আফ্রিকা
সুদানে ভূমিধসে প্রাণহানি হাজার ছাড়াল
আফ্রিকার দেশ সুদানের দক্ষিণাঞ্চলের দারফুর প্রদেশে ভূমিধসে প্রাণহানির সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) রাতে এলাকাটি নিয়ন্ত্রণকারী একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী মন্তব্য করেছে, এটি দেশটির সাম্প্রতিক ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাণঘাতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনাগুলোর অন্যতম।
এক বিবৃতিতে সুদান লিবারেশন মুভমেন্ট-আর্মি জানায়, কয়েকদিন ধরে তীব্র বৃষ্টিপাতের পর রবিবার (৩১ আগস্ট) মধ্য দারফুরের মারাহ পর্বতমালায় অবস্থিত তারাসিন গ্রামে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
বিবৃতি বলা হয়, প্রাথমিক তথ্যানুযায়ী কেবল একজন ছাড়া ওই গ্রামের সব বাসিন্দার মৃত্যু হয়েছে। তাই এক হাজারেরও বেশি প্রাণহানি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিবৃতি অনুযায়ী, পুরো গ্রামটি মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি লাশ উদ্ধারে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক ত্রাণ বিতরণ সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
মারাহ পর্বতমালা হলো একটি দুর্গম আগ্নেয়গিরির শৃঙ্খল, যা রাজধানী খার্তুম থেকে প্রায় ৯০০ কিলোমিটার (৫৬০ মাইল) পশ্চিমে এবং এল-ফাশের থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে ১৬০ কিলোমিটার (১০০ মাইল) পর্যন্ত বিস্তৃত।
এদিকে দেশটির ক্ষমতাসীন সার্বভৌম পরিষদ মারাহ পর্বতমালার ভূমিধসে ‘শত শত নিরীহ বাসিন্দার মৃত্যুতে’ শোক প্রকাশ করেছে। এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, ওই এলাকায় সহায়তার জন্য ‘সম্ভাব্য সব ধরনের সক্ষমতা’ কাজে লাগানো হচ্ছে।
একটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ফুটেজে দেখা যায়, মারাহ পর্বতমালার মাঝখানে সমতল হয়ে যাওয়া এলাকায় একদল উদ্ধারকারীকে নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
সুদানে ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যেই এই দুর্ঘটনাটি ঘটল। দেশটির সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) সংঘর্ষ ও কঠোর বিধিনিষেধের কারণে দারফুরের সংঘাতপীড়িত অঞ্চলগুলোর বেশিরভাগই বর্তমানে জাতিসংঘ ও মানবিক সহায়তাদানকারী সংগঠনগুলোর জন্য কার্যত অগম্য হয়ে পড়েছে।
মানবিক সংগঠন ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ) সতর্ক করেছে, মারাহ পর্বতমালাসহ দরফুরের বহু এলাকা দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে যুদ্ধ ও বিচ্ছিন্নতার কারণে বাইরের বিশ্ব থেকে সম্পূর্ণ বিছিন্ন হয়ে গেছে।
পড়ুন: আফগানিস্তানে ভূমিকম্প: নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯০০, আহত ৩ হাজারের বেশি
সুদান লিবারেশন মুভমেন্ট-আর্মি, যা মারাহ পর্বতমালা এলাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে সক্রিয়। গোষ্ঠীটি দারফুর ও কোরদোফান অঞ্চলে সক্রিয় একাধিক বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে অন্যতম হলেও চলমান যুদ্ধে কোনো পক্ষ নেয়নি।
এল-ফাশের বর্তমানে সেনাবাহিনী ও আরএসএফ-এর মধ্যকার ভয়াবহ সংঘর্ষের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। আর আশপাশের এলাকা থেকে পালিয়ে আসা বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর জন্য মারাহ পর্বতমালা একটি আশ্রয়কেন্দ্রে রূপ নিয়েছিল।
সুদানে চলমান সংঘাতে এখন পর্যন্ত ৪০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। আর ১ কোটি ৪০ লাখেরও বেশি মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। দুর্ভিক্ষের কারণে অনেক পরিবার বেঁচে থাকার জন্য ঘাস খেতে বাধ্য হচ্ছে।
জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, এই যুদ্ধে জাতিগত হত্যাযজ্ঞ ও ধর্ষণের মতো ভয়াবহ নৃশংসতা ঘটছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) জানিয়েছে, তারা যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ তদন্ত করছে।মারাহ পর্বতমালা ৩ হাজার মিটারেরও বেশি উচ্চতায় অবস্থিত একটি ইউনেস্কো স্বীকৃত বৈশ্বিক ঐতিহ্যবাহী স্থান। এটি আশেপাশের এলাকার তুলনায় শীতল ও বেশি বৃষ্টিপাতের জন্য পরিচিত।
দেশটিতে প্রতি বছর জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত মৌসুমি বর্ষায় শত শত মানুষের মৃত্যু হয়ে থাকে। তবে সাম্প্রতিক ভূমিধসটি ছিল সুদানের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে একটি।
৩৬ দিন আগে
বিশ্বের প্রবীণতম প্রেসিডেন্ট আবারও নির্বাচনে, তাকে কি হারানো যাবে?
