ক্রিকেট
বাংলাদেশের বিপক্ষে নাটকীয় জয়ে সেমিফাইনালে আফগানিস্তান
বাংলাদেশের বিপক্ষে ৮ রানের নাটকীয় জয়ে (ডিএল পদ্ধতিতে) চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠেছে আফগানিস্তান। এতে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়া দুই দলই বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়ল।
নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে এই প্রথম বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠল আফগানিস্তান।
বাংলাদেশি বোলারদের দক্ষতায় আফগানিস্তান প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ১১৫ রান সংগ্রহ করে। বাংলাদেশের পক্ষে ৩ উইকেট নিয়ে সবচেয়ে সফল বোলার রিশাদ হোসেন।
জবাবে বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল ১২.১ ওভারে জয় তুলে নিয়ে আফগানিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে ভালো রান রেট বজায় রেখে সেমিফাইনালে ওঠা। কিন্তু তারা তা করতে ব্যর্থ হয়েছে। বৃষ্টিও দু'বারের বেশি তাদের চেষ্টায় বাধা দিয়েছে।
আরও পড়ুন: সেমির দৌড়ে ১১৬ রানের লক্ষ্যে সমীকরণ মেলাতে হচ্ছে টাইগারদের
নাজমুল হোসেন শান্ত, সাকিব আল হাসান ও তৌহিদ হৃদয় সবাই প্রভাব ফেলতে পারেননি। সাকিব ও তানজিদ হাসান তামিম শূন্য রানে আউট হয়েছেন। মাত্র ৫ রান করে ফেরেন শান্ত।
এবারের বিশ্বকাপে দ্বিতীয়বারের মতো একাদশে যুক্ত হওয়া সৌম্য সরকারও প্রভাব রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। এবারের বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শূন্য রান করেন তিনি।
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ৯ বল খেলে মাত্র ৬ রান দেন। সেমিফাইনালে ওঠার দারুণ সুযোগ যখন বাংলাদেশের সামনে ছিল, এরকম গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সব ব্যাটসম্যান তাদের যোগ্যতা প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছেন।
নাভিন-উল-হক ও রশিদ খান ৪টি করে উইকেট নিয়ে আফগানিস্তানের জয়ের মূল কারিগর ছিলেন। আফগান বোলাররা এতটাই সুশৃঙ্খল ছিলেন যে এই ম্যাচে তিনবার হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা তৈরি করেন তারা।
২৭ জুন সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হবে আফগানিস্তান। অপর সেমিফাইনালে ভারত খেলবে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন: অজিদের অনিশ্চয়তায় ফেলে সেমিতে ভারত
সেমির দৌড়ে ১১৬ রানের লক্ষ্যে সমীকরণ মেলাতে হচ্ছে টাইগারদের
চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার এইট পর্বে মঙ্গলবার নিজেদের শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানকে ১১৫ রানে রুখে দিয়েছে বাংলাদেশি বোলাররা।
সেমিফাইনালে যেতে বাংলাদেশকে এখন ১২ দশমিক ১ ওভারে ১১৬ রান করতে হবে।
তাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে তারা কেবল তখনই যোগ্যতা অর্জন করতে পারে যদি তারা ১২ দশমিক ১ ওভারে লক্ষ্য তাড়া করে বা ১২ দশমিক ৫ ওভারে এই রান টপকালেও চলবে বাংলাদেশকে। সে ক্ষেত্রে স্কোর সমান হওয়ার পর একটি ৬ মারতে হবে। অর্থাৎ ১২ দশমিক ৫ ওভারে বাংলাদেশকে করতে হবে ১২১ রান।
১২ দশমিক ৩ ওভারে আফগানিস্তানকে টপকাতে পারলেও সেমিফাইনালে যাবে বাংলাদেশ। করতে হবে ১২ দশমিক ৩ ওভারে ১১৯ রান।
আরও পড়ুন: অজিদের অনিশ্চয়তায় ফেলে সেমিতে ভারত
তবে এতদিন বোলারদের পক্ষে থাকা পিচে শক্তিশালী বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে বাংলাদেশ।
এই শর্তগুলোর কোনো একটি পূরণ করতে পারলেই বাংলাদেশ সেমিফাইনালের জন্য যোগ্য হবে। আর তারা যদি তা না করতে পারে এবং আফগানিস্তান জিতে যায়, তাহলে প্রথমবারের মতো আফগানরা সেমিফাইনাল খেলবে।
বাংলাদেশ যদি শর্ত পূরণ না করে জয়লাভ করে, তাহলে অস্ট্রেলিয়া সেমিফাইনালে উঠবে।
