ইউরোপ
জর্জিয়ায় ইইউ আলোচনা স্থগিতের প্রতিবাদে বিক্ষোভ, আহত ৪৪
জর্জিয়া সরকার ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ নিয়ে আলোচনা স্থগিতের ঘোষণার পর শনিবার তিবলিসিতে টানা তৃতীয় রাতের মতো বিক্ষোভ ছড়িয়ে করেন বাসিন্দারা। এ সময় ৪৪ জন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের মধ্যে ২৭ জন বিক্ষোভকারী, ১৬ জন পুলিশ কর্মকর্তা এবং একজন সাংবাদিক রয়েছেন।
হাজার হাজার বিক্ষোভকারী জর্জিয়ার পার্লামেন্টের বাইরে জড়ো হয়ে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এ সময় বিক্ষোভকারীরা পাথর নিক্ষেপ করেন এবং আতশবাজি ফোটান। ক্ষমতাসীন জর্জিয়ান ড্রিম পার্টির প্রতিষ্ঠাতা বিদজিনা ইভানিসভিলির কুশপুত্তলিকাও পোড়ান। এধিকে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ জলকামান ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে।
ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে সরকারের প্রতিরক্ষা
প্রধানমন্ত্রী ইরাকলি কোবাখিদজে জর্জিয়ার ইউরোপীয় সংহতি প্রচেষ্টা পরিত্যাগের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। রবিবার এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা যা প্রত্যাখ্যান করেছি, তা কেবল লজ্জাজনক ও অপমানজনক ছিল।’
এই বিক্ষোভের জন্য বিরোধী রাজনীতিবিদদের দায়ী করেন কোবাখিদজে এবং আইন লঙ্ঘনের জন্য কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেন।
আরও পড়ুন: কপ২৯: স্বল্পোন্নত-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে ২০০ মিলিয়ন বরাদ্দ দিতে ইইউ’র সমর্থন চাইল বাংলাদেশ
কোবাখিদজে জর্জিয়ার সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কৌশলগত অংশীদারিত্ব স্থগিত করার ঘোষণাকেও খাটো করে দেখেছেন। এটিকে বিদায়ী প্রশাসনের একটি প্রচেষ্টা হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যার উদ্দেশ্য ছিল আসন্ন ইউএস নেতৃত্বের জন্য ট্রানজিশনকে জটিল করে তোলা।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ সমালোচনা
ইউরোপীয় ইউনিয়ন রবিবার একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেছে। সেখানে পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কাজা কাল্লাস এবং সম্প্রসারণ কমিশনার মার্তা কোস জর্জিয়ার সিদ্ধান্তের নিন্দা করেছেন। তারা এই পদক্ষেপকে বেশিরভাগ জর্জিয়ানের ইউরোপীয় সমর্থনের আকাঙ্ক্ষা থেকে একটি বিচ্যুতি হিসেবে বর্ণনা করেছেন। একই সঙ্গে কর্তৃপক্ষকে গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের করার অধিকারকে সম্মান করার আহ্বান জানান।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সিদ্ধান্তের পর এসব বিক্ষোভ শুরু হয়। এর আগে বিতর্কিত "ফরেন ইনফ্লুয়েন্স" আইন পাসের পর জর্জিয়ার জন্য আর্থিক সহায়তা স্থগিত করেছিল এটি। সমালোচকরা দাবি করেন এটি গণতান্ত্রিক স্বাধীনতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্ট ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনা স্থগিতের জন্যও সমালোচনা করেছে। তারা জর্জিয়ায় গণতান্ত্রিক অবক্ষয়ের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং বিক্ষোভকারীদের শান্তিপূর্ণভাবে মতপ্রকাশের অধিকারকে সমর্থন জানিয়েছে।
বিরোধীদের নির্বাচনের আহ্বান
জর্জিয়ান ড্রিম পার্টির বিরুদ্ধে ২৬ অক্টোবরের সংসদীয় নির্বাচনে রাশিয়ার সমর্থন এবং ভোট কারচুপির অভিযোগ করেছেন বিরোধী নেতারা। তাদের দাবি, এই নির্বাচন জর্জিয়ার ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেওয়ার আকাঙ্ক্ষাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।এর ফলস্বরূপ ব্যাপক বিক্ষোভ ও সংসদ বর্জন করেন বিরোধীরা।
