বাংলাদেশে
সৌদিতে কর্মরত নারী গৃহকর্মীদের নিরাপত্তা চায় বাংলাদেশ
সৌদি আরবে কর্মরত বাংলাদেশি নারী গৃহকর্মীদের নিরাপত্তায় সহায়তা চাইলেন রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম (বার)।রাষ্ট্রদূত মঙ্গলবার সৌদি আরবের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশের গভর্নর প্রিন্স সউদ বিন নায়েফ আল সউদ এর সাথে সাক্ষাৎকালে এ সহায়তা কামনা করেন। এ সময় রাষ্ট্রদূত গভর্নরকে জানান, সৌদি আরবে কর্মরত নারী গৃহকর্মীরা বিভিন্ন সমস্যায় পড়ে পুলিশের কাছে সাহায্য চান।
আরও পড়ুন: সৌদি থেকে ৬ মাসের সন্তান নিয়ে দেশে ফিরলেন গৃহকর্মী
এক্ষেত্রে তাদের যেন দ্রুত ডিপোর্টেশন সেন্টার অথবা সেইফ হাউজে জায়গা প্রদান করা হয় তার জন্য সৌদি পুলিশের সহায়তা কামনা করেন তিনি।সৌদি গভর্নর এ বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেছেন।এছাড়া রাষ্ট্রদূত পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশের হাসপাতালের মর্গে যেসকল অবৈধ অভিবাসীদের মৃতদেহ সংরক্ষিত রয়েছে তার ফি মওকুফেরও অনুরোধ জানান।
আরও পড়ুন: সৌদিতে বাংলাদেশি কর্মীদের কোয়ারেন্টাইন থেকে অব্যাহতির অনুরোধ ঢাকার
রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী অবৈধ অভিবাসীদের দেশে ফিরে যাওয়ার বিষয়টি দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য গভর্নরকে অনুরোধ জানান। এসময় রাষ্ট্রদূত সম্প্রতি একজন বাংলাদেশিকে মৃত্যুদণ্ড থেকে রেহাই দেয়া ও বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য গভর্নরের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। রাষ্ট্রদূত পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশের বিভিন্ন জেলে প্রায় ২৪৫ জন বাংলাদেশি বন্দী রয়েছে উল্লেখ করে তাদের মধ্যে কেউ গুরুতর অপরাধ না করে থাকলে তাকে ক্ষমা প্রদান করার জন্য গভর্নরকে অনুরোধ করেন।
আরও পড়ুন: হুতি হামলায় সৌদির জাজান বিশ্ববিদ্যালয়ে আগুন
এর আগে সোমবার রাতে ও মঙ্গলবার দাম্মামে বসবাসরত বাংলাদেশি অভিবাসীদের সাথে মতবিনিময় করেন রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী । এ সময় তিনি তাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা শোনেন ও দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দেন।
বাংলাদেশ কখনও ঋণের ফাঁদে পড়বে না: চীনা রাষ্ট্রদূত
বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেছেন যে, বাংলাদেশকে কখনও অসামঞ্জস্যপূর্ণ ঋণ বা কথিত ঋণের ফাঁদে পড়ার চিন্তা করতে হবে না। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও সহযোগিতায় ‘ঋণ’ কখনও কূটনৈতিক নিয়ন্ত্রণের চাবি-কাঠি হয়ে উঠবে না বলে আশ্বস্ত করেন চীনা রাষ্ট্রদূত। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ খুব দক্ষতার সাথেই বৈদেশিক ঋণ ব্যবস্থাপনা করে আসছে।
চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, ‘আমি অবশ্যই বলবো যে, আপনারা খুবই দক্ষতার সাথে বৈদেশিক ঋণ ব্যবস্থাপনা করেছেন এবং আপনাদের কোনও অসামঞ্জস্যপূর্ণ ঋণ নেই। আন্তর্জাতিক ঋণ পরিশোধ ও ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই বেশ সুনাম অর্জন করেছে। তাই, কথিত ঋণের ফাঁদ নিয়ে চিন্তা করবেন না।’
আরও পড়ুন: কসমস সংলাপ: ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রত্যাশা
বৃহস্পতিবার কসমস ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক: ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনায় (ওয়েবিনার) এক প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন চীনা রাষ্ট্রদূত। অনুষ্ঠানটি কসমস ফাউন্ডেশনের ফেসবুক পেজে লাইভ সম্প্রচার করা হয়।
উক্ত আলোচনায় উদ্বোধনী ও সমাপনী বক্তব্য দেন কসমস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এনায়েতুল্লাহ খান এবং সভাপতিত্ব করেন প্রখ্যাত কূটনীতিক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী।এছাড়া সভায় আলোচক প্যানেলে ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রদূত তারিক এ করিম, সিপিডির বিশিষ্ট ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের এম চৌধুরী, ইউনান বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী গবেষক ড. জু ইওংমেং, চীনা ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সহকারী গবেষণা ফেলো ড. নিং শেংনান, সাবেক রাষ্ট্রদূত সিরাজুল ইসলাম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর। ওয়েবিনারে মূল আলোচক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং।
আরও পড়ুন: দ্রুতই টিকা রপ্তানি শুরু করতে পারে সেরাম
আলোচনার এক পর্যায়ে চীনের অর্থায়নে সরকারি বিনিয়োগের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কার ঋণের ফাঁদে পড়ার বিষয়টি উঠে আসে। ঋণের ফাঁদ বর্তমান বিশ্বে কূটনৈতিক প্রভাব বিস্তারের এক অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে। আর এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশ অঞ্চলে চীনের ব্যাপক ঋণ কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশগুলোকে ঋণের ফাঁদে ফেলার অভিযোগ করে আসছে বিভিন্ন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংস্থা।
