প্রতিরক্ষা জোরদার
ইউক্রেনে ৫ শতাধিক ড্রোন ও মিসাইল ছুড়েছে রাশিয়া
ইউক্রেনে পাঁচ শতাধিক ড্রোন ও অন্তত দুই ডজন ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে রাশিয়া। কিয়েভের বেসামরিক অবকাঠামো, বিশেষত জ্বালানি স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করে মস্কো এসব হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছে জেলেনস্কি প্রশাসন। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা জোরদারের চলমান তৎপরতার মধ্যেই এ হামলা চালাল মস্কো।
স্থানীয় সময় বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাতভর এসব হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ। পশ্চিম ও মধ্য ইউক্রেনের বিভিন্ন এলাকায় এসব হামলা চালানো হয়েছে। এতে অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন বলে জানানো হয়েছে।
এ হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা জোরদারের আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতারা।
গত কয়েক মাস ধরেই আকাশপথে হামলা ও সম্মুখসারির ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষা ভাঙার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে রাশিয়া।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত মাসে যুদ্ধ বন্ধের তৎপরতা চালালেও পরিস্থিতিতে কোনো পরিবর্তন আসেনি। ট্রাম্পের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সরাসরি শান্তি আলোচনায় জেলেনস্কি সম্মতি জানালেও ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।
এদিকে বেইজিং সম্মেলনে গিয়ে পুতিন বলেছেন, ‘আমার কাছে মনে হচ্ছে, টানেলের শেষে একটুখানি আলো আছে। দেখা যাক পরিস্থিতি কী দাঁড়ায়।’
এ সংঘাত সমাধানে ‘কমন সেন্সের’ প্রাধান্য থাকতে হবে বলে মনে করেন তিনি। তা ছাড়া সমাধান খুঁজতে ট্রাম্পেরও আন্তরিক ইচ্ছা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। পুতিন জানান, তিনি জেলেনস্কিকে মস্কোয় আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানাতে রাজি আছেন, তবে বৈঠকটি ‘ভালোভাবে প্রস্তুত’ হতে হবে।
আরও পড়ুন: ইউক্রেনে ৮২৫ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিল যুক্তরাষ্ট্র
যদিও ক্রেমলিনের কর্মকর্তারা আগেই জানিয়েছেন, যেকোনো শীর্ষ সম্মেলন কেবল তখনই সম্ভব, যখন নিম্নপর্যায়ের বৈঠকে প্রাথমিক চুক্তি চূড়ান্ত হবে।
অন্যদিকে, রাশিয়ার এ হামলাকে পুতিনের ‘দায়মুক্তি দেখানো’ বলে অভিহিত করেছেন জেলেনস্কি। যুদ্ধ অর্থনীতির ওপর বেশি চাপ না থাকার কারণেই পুতিন এ আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানান।
হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্যে বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) ফোনালাপ হওয়ার কথা রয়েছে।
বেইজিং বৈঠকে রাশিয়ার সমর্থকরা
সাংহাই কো-অপারেশন অরগানাইজেশনের (এসসিও) সম্মেলন ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির ৮০তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত কুচকাওয়াজে অংশ নিতে বর্তমানে চীনে অবস্থান করছেন পুতিন। সম্মেলনে তার সঙ্গে ছিলেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ ছাড়া কুচকাওয়াজে যোগ দিয়েছেন উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন।
এই তিন নেতাই ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে সমর্থন করছেন বলে অভিযোগ করেছে ওয়াশিংটন। তাদের দাবি, উত্তর কোরিয়া মস্কোকে সেনা ও গোলাবারুদ সরবরাহ করেছে আর চীন-ভারত রুশ তেল কিনে রাশিয়ার অর্থনীতিকে চাঙ্গা রেখেছে।
বুধবার ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নিরাপত্তাবিষয়ক গবেষণা ইনস্টিটিউটের সম্মেলনে ইইউয়ের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান কায়া কালাস বলেন, ইউক্রেনে হামলায় রাশিয়া একা নয়, চীনও আছে সঙ্গে। তারা মস্কোকে অস্ত্র সরবরাহ করছে। ফলে ইউক্রেনে হামলা অব্যাহত রয়েছে।
ইউক্রেন ও মিত্রদের নতুন সামরিক সহায়তার আলোচনা
রাশিয়া হামলার মাত্রা বাড়ানোর পর থেকে নিজদেশের প্রতিরক্ষা জোরদারে ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট।
নতুন সামরিক সহায়তা ও কূটনৈতিক সমর্থন পেতে মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) ডেনমার্ক সফর করেছেন জেলেনস্কি। সেখানে গিয়ে তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ত্র আনার ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। প্রতি মাসে এ তহবিলে আরও প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার যোগ করার লক্ষ্য রয়েছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: শান্তিচুক্তির বিনিময়ে কী ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা পেতে পারে ইউক্রেন
এরপর যুদ্ধ-পরবর্তী নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে বুধবার ফ্রান্সে যান জেলেনস্কি। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাঁখো তাকে প্যারিসে সমর্থন জানিয়েছেন।
শান্তি চুক্তি সই হওয়ার দিন থেকেই তারা ইউক্রেনকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত বলেও জানান মাঁখো। তবে রাশিয়া চুক্তির ব্যাপারে আন্তরিকতা ও প্রতিশ্রুতি অটুট রাখবে কিনা এ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তিনি।
অন্যদিকে, ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে কীভাবে শক্তিশালী করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা করতে কিয়েভ সফর করেছেন ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী জন হিলি।
জেলেনস্কি বলেন, দুর্ভাগ্যবশত, রাশিয়ার কাছ থেকে এখনো আমরা যুদ্ধ শেষ করার কোনো ইঙ্গিত পাইনি। তা সত্ত্বেও ইউরোপ-আমেরিকার সঙ্গে কিয়েভের ঐক্য কূটনৈতিক সমাধানের পথে এগোতে রাশিয়ার ওপর চাপ বাড়াবে বলে মনে করেন তিনি।
পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে বলেছেন, প্যারিস বৈঠকের পর স্পষ্ট হবে কে কী ধরনের সহায়তা দিতে পারবে।
৯১ দিন আগে