ল্যাটিন-আমেরিকা
ব্রাজিলে বন্যায় নিহত ৩১, বাস্তুচ্যুত ২৩০০
ব্রাজিলের দক্ষিণাঞ্চলে একটি ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় নিহত হয়েছেন ৩১ জন। বাড়িঘর ভেসে যাওয়ায় বাস্তুচ্যুত হয়েছেন প্রায় ২ হাজার ৩০০ মানুষ। বন্যার পানিতে রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় আটকা পড়েছে মোটরসাইকেলসহ বেশকিছু যানবাহন।
স্থানীয় সময় বুধবার(৬ সেপ্টেম্বর) দেশটির কর্তৃপক্ষ বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
গভর্নর এডুয়ার্ডো লেইট বলেছেন, গত সোমবার রাত থেকে ৬০টিরও বেশি শহর ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে রিও গ্র্যান্ডে দো সুল রাজ্যে ঝড়টি ছিল সবচেয়ে মারাত্মক।
লেইট রাজ্যের সামাজিক মাধ্যমের অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে বলেছেন, ‘আমরা এইমাত্র যে ফ্লাই-ওভারটি করেছি, তা একেবারে সাধারণ ইভেন্টের বাইরের মাত্রা দেখায়।’ ‘এটি কেবল নদীর তীরবর্তী সম্প্রদায়গুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করেনি, বরং পুরো শহরগুলোকে সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।’
মঙ্গলবার উদ্ধারকারী দলের করা ভিডিও এবং অনলাইন নিউজ সাইট জি১ প্রকাশিত ছবি ও ভিডিওতে কিছু পরিবারকে তাদের বাড়ির উপর থেকে সাহায্যের জন্য অনুরোধ করতে দেখা গেছে। কারণ নদীগুলোর পানি তীরকে প্লাবিত করেছে। প্রশস্ত সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে নদীর আকারে পরিণত হওয়ায় কিছু এলাকা সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
আরও পড়ুন: ব্রাজিলে ডে কেয়ার সেন্টারে ৪ শিশুকে হত্যা, আহত ৩
বুধবার লেইট বলেছেন যে মৃতের সংখ্যা ৩১ জনে পৌঁছেছে। এছাড়া কমপক্ষে দুই হাজার ৩০০ মানুষ গৃহহীন হয়েছে বলে জানিয়েছে রাজ্যের জরুরি কর্তৃপক্ষ। আরও ৩ হাজার মানুষকে সাময়িকভাবে তাদের ঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে হয়েছে।
প্রায় ৫০ হাজার বাসিন্দার শহর মুকুমের একটি বাড়ি থেকে ১৫টি লাশ উদ্ধার করেছে উদ্ধারকারী দল। ঝড়টি থেমে যাওয়ার পর বাসিন্দারা নদীর ধারে একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থা দেখতে পান। যেখানে বেশিরভাগ ভবন মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। ছবিগুলোতে দেখা যায় বৈদ্যুতিক লাইনে একটি ভেড়া ঝুলছে। পানি কতটা বৃদ্ধি পেয়েছিল তারই ইঙ্গিত এটি।
ধ্বংসস্তূপের উপরে দাঁড়িয়ে মুকুমের বাসিন্দা মার্কোস আন্তোনিও গোমেস বলেন, ‘পানি খুব দ্রুত পৌঁছেছিল, তা ঘণ্টায় দুই মিটার (সাড়ে ৬ ফুট) বেগে বাড়ছিল। ‘আমাদের কিছুই অবশিষ্ট নেই। এমনকি কাপড়ও নেই।’
মানুষ কতদিন আটকে থাকতে পারে তার ইঙ্গিত দিয়ে মুকাম সিটি হল মঙ্গলবার বাসিন্দাদের আগামী ৭২ ঘন্টার জন্য তাদের চাহিদা মেটাতে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সরবরাহ খুঁজতে পরামর্শ দিয়েছে। অন্যান্য শহরগুলো উদ্ধার প্রচেষ্টায় নৌকা দিয়ে সহায়তা করার জন্য তাদের নাগরিকদের আহ্বান জানিয়েছে।
৫৫ বছর বয়সী ব্যবসায়ী গোমস বলেন, ১৫ বছরের মধ্যে এটি চতুর্থবারের মতো বন্যায় তার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেছিলেন যে এটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে খারাপ ছিল এবং তিনি ভবিষ্যতে আরও বন্যার আশঙ্কা করছেন।
আরও পড়ুন: ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট বলসোনারোর বাড়িতে পুলিশের অভিযান
গোমেস বলেন, ‘এখানে আমাদের বাঁচার কোনো উপায় নেই। আবারও বন্যা হবে.. আমাদের (এই জায়গাটি) পরিত্যাগ করতে হবে।’
অনলাইন নিউজ সাইট জি১ জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে অনেকেই বৈদ্যুতিক শক থেকে মারা গেছেন বা যানবাহনে আটকা পড়েছেন। উদ্ধার কার্যক্রম চালানোর সময় ভেসে যাওয়ায় এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে।
