আপনি যদি খুব বেশি ভ্রমণপিপাসু হয়ে থাকেন তবে বর্ষাকালে ভ্রমণ আপনার জন্য নতুন কিছু নয়। অবশ্য খুব গরম বা হাড়-কাপানো শীত অথবা পা পিছলে পড়ে যাবার মত বৃষ্টি ভেজা আবহাওয়ায় যারা ভ্রমণ করতে ভালবাসেন, কোনও কিছুই তাদেরকে ঠেকিয়ে রাখতে পারে না। এরপরেও আপনার ভ্রমণকে আরও সুন্দর এবং ঝামেলামুক্ত করার জন্য কিছু পূর্ব সতর্কতা মেনে চলতেই হয়। চলুন দেখে নেই, এই বর্ষায় ঘুরতে যাবার আগে কি কি ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে।
বর্ষাকালে ভ্রমণে যাবার পূর্বে করণীয়
সঠিক গন্তব্য বাছাই
বন্ধু-বান্ধব সবাই একসাথে হয়ে হুট করে বেরিয়ে পড়লেন। গন্তব্যে পৌঁছে স্থানীয় সবার কাছে শুনলেন এই জায়গাটা এই সময়ে না, অন্য আরেক সময়ে অনেক ভালো লাগে। অগত্যা কোনও রকম ঘুরে আসার পর আপনার বন্ধুদের যারা ইতোমধ্যে সেখানে আগে ঘুরে এসেছে তাদের কাছেও একই কথা শুনলেন। এরকম হতাশাজনক অবস্থায় পড়তে না চাইলে বর্ষাকালে ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে সুন্দর জায়গাগুলোর ব্যাপারে আগে থেকেই জেনে রাখুন। অবশ্য বাংলাদেশ বর্ষাকাল এবং শীতকাল দুই ঋতুতেই অপরূপ সাজে সেজে উঠে। তাই বর্ষাকালে বাংলাদেশ ভ্রমণের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। শুধু আগে থেকে কাছাকাছি নিরাপদ আশ্রয়স্থল, থানা, এবং হাসপাতালগুলোর ব্যাপারে জেনে নিবেন।
আরও পড়ুন: বজ্রপাত থেকে বাঁচার জন্য সতর্ক হোন
আবহাওয়ার খবর দেখে নেয়া
এসময় বৃষ্টির ব্যাপারে সঠিক করে কিছুই বলা যায় না। রওনা হওয়ার সময়ে হয়ত দেখবেন রৌদ্রজ্জ্বল দিন আর গন্তব্যে পৌঁছার ঠিক আগ মুহুর্তে অকস্মাৎ বৃষ্টি এসে একদম কাক ভেজা করে দিবে। তাই আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী যাত্রার শুরু থেকে গন্তব্যে পৌছার আগে কোথায় কোথায় থামবেন, তার একটা ছোট্ট ছক করে ফেলুন। যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থার জন্য বিকল্প রাস্তা বের করে রাখুন। কারণ অনেক পরিকল্পনার পরেও স্বাভাবিকভাবেই সব কিছু পরিকল্পনা-মাফিক হয় না।
দিনের শুরুতে যাত্রা
বর্ষাকালে ভ্রমণ মানেই বৃষ্টির জন্য আপনার যাত্রা দেরি অথবা গন্তব্যে পৌঁছাতে দেরি। তাই কিছুটা সময় হাতে নিয়ে আগেই বেড়িয়ে পড়ুন। আর অবশ্যই রাতে নয়। মুষলধারে বৃষ্টি বা ঝড়ো বৃষ্টি দুই ক্ষেত্রেই দিনে ভ্রমণটাই বেশি নিরাপদ। তাছাড়া আপনি যদি বৃষ্টির সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে চান, সেক্ষেত্রেও সকাল সকাল বেরিয়ে পড়াটাই উত্তম। আপনার অবস্থান এবং গন্তব্যের মধ্যকার দূরত্বটা জেনে রাখুন। সেই সাথে যে গাড়িতে যাচ্ছেন, তাতে করে সেখানে পৌছতে কত সময় লাগতে পারে তারও একটা ধারণা নিন।
আরও পড়ুন: সাইক্লিং, দৌড় কিংবা সাঁতার: ওজন কমাতে কোনটি বেশি কার্যকরী?
পানি নিরোধক পরিধেয় ও ব্যাগ প্যাক
বর্ষাকোলে ভ্রমণে এটা অনিবার্য যে, আপনি ও আপনার জিনিসপত্র সব ভিজে যাবে। তবে এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। রেইনকোট ও ছাতা সাথে নিয়ে নিন। আপনার কাপড় নেয়ার জন্য পানি নিরোধক এবং খুব সহজেই ভাঁজ করা যায় এমন ব্যাগ সাথে নিয়ে নিন। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আপনার ঘড়ি, মোবাইল ফোন, ক্যামেরা, পাওয়ার ব্যাঙ্ক প্রভৃতিকে বৃষ্টি থেকে রক্ষা করা। এগুলোর জন্য একটু খরচ হলেও ভালো পানি নিরোধক ব্যাগ কিনে নিন। আপনার এই বিনিয়োগটি পরবর্তীতে আপনার অতি প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিগুলোকে রক্ষা করবে।
আরও পড়ুন: জন্মদিনে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি মিঠুন
ওষুধ এবং পোকামাকড় নিরোধক সাথে নেয়া
বৃষ্টির এই মৌসুমে প্রত্যেকটি পর্যটন এলাকাই মশা এবং অন্যান্য পোকামাকড়ের প্রজনন ক্ষেত্র হয়ে ওঠে। শুধু তাই নয়, খাবারগুলোতেও ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বেড়ে যায়। তাই বিভিন্নভাবে আপনি ফুড পয়জনিংয়ের শিকার হতে পারেন। এ জন্য আগে থেকেই সম্ভব হলে একটি ফার্স্ট এইড বক্স সাথে রাখুন। পোকামাকাড় নিরোধক ক্রিমগুলো আপনাকে যে কোনো জায়গায় সুরক্ষা দিবে। আর অনেক সময় ঘুরতে গেলে আশেপাশে কোনো ফার্মেসী নাও পাওয়া যেতে পারে। তাই সাথে ওষুধ থাকা আবশ্যক। এগুলো আপনার খাবারে সমস্যা, ভ্রমণের কারণে মাথা ব্যথা, ছোট্ট-খাট জখম ইত্যাদিতে কাজে লাগবে।
আরও পড়ুন: বর্ষায় পোকামাকড়ের উপদ্রব থেকে বাঁচতে করণীয় সম্পর্কে জেনে নিন
অবশেষে
সর্বপরি আপনার বর্ষাকালের ভ্রমণ শুরুর আগের দিনেই এই গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলো তালিকা করে আপনার স্মার্টফোনে সেভ করে রাখতে পারেন। কি কি নিয়েছেন, কোথায় কি রেখেছেন এসব কিছু পরবর্তীতে আপনি চটজলদি বের করে ফেলতে পারবেন। এই সতর্কতাগুলো আপনার প্রিয়জনের সাথে আপনার দীর্ঘ পথের ভ্রমণটিকে আরো বেশি দ্বিধাহীন করে তুলবে।