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জর্জিয়ার পশ্চিমা সমর্থক প্রেসিডেন্ট স্যালোমে জৌরাবিখভিলি সরকারের বিরুদ্ধে দেশের গতিপথ ‘আধা রুশ’ রাষ্ট্রে পরিণত করার অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা নতুন নির্বাচন চাই, তবে সেখানে যেন মানুষের ইচ্ছাকে পুনরায় বিকৃত বা চুরি না করা হয়।’
ইউরোপীয় আকাঙ্ক্ষা ঝুঁকিতে
ব্লকের সুপারিশ মেনে চলার শর্তে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে জর্জিয়াকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রার্থী দেশ হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। তবে, এই বছর শুরুর দিকে গণতান্ত্রিক অবক্ষয়ের উদ্বেগের মধ্যে দেশটির সদস্যপদ নিয়ে আলোচনা স্থগিত করা হয়।
বিক্ষোভকারীরা ইউরোপীয় ইউনিয়নে সদস্যপদ এবং গণতান্ত্রিক সংস্কারের প্রতি নতুন প্রতিশ্রুতির দাবি জানিয়েছেন।
উত্তেজনা অব্যাহত থাকায় সংকট মোকাবিলা এবং গণতান্ত্রিক নীতির প্রতি তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করার জন্য ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক এবং দেশীয় চাপের মুখোমুখি হচ্ছে জর্জিয়ার সরকার।
সূত্র: এজেন্সি
আরও পড়ুন: ২৮ সাংবাদিকের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েছে বিএফআইইউ
২ দিন আগে
ন্যাটোর সদস্যপদ লাভের বিনিময়ে সংঘাত অবসানে প্রস্তুত ইউক্রেন
নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশনে (ন্যাটো) ইউক্রেনের সদস্যপদ লাভের বিনিময়ে রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাতের অবসান ঘটাতে নিজেদের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি।
বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স-ইউক্রেন শুক্রবার এ খবর জানিয়েছে।
জেলেনস্কি বলেছেন, ‘আমরা যদি যুদ্ধের উত্তেজনা বন্ধ করতে চাই, তাহলে আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ইউক্রেনের ভূখণ্ডকে ন্যাটোর আশ্রয়ে রাখতে হবে। আমাদের এটি দ্রুত করা দরকার।’
‘পরবর্তীতে কূটনৈতিক উপায়ে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা (ইউক্রেনের) অঞ্চলগুলো ফিরে পাওয়া যেতে পারে।’
তিনি বলেন, ন্যাটোর আমন্ত্রণে ইউক্রেনের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমান্তকে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত।
জেলেনস্কি জোর দিয়ে বলেন, ইউক্রেনের আরও ভূখণ্ড দখল করতে রাশিয়া যাতে ফিরে না আসে তার নিশ্চয়তা দিতে যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন।
৪ দিন আগে
খাদ্য নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ ২০২৬ সাল পর্যন্ত বাড়াল রাশিয়া
যেসব দেশ রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তাদের ওপর খাদ্য নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ ২০২৬ সালের শেষ পর্যন্ত বাড়িয়েছে মস্কো। শুক্রবার রাশিয়ার প্রকাশিত এক সরকারি নথিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রকাশিত তালিকায় দেখা গেছে, নতুন করে নিউজিল্যান্ডের ওপর খাদ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, নরওয়ে, ইউক্রেন, আলবেনিয়া, মন্টেনিগ্রো, আইসল্যান্ড ও লিখটেনস্টাইন থেকে রাশিয়ায় পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়।
নিষিদ্ধ পণ্যের মধ্যে রয়েছে মাংস, সসেজ, মাছ, সামুদ্রিক খাবার, দুগ্ধজাত পণ্য, শাকসবজি, ফল ও অন্যান্য সামগ্রী।
প্রাথমিকভাবে ২০১৪ সালে প্রবর্তিত এই নিষেধাজ্ঞাটি ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে বাড়ানো হয়, ২০২৪ সালের শেষ পর্যন্ত যা কার্যকর থাকবে।
৪ দিন আগে