এরই প্রেক্ষিতে চীনা রাষ্ট্রদূত জানান, শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর কোনও দেশেই ঋণের ফাঁদ তৈরির চেষ্টা করেনি চীন। তিনি দাবি করেন এমন কোনও কার্যক্রমের প্রমাণ নেই।লি বলেন, ‘আপনাদের দেশে সুপরিকল্পিত নীতিগত কাঠামো এবং দক্ষ কর্মকর্তা ও মন্ত্রী রয়েছেন। তাই আপনাদের এই ব্যাপারে চিন্তিত হবার কিছু নেই।’এসময় চীনা রাষ্টদূত জানান, সম্প্রতি এক নিবন্ধ পড়ে তিনি জানতে পারেন, শ্রীলঙ্কার বর্তমান মোট ঋণের মাত্র ৮ শতাংশ চীনের কাছ থেকে নেয়া। তাছাড়া, এই ৮ শতাংশ ঋণের অধিকাংশই বেল্ট রোড ইনিশিয়েটিভের অধীনে রয়েছে।
আলোচনায় সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, চীন বাংলাদেশের শীর্ষ বিনিয়োগকারী দেশ হিসেবে পরিণত হচ্ছে। দেশের বড়-বড় প্রকল্পগুলোতে চীনের বিনিয়োগ বাড়ছে। তার মতে, বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে চীনের এমন অর্থনৈতিক কাযক্রমকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা ঋণের ফাঁদ হিসেবে উল্লেখ করছে। আর এক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কাকে উদাহরণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে।
তবে এই অর্থনীতিবীদ বলেন, ‘সৌভাগ্যক্রমে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই রয়েছে এবং দেশের মোট ঋণের বড় অংশই আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছ থেকে নেওয়া।’কিন্তু ২০২৪ সাল নাগাদ বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক শুধুমাত্র ঋণের কারণেই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে পারে, বলে মনে করেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনাকে মোদির চিঠি: মানবজাতি শিগগিরই মহামারি কাটিয়ে উঠবে
ওয়েবিনারে ঋণ বিষয়ক আলোচনার জবাবে চীনা রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যকার বর্তমান চলমান সম্পর্ক ও বাংলাদেশের প্রতি চীন সরকার ও জনগণের সমর্থনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। এর পাশাপাশি দুই দেশের সুসম্পর্ক বাংলাদেশকে আরও লাভবান করবে বলে আশ্বস্ত করেন।
বাংলাদেশের সুতোয় বাঁধবে চীন-ভারত সম্পর্ক
দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ ভারত ও তার প্রতিবেশী দেশ চীনের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে আলোচনায় চীনা রাষ্ট্রদূত বেশ হৃদ্যতা প্রকাশ করেন। তার মতে, ভারতকে কখনও নিজেদের কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেনি চীন।তিনি বলেন, ‘চীন কখনও ভারতকে কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে না। আমরা মনে করি আমাদের (চীন-ভারত) সম্পর্ক আরও উন্নত করার সুযোগ রয়েছে। তাই এটা কখনও ভাববেন না যে, ভারতের প্রতি চীনের বিদ্বেষমূলক মনোভাব রয়েছে। এমন কিছুই নেই।’
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা সংকট: জাতিসংঘ মহাসচিবের হস্তক্ষেপ চায় বাংলাদেশ
ভারতের মানুষ ও এর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের কথা উল্লেখ করে লি বলেন, ‘আমরা এখনও অনেক বিষয়ে একসাথে কাজ করে যাচ্ছি। আর ঐতিহাসিক ভাবে গত দুই থেকে তিন হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে এই দুই অঞ্চলের মানুষের মাঝে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক আছে। যেকোনও শিক্ষিত চীনা নাগরিকের ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি আলাদা একটি শ্রদ্ধার জায়গা রয়েছে, যা কখনও জনসম্মুখে প্রকাশিত হয়নি।’
ভারত সম্পর্কে চীনা রাষ্ট্রদূতের আলোচনার আলোকে কসমস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এনায়েতুল্লাহ খান ২০০৪ সালে চীনের বর্তমান পররাষ্ট্র মন্ত্রী ওয়াং ই-এর (তৎকালীন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী) সাক্ষাৎকার নেয়ার স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন, ‘আমি তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম ভারত-চীন সম্পর্কে মাঝে বাংলাদেশের অবস্থান কোথায়? তিনি তাৎক্ষণিকভাবেই উত্তর দিয়েছিলেন- ভারত এবং চীনের মাঝে সেতু বন্ধন করতে পারে বাংলাদেশ।’
আরও পড়ুন: ভ্যাকসিন বাণিজ্যে স্বচ্ছতার আহ্বান বাংলাদেশের
প্রযুক্তির আদান-প্রদান
প্রযুক্তির আদান-প্রদান বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত লি জানান, বাংলাদেশ এবং চীনের মধ্যে ব্যাপক হারে প্রযুক্তির আদান-প্রদান চলছে।এসময় উদাহরণ হিসেবে লি আরও জানান, বেশ কয়েক বছর আগেও বাংলাদেশের কাছ থেকে পোশাক আমদানি করতো না চীন। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের এক নম্বর রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক শিল্প খাত চীনেও জায়গা করে নিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে এখন চীনে পোশাক আমদানি করছে।এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আপনাদের তৈরি পোশাক শিল্প খাত এখন এতটাই উন্নতি করেছে যে, বাংলাদেশের কাছ থেকে চীন গারমেন্টস পণ্য কিনে নিয়ে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে এটাই প্রমাণ হয় যে, দুই দেশের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রযুক্তির আদান-প্রদান ঘটছে।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশকে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা দেবে জার্মানি
‘কোয়াড’ প্রসঙ্গে চীনা রাষ্ট্রদূতের ভাবনা
