বিএনপি
বিএনপি নেতা ইশরাক কারাগারে
রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
রবিবার ইশরাক হোসেন আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে তা না মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন। ইশরাকের আইনজীবী তাহেরুল ইসলাম তৌহিদ এ তথ্য জানান।
গত ২৯ অক্টোবর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা দাবি করা মিঞা জাহিদুল ইসলাম আরেফি, ইশরাক ও অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীর বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টার অভিযোগে পল্টন থানায় মামলা করেন মহিউদ্দিন শিকদার।
তৌহিদ বলেন, তার মক্কেল ইশরাক এই মামলায় ইতোমধ্যে একবার ছয় সপ্তাহের জন্য জামিন পেয়েছেন। সেই মেয়াদ প্রায় শেষ হওয়ার পথে তাই তিনি আবারও আদালতে জামিন আবেদন করেন।
তৌহিদ আরও জানান, পল্টন থানাসহ ১২টি মামলায় স্থায়ী জামিন আবেদন করেন বিএনপির এ নেতা। আদালত এই মামলা ছাড়া সব মামলায় জামিন মঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত বছরের ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আরেফি সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে সুপারিশ করেন এবং প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে বলে দাবি করেন।
বাদী আরও অভিযোগ করেন, ইশরাক ও সোহরাওয়ার্দী আরেফির বক্তব্যকে সমর্থন করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে দেশের শান্তি বিঘ্ন করেন।
লুটপাট অর্থনীতিকে দুর্বল ও ভঙ্গুর করে: রিজভী
ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ব্যাপক লুটপাট, দুর্নীতি ও অবৈধভাবে বিদেশে অর্থ পাচারের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন 'দুর্বল ও ভঙ্গুর' হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রায় ৫০ বিলিয়ন টাকা আত্মসাৎ হয়েছে, যে কারণে রিজার্ভ কমে গেছে। বর্তমানে সরকারের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৩ বিলিয়ন ডলার। আসলে রিজার্ভ আছে মাত্র ৭ থেকে ৮ বিলিয়ন ডলার।’
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন রিজভী।
তিনি আরও বলেন, এই রিজার্ভও কমে যাবে কারণ বিদ্যুৎ খাতে বকেয়া বিল মেটাতে সরকারকে ৪ বিলিয়ন ডলার খরচ করতে হবে।
রিজভী বলেন, ‘শেখ হাসিনার উন্নয়ন দেখে মনে হচ্ছে একজন অপুষ্ট ও শ্যামবর্ণ নারীর ঠোঁটে লিপস্টিক লাগানো। একজন দুঃস্থ ও পীড়িত নারীকে প্রসাধনী দিয়ে সাজালে যেমন দেখাবে বাংলাদেশের অর্থনীতির চেহারাও তেমন হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি অসুস্থ।’
ভেঙে পড়া অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, দেশের পরিস্থিতি এমন যেন একটি শূন্য অতল গহ্বরে বসবাস করছি, যেখানে পায়ের নিচে মাটি নেই।
তিনি আরও বলেন, ‘শুধু ব্যাংক থেকেই ১২ হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। এটা আমার বক্তব্য নয়; এটা সিপিডির বক্তব্য। আমাদের জিডিপির প্রায় ১২ শতাংশ এভাবে হারিয়ে গেছে। এটা কি কল্পনা করা যায়?'
শুধু ব্যাংক হিসাব থেকেই ৯২ হাজার কোটি টাকা উধাও হয়ে গেছে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘লুটেরা কারা? কারা এই অলিগার্ক? এরা সবাই ক্ষমতার ঘনিষ্ঠ মানুষ। তারা হয় আওয়ামী লীগের লোক নয়তো আওয়ামী লীগের অর্থের জোগানদাতা। তারা প্রচুর ধন-সম্পদ ও অর্থের মালিক।’
এ সময় রিজভী জানান, ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা।
'সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংকে ঢুকতে হবে না'- সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'বাংলাদেশ ব্যাংক কি নিষিদ্ধ স্থান নাকি সেনানিবাস?