আফ্রিকার মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত দেশ ক্যামেরুন। দেশটির জনসংখ্যার মধ্যম বয়স ১৮ এবং গড় আয়ু মাত্র ৬৩ বছর। সেই দেশের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সবচেয়ে প্রবীণ ও শক্তিশালী প্রার্থী হলেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট পল বিয়া, যিনি ৯২ বছর বয়সেও ফের ক্ষমতায় ফেরার দৌড়ে আছেন।
১৯৮২ সাল থেকে টানা রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা বিয়া এরইমধ্যে (১৩ জুলাই) আনুষ্ঠানিকভাবে আরও সাত বছরের জন্য প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন— অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ক্যামেরুনে ভোটারদের অংশগ্রহণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সংশয় রয়েছে। দীর্ঘস্থায়ী শাসনের কারণে নির্বাচনে কম ভোটার উপস্থিতি দেশটিতে অস্বাভাবিক কিছু নয়।
মধ্য আফ্রিকার মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম কর্মক্ষম অর্থনীতি থাকা সত্ত্বেও, ক্যামেরুনের প্রতি তিনজনে একজন নাগরিক দৈনিক দুই ডলার বা তারও কম আয়ে জীবনযাপন করেন। জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থার ২০২৩ সালের জরিপ অনুযায়ী, দেশটির প্রতি আটজন শ্রমজীবীর আটজনই অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত। এই বাস্তবতায় জুয়া ও বাজি ধরার প্রবণতা ব্যাপকহারে বেড়ে চলেছে।
এমন অবস্থায় নির্বাচন কিংবা সরকারের প্রতি জনগণের আগ্রহও ক্রমেই কমেছে।
আরও পড়ুন: ২৫ বছর পর সিরিয়ান নেতার সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বৈঠক
ওয়ান্ডজি নামের ২৭ বছর বয়সী এক নাগরিক বলেন, ‘আমরা বহু বছর আগেই সরকারের ওপর নির্ভর করা বন্ধ করে দিয়েছি।’ অনেক তরুণের মতো তিনিও অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে ভোট দেবেন কি না, তা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় আছেন।
তবে এমন বাস্তবতায়ও পল বিয়ার জয় নিয়ে আশাবাদী তার সমর্থকরা। ক্ষমতাসীন দল ক্যামেরুন পিপলস ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের (সিপিডিএম) অনুসারীরা সাধারণত স্থিতিশীলতাকে প্রাধান্য দেন এবং প্রতিবেশী দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে মাথা ঘামান না। কেউ কেউ পল বিয়ার নেতৃত্বকে ‘সৃষ্টিকর্তার দান’ বলেও মনে করেন।
এমনকি “২০২৫ সালে কেন আপনি পল বিয়াকে ভোট দেবেন— তার ১০টি যুক্তি” শিরোনামে একটি বইও লিখেছেন আন্তোয়ান এনকোয়া নামের এক লেখক। তিনি বলেছেন, ‘সৃষ্টিকর্তার অনুমতি ছাড়া কোনো কর্তৃত্ব থাকতে পারে না।’
তবে বিরুদ্ধ সুরও শোনা যাচ্ছে। ক্যামেরুনের ফার নর্থ অঞ্চলের ক্যাথলিক বিশপ বারথেলেমি ইয়াউদা হুরগো বিয়াকে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘এবার যথেষ্ট হয়েছে।’
প্রধান বিরোধী দল ক্যামেরুন রেনেসাঁ মুভমেন্টের (এমআরসি) মহাসচিব ক্রিস্টোফার এনকং বলেন, ‘বিয়া তার প্রয়োজনীয় সময় পার করে ফেলেছেন। আমরা বলছি— পাপা, আপনি যথেষ্ট করেছেন। এবার কি অন্য কোনো ক্যামেরুনবাসীকে জায়গা করে দিতে পারেন না?’