অনুসন্ধান এবং উদ্ধারকারী দলগুলো রাজ্যের রাজধানী পোর্তো অ্যালেগ্রে থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার (৩০ মাইল) উত্তর-পশ্চিমে টাকুয়ারি উপত্যকায় গুরুত্ব দিয়ে বেশিরভাগ আঘাত এবং ক্ষয়ক্ষতি রেকর্ড করেছে। তবে সেই প্রচেষ্টাগুলো বুধবার সকালে আরও পশ্চিমে প্রসারিত হয়েছিল। এছাড়া রিও পারডো উপত্যকায় হেলিকপ্টার পাঠানো হয়েছিল।
আরও ভারী বৃষ্টিপাত রাজ্যের কেন্দ্র থেকে দক্ষিণ অঞ্চলে আঘাত হানবে বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল। সম্ভবত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ অঞ্চলগুলোকে বাঁচিয়ে রাখবে। বুধবার কর্তৃপক্ষ জাকুই, কাই এবং টাকুয়ারি নদীর জন্য তিনটি বন্যা সতর্কতা জারি রেখেছে।
রিও গ্রান্ডে ডো সুল জুন মাসে আরেকটি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছিল। এতে মৃত্যু হয়েছিল ১৬ জনের। আর ধ্বংসযজ্ঞেরে শিকার হয়েছিল ৪০টি শহর। যার মধ্যে অনেকগুলো ছিল পোর্তো আলেগ্রির আশেপাশে।
আরও পড়ুন: জ্বালানির দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে কলম্বিয়ায় হাজার হাজার মানুষের বিক্ষোভ
জ্বালানির দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে কলম্বিয়ায় হাজার হাজার মানুষের বিক্ষোভ
জ্বালানির দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে স্থানীয় সময় সোমবার (২৮ আগস্ট) দক্ষিণ আমেরিকার দেশ কলম্বিয়ার প্রধান শহরগুলোতে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভে নেমেছে।
বিক্ষোভকারীদের দাবি, কলম্বিয়ার প্রথম বামপন্থী সরকার জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি করেছে। ফলে দেশের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে উঠছে এবং দেশে খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কিন্তু প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রোর সরকার বলছে, গ্যাসোলিন ভর্তুকি বাবদ বছরে প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়।
তারা বলেছে, জাতীয় তেল কোম্পানি ইকোপেট্রোলকে ঋণ পরিশোধের জন্য ভর্তুকি বাদ দিতে হবে এবং সামাজিক কর্মসূচির জন্য আরও তহবিল খালি করতে হবে। ইকোপেট্রোল দেশটির বেশিরভাগ জ্বালানি উৎপাদন করে।
দারিদ্র্য হ্রাস করার এবং দেশের অবশিষ্ট বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে শান্তি স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দায়িত্ব নেওয়ার এক বছর পরেই পেট্রোর প্রশাসনের ওপর জনগণের অসন্তোষ বেড়েছে এবং বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) তথ্য অনুসারে, পেট্রোর প্রশাসন দেশের গ্রামীণ অংশে সহিংসতা বন্ধ করতে এবং কলম্বিয়ার অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য সংগ্রাম করেছে। তবে ২০২৩ সালে দেশটির অর্থনীতি মাত্র এক শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কলম্বিয়ার সুপারমার্কেটের জন্য হিমায়িত খাবার এবং অন্যান্য পণ্য পরিবহনকারী একটি ছোট কোম্পানির ম্যানেজার আলেজান্দ্রা মেন্ডোজা বলেছেন, ‘এই সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে যা ব্যবসা-বিরোধী।’
তিনি তার কোম্পানির হলুদ জ্যাকেট পরে সোমবারের বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিলেন।
মেন্ডোজা বলেন, ‘আমাদের খরচ এক তৃতীয়াংশ বেড়েছে এবং পেট্রলের দাম বৃদ্ধির কারণে প্রতি মাসে আমাদের বাজেট সামঞ্জস্য করতে হবে।’
আরও পড়ুন: স্কুলে বোরকা পরা নিষিদ্ধ করবে ফ্রান্স: শিক্ষামন্ত্রী
কলম্বিয়ায় গ্যাসোলিনের দাম গত বছরের আগস্ট মাসে ৯ হাজার পেসো প্রতি গ্যালন (২ দশমিক ৫০ মার্কিন ডলার) থেকে বেড়ে বর্তমানে ১৪ হাজারের বেশি (৩ দশমিক ৪০ ডলার) হয়েছে, কারণ কলম্বিয়ার সরকার প্রতি মাসে ভর্তুকি কমিয়েছে।
কলম্বিয়ার অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা বছরের শেষ নাগাদ গ্যাসোলিনের দাম গ্যালন প্রতি ১৬ হাজার পেসো বা প্রায় ৪ ডলার করতে চান। যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমান গ্যাসের দামের সমান। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ন্যূনতম মজুরি কলম্বিয়ার ন্যূনতম মজুরির চেয়ে চার গুণ বেশি। কলম্বিয়ার ন্যূনতম মজুরি মাসে ২৮০ ডলার।