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক জনগণের আমানত রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত একটি প্রতিষ্ঠান। এটি সর্বদা জবাবদিহির ক্ষেত্রের মধ্যে থাকা উচিত ... সাংবাদিকরা সেখানে যেতে পারেন।’
রিজভী বলেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতারা কীভাবে জনগণের অর্থ লুটপাট করছে সে সম্পর্কে দেশের জনগণ বা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যাতে জানতে না পারে সেজন্য সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
মঙ্গলবার দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা জনগণের কাছে যাচ্ছেন, ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে লিফলেট বিতরণ করছেন।
রিজভী বলেন, ‘জনগণ মনে করে, এই ডামি সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেওয়া মানে গণতন্ত্র, সত্য ও ন্যায়বিচারের বিরুদ্ধে যাওয়া। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, জনগণ প্রথম দফায় যেভাবে নির্বাচন বর্জন করে আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়েছিল, সেভাবেই তারা সাড়া দেবে।’
মঙ্গলবার ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে দেশের জনগণ আবারও আওয়ামী লীগ সরকারকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ডোনাল্ড লুকে প্রশ্ন করার সময় সাংবাদিকরা মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন: বিএনপি
দেশের দুটি গণমাধ্যমের সাংবাদিক বাংলাদেশে সফরকারী দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে দলের বরাতে প্রশ্ন করার সময় সম্পূর্ণরূপে অসত্য, বিভ্রান্তিকর ও ভিত্তিহীন তথ্য দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।
শুক্রবার (১৭ মে) দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা এক বিবৃতিতে এই প্রতিবাদ জানানো হয়।
আরও পড়ুন: উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির আরও ৫১ নেতা বহিষ্কার
এতে বলা হয়, বিএনপিকে হেয় করতেই প্রথম আলো ও ইনডিপেন্ডেন্ট টিভি চ্যানেলের সাংবাদিকরা অবান্তর প্রশ্ন করেছেন। প্রশ্নে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের একটি বিরোধী দল বিএনপি অভিযোগ করেছে যে, ভারতের মধ্যস্থতায় প্রভাবিত হয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান নরম করেছে।’
এতে দাবি করা হয়, বিএনপির কোনো পর্যায়ের নেতাই কখনো কোথাও এ ধরনের মন্তব্য করেননি বা বক্তব্য দেননি। এ ধরনের মনগড়া বক্তব্য প্রকাশ করা বড় ধরনের ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি করে।
প্রথম আলো ও ইনডিপেন্ডেন্ট টিভির মতো বহুল প্রচারিত সংবাদ মাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকদের এ ধরনের অবাস্তব প্রশ্ন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সুনামকে ক্ষুণ্ন করে বলেও উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে।
বিএনপি বলেছে, বর্তমানে দেশের জনগণ ভয়াবহ দুঃশাসনের যাঁতাকলে পিষ্ট। বিএনপির নেতাকর্মীরা জীবনবাজী রেখে, জেল—জুলুম, নিপীড়ন ও নির্যাতন সহ্য করে দেশের মানুষের অধিকার আদায়ে আন্দোলন সংগ্রাম করছে। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, জনগণের অধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বিএনপি বদ্ধপরিকর।
বিএনপির বরাত দিয়ে যে বিভ্রান্তিমূলক প্রশ্ন করা হয়েছে তা সমীচীন নয়। এটি জনমণে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে বলে এর প্রতিবাদ করেছে দলটি।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে ভারত: ফখরুল
বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে ভারত: ফখরুল
প্রতিবেশী ভারত অভিন্ন আন্তঃসীমান্ত নদীর পানি বণ্টন সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার (১৬ মে) ফারাক্কা লংমার্চ দিবসের আলোচনা সভায় তিনি এই অভিযোগ করেন।
ভারতের সঙ্গে পানি সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থতার জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আছে শুধু বিদেশি প্রভুর স্বার্থ হাসিলের জন্য।