আরও পড়ুন: প্রেসিডেন্টপ্রার্থী হিসেবে মনোয়ন পাওয়ার দিনই কারাগারে ইস্তানবুলের মেয়র
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘বিয়া-পরবর্তী যুগ’ নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করছেন অনেকেই। কারণ, এমআরসি এবার তরুণদের ভোটের দিকে নজর দিচ্ছে। তবে কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, নির্বাচনের পর গ্যাবনের মতো অস্থিরতা বা সেনা অভ্যুত্থানের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
৭৯ দিন আগে
দক্ষিণ সুদানে এশীয় অভিবাসীদের নির্বাসন-চেষ্টার অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে
দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই আফ্রিকার দেশ দক্ষিণ সুদানে দক্ষিণ এশীয় অভিবাসীদের নির্বাসনের চেষ্টা চালানোর অভিযোগ উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। এই ধরনের বিতর্কিত প্রচেষ্টা দক্ষিণ সুদানের রাজনৈতিক সংকট আন্তর্জাতিক মহলে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
গত ২১ মে যুক্তরাষ্ট্রের এক ফেডারেল বিচারক জানান, দক্ষিণ সুদানে অভিবাসী পাঠানো আদালতের পূর্ববর্তী আদেশ লঙ্ঘন করেছে। ওই আদেশে বলা হয়েছিল, কোনো ব্যক্তিকে তৃতীয় দেশে নির্বাসন দেওয়ার আগে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের খবর, মার্কিন অভিবাসন কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি আটজন অভিবাসীকে দক্ষিণ সুদানে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়। তাদের মধ্যে দক্ষিণ সুদান ছাড়াও কিউবা, লাওস, মেক্সিকো, মিয়ানমার ও ভিয়েতনামের নাগরিক ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হত্যাকাণ্ড, ডাকাতি ও অন্যান্য গুরুতর অপরাধে দোষী সাব্যস্ত।
তবে দক্ষিণ সুদানের পুলিশ মুখপাত্র মেজর জেনারেল জেমস এনোকা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত কোনো অভিবাসী দেশটিতে পৌঁছায়নি। তিনি বলেন, ‘যদি কেউ এসে থাকে, তাহলে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হবে। তারা দক্ষিণ সুদানের নাগরিক না হলে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে।’
আরও পড়ুন: মার্কিন বিমান হামলায় ইয়েমেনে কারাগারে ৬৮ অভিবাসী নিহত
২০১১ সালে স্বাধীনতা অর্জনকারী বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ দেশ দক্ষিণ সুদান। স্বাধীনতার পর থেকেই দেশটি রাজনৈতিক সংকট, অর্থনৈতিক দুর্নীতি ও দারিদ্র্যের কবলে পড়ে। প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই চরম দারিদ্র্যসীমার মধ্যে বসবাস করে।
দরিদ্র হলেও দক্ষিণ সুদানে বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ (তেল) রয়েছে। দেশটির অর্থনীতি তেল রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল হলেও অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণে এই খাত থেকে কাঙ্ক্ষিত উন্নতি অর্জিত হয়নি। বিদ্যুৎ, পাকা রাস্তা ও অন্যান্য অবকাঠামোর অভাব এখনো দেশের বেশিরভাগ এলাকায় প্রকট।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের দিক থেকেও দক্ষিণ সুদান অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ। গত বছর দেশটিতে ভয়াবহ বন্যায় ৩ লাখ ৮০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিল।
এমন এক প্রেক্ষাপটে চলতি বছরের মার্চে দেশটির সরকার বিরোধীদলীয় নেতা ও প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট রিয়েক মাশারকে গৃহবন্দী করে। তার বিরুদ্ধে সমর্থকদের উসকানি দিয়ে বিদ্রোহের চেষ্টা চালানোর অভিযোগ আনা হয়।
মার্চের শুরুর দিকে মাশার-সমর্থিত ‘হোয়াইট আর্মি’ কমিউনিটি মিলিশিয়া নাসির কাউন্টিতে সেনাবাহিনীর ওপর হামলা চালিয়ে একটি ঘাঁটি দখল করে নেয়। মিলিশিয়ার দাবি, এটি ছিল আত্মরক্ষামূলক পদক্ষেপ। তবে পাল্টা অভিযানে সরকার বোমা হামলা চালায় ও বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে।