গত জুলাই মাসে মন্ত্রণালয় জানায়, অক্টোবরে মিউনিসিপ্যাল নির্বাচনের পর ডিজেলের জন্য ভর্তুকি দেওয়া বন্ধ করা হবে এবং আগামী বছরের শেষে ডিজেল জ্বালানির দাম দ্বিগুণ হবে।
অথচ, কলম্বিয়ার বেশিরভাগ পণ্যবাহী ট্রাক চালাতে ডিজেল ব্যবহৃত হয়।
পেট্রোর সরকারের যুক্তি, দেশের পেট্রোলে ভর্তুকি দেওয়ায় বেশিরভাগ ধনী কলম্বিয়ানরা উপকৃত হয়েছে, যারা যানবাহনের মালিক।
তবে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট কিছু গ্রুপের সঙ্গে তিনি গ্যাসোলিনের দাম নিয়ে আলোচনা করতে ইচ্ছুক।
গত শনিবার পেট্রোর প্রশাসন দেশের ট্যাক্সি ড্রাইভার ইউনিয়নগুলোর সঙ্গে একটি চুক্তি বাতিল করেছে।
তবে কলম্বিয়ার বিরোধী দলের সদস্যরা বলছেন, সরকারের জ্বালানির দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত ডেলিভারি কর্মী, চালক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে। ইতোমধ্যে তারা মহামারির ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে সংগ্রাম করছে।
কংগ্রেসওম্যান জেনিফার পেড্রাজা সোমবারের বিক্ষোভ সংগঠিত করতে সাহায্য করেছিলেন।
জেনিফার বলেন, সরকার পেট্রল ও ডিজেলের উপর কম বিক্রয় কর ধার্য করে জ্বালানির দাম বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ‘জনগণ প্রশাসনকে একটি ভিন্ন পেট্রল নীতি নিয়ে আলোচনা করতে বলছে।’
তিনি আরও বলেন, কলম্বিয়ার জাতীয় তেল কোম্পানির ‘সবার জন্য পেট্রল সাশ্রয়ী করতে আগ্রহী হওয়ার সময় এসেছে।’
আরও পড়ুন: মাদাগাস্কারে ইন্ডিয়ান ওশান আইল্যান্ড গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের স্টেডিয়াম বিধ্বস্ত, নিহত ১২
সীমান্তে উত্তেজনা কমাতে একমত মোদি-শি জিনপিং
ইকুয়েডরে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী খুন
ইকুয়েডরের আসন্ন নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ফার্নান্দো ভিলাভিসেনসিওকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
স্থানীয় সময় বুধবার (৯ আগস্ট) রাজধানী কিতো’য় আয়োজিত একটি রাজনৈতিক সমাবেশে বক্তৃতা শেষে গাড়িতে উঠার সময় ফার্নান্দোকে গুলি করা হয়।
ধারণা করা হচ্ছে, দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশে সক্রিয় আন্তর্জাতিক অপরাধ সংগঠন মেক্সিকোর সিনালোয়া কার্টেলের দলের সদস্যরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
ইকুয়েডরের অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় ফার্নান্দোর মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে।
অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় জানায়, হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশের গুলিতে একজন সন্দেহভাজন মারা গেছেন এবং পুলিশ কিতোতে অভিযান চালিয়ে ছয় সন্দেহভাজনকে আটক করেছে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বুধবারের গোলাগুলির ওই ঘটনায় কমপক্ষে ৯ জন আহত হয়েছে। যার মধ্যে অফিসার ও একজন কংগ্রেস প্রার্থী রয়েছে।
মৃত্যুর আগে তার সর্বশেষ বক্তৃতায় ফার্নান্দো জনতাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি দেশের দুর্নীতির মূলোৎপাটন করবেন এবং দেশের ‘চোরদের’ আটক করবেন।
ফার্নান্দো এসময় জানান, তিনি মেক্সিকোর সিনালোয়া কার্টেলের সহযোগীদের কাছ থেকে একাধিকবার মৃত্যুর হুমকি পেয়েছেন।
আরও পড়ুন: ইকুয়েডরে কারাগারে দাঙ্গায় নিহত ১১৬
তিনি আরও বলেন, ‘আমি জানি আমার আদর্শ এই ধরনের গোষ্ঠীর জন্য হুমকি। তবে আমি ওইসব দুর্বৃত্তদের ভয় পাই না।’
আগামী ২০ আগস্ট ইকুয়েডরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হওয়ার কথা। মোট আটজন প্রার্থী প্রেসিডেন্ট পদে লড়ছেন।
জনমত সমীক্ষায় পাঁচ নম্বরে ছিলেন ৫৯ বছর বয়সী ফার্নান্দো। তার দলের নাম বিল্ড ইকুয়েডর মুভমেন্ট।