ফখরুল বলেন, 'আমরা দেখতে পাচ্ছি, আমাদের প্রতিবেশী (ভারত) জন্মলগ্ন থেকেই বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সব সময় তাদের সব কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু ফারাক্কা বাঁধ নয়, গঙ্গার পানি নয়, ১৫৪টি অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনে বরাবরই গাফিলতি করছে। তারা সমস্যার সমাধান করছে না।’
তিনি আরও বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দীর্ঘদিন ধরে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সইয়ের ব্যাপারে জনগণকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ব্যর্থ হয়েছে এবং কালক্ষেপণ করছে।
তিনি বলেন, ‘এই ব্যর্থতার মূল কারণ এটি সম্পূর্ণরূপে একটি আজ্ঞাবহ সরকার। অত্যন্ত দুর্বল হওয়ায় ভারতের সঙ্গে দর-কষাকষিতে জনগণের স্বার্থের পক্ষে অবস্থান নিতে তারা ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ হয়েছে।’
আরও পড়ুন: সুষ্ঠু পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া আমদানি পণ্য এড়িয়ে চলার আহ্বান বিএনপির
৪৮ বছর আগে জনপ্রিয় নেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ফারাক্কা বাঁধ অভিমুখে লংমার্চের স্মরণে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ভাসানী অনুসারী পরিষদ এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
গঙ্গার পানি নিজ ভূখণ্ডের অভ্যন্তরে প্রবাহিত করতে ভারত সরকারের নির্মিত ফারাক্কা বাঁধ ভেঙে ফেলার দাবিতে ১৯৭৬ সালের ১৬ মে রাজশাহী থেকে ভারতের ফারাক্কা বাঁধ অভিমুখে এক বিশাল লংমার্চের নেতৃত্ব দেন মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী।
ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকারের একমাত্র কাজ একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করা। আর দেশের জনগণকে দমন করে নিজেদের এবং তাদের প্রভুদের স্বার্থ রক্ষা করা।
তিনি আরও বলেন, ‘তিস্তা ও ফারাক্কা সমস্যার সমাধান তারা (আওয়ামী লীগ সরকার) কীভাবে করবে? অন্যান্য অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন সমস্যা কীভাবে সমাধান করবে? কারণ তারা অন্যদের স্বার্থ হাসিলের বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে ক্ষমতা দখল করেছে।’
আরও পড়ুন: উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির আরও ৫ নেতাকে বহিষ্কার
এমন পরিস্থিতিতে বিএনপির এই নেতা বলেন, বাংলাদেশের জনগণকে তাদের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুদ্ধারে নিজেদের শক্ত হয়ে দাঁড়াতে হবে।
তিনি বলেন, বিএনপিসহ অনেক বিরোধী দল মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। ‘এর জন্য আমাদের অনেকে জীবন উৎসর্গ করেছেন এবং আমাদের অনেককে অত্যাচার ও নিপীড়ন সহ্য করতে হচ্ছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান দানবীয় সরকারকে বিদায় করতে বিভক্তি ও তাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির ঊর্ধ্বে উঠে সব বিরোধী দলের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার কোনো বিকল্প এখন নেই। ‘আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে নিজেদের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতে হবে। কেউ আমাদের জন্য এটা করবে না, এটা আমাদের নিজেদেরই করতে হবে।’
তিনি বলেন, সরকার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে কারাদণ্ড দিয়েছে এবং ক্ষমতায় থাকার জন্য বিরোধী দলের ৬০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। তিনি বলেন, 'দমন-পীড়ন ও গ্রেপ্তার এখনো চলছে। আমাদের নেতাকর্মীদের মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ বিভিন্ন কৌশলে নির্বাচনকে প্রভাবিত করে ক্ষমতা ধরে রেখেছে, কারণ তারা জানে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে তাদের ব্যাপক ভরাডুবি হবে।
আরও পড়ুন: উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির আরও ৫১ নেতা বহিষ্কার
উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির আরও ৫১ নেতা বহিষ্কার
দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে চলমান উপজেলা নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে অংশ নেওয়ায় তৃণমূলের আরও ৫১ নেতাকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি।