গ্রিসে অভিবাসীবাহী নৌকাডুবি, দুই শিশুসহ নিহত ৪
গ্রিসের পূর্বাঞ্চলীয় সামোস দ্বীপের একটি পাথুরে উপকূলে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বহনকারী একটি নৌকাডুবির ঘটনায় দুই শিশুসহ চারজন নিহত হয়েছেন।
সম্ভাব্য নিখোঁজ যাত্রীদের অনুসন্ধানে টহল জাহাজ, লাইফবোট ও স্থল বাহিনীর সমন্বয়ে একটি উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে দেশটির কোস্টগার্ড।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে নৌকাটিতে ঠিক কতজন আরোহী ছিলেন তা এখনও স্পষ্ট নয়।
গ্রিসের একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেছেন, শীতের মাসগুলোতে অভিবাসীদের আগমন ঝুঁকি বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের কারণে এ বছর অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ বাড়বে বলে মনে করেন ওই কর্মকর্তা।
গত সোমবার ওই দ্বীপের উপকূলে একটি নৌকাডুবিতে ছয় শিশু ও দুই নারীসহ আট অভিবাসীর মৃত্যু হয়। তিন দিন না পেরোতেই ফের একই ঘটনা ঘটল।
পূর্ব এজিয়ান সাগরে অবস্থিত গ্রিসের সামোস ও অন্যান্য দ্বীপগুলোতে তুরস্ক থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে অভিবাসীদের প্রবেশের মূল ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে বিবেচনা করে থাকে অভিভাসনপ্রত্যাশীরা। সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার দেশগুলো চলমান যুদ্ধের কারণে এই রুটে অভিভাসনপ্রত্যাশীদের সক্রিয়তা বেড়ে গেছে।
বৃহস্পতিবার গ্রিসের বেসরকারি স্কাই টেলিভিশনকে অভিবাসনমন্ত্রী নিকোস পানাগিওটোপোলোস বলেন, আবহাওয়ার অবনতি হওয়ায় আগামী সপ্তাহগুলোতে ওই অঞ্চলে এ ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়বে।
৫ দিন আগে
রাশিয়ার নতুন ক্ষেপণাস্ত্র পশ্চিমা দেশগুলো ঠেকাতে পারবে না: পুতিন
চলতি সপ্তাহের কিয়েভের হামলার জবাবে রাশিয়া একটি নতুন মধ্যম-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে বলে দাবি করেছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
এ সপ্তাহে আমেরিকান ও ব্রিটিশ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার রাশিয়ার গভীরে আঘাত করে ইউক্রেন।
টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট সতর্ক করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এই নতুন ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে অক্ষম হবে। এই ক্ষেপণাস্ত্র শব্দের চেয়ে দশ গুণ বেশি গতিতে উড়তে পারে। এটি তিনি ‘ওরেশনিক’ নামে অভিহিত করেছেন, যা রাশিয়ান ভাষায় হ্যাজেলনাট গাছের প্রতিশব্দ।
তিনি আরও বলেন, ইউক্রেনের যেসব মিত্র তাদের ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়ার বিরুদ্ধে হামলা করতে ব্যবহার করে, তাদের বিরুদ্ধে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে।
পুতিন বলেছেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, দেশগুলো আমাদের স্থাপনার বিরুদ্ধে তাদের অস্ত্র ব্যবহার করার অনুমতি দেয়, তাদের সামরিক স্থাপনার বিরুদ্ধে আমাদের অস্ত্র ব্যবহার করার অধিকার আমাদের রয়েছে।’
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চলতি মাসে ইউক্রেনকে রাশিয়ার অভ্যন্তরে সীমিত পরিসরে আঘাত হানতে মার্কিন এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের সবুজ সংকেত দেওয়ার পর প্রথম মন্তব্যে পুতিন এ কথা বলেন।
পেন্টাগনের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি সাব্রিনা সিং জানান, রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রটি নতুন, পরীক্ষামূলক ধরনের মধ্যম-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র, যা তাদের আরএস-২৬ রুবেজ ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের উপর ভিত্তি করে তৈরি।
ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রচলিত বা পারমাণবিক ওয়ারহেড বহন করতে পারে উল্লেখ করে সিং বলেন, ‘এটি নতুন ধরনের প্রাণঘাতী সক্ষমতাসম্পন্ন। তাই এটি অবশ্যই উদ্বেগের বিষয়।’
তিনি বলেন, পরমাণু ঝুঁকি হ্রাস চ্যানেলের মাধ্যমে উৎক্ষেপণের আগে যুক্তরাষ্ট্রকে জানানো হয়েছিল।
মঙ্গলবার ও বুধবার রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে কিয়েভের দূরপাল্লার মার্কিন ও ব্রিটিশ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের জবাবে ইউক্রেনের মধ্যাঞ্চলীয় শহর ডিনিপ্রোতে এ হামলা চালানো হয়েছে বলে জানান পুতিন।
তিনি বলেন, এসব হামলায় রাশিয়ার ব্রায়ানস্ক অঞ্চলের একটি গোলাবারুদ গুদামে আগুন লাগে। কুরস্ক অঞ্চলে নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েকজন কর্মী নিহত ও আহত হন।
রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আগ্রাসী পদক্ষেপ বাড়লে আমরা সিদ্ধান্তমূলক ও সদয়ভাবে প্রতিক্রিয়া জানাব।’ যেসব পশ্চিমা নেতারা মস্কোর বিরুদ্ধে তাদের বাহিনী ব্যবহারের পরিকল্পনা করছেন, তাদের ‘বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে চিন্তা করা উচিত।’
পুতিন বলেন, বৃহস্পতিবার ওরেশনিকের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রটি দিনিপ্রোর একটি সুপরিচিত ক্ষেপণাস্ত্র কারখানায় আঘাত হেনেছে। তিনি আরও বলেন, বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার সুযোগ করে দিতে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ওরেশনিকের সঙ্গে আরও হামলা চালালে রাশিয়া আগাম সতর্কতা জারি করবে- যা আগের বিমান হামলার আগে মস্কো করেনি।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ প্রাথমিকভাবে বলেন, নতুন ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের বিষয়ে রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেনি। কিন্তু পরে তিনি কৌশল পরিবর্তন করে বলেন, উৎক্ষেপণের ৩০ মিনিট আগে মস্কো একটি সতর্কতা জারি করেছিল।
স্থানীয় কর্মকর্তাদের মতে, ইউক্রেন দাবি করেছে দিনিপ্রো হামলায় রাশিয়া একটি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে। এতে দু'জন আহত হয়েছে এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পুনর্বাসন কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
১ সপ্তাহ আগে
অবৈধ অভিবাসীদের বসবাস ও কাজের অনুমতি দেবে স্পেন
স্পেনে বসবাসরত অন্তত তিন লাখ অবৈধ অভিবাসীকে তিন বছরের জন্য বসবাস ও কাজের অনুমতি দেবে দেশটির সরকার। বুধবার দেশটির অভিভাসনমন্ত্রী এলমা সাইস এ ঘোষণা দেন।
অভিবাসনপ্রত্যাশী ও আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলো যেখানে কঠোর নীতি প্রয়োগে ব্যস্ত, ঠিক সেই সময়ে উল্টো পথে হাঁটছে স্পেন।
আগামী বছরের মে মাস থেকে এই আইন কার্যকর হবে। স্পেনের বয়স্ক কর্মশক্তির বিকল্প খুঁজতেই এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির অভিভাসনমন্ত্রী।
দেশটির জাতীয় সম্প্রচারমাধ্যম রেডিও নাসিওনাল দে এস্পানিয়াকে বুধবার দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সাইস বলেন, ‘কেবল সাংস্কৃতিক সম্পদ ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাই নয়, দেশের সমৃদ্ধিও এই পদক্ষেপ গ্রহণের একটি উদ্দেশ্য।’
‘আজকে স্পেনকে আমরা উত্তম দেশ বলতে পারি। দেশের উন্নতির এই ধারা বজায় রাখতে প্রতি বছর অন্তত আড়াই লাখ নিবন্ধিত বিদেশি শ্রমিকের প্রয়োজন।’
আরও পড়ুন: স্পেন যাওয়ার পথে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নৌকাডুবি, নিহত ৯, নিখোঁজ ৪৮
