ব্যবসা-বাণিজ্য-বিশ্লেষণ
ছাত্র আন্দোলনে সহিংসতা ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ২৮ কোটি টাকা দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক
কোটা সংস্কার আন্দোলন ও স্বৈরাচারী সরকারের পতনের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে আহত ও নিহতদের জন্য গঠিত ফাউন্ডেশনকে ৫ কোটি টাকা অনুদান দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এছাড়াও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একদিনের বেতন এবং ব্যাংকের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল থেকে বন্যাদুর্গতদের জন্য প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে ২৩ কোটি টাকা দেওয়া হবে।
বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: এস আলম গ্রুপের সম্পদ কিনবেন না: বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর
এস আলম গ্রুপের তিন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক
১ মাস আগে
পুরনো স্বর্ণ বিক্রির সময় যে কারণে দাম কেটে রাখা হয়
বিনিয়োগ বা সঞ্চয়ের জন্য নির্ভরযোগ্য একটি খাত স্বর্ণ। দীর্ঘদিন ধরে সঞ্চিত স্বর্ণ নিতান্ত প্রয়োজনের সময় অনেক কাজে লাগে। তাই আর্থিক স্বচ্ছলতা তৈরির ক্ষেত্রে অন্যান্য যে কোনো সম্পদের বিপরীতে স্বর্ণ একটি সেরা বিকল্প। অনেক দিন আগে কেনা স্বর্ণ বিক্রি বা বিনিময় করে নতুন স্বর্ণ কেনার সময় কিছু খরচ রয়েছে, যা স্বর্ণের দাম থেকে কেটে রাখা হয়। কেটে নেওয়া অংশটি স্বর্ণ থেকে অর্জিত লাভে তেমন কোনো প্রভাব না ফেললেও বিষয়টি জেনে রাখা জরুরি। চলুন, স্বর্ণ সংক্রান্ত কোন কোন খাতের খরচগুলোর স্বর্ণের দামের সঙ্গে অন্তর্ভূক্ত করা হয় তা জেনে নেই।
বর্তমানে স্বর্ণের দাম থেকে কত শতাংশ কাটা হয়
২০২৪ সালের ৮ মে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) বিক্রির সময় স্বর্ণের দাম থেকে কর্তন বাবদ নতুন পরিমাণ নির্ধারণ করে। পুরনো স্বর্ণ বিক্রির সময় তার বর্তমান ওজন থেকে ১৫ শতাংশ বাদ দিয়ে অবশিষ্ট অংশের দামকে বিক্রয়মূল্য ধরা হবে। উদাহরণস্বরূপ ১০০ গ্রাম স্বর্ণ বিক্রি করতে গেলে তার দাম পাওয়ার যাবে ৮৫ গ্রামের জন্য।
যারা পুরনো সোনা দিয়ে নতুন সোনা নিতে চান তাদের ক্ষেত্রে আগের সোনার ওজন থেকে ১০ শতাংশ কেটে নতুন সোনা দেওয়া হবে। অর্থাৎ ১০০ গ্রাম পুরনো সোনার বদলে পাওয়া যাবে ৯০ গ্রাম সোনা।
এর সঙ্গে ধার্যকৃত যাবতীয় মজুরি এবং মূল্য সংযোজন করও (ভ্যাট) সোনার দাম থেকে বাদ যাবে।
আগে সোনা বিক্রির ক্ষেত্রে কর্তনের হার ছিল ১৩ শতাংশ, আর বিনিময়ের সময় কাটা হতো ৯ শতাংশ।
আরও পড়ুন: ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডে প্রবাসী বাংলাদেশিরা যেভাবে বিনিয়োগ করবেন
যে কারণে বিক্রির সময় স্বর্ণের দাম কমে আসে
স্বর্ণের বিশুদ্ধতা যাচাই
সোনার অলঙ্কারে তামা বা রৌপ্যের মতো সংকর ধাতু মিশ্রিত থাকে। এই সংকর ধাতু মিশ্রিত থাকা মানেই সোনার সামগ্রিক বিশুদ্ধতায় ঘাটতি থাকা। পুনঃবিক্রয়ের সময় স্বর্ণের এই বিশুদ্ধতা বা গুণগত মান নির্ণয়ের জন্য শিখা পরীক্ষা, অ্যাসিড পরীক্ষা ও এক্সআরএফ বা হলমার্কের মতো বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। উচ্চ বিশুদ্ধতা (২৪ ক্যারেট) সম্পন্ন সোনা কম বিশুদ্ধগুলোর (২২ ক্যারেট বা ১৮ ক্যারেট) তুলনায় অধিক মূল্যের হয়। বাজুস স্বচ্ছতা ও ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে সেই বিশুদ্ধতা পরীক্ষা এবং সার্টিফিকেশন বাধ্যতামূলক করে থাকে।