ফার্নান্দো ছিলেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে দেশের অন্যতম কণ্ঠস্বর। বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট রাফায়েল কোরেয়ার সরকারের সময় (২০০৭-২০১৭) তিনি বেশ সক্রিয় ছিলেন।
তিনি একজন স্বাধীন সাংবাদিকও ছিলেন। এ ছাড়া সাবেক সরকারের দুর্নীতির তদন্ত করেছিলেন এবং পরে দুর্নীতিবিরোধী প্রচারক হিসেবে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন।
সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং প্রার্থী অটো সোনেনহোলজনার বুধবারের হত্যাকাণ্ডের পর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা শোকাহত, কান্নার সাগরে ডুবে যাচ্ছি এবং আমরা এভাবে বেঁচে থাকতে চাই না। আমরা দাবি করছি আপনারা (সরকার) কিছু করুন।’
ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট গুইলারমো লাসো বলেন, ‘ফার্নান্দোর স্মৃতি এবং তার লড়াইকে সম্মান জানাতে সব দোষীদের ধরে শাস্তি দেওয়া হবে।’
আরও পড়ুন: চলতি বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দাবদাহে ১৪৭ জনের মৃত্যু
লাসো বলেন, ‘হত্যাকারীরা’ রাস্তায় একটি গ্রেনেড ছুঁড়েছিল, কিন্তু এটি বিস্ফোরিত হয়নি। পরে পুলিশ একটি নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ ঘটিয়ে গ্রেনেডটি ধ্বংস করে।
গুইলারমো লাসো বলেন, ‘এই ধরনের সংগঠিত অপরাধীদের সাহস বেড়ে গেছে। এবার সর্বশক্তি নিয়ে তাদের মোকাবিলা করবে আইন। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা অফিসারদের নিয়ে আমি জরুরি বৈঠকে বসব।’
চলতি মাসেই বন্দর নগরী মান্তার মেয়রকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এরপর সহিংসতা রোধে প্রেসিডেন্ট লাসো ২৬ জুলাই দুটি প্রদেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন।
ফার্নান্দোর নির্বাচনী প্রচারণার দায়িত্বে থাকা ম্যানেজার প্যাট্রিসিও জুকুইল্যান্ড বলেন, ফার্নান্দো কমপক্ষে তিনবার হত্যার হুমকি পেয়েছিলেন। যা তিনি কর্তৃপক্ষকেও জানিয়েছিলেন। এই অভিযোগে একজনকে আটক করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘ইকুয়েডরের মানুষ কাঁদছে। রাজনীতির কারণে এভাবে যেন আর কারো মৃত্যু না হয়।’
তিনি ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও মাদক পাচারকে দায়ী করে সহিংসতার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
সাবেক সামরিক গোয়েন্দা কর্নেল এডিসন রোমো বলেছেন, দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান ফার্নান্দোকে ‘আন্তর্জাতিক অপরাধী সংস্থার জন্য হুমকি’ করে তুলেছিল।
এদিকে, এই হত্যাকাণ্ডের ফলে অন্য প্রার্থীরাও শঙ্কিত হয়ে পড়েছে।
সিটিজেন রেভুলোশনারি পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী রানার লুইসা গনজালেজ বলেন, ‘যখন তারা (দুর্বৃত্তরা) আমাদের একজনের নাগাল পায়, তখন তারা আমাদের সবারই নাগাল পেয়ে যায়।’
ইকুয়েডরে মাদক ভয়াবহ বৃদ্ধি পেয়েছে। মাদক পাচারকারীরা দেশের উপকূলীয় বন্দরগুলো ব্যবহার করতে শুরু করেছে। এর সঙ্গে জড়িতরা প্রভাব বিস্তার করছে। ফলে সেখানে সহিংস অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৩ সালে নির্বিচারে গুলির ঘটনা ঘটেছে ৪০০টিরও বেশি
ফুটবল স্টেডিয়ামে পদদলিত হয়ে ৯ জনের মৃত্যু
এল সালভাদরের রাজধানী সান সালভাদরে শনিবার সালভাদোরান লিগের একটি কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ দেখতে এসে পদদলিত হয়ে কমপক্ষে ৯জন নিহত এবং আরও কয়েক ডজন আহত হয়েছে।
ন্যাশনাল সিভিল পুলিশ একটি প্রাথমিক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, রাজধানী থেকে প্রায় ২৫ মাইল (৪১ কিলোমিটার) উত্তর-পূর্বে কুসকাটলানের মনুমেন্টাল স্টেডিয়ামে ক্লাব আলিয়াঞ্জা ও এফএএসের মধ্যকার ম্যাচে নয়জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
আহতদের মধ্যে অন্তত দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ফার্স্ট এইড গ্রুপ রেসকিউ কমান্ডোসের মুখপাত্র কার্লোস ফুয়েন্তেসও মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আরও পড়ুন: দুবাইয়ে ৫ বিলিয়ন ডলারের মানবসৃষ্ট চাঁদ!