আলোচনার এক পর্যায়ে একজন আলোচক চীন বিরোধী আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান এবং ভারতের জোট- কোয়াড প্রসঙ্গ তুলে আনেন। এ বিষয়ে গত মে মাসে লি জিমিং এর মন্তব্য চীন-বাংলাদেশের মাঝে বেশ অস্বস্তির তৈরি করে।কোয়াড প্রসঙ্গ উঠে আসায় চৈনিক এই কূটনীতিক নিজের সাফাই দেয়ার সুযোগটি লুফে নিয়ে জানান, একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে তিনি শুধু এই জোটে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো সম্ভাবনার কথা আলোচনা করতে চেয়েছিলেন।এসময় তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত হবার পর এদেশের পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে প্রথম যা জানতে পেরেছি, তা হলো বাংলাদেশ সকলের সাথে বন্ধুত্বে বিশ্বাস করে এবং কারো সাথে বৈরিতায় জড়াতে চায় না। তাই আমার বিশ্বাস বাংলাদেশ কোনও ক্ষুদ্র চক্রান্তকারী গোষ্ঠির সাথে জড়াবে না, বিশেষ করে কোনও যুদ্ধবাজ সামরিক জোটে।’
আরও পড়ুন: ফিলিস্তিনের জন্য চিকিৎসা সামগ্রী গ্রহণ করলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
তিস্তা প্রকল্প
চীনের অর্থায়নে তিস্তার গভীরতা বাড়ানো প্রকল্পের ব্যাপারে লি জিমিং কে প্রশ্ন করা হয়।তিনি জানান, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তিস্তা প্রকল্পের ব্যাপারে যে প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে, তা অত্যন্ত সাধারণ মানের।চীনা রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের প্রস্তাবনার ব্যাপারে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আপনারা প্রথমে একটি পূর্ণাঙ্গ সম্ভাব্যতা যাচাই এর প্রতিবেদন তৈরি করুন। এর পরে আমরা এই প্রকল্প মূল্যায়নের কাজ শুরু করবো। এই প্রকল্পের অর্থনৈতিক, প্রকৃতিক এবং ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটগুলোও আমাদের যাচাই-বাছাই করতে হবে।’
দেশব্যাপী লকডাউনে মাঠে থাকতে পারে সেনাবাহিনী
দেশের করোনা পরিস্থিতির অবনতি রোধকল্পে সরকার সারাদেশ জুড়ে প্রাথমিক ভাবে সাত দিনের লকডাউন ঘোষণা করেছে। আগামী সোমবার থেকে এই কঠোর লকডাউন কার্যকর করা হবে।
শুক্রবার তথ্য অধিদপ্তর এই তথ্য নিশ্চিত করে জানায় শনিবার মন্ত্রিপরিষদ এই বিষয়ে বিস্তারিত প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জানাবে।
আরও পড়ুন: সোমবার থেকে সারাদেশে ৭ দিনের ‘কঠোর লকডাউন’
তবে শুক্রবার রাতে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সাংবাদিকদে জানান, দেশব্যাপী কঠোর লকডাউন কার্যকর করতে মাঠে নামতে পারে আর্মি। পুলিশ ও বিজিবির পাশাপাশি লকডাউন নিশ্চিত করতে মাঠে থাকতে পারে সেনাবাহিনী।
তিনি আরও বলেন, ‘সোমবার থেকে সাতদিন কঠোর বিধি নিষেধ থাকবে। পরে প্রয়োজন হলে সময় আরও বাড়ানো হবে। সবাই যেন কঠোর লকডাইন মানে সে জন্য কড়কড়ি থাকবে। এই লক্ষ্যে পুলিশের পাশাপশি বিজিবি ও সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকতে পারে।’
লকডাউন চলাকালীন সময়ে জরুরি পরিষেবা ছাড়া সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
আরও পড়ুন: করোনায় আবারও মৃত্যু একশ’ ছাড়াল
জরুরি পণ্যবাহী যান ব্যতীত সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। অ্যাম্বুলেনস ও চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে যানবাহন চলাচল করতে পারবে।
জরুরি কারণ ছাড়া বাড়ির বাইরে কেউ বের হতে পারবে না। তবে গণমাধ্যম লকডাউনের বিধি নিষেধের আওতার বাইরে থাকবে।
করোনায় আবারও মৃত্যু একশ’ ছাড়াল
করোনায় দেশে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় গত দুই মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত একদিনে মারা গেছেন ১০৮ জন।
শুক্রবার বিকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
এছাড়া করোনাভাইরাসে গত ২৪ ঘণ্টায় ৫ হাজার ৮৬৯ জনের শরীরে নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এনিয়ে মোট শনাক্ত ৮ লাখ ৭৮ হাজার ৮০৪ জনে পৌঁছেছে।
তাছাড়া নতুন ১০৮ জনের মৃত্যুসহ দেশে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ালো ১৩ হাজার ৯৭৬ জনে।
আরও পড়ুন: সারাদেশে ১৪ দিন ‘সম্পূর্ণ শাটডাউনের’ সুপারিশ
এর আগে বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জনায়, ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে ৮১ জন মারা গেছেন। এছাড়া ৬ হাজার ৫৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন।
গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ২৭ হাজার ৬৫৩ টি। শনাক্তের হার ২১.২২ শতাংশ।
নতুন করে করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৭৭৬ জন। মোট সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ৯৭ হাজার ৫৫৯ জন। সুস্থতার হার ৯০.৭৬ শতাংশ। মৃত্যুর হার ১.৫৯ শতাংশ।
আরও পড়ুন:ঝিনাইদহ সদরে করোনা রোগীর ভিড়, অক্সিজেন সংকটের আশঙ্কা
এর আগে করোনাভাইরাসে শনাক্ত ও মৃত্যু আশঙ্কাজনকভাবে বাড়তে থাকায় সারাদেশে কমপক্ষে ১৪ দিন ‘সম্পূর্ণ শাটডাউন’ দেয়ার সুপারিশ করেছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) সন্ধ্যায় কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মো. শহিদুল্লাহ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এর আগে বুধবার রাতে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির ৩৮তম সভা থেকে এ সুপারিশ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশে ইতোমধ্যে কোভিড রোগের বিশেষ ডেল্টা প্রজাতির সামাজিক সংক্রমণ চিহ্নিত হয়েছে ও রোগের প্রকোপ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এ প্রজাতির জীবাণুর সংক্রমণ ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে সারাদেশেই উচ্চ সংক্রমণ, পঞ্চাশোর্ধ জেলায় অতি উচ্চ সংক্রমণ লক্ষ্য করা যায়।
কসমস সংলাপ: ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রত্যাশা
ভূ-রাজনীতির এই টানাপোড়েনের সময়ে ঢাকা-বেইজিং সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রেখে দুই দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়ার বিষয়ে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন পররাষ্ট্র বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা।
বৃহস্পতিবার কসমস গ্রুপের জনহিতকর প্রতিষ্ঠান কসমস ফাউন্ডেশন আয়োজিত একটি অনলাইন সংলাপে তারা দুই দেশের মধ্যে বিরাজমান সকল সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপান্তরিত করার বিষয়ে বাংলাদেশ ও চীনের প্রচেষ্টা নিয়ে আলোচনা করেন। উভয় দেশের বিশেষজ্ঞরা দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের অবস্থা মূল্যায়ন করেন এবং এই সম্পর্ককে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ ও সুযোগগুলো চিহ্নিত করেন।
আরও পড়ুন: সন্ধান মেলেনি পদ্মায় নিখোঁজ চীনা প্রকৌশলীর
‘বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক: ভবিষৎতের পূর্বাভাস’ শীর্ষক এই সংলাপে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন কসমস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এনায়েতউল্লাহ খান। সভাপতিত্ব করেন প্রখ্যাত কূটনীতিক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী। আলোচক প্যানেলে ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রদূত তারিক এ করিম, সিপিডির বিশিষ্ট ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের এম চৌধুরী, ইউনান বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী গবেষক ড. জু ইওংমেং, চীনা ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সহকারী গবেষণা ফেলো ড. নিং শেংনান, সাবেক রাষ্ট্রদূত সিরাজুল ইসলাম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর।
আরও পড়ুন: কসমস সেন্টারে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে প্রদর্শনী দেখলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত
সম্পর্ক উন্নয়নে পাঁচ বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ চীনা রাষ্ট্রদূতের
বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং মূল বক্তব্যে বলেন, ‘ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে আমরা চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে শক্তিশালী কৌশলগত সহযোগিতার অংশীদারিত্ব প্রত্যাশা করি।’ রাষ্ট্রদূত লি পাঁচটি বিষয় তুলে ধরেন যেখানে বাংলাদেশ ও চীন বর্তমান অংশীদারিত্বকে আরও জোরদার করতে পারে। এগুলো হলো মহামারি রোধে সহযোগিতা আরও বাড়ানো, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভকে এগিয়ে নেওয়া, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করা, তাৎক্ষণিক উদ্ভূত সমস্যার সমাধান করা এবং বহুপাক্ষিকতা বহাল রাখা।
চীনা রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, মহাসচিব শি জিমিংয়ের নেতৃত্বে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি) শিগগিরিই তার শততম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করবে। বাংলাদেশ-চীন সহযোগিতার কৌশলগত অংশীদারিত্বকে শক্তিশালী এবং আরও প্রাণবন্ত করতে সিপিসি বাংলাদেশের সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কাজ করার জন্য প্রস্তুত।
আরও পড়ুন: তিন নভোচারী নিয়ে চীনের প্রথম মহাকাশ যাত্রা
ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া
উদ্বোধনী বক্তব্যে চেয়ারম্যান এনায়েতউল্লাহ খান চীন ও বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, এক্ষেত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান আমাদের হৃদয়ে চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, ঐতিহাসিকভাবেই রাষ্ট্র দুটির জনগণের মধ্যে যোগাযোগের যে ব্যাপ্তি ও প্রসার রয়েছে তা প্রায়ই উপেক্ষা করা হয়। এ সময় তিনি অনেক আগে তার নেওয়া চীনের বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ের সাক্ষাৎকারের কথা স্মরণ করেন।ওয়াং ইয়েকে অন্যতম জ্ঞানী ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করে এনায়েতুল্লাহ খান বলেন, তিনি (ওয়াং ইয়ে) আমাকে বলেছিলেন, চীনের মূলনীতি হল ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক সুশীল এবং উভয় পক্ষের অংশীদাররা এই সম্পর্ককে আরও প্রশস্ত ও গভীর করতে সম্ভাব্য সব ধরনের চেষ্টা করছেন।
সভাপতির বক্তব্যে ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী চীনের বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি এবং বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যন্য রাষ্ট্রের অভূতপূর্ব উত্থানে এর প্রভাব সম্পর্কে আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, “চীনের উত্থান সম্ভবত সমসাময়িক সময়ের বড় ঘটনা। তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীন প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুততম সময়ে প্রথম হতে প্রস্তুত।
