শিল্প-সংস্কৃতি
আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর ঈদে মিলাদুন্নবী
বাংলাদেশের আকাশে আজ কোথাও পবিত্র রবিউল আউয়াল মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। ফলে আগামী রবিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) থেকে পবিত্র রবিউল আউয়াল মাস গণনা করা হবে। সে হিসেবে আগামী বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) পালিত হবে।
শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মুকাররম সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এতে সভাপতিত্ব করেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দার।
আরও পড়ুন: আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী
সভায় জানানো হয়, আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশের আকাশে পবিত্র রবিউল আউয়াল মাসের চাঁদ দেখা পাওয়ার সংবাদ পাওয়া যায় নি। ফলে আগামীকাল শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) পবিত্র সফর মাস ৩০ দিন পূর্ণ হবে এবং আগামী রবিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) থেকে পবিত্র রবিউল আউয়াল মাস গণনা শুরু হবে। এছাড়া আগামী বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) পালিত হবে।
সভায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ড. বশিরুল আলম, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মু. আ. আউয়াল হাওলাদার, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম-সচিব মো. সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়া, সিনিয়র উপপ্রধান তথ্য কর্মকর্তা মো. আবদুল জলিল, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপপরিচালক মহা. আসাদুর রহমান, বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠানের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. ফরিদ উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: ঈদে মিলাদুন্নবীর ছুটি ২০ অক্টোবর
ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে বঙ্গভবনে মিলাদ মাহফিল
স্মরণীয় একটি সফর: রাহুল আনন্দের বাড়িতে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ
সফররত ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ রবিবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাতে বাংলাদেশের জনপ্রিয় মিউজিক্যাল ব্যান্ড ‘জলের গান’র সংগীতশিল্পী, গীতিকার ও যন্ত্রশিল্পী রাহুল আনন্দের ধানমন্ডির বাসায় যান।
এসময় ম্যাক্রোঁর সঙ্গে ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাসান মাহমুদ, বাংলাদেশে নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূত মারি মাসদুপুই, ফরাসি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ ডি ঢাকা (এএফডি) এর পরিচালক ফ্রাঁসোয়া গ্রোসজিন এবং দুই দেশের প্রতিনিধিত্বকারী অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট নৈশভোজের পর এ সফর করেন এবং দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় সেখানে অবস্থান করেন।
আরও পড়ুন: ধানমন্ডিতে চলছে ভাস্কর রাশার ড্রিফটউড শিল্পকর্মের প্রদর্শনী
রাহুল আনন্দের সঙ্গে তার স্ত্রী উর্মিলা শুক্লা, ছেলে টোটা এবং আরও তিনজন বাংলাদেশি শিল্পী আশফিকা রহমান, কামরুজ্জামান স্বাধীন ও আফরোজা সারার সঙ্গে আড্ডা দেন তিনি।
রাহুলের প্রাণবন্ত ঘরোয়া পরিবেশনে ‘আমি বাংলায় গান গাই’ এবং লালন সংগীতসহ বিভিন্ন গান শোনার পাশাপাশি রাহুলের বাজানো বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের সুর শোনেন ম্যাক্রোঁ।
তারা একে অপরকে উপহারও দিয়েছেন।
রাহুল আনন্দ ফরাসি প্রেসিডেন্টকে একটি 'একতারা' উপহার দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এটি তাকে (ম্যাক্রোঁ) এই স্মরণীয় সফরের কথা মনে করিয়ে দেবে।
অন্যদিকে, ম্যাক্রোঁ রাহুল আনন্দকে একটি কলম উপহার দিয়ে এটি তার কবিতা ও গান লেখার কাজে ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন।
এই শিল্পী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার আইডিতে উপহারের ছবি শেয়ার করেছেন।
এই সফর উপলক্ষে রাহুল আনন্দ ও তার পরিবার তাদের ১৪০ বছরের পুরোনো ধানমন্ডির বাসভবনের প্রবেশদ্বার ফুল দিয়ে সাজিয়েছিলেন।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট তার বাড়িতে ঐতিহাসিক সফরের পরে গণমাধ্যমের সঙ্গে তার সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে রাহুল আনন্দ বলেন, এই সাক্ষাৎ ছিল দুজন শিল্পীর মধ্যে একটি সংক্ষিপ্ত অথচ সুন্দর সাংস্কৃতিক বিনিময়। কারণ ফরাসি প্রেসিডেন্টও একজন সংগীতশিল্পী ও একজন সংগীত অনুরাগী।
কীভাবে তাদের মধ্যে যোগাযোগ হলো সে সম্পর্কে এই শিল্পী গণমাধ্যমকে জানান, চলতি বছরের জুনে বিশ্ব সংগীত দিবস-২০২৩ উদযাপন উপলক্ষে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ ডি ঢাকায় ‘মেড ইন বাংলাদেশ’- শিরোনামে একটি মাল্টিডিসিপ্লিনারি সংগীত পরিবেশন ও নাট্য মঞ্চস্থ হয়েছিল। সেখানে তিনি বেলজিয়ান শিল্পী ম্যাক্স ভ্যান্ডারভর্স্টের সঙ্গে সমন্বয় করেছেন এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট এই পারফরম্যান্স সম্পর্কে জানার পরে আগ্রহী হয়েছেন।
রাহুল আনন্দ গণমাধ্যমকে বলেন, আমি মনে করি এবং নিজেকে পাখি বলে ডাকি। আমি একজন যন্ত্রশিল্পী এবং আমি আমার নিজের যন্ত্র নিজে তৈরি করি। তাই গাছ আমার শৈল্পিক কার্যকলাপের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং আমি সারাদেশে বৃক্ষরোপণ কার্যক্রমের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। কীভাবে একতারা বাজাতে হয় আমি তাকে তা দেখিয়েছি, তিনি শিখেছেনও এবং আমি অবাক হয়েছি যে তিনি খুবই দ্রুত শিখতে পারেন।
ম্যাক্রোঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে রাহুল আনন্দ বলেন, ‘তার সমর্থনের মাধ্যমে এই অকল্পনীয় যোগাযোগ তৈরি হয়েছে। এভাবেই ফ্রান্সের সম্মানিত প্রেসিডেন্ট আমার বাড়িতে এসেছিলেন এবং আমি তার সামনে আমাদের বাংলাদেশি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে উপস্থাপন করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি।’
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর এই সংক্ষিপ্ত দুদিনের সফর ঐতিহাসিক হয়ে গেছে। কারণ ১৯৯০ সালের পর প্রথম ফরাসি প্রেসিডেন্ট হিসেবে ম্যাক্রোঁ বাংলাদেশ সফর করেছেন।
আরও পড়ুন: কীভাবে এল বাংলা ক্যালেন্ডার: দিনলিপি গণনার ইতিবৃত্ত
ধানমন্ডিতে চলছে ভাস্কর রাশার ড্রিফটউড শিল্পকর্মের প্রদর্শনী
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, নারীর ক্ষমতায়ন ও প্রকৃতিকে তুলে ধরে ভাস্কর আখতার আহমেদ রাশার ড্রিফটউড শিল্পকর্মের সপ্তাহব্যাপী একক প্রদর্শনী শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত সফিউদ্দীন শিল্পালয়ে এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্টুডিও ভার্টিক্যাল আয়োজিত এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর।
'শিকড়ে প্রোথিত, ভালোবাসায় প্রসারিত' শিরোনামের প্রদর্শনীটি দেশে রাশার প্রথম প্রদর্শনী। রাশা হলেন একজন প্রবাসী ভাস্কর যিনি শাখা, শিকড় ও কাণ্ডের মতো প্রাকৃতিক উপাদান শিল্পের জন্য ব্যবহার করেন।
আরও পড়ুন: কীভাবে এল বাংলা ক্যালেন্ডার: দিনলিপি গণনার ইতিবৃত্ত
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এর আগে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সি, নিউ ইয়র্ক ও ওয়াশিংটন ডিসিতে বেশ কয়েকটি একক ও দলীয় প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন।
ভাস্কর রাশা বলেন, ‘আমি বাংলাদেশে আমার জীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি এবং আটলান্টিক উপকূলের সৈকতে ড্রিফটউড সংগ্রহ করার মাধ্যমে প্রক্রিয়াটি শুরু হয়। আমি আনন্দিত। কারণ আমি মুক্তিযুদ্ধের দিকে মনোযোগ দিয়েছি, বিশেষ করে বিদেশে বাংলাদেশের বন্ধুদের জন্য।’
প্রদর্শনীতে ৫৩টি শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হচ্ছে। আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে এ প্রদর্শনী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন শিল্প সংগ্রাহক আবুল খায়ের লিটু।
আরও পড়ুন: গ্যালারি কসমসে শুরু হলো আর্টক্যাম্প ‘স্প্লেন্ডার্স অব বাংলাদেশ’
অ্যানির তৃতীয় একক প্রদর্শনী ‘কনটেম্পরারি ন্যারেটিভস’ এএফডিতে শুরু
কীভাবে এল বাংলা ক্যালেন্ডার: দিনলিপি গণনার ইতিবৃত্ত
বাংলা ক্যালেন্ডার বা বাংলা বর্ষপঞ্জি। নামটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঙালির হাজার বছরের সংস্কৃতি ও আবেগ। প্রাচীনকাল থেকে তদানীন্তন পদ্ধতিগুলোর স্পর্শে বাঙালির দিনলিপির গণনা সমূহ বিবর্তনের সাক্ষী হয়েছে। জুড়ে গেছে নানা অঞ্চলের নানা রীতি। জীবনের বিশেষ দিবসগুলোর হিসাব রাখার তাগিদে ভিন্ন রূপ পেয়েছে বাংলা পঞ্জিকা।কিন্তু এর শুরুটা কোথায়, কীভাবে এল বাংলা ক্যালেন্ডার! চলুন, বিবর্তনের সময়রেখা থেকে খুঁজে নেওয়া যাক সেই বাংলা বর্ষপঞ্জির ইতিহাস।
বাংলা বর্ষপঞ্জি ধারণার প্রাচীনতম বিকাশ
জ্যোতির্বিজ্ঞানের বিভিন্ন হিসাব-নিকাশ করার জন্য সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ছিল স্বতন্ত্র বর্ষপঞ্জি পদ্ধতি। তাদের ছয়টি বেদাঙ্গের একটির নাম ছিল জ্যোতিষ। এই শাস্ত্র মতে বৈদিক প্রথাগত বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা হতো।
রাজা বিক্রমাদিত্য প্রবর্তিত বিক্রমীয় বর্ষপঞ্জিকা চালু হয়েছিল ৫৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে। বিক্রমাদিত্য নামের এই ক্যালেন্ডার অনুসরণ করা হতো ভারত ও নেপালের বিভিন্ন রাজ্যের গ্রামগুলোতে।
একদম প্রথম দিকে হিন্দু পণ্ডিতদের মধ্যে সময় গণনার সবচেয়ে প্রসিদ্ধ পদ্ধতি ছিল চাঁদ-সূর্য ও গ্রহ পর্যবেক্ষণ। সংস্কৃতের জ্যোতির্বিদ্যার বিভিন্ন গ্রন্থে এর নিদর্শন পাওয়া যায়।
এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- পঞ্চম শতাব্দীতে আর্যভট্টের আর্যভট্টিয়া, ষষ্ঠ শতকে লতাদেবের রোমাক ও বরাহমিহিরের পঞ্চ সিদ্ধান্তিক, সপ্তম শতাব্দীতে ব্রহ্মগুপ্তের খন্ডখ্যাদ্যাক এবং অষ্টম শতাব্দীতে সিদ্ধাধিশ্যাক।
পৃথকভাবে বাংলা ভাষায় ক্যালেন্ডারের ধারণাটির সূত্রপাত ঘটেছিল সপ্তম শতাব্দীর হিন্দু রাজা শশাঙ্কের শাসনামলে। প্রাচীন নিদর্শন স্বরূপ দুটি শিব মন্দিরে পাওয়া যায় বঙ্গাব্দ শব্দটি, যার শাব্দিক অর্থ বাংলা সন। মন্দির দুটির বয়স মুঘল আমলের থেকেও বহু শতাব্দীর পুরোনো।
দশম শতাব্দীর মাঝামাঝিতে সম্পন্ন হয়েছিল সূর্যসিদ্ধান্ত গ্রন্থটি। এটি গ্রহ-নক্ষত্রের মাধ্যমে সময় গণনা পদ্ধতির গ্রন্থগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী। এই সংস্কৃত গ্রন্থে লিপিবদ্ধ পদ্ধতি এখনও অনুসরণ করা হয় পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা ও ঝাড়খণ্ডের মতো ভারতীয় রাজ্যগুলোতে।
এই সূর্যসিদ্ধান্তেই সর্বপ্রথম বাংলা বছরের প্রথম মাস হিসেবে বৈশাখ শব্দটি উল্লেখ করা হয়।
অবশ্য ত্রয়োদশ শতাব্দীর আগে বাংলার রাজবংশগুলোর মধ্যে দেখা যায় বিক্রমাদিত্যের ব্যবহার। পালদের শাসনামলে বৌদ্ধ গ্রন্থ ও শিলালিপিতে পাওয়া যায় আশ্বিন ও বিক্রম নামের মাসগুলো।
আরো পড়ুন: বাংলা নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রার ইতিহাস: রূপরেখায় অপশক্তির অবসান কামনায় শান্তি মিছিল
বর্তমান বাংলা ক্যালেন্ডারের প্রবর্তন
বাংলার সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের রাজত্বকাল ছিল ১৪৯৪ থেকে ১৫১৯ সাল পর্যন্ত। বাংলার মুসলিম শাসকদের মধ্যে বাংলা বর্ষপঞ্জি তৈরির ব্যাপারে মুঘল সম্রাট আকবরের পাশাপাশি তার নামটিও শোনা যায়।
হিজরি অনুসারে বাঙালিদের থেকে ভূমি কর আদায়ের রীতিটি ছিল মুঘল শাসনামলেও। চান্দ্র বর্ষপঞ্জি ও সৌর কৃষি চক্রের মাঝে বেশ অসঙ্গতি ছিল। মুঘল সম্রাট আকবর ফসল কাটার কর বছরের সমস্যা সমাধানের জোর তাগিদ অনুভব করেন। তিনি চান্দ্র বর্ষপঞ্জি ও সৌর বর্ষপঞ্জির সমন্বয়ে নতুন বর্ষপঞ্জিকা তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। এই কাজের দায়িত্ব অর্পণ করা হয় রাজ্যের প্রধান জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফতুল্লাহ শিরাজির উপর।
নতুন নির্মিত পঞ্জিকার নাম ছিল তারিখ-ই-ইলাহি। এখানে জুলাই থেকে পরবর্তী বছরের জুন মাস পর্যন্ত ১২ বছরের সময়ের নাম দেওয়া হয় ফসলি সন। আর এরই ভিত্তিতে তারিখ-ই-ইলাহিকে ফসলি বর্ষপঞ্জিও বলা হতো।
পরে মুঘল গভর্নর নবাব মুর্শিদ কুলি খান সম্রাট আকবরের এই নীতি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন পুন্যাহের হিসাব পরিচালনার জন্য। পুন্যাহ হচ্ছে প্রজাদের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভূমি কর আদায়ের দিন।
এখানে চান্দ্র ও সৌর বর্ষপঞ্জির সংমিশ্রণটি আলাউদ্দিন হোসেন শাহ ও আকবরের মধ্যে আসলে কে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন- তা নিয়ে বেশ দ্বিমত আছে। অবশ্য আকবরের মুঘল দরবার ছাড়া ভারতের অন্যত্র এই পদ্ধতি তেমন একটা ব্যবহৃত হয়নি। এমনকি তার মৃত্যুর পর বর্ষপঞ্জিটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়।
মাসের দিনগুলোর প্রতিটির আলাদা আলাদা নাম ছিল তারিখ-ই-ইলাহি’র একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। মাসগুলোর নামও ছিল বর্তমান নাম থেকে ভিন্ন।
আকবরের নাতি শাহজাহান গ্রেগরীয় ক্যালেন্ডারের মতো রবিবার থেকে সপ্তাহ শুরুর প্রক্রিয়াটি প্রচলন করেন। এ সময় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে সংস্কার আসে তারিখ-ই-ইলাহি’তে। সৌরচান্দ্রিক বা শক বর্ষপঞ্জির মাসের নামের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এখানকার মাসগুলোর নামে পরিবর্তন আনা হয়। শক পঞ্জি মূলত সৌর ও চান্দ্র বর্ষপঞ্জির সমন্বিত রূপ, যার প্রতিটি বছরকে বলা হয় শক সাল বা শকাব্দ।
প্রতিটি দিনের ভিন্ন নামের বদলে গ্রেগরীয় ক্যালেন্ডারের মতো শুধুমাত্র সাত দিনের সপ্তাহ ঠিক করা হয়। আর এটিই হচ্ছে বর্তমানে বাংলাদেশে ব্যবহৃত বাংলা ক্যালেন্ডারের মূল ভিত্তি।
আরো পড়ুন: বিশ্বসেরা ১০ পিরামিড: চিরন্তন কিংবদন্তির খোঁজে
সময়ের সঙ্গে বাংলা বর্ষপঞ্জির বিবর্তন
ভারতবর্ষে বর্ষপঞ্জির বিকাশ
১৯৫৭ সালের ২২ মার্চ ভারতে নতুনভাবে সংস্কার করা জাতীয় বর্ষপঞ্জির প্রচলন হয়। বিভিন্ন রাজ্যসহ কেন্দ্রের সর্বত্রে গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জীর সঙ্গে এটি ব্যবহার করা হতে থাকে। এতে সূর্য সিদ্ধান্ত-এর নিরয়ণ বর্ষ গণনা রীতির বদলে আনা হয় সায়ন সৌর পদ্ধতি এবং প্রতিটি মাসের দৈর্ঘ্য স্থির রাখা হয়। সেই সঙ্গে জ্যোতি পদার্থবিদ্যার ভিত্তিতে রাখা হয় কিছু প্রস্তাবনা। সেগুলো ছিল-
বৈশাখ থেকে ভাদ্র প্রথম পাঁচ মাসের জন্য ৩১ দিন করার। পরবর্তী সাত মাস, তথা- আশ্বিন থেকে চৈত্র মাসের জন্য ৩০ দিন করার এবং লিপ-ইয়ার বা অধিবর্ষের বেলায় ৩১ দিনে চৈত্র মাস গণনার।
প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়িত না হওয়ায় এগুলোর ভিত্তিতেই নতুন আরেকটি প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। সেখানে ১৪ এপ্রিলকে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন নির্ধারণ করার কথা উল্লেখ ছিল।
বাংলাদেশে বাংলা ক্যালেন্ডার সংস্কার
১৯৬৩ সালে ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহর নেতৃত্বে গঠিত শহীদুল্লাহ কমিটির পক্ষ থেকে রাত ১২টার পর থেকে তারিখ পরিবর্তনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। এর আগে নতুন তারিখ হিসাব করা হতো সূর্যোদয়ের সঙ্গে। প্রস্তাবটি মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশ কর্তৃক গৃহীত হয় ১৯৮৭ সালে। সে অনুসারে ১৯৮৮-৮৯ অর্থবছরে নির্দেশনাও দেওয়া হয় বাংলা দিনপঞ্জিকা বানানোর। কিন্তু কিছু জটিলতার কারণে তা বাধাগ্রস্ত হয়।
বাংলা ক্যালেন্ডারকে আরও বিজ্ঞানভিত্তিক করার উদ্দেশ্যে ১৯৯৫ সালের ২৬ জুলাই একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। ভাষা, গণিতজ্ঞ, পদার্থবিজ্ঞানী ও বিভিন্ন সংস্কৃতিজনদের এই কমিটির প্রধান ছিলেন বাংলা একাডেমির তৎকালীন মহাপরিচালক হারুন-উর-রশিদ। এই কমিটির পক্ষ থেকে আরও ২০টি প্রস্তাবনা দেওয়া হয়।
এগুলোর মধ্যে একটি ছিল চৈত্রের বদলে ফাল্গুন মাসকে লিপ-ইয়ারের মাস হিসেবে ঠিক করা। সেখানে উল্লেখ ছিল যে, গ্রেগরীয় ক্যালেন্ডারে লিপ-ইয়ারের ফেব্রুয়ারি মাসকে অনুসরণ করে বাংলা বর্ষপঞ্জিকার ফাল্গুন মাসে ৩০ দিনের জায়গায় হবে ৩১ দিন।
আরো পড়ুন: একুশে বইমেলার শিকড়ের সন্ধান
এতে দেখা যায়-
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ সালে ৮ ফাল্গুন হলেও, ২০১৫ সালে তা হয়ে যাচ্ছে ৯ ফাল্গুন। এ ছাড়া আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিবস নিয়ে অসমাঞ্জস্যতা ধরা পড়ে।
ফলে জাতীয় দিবসগুলোকে ঠিক করার লক্ষ্যে ২০১৫ সালে তৃতীয়বারের মতো গঠিত হয় আরও একটি কমিটি। এখানে সভাপতি হিসেবে ছিলেন বাংলা একাডেমির তৎকালীন মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান।
কমিটির অন্যরা ছিলেন- একাডেমির পরিচালক অপরেশ কুমার ব্যানার্জি, পদার্থবিজ্ঞানী জামিল চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক অজয় রায়, অধ্যাপক আলী আসগর।
তাদের প্রস্তাব ছিল-
- প্রথম ছয় মাস; তথা- বৈশাখ থেকে আশ্বিন মাস হবে ৩১ দিনে।
- কার্তিক থেকে মাঘ এবং চৈত্র এই পাঁচ মাস হবে ৩০ দিনে।
- শুধু ফাল্গুন মাস গণনা হবে ২৯ দিনে।
- অধিবর্ষের বছরে ফাল্গুন মাসে একদিন যোগ করে গণনা করা হবে ৩০ দিনে।
এই প্রস্তাবটি চূড়ান্তভাবে গৃহীত হয়ে সে অনুসারে ২০১৯ সালে বাংলাদেশে তৈরি হয় সরকারি বর্ষপঞ্জি। আর এটিই বর্তমানে চালু আছে বাংলা বর্ষপঞ্জি হিসেবে।
আরো পড়ুন: বাংলাদেশের শীর্ষ ১৫টি ঐতিহ্যবাহী স্থান
পরিশিষ্ট
দেয়ালে ঝুলানো কাগুজে দিনপঞ্জির প্রতিটি সংখ্যা ও শব্দ মনে করিয়ে দেয় বাংলা বর্ষপঞ্জির ইতিহাস ও স্মৃতিময় দিনগুলোর কথা। দিনলিপি গণনার এই ইতিবৃত্ত জানিয়ে দিল যে, ওগুলো নিজেরাই এক সমৃদ্ধ ইতিহাসের ধারক।ভারতের ত্রিপুরা, আসাম ও পশ্চিমবঙ্গে এখনও অনুসরণ করা হয় পুরোনো বাংলা বর্ষপঞ্জি পদ্ধতি। যুগে যুগে ভিন্ন নাম পেলেও বাঙালি সম্প্রদায়ে সরব ছিল বাংলা বছর, মাস ও দিনের ধারণা। এর প্রভাব এখনও অটুট আছে ধর্মীয়, সামাজিক ও জাতীয় আনুষ্ঠানিকতায়। দিন ও সপ্তাহ সর্বস্ব বৈশাখ থেকে চৈত্র মাস এখন দ্বিধাহীন সময় হিসেবের নির্ভরযোগ্য মাধ্যম।
আরো পড়ুন: পহেলা বৈশাখ: বাংলা নববর্ষের উৎপত্তি এবং ইতিহাস
জাতীয় কবি নজরুলের ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য সর্বজন শ্রদ্ধেয় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী রবিবার (২৭ আগস্ট) সারাদেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে।
এছাড়াও ‘বিদ্রোহী কবি’ হিসেবে খ্যাত কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলা সাহিত্যের একজন পথপ্রদর্শক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
তার ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে মহান কবির জীবন ও কর্ম স্মরণে।
সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামানের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কলা ভবন প্রাঙ্গণে অপরাজেয় বাংলায় জড়ো হন।
সেখান থেকে তারা শোভাযাত্রা সহকারে কবির কবর জিয়ারত, পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে আসরের নামাজের পর পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগও শোভাযাত্রা ও দোয়ার মাধ্যমে কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও দলের পক্ষ থেকে কবির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
কাদের বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে বাধা হওয়ায় দেশ থেকে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে উৎখাত করতে জাতীয় কবির আদর্শে আবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: রবিবার জাতীয় কবি কাজী নজরুলের ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী
বিএনপির প্রবীণ নেতা রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দলও বিদ্রোহী কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট সন্ধ্যা ৭টায় ধানমন্ডির নিজস্ব মিলনায়তনে বিশেষ শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। অনুষ্ঠানটি একই সঙ্গে তাদের ফেসবুক গ্রুপ ও ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার করা হবে।
বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ (বিটিভি) বেশ কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল, বাংলাদেশ বেতার সহ রেডিও স্টেশন এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্ম জাতীয় কবির জীবন ও কর্মের স্মরণে বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে।
কাজী নজরুল ইসলাম ১৮৯৯ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। এ ছাড়া নজরুল তৎকালীন ভারতীয় উপমহাদেশে তার বিপ্লবী এবং দর্শনীয় সাহিত্যকর্মের জন্য ব্যাপকভাবে সম্মানিত।
কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, নজরুলের ২১ বছরের সাহিত্যিক জীবনে তিনি ২ হাজার ৬০০টি গান, ৬০০টি কবিতা, ৩টি বই এবং ৪৩টি প্রবন্ধ তৈরি করেছিলেন।
শৈশবে বাবা মারা গেলে পরিবারের দায়িত্ব নিতে হয় নজরুলকে। এ কারণে মসজিদে তত্ত্বাবধায়ক ও মুয়াজ্জিন হিসেবে কাজ করতে হয়েছিল তাকে। পশ্চিমবঙ্গের চুরুলিয়ায় একটি পেশাদার ‘লেটো’ গানের দলে কাজ করার জন্য ৯ বছর বয়সে স্কুল ছেড়েছিলেন তিনি।
দলটির সঙ্গে কাজ করার সময় তিনি বাংলা ও সংস্কৃত সাহিত্যের সঙ্গে পরিচিত হন। এক বছর পরে তিনি আবার স্কুলে যান এবং মাথারুন ইংলিশ স্কুলে ভর্তি হন। কিন্তু তার আর্থিক দুরবস্থার কারণে তিনি ষষ্ঠ শ্রেণিতে আরও একবার বাদ পড়েন।
কিছু সময় পর পুলিশ অফিসার কাজী রফিজুল্লাহ তাকে নিয়ে ময়মনসিংহের ত্রিশালে তার বাড়ির কাছে দরিরামপুর স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি করান।
১৯৭১ সালে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে তার সামরিক চাকরি শুরু করার কয়েক বছরের মধ্যে নজরুল তার সাহিত্যিক জীবন শুরু করেন।
তিনি ১৯২১ সালে তার কালজয়ী কবিতা ‘বিদ্রোহী’ (দ্য রিবেল) লেখেন এবং ১৯২২ সালে ‘ধূমকেতু’ (দ্য ধূমকেতু) একটি মাসিক পত্রিকা প্রতিষ্ঠা করেন।
আরও পড়ুন: স্মরণে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম
ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনে ঘন ঘন জাতীয়তাবাদী জড়িত থাকার কারণে নজরুল ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের খপ্পরে পড়েন। তিনি কারাবন্দি থাকা অবস্থায় ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’ (একজন রাজনৈতিক বন্দির জবানবন্দি) লেখেন।
তার কাজগুলো পরে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে অনুপ্রাণিত করেছিল এবং তার কবিতাগুলো অনেক বাঙালি ও জাতীয়তাবাদীকে পাকিস্তানের অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে অনুপ্রাণিত করেছিল।
স্বাধীনতা, মানবতা, প্রেম ও বিপ্লব নজরুলের অসাধারণ সাহিত্য বার বার এসেছে। তিনি মৌলবাদ ও সব ধরনের বর্ণ, লিঙ্গ ও ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ছিলেন।
নজরুল ছোটগল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধও প্রকাশ করেছেন। যদিও তার গান ও কবিতা সমালোচকদের কাছ থেকে সর্বাধিক প্রশংসা পেয়েছে। তিনি তার লেখায় আরবি ও ফারসি শব্দের উদার ব্যবহার এবং বাংলা গজল সুর জনপ্রিয় করার জন্য বিখ্যাত।
তিনি ‘নজরুল গীতি’ নামে পরিচিত তার নিজস্ব সংগীত ধারা আবিষ্কার করেছিলেন। যার মধ্যে অনেকগুলো ভিনাইল ও এইচএমভি রেকর্ডে প্রকাশিত হয়েছিল।
নজরুল যখন ৪৩ বছর বয়সে একটি অজ্ঞাত রোগে ভুগছিলেন এবং ১৯৪২ সালে তিনি তার কণ্ঠস্বর এবং স্মৃতিশক্তি হারাতে শুরু করেন।
ভিয়েনার একটি মেডিকেল টিম বলে তার রোগটি ছিল ‘পিকস ডিজিজ’। একটি বিরল ও মারাত্মক নিউরোডিজেনারেটিভ রোগ।
বাংলাদেশ সরকার এবং তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আমন্ত্রণে নজরুলের পরিবার বাংলাদেশে চলে আসেন এবং ১৯৭২ সালে ঢাকায় স্থায়ী হন। একই বছর বাংলাদেশ সরকার তাকে ‘জাতীয় কবি’ খেতাবে ভূষিত করেন।
বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে তার অবদানের জন্য তিনি ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সম্মানসূচক ডিলিট এবং ১৯৭৬ সালে একুশে পদক লাভ করেন।
১৯৭৬ সালের ২৭ আগস্ট বিদ্রোহী কবি ঢাকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের একটি মসজিদের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।
আরও পড়ুন: নজরুলকে ‘জাতীয় কবি’ ঘোষণার গেজেট প্রকাশের দাবিতে রিট
অ্যানির তৃতীয় একক প্রদর্শনী ‘কনটেম্পরারি ন্যারেটিভস’ এএফডিতে শুরু
শিল্পী আতিয়া ইসলাম অ্যানির তৃতীয় একক শিল্প প্রদর্শনী ‘কনটেম্পরারি ন্যারেটিভস’ শুক্রবার (১৮ আগস্ট) ধানমন্ডির অ্যালায়েন্স ফ্রাঙ্কেস ডি ঢাকায় (এএফডি) উদ্বোধন করা হয়েছে।
এএফডির লা গ্যালারিতে প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের ভাইস চ্যান্সেলর ড. রুবানা হক এবং বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী।
অ্যানির শৈল্পিক প্রচেষ্টা সামাজিক সমালোচনার সারমর্মকে আবদ্ধ করেছে। তার চিত্রকর্ম সমসাময়িক সমাজে নারীর অবস্থাকে নিখুঁতভাবে চিত্রিত করেছে।
আরও পড়ুন: হাসিনাকে নিয়ে আয়োজিত শিল্প প্রদর্শনীর প্রশংসা ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূতের
অ্যানির স্বতন্ত্র শৈলী সামাজিক চেতনার সূক্ষ্মতাকে ধারণ করে। তার শৈল্পিক অভিব্যক্তির মাধ্যমে, তিনি শোষণ এবং মানুষের আবেগ লঙ্ঘনের প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলোকে তুলে করেন, শ্রোতাদের প্রতিফলিত করতে প্ররোচিত করেন।
শিল্পী সামাজিক দুর্নীতি, দ্বন্দ্ব এবং বেঁচে থাকার লড়াইয়ের চিহ্নগুলো চিত্রিত করেছেন, তার শিল্পকর্মে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চিত্রিত করেছেন এবং এই বিষয়গুলোর প্রতি তার অঙ্গীকারের উপর জোর দিয়েছেন। এবং এটি করার জন্য, তার অভিব্যক্তিগুলো এমন একটি ভাষায় কথা বলে যা রূপক, উপমা, চিহ্ন এবং প্রতীকগুলোর সঙ্গে একীভূত।
এই প্রদর্শনীটিতে ২২টি নির্বাচিত আক্রাইলিক পেইন্টিংয়ের সংগ্রহ প্রদর্শন করে, যা ২০১২ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে করা হয়েছিল৷
শিল্পী হিসেবে শিল্পী আতিয়া ইসলাম অ্যানির যাত্রা শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটে। এই ইনস্টিটিউট থেকে তিনি ১৯৮৩ সালে স্নাতক এবং ১৯৮৬ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
২০০২ সালে গ্যালারী-২১ -এ 'নারী ও সমাজ' শিরোনামে তার প্রথম একক শিল্প প্রদর্শনী হয়েছিল। ২০০৯ সালে অ্যানির বেঙ্গল শিল্পালয়ে 'কালবেলা' তার দ্বিতীয় একক প্রদর্শনী হয়েছিল।
এছাড়াও তিনি ২০১৮ সালে ১৮তম এশিয়ান আর্ট বিয়েনাল বাংলাদেশ-এ ৬৮টি দেশের অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সম্মানসূচক গ্র্যান্ড প্রাইজ অর্জন করেছিলেন।
এএফডি-এ অ্যানির সর্বশেষ প্রদর্শনীটি ২৯ আগস্ট পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। প্রদর্শনীটি সোমবার থেকে শনিবার বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকে (রবিবার বন্ধ থাকে)।
আরও পড়ুন: ২১ আগস্টের ভয়াবহতার উপর শিল্পকলায় স্থাপনা শিল্প প্রদর্শনী
গ্যালারি কসমসে শুরু হলো আর্টক্যাম্প ‘স্প্লেন্ডার্স অব বাংলাদেশ’
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেষ মুজিবুর রহমানের স্মরণে গ্যালারি কসমস দুই দিনব্যাপী বিশেষ ওয়াটাকালার আর্ট ক্যাম্প আয়োজন করেছে। শুক্রবার (১১ আগস্ট) রাজধানীর কসমস সেন্টারে ‘স্প্লেন্ডার্স অব বাংলাদেশ’ শিরোনামে এই আর্ট ক্যাম্পটি শুরু হয়েছে।
বৃষ্টিস্নাত দিনে সকাল ১০টায় শুরু হয় আর্ট ক্যাম্পটির আনুষ্ঠানিকতা।
এতে যোগ দেন-আব্দুল্লাহ আল বশির, আজমল হোসেন, কামরুজ্জোহা, সাদেক আহমেদ, শাহনূর মামুন ও সৌভি আক্তার। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কসমস গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এনায়েতউল্লাহ খান, ডিএমডি মাসুদ জামিল খান, গ্যালারি কসমসের আর্টিস্টিক ডিরেক্টর ও চিত্রশিল্পী সৌরভ চৌধুরী।
আর্টক্যাম্পটির তত্ত্বাবধানে থাকা সৌরভ চৌধুরী এই আয়োজন নিয়ে ইউএনবিকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে আমাদের এই আর্টক্যাম্পের আয়োজন। দুই দিনব্যাপী এই আর্টক্যাম্পে প্রথমদিন অংশগ্রহণকারীরা তাদের ক্যানভাসের বিষয় বঙ্গবন্ধু। দ্বিতীয় দিন আমাদের দেশের ঐতিহ্যবাহী জায়গাগুলো আঁকবেন।’
আরও পড়ুন: উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হোম অফিস যেভাবে সাজাবেন
জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেল নাটোরের ‘কাঁচাগোল্লা’
দেশের ১৭ তম জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেল নাটোরের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি 'কাঁচাগোল্লা'।
নাটোরের জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঞাঁ জানান, শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প নকশা ও ট্রেড মার্ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রায় আড়াইশ' বছরের ঐতিহ্যবাহী কাঁচাগোল্লার বিকৃতি ঠেকাতে এবং এর ভৌগলিক উদ্ভাবন স্থানের স্বীকৃতি চেয়ে চলতি বছরের ৩০ মার্চ মাসে আবেদন করেছিলো নাটোরের জেলা প্রশাসন।
বিষয়টি যাচাই-বাছাই শেষে ১৭তম ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় ছানার তৈরি নাটোরের কাঁচাগোল্লাকে।
আরও পড়ুন: জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে নাটোরের কাঁচাগোল্লা
জিআই স্বীকৃতি পেল চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া ও আশ্বিনা আম
জিআই স্বীকৃতি পেল রাজশাহীর ফজলি আম
‘রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি’ নিয়ে দৃক গ্যালারিতে চলছে প্রদর্শনী
রাজধানীর দৃক গ্যালারিতে চলছে ‘রানা প্লাজার দশ বছর পর’ শীর্ষক ৯ দিনব্যাপী আলোকচিত্র প্রদর্শনী।
রানা প্লাজা ভবন ধসে যারা বেঁচে গেছেন এবং তাদের পরিবারের ছবি নিয়ে ২১ জুলাই এই প্রদর্শনী শুরু হয় চলবে ২৯ জুলাই পর্যন্ত।
ফটোসাংবাদিক এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা ইসমাইল ফেরদৌস মর্মান্তিক ঘটনার স্মরণে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেন।
একবিংশ শতাব্দীর আন্তর্জাতিক মহিলা গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন হেরিটেজ ফান্ড এবং বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটি সহযোগিতায় প্রদর্শনীটি আয়োজন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলীখেলা শুরু
ছবি, ভিডিও, আখ্যান এবং পোস্টারের মাধ্যমে প্রদর্শনীটি রানা প্লাজা দুর্ঘটনার স্মৃতি মানুষের স্মরণে রেখে বাংলাদেশি গার্মেন্টস শ্রমিকদের শ্রম অধিকার রক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে চায়।
ইসমাইল তার ‘আফটার রানা প্লাজা’ শিরোনামের ছবিতে এবং ‘দ্য কস্ট অফ ফ্যাশন’ ডকুমেন্টারি ফিল্মটিতে বেঁচে থাকা এবং নিহতদের পরিবারের অকথিত গল্পগুলো ধারণ করেছেন।
প্রদর্শনীটি প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে।
আরও পড়ুন: ঠাকুরগাঁওয়ে গরু ও মহিষের ১০ গাড়িতে করে বরযাত্রা!
জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে: বাংলাদেশে ২৯ জুন ঈদুল আজহা
বাংলাদেশের আকাশে পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ায় যথাযোগ্য ভাবগাম্ভীর্য ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে আগামী ২৯ জুন দেশে মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে।
সোমবার ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা সংক্রান্ত তথ্য পর্যালোচনা করে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সন্ধ্যায় বায়তুল মোকাররমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
চলতি বছরের ২৮ জুন সৌদি আরবে ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে।
আরও পড়ুন: ঈদের ছুটি একদিন বাড়িয়ে মোট ৪ দিন
ঈদে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু ১৪ জুন
ঈদে স্বস্তির ট্রেন যাত্রায় মন্ত্রীর সন্তুষ্টি