টাইগারদের জন্য আরেকটি চিন্তার কারণ বৃষ্টি। আফগানিস্তানদের ইনিংসের পর ভেন্যু এলাকায় বৃষ্টি শুরু হয়। মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টা ২০ মিনিট পর্যন্ত অবিরাম বৃষ্টি হয়েছে। ওভার কমে গেলে কম ওভারেই নতুন টার্গেটের মুখে পড়বে বাংলাদেশ।
কিংসটাউনের আর্নোস ভেল গ্রাউন্ডের উইকেটে রান তোলা কঠিন হবে বলে মনে করা হচ্ছে। পাওয়ার প্লেতে কোনো উইকেট না হারিয়ে মাত্র ২৭ রান তোলে আফগানিস্তান।
আরও পড়ুন: রোহিতের তাণ্ডবে দুর্জয় লক্ষ্যের সামনে অস্ট্রেলিয়া
বাংলাদেশের বোলাররা ম্যাচের শুরুটা দুর্দান্ত করেছে। সেখান থেকে দ্রুত রান তুলতে হিমশিম খেতে হয় আফগানিস্তানকে।
ম্যাচে রিশাদ হোসেন বাংলাদেশের সফলতম বোলার, ৪ ওভারে ৩ উইকেট নেন তিনি। তিনি তৃতীয় ওভার পর্যন্ত কোনো বাউন্ডারি দেননি। তবে এরপর রহমানউল্লাহ গুরবাজ বল বাউন্ডারিতে দিয়ে ৪ রান সংগ্রহ করেন।
তার সবচেয়ে সফল ওভারটি ছিল চতুর্থ ওভার, তিনি মাত্র ৮ রান খরচ করে ২ উইকেট নিয়েছেন।
একটি করে উইকেট নেন তাসকিন আহমেদ ও মুস্তাফিজুর রহমান। ৪ ওভারে তাসকিন দিয়েছেন মাত্র ১২ রান, আর মুস্তাফিজ দিয়েছেন ১৭ রান।
শেষ ওভারে তানজিম হাসান সাকিবের বলে রশিদ খানের দুটি ছক্কা আফগানিস্তানকে ১১০ রানের গণ্ডি পার করতে সাহায্য করে।
এই ভেন্যুতে যে ৪টি ম্যাচে প্রথমে ব্যাটিং করে আফগানিস্তানের জয় তাদেরকে আজকের ম্যাচের ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাসী করতে পারে।
অন্যদিকে, টি-টোয়েন্টি বা ৫০ ওভারের ফরম্যাটে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ আফগানিস্তানের বিপক্ষে হারেনি। এই উৎসাহ কাজে লাগিয়ে তারা সামনে এগিয়ে যেতে পারে।
আরও পড়ুন: অস্ট্রেলিয়ার ‘মহা গুরুত্বপূর্ণ’ ম্যাচে টস হেরে ব্যাটিংয়ে ভারত
অজিদের অনিশ্চয়তায় ফেলে সেমিতে ভারত
ভারতীয় বোলিং আক্রমণের সামনে ২০৬ রানের লক্ষ্য যে কতটা বড়, তা টের পেতে দিল না অস্ট্রেলিয়া। তবে গত নভেম্বরে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে হারানো ভারতের বিপক্ষে শেষ পর্যন্ত হার মেনেই নিতে হয়েছে।
সোমবার সেন্ট লুসিয়ার ড্যারেন স্যামি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাট করে নির্ধারিত বিশ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ২০৫ রান সংগ্রহ করে ভারত। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৮১ রানে শেষ হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস।
এর ফলে ২৪ রানে জিতে টেবিলের শীর্ষে থেকে সেমি-ফাইনাল নিশ্চিত করেছে ভারত। অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়ার সেমি-ফাইনালে খেলা পড়ে গেছে অনিশ্চয়তায়।
আরও পড়ুন: রোহিতের তাণ্ডবে দুর্জয় লক্ষ্যের সামনে অস্ট্রেলিয়া
এদিন ট্র্যাভিস হেডের ব্যাটে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে অস্ট্রেলিয়া। তার ৪৩ বলে ৭৬ রানের ইনিংসটিই দলের সর্বোচ্চ। এছাড়া মিচেল মার্শ ৩৭ ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ২০ রান করেন।
ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট নিয়েছেন আর্শদীপ সিং। এছাড়া কুলদীপ যাদবের ঝুলিতে গেছে দুটি উইকেট।
২০৬ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নেমে ভারতের মতোই উইকেট হারিয়ে ইনিংস শুরু হয় অস্ট্রেলিয়ার। প্রথম ওভারের শেষ বলে আর্শদীপের আউটসাইড অফ লেংথের ডেলিভারিতে ব্যাট ছুঁইয়ে স্লিপে ক্যাচ দেন ডেভিড ওয়ার্নার। ৬ বল মোকাবিলায় ৬ রান করে তিনি সাজঘরে ফিরলে দলীয় ৬ রানে প্রথম উইকেট হারায় অজিরা।
এরপর ট্র্যাভিস হেডকে সঙ্গ দিতে আসেন অধিনায়ক মিচেল মার্শ। এখানেও ভারতের মতোই পিটিয়ে খেলতে থাকেন হেড, আর তাকে যোগ্য সঙ্গ দিতে থাকেন মার্শ। আর উইকেট না হারিয়ে প্রথম পাওয়ার প্লেতে ৬৫ রান তোলে অস্ট্রেলিয়া। এরপর মাত্র ২৪ বলে নিজের হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন হেড। তবে মাঝে মিচেল মার্শ আউট হয়ে গেলে ভাঙে ৮১ রানের জুটি।
এর ফলে নিজের প্রথম ওভারে মাত্র চার রান দেওয়া কুলদীপ দ্বিতীয় ওভারেই দলকে ব্রেকথ্রু এনে দেন। দুবার জীবন পাওয়ার পর অক্ষর প্যাটেলের হাতে দারুণ এক ক্যাচ হয়ে ফিরে যান মার্শ। ফেরার আগে ২৮ বলে দুটি ছক্কা ও তিনটি চারের সাহায্যে ৩৭ রান করে যান তিনি।
এরপর চতুর্থ ব্যাটার হিসেবে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল এসে সূর্যকুমারের মতোই হেডের সঙ্গে তাল মেলান। দুজনেই মেরে খেলতে শুরু করেন।
তবে বেশিক্ষণ স্থায়ী হননি ম্যাক্সওয়েলও। কুলদীপের শেষ ওভারের প্রথম বলেই বোল্ড হয়ে যান তিনি। একটু স্লোয়ার ডেলিভারি দিয়েছিলেন কুলদীপ। তা দেখে খানিকটা এগিয়ে এসে জোরে ব্যাট চালান ম্যাক্সওয়েল। কিন্তু ব্যট-বলে সংযোগ না হওয়া উইকেট উপড়ে যায়। ১২ বলে একটি ছক্কা ও দুটি চারে ২০ রান করে তিনি আউট হয়ে গেলে ১২৮ রানে তিন উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া।
পরের ওভারের প্রথম বলে ফিরে যান নতুন ব্যাটার মার্কাস স্টয়নিসও। অক্ষর প্যাটেলের ডেলিভারিতে রিভার্স সুইপ করে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট অঞ্চলে হার্দিকের হাতে ধরা পড়েন তিনি।
পরপর দুই উইকেট হারিয়ে খানিকটা চাপে পড়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। সঙ্গে প্রয়োজনীয় রান রেটও বাড়তে থাকে। চাপের সুযোগ নিয়ে এরপর হেডকে ফেরান বুমরাহ।
অস্ট্রেলিয়ার রানের গতি পড়ে গেলে ব্রেকথ্রুর আশায় বুমরাহর হাতে বল তুলে দেন রোহিত। ব্যক্তিগত তৃতীয় ওভারের তৃতীয় ডেলিভারিতে স্লোয়ার দেন বুমরাহ, কিন্তু তা না বুঝতে পেরে রোহিতের কাছে ক্যাচ দেন হেড। ফেরার আগে ৪৩ বলে চারটি ছক্কা ও ৯টি চার মেরে ৭৬ রান করেন তিনি। এর ফলে ১৬.৩ ওভারে ১৫০ রানে পাঁচ উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। জিততে তাদের তখন প্রয়োজন ২১ বলে ৫৬ রান।
আরও পড়ুন: অস্ট্রেলিয়ার ‘মহা গুরুত্বপূর্ণ’ ম্যাচে টস হেরে ব্যাটিংয়ে ভারত
পরের ওভারের প্রথম বলেই নতুন ব্যাটার ম্যাথিউ ওয়েডকে ফেরান আর্শদীপ। এরপর টিম ডেভিড ওই ওভারের তৃতীয় ও চতুর্থ বলে চার, ছক্কা মেরে ম্যাচে থাকার আভাস দেন। কিন্তু পঞ্চম বলে স্লিপে ধরা পড়ে ফিরতে হয় তাকেও।
শেষ দুই ওভারে ৩৯ রানের প্রয়োজন ছিল ৭ উইকেট হারানো অস্ট্রেলিয়ার। তবে সর্বসাকুল্যে ১৪ রান তুলতে সমর্থ হন প্যাট কামিন্স ও মিচেল স্টার্ক। ফলে ১৮১ রানে শেষ হয় অজিদের ইনিংস।
এর ফলে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনাল হারের শোধ নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে অনিশ্চয়তায় ফেলে সেমি-ফাইনাল নিশ্চিত করে ভারত।
অন্যদিকে, অজিদের সেমিভাগ্য ঝুলে গেছে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচের ফলাফলের ওপর। ম্যাচটি পরিত্যক্ত হলে কিংবা আফগানিস্তান জিতলে তারা সেমি-ফাইনালে উঠে যাবে। সেক্ষেত্রে সুযোগ থাকছে বাংলাদেশের সামনেও। টাইগাররা যদি ১৬০ রান করে অন্তত ৬২ রানের জয় পায়, তাহলে অস্ট্রেলিয়া ও আফগানদের কাঁদিয়ে তারাই উঠে যাবে সেমি-ফাইনালে। আর এর চেয়ে কম রানে (আগে ব্যাটিং ধরে) বাংলাদেশ জিতলে সুপার এইট পর্বে মাত্র এক ম্যাচ জিতেও সেমি-ফাইনালে উঠবে অস্ট্রেলিয়া।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ছয়টায় শুরু হতে চলেছে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান ম্যাচটি।
রোহিতের তাণ্ডবে দুর্জয় লক্ষ্যের সামনে অস্ট্রেলিয়া
ভারতের বিপক্ষে জয়, নাহলে ন্যূনতম ব্যবধানে হার- এমন সমীকরণ নিয়ে মাঠে নেমেও ম্যাচটি কঠিন করে ফেলেছে অস্ট্রেলিয়া। মূলত সময়মতো ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মার ব্যাটিং তাণ্ডব থামাতে ব্যর্থ হয়ে বিশাল লক্ষ্যের সামনে পড়ে গেছে তারা।
টস হেরে শুরুতে ব্যাটিং করে রান পাহাড়ে চড়েছে ভারত। রোহিতের ৪১ বলে ৯২ রানের ইনিংসে ভর করে ৫ উইকেট হারিয়ে অজিদের ২০৬ রানের লক্ষ্য দিয়েছে তারা।
রোহিতের দুর্দান্ত ইনিংসটি ছিল ৮টি ছক্কা ও ৭টি চারের মারে সাজানো। এছাড়া সূর্যকুমার যাদব ১৫ বলে ৩১ রান এবং একই সংখ্যক বল মোকাবিলা করে অপরাজিত ২৭ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলেন হার্দিক পান্ডিয়া। সেইসঙ্গে শিবম দুবে ২৮ রানের ধৈর্য্যশীল ইনিংসটিও বড় লক্ষ্য গড়তে ভূমিকা রাখে।