আরও পড়ুন: শতাধিক অবৈধ অভিবাসীকে ভারতে পৌঁছে দিল মার্কিন উড়োজাহাজ
রিয়েক মাশারের দল এসপিএলএম-আইও দাবি করেছে, মাশারকে গৃহবন্দি করার মধ্য দিয়ে ২০১৩ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে সংঘটিত গৃহযুদ্ধ অবসানে স্বাক্ষরিত শান্তিচুক্তি কার্যত ভেঙে গেছে। ওই গৃহযুদ্ধে মাশার-সমর্থিত নুয়্যার যোদ্ধা ও প্রেসিডেন্ট সালভা কিরের ডিনকা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে প্রায় ৪ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়।
চলতি বছর নতুন করে তৈরি হওয়া উত্তেজনায় শান্তিচুক্তির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। জাতিসংঘ ইতোমধ্যে দক্ষিণ সুদানে সহিংসতা বাড়ার আশঙ্কায় সতর্কতা দিয়েছে।
এদিকে, প্রেসিডেন্ট কির গত মঙ্গলবার (২০ মে) তার দ্বিতীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট বেঞ্জামিন বোল মেলকে এসপিএলএমের উপ-সভাপতি পদে উন্নীত করেন। তাকে কিরের সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে দেখা হচ্ছে। কির পদত্যাগ করলে তিনি অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিতে পারেন।
এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দক্ষিণ এশীয় অভিবাসীদের, এমনকি কঙ্গোর এক নাগরিককে দক্ষিণ সুদানের নাগরিক বলে দেশটিতে পাঠিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনাগুলো নিয়ে দক্ষিণ সুদান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কয়েক সপ্তাহ ধরে উত্তেজনার চলছে।
আরও পড়ুন: নিষেধাজ্ঞার মুখে অভিবাসীবাহী মার্কিন ফ্লাইট অবতরণে অনুমতি দিল কলোম্বিয়া
১৩৬ দিন আগে
কেনিয়ায় পাচার থেকে রক্ষা পাচ্ছে না পিঁপড়াও, উদ্বিগ্ন পরিবেশবাদীরা
পৃথিবীজুড়ে অসাধু ব্যবসায়ী গোষ্ঠীসহ বিভিন্ন অপরাধচক্র মানুষ থেকে শুরু করে নানা পণ্য ও প্রাণী পাচার করে থাকে। এসব দুষ্ট লোকের হাত থেকে শেষমেষ রক্ষা পায়নি পিঁপড়াও! ক্ষুদ্র এই জীবগুলোকেও টিউববন্দি করে অর্থ উপাজর্নের আশায় পাচার করা শুরু করেছে মানুষ। এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবেশবাদীরা।
এই পিঁপড়া পাচারের ঘটনাটি ঘটেছে আফ্রিকান দেশ কেনিয়াতে। দেশটির বনাঞ্চলগুলো বিভিন্ন বণ্যপ্রাণীর পাচারের জন্য আগে থেকেই কুখ্যাত। চলতি মাসের শুরুর দিকে নিজেদের প্রতিদিনের দায়িত্ব পালন করছিলেন কেনিয়ার বণ্যপ্রাণী সেবার (কেডব্লিউএস) কর্মকর্তারা। এ সময়ে ৫ হাজার পিঁপড়া পাচার করার সময় দুই বেলজিয়ান তরুণকে আটক করেছেন তারা।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, এ অভিযানটি ছিল সবথেকে ছোট প্রাণীর পাচার রোধ করার সবথেকে বড় অভিযান। কারণ উদ্ধারকৃত প্রাণীগুলো ছিল ১৮ থেকে ২৫ মিলিমিটার দীর্ঘ পিঁপড়া।
এই পিঁপড়াগুলোকে এশিয়া ও ইউরোপের বাজারে পাচার করার জন্য ওই দুই তরুণ একটি কাভার্ড ভ্যানে করে নিয়ে যাচ্ছিলেন বলে জানান কেডব্লিউএসের কর্মকর্তারা। সিরিঞ্জ ও টিউবের মধ্যে তুলা ভরে তার মধ্যে পিঁপড়াগুলোকে রাখা হয়েছিল। এই পরিবেশে পিঁপড়া বেশ কয়েকদিন বেঁচে থাকতে বলে জানান কর্মকর্তারা।
পাচারকারী তরুণ লর্নি ডেভিড বলেন, ‘আমরা কোনো আইন ভাঙতে এ কাজ করিনি। দুর্ঘটনাবশত বোকামির কারণে এটি করে ফেলেছি।’
ডেভিড ও তার সহযোগী সেপে লোডেউইজিক্স দুজনেই ১৯ বছর বয়সী। পিঁপড়া পাচারের অভিযোগে তাদের আটক করা হয়েছে। এর আগে একই অভিযোগে ৪০০ পিঁপড়াসহ আরও দুই ব্যক্তিতে আটক করেন কেনিয়ার বন কর্মকর্তারা। গত ২৩ এপ্রিল তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ পর্যালোচনা করে আদালত তাদের হেফাজতে রাখারই নির্দেশ দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: কেমন হওয়া উচিত সকালের শুরুটা?
