় করে আসছিল। এটি বন্ধ করতে নতুন এ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ব্যাংক কর্মকর্তা, কর্মচারীদের টিকা সনদ থাকতে হবে: বাংলাদেশ ব্যাংক
নির্দেশনা অনুযায়ী, ক্রেডিট কার্ড চালু হওয়ার আগে ব্যাংকগুলো বিভিন্ন চার্জ (বার্ষিক ফি, সিআইবি ফি, এসএমএস চার্জ) আরোপ করছে। এসব চার্জ পরিশোধ না করলে গ্রাহকদের খেলাপি হিসেবে শ্রেণিকরণ করা হচ্ছে।
ফলে ক্রেডিট কার্ড নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ক্রেডিট কার্ড চালু হওয়ার আগে গ্রাহকের কাছ থেকে কোনো লেনদেন বহির্ভূত চার্জ নেয়া যাবে না।
গ্রাহকের সম্মতির ভিত্তিতে ক্রেডিট কার্ড সক্রিয় হওয়ার পরে এ ধরনের চার্জ আরোপ করা যেতে পারে।
তবে সক্রিয় ক্রেডিট কার্ডে গ্রাহকের লেনদেন (কেনাকাটা, নগদ উত্তোলন বা অন্য কোনো ধরনের বাণিজ্যিক লেনদেন) সংক্রান্ত কোনো দায় না থাকলে অপরিশোধিত বা বিলম্বে পরিশোধজনিত কারণে লেনদেন বহির্ভূত ফি বা চার্জের অতিরিক্ত কোনোরূপ জরিমানা আরোপ করা যাবে না।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন পেতে যাচ্ছে সাকিবের পিপলস ব্যাংক
লেনদেন বহির্ভূত চার্জের ওপর কোনো অবস্থাতেই সুদ বা মুনাফা আরোপ করা যাবে না। লেনদেন বহির্ভূত চার্জ সংক্রান্ত অপরিশোধিত দায়ের জন্য গ্রাহককে খেলাপি করা যাবে না।
তবে গ্রাহকের ক্রেডিট কার্ডের লেনদেনের দায় সময় মতো পরিশোধ না করা হলে ঋণের শ্রেণিবিন্যাসের নীতি অনুসরণ করে তিনি খেলাপি হতে পারেন।
ক্রেডিট কার্ড কীভাবে করবেন
ব্যাংক কর্তৃক জারি করা প্লাস্টিকের পাতলা আয়তক্ষেত্রাকার কার্ড বা এক কথায় ক্রেডিট কার্ড এর ধারকদের যে কোন পণ্য ও পরিষেবা ক্রয়ের জন্য অর্থ ঋণের সুবিধা দিয়ে থাকে। প্রযোজ্য সুদসহ এই ঋণকৃত অর্থটি কার্ডধারককে ফেরত দিতে হয় একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। ব্যাংকগুলো প্রধানত ভিসা, মাস্টারকার্ড, ডিসকভার এবং আমেরিকান এক্সপ্রেস- এই চার মূল ধরনের ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের সরবরাহ করে থাকে। কেবল অর্থ ঋণই নয়; বিভিন্ন উপলক্ষে এই কার্ডগুলো গ্রাহকদের বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে। চলুন জেনে নিই, কীভাবে একটি ক্রেডিট কার্ড করা যায়।
ক্রেডিট কার্ড-এর সুবিধাগুলো
দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন পণ্য বা পরিষেবা ক্রয়ের ক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ড-এর আকর্ষণীয় সুযোগ-সুবিধাগুলোর কারণে প্রতিদিনি এই কার্ডের জনপ্রিয়তা বাড়ছে।
> ব্যয়বহুল পণ্য বা পরিষেবা তাৎক্ষণিকভাবে কেনা যায়।
> অনলাইনে কোন ঝামেলা ছাড়াই কেনাকাটা করা যায়।
> ক্রেডিট কার্ড দিয়ে কেনাকাটায় রিওয়ার্ড পয়েন্ট-এর সুযোগ থাকে, যেটি বাড়ার ফলে ক্রেডিট কার্ড থেকে খরচের মাধ্যমেই আয়সহ বিভিন্ন মূল্যছাড় এমনকি ফ্রিতে পণ্য বা পরিষেবা ক্রয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
> যথেষ্ট পরিমাণে কেনাকাটার পাশাপাশি সময়মত ক্রেডিট কার্ড-এর বিল প্রদান করলে ক্রেডিট কার্ডধারীর সংশ্লিষ্ট ব্যাংক থেকে ঋণ লাভের যোগ্যতার সূচক সংখ্যা বা সিআইবি রেকর্ড বাড়ে।
> ব্যবহৃত ক্রেডিট কার্ড-এর চার্জ বেশি বা অন্য কোন ক্রেডিট কার্ড-এর সুযোগ-সুবিধা মনে হলে সহজেই বর্তমান কার্ড থেকে সেই কার্ড-এ স্থানান্তরিত হওয়া যায়।
> পেমেন্ট গেটওয়ে বা মার্চেন্ট সেবায় কোনো অসামঞ্জস্যতা ধরা পড়লে ক্রেডিট কার্ড-এ সহজেই টাকা ফেরতের জন্য আবেদন করা যায়, যার জন্য কাগজের চেক অপেক্ষা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার অধিক নিরাপদ।