আরও পড়ুন: বাটলারের ব্যাটিং ঝড়ে উড়ে গেল যুক্তরাষ্ট্র, সেমিতে ইংল্যান্ড
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে মিচেল স্টার্ক চার ওভারে ৪৫ রান খরচায় দুই উইকেট নিয়েছেন। দুটি উইকেট নিয়েছেন মার্কাস স্টয়নিসও, তিনি দিয়েছেন ৫৬ রান। তবে নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেন জশ হেজলউড। রান ফোয়ারার ইনিংসেও চার ওভারে মাত্র ১৪ রান দিয়ে একটি উইকেট তুলে নেন তিনি।
ইনিংসের শুরুতে বিরাট কোহলিকে হেজলউড শূন্য রানে ফিরে দিলেও উইকেটে তার অনুপস্থিতি টেরই পেতে দেননি রোহিত। দ্বিতীয় ওভারে কোহলি ফিরে গেলে পরের ওভারে চারটি ছক্কা ও একটি চার মেরে স্টার্কের কাছ থেকে ২৯ রান সংগ্রহ করেন রোহিত। ব্যাটিং ঝড় ধরে রেখে মাত্র ১৯ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। এটিই চলমান বিশ্বকাপে সবচেয়ে দ্রুত হাফ সেঞ্চুরির রেকর্ড।
এরপর একই গতিতে সেঞ্চুরির দিকে এগোন তিনি। মাঝে অষ্টম ওভারের শেষ বলে মার্কাস স্টয়নিসের বলে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন এতক্ষণ তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়ে আসা ঋষভ পান্ত। ১৪ বলে ১৫ রান করে তিনি আউট হলে ৯৩ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় ভারত।
এরপর সূর্যকুমার একে রোহিতের সঙ্গে তাল দেন। পিটিয়ে খেলা শুরু করেন তিনিও। দুজনের ব্যাটিং তাণ্ডবে প্রথম দশ ওভারে ১১৪ রান তোলে ভারত। এরপর দ্বাদশ ওভারের দ্বিতীয় বলে স্টার্কের ইয়র্কারে বোল্ড হয়ে ফিরতে হয় রোহিতকে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম সেঞ্চুরি থেকে বঞ্চিত হলেও এই ফরম্যাটের বিশ্বকাপের ইতিহাসে নিজের সেরা ইনিংসটি খেলে বিদায় নেন তিনি।
এর আগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তার সর্বোচ্চ স্কোর ছিল অপরাজিত ৮৩। সেটিও চলতি আসরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেই।
এছাড়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোর করে রেকর্ড বইয়ে আরও একবার নাম লেখান তিনি। এই তালিকায় ১০১ রান নিয়ে শীর্ষে রয়েছেন সুরেশ রাইনা। ২০১০ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিনি এই রেকর্ড করেন।
এরপর শিবম দুবে এসেও রানের ধারা অব্যাহত রাখেন। তবে ১৪.৩ ওভারে সূর্যকুমার ফিরে গেলে রানের চাকা কিছুটা স্লথ হয়ে যায়। তারপরও হার্দিক পান্ডিয়াকে নিয়ে ভালোই এগোচ্ছিলেন দুবে। ১৯তম ওভারের প্রথম দুই বলে দুটি ছক্কা হাঁকিয়ে পরের বলে সিঙ্গেল নিয়ে দুবে স্ট্রাইক দেন হার্দিক। তিনিও মেরে খেলতে চাইলে চতুর্থ বলে ক্যাচ হয়ে যান। ফেরার আগে ২২ বলে ২৮ রান করেন তিনি।
আরও পড়ুন: অস্ট্রেলিয়ার ‘মহা গুরুত্বপূর্ণ’ ম্যাচে টস হেরে ব্যাটিংয়ে ভারত
এরপর রবীন্দ্র জাদেজাকে সঙ্গে নিয়ে ইনিংস শেষ করেন হার্দিক পান্ডিয়া। ১৭ বলে দুটি ছক্কা ও একটি চারে ২৭ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। জাদেজা মাত্র ৫ বল খেলার সুযোগ পান। এর মধ্যে একটি ছক্কা মেরে ৯ রান করেন তিনি।
শেষ পর্যন্ত পাঁচ উইকেট হারিয়ে ২০৫ রান করে মাঠ ছাড়ে ভারত। ফলে জিততে হলে এই লক্ষ্য টপকাতে হবে ওয়ার্নার-ট্যাভিস হেডদের। কিন্তু বুমরাহ-কুলদীপদের বোলিংয়ের সামনে কাজটি করে দেখানো যে কতটা কঠিন, তা চলতি বিশ্বকাপে ভারতের খেলা দেখা সবাই জানেন। ফলে দুর্জয় এই লক্ষ্য মোকাবিলা করে সেমির টিকিট নিশ্চিত করতে পারবে কি না অস্ট্রেলিয়া, তা তাদের ব্যাটারদের ওপর নির্ভর করছে এখন।
অস্ট্রেলিয়ার ‘মহা গুরুত্বপূর্ণ’ ম্যাচে টস হেরে ব্যাটিংয়ে ভারত
আফগানিস্তানের বিপক্ষে হেরে সেমিফাইনালের পথ কঠিন করে ফেলেছে অস্ট্রেলিয়া। ভারতের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটি তাই তাদের জন্য মহা গুরুত্বপূর্ণ। এই ম্যাচ জিতলে সেমির জায়গা মোটামুটি পাকাপোক্ত হয়ে যাবে তাদের। এমন সমীকরণ সামনে রেখে মাঠে নেমেছে অস্ট্রেলিয়া ও ভারত।