কেডব্লিউএসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পিঁপড়া পাচারের এই ঘটনাগুলো সাম্প্রতিক সময়ে প্রাণী পাচারের ক্ষেত্রে এক ধরনের পরিবর্তনের দিকে ইঙ্গিত করে। বড় স্তন্যপায়ী প্রাণী থেকে এখন কম দৃশ্যমান ছোট সাইজের প্রাণীর পাচার লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
১৬৬ দিন আগে
নাইজেরিয়ায় সন্দেহভাজন রাখালদের হামলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৭২
নাইজেরিয়ার মধ্যাঞ্চলের রাজ্য বেনুয়েতে সন্দেহভাজন সশস্ত্র রাখালদের সাম্প্রতিক হামলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৭২ জনে দাঁড়িয়েছে।
সোমবার(২১ এপ্রিল) স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বার্তা সংস্থা সিনহুয়াকে এই তথ্য জানিয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার রাতের মধ্যে রাজ্যের উকুম এলাকার সম্প্রদায়গুলোতে এই ভয়াবহ হামলাগুলো চালানো হয়।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষ শনিবার জানিয়েছে, ওই হামলায় অন্তত ৫৬ জন নিহত হয়েছেন।
আরও পড়ুন: শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় ৬ আইনজীবী কারাগারে, ডিম নিক্ষেপ
সরকারের মুখপাত্র আইজ্যাক উজান গণমাধ্যমকে জানান, স্থানীয় নিরাপত্তা সংস্থা এবং স্বেচ্ছাসেবকরা হামলার ঘটনার কাছাকাছি ঝোপঝাড়ে চিরুনি অভিযান চালানোর সময় সোমবার আরও হতাহতের খবর নিশ্চিত করেছে।
এর আগে রাজ্যের স্থানীয় সম্প্রদায়গুলোকে অব্যাহত ভয়াবহ আক্রমণ বন্ধে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বেনুয়ের গভর্নর হায়াসিন্থ আলিয়া।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ধারাবাহিক আক্রমণের সাক্ষী হয়েছে নাইজেরিয়া। এছাড়া দেশটিতে সশস্ত্র ডাকাতির ঘটনাও বারবার ঘটেছে।
১৬৯ দিন আগে
কঙ্গোতের নৌদুর্ঘনায় নিহত বেড়ে ১৪৮, নিখোঁজ শতাধিক
কঙ্গো নদীতে একটি ভয়াবহ নৌকা দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৪৮ জনে দাঁড়িয়েছে। এতে এখনো নিখোঁজ রয়েছেন শতাধিক মানুষ।
শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) দেশটির কর্তৃপক্ষ এসব হতাহত ও নিখোঁজের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন মঙ্গলবারের ওই দুর্ঘটনার সময় নৌকাটিতে প্রায় ৫০০ জন যাত্রী ছিলেন।
তারা জানিয়েছেন, এদিন উত্তর-পশ্চিম কঙ্গোর এমবানডাকার কাছে এইচবি কঙ্গোলো নামের মোটরচালিত কাঠের নৌকাটিতে আগুন ধরে ও ডুবে যায়।
নদী কমিশনার কম্পেটেন্ট লয়োকোর জানায়, একজন নারী নৌকাটিতে রান্না করার সময় আগুনের সূত্রপাত হয় বলে জানা গেছে। এরপর আতঙ্কের কারণে নারী ও শিশুসহ অনেক যাত্রী নদীতে ঝাঁপ দেন—যাদের অনেকেই সাঁতার জানতেন না।
নৌকাটিতে থেকে বেশ কিছু যাত্রীকে উদ্ধার করা হলেও বেঁচে যাওয়া অনেকে গুরুতর দদ্ধ হয়েছেন। রেড ক্রস এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সহায়তায় দুর্ঘটনায় এখনো নিখোঁজ থাকাদের উদ্ধারে প্রচেষ্টা চলছে।
আরও পড়ুন: পদ্মায় ঘুরতে গিয়ে নৌকাডুবি, নিখোঁজ স্বামী-স্ত্রীর লাশ উদ্ধার
ইকুয়েটুর প্রদেশের সিনেটর জিন-পল বোকেৎসু বোফিলি এই দুর্ঘটনার ভয়াবহতা উল্লেখ করে বলেন, ‘৫০০ যাত্রীর মধ্যে প্রাণহানির সংখ্যাটা বেশ বড়।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, ১৫০ জনেরও বেশি দগ্ধ হওয়ায় জরুরি মানবিক সহায়তা প্রয়োজন।
নৌকা দুর্ঘটনা গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গোতে দুঃখজনকভাবে প্রায়ই ঘটে থাকে। আর এসব দুর্ঘটনার জন্য অতিরিক্ত যাত্রী বহন, রাতে অনিরাপদ ভ্রমণ এবং সামুদ্রিক নিরাপত্তা নীতি শিথিলতা দায়ী। দুর্বল অবকাঠামো এবং সীমিত সড়ক যোগাযোগের কারণে অনেকে কঙ্গোর নদীপথে ভ্রমণের উপর নির্ভরশীল, যা ঝুঁকিকে বাড়িয়ে তোলে।
বোফিলি বলেন, ‘আমাদের সুন্দর কঙ্গো নদী এবং আমাদের দেশের হ্রদগুলো দুঃখজনকভাবে জনগণের জন্য গণমৃত্যুর কারণে পরিণত হয়েছে। এটি চলতে পারে না।’
১৭২ দিন আগে
১২ ফরাসি কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে আলজেরিয়া
ফ্রান্সের সঙ্গে উত্তেজনা বৃদ্ধির ফলে দেশটির ১২ জন কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে আলজেরিয়া। সোমবার (১৪ এপ্রিল) তাদের বহিষ্কার করে দেশটির কর্তৃপক্ষ।
