হরিরামপুর
খরায় কাঁচা মরিচের উৎপাদন কমে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা; বাজারেও সংকট
দেশে শাকসবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য আকাশছোঁয়া। দাম বাড়ছে ক্রমবর্ধমান গতিতে। এর মধ্যে তীব্র খরায় মানিকগঞ্জে কমে গেছে কাঁচা মরিচের উৎপাদন। এ অবস্থায় ব্যাপক লোকসানের শঙ্কায় পড়েছেন চাষিরা।
মানিকগঞ্জের হরিরামপুর ও শিবালয় উপজেলায় সবচেয়ে বেশি মরিচ উৎপাদন হয়। এই দুই জেলায় উৎপাদিত মরিচ দিয়ে জেলার চাহিদা পূরণের পর দেশের অন্য জেলাসহ বিদেশেও রপ্তানি হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে হরিরামপুর ও শিবালয়ে মরিচের ক্ষেতে কোনো মরিচ নেই।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে মানিকগঞ্জে ৩ হাজার ৭১৭ হেক্টর জমিতে কাঁচা মরিচের আবাদ হয়েছে যা গত বছরের তুলনায় ১৭৬ হেক্টর বেশি। প্রতি বছর এখানকার উৎপাদিত মরিচ দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা হয়। দুই বছর আগেও এ অঞ্চল থেকে শত কোটি টাকার মরিচ বিদেশে রপ্তানি করা হয়েছিল। তবে এ বছর প্রচণ্ড গরম ও সঠিক সময়ে বৃষ্টি না হওয়ায় এই ফলন বিপর্যয় বলে মনে করছে কৃষি বিভাগ।
প্রায় সব জমিতেই মরিচ গাছের পাতাগুলো কুঁকড়ে মরে যাচ্ছে। আসছে না নতুন ফুল। ফলনও নেই। হতাশায় পড়েছেন মরিচচাষিরা। তারা জানান, অতি খরায় মরিচের ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। মরিচ গাছ মরে যাচ্ছে।
হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা উজানপাড়া গ্রামের কৃষক সামছুদ্দিন বলেন, দুই বিঘা জমিতে এবার মরিচ লাগিয়েছিলাম। শুরুতে গাছে ফলন ভালো ছিল। তখন ফলন বেশি থাকায় বাজারে অতিরিক্ত সরবরাহের কারণে দাম ছিল না। সর্বোচ্চ ৪০ টাকা কেজিতে মরিচ বিক্রি করেছি। এর কিছুদিন পর অতি খরায় মরিচ ক্ষেত নষ্ট হতে থাকলে বাজারে মরিচের সংকট তৈরি হয়। তখন বাজারে সর্বোচ্চ প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি করেছি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা পর্যন্ত। ধীরে ধীরে মরিচ ক্ষেত নষ্ট হয়ে ফলন কমে যায়। দুই বিঘা জমিতে প্রায় লক্ষাধিক টাকার মরিচ বিক্রি করেছি। খরচ বাদ দিলে হাজার বিশেক টাকা লাভ পেয়েছি। এখন অতি খরায় মরিচ ক্ষেতগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষতির মুখে পড়েছি।
একই গ্রামের মরিচ চাষি নূর হোসেন বলেন, এই অঞ্চলে মরিচের আবাদ ভালো হওয়ায় এবার ৩০ হাজার টাকা ধার-দেনা করে সাড়ে চার বিঘা জমিতে মরিচের আবাদ করি। কিন্তু এমন বিপর্যয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছি।
তিনি আরও বলেন, ‘মরিচ গাছের পাতা কুঁকড়ানো রোগে আক্রান্ত হয়ে গাছের মাথা থুবরে গেছে। শুধু আমার অবস্থাই এমন না, আশপাশের সব কৃষকের একই অবস্থা। সব কৃষকের মাথায় হাত।’
উপজেলার বাল্লা ইউনিয়নের বাস্তা গ্রামের মরিচ চাষী আবদুর রহমান ব্যাপারী বলেন, তীব্র খরায় অধিকাংশ মরিচ গাছের পাতা কুঁকড়ে যায়। কয়েক বার সেচ দেওয়ার পর সামান্য ভালো হয়। দ্বিতীয় দফায় আবার তীব্র খরায় একই অবস্থা হয়। পরে অনেক গাছ মরে যায়। তবে যে গাছগুলো আছে তাতে ফুল এলেও মরিচ ধরছে না।
এদিকে শিবালয় উপজেলার মহাদেবপুর ইউনিয়নের বরংগাইল গ্রামের কৃষক আফসার উদ্দিন জানান, দুই বিঘা জমিতে মরিচের আবাদ করতে চারা, সার, কীটনাশক, সেচসহ তার খরচ হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। এই সময়ে প্রতিদিন জমি থেকে দুই আড়াই মণ মরিচ হওয়ার কথা থাকলেও ফলন বিপর্যয়ের কারণে প্রতিদিন দুই কেজিও মিলছে না। সার, কীটনাশক, সেচ দিয়েও সুফল পাননি তিনি।
একই উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামের কৃষক আব্বাস উদ্দিন বলেন, এ বছর অতি খরার কারণে মরিচ ক্ষেতে মাটি ফেটে যাওয়ায় গাছ মরে গেছে। আবার অতি বৃষ্টির কারণে ক্ষেতে পানি জমে যাওয়ায় গাছের গোড়া পঁচে গিয়ে গাছ মরে গেছে।