ড. চৌধুরী বলেন, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির চেয়ে চীনের দৃষ্টি আরও বেশিকিছুর দিকে। ভ্যাকসিন কূটনীতির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যেটি জানান দিচ্ছে। বিশ্ব রাজনীতিতে সর্বদাই উদীয়মান শক্তি এবং বর্তমানে এগিয়ে যাওয়াদের মধ্যে দ্বন্দ্বের আশঙ্কা থাকে। তিনি আরও বলেন, বিশ্ব আশা করে যে এ ধরনের সংঘাত এড়ানো যায় এবং শেষ পর্যন্ত বড় শক্তিগুলো যেমন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র পারস্পারিক সহযোগিতার মাধ্যমে বিশ্বকে স্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যেতে পারে। চীনের স্বপ্ন বলতে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যা বলেছেন তা এভাবেই বাস্তবায়িত হতে পারে।
আরও পড়ুন: ৯৭ ভাগ পণ্য রপ্তানিতে বাণিজ্য সুবিধা দিচ্ছে চীন: বাণিজ্যমন্ত্রী
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের ভূ-রাজনৈতিক বিন্যাস
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, ‘বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কূটনীতিকে প্রথম প্রতিরক্ষা লাইন হিসাবে এবং বিরোধ নিষ্পত্তির প্রধান হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহারে বিশ্বাসী। বাংলাদেশ পারস্পরিক লাভজনক এবং বহুপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও আন্তঃদেশীয় সম্পর্ক রক্ষায় সচেষ্ট। চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদকে দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য বাংলাদেশ সার্মথ্য এবং সংকল্পের পরিচয় দিয়েছে।’
সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বিশ্লেষকরা অবশ্যই এই অঞ্চলের প্রতিযোগিতারত বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সর্ম্পকের ওপর দৃষ্টি রাখতে চান। আমি ব্যক্তিগতভাবে এটিকে একটি স্বাস্থ্যকর বিকাশ হিসাবে দেখছি যা সকলের, বিশেষত সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর উপকার করতে পারে।’
যেহেতু রাষ্ট্রদূত লি জিমিং জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন তাই শমসের মনে করেন যে বিষয়টি সবার মাথায় রাখা খুব জরুরি। তিনি আরও বলেন, ‘চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত জটিল এবং খুব গুরুত্বপূর্ণ, এ ক্ষেত্রে আমাদের একসাথে কাজ করতে হবে। আমি এখানে উল্লেখ করতে চাই যে আমরা যোগাযোগ বৃদ্ধিতে বিশ্বাসী। আমরা কেবল দ্বিপক্ষীয়ভাবে নয়, এশীয় প্রশান্ত মহাসগারীয় সীমান্তের ক্ষেত্রেও ঘনিষ্ঠ কৌশলগত অংশীদারিত্বে বিশ্বাসী।’তিনি রাষ্ট্রদূত লি এর সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদকে ভ্যাকসিন আন্তর্জাতিকতায় প্রতিস্থাপন করা উচিত। ‘আমি মনে করি এই বিষয়ে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে এবং একসাথে আমাদের ভূমিকা পালন করতে হবে, কারণ ভাইরাস কমপক্ষে আরও বেশ কিছু সময়ের জন্য থাকবে।’
চীনা বিশেষজ্ঞ ড. জু বলেছেন, ‘সাধারণ লক্ষ্য এবং পারস্পরিক সুবিধার মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিজস্বতা অর্জন করেছে।’ তিনি বলেন, ‘বন্ধুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্কের মাধ্যমে আমরা চীনা ও বাংলাদেশিরা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি, মতামত, ভরসাপূর্ণ বন্ধুত্ব ভাগ করে নিয়েছি; যা চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করছে।’ ড. জু আশা প্রকাশ করেন যে সহযোগিতার অভিজ্ঞতা দু'দেশকে আত্মবিশ্বাস ও প্রত্যাশার সাথে হাতে হাত রেখে ভবিষ্যতে এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখাবে।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, চীন-বাংলাদেশের সম্পর্ককে ভূ-রাজনীতির টানাপোড়েনে ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেয়া যাবে না, কারণ তাদের দূরদৃষ্টি অনুযায়ী আগামী দিনের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও বেশি রাজনৈতিক সম্পর্কে পরিণত হবে। এই রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সম্পর্কের আওতায় কীভাবে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ককে নিজস্ব ভিত্তিতে রক্ষা করতে পারে তা গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন তিনি। ড. দেবপ্রিয় আরও বলেন, ‘আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশের জন্য নীতিনির্ধারণের স্বাধীনতা এবং নীতিনির্ধারণের সার্বভৌমত্ব আরও জটিল হবে। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের ফলে চীনের অগ্রাধিকারযোগ্য বাজারে প্রবেশাধিকার অব্যাহত রাখতে হবে।
আরও পড়ুন: গ্যালারি কসমসের মাসব্যাপী ভার্চুয়াল চিত্র প্রদর্শনী ‘দ্য ব্ল্যাক স্টোরি’ শুরু
কূটনৈতিক সর্ম্পকের বাইরে
চীনা বিশেষজ্ঞ ড. নিং শেংনান বলেন, তারা বিশ্বাস করেন যে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে বাংলাদেশ উন্নয়নের মডেল হিসাবে আর্বিভূত হচ্ছে। তিনি বলেন, চীন-বাংলাদেশের বন্ধুত্ব কেবল তাদের কূটনৈতিক সম্পর্কের মধ্যেই নয়, একই উন্নয়ন ফিলোসফির মধ্যে নিহিত। চীন এবং বাংলাদেশ উভয়ই শ্রমঘন শিল্প থেকে শিল্পায়নের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তিনি আরও বলেন, বিশ্বায়ন বিরোধী এই শক্তিশালী তরঙ্গের মুখোমুখি হয়ে চীন ও বাংলাদেশের যৌথভাবে বিশ্বব্যাপী মুক্ত বাণিজ্য ব্যবস্থার পক্ষে অবস্থান করা এবং একে রক্ষা করা প্রয়োজন।
সাবেক রাষ্ট্রদূত সিরাজুল ইসলাম বলেন, এই পূর্বাভাস এমন একটি পথের সন্ধান দিচ্ছে যার মাধ্যমে বাংলাদেশ ও চীন ভবিষ্যতে চমৎকার সহযোগিতা প্রত্যাশা করতে পারে।