সোমবার সেন্ট লুসিয়ার ড্যারেন স্যামি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ভারতকে আগে ব্যাটিং করার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন অস্ট্রোলিয়ার অধিনায়ক মিচেল মার্শ।
গত নভেম্বরে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে সবশেষ দেখায় ভারতকে হারিয়ে ফের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে অস্ট্রেলিয়া। ফলে এই ম্যাচটি ভারতের জন্য প্রতিশোধেরও বটে।
আরও পড়ুন: টি-টোয়েন্টিতে কামিন্সের বিরল কীর্তি
ভারতের বিপক্ষে হারলেও সেমি-ফাইনালে ওঠার সম্ভাবনা টিকে থাকবে অস্ট্রেলিয়ার। সেক্ষেত্রে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জিততে হবে বাংলাদেশের। তবে এত কঠিন সমীকরণের দিকে নিশ্চয় যেতে চাইবেন না মিচেল মার্শ।
টসের পর সে কথাই উঠে আসে তার বক্তব্যে, ‘এখান থেকে প্রতিটি ম্যাচই জিততে হবে আমাদের। এই ম্যাচ আমাদের জন্য কোয়ার্টার ফাইনালের মতো।’
তবে আজকে হেরে গেলেও সেমি-ফাইনালে ওঠা নিয়ে খুব বেশি দুশ্চিন্তায় পড়া লাগবে না ভারতের। বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানকে হারিয়ে ভালো নেট রান রেট (২.৪২৫) নিয়ে ইতোমধ্যে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে রয়েছে তারা। আফগানিস্তান যদি বাংলাদেশের বিপক্ষে জেতেও, সেক্ষেত্রে -০.৬৫০ থেকে নেট রান রেট ভারতের ওপরে নিয়ে যাওয়াটা সত্যিই কষ্টসাধ্য তাদের জন্য। এক্ষেত্রে বরং দুশ্চিন্তা থাকবে অস্ট্রেলিয়ারই।
আরও পড়ুন: টি-২০ বিশ্বকাপ: বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে বাংলাদেশকে হারাল অস্ট্রেলিয়া
সেন্ট লুসিয়ায় এটি ভারতের প্রথম ম্যাচ হলেও স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে এখানে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার। সেই ম্যাচটি তারা বড় ব্যবধানে জিতেছিল। তবে ভারতের এই মাঠে এটিই প্রথম ম্যাচ। ফলে ভারতের অনভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চাইবে অস্ট্রেলিয়া।
আজকের ম্যাচে স্পিনার এস্টন এগারের পরিবর্তে মিচেল স্টার্ককে নিয়ে মাঠে নেমেছে অস্ট্রেলিয়া।
ভারত একাদশ: রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), বিরাট কোহলি, ঋষভ পান্ত, সূর্যকুমার যাদব, শিবম দুবে, হার্দিক পান্ডিয়া, রবীন্দ্র জাদেজা, অক্ষর প্যাটেল, কুলদীপ যাদব, আরশদীপ সিং ও জাসপ্রিত বুমরাহ।
অস্ট্রেলিয়া একাদশ: ট্র্যাভিস হেড, ডেভিড ওয়ার্নার, মিচেল মার্শ (অধিনায়ক), গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, মার্কাস স্টয়নিস, টিম ডেভিড, ম্যাথু ওয়েড, প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্ক, অ্যাডাম জাম্পা ও জশ হ্যাজলউড।
বাটলারের ব্যাটিং ঝড়ে উড়ে গেল যুক্তরাষ্ট্র, সেমিতে ইংল্যান্ড
সেমি-ফাইনাল নিশ্চিত করতে দক্ষিণ আফ্রিকার নেট রান রেট (0.৬২৫) টপকে যাওয়া লাগত ইংল্যান্ডের। প্রথম ইনিংসে ক্রিস জর্ডানের হ্যাটট্রিক ও আদিল রশিদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে ১১৫ রানে গুটিয়ে দিয়ে, দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং ঝড় তোলেন অধিনায়ক জস বাটলার। আর তাতেই হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতে হয়েছে স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্রকে।
১১৬ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নেমে ৯.৪ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়েই জয়ের বন্দরে পৌঁছায় ইংল্যান্ড। ব্যাট হাতে ৩৮ বলে ৮৩ রান করেছেন বাটলার। এই রান করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বোলারদের তুলোধুনা করেন তিনি। ৭টি ছক্কা ও ৬টি চার মেরে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন বাটলার। তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন আরেক ওপেনার ফিলিপ সল্ট। তিনি ২১ বলে ২৫ রান করে অপরাজিত ছিলেন। এই রান করতে গিয়ে মাত্র দুটি চার মারেন সল্ট।
জর্ডানের হ্যাটট্রিকসহ চার উইকেট এবং বাটলারের ৩৮ বলে ৮৩ রানের ইনিংস সত্ত্বেও নিয়ন্ত্রিত বোলিং আর প্রয়োজনীয় মুহূর্তে দলকে উইকেট এনে দিয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কার পেয়েছেন আদিল রশিদ।
আরও পড়ুন: ৫ বলে ৪ উইকেট নিলেন জর্ডান, বিধ্বস্ত যুক্তরাষ্ট্র
৬২ বল ও ১০ উইকেটের বিশাল ব্যবধানের জয়ে নেট রান রেটে লম্বা লাফ দিয়েছে ইংল্যান্ড। ০.৪১২ থেকে ১ দশমিক ৯৯২ রান রেট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থেকে সুপার এইট শেষ করেছে ইংলিশরা।
এর ফলে দক্ষিণ আফ্রিকা-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচের জন্য অপেক্ষা না করেই সেমি-ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করেছে জস বাটলার অ্যান্ড কোং।
পাশাপাশি, স্বাগতিক দেশ হওয়ার সুবাদে বিশ্বকাপের মতো আসর দিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট শুরু করা যুক্তরাষ্ট্রের স্বপ্নযাত্রা থেমেছে সুপার এইট অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে। সবাইকে চমকে দিয়ে সুপার এইট নিশ্চিত করলেও এই পর্বের কোনো ম্যাচই জিততে পারেনি অ্যারন জোন্সের দল। ফলে অনেক অর্জনের সঙ্গে শূন্য হাতেই ফিরতে হচ্ছে তাদের।
অন্যদিকে, দুই ম্যাচে দুই জয় পেয়ে শূন্য দশমিক ৬২৫ নেট রান রেট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের দুইয়ে নেমেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তাদের পয়েন্ট চার। আরেক স্বাগতিক দেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজ একটি ম্যাচ জিতে ২ পয়েন্ট সংগ্রহ করলেও তাদের নেট রান রেট অনেক বেশি (১.৮১৪)। ফলে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ম্যাচটিতে যারা জিতবে, তারাই সেমি-ফাইনালে উঠে যাবে।
আরও পড়ুন: টি-টোয়েন্টিতে কামিন্সের বিরল কীর্তি
ম্যাচটি জিতলে ৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে থাকবে দক্ষিণ আফ্রিকা। আর ক্যারিবীয়রা জিতলে প্রোটিয়াদের সমান ৪ পয়েন্ট নিয়েও নেট রান রেটে অনেক এগিয়ে থেকে সেমিতে চলে যাবে নিকোলাস পুরানের দল।
আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরই সোমবার ভোর সাড়ে ৬টায় অ্যান্টিগার স্যার ভিভিয়ান রিচার্ড স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হবে।
৫ বলে ৪ উইকেট নিলেন জর্ডান, বিধ্বস্ত যুক্তরাষ্ট্র
সেমি-ফাইনালে ওঠার সমীকরণ একটু সহজ করতে বড় জয় চাই ইংল্যান্ডের। আদিল রশিদের নিয়ন্ত্রিত স্পেলের পর দারুণ এক হ্যাটট্রিকে অধিনায়ক জস বাটলারকে আশ্বস্ত করলেন ক্রিস জর্ডান। তার হ্যাটট্রিকসহ পাঁচ বলে চার উইকেটে শেষের দিকে গুঁড়িয়ে গেছে স্বাগতিকদের ইনিংস।
টস জিতে এদিন যুক্তরাষ্ট্রকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠন বাটলার। শুরুতে ব্যাট করে ইনিংসের ৭ বল বাকি থাকতেই ১১৫ রানে অলআউট হয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র।
ব্যাট হাতে নীতীশ কুমার সর্বোচ্চ ৩০, কোরি অ্যান্ডারসন ২৯ ও হারমিত সিং ২১ রান করেছেন।
ইংলিশদের হয়ে সর্বোচ্চ চার উইকেট নিয়েছেন ক্রিস জর্ডান। ২.৫ ওভারে ১০ রানের খরচায় চারটি উইকেট নিয়েছেন তিনি। এছাড়া আদিল রশিদ চার ওভারে ১৩ রানে এবং স্যাম কারান ২৩ রানে দুটি করে উইকেট নিয়েছেন।
জর্ডানের কল্যাণে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে নবম হ্যাটট্রিক দেখল ক্রিকেট বিশ্ব। শুধু তা-ই নয়, এদিন সকালে প্যাট কামিন্সের হ্যাটট্রিকের পর রাতে আরও একটি হ্যাটট্রিক দেখা গেল।
টি-টোয়েন্টিতে প্রথম কোনো ইংলিশ বোলার হিসেবে হ্যাটট্রিক করে রেকর্ড বইয়ে নাম লেখালেন জর্ডান।
আরও পড়ুন: টি-টোয়েন্টিতে কামিন্সের বিরল কীর্তি
এছাড়া, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে দ্বিতীয় বোলার হিসেবে এক ওভারে চার উইকেট নিয়েছেন তিনি। এর আগে ২০২১ বিশ্বকাপে ডাচদের চার ব্যাটারকে ফেরান দক্ষিণ আফ্রিকার কার্টিস ক্যাম্ফার।
এদিন ১১৫ রানের মাথায় ছয় বলের ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্রের ৫টি উইকেট পড়ে।
জটিল সমীকরণ সামনে রেখে বোলিংয়ে ইংল্যান্ড
সেমি-ফাইনালের জায়গা পোক্ত করার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে মাঠে নেমেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। এদিন টস ভাগ্য ইংলিশ অধিনায়ক জস বাটলারের দিকে গিয়েছে।
রবিবার (২৩ জুন) ব্রিজটাউনে সুপার এইটে নিজেদের শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হতে চলেছে স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্র ও ইংল্যান্ড। এই ম্যাচে স্বাগতিকদের আগে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছেন বাটলার।
প্রথম দুই রাউন্ডে মিশ্র পারফরম্যান্সে শেষ রাউন্ডে এসে জমে উঠেছে এই গ্রুপের ম্যাচদুটি। যেকোনো দিকে হার-জিতে সেমির ভাগ্য খুলে যেতে পারে যেকোনো দলের। এমন জটিল সমীকরণ মাথায় নিয়ে চ্যাম্পিয়নদের মোকাবিলা করতে মাঠে নেমেছে স্বাগতিকরা।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সুপার এইটের প্রথম ম্যাচ জিতলেও পরের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হারে ইংল্যান্ড। তৃতীয় ও শেষ ম্যাচটি তাই সেমি-ফাইনালে যেতে দলটির জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
অন্যদিকে, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে প্রথম দুই ম্যাচে হেরে খাদের কিনারায় যুক্তরাষ্ট্র। তবে কাগজে-কলমে এখনও সেমিতে ওঠার সম্ভাবনা টিকে আছে তাদের। সেক্ষেত্রে আজকের ম্যাচে বড় জয়ের বিকল্প নেই স্বাগতিকদের সামনে।
আরও পড়ুন: ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের দুর্দান্ত জয়
এই গ্রুপে দুই ম্যাচের দুটিতেই জিতে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এছাড়া ইংল্যান্ড ও উইন্ডিজরা একটি করে ম্যাচ জেতায় সেমি-ফাইনাল এখনও উন্মুক্ত রয়েছে প্রতিটি দলের জন্যই।
সেমি-ফাইনাল নিশ্চিত করতে আজকের ম্যাচটি শুধু জিতলেই হচ্ছে না ইংল্যান্ডের। সোমবার ক্যারিবীয়দের মুখোমুখি হবে দক্ষিণ আফ্রিকা। ওই ম্যাচের দিকেও তাকিয়ে থাকতে হবে তাদের। প্রোটিয়ারা ম্যাচটি জিতে গেলে কোনো হিসাব ছাড়াই সেমি-ফাইনাল নিশ্চিত করবে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইংল্যান্ড। তবে ইংল্যান্ড জিতলে এবং দক্ষিণ আফ্রিকা হারলে যুক্তরাষ্ট্রের বিদায় নিশ্চিত করে বাকি তিন দলেরই পয়েন্ট হবে ৪। সেক্ষেত্রে নেট রান রেটে এগিয়ে থাকা দুই দল উঠবে সেমিতে।
আবার, যদি যুক্তরাষ্ট্র ইংলিশদের হারায়, আর দক্ষিণ আফ্রিকা ক্যারিবীয়দের হারায়, তবে দক্ষিণ আফ্রিকা সরাসরি সেমির টিকিট পেলেও বাকি তিন দলের পয়েন্ট হবে ২ করে। ফলে নেট রান রেটে এগিয়ে থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ইংল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের যে কারও সেমি-ফাইনাল ভাগ্য খুলে যেতে পারে।
আরও পড়ুন: অসাধারণ প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখেও হারল যুক্তরাষ্ট্র
ইংল্যান্ড একাদশ: ফিলিপ সল্ট, জস বাটলার (অধিনায়ক), জনি বেয়ারস্টো, হ্যারি ব্রুক, মঈন আলী, লিয়াম লিভিংস্টোন, স্যাম কারান, ক্রিস জর্ডান, জোফরা আর্চার, আদিল রশিদ ও রিস টপলি।
যুক্তরাষ্ট্র একাদশ: স্টিভেন টেইলর, অ্যান্ড্রিস গাউস, নীতীশ কুমার, অ্যারন জোন্স (অধিনায়ক), কোরি অ্যান্ডারসন, মিলিন্দ কুমার, হারমিত সিং, শ্যাডলি ভ্যান শালকউইক, নস্টুশ কেনজিগে, আলী খান ও সৌরভ নেত্রাভালকার।
টি-টোয়েন্টিতে কামিন্সের বিরল কীর্তি
২০১১ সালের অক্টোবরে টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হওয়ার পর থেকেই অসংখ্য সম্মান কুড়িয়েছেন প্যাট কামিন্স। তবে এক যুগের বেশি সময় ধরে খেললেও আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে হ্যাট্রিকের দেখা পাননি তিনি। অথচ সেই কামিন্সই পরপর দুই ম্যাচে দুটি হ্যাটট্রিক করে রেকর্ড বইয়ে বিরল কীর্তির কথা লিখে ফেললেন!
বিশ্বকাপেট তো বটেই, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতেও এমন কীর্তি এর আগে কেউ করে দেখাতে পারেনি।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার এইটের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৮তম ওভারের শেষ দুই বল এবং ২০তম ওভারের প্রথম বলে উইকেট নিয়ে হ্যাটট্রিক করেন কামিন্স। এরপর রবিবার আফগানিস্তানের বিপক্ষেও তিনি পেলেন একই রকম হ্যাট্রিকের দেখা। এবার ১৮তম ওভারের শেষ বল এবং ১৯তম ওভারের প্রথম দুই বলে উইকেট নিয়ে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন তিনি।
আরও পড়ুন: লড়াই করে হারল বাংলাদেশ, সেমির দুয়ারে ভারত
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পরপর দুই ম্যাচে হ্যাটট্রিক করা দ্বিতীয় বোলার কামিন্স। প্রথম ঘটনাটি ঘটে টেস্ট ক্রিকেট ১৯৯৯ সালে। সেবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পরপর দুই টেস্টে হ্যাটট্রিক করেন পাকিস্তানের কিংবদন্তি পেসার ওয়াসিম আকরাম। এছাড়া ২০১২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে একই টেস্ট ম্যাচের দুই ইনিংসে হ্যাটট্রিক করার গৌরব অর্জন করেন অস্ট্রেলিয়া জিমি ম্যাথিউস।
পঞ্চম বোলার হিসেবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে দুটি হ্যাটট্রিক করলেন কামিন্স। তার আগে লাসিথ মালিঙ্গা, টিম সাউদি, মার্ক পাবলোবিচ ও ওয়াসিম আব্বাসেরও দুটি করে হ্যাটট্রিক রয়েছে। তবে তাদের কেউই টানা দুই ম্যাচে এই কীর্তি গড়তে পারেননি।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অষ্টম হ্যাটট্রিক এটি। এই ৮ হ্যাটট্রিকের ৪টিই অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের।
লড়াই করে হারল বাংলাদেশ, সেমির দুয়ারে ভারত
সেমিফাইলের লড়াইয়ে টিকে থাকার জন্য দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে জয়ের বিকল্প ছিল না বাংলাদেশের। তবে প্রথম ইনিংসেই টাইগারদের সেই স্বপ্ন দুরূহ করে দেন ভারতের ব্যাটাররা। পরে বোলাররা তাদের কাজ সারলে ৫০ রানের জয় পায় ভারত। আর পরপর দুই ম্যাচ হেরে সুপার এইটের ‘গ্রুপ ১’-এর প্রথম দল হিসেবে বিদায় প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেল বাংলাদেশের।
এই ম্যাচে ভারতের দেওয়া ১৯৭ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নেমে দলটির দুর্দান্ত বোলিংয়ের সামনে আত্মসমর্পণ করেনি বাংলাদেশের ব্যাটাররা। নিয়মিত উইকেট পড়লেও তারা রীতিমতো ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলে গেছেন শেষ পর্যন্ত। তবে ১৪৬ রানের বেশি সংগ্রহ করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
টাইগারদের হয়ে অধিনায়ক শান্ত সর্বোচ্চ ৪০ রান করেন। এছাড়া তানজিদ তামিম ২৯ ও রিশাদ হোসেন ২৪ রান করেন।
ভারতের বোলারদের মধ্যে কুলদীপ যাদব ১৯ রানে সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট নেন। এছাড়া জসপ্রীত বুমরাহ ১৩ রানে দুটি উইকেট নেন। দুই উইকেট পেয়েছেন আর্শদীপ সিংও, তবে তিনি ৩০ রান দিয়েছেন।
বল-ব্যাটে অসাধারণ পারফর্ম করা হার্দিক পান্ডিয়ার হাতে উঠেছে ম্যাচসেরার পুরস্কার।