চাষিরা বলছেন, ফলন বিপর্যয়ের কারণে বাজারে খুব অল্প মরিচ উঠছে। এর প্রভাবে গত বছরের মতো এবারও কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে চলছে। বিভিন্ন আড়তে মানভেদে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ৩৫০ টাকা থেকে ৩৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে, মানিকগঞ্জের মরিচের উৎপাদন না থাকায় এখন পাইকারি মোকামগুলোতে মরিচের চালান আসে দেশের কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, আলমডাঙ্গাসহ কয়েকটি জেলা থেকে। এছাড়া এলসির মাধ্যমে ভারতীয় মরিচ আমদানি হচ্ছে মানিকগঞ্জের পাইকারি আড়ৎগুলোতে।
মানিকগঞ্জের বড় একটি পাইকারি আড়ৎ জাগীর বন্দর ধলেশ্বরী পাইকারি আড়ৎ।
সোমবার সকালে এই আড়তে ভারতীয় এলসির কাঁচা মরিচ পাইকারি বিক্রি হয়েছে ৩৫০ টাকা থেকে ৩৮০ টাকায়।
পাইকাররা জানান, দেশীয় মরিচের উৎপাদন কম হওয়ায় মরিচের সংকট দেখা দিয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী কোনো মরিচ এখন আড়তে আসছে না। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কিছু মরিচ আসলেও দাম বেশি।
মানিকগঞ্জ জাগীর বন্দর ধলেশ্বরী পাইকারি বাজারের আড়তদার আবদুস সাত্তার জানান, ‘এখান থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে মরিচ নিয়ে যায় পাইকাররা। ভারতীয় আমদানি করা মরিচ একদিন আসা বন্ধ থাকলে দাম দ্বিগুণ হয়ে যায়। তাছাড়া এলসির মরিচ অর্ধেক পঁচা বের হচ্ছে। এতে ঘাটতি পূরণ করতে দাম দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে।’
এদিকে, পাইকারি বাজারে বাড়তি দামে কিনতে হওয়ায় খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫২০ টাকায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. রবীআহ নুর আহমেদ বলেন, ‘টানা তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে মানিকগঞ্জের মরিচ চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাছাড়া সঠিক সময়ে বৃষ্টি না হওয়ায় এই ফলন বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। যেহেতু বছরে একাধিকবার মরিচের আবাদ করা হয়, তাই আবহাওয়া অনুকূলে এলে কৃষকরা আগের মতো ফলন পাবেন। আর পাতা কুঁকড়ানো রোগের সমাধানের জন্য বগুড়ার মসলা গবেষণাকেন্দ্রে যোগাযোগ করেছি। তারা এ বিষয়ে আমাদের যেভাবে পরামর্শ দিয়েছেন তা কৃষকদের জানানো হয়েছে।’
২ মাস আগে
মানিকগঞ্জে পদ্মায় বিলীন ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ঝুঁকিতে অনেক স্থাপনা
পদ্মা-যুমনার পানি বৃদ্ধিতে মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের চরাঞ্চলের আজিমনগর ইউনিয়নের হাতিঘাটার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ২৮ আগস্ট (শনিবার) রাত ১১টার দিকে হেলে পরা স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি সম্পূর্ণরূপে নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এছাড়া লেছড়াগঞ্জ, সুতালড়ীসহ চরাঞ্চলের তিনটি ইউনিয়নের রাস্তাঘাট, হাট বাজার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ একাধিক স্থাপনাও ভাঙনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
জানা যায়, গত চার দিন আগে পদ্মার ভাঙনের কবলে নদীগর্ভে হেলে পরেছিল আজিমনগর ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের দোতলা ভবন। চরাঞ্চলের মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে ২০০৮ সালে এই স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রটি চালু করা হয়। কিন্ত গতকাল (শনিবার) রাতে এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এছাড়াও ভাঙনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বর্তমান নদীর তীরবর্তীতে অবস্থিত আজিমনগর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়, হাতিঘাটা আশ্রয়ণ কেন্দ্র, সোয়াখাড়া আদর্শ গ্রাম, ৫৭ নং হারুকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইব্রাহিমপুর জামে মসজিদ ও মাদরাসা, হাতিঘাটা বাজারসহ পাকা আধাপাকা একাধিক রাস্তা।
চলতি মাসের গোড়ার দিকে নদী ভাঙনের কবলে পরে সুতালড়ী ইউনিয়নের ৩৭ নং রামচন্দ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দোতলা ভবনটির একাংশ ভেঙে পড়ে। পরবর্তীতে গত সপ্তাহে সম্পূর্ণ বিদ্যালয়টি নদীতে বিলীন হয়ে যায়। ফলে ভাঙন আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে পড়েছে উপজেলার চরাঞ্চলের তিনটি ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ।