ড. রাশেদ আল তিতুমীর বলেন, প্রবৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার জন্য কমপক্ষে তিনটি প্রয়োজনীয় শর্ত রয়েছে যা হল: দুই দেশের মধ্যে উৎপাদন নেটওর্য়াক তৈরি, ঝুঁকি-ভাগ করে নেওয়ার ভিত্তিতে বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তির স্থানান্তর।সাবেক রাষ্ট্রদূত তারিক করিম বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’-বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন। তিনি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা, মর্যাদা ও আত্মসম্মান অক্ষুণ্ন রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
বাংলাদেশ-চীন: একই স্বপ্ন দেখে
চেয়ারম্যান এনায়েতউল্লাহ খান তার সমাপনী বক্তব্যে চীনের রোড এবং বেল্ট ইনিশিয়েটিভের কথা উল্লেখ করেন, যা দূর ও নিকটবর্তী দেশগুলির সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিশাল প্রতিশ্রুতি বহন করে। তিনি বলেন, সারাবিশ্বের মধ্যে চীনের উন্নয়ন বাংলাদেশিদের কাছে গর্ব এবং আনন্দের অন্যতম উৎস। আমরা জানি যে চীনের জনগণের একটি স্বপ্ন আছে; বাংলাদেশের জনগণেরও সেই স্বপ্ন রয়েছে। মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে লক্ষ্য অর্জনের প্রচেষ্টায় রয়েছি আমরা।
দ্রুতই টিকা রপ্তানি শুরু করতে পারে সেরাম
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট খুব শিগগিরই করোনার টিকা রপ্তানি শুরু করতে পারে বলে জানা গেছে। প্রাথমিক ভাবে জুলাইয়ের শেষ নাগাদ অথবা আগস্ট মাস থেকে পূর্বেই বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা এবং নেপালের ক্রয়কৃত টিকা সরবরাহ করবে প্রতিষ্ঠানটি।
বুধবার ভারতীয় গণমাধ্যম দি প্রিন্ট তাদের প্রতিবেদনে এমন তথ্যই তুলে ধরে।
আরও পড়ুন: ধৈর্য ধরুন, দেখেন কী করতে পারি: টিকা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী
এদিকে গতকালই (বুধবার) বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যান। এসময় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সাথে এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠক বসেন তিনি।
তবে বৈঠক শেষে কোনও পক্ষই কিছু জানায়নি।
আরও পড়ুন: বাইডেন রাজত্বের ১৫০ দিনে ৩০ কোটি টিকার মাইলফলক
বাংলাদেশকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্টজেনেকার উদ্ভাবিত ৩ কোটি ডোজ টিকা সরবরাহ করার কথা ছিল ভারতীয় সেরাম ইনস্টিটিউটের। তবে এখন পর্যন্ত মাত্র ৭০ লাখ টিকার ডোজ টিকা সরবরাহ করতে পেরেছে প্রতিষ্ঠানটি।
আরও পড়ুন: কোভ্যাক্সের ওপর নির্ভর রোহিঙ্গাদের টিকাদান
চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে বাংলাদেশকে ৫০ লাখ টিকা সরবরাহ করার কথা থাকলেও, হঠাৎ করেই ভারতের করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় টিকা সরবরাহ বন্ধ করে দেয় প্রতিষ্ঠানটি।
বর্ষাকালে ভ্রমণের পূর্বে কিছু সতর্কতা
আপনি যদি খুব বেশি ভ্রমণপিপাসু হয়ে থাকেন তবে বর্ষাকালে ভ্রমণ আপনার জন্য নতুন কিছু নয়। অবশ্য খুব গরম বা হাড়-কাপানো শীত অথবা পা পিছলে পড়ে যাবার মত বৃষ্টি ভেজা আবহাওয়ায় যারা ভ্রমণ করতে ভালবাসেন, কোনও কিছুই তাদেরকে ঠেকিয়ে রাখতে পারে না। এরপরেও আপনার ভ্রমণকে আরও সুন্দর এবং ঝামেলামুক্ত করার জন্য কিছু পূর্ব সতর্কতা মেনে চলতেই হয়। চলুন দেখে নেই, এই বর্ষায় ঘুরতে যাবার আগে কি কি ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে।
বর্ষাকালে ভ্রমণে যাবার পূর্বে করণীয়
সঠিক গন্তব্য বাছাই
বন্ধু-বান্ধব সবাই একসাথে হয়ে হুট করে বেরিয়ে পড়লেন। গন্তব্যে পৌঁছে স্থানীয় সবার কাছে শুনলেন এই জায়গাটা এই সময়ে না, অন্য আরেক সময়ে অনেক ভালো লাগে। অগত্যা কোনও রকম ঘুরে আসার পর আপনার বন্ধুদের যারা ইতোমধ্যে সেখানে আগে ঘুরে এসেছে তাদের কাছেও একই কথা শুনলেন। এরকম হতাশাজনক অবস্থায় পড়তে না চাইলে বর্ষাকালে ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে সুন্দর জায়গাগুলোর ব্যাপারে আগে থেকেই জেনে রাখুন। অবশ্য বাংলাদেশ বর্ষাকাল এবং শীতকাল দুই ঋতুতেই অপরূপ সাজে সেজে উঠে। তাই বর্ষাকালে বাংলাদেশ ভ্রমণের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। শুধু আগে থেকে কাছাকাছি নিরাপদ আশ্রয়স্থল, থানা, এবং হাসপাতালগুলোর ব্যাপারে জেনে নিবেন।
আরও পড়ুন: বজ্রপাত থেকে বাঁচার জন্য সতর্ক হোন
আবহাওয়ার খবর দেখে নেয়া
এসময় বৃষ্টির ব্যাপারে সঠিক করে কিছুই বলা যায় না। রওনা হওয়ার সময়ে হয়ত দেখবেন রৌদ্রজ্জ্বল দিন আর গন্তব্যে পৌঁছার ঠিক আগ মুহুর্তে অকস্মাৎ বৃষ্টি এসে একদম কাক ভেজা করে দিবে। তাই আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী যাত্রার শুরু থেকে গন্তব্যে পৌছার আগে কোথায় কোথায় থামবেন, তার একটা ছোট্ট ছক করে ফেলুন। যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থার জন্য বিকল্প রাস্তা বের করে রাখুন। কারণ অনেক পরিকল্পনার পরেও স্বাভাবিকভাবেই সব কিছু পরিকল্পনা-মাফিক হয় না।
দিনের শুরুতে যাত্রা
বর্ষাকালে ভ্রমণ মানেই বৃষ্টির জন্য আপনার যাত্রা দেরি অথবা গন্তব্যে পৌঁছাতে দেরি। তাই কিছুটা সময় হাতে নিয়ে আগেই বেড়িয়ে পড়ুন। আর অবশ্যই রাতে নয়। মুষলধারে বৃষ্টি বা ঝড়ো বৃষ্টি দুই ক্ষেত্রেই দিনে ভ্রমণটাই বেশি নিরাপদ। তাছাড়া আপনি যদি বৃষ্টির সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে চান, সেক্ষেত্রেও সকাল সকাল বেরিয়ে পড়াটাই উত্তম। আপনার অবস্থান এবং গন্তব্যের মধ্যকার দূরত্বটা জেনে রাখুন। সেই সাথে যে গাড়িতে যাচ্ছেন, তাতে করে সেখানে পৌছতে কত সময় লাগতে পারে তারও একটা ধারণা নিন।
আরও পড়ুন: সাইক্লিং, দৌড় কিংবা সাঁতার: ওজন কমাতে কোনটি বেশি কার্যকরী?