> ক্রেডিট কার্ড চুরি বা হারিয়ে গেলে নিকটবর্তী সংশ্লিষ্ট ব্যাংক থেকে দ্রুত অর্থ ফেরত সহ একদম নতুন কার্ড পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন: স্মার্ট আইডি কার্ড: জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল থাকলে যেভাবে সংশোধন করবেন
ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার পূর্বশর্ত
ক্রেডিট কার্ড-এর মাধ্যমে মূলত গ্রাহককে পণ্য বা পরিষেবা ক্রয়ের জন্য অর্থ ঋণ দেয়া হয়। তাই এই কার্ড দেয়ার পূর্বে ক্রেডিট কার্ড ইস্যুকৃত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি প্রথমে যাচাই করে নেয় যে গ্রাহকের সেই অর্থ পরিশোধের সক্ষমতা আছে কি না।
গ্রাহকের যোগ্যতার উপর নির্ভর করে অর্থ খরচের একটি সীমা নির্ধারণ করা হয় যাকে ক্রেডিট লিমিট বলে। এর অতিরিক্ত খরচ করা যায় না।
ক্রেডিট কার্ড নেয়ার জন্য মাসিক আয় কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকা হতে হয়। মাসিক আয় যত বেশি হয় সেই আয়ের ধরন ও ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী ক্রেডিট লিমিটের পরিমাণও বেড়ে যায়।
যেমন প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা আয় হলে ১ লাখের আশেপাশে (কম-বেশি) কোন পরিমাণ ক্রেডিট লিমিট পাওয়া যায়।
ক্রেডিট কার্ড আবেদনকারীদের যোগ্যতার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো সাধারণত চাকরিজীবীদের নূন্যতম ৬ মাস চাকরি এবং ব্যবসায়ীদের কমপক্ষে ১ বছরের ব্যবসায়ীক লেনদেন যাচাই করে থাকে।
কিছু ব্যাংক ফিক্সড ডিপোজিটের উপর ভিত্তি করে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে থাকে। ডাচ-বাংলা, ইস্টার্ন ব্যাংক ৫০ হাজার টাকা ফিক্সড ডিপোজিটের উপর ক্রেডিট কার্ড সরবরাহ করে থাকে।
ক্রেডিট কার্ড আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
→ প্রার্থীর জাতীয় পরিচয়পত্র
→ দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি
→ টিআইএন (ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার) সার্টিফিকেট
→ চাকরিজীবীর ক্ষেত্রে নিয়োগপত্র কিংবা স্যালারি সার্টিফিকেট, যেখানে কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকার সালারি হতে হবে, এবং ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট।
* ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স, ম্যামোর্যান্ডাম অব এ্যাসোসিয়েশন, ১০ লাখ টাকার ব্যবসায়িক লেনদেন সহ ১ বছরের ব্যাংক স্টেটমেন্ট।
*অন্যান্য পেশাজীবীদের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পেশা নিয়োগের সনদপত্র এবং রেফারেন্স হিসেবে ইউটিলিটি বিলের কপি।
→ রেফারেন্স।
আরও পড়ুন: ২০২২ সালে হজের জন্য নিবন্ধন করবেন যেভাবে
‘অথবা ডটকম’-এ মিলছে কোরবানির পশু
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকি এড়িয়ে ঘরে বসেই ক্রেতার হাতে কোরবানির পশু পৌঁছে দিতে ‘অনলাইন কোরবানি মেলা’ চালু করেছে দেশের জনপ্রিয় ই-কমার্স সাইট ‘অথবা ডটকম’।
সুদহার ৯ শতাংশ নির্ধারণ কেন অবৈধ নয়: হাইকোর্ট
ক্রেডিট কার্ড ছাড়া অন্য সব খাতে ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ নির্ধারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা সার্কুলার কেন অবৈধ হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।