আরও পড়ুন: মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে ৪ গ্রাম প্লাবিত
জানা যায়, চরাঞ্চলে আজিমনগরের হাতিঘাটায় ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠত হয় আজিমনগর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়। ওই সময় বিদ্যালয়টি এডিবি'র অর্থায়নে টিনসেডের ১৫টি রুম তৈরির মধ্যদিয়ে যাত্রা শুরু হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির উন্নয়নের লক্ষে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ৬৬ লাখ ৯৭ হাজার টাকা ব্যয়ে শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে চারতলা ফাউন্ডেশনে একতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৯-২০ অর্থ বছরের ১ কোটি ২৩ লাখ ৫০ হাজার বরাদ্দে পুনরায় শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে ওই একতলার ওপরেই আরও তিনতলা ভবনের অনুমোদন দেয়। নতুন অনুমোদিত ভবনের কাজ চলমান রয়েছে। এরই মধ্যে নদীতে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি ও স্রোতের কারণে আচমকাই নদী ভাঙন শুরু হয় এবং প্রতিষ্ঠানটি ভাঙনের ঝুঁকির মধ্যে পরে যায়। বর্তমান বিদ্যালয়টি নদীর তীর হতে ১৩০ মিটার দূরে রয়েছে।
আজিমনগর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আওলাদ হোসেন বিপ্লব বলেন, ‘বিদ্যালয়টিতে চাঞ্চলের ১০টি গ্রামের প্রায় ৪০০ ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা করে। বর্তমান বিদ্যালয়টি নদীর অতি কাছে। তাই দ্রুত ভাঙনরোধের ব্যবস্থা না করলে অথবা বিদ্যালয়টি অন্যত্র স্থানান্তর করা না হলে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।’
এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ জেলা শিক্ষা অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. সবুজ হোসেন বলেন, নদী ভাঙনের বিষয়টি জেনে আমরা সরেজমিনে যাই এবং ভাঙনের অবস্থা দেখে আমরা জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ও জেলা প্রশাসক বরাবর বিদ্যালয়টি রক্ষায় নদী ভাঙনরোধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি দিয়েছি।
আজিমনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. বিল্লাল হোসেন মুঠোফোনে জানান, একে একে সকল স্থাপনা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। গত রাতে আজিমনগর স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র নদীতে চলে গেছে। আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করেছি। এখন তারা কি ব্যবস্থা নেন এটাই দেখার বিষয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মহোদয়কে বিষয়টি অবহিত করেছি।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে গঙ্গাধর নদীর তীব্র ভাঙন, দিশেহারা ৩ গ্রামের মানুষ
তিস্তার ভাঙন: কুড়িগ্রামের ৫ শতাধিক ঘরবাড়ি নদী গর্ভে
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাইন উদ্দিন বলেন, ‘বিষয়টি আমরা জেনেছি। এছাড়াও গত সপ্তাহে আজিমনগর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যাপারে জেলা শিক্ষা অধিদপ্তরের একটা চিঠি আমরা পেয়েছি। কিন্ত ভাঙনরোধে তীব্র স্রোতের কারণে ওখানে কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। কিছু করার চেষ্টা করলেও থাকবে না।’
তিনি বলেন, ‘এখন উপায় হলো যে সকল স্থাপনা রয়েছে, সেগুলো অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে অথবা নিলামে দিতে হবে। তাছাড়া চরাঞ্চল নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজ করার কোনো নির্দেশনা নেই।’
৩ বছর আগে
মানিকগঞ্জে ট্রাক-অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১
মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার গোপালবাগ এলাকায় শনিবার সকালে ট্রাক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে এক যাত্রী নিহত হয়েছেন।
৪ বছর আগে