ফুয়েন্তেস বলেন, ‘আমরা ৯জন নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারি। নিহতদের মধ্যে সাতজন পুরুষ এবং দুজন নারী। আমরা ৫০০ জনেরও বেশি লোকের সঙ্গে দেখা করেছি এবং ১০০ জনেরও বেশি মানুষকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর ছিল।’
জানা যায়, গেট বন্ধ করে দেওয়ার পর দেয়াল টপকে এবং ধাক্কা দিয়ে একটি গেট ভেঙে বিপুল সংখ্যক সমর্থক মাঠে ঢোকার চেষ্টা করলে এ মর্মান্তিক ঘটনার সূত্রপাত হয়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে কালোবাজারিরা অতিরিক্ত টিকিট বিক্রি করেছিল। যার কারণে এই সংকটের সৃষ্টি হয়।
সেসময় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। ম্যাচ শুরুর ১৬ মিনিটের মধ্যে খেলা স্থগিত করতে বাধ্য হন আয়োজকরা। ঠেলাঠেলি-হুড়োহুড়িতে পায়ের নীচে পিষ্ট হন বেশিরভাগ মানুষ।
এল সালভাদর সরকারের ফার্স্ট ডিভিশনের প্রেসিডেন্ট পেড্রো হার্নান্দেজ বলেছেন, প্রাথমিকভাবে তিনি জানতে পেরেছেন যে ভক্তরা ধাক্কা দিয়ে স্টেডিয়ামের একটি গেট ভাঙার চেষ্টা করার সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
জাতীয় সিভিল পুলিশ কমিশনার মাউরিসিও আরিজা চিকাস বলেছেন, অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসের সঙ্গে মিলে একটি ফৌজদারি তদন্ত হবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা টিকিট বিক্রি বিষয়ে তদন্ত করবো। বিশেষ করে স্টেডিয়ামের দক্ষিণ গেটে টিকিট বুথ নিয়ে তদন্ত হবে, যে গেটটি ধাক্কা দিয়ে খোলা হয়েছিল।’
সালভাদোরান সকার ফেডারেশন একটি বিবৃতিতে যা ঘটেছে তার জন্য তারা দুঃখ প্রকাশ করেছে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে।
আরও পড়ুন: ইতালির প্রাণঘাতী বন্যা জলবায়ু বিপর্যয়ের সর্বশেষ চরমতম উদাহরণ
ইরানে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে সহিংসতার দায়ে ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর
পেরুতে সোনার খনিতে আগুনে অন্তত ২৭ জনের মৃত্যু
পেরুর দক্ষিণাঞ্চলের একটি সোনার খনির ভিতরে আগুন লেগে অন্তত ২৭ জন নিহত হয়েছে। খনিতে রাতের শিফটে কাজ করার সময় এই দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে দেশটির কর্মকর্তারা।
ইয়ানাকুইহুয়া মাইনিং কোম্পানি এক বিবৃতিতে বলেছে শুক্রবার শেষের দিকে বা শনিবারের প্রথম দিকে দুর্ঘটনার পর মোট ১৭৫ জন শ্রমিককে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়, নিহত ২৭ জন ঠিকাদারের জন্য কাজ করত যারা খনি বিশেষজ্ঞ।
সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঘটনার কারণ তদন্ত করা হচ্ছে। কিছু সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে প্রাথমিক তদন্তে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে ভূপৃষ্ঠের প্রায় ১০০ মিটার (৩৩০ ফুট) নীচে খনির একটি অংশে একটি শর্ট সার্কিটের কারণে বিস্ফোরণ হতে পারে।
আরও পড়ুন: গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মহত্যা করলেন পেরুর সাবেক প্রেসিডেন্ট অ্যালান গার্সিয়া
নিহতদের আত্মীয়দের বাসে করে আরেকুইপা অঞ্চলের ইয়ানাকিহুয়ায় খনিতে নিয়ে আসা হয়েছিল, যেখানে নিরাপত্তা এজেন্টরা তাদের ব্রিফ করেছিলেন। কেউ কেউ তাদের প্রিয়জনের লাশের জন্য অপেক্ষা করতে খনির প্রবেশপথে পোস্টারের সামনে বসেছিলেন।
মার্সেলিনা আগুয়েরে জানান, নিহতদের মধ্যে তার স্বামীও রয়েছেন। তিনি বলেছিলেন যে তিনি তাকে বলেছিলেন যে খনিতে ঝুঁকি রয়েছে।
‘আমরা খুব চিন্তিত, খুব দুঃখিত, স্বামীকে হারানোর জন্য, দুটি পরিত্যক্ত সন্তানকে রেখে আমরা’।
আরেকুইপার ফিসকাল ডিস্ট্রিক্টের পাবলিক মিনিস্ট্রি জানিয়েছে যে তদন্তকারীরা কী ঘটেছে তা স্পষ্ট করার জন্য কাজ করছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘তদন্তের সময়, প্রসিকিউটর অফিস মর্মান্তিক ঘটনার কারণ এবং জড়িতদের দায় নির্ধারণ করবে।’