শীর্ষ নেতাদের নির্দেশনার বিরুদ্ধে গিয়ে উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় এ পর্যন্ত ১৯৯ জন নেতাকে বহিষ্কার করেছে দলটি।
বুধবার(১৫ মে) বিএনপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এসব শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির আরও ৩ নেতাকে বহিষ্কার
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে তৃতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ৫১ জন নেতাকে দলের প্রাথমিক সদস্যপদসহ দলীয় সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বহিষ্কৃত নেতাদের মধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ১৭ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৫ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এর আগে গত ৮ মে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে অংশ নেওয়ায় তৃণমূলের ৭৯ নেতাকে বহিষ্কার করে দলটি।
এছাড়া আগামী ২১ মে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় ৬৯ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
দেশজুড়ে চার ধাপে ৪৯২টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তৃতীয় ধাপে ২৯ মে এবং চতুর্থ ধাপে ৫ জুন ভোট অনুষ্ঠিত হবে।
আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন অসম্ভব মনে করে বিএনপি। ফলে উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে দলটির হাইকমান্ড।
আরও পড়ুন: উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির আরও ৫ নেতাকে বহিষ্কার
উপজেলা নির্বাচন: নওগাঁয় বিএনপির আরও ২ নেতাকে শোকজ, এক নেত্রীকে বহিষ্কার
উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির আরও ৫ নেতাকে বহিষ্কার
দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তৃণমূলের আরও পাঁচ নেতাকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি।
এ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য পাঁচ নেতাকর্মীর প্রাথমিক সদস্যপদ বাতিল করে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।
বহিষ্কৃতরা হলেন- মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সোহেল রানা মল্লিক, সাটুরিয়া মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক মুন্নী আক্তার, খুলনার খানজাহান আলী থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. ইকবাল হোসেন, নওগাঁর সাপাহার উপজেলা মহিলা দলের প্রচার সম্পাদক সুমি আক্তার ও বগুড়ার দুপচাঁচিয়া বিএনপির মহিলাবিষয়ক সম্পাদক সখিনা বেগম।
নির্দেশনা অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় এ পর্যন্ত ১৪৮ জন নেতাকে বহিষ্কার করেছে দলটি।
বহিষ্কৃত নেতাদের মধ্যে ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ জন এবং সংরক্ষিত ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এর আগে গত ৮ মে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে অংশ নেওয়ায় তৃণমূলের ৭৯ নেতাকে বহিষ্কার করে দলটি।
এছাড়া ২১ মে অনুষ্ঠিতব্য দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় গত ৪ মে ৬১ জন এবং ৬ মে ৬ জন তৃণমূলের নেতাকে বহিষ্কার করে দলটি।
দেশজুড়ে চার ধাপে ৪৯২টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তৃতীয় ধাপে ২৯ মে এবং চতুর্থ ধাপে ৫ জুন ভোট অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন অসম্ভব বলে মন্তব্য করে উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে বিএনপি।
বিএনপির নির্বাচন বর্জনের রাজনীতির নিন্দায় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা
সম্প্রতি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তারেক রহমানের নির্দেশে তৃণমূলের ১৪২ জন নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার করেছে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঘটনা প্রমাণ করে পলাতক এই নেতার রাজপথে নামা ও নির্বাচন বর্জনের আহ্বান সুস্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে দলটির নেতা-কর্মীরা।
বিএনপির একের পর এক নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত দলটিকে ভোটারদের থেকে আরও বিচ্ছিন্ন করে ফেলছে। এই পদক্ষেপকে আত্মঘাতী ও অগণতান্ত্রিক হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্ষমতায় যেতে জনসাধারণের ম্যান্ডেট অর্জনে দলের অনীহাকে আরও উন্মোচিত করেছে বিএনপি শীর্ষ নেতাদের নির্বাচন বানচালের উদ্যোগ এবং পরে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে তাদের অপপ্রচার।
নির্বাচনের কয়েক মাস আগে তারেক রহমান 'ব্যালট নয়, রাজপথে দেশের গতিপথ নির্ধারণ' করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। এরপর বিএনপি-জামায়াত জোট মাসব্যাপী অবরোধ ও অগ্নিসংযোগ অভিযান চালায়। এই কর্মকাণ্ডকে গণতন্ত্র ও অধিকার রক্ষার মুখে চপেটাঘাত বলে মনে করেন মানবাধিকার কর্মীরা।
আরও পড়ুন: বিএনপি যে কখন তাবিজ-দোয়ার ওপর ভর করে সেটিই প্রশ্ন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
কয়েকদিন আগে বিএনপির এক স্থানীয় নেতা প্রকাশ্যে তারেক জিয়ার ভোট বর্জনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের নীতি প্রত্যাখান করে দুধ দিয়ে গোসল করে দল ছাড়েন। এটি প্রতীকী হলেও দলীয় প্রধানের মতাদর্শ প্রত্যাখ্যানের এটি শক্তিশালী প্রতিবাদ।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ২০১৪ সালে বিএনপি জাতীয় নির্বাচন বর্জনের যে সংস্কৃতি শুরু করেছিল, ২০২৪ সালেও তারা একই কৌশল অনুকরণ করেছে। কিন্তু এক দশকের মধ্যেও নির্বাচন বর্জনের নীতিতে জনসমর্থন পায়নি বিএনপি। তবুও তাদের মধ্যে সংশোধনের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
অন্যদিকে স্থানীয় নেতাদের চাপে তারেক রহমানের অনুগতদের দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের জন্য বরাদ্দ অর্থ আত্মসাতের যে অভিযোগ উঠেছে, তা চরম অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি করেছে। এ কারণে স্থানীয় পর্যায়ে তারেক জিয়ার পছন্দের নেতাদের গ্রহণযোগ্যতা হ্রাস পাচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মেসবাহ কামাল বলেন, ‘দলীয় ক্যাডারদের নির্বাচন বন্ধ করতে বলার মাধ্যমে রাজনৈতিক ভুল করা হয়েছে। একই সঙ্গে তা মেনে নেওয়া এবং প্রথম দফার নির্বাচনে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের সাবেক ১৬ জন নেতার মাধ্যমে কলুষিত হওয়া ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা গ্রহণের পরিবর্তে তারেক ও তার অনুগতদের মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচন বানচালের আহ্বান দলকে আরও বিচ্ছিন্ন করে ফেলার আরেকটি বহিঃপ্রকাশ। এটিকে অগণতান্ত্রিক চর্চাও বলা চলে।’
১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে তারেক রহমানের বিদেশে অবস্থান প্রসঙ্গে মেসবাহ বলেন, ‘মনে হচ্ছে এক দশক ধরে তারেক রহমান দেশে নেই, মাঠ পর্যায়ের বাস্তবতা থেকে তারেক রহমানের অনুপস্থিতি বিএনপিকে গণ বিচ্ছিন্নতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। পাশাপাশি বহিষ্কারের ধারা তৃণমূল পর্যায়ে দলকে আরও দুর্বল করেছে।’
আরও পড়ুন: উপজেলা নির্বাচন: ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার আহ্বান বিএনপির
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক অজয় দাশগুপ্ত নির্বাচন বর্জনের রাজনীতিকে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও তারেক রহমানের পিতা জেনারেল জিয়ার গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের সঙ্গে তুলনা করেন। জেনারেল জিয়া জনগণের ম্যান্ডেট দিয়ে নয়, শক্তি দিয়ে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার দিকে মনোনিবেশ করেছিলেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
অজয় আরও বলেন, দলের প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়াউর রহমানের সময় থেকে শুরু করে জনগণের ম্যান্ডেট না পেয়ে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের বৈশিষ্ট্য, শাসনকে বৈধতা দেওয়ার জন্য একটি প্রহসনের গণভোট- গণতন্ত্র থেকে দলটির সরে দাঁড়ানোর প্রমাণ।
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক গাজী নাসিরউদ্দিন খোকন বলেন, জনসমর্থন আদায়ে ব্যর্থতা ঢাকতে বিএনপি নির্বাচনকে কলঙ্কিত করতে মিথ্যাচার করছে।
জ্যেষ্ঠ গবেষক ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক সৈয়দ বদরুল আহসান বলেন, নির্বাচন বর্জনের বেশ কিছু পরিণতি আছে। প্রথমত, এর ফলে দলীয় কর্মীদের মধ্যে মোহভঙ্গ হয়, যারা রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে বঞ্চিত হন এবং নিজেদের অপ্রাসঙ্গিক মনে করেন। দ্বিতীয়ত, যে দল অবিরাম নির্বাচন বর্জন করে, সেই দলকে নাগরিকরা গুরুত্বের সঙ্গে নেয় না।
সৈয়দ বদরুল বলেন, ‘এটি গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ, কারণ ক্রমাগত নির্বাচন বর্জনের ফলে সন্দেহ হয় যে দলটি ভোটকেন্দ্র থেকে দূরে থাকা অন্য রাজনৈতিক কৌশল থাকতে পারে, যা নির্বাচন এবং জনস্বার্থের পক্ষে অনুকূল নয়, কেবল ক্ষমতায় বসার জন্য এমন মনে করে।’
আরও পড়ুন: বিএনপির সমাবেশ মানেই অগ্নিসংযোগ-ধ্বংসযজ্ঞ-রক্তপাত: ওবায়দুল কাদের
২০১৪ সালের মতো, গত জাতীয় নির্বাচনের কয়েক মাস আগে, বিএনপি ও জামায়াত জোট এক মাসব্যাপী অবরোধ করে। এর মধ্যে যানবাহন ও ট্রেনে অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনাও ছিল। পাশাপাশি জামায়াতের সঙ্গেও সম্পর্ক শক্ত করে দলটি সব আইন বাতিল করে শরিয়াহ আইন প্রবর্তনের প্রকাশ্য হুমকি দিয়েছিল।
এছাড়াও খালেদা জিয়া ও তারেকের নির্দেশে দেশ চালানোর ঘোষণার মতো নির্বাচন ছাড়াই ক্ষমতা দখলের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন বিএনপির বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা।
আরও পড়ুন: দুধ দিয়ে গোসল করে দলত্যাগ বিএনপি নেতার
সুষ্ঠু পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া আমদানি পণ্য এড়িয়ে চলার আহ্বান বিএনপির
জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব উল্লেখ করে আমদানি পণ্য ভোক্তাদের কাছে পৌঁছানোর আগে কঠোরভাবে পরীক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রবিবার (১২ মে) এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
গত ৮ মে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্তের বিষয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন ভারতীয় খাদ্যদ্রব্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতির বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে দেশের নাগরিকদের সতর্ক থাকার এবং যথাযথ পরিদর্শন প্রোটোকল ছাড়া আমদানিকৃত পণ্য এড়িয়ে চলার আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।
আরও পড়ুন: দেশ গভীর সংকটে, সরকারের ভবিষ্যৎ অন্ধকার: ফখরুল
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) বা অন্যান্য দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানের মতো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বিদেশ থেকে আসা পণ্য পরিদর্শন ও পরীক্ষা পরিচালনা করা অপরিহার্য। কিন্তু বর্তমান পরাধীন সরকার দেশের নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে আমদানিকৃত খাদ্যপণ্যের যথাযথভাবে পরীক্ষা করবে কিনা তা নিয়ে জনগণ যথেষ্ট সন্দিহান।’
তিনি আরও বলেন, দেশের সকল নাগরিককে নিজ উদ্যোগে নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমদানি করা পণ্য যথাযথভাবে পরিদর্শন না করা হলে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী পদার্থযুক্ত সব ধরনের পণ্য আমাদের এড়িয়ে চলতে হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ভারতের বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদানের প্রাদুর্ভাব নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে স্বাস্থ্য নিরাপত্তার বিষয়টি তুলে ধরা হয়।
আরও পড়ুন: বিদেশি শক্তির ‘দালালি’ করে ক্ষমতায় থাকা যাবে না: গয়েশ্বরের হুঁশিয়ারি
ইউরোপে ভারতীয় খাদ্যপণ্যের ওপর পরিচালিত একটি সমীক্ষায় ৫২৭টি পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী রাসায়নিক রয়েছে বলে বৈঠকে আলোচনায় জানানো হয়।
২৩ এপ্রিল প্রকাশিত রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে ফখরুল বলেন, ক্যান্সার সৃষ্টিকারী রাসায়নিকের উপস্থিতি রয়েছে এমন অভিযোগে হংকং এবং সিঙ্গাপুরে এমডিএইচ এবং এভারেস্ট ব্র্যান্ডের কিছু পণ্য বিক্রি বন্ধ হওয়ায় এসব পণ্যের গুণমান পরীক্ষার বিশদ সরবরাহ করতে বলেছে ভারতের মশলা রপ্তানি নিয়ন্ত্রক।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ অবস্থায় সরকারকে অবশ্যই বাজারে প্রবেশের আগে প্রতিটি আমদানিকৃত পণ্যের গুণগত মান পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করে নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
সরকারি হাসপাতালগুলো বিশেষ করে ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোর অপরিচ্ছন্ন অবস্থা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের উপস্থিতির যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা পেতে বাধা সৃষ্টি করে বলে মনে করেন তিনি।
আরও পড়ুন: ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করাই আ. লীগের লক্ষ্য: মির্জা ফখরুল
ফখরুল বলেন, মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে সরকারি হাসপাতালের আশপাশে অসংখ্য নিম্নমানের ক্লিনিক ও বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রায় ৭০ শতাংশ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস ও অন্যান্য রোগের মতো অসংক্রামক রোগে।
কিন্তু সরকার এসব রোগ মোকাবিলায় মোট স্বাস্থ্য বাজেটের মাত্র ৪.২ শতাংশ বরাদ্দ করে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতে জনস্বাস্থ্যের একটি ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে যে, দেশের প্রায় ১৩ কোটি মানুষ প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবার কেনার সামর্থ্য রাখে না।
তিনি আরও বলেন, দেশে প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার মানুষ ক্যান্সারে মারা যায়। এই প্রচলিত ক্যান্সারের মূল কারণ অনিরাপদ খাদ্য।
রাজনীতিকরণের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপাচার্য ও শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া ভেস্তে গেছে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, যথাযথ কাজের সুযোগ বা দক্ষতার স্বীকৃতির অভাবে অনেক মেধাবী ব্যক্তি দেশ ছাড়ছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর আসন্ন বাংলাদেশ সফর নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, কে কখন আসছে আর কে আসছে না তা নিয়ে বিএনপি আগ্রহী নয়।
বাংলাদেশের জনগণের প্রতি তাদের দলের আস্থার কথা পুনর্ব্যক্ত করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'জনগণের ওপর আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে এবং আমরা সেই বিশ্বাসের ওপর দাঁড়িয়ে আছি। আমাদের রাজনীতিও মানুষের জন্য।’
আরও পড়ুন: পরিবেশ বিপর্যয়ের জন্য সরকারের 'ধ্বংসাত্মক' নীতি দায়ী: বিএনপি
দেশ গভীর সংকটে, সরকারের ভবিষ্যৎ অন্ধকার: ফখরুল
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দেশের সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।
রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন, সরকার ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের নির্বিচারে দোষী সাব্যস্ত ও কারারুদ্ধ করে বিচার বিভাগকে তার বিরাজনীতিকরণ এজেন্ডা বাস্তবায়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।
ফখরুল আরও বলেন, 'আমি বলতে চাই যে তাদের (সরকার) একটি ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে যে তারা সংকট কাটিয়ে উঠেছে। তবে আমি বলছি, গত (জাতীয়) নির্বাচনের পর সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে। আপনারা যদি এখনও এই বাস্তবতা উপলব্ধি না করেন এবং সংকট মোকাবিলার প্রচেষ্টা না করেন তবে আপনাদের ভবিষ্যৎও অন্ধকার।’
গত ৮ মে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্তের বিষয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
ফখরুল বলেন, দল ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের একতরফাভাবে বিচার ও সাজা দেওয়ার প্রক্রিয়ার তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে।