তাদের ‘পারসোনা নন গ্রাটা’ হিসেবে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশত্যাগের নিদের্শ দেওয়া হয়েছে।
ফ্রান্সে একজন আলজেরিয়ান কনস্যুলার কর্মকর্তাকে আটক করার পরই কূটনীতিকদের বহিষ্কার করে দেশটি। ফ্রান্স কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপটিকে কূটনৈতিক দায়মুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে অভিহিত করে আলজেরিয়া।
স্বরাষ্ট্র মন্তণালয়ের কর্মকর্তাসহ আলজেরিয়ায় ফরাসি দূতাবাসের ১২ জন কূটনীতিককে বহিষ্কারের আদেশটি পেয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে ফ্রান্স।
আরও পড়ুন: ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনকে ‘অপরাধ’ স্বীকৃতি দিচ্ছে আলজেরিয়া
কূটনীতিকদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করতে আলজেরিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিন নোয়েল ব্যারোট।তিনি বলেছেন, তারা চাইলে ফ্রান্স তাৎক্ষণিকভাবে আলোচনা করতে প্রস্তুত।
আলজেরিয়ার কনস্যুলার কর্মকর্তাকে আটকের পর শনিবার ফরাসি রাষ্ট্রদূত স্টিফেন রোমাটেটকে তলব করে বহিষ্কারের বিষয়টি জানায়।
একটি অপহরণের ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে আলজেরিয়ান কনস্যুলেট কর্মকর্তাকে আটক করা হয়। ২০২৪ সালে প্যারিসে অবস্থানকারী আলজেরিয়ান অ্যাক্টিভিস্ট আমির বোখরাস অপহরণের শিকার হন, যিনি ‘আমিরডিজেড’ নামে পরিচিত।
কনস্যুলেট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে আলজেরিয়া। একই সঙ্গে উল্লেখ করেছে যে, আটকের স্বপক্ষে ফরাসি কর্তৃপক্ষের উদ্ধৃত একমাত্র প্রমাণ হলো বোখোরসের বাসভবনের কাছে তার ফোন পাওয়া।
আরও পড়ুন: বেনজেমার চোখে মৌসুম-সেরা ফরাসি ফুটবলার নন এমবাপ্পে!
কনস্যুলেট কর্মকর্তার আটকের বিষয়টিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত উল্লেখ করে এবং দেশ দুটির মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে তার দ্রুত মুক্তির দাবিও জানিয়েছে আলজেরিয়া।
আলজিয়ার্স সতর্ক করে বলেছে, এর সার্বভৌমত্বের ওপর আর কোনো প্রকার লঙ্ঘন হলে পারস্পরিক অধিকারের ভিত্তিতে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখানো হবে।
দেশ দুটির মধ্যে এই কূটনৈতিক দ্বন্দ্বটি বিগত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর সংকট।
১৭৬ দিন আগে
পশ্চিম সুদানে আরএসএফ’র হামলায় নিহত ১১৪: স্থানীয় কর্মকর্তা
আফ্রিকার দেশ পশ্চিম সুদানে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) হামলায় ১১৪ জনেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।
দেশটির উত্তর দারফুর রাজ্যের রাজধানী এল ফাশারে গত দুই দিনে দুটি বাস্তুচ্যুত শিবিরে চালানো হামলায় এই সকল প্রাণহানি হয়।
শনিবার (১২ এপ্রিল) দেশটির স্থানীয় এক কর্মকর্তা এই তথ্য জানিয়েছেন।
উত্তর দারফুর রাজ্যের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মহাপরিচালক ইব্রাহিম খাতির বার্তা সংস্থা সিনহুয়াকে জানিয়েছেন, শুক্রবার (১১ এপ্রিল) জমজম বাস্তুচ্যুত শিবিরে আরএসএফ মিলিশিয়াদের নৃশংস হামলায় ১০০ জনেরও বেশি বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন। এতে আহতে হয়েছেন আরও অনেকে।’
তিনি আরও বলেন, শনিবার আবু শৌক বাস্তুচ্যুত শিবিরে মিলিশিয়াদের আরেকটি হামলায় আরও ১৪ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন। এতেও বেশকিছু মানুষ আহত হয়েছেন।
মিলিশিয়াদের হামলায় জমজম শিবিরে নিহতদের মধ্যে বেসরকারি সংস্থা রিলিফ ইন্টারন্যাশনালের ৯ জন কর্মী ছিলেন। তারা ক্যাম্পে একটি ফিল্ড হাসপাতাল পরিচালনা করে আসছিলেন।
আরও পড়ুন: ইসরায়েলি হামলায় গাজায় আরও ৬০ ফিলিস্তিনি নিহত
স্বেচ্ছাসেবক গোষ্ঠী ইমার্জেন্সি রুম এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আবু শৌক ক্যাম্পে আরএসএফের ভারী গোলাবর্ষণের ফলে শনিবার ৪০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং শত শত মানুষ আহত হয়েছেন।
তবে হামলার বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি আরএসএফ।
২০২৪ সালের ১০ মে থেকে সুদানের সশস্ত্র বাহিনী (এসএএফ) এবং আরএসএফের মধ্যে এল ফাশারে ভয়াবহ লড়াই চলছে।