আরও পড়ুন: পেরুতে প্রবল বর্ষণে ভূমিধসে ৩৬ জনের মৃত্যু
ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট বলসোনারোর বাড়িতে পুলিশের অভিযান
ব্রাজিলের ফেডারেল পুলিশ বুধবার দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে এবং কোভিড-১৯ টিকার রেকর্ডের মিথ্যা তথ্যের তদন্তের অংশ হিসেবে তার সেল ফোন বাজেয়াপ্ত করেছে।
অপারেশন চলাকালীন অফিসারেরা বলসোনারোর সহকারী লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাউরো সিড এবং তার দুই নিরাপত্তা রক্ষীকেও গ্রেপ্তার করে।
বলসোনারো সাংবাদিকদের কাছে ব্রাসিলিয়ায় তার বাড়িতে অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এবং নথি জাল করার অভিযোগে সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
আরও পড়ুন: ব্রাজিলে নির্বাচন: বলসোনারোকে হারিয়ে লুলা ফের প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন
তিনি আরও বলেছেন যে তিনি কখনও কোভিড ভ্যাকসিন নেননি।
ফেডারেল পুলিশ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ফেডারেল পুলিশ ব্রাসিলিয়া ও রিও ডি জেনিরোতে মোট ১৬টি অনুসন্ধান ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এবং পাশাপাশি ছয়টি প্রতিরোধমূলক আটকাদেশ দিয়েছে।
তারা বলেছে, ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ডাটাবেসে মিথ্যা ভ্যাকসিনেশন তথ্য অন্তর্ভুক্ত করাকে নিয়ে তদন্ত করছে।
ফেডারেল সুপ্রিম কোর্ট অভিযোগের তদন্তের তত্ত্বাবধান করছে, যার মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করা এবং অপরাধমূলক সংস্থায় অংশগ্রহণ করা।
আরও পড়ুন: তৃতীয় পরীক্ষাতেও করোনা পজেটিভ ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট
হন্ডুরাসে ২০ জন পর্যটকসহ জাহাজডুবি, উদ্ধার অভিযান চলছে
হন্ডুরাসে ২০ জন পর্যটক বহনকারী একটি জাহাজ ডুবে গেছে।
শনিবার ভারতের বার্তা সংস্থা এএনআই এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
হন্ডুরান ফায়ার ডিপার্টমেন্ট ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে।
হন্ডুরাসের সান লরেঞ্জো এলাকার প্লেয়া লা কাবানায় ঘটনাটি ঘটেছে বলে দেশটির ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে।
তবে এখনও পর্যন্ত কোনো হতাহতের বা আহত হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন: হন্ডুরাসের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন সিওমারা কাস্ত্রো
হন্ডুরাসে কারাবন্দীদের মধ্যে সংঘর্ষে নিহত ১৮
ব্রাজিলে ডে কেয়ার সেন্টারে ৪ শিশুকে হত্যা, আহত ৩
দক্ষিণ ব্রাজিলে একটি ডে কেয়ার সেন্টারে হামলা চালিয়ে চার শিশুকে হত্যা করেছে এক ব্যক্তি। এসময় আহত হয়েছেন অন্তত আরও তিনজন।
বুধবার অ্যাকাউন্টে ব্লুমেনাউ শহরে এই হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন: প্রবল বৃষ্টিতে ব্রাজিলে ৩৬ জনের মৃত্যু
সান্তা ক্যাটারিনা রাজ্যের গভর্নর জর্গিনহো মেলো তার টুইটার অ্যাকাউন্টে ব্লুমেনাউ শহরে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করে লিখেছেন যে হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাজ্যের অগ্নিনির্বাপক দল নিশ্চিত করেছে যে এক ব্যক্তি একটি হ্যাচেট দিয়ে আক্রমণ করেছে এবং তিন শিশুকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ছবিতে দেখা যাচ্ছে কান্তিনহো ডো বম পাস্তোর নামে একটি প্রাইভেট ডে কেয়ার সেন্টারের বাইরে মা-বাবারা কাঁদছেন।
স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, হামলাকারী ডে কেয়ার সেন্টারে প্রবেশের জন্য প্রাচীর টপকাতে একটি হ্যাচেট ব্যবহার করে।
রাজ্যের সামরিক পুলিশ বা এর নিরাপত্তা সচিবালয় তৎক্ষণাৎ বিস্তারিত তথ্যের জন্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।
ব্রাজিলে স্কুলে হামলা অস্বাভাবিক ছিল। কিন্তু, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যাপক পরিসরে ঘটতে শুরু করেছে। গত সপ্তাহে, সাও পাওলোতে এক ছাত্র একজন শিক্ষককে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে এবং আরও কয়েকজনকে আহত করে।
গভর্নমেন্ট মেলো টুইটারে লিখেছেন,‘গভীর বেদনার এই মুহূর্তে ঈশ্বর সকল পরিবারের হৃদয়কে সান্ত্বনা দিন।’
ব্লুমেনাউ, তিন লাখ ৬৬ হাজার জনসংখ্যার একটি শহর। এটি বার্ষিক অক্টোবারফেস্ট উৎসবের জন্য বিখ্যাত।
আরও পড়ুন: ব্রাজিলে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ৪ জন নিহত
ব্রাজিলের ফার্স্ট লেডি রোজাঞ্জেলার সঙ্গে রাষ্ট্রদূত ফয়জুননেসার সাক্ষাৎ
ইকুয়েডরে ভূমিধসে নিহত ৭, নিখোঁজ অনেকে
মধ্য ইকুয়েডরের একটি আন্দিয়ান সম্প্রদায়ের উপর ভয়াবহ ভূমিধসে বাড়িঘর চাপা পড়ে সাত জন নিহত হয়েছে এবং নিখোঁজ রয়েছে আরও অনেকে। জীবিতদের উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে উদ্ধারকারী দল।
সোমবার জীবিতদের উদ্বেগের সঙ্গে উদ্ধারে উদ্ধারকারী দল অনুসন্ধান চালাচ্ছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এর আগে দিনের শুরুতে ১৬ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু প্রেসিডেন্ট গুইলারমো ল্যাসো সোমবার রাতে রাজধানী কুইটো থেকে প্রায় ১৩৭ মাইল দক্ষিণে আলাউসিতে বিপর্যয়ের ঘটনাস্থলে পৌঁছে সাতজন নিহত হওয়ার কথা নিশ্চিত করেন। তবে কর্মকর্তারা নিখোঁজদের সংখ্যা ৬২ জনে উন্নীত হয়েছে বলে জানান।
প্রেসিডেন্ট লাসো এই ট্র্যাজেডির জন্য দুঃখ প্রকাশ করে নগরীর জনগণকে তাদের উদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন অনুসন্ধানের প্রচেষ্টায় ‘আমরা কাজ চালিয়ে যাব’।
রবিবার ইকুয়েডরের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা সচিবালয় জানিয়েছে, রবিবার রাত ১০টার দিকে পাহাড় ধসে ৩০ জনেরও বেশি লোককে উদ্ধার করা হয়েছে। এতে ২৩ জন আহত হয়েছে।
পরিবারের সদস্যদের হারানো ৫৮ বছর বয়সী সদস্য লুইস অ্যাঞ্জেল গঞ্জালেজ বলেছেন, ‘আমার মা মাটির নিচে চাপা পড়েছে’ ‘আমি খুবই দুঃখিত, বিধ্বস্ত৷ এখানে কিছু নেই, ঘর নেই, কিছু নেই। আমরা গৃহহীন (এবং) পরিবারহীন।’
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা সংস্থা অনুমান করেছে যে ৫০০ জন মানুষ এবং ১৬৩টি বাড়ি এই দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা প্যান-আমেরিকান হাইওয়ের একটি অংশও ধ্বংস করেছে।
আরও পড়ুন: মালয়েশিয়ায় ভূমিধসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৪, নিখোঁজ ৯
চিম্বোরাজোর গভর্নর ইভান ভিনুয়েজা দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে জানিয়েছেন, আহতদের কয়েকজনকে এলাকার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, প্রায় দুই মাস আগে ভূমিধস ও ফাটল শুরু হওয়ার পর কর্মকর্তারা লোকজনকে ওই এলাকা থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। কেউ কেউ পরামর্শ অনুসরণ করে, এবং শনিবারের মধ্যে, কম্পন তীব্র হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্যরা সরে যায়।
এলাকার বাসিন্দারা স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেছেন যে তারা ভূমিধসের আগে পাহাড়ে কম্পনের শব্দ শুনেছেন, যা প্রায় ১৫০ মিটার (৪৯০ ফুট) প্রশস্ত এবং প্রায় দেড় মাইল (৭০০ মিটার) দীর্ঘ বলে অনুমান করা হয়েছিল। এটি গাছপালা, বাড়িঘর এবং অন্যান্য ভবন ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। অর্ধশতাধিক ঘর মাটির নিচে চাপা পড়েছে।
ইমার্জেন্সি রেসপন্স এজেন্সি জানিয়েছে যে এলাকার ৬০ ভাগ পানীয় জল পরিষেবা ভূমিধসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের যোগাযোগ কার্যালয় বলেছে যে কিছু স্কুল অনলাইনে ক্লাস চালু করবে।