পানি নিরোধক পরিধেয় ও ব্যাগ প্যাক
বর্ষাকোলে ভ্রমণে এটা অনিবার্য যে, আপনি ও আপনার জিনিসপত্র সব ভিজে যাবে। তবে এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। রেইনকোট ও ছাতা সাথে নিয়ে নিন। আপনার কাপড় নেয়ার জন্য পানি নিরোধক এবং খুব সহজেই ভাঁজ করা যায় এমন ব্যাগ সাথে নিয়ে নিন। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আপনার ঘড়ি, মোবাইল ফোন, ক্যামেরা, পাওয়ার ব্যাঙ্ক প্রভৃতিকে বৃষ্টি থেকে রক্ষা করা। এগুলোর জন্য একটু খরচ হলেও ভালো পানি নিরোধক ব্যাগ কিনে নিন। আপনার এই বিনিয়োগটি পরবর্তীতে আপনার অতি প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিগুলোকে রক্ষা করবে।
আরও পড়ুন: জন্মদিনে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি মিঠুন
ওষুধ এবং পোকামাকড় নিরোধক সাথে নেয়া
বৃষ্টির এই মৌসুমে প্রত্যেকটি পর্যটন এলাকাই মশা এবং অন্যান্য পোকামাকড়ের প্রজনন ক্ষেত্র হয়ে ওঠে। শুধু তাই নয়, খাবারগুলোতেও ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বেড়ে যায়। তাই বিভিন্নভাবে আপনি ফুড পয়জনিংয়ের শিকার হতে পারেন। এ জন্য আগে থেকেই সম্ভব হলে একটি ফার্স্ট এইড বক্স সাথে রাখুন। পোকামাকাড় নিরোধক ক্রিমগুলো আপনাকে যে কোনো জায়গায় সুরক্ষা দিবে। আর অনেক সময় ঘুরতে গেলে আশেপাশে কোনো ফার্মেসী নাও পাওয়া যেতে পারে। তাই সাথে ওষুধ থাকা আবশ্যক। এগুলো আপনার খাবারে সমস্যা, ভ্রমণের কারণে মাথা ব্যথা, ছোট্ট-খাট জখম ইত্যাদিতে কাজে লাগবে।
আরও পড়ুন: বর্ষায় পোকামাকড়ের উপদ্রব থেকে বাঁচতে করণীয় সম্পর্কে জেনে নিন
অবশেষে
সর্বপরি আপনার বর্ষাকালের ভ্রমণ শুরুর আগের দিনেই এই গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলো তালিকা করে আপনার স্মার্টফোনে সেভ করে রাখতে পারেন। কি কি নিয়েছেন, কোথায় কি রেখেছেন এসব কিছু পরবর্তীতে আপনি চটজলদি বের করে ফেলতে পারবেন। এই সতর্কতাগুলো আপনার প্রিয়জনের সাথে আপনার দীর্ঘ পথের ভ্রমণটিকে আরো বেশি দ্বিধাহীন করে তুলবে।
রাজধানীতে ফাইজারের টিকা দেয়া শুরু
করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে বাংলাদেশে ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
সোমবার সকাল ১০টায় দিকে শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট পরিচালক ফারুক আহমেদ টিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
এর আগে সকাল ৯টা ৪৯ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভেনশন সেন্টারে টিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।
আরও পড়ুন: দেশে আন্তর্জাতিক মানের ভ্যাকসিন ইনস্টিটিউট তৈরি করা হবে: প্রধানমন্ত্রী
একই সময়ে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিল আহমেদ নিজ কেন্দ্রে টিকা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
এই প্রসঙ্গে শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে থেকে ১১৫ জনকে এসএমএস পাঠানো হয়েছে। যারা এই হাসাপাতালে টিকা নেয়ার জন্য নিবন্ধন করেও টিকা পায়নি। ১১৫ জনের মধ্যে যারা আসবে তাদের সবাইকেই এই টিকা দেয়া হবে।’
আরও পড়ুন: বাইডেন রাজত্বের ১৫০ দিনে ৩০ কোটি টিকার মাইলফলক
এর আগে গত রবিবার স্বাস্থ্য বুলেটিনে উপস্থিত থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ডা. শামসুল হক বলেন, পরীক্ষামূলক প্রয়োগের পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখার জন্য ৭ থেকে ১০ দিন প্রত্যেককে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।
টিকাদান কার্যক্রমে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একাধিক কর্মকর্তা সেখানে উপস্থিত ছিলেন বলেও জানান তিনি।
যাদের টিকা নেয়া বারণ
যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসা হিসেবে ‘ব্লাড প্লাজমা’ কিংবা ‘মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি’ নিয়েছেন বা এখনও নিচ্ছেন তাদের করোনাভাইরাসের টিকা নেয়া উচিত হবে না।
আরও পড়ুন: অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৫ লাখ মানুষ ভ্যাকসিন পাবে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
যারা ইতোমধ্যেই করোনাভাইরাসের টিকা নিয়েছেন তাদের শারীরিক যেকোনো অস্বস্তির দিকে সতর্ক নজর থাকতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে কোনো ‘অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন’ দেখা দিচ্ছে কি না। যেকোনো অস্বস্তি, তা যত সামান্যই হোক, চিকিৎসককে জানাতে হবে। পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।
পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া যদি দেখা দেয় তবে শুরুতে ঘাবড়ে যাওয়ার কোনো কারণ নেই। জ্বর, অবসাদ, ব্যথা, চুলকানি ইত্যাদি পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়া কথা ইতোমধ্যেই জানা গেছে। আর এসবই হল শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় টিকার প্রতিক্রিয়া, যাতে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই।
আরও পড়ুন: ভ্যাকসিন বাণিজ্যে স্বচ্ছতার আহ্বান বাংলাদেশের
বাংলাদেশ গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে গণটিকা দান কার্যক্রম শুরু করে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে আসা টিকা দিয়ে। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত এই টিকার ৩ কোটি ৪০ লাখ ডোজ কেনার চুক্তি করেছিল বাংলাদেশ। তবে ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞার কারণে ৭০ লাখ ডোজ দেয়ার পর সিরাম আর টিকা দিতে পারেনি।
এ অবস্থায় অন্য দেশ থেকে টিকা পাওয়ার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। আর ফাইজারের কিছু টিকা পাওয়া গেছে, তবে তা চাহিদার তুলনায় একেবারেই কম।
বিশ্বে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১৭ কোটি ৮১ লাখের বেশি