জাতিসংঘের সংকট পর্যবেক্ষণকারী গোষ্ঠী আর্মড কনফ্লিক্ট লোকেশন অ্যান্ড ইভেন্ট’র তথ্যানুসারে, ২০২৩ সালের এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে সুদানের এসএএফ এবং আরএসএফ এক ভয়াবহ সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে। তাদের সংঘাতের ফলে এখন পর্যন্ত ২৯ হাজার ৬০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।
১৭৮ দিন আগে
ডিআর কঙ্গোতে ভারী বৃষ্টিপাতে প্রাণহানি বেড়ে ৩৩
আফ্রিকার দেশ গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র ডিআর কঙ্গোর রাজধানী কিনশাসায় ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৩ জনে দাঁড়িয়েছে।
সোমবার (৭ এপ্রিল) ভোরে দেশটির কর্তৃপক্ষ এই তথ্য জানিয়েছে।
দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্র ও নিরাপত্তামন্ত্রী জ্যাকুয়েমেন শাবানি বলেছেন, শুক্রবার থেকে শনিবার পর্যন্ত রাতভর প্রবল বর্ষণে রাজধানীর বেশ কয়েকটি জেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে বেশকিছু মানুষ আহত হয়েছেন। ধ্বংস হয়েছে অসংখ্য বাড়িঘর।
দুর্গতদের উদ্ধার ও সহায়তার জন্য সরকার সশস্ত্র বাহিনী, বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় এবং কিনশাসা প্রাদেশিক সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে একটি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ইউনিট গঠন করা হয়েছে। একই সঙ্গে লোকজনকে সরিয়ে নিতে জরুরি উদ্ধারকারী দল মোতায়েনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বন্যায় শহরের বেশিরভাগ অবকাঠামো অচল হয়ে পড়েছে। ডুবে গেছে প্রধান সড়কগুলো। শহরজুড়ে ব্যাপক বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
আরও পড়ুন: বলিভিয়ায় ভারী বৃষ্টিপাতে মৃত্যু বেড়ে ২৮
বন্যার কারণে নাজিলি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আসা-যাওয়ার রুটে মারাত্মক ব্যাঘাতের কথা জানিয়েছে দেশটির পরিবহন মন্ত্রণালয়। আটকে পড়া যাত্রীদের সহায়তার জন্য জরুরি ফেরি পরিষেবা মোতায়েন করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।
আগামী কয়েকদিন ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে বলেও পূর্বাভাসে বলেছেন আবহাওয়াবিদরা। এতে ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষের শহরটিতে আরও ধ্বংসের আশঙ্কা রয়েছে।
ডিআরসিতে বর্ষাকাল সাধারণত নভেম্বর থেকে মে পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
১৮৪ দিন আগে
ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনকে ‘অপরাধ’ স্বীকৃতি দিচ্ছে আলজেরিয়া
ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনকে অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে আইন প্রণয়ন করতে চলেছে ফ্রান্সের এক সময়ের উপনিবেশ আলজেরিয়া।
স্থানীয় সময় রবিবার (২৩ মার্চ) একটি খসড়া আইন প্রণয়নের লক্ষে দেশটির পার্লামেন্টে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। খসড়াটি চূড়ান্ত হলে সেটি সরকারের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।
এই পদক্ষেপ ফ্রান্স ও আলজেরিয়ার মধ্যে চলমান উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দেবে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর আগে, ঐতিহাসিক অপরাধের জন্য ফ্রান্সকে ক্ষমা চাইতে আলজিয়ার্স অনেকবার চাপ দিলেও তা গ্রাহ্য করেনি প্যারিস। ঐতিহাসিক দ্বন্দ্ব, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যেই এবার ফরাসি শাসকদের নানা অপকর্মকে আনুষ্ঠানিকভাবে অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে চলেছে আলজিয়ার্স।
১৮৩০ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত ১৩২ বছর ফ্রান্সের উপনিবেশ ছিল আলজেরিয়া। সে সময় ফরাসিরা আলজেরিয়ার মানুষের ওপর নানা অত্যাচার-নিপীড়ন চালিয়েছে বলে অভিযোগ ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত এই দেশটির।
এ বিষয়ে গত সপ্তাহে আলজেরিয়ার পার্লামেন্টের এক বৈঠকে আইন প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সময় ‘ফরাসিদের অত্যাচার আলজেরিয়ানদের স্মৃতিতে এখন অম্লান’ বলে অভিহিত করেন দেশটির পার্লামেন্টের স্পিকার ব্রাহিম বুঘালি।