সাহায্যের জন্য ছয়টি শহর থেকে দমকল কর্মীদের ওই এলাকায় পাঠানো হয়েছে। উদ্ধারকারীরা ভূমিধসের দিকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। যেখানে তারা ঘরের চিহ্ন এবং ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পেয়েছে।
উদ্ধারকারী এবং প্যারামেডিক আলবার্তো এসকোবার বলেছেন যে সময় অতিবাহিত হওয়ার কারণে আর বেশি বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই।
যতদিন বৃষ্টি না হয় ততদিন তল্লাশি চলবে বলে জানান তিনি।
দেশের জরুরি পরিষেবা নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযুক্ত ক্যামেরার ভিডিওতে দেখা গেছে যে প্রতিবেশীদের সাহায্যে লোকজন তাদের বাড়ি ছেড়েছে।এতে দেখা যায় মানুষ যানবাহনে যন্ত্রপাতি এবং অন্যান্য জিনিসপত্র পরিবহন করছে।
আরও পড়ুন: পেরুতে প্রবল বর্ষণে ভূমিধসে ৩৬ জনের মৃত্যু
বেঁচে যাওয়া, অস্থায়ী আশ্রয়ে থাকা অনেকেই তাদের দুর্ভাগ্যের জন্য কাঁদছিল।
তাদের মধ্যে জুনা পরিবার ছিল, যারা ইগলেসিয়া ম্যাট্রিজ দে আলাউসিতে অবস্থান করছিল। যেখানে ভূমিধসের ঝুঁকির কারণে কর্তৃপক্ষ এলাকায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার পরে কয়েকদিন আগে ক্যাটিসিজম বা প্যারিশ মিটিং-এর জন্য কক্ষগুলো গণ বিছানার জন্য প্রস্তুত করেছিল।
সোনিয়া গুয়াদালুপে জুনা বলেছিলেন যে তার মা বছরের পর বছর ধরে যা তৈরি করেছিলেন তা ছেড়ে যেতে নারাজ।
জুনা বলেন, ‘আমরা আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়েছিলাম, কিন্তু আমার মা চাননি,’‘পরে, আমার মেয়ে তাকে বোঝাতে গিয়েছিল। তারা যখন রেলপথ ধরে হাঁটল, সবকিছু ভেঙে পড়ল। তারা ময়লা আচ্ছন্ন হয়ে কাঁদতে কাঁদতে পৌঁছেছে।’
জুনার পরিবার সবকিছু হারিয়েছে,তাদের জামাকাপড়ের জন্য সঞ্চয় করুন।
তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলল, ‘আমি জানি না কোথায়, কিন্তু আমরা সবাই চলে যাচ্ছি।’ ‘আমার বাবা-মা আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে শিখিয়েছিলেন যে আপনি বস্তুগত জিনিস পান, কিন্তু একসঙ্গে থাকা অমূল্য।’
আরও পড়ুন: ইন্দোনেশিয়ায় ভূমিধসে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২১
পেরুতে প্রবল বর্ষণে ভূমিধসে ৩৬ জনের মৃত্যু
অবিরাম বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট ভূমিধসে দক্ষিণ পেরুর বেশ কয়েকটি গ্রামে কাদা, পানি এবং পাথর ধসে কমপক্ষে ৩৬ জন নিহত হয়েছে।
সোমবার দেশটির কর্তৃপক্ষ এই তথ্য জানিয়েছে।
কামানা প্রদেশের মারিয়ানো নিকোলাস ভালকারসেল পৌরসভার বেসামরিক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা উইলসন গুতেরেস স্থানীয় রেডিও আরপিপিকে বলেছেন যে মিসকি নামক একটি প্রত্যন্ত এলকায় ৩৬টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: পেরুতে সড়ক দুর্ঘটনায় ২৭ জনের মৃত্যু
নিহতদের পাঁচজন একটি ভ্যানে চড়েছিলেন যা কাদার ঢেউয়ের কারণে একটি নদীতে পড়ে গিয়েছিল।
স্থানীয় কর্মকর্তারা একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার তিন কিলোমিটার (প্রায় দুই মাইল) বিস্তৃত ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করার জন্য ভারী যন্ত্রপাতি পাঠানোর জন্য আবেদন করেছেন।
বেসামরিক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা বলেছেন যে আনুমানিক ৬৩০টি বাড়ি ভূমিধসের পরে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। যা সেতু, খাল এবং রাস্তাগুলোকেও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
পেরুতে ফেব্রুয়ারিতে অবিরাম বৃষ্টিপাত হয় এবং প্রায়শই মারাত্মক ভূমিধসের সৃষ্টি করে।
আরও পড়ুন: পেরুতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ, সংঘর্ষে নিহত ১৩