একদিকে বিশ্বজুড়ে কয়েকটি দেশে নতুন সংক্রমণের সংখ্যা কমে যাওয়া, অপরদিকে করোনা টিকা কার্যক্রম পরিচালনার পরও দিন-দিন বিভিন্ন দেশেই বাড়ছে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু। সেই সাথে নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ।ইতোমধ্যেই বিশ্বে করোনায় একদিকে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৭ কোটি ৮১ লাখ ছাড়িয়েছে, অন্যদিকে মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৩৮ লাখ ৫৭ হাজারের বেশি ছাড়িয়েছে। বিশ্বে এ পর্যন্ত প্রায় ২৫৬ কোটি ৬৪ লাখ ১ হাজার ৪২ ডোজ করোনার টিকা প্রদান করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: করোনা: দেশে সিনোফার্মের টিকা দেয়া শুরু
যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস্ বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, রবিবার সকাল পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১৭ কোটি ৮১ লাখ ২৩ হাজার ১৪৪ জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া প্রাণঘাতী এই করোনাভাইরাসে মারা গেছেন ৩৮ লাখ ৫৭ হাজার ৮০৬ জন।করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ আমেরিকায় এখন পর্যন্ত মোট শনাক্তের সংখ্যা ৩ কোটি ৩৫ লাখ ৩৭ হাজার ৮০৭ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছে ৬ লাখ ১ হাজার ৭৪৮ জন।
আরও পড়ুন: কোভিড-১৯: দেশে দেড় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ৬৭ প্রাণহানি, শনাক্ত ১৮.০২ শতাংশ
এদিকে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিলে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৮০০ জনে। দেশটিতে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ১ কোটি ৭৮ লাখ ৮৩ হাজার ৭৫০ জন। মৃত্যুর দিক দিয়ে দেশটির অবস্থান দ্বিতীয়।বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারতে চলমান করোনার তাণ্ডবে এখন শনিবার পর্যন্ত মোট শনাক্ত হয়েছে ২ কোটি ৯৮ লাখ ২৩ হাজার ৫৪৬ জন।
আরও পড়ুন: চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনায় ৩ মৃত্যু, নতুন শনাক্ত ১০২
বাংলাদেশ পরিস্থিতিশনিবার বিকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আরও ৬৭ জন মারা গেছেন, যা দেড় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে সর্বশেষ ২ মে ৬৯ জনের মৃত্যু হয়। এনিয়ে দেশে মোট মৃত্যু ১৩ হাজার ৪৬৬ জনে দাঁড়াল।
আরও পড়ুন: দেশে আন্তর্জাতিক মানের ভ্যাকসিন ইনস্টিটিউট তৈরি করা হবে: প্রধানমন্ত্রী
এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ৩ হাজার ৫৭ জনের শরীরে নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এনিয়ে মোট শনাক্ত ৮ লাখ ৪৮ হাজার ২৭ জনে পৌঁছেছে।এর আগে শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জনায়, ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে ৫৪ জন মারা গেছেন এবং ৩ হাজার ৮৮৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন।
আরও পড়ুন: ভ্যাকসিন বাণিজ্যে স্বচ্ছতার আহ্বান বাংলাদেশের
গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১৬ হাজার ৯৬৪ টি। শনাক্তের হার ১৮.০২ শতাংশ।নতুন করে করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৭২৫ জন। মোট সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ৮০ হাজার ১৪৬ জন।
দারিদ্র্য হার কমাতে প্রবৃদ্ধি বাড়াতে চায় সরকার
দেশের দারিদ্র্য হার কমাতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর লক্ষ্যেই আগামী বাজেট বাস্তবায়নের চিন্তা করছে সরকার।
আগামী বাজেটের এক নথি পর্যালোচনায় জানা যায়, দেশের দারিদ্র্যতা ও অসমতা দূর করে নিম্ন আয়ের মানুষদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্যই এমন পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।
আরও পড়ুন: বাজেট: কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ না দেয়ায় টিআইবির সাধুবাদ
দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে সরকার দরিদ্র ও ক্ষতিগ্রস্তদের আরও বেশি করে সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করতে চাইছে। এর পাশাপাশি, দেশে ও বিদেশে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ক্ষুদ্রঋণ এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।
বাজেট সংক্রান্ত নথি থেকে জানা যায়, এসব খাতে সরকার আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে আরও বেশি গুরুত্ব দিতে যাচ্ছে। সরকারের এখন অন্যতম চেষ্টাই হচ্ছে আরও বেশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে টেকসই ও সার্বিক উন্নয়ন সাধন করা।
আরও পড়ুন: বাজেটে দরিদ্র ও বেকাররা ব্যাপকভাবে অবহেলিত: বিএনপি
দেশের আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭.২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাজেট বাস্তবায়নের জন্য বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ তৈরি, রপ্তানি বৃদ্ধি, ব্যবসা বান্ধব কর ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক খাতকে পুনর্গঠন এবং জনগণের কাছ থেকে বিনিয়োগ বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।
এবারের বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো- স্বাস্থ্য খাতের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি এবং বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির অন্তরায়গুলো দূর করা।
আরও পড়ুন: বাজেটে জীবন, জীবিকার সুরক্ষায় সুনির্দিষ্ট রূপরেখা নেই: সিপিডি
এর পাশাপাশি সরকার দেশের বড়-বড় প্রকল্প সহ সকল গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প সঠিক সময়ে মধ্যে বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে প্রবৃদ্ধির টেকসই উর্ধ্বগতি নিশ্চিত করতে চায়।
এসকল প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম হলো - পদ্মা সেতু, পদ্মা রেল সেতু, দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণ, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা সমুদ্র বন্দর, মাতারবাড়ি পাওয়া প্ল্যান্ট এবং ঢাকা মেট্রোরেল।
আরও পড়ুন: প্রস্তাবিত বাজেট তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনের অন্তরায়
বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির মাঝেই জীবন এবং জীবিকা নিশ্চিত ও অর্থনৈতিক প্রভাব কাটিতে ওঠার লক্ষ্যে সরকার আসন্ন অর্থবছরে গতানুগতিক বাজেটের থেকে একটু ভিন্ন ধারার বাজেট আনতে চলেছে।