১৩২ বছরের ফরাসি শাসনামলে আলজিরিয়ানরা যা কিছু সহ্য করেছে, সেই সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘এটি আমাদের স্মৃতির বিষয়। কেউ কেউ হয়তো এটিকে চাপ প্রয়োগের একটি হাতিয়ার হিসেবে দেখাতে চেষ্টা করতে পাারেন, কিন্তু বিষয়টি তা নয়।’
আরও পড়ুন: তুরস্কে ধরপাকড় উপেক্ষা করে এরদোগানবিরোধী বিক্ষোভ চলছে
এই আইন প্রণয়নকে দেশটির নাগরিকদের অসামান্য ত্যাগের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা হিসেবে অভিহিত করেছেন তিনি।
আলজেরিয়ায় ফ্রান্সের (ঔপনিবেশিক) শাসকরা যেসব অত্যাচার-নিপীড়ন চালিয়েছিলেন, সেসব সত্য প্রকাশ্যে নিয়ে আসাটা দেশটির ঐতিহাসিক ও নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করেন ব্রাহিম।
আলজেরিয়ার আইনপ্রণেতাসহ ইহিতাস ও আইন বিশেষজ্ঞরা এই (আইন প্রণয়নের) উদ্যোগকে সমর্থন দিয়েছেন। এর আগে, ফ্রান্সকে ঔপনিবেশিক অপরাধের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে বলেও দাবি তুলেছিলেন তারা।
ঔপনিবেশিক শাসনামলে ফরাসিরা যেসব অপরাধ সংগঠিত করেছিল, সেসব নিয়ে একটি তালিকাও প্রণয়ন করেছেন তারা। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— ১৮৪৫ সালে সংঘঠিত দাহারা গণহত্যা ও সাহারা মরুভূমিতে পরিচালিত পরমাণু পরীক্ষা।
আলজেরিয়ার ঐতিহাসিক তথ্যমতে, ১৮৪৫ সালে একটি গুহার মধ্যে অবস্থানরত কয়েক শ’ মানুষকে ধোঁয়া দিয়ে বের করে এনে হত্যা করেছিল ফরাসি সেনারা, যার মধ্যে অনেক নারী ও শিশু ছিল।
ফরাসিদের আরেক ভয়াবহ অপরাধ হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে, আলজেরিয়ার সাহারা মরুভূমিতে অবস্থিত অংশে ১৯৬০ থেকে ১৯৬৬ সালের মধ্যে ১৭টি পারমাণবিক পরীক্ষা। এতে স্থানীয় জলবায়ুতে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণে এখনও অঞ্চলটির বাসিন্দারা ক্যান্সারসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
এমন আরও অনেক অপরাধের বর্ণনা রয়েছে তালিকায়।
সম্প্রতি যে আইনটি প্রণয়নে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, এমন একটি আইনের দাবি ১৯৮৪ সালের দিকেও করা হয়,কিন্তু বারবার পদক্ষেপ পেছানোর ফলে সেটি আর বাস্তব রূপ পায়নি।
এরপর ২০০১ সালেও এই রকম আইন প্রণয়নের প্রস্তাব করা হয়েছিল, তবে তাও বাস্তবায়িত হয়নি। ২০০৫ সালে ফরাসিদের প্রণীত একটি আইনকে কেন্দ্র করে নতুন করে এই দাবি জোরালো হয়েছিল।
আরও পড়ুন: ফিলিস্তিনের সমর্থনে বিক্ষোভ, শিক্ষার্থীকে আত্মসমর্পণে মার্কিন পুলিশের চিঠি
ওই বছর নিজেদের শিক্ষাক্ষেত্রে ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনামলকে ইতিবাচক হিসেবে পড়ানোর জন্য একটি আইন প্রণয়ন করে ফ্রান্স। এতে ক্ষুব্ধ হয় আলজেরিয়ার মানুষ। পাল্টা হিসেবে তারা আইনের মাধ্যমে ফরাসি শাসনকে অপরাধ হিসেবে আখ্যা দেওয়ার দাবি তোলেন।
এরপর ২০২১ সালে আলজেরিয়ার শতাধিক আইনপ্রণেতা দাবি তোলেন, ঔপনিবেশিক শাসনামলে সংগঠিত অপরাধের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত প্যারিসের সঙ্গে কোনো চুক্তিতে যেতে পারবে না আলজিয়ার্স। এ লক্ষ্যে একটি খসড়া আইন প্রণয়ন করতে সরকাররের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
এদিকে, বিগত কয়েকমাস ধরে ঐতিহাসিক অভিযোগ, অভিবাসন নীতিতে মতবিরোধ, পশ্চিম সাহারা নিয়ে মরক্কোর সঙ্গে আলজেরিয়ার বিরোধে রাবাতকে ফ্রান্সের সমর্থন দেওয়ার মতো বিষয় নিয়ে আলজিয়ার্স-প্যারিস কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছেছে।
দীর্ঘস্থায়ী এই কূটনৈতিক উত্তেজনা প্রসঙ্গে শনিবার (২২ মার্চ) এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট আব্দেলমাজিদ তেববুনে বলেন, দ্বিপাক্ষিক বিষয় সমাধানে ‘একমাত্র রেফারেন্স পয়েন্ট’ হিসেবে থাকবেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট বা তার মনোনীত প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেই সমস্যাগুলোর সমাধান করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
এছাড়া ফরাসি সরকারকে ঔপনিবেশিক অপরাধ স্বীকার করে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনার জন্য অব্যাহতভাবে চাপ দিয়ে আসছে আলজেরিয়া। অতীতের তিক্ততা মিটিয়ে স্থিতিশীল ও গঠনমূলক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার জন্য এ উদ্যোগ উভয় দেশের জন্যই অপরিহার্য বলে মনে করে দেশটির সরকার।
১৯৬ দিন আগে