বিএনপি মহাসচিব দাবি করেন, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিশ্চিহ্ন করে দেশের রাজনীতিকে নির্বাসনে পাঠানোর চেষ্টার অংশ হিসেবে সরকার ২ হাজারেরও বেশি বিরোধী নেতাকর্মীকে সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও কাল্পনিক মামলায় কারাগারে পাঠিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আদালত মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল, কিন্তু তারা সেখানে বিচার পাচ্ছে না।’
বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করেন, সরকার দেশে একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীকে নানা ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে সম্পদ অর্জনের সুযোগ করে দিয়ে ক্ষমতায়িত করেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘এই সরকারকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার জন্য তারা লুণ্ঠনের ষড়যন্ত্র করেছে।’
ফখরুল বলেন, ক্ষমতাসীন দলের লুটেরারা বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করছে, বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করছে।
ফখরুল অভিযোগ করেন, দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে একটি বিশেষ মহলকে অবৈধভাবে জনগণের অর্থ লুটপাট এবং বিভিন্ন আর্থিক সুবিধা গ্রহণের সুযোগ দিয়ে বাংলাদেশকে আর্থিকভাবে অন্যের ওপর নির্ভরশীল করে তুলছে সরকার।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে, ইতোমধ্যে এটা প্রমাণিত হয়েছে। একটি দেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড যখন ভেঙে যায় এবং জবাবদিহির অভাবে দেশটির রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামো ধ্বংস হয়ে যায়, তখন তা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়। সারাদেশে এখন অরাজকতা বিরাজ করছে।’
'অদৃশ্য শক্তি' এখন বাংলাদেশ চালাচ্ছে: ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ নয়, একটি অদৃশ্য শক্তি এখন দেশ পরিচালনা করছে।
তিনি বলেন, 'তারা(আওয়ামী লীগ) কি আসলেই দেশ পরিচালনা করছে? তারা দেশ পরিচালনা করছে না... এটি একটি অদৃশ্য শক্তি যারা এখন দেশ চালাচ্ছে।’
সমাবেশে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, সেই অদৃশ্য শক্তির ইশারায় ক্ষমতাসীনরা মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়েছে।
সরকার রাজনীতিকরণের মাধ্যমে রাষ্ট্রযন্ত্র ও পুলিশ, প্রশাসন ও বিচার বিভাগসহ সকল প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
বিএনপি নেতা আক্ষেপ করে বলেন, যারা ক্ষমতাসীন দলের নয় তারা সরকারের কাছ থেকে কোনো চাকরি বা সুযোগ-সুবিধা পায় না।
তিনি বলেন, এমনকি ক্ষমতাসীন দলের সদস্যদেরও ঘুষ দিয়ে তাদের চাকরি নিশ্চিত করতে হয়। ‘এমনকি একজন স্কুল পিয়নের চাকরির জন্য কমপক্ষে ১৫ লাখ টাকা দিতে হয়। তারা দেশে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।’
আরও পড়ুন: উপজেলা নির্বাচন প্রমাণ করে জনগণ এই সরকারের সঙ্গে নেই: মান্না
খালেদা জিয়া, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ সব রাজবন্দির নিঃশর্ত মুক্তি এবং তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে শনিবার (১১ মে) বিকালে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জাতীয়তাবাদী যুবদল এ সমাবেশের আয়োজন করে।
সরকার একতরফা নির্বাচন করে নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করছে বলে অভিযোগ করেন ফখরুল।
তিনি বলেন, 'এবার তারা ডামি নির্বাচন চালু করেছে। এটা ঠাট্টা-বিদ্রুপ ও প্রহসনে পরিণত হয়েছে।’
তিনি আওয়ামী লীগকে সতর্ক করে বলেন, হিটলার, এরশাদ, আইয়ুব খানসহ কোনো স্বৈরাচারী সরকার জনগণকে দমন ও নির্যাতন করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি।
বিএনপি নেতা বলেন, ‘এ দেশের মানুষ হচ্ছে যোদ্ধা ও বিদ্রোহী, যারা সব সময় সবকিছু মেনে নেয় না। আন্দোলন সাময়িকভাবে গতি হারাবে বলে মনে হতে পারে। আবার নতুন করে আন্দোলন শুরু হবে।’
তিনি বলেন, সরকার দেশকে পৈতৃক সম্পত্তি মনে করে বলে জনগণের দাবির বিষয়ে ন্যূনতম চিন্তিত নয়।
তিনি বলেন, ' আমরা বলছি এখনো সময় আছে। দেশের মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাই ক্ষমতাচ্যুত করতে জনগণকে রাস্তায় নামতে বাধ্য করবেন না।’
আরও পড়ুন: বিদেশি শক্তির ‘দালালি’ করে ক্ষমতায় থাকা যাবে না: গয়েশ্বরের হুঁশিয়ারি