অবচয় খরচ
যে কোনো ব্যবহার্য সম্পদের মতো সোনারও অবচয় ঘটে। পুরনো সোনাগুলোর মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই স্ক্র্যাচ, আঘাতের চিহ্ন ও দীপ্তি হ্রাসসহ গুণগত মান নষ্টের আশঙ্কা থাকে। এতে অল্প হলেও ১০ বছর আগের ও পরের সোনার মধ্যে তারতম্য থেকে যায়। আর এই অপূর্ণতাকে সামঞ্জস্য করার জন্য কর্তনকৃত অংশ নির্ধারণ করা হয়। একদম সামান্য অংশ হলেও বিষয়টিতে বিক্রেতাদের সচেতন থাকা উচিৎ। অবশ্য পুনঃব্যবহারে অতিরিক্ত অবচয়ে স্বল্প ওজনের সোনার দামে উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়তে পারে।
আরও পড়ুন: ২০২৪ সালে পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান ১০ মুদ্রা
লেনদেনের খরচ
সোনা বিক্রি শুধুমাত্র কিছু পরিমাণ ধাতু হস্তান্তর করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। পুরো বিক্রয় প্রক্রিয়াটির সঙ্গে আরও কিছু কার্যক্রম জড়িত থাকে। যেমন বিক্রয় প্রক্রিয়াকরণে প্রশাসনিক ফি, পরীক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে সোনার বিশুদ্ধতা যাচাই ফি, স্বর্ণ মজুদ ও পরিবহনের নিরাপত্তা এবং লজিস্টিক খরচ ইত্যাদি। এই যাবতীয় খরচ একত্রিত হয়ে অবদান রাখে সোনার বিক্রয়মূল্যের অধোগতিতে। তাই এই খরচগুলোর ব্যাপারে বিক্রেতাদের সম্যক ধারণা থাকা জরুরি।
স্বর্ণ ব্যবসায়ীর খরচ ও ঝুঁকি
সোনার বাজারের ডিলার বা বিপণী মালিকদের ব্যবসা পরিচালনা বাবদ বিভিন্ন খরচ যুক্ত হয় এই তালিকায়। এগুলো হচ্ছে দোকান ভাড়া, কর্মচারীদের বেতন ও ইউটিলিটি বিল। প্রত্যেকটির ব্যয়ভার বহনের সাপেক্ষে যাচাই করা হয় বাজারের বর্তমান অবস্থা। এই সার্বিক দিক বিবেচনায় খরচের পরিধি অনেকটা বেড়ে যায়। আর এই খরচটিই ক্রেতারা পুষিয়ের নেওয়ার চেষ্টা করেন বিক্রয়কালে ভোক্তাদের নিকট থেকে। এটি ডিলারদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, কেননা এটি তাদের স্বর্ণ কেনা এবং ব্যবসার আনুষঙ্গিক খরচ থেকে উদ্বৃত্ত লাভের উপর প্রভাব ফেলে।
তাছাড়া পুরনো সোনা কেনার সময় ক্রেতারা স্বভাবতই একটু বেশি ঝুঁকির মুখে থাকেন। বিশেষ করে কেউ লেনদেনে জালিয়াতি করলে বা পণ্যের সত্যতা সংক্রান্ত কাগজপত্রে ঘাটতি থাকলে পরবর্তীতে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।
আরও পড়ুন: বন্ডে বিনিয়োগের আগে যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখা জরুরি
৩ মাস আগে
ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডে প্রবাসী বাংলাদেশিরা যেভাবে বিনিয়োগ করবেন
রিয়েল এস্টেট, স্টক মার্কেট, স্টার্ট-আপ বা ক্ষুদ্র ব্যবসাগুলো বিনিয়োগের অনুকূল দিগন্ত উন্মোচন করে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য। মার্কিন ডলারের হার বেড়ে যাওয়ার ধারাবাহিকতায় ইতিবাচক প্রভাব পড়ে বিনিয়োগের বিনিময় হারে। অন্যদিকে, উচ্চ মূল্যের ডলার আয়ের সঙ্গে উন্নত হয় রেমিটেন্স ক্রয় ক্ষমতা। প্রবাসীদের এই অর্থ দেশে থাকা তাদের পরিবারের জন্য যেমন সহায়ক হয়, তেমনি সম্ভাবনা তৈরি হয় দেশের বাজারে আরও বিনিয়োগের। এই পরিপ্রেক্ষিতে তাদের নির্ভরযোগ্য বিনিয়োগের উপায় বাংলাদেশ সরকারের নন-রেসিডেন্স বাংলাদেশি (এনআরবি) বন্ডগুলো। এগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে ইউ.এস. ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড বা ইউএসডিআইবি।চলুন, এই বন্ডে বিনিয়োগের পদ্ধতি সম্বন্ধে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