প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ প্রায়ই অভিবাসন নীতিকে স্পেনের নিম্ন জন্মহার মোকাবিলার একটি উপায় হিসেবে বর্ণনা করেন।
মঙ্গলবার নতুন নীতিটিতে অনুমোদন দিয়েছে সানচেজের বামপন্থী সংখ্যালঘু জোট সরকার। এর ফলে অভিবাসীদের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী ভিসার জন্য প্রশাসনিক প্রক্রিয়া সহজ এবং তাদের শ্রম নীতি আরও নিরাপদ হবে। এ ছাড়াও, আগে থেকে চাকরিরতদের দেওয়া ভিসার মেয়াদ তিন মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে অনিয়মিত ও অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে আগস্টে পশ্চিম আফ্রিকার তিনটি দেশ সফর করেন প্রধানমন্ত্রী সানচেজ।
আফ্রিকা উপকূলে অবস্থিত দ্বীপপুঞ্জটিকে সহজে ইউরোপে পৌঁছানোর রুট হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন মালি, সেনেগাল ও মৌরিতানিয়াসহ আফ্রিকার অন্যান্য দেশের তরুণরা। উন্নত জীবন ও কাজের সন্ধানে বিপজ্জনকভাবে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে এসে ওঠেন তারা। অনেকে আবার নিজ দেশের সহিংসতা ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা থেকে মুক্তি পেতে চলে আসেন।
স্পেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রায় ৫৪ হাজার অভিবাসী স্থল ও সমুদ্রপথে দেশটিতে পৌঁছেছে। তবে অবৈধভাবে বসবাসরত বিদেশির সংখ্যা ঠিক কত, তা স্পষ্ট করে জানে না স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও।
কোভিড মহামারির পর পর্যটনের মাধ্যমে দ্রুত ঘুরে দাঁড়িয়েছে স্পেনের অর্থনীতি। বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দ্রুততম ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির মধ্যে অন্যতম দেশটি।
১ সপ্তাহ আগে
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ৬টি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার দাবি মস্কোর
রাশিয়ার ব্রায়ানস্ক অঞ্চলে ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা ছয়টি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে বলে দাবি করে মস্কো বলেছে, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের এক হাজার দিনের মধ্যে কিয়েভের প্রথম এ ধরনের অস্ত্রের ব্যবহার এটি।
ব্রায়ানস্কে এটিএসিএমএস নামে পরিচিত সেনাবাহিনীর কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ব্যবহার করা হয়েছে বলে দাবি রাশিয়ার।
রাশিয়ার ভেতরে যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা দূরপাল্লার ভারী ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে ইউক্রেনকে অনুমতি দেওয়ার পর নিজেদের পরমাণু নীতি সংশোধন করেছে মস্কো। আর এদিনই ইউক্রেনের বিরুদ্ধে এ ধরনের হামলা চালানোর অভিযোগ করল তারা।
এর ফলে পারমাণবিক শক্তিধর দেশ বা এসব দেশ সমর্থিত যেকোনো দেশের ওপর মস্কোর সম্ভাব্য পারমাণবিক প্রতিক্রিয়ার দ্বার উন্মুক্ত হলো।
এই দাবি সত্যি হলে তা ইউক্রেনসহ বিশ্বজুড়ে সংঘাতের একটি উদ্বেগজনক নতুন দিক উন্মোচন করবে।
আরও পড়ুন: ইউক্রেন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের পর রাশিয়ার পরমাণু নীতি সংশোধন
এদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা গ্রহণের আগেই এই যুদ্ধ কোন দিকে মোড় নিতে চলেছে এবং কীভাবে এর অবসান সম্ভব, তা নিয়ে নতুন করে অনিশ্চয়তা ছড়াল।
হোয়াইট হাইসে প্রবেশের পর যত শিগগির সম্ভব, যুদ্ধ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প। এমনকি, ইউক্রেনকে সমর্থন করতে যুক্তরাষ্ট্র যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছে, তারও সমালোচনা করেছেন তিনি।
বিপুল সম্পদের কারণে রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও এই যুদ্ধ রাশিয়া বা ইউক্রেন কারও পক্ষেই আর বেশি দীর্ঘায়িত করা সম্ভব হবে না বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।
একদিকে সীমান্তের অন্তত ১ হাজার কিলোমিটারের মধ্যে যুদ্ধক্ষেত্রে তীব্র চাপের মধ্যে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর সংখ্যা একেবারেই কমে গেছে। অন্যদিকে, ইউক্রেনের বেসামরিক নাগরিকরা রুশ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বিপর্যস্ত হচ্ছে।
সোমবার মধ্যরাতে ব্রায়ানস্কে রাশিয়ার একটি অস্ত্র গুদামে হামলা চালানোর দাবি করে ইউক্রেন। অবশ্য কী ধরনের অস্ত্র দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে, তা নির্দিষ্ট করা হয়নি।
আরও পড়ুন: ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় বসতে ‘প্রস্তুত’ পুতিন
রুশ বার্তা সংস্থাগুলোতে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, (রাশিয়ার) সামরিক বাহিনী পাঁচটি এটিএসিএমএস ভূপাতিত এবং আরও একটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। সেগুলো বিস্ফোরিত হয়ে নিচে পড়ায় আগুন লেগে যায়, তবে এতে কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছে তারা।
এ বিষয়ে কোনো পক্ষের দাবিই স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি।
এর আগে, ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানান, মঙ্গলবার ইউক্রেনের একটি আবাসিক এলাকায় রুশ হামলায় এক শিশুসহ অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছেন। তার আগে, সোমবার রাতে দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় সুমি অঞ্চলে শাহেদ ড্রোনের হামলায় দুই শিশুসহ ১১ জন আহত হয়েছে বলে জানায় কিয়েভ।
রোববার ইউক্রেনের উত্তরাঞ্চলীয় সুমির একটি আবাসিক এলাকায় রাশিয়ার একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানলে ১১ জন নিহত ও ৮৪ জন আহত হয়।
এ বিষয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ধারাবাহিক বিমান হামলা প্রমাণ করে, পুতিন যুদ্ধ শেষ করতে আগ্রহী নন।
তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার প্রতিটি নতুন হামলা পুতিনের আসল উদ্দেশ্যকেই নিশ্চিত করে। তিনি চান যুদ্ধ অব্যাহত থাকুক। শান্তির কথা তার কাছে আকর্ষণীয় নয়। বলপ্রয়োগের মাধ্যমেই রাশিয়াকে ন্যায়সঙ্গত শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাধ্য করতে হবে।’
২ সপ্তাহ আগে
ইউক্রেন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের পর রাশিয়ার পরমাণু নীতি সংশোধন
যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতা ছাড়ার আগে ইউক্রেনকে অস্ত্র দেওয়া এবং তাদের সরবরাহ করা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার অভ্যন্তরে আঘাত হানার অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর একটি সংশোধিত পরমাণু নীতিতে স্বাক্ষর করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার তিনি বলেছেন, পারমাণবিক শক্তিধর দেশ সমর্থিত যেকোনো দেশ যদি রাশিয়ার ওপর হামলা চালায়, তবে তা (রাশিয়ার ওপর) যৌথ হামলা হিসেবে বিবেচিত হবে।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর এক হাজারতম দিন উপলক্ষে এই সংশোধিত পরমাণু প্রতিরোধ নীতি অনুমোদন করেন পুতিন।
ইউক্রেনে যখন মস্কোর আক্রমণের মাত্রা কমেছে, তখন পশ্চিমাদের পিছু হটাতে দেশটির পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডার কাজে লাগাতেই এই স্বাক্ষর।
আরও পড়ুন: ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় বসতে ‘প্রস্তুত’ পুতিন
বাইডেনের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে সংশোধিত নীতিটি জারি করা হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, নথিটি সময়মতো প্রকাশিত হয়েছে।
তবে বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে নীতিগুলো আপডেট করতে সরকারকে চলতি বছরের শুরুতেই পুতিন নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে জানান তিনি।
এর আগে, যুক্তরাষ্ট্র ও এর অন্যান্য ন্যাটো মিত্রদের সতর্ক করে পুতিন বলেছিলেন, ইউক্রেনকে রাশিয়ার ভূখণ্ডে আঘাত হানার জন্য পশ্চিমাদের সরবরাহকৃত দূরপাল্লার অস্ত্র ব্যবহার করতে দেওয়ার মানে হচ্ছে- রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হতে চায় ন্যাটো।
সংশোধিত পরমাণু নীতিতে বলা হয়েছে, রাশিয়া ও মিত্র দেশ বেলারুশের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার জন্য গুরুতর হুমকি হয়ে দাঁড়ায়- এমন পারমাণবিক হামলা বা যেকোনো হামলার জবাবে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে রাশিয়া।
নীতিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক ব্লক বা জোটের (ন্যাটো) কোনো সদস্য দেশের আগ্রাসনকে পুরো ব্লকের আগ্রাসন হিসাবে দেখা হবে।
২ সপ্তাহ আগে
ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় বসতে ‘প্রস্তুত’ পুতিন
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফের নির্বাচিত হওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাশিয়া প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
রুশ থিংক ট্যাংক ভালদাইয়ের বার্ষিক বৈঠকের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলতে প্রস্তুত কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে পুতিন এ কথা জানান।
পুতিন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় আমি তাকে অভিনন্দন জানাতে চাই। আমেরিকার জনগণ বিশ্বাস করে এমন যেকোনো রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে কাজ করবে রাশিয়া।’
৩ সপ্তাহ আগে
স্পেনে বন্যায় মৃতের সংখ্যা ২১৯, নিখোঁজ ৯৩
গত সপ্তাহে পূর্ব স্পেনে প্রবল বৃষ্টিপাতে নদীসহ শুষ্ক খালগুলো প্লাবিত হয়ে হঠাৎ বন্যার সৃষ্টি করে। এতে বসতি এলাকা তলিয়ে যায় এবং বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
বন্যার প্রভাবে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে অঞ্চলটি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভ্যালেন্সিয়া এলাকা। ২৯ অক্টোবরের বন্যার এক সপ্তাহ পরেও মৃত ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। পাশাপাশি উদ্ধার কার্যক্রম চলমান।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক স্পেনের শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়:
২১৯ জন নিহত ও ৯৩ জন নিখোঁজ
ভয়াবহ এ বন্যায় ২১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে শুধু ভ্যালেন্সিয়া অঞ্চলেই ২১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রতিবেশী কাস্তিলা লা মঞ্চায় আরও সাতজন এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় আন্দালুসিয়ায় আরও একজন মারা গেছেন।
সরকারিভাবে ৯৩ জনকে নিখোঁজ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে স্বীকার করেছে কর্তৃপক্ষ। এখনও ৫৪টি মরদেহ শনাক্ত করা যায়নি। সব মিলিয়ে ৩৬ হাজার ৬০৫ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।
ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ
ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সুস্পষ্টভাবে জানা যায়নি। তবে বন্যার মতো চরম ঝুঁকির ক্ষেত্রে বিমা পরিশোধকারী পাবলিক-প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান স্পেনের কনসোর্টিয়াম ফর ইন্স্যুরেন্স কমপেনসেশন অনুমান করছে, তারা ক্ষতিপূরণে অন্তত ৩.৫ বিলিয়ন ইউরো (৩.৮ বিলিয়ন ডলার) ব্যয় করবে।
কনসোর্টিয়ামটি বন্যার ক্ষয়ক্ষতির জন্য ১,১৬,০০০ বিমার আবেদন পেয়েছে, যার মধ্যে ৬০ শতাংশ দাবি গাড়ির এবং ৩১ শতাংশ বাড়ির জন্য। স্পেনের অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিধারণা করছে, এই বন্যা বিমা ক্ষতিপূরণের ক্ষেত্রে একটি ঐতিহাসিক রেকর্ড তৈরি করবে।
দেশটির পরিবহন মন্ত্রণালয় এ পর্যন্ত ২৩২ কিলোমিটার (১৪৪ মাইল) সড়ক ও রেলপথ মেরামত করলেও ভ্যালেন্সিয়া ও মাদ্রিদের মধ্যে দ্রুতগামী ট্রেন লাইনটি এখনও ভাঙা অবস্থায় রয়েছে।
পরিবার, ব্যবসা ও টাউনহলের জন্য ১০.৬ বিলিয়ন ইউরো (১১.৬ বিলিয়ন ডলার) ত্রাণ প্যাকেজ অনুমোদন করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। ভ্যালেন্সিয়া আঞ্চলিক সরকার মাদ্রিদের কাছে ৩১ বিলিয়ন ইউরো (৩৩ বিলিয়ন ডলার) সহায়তা চেয়েছে।
রেকর্ড বৃষ্টিতে বিপর্যয়
বিজ্ঞানীরা বলছেন, গত দুই বছর ধরে দেশটিতে যে খরা চলছে এবং রেকর্ড তাপমাত্রা বন্যা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।
স্পেনের আবহাওয়া সংস্থা জানিয়েছে, ২৯ অক্টোবর ভ্যালেন্সিয়ার তুরিস শহরে এক ঘণ্টায় ৩০.৪ ইঞ্চি বৃষ্টি হয়, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড। বিপর্যস্ত চিভা গ্রামেও আট ঘণ্টায় এত বৃষ্টি হয়েছে, যা গত ২০ মাসের সম্মিলিত বৃষ্টিপাতের পরিমাণকেও ছাড়িয়ে গেছে।
ঝড়ের তীব্রতা ম্যাগ্রো ও তুরিয়া নদী এবং পোয়ো খালে কেন্দ্রীভূত হয়, যা তীব্র স্রোতে পরিণত হয়ে সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায়। মানুষের চোখে এটি যেন একটি সুনামির মতো পানি ও কাদার ঢেউ ছিল, যা ভ্যালেন্সিয়া শহরের দক্ষিণ প্রান্ত জুড়ে ধ্বংসের চিহ্ন রেখে গেছে।
ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি জানায়, ৩১ অক্টোবরের স্যাটেলাইট ছবি অনুযায়ী, ১৫ হাজার ৬৩৩ হেক্টর (৩৮ হাজার ৬০০ একর) এলাকা জুড়ে পানি ঢুকেছে।
সংস্থাটি আরও জানায়, প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সব মিলিয়ে ৭৮টি পৌরসভায় একজন বাসিন্দা বন্যায় মারা গেছে।
১৭ হাজারের বেশি সেনা ও পুলিশ বাহিনী এবং স্বেচ্ছাসেবকদের বাহিনী
কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের জরুরি অভিযানে ১৭ হাজারের বেশি সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তা মোতায়েন করা হয়েছে।
এই অভিযানে ৮,০০০ সৈন্য রয়েছেন। তাদের মধ্যে ২,১০০ জন দুর্যোগ প্রতিক্রিয়ায় বিশেষায়িত সামরিক জরুরি ইউনিটের অন্তর্ভুক্ত।এছাড়া স্পেনের অন্যান্য অঞ্চল থেকে ৯,২০০ অতিরিক্ত পুলিশ কর্মকর্তা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
হাজার হাজার সাধারণ নাগরিক স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করেছেন, ঠিক কতজন আছেন তার কোনো নির্দিষ্ট হিসাব নেই। তারা প্রথম দিন থেকেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানে সহায়তা করেছেন।
দেশটির সরকার জানায়, বন্যার পর প্রথম সপ্তাহে কর্তৃপক্ষ ১ লাখ ৪৭ হাজার বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ পুনঃস্থাপন করেছে এবং পানীয় জল নেই এমন জায়গায় প্রায় ১ লাখ ৭৮ হাজার বোতল পানি বিতরণ করেছে।
এখনও আজানা
স্প্যানিশ কর্তৃপক্ষ এখনও জানায়নি, তারা নিখোঁজ ব্যক্তিদের সম্পর্কে কতগুলো কল পেয়েছে। সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতির একটি অনুমান দিয়েছে বা কতটা জমি ধ্বংস হয়েছে তার একটি গণনা প্রকাশ করেছে। এই মুহূর্তে, পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টা কখন শেষ হবে তা কেউ অনুমান করতে পারে না।
৩ সপ্তাহ আগে