ইউ.এস. ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড কী
সরাসরি বাংলাদেশ সরকারের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই এনআরবি বন্ড ইস্যু করা হয় মার্কিন ডলারে।
এটি মূলত রেমিটেন্সের বিপরীতে ফরেন কারেন্সি (এফসি) বা বৈদেশিক মুদ্রার অ্যাকাউন্টধারীদের জন্য নিবেদিত একটি সঞ্চয় প্রকল্প। অন্যান্য অধিকাংশ বন্ডের মতো এই বন্ডেও রয়েছে মুনাফা লাভ এবং সুদাসলের উপর কর-মুক্তির সুবিধা।
ইউ.এস. ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডের বৈশিষ্ট্য
- এই বিনিয়োগ সুবিধাটি অনিবাসী বাংলাদেশি বা বাংলাদেশে বংশোদ্ভূত বিদেশি নাগরিকদের জন্য
- বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের এই বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশে তাদের এফসি অ্যাকাউন্টের প্রয়োজন হয়
- বন্ডের মূল্য রেমিটেন্সের উপর মার্কিন ডলারে যে কোনো মূল্যের হয়ে থাকে
- বন্ডের মেয়াদ ৩ বছর
- বর্তমানে সাধারণত ৫০০, ১ হাজার, ৫ হাজার, ১০ হাজার, এবং ৫০ হাজার মার্কিন ডলার মূল্যমানের ইউএসডিআইবি ইস্যু করা হয়
আরও পড়ুন: ২০২৪ সালে পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান ১০ মুদ্রা
ইউ.এস. ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড কেনার উপায়
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- বৈধ পাসপোর্টের অনুলিপি (বাংলাদেশে অবস্থান করলে দেশে আগমন ও প্রস্থানের সিলসহ পৃষ্ঠা প্রদর্শন করতে হবে)
- সম্প্রতি তোলা আবেদনকারি এবং নমিনি উভয়ের এক কপি করে পাসপোর্ট আকারের ছবি
- ওয়ার্ক পারমিট অথবা ভিসার অনুলিপি
- তহবিলের উৎস সম্পর্কিত কাগজপত্র (চাকরির পরিচয়পত্র বা বেতন প্রাপ্তির স্লিপ)
- অন্য কেউ স্পন্সর করে থাকলে তার পাসপোর্টের অনুলিপি এবং আয় সংক্রান্ত নথি
- সম্পূর্ণ পূরণকৃত এবং স্ব-হস্তে স্বাক্ষরকৃত আবেদনপত্র
বন্ড ক্রয় পদ্ধতি
বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর বা আভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের ওয়েব পোর্টাল থেকে বন্ড ক্রয়ের আবেদন ফর্ম ডাউনলোড করা যায়।
এছাড়া দেশে বা বিদেশে এই বন্ড ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও বিনামূল্যেই এই ফর্ম বিতরণ করে থাকে।
ফর্ম পূরনের পর ফর্ম সহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের স্ক্যান কপি যে কোনো ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠানে ইমেল করতে হবে। উপরোক্ত নথিপত্র ছাড়াও বন্ড ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য আরও কিছু দরকারি কাগজপত্র প্রয়োজন হয়। এ সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ফিরতি ইমেলে এনআরবি গ্রাহককে অবহিত করবেন।
এরপর স্ব-হস্তে স্বাক্ষরকৃত আবেদন ফর্মসহ যাবতীয় কাগজপত্র কুরিয়ারের মাধ্যমে সেই প্রতিষ্ঠানের ঠিকানায় পাঠাতে হবে। তারপর আবেদনকারির বন্ডের মূল্য পরিশোধের সাপেক্ষে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বন্ড ইস্যু করবেন। পরিশেষে ক্রয়কৃত বন্ডের পরিচিতি স্বরূপ একটি অ্যাডভাইস কপি গ্রাহককে প্রেরণ করা হবে।
আরও পড়ুন: বন্ডে বিনিয়োগের আগে যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখা জরুরি
যে প্রতিষ্ঠানগুলো এই বন্ড ইস্যু করে থাকে, সেগুলো হলো:
- বাংলাদেশ ব্যাংক
- দেশের ভেতর ও বাইরে অবস্থিত বাংলাদেশের তফসিলভুক্ত ব্যাংকগুলোর এডি (অনুমোদিত ডিলার) শাখা
- প্রতিনিধি অফিস, ফরেন করেসপন্ডেন্ট
- শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংক ছাড়া বাংলাদেশের অন্যান্য তফসিলি ব্যাংকগুলোর এক্সচেঞ্জ হাউস
বন্ড ক্রয়ের জন্য আবেদন পদ্ধতি
নিম্নের লিঙ্ক থেকে বন্ডে বিনিয়োগের আবেদন ফর্মটি সরাসরি ডাউনলোড করে পূরণ করা যাবে। https://ird.gov.bd/sites/default/files/files/ird.portal.gov.bd/forms/6ef7c349_b2ef_4608_bd1d_3c7b80b2f3f6/Editable_Purchase_US_Dollar_Investment_Bond_converted.pdf
ফর্ম পূরণে যে তথ্যগুলো প্রয়োজন হয়, তা হলো:
- আবেদনকারী বা বন্ড ক্রেতা এবং তার নমিনির নাম ও ঠিকানা
- নমিনির সঙ্গে আবেদনকারীর সম্পর্ক
- বন্ড ক্রেতার পাসপোর্ট নম্বর
- বন্ডের মূল্য
- এফসি অ্যাকাউন্ট নম্বর এবং যেই ব্যাংকের যে শাখাতে অ্যাকাউন্টটি রয়েছে, তার নাম ও ঠিকানা
- আবেদনকারীর পাসপোর্ট নম্বর, পাসপোর্ট ইস্যুর স্থান, এবং পাসপোর্ট অনুযায়ী জন্ম তারিখ
- বন্ড ক্রেতার চাকরির পদবি, কোম্পানির নাম
- বন্ড ক্রেতার বাংলাদেশ ও বিদেশের ঠিকানা
- সবশেষে আবেদনকারীর সই
আরও পড়ুন: সঞ্চয়পত্রে যেভাবে বিনিয়োগ করবেন
৪ মাস আগে
২০২৪ সালে পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান ১০ মুদ্রা
যে কোনো দেশের মুদ্রার মানের উল্লেখযোগ্য হ্রাস-বৃদ্ধি নির্ভর করে সুদের হার, মুদ্রাস্ফীতি, বাজারের চাহিদা এবং ব্যবসায়িক লেনদেনের ভারসাম্যের ওপর। এই সূচকগুলোর পেছনে প্রধান চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে দেশটিতে সঞ্চিত সম্পদের পরিমাণ এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি। এভাবে সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তনের সঙ্গে কখনও মুদ্রা দর পতন ঘটে কখনও বা তা বেড়ে যায়। অত্যধিক হারে বেড়ে যাওয়া মুদ্রামান বিশ্বজুড়ে ব্যবসায়িক লেনদেনে সেই মুদ্রার একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করে। চলুন, ২০২৪ সালে এখন পর্যন্ত কোন ১০টি মুদ্রা সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে তা জেনে নেওয়া যাক।
বৈদেশিক মুদ্রার মূল্য যেভাবে নির্ধারণ হয়
এক দেশের মুদ্রা থেকে অন্য দেশের মুদ্রার বিনিময় হারের পরিবর্তন মূলত দুটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে।
ফ্লোটিং রেট
মুক্ত বাজারে মুদ্রার সরবরাহ ও চাহিদার বর্তমান অবস্থা ঠিক করে দেয় মুদ্রার ফ্লোটিং রেট। যখন একটি মুদ্রার চাহিদা বাড়লে এর দাম বাড়ে, একইভাবে চাহিদা কমলে দামটাও কমে। এই হ্রাস-বৃদ্ধির নেপথ্যে কাজ করে বিনিময় হার সম্পর্কে মানুষের সাধারণ ধারণা। বিনিময় হারের এই বদলে যাওয়ার ধারাবাহিকতায় পরিবর্তন হতে থাকে মানুষের চাহিদা এবং বাজারে মুদ্রার সরবরাহ।
যেমন ইউরোর তুলনায় মার্কিন ডলারের (ইউএস ডলার) চাহিদা বৃদ্ধি মানে ইউরোর দাম মার্কিন ডলারের দাম থেকে কমে যাওয়া। চাহিদা বৃদ্ধির মূলে থাকে বেকারত্বের হার, মুদ্রাস্ফীতি এবং সুদের হারের পরিবর্তনের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনা।
আরও পড়ুন: ২০২৩ সালে বিশ্বের শীর্ষ ১০ শক্তিশালী মুদ্রা
ফিক্স্ড রেট
একটি বিদেশি মুদ্রার সঙ্গে বিনিময়ের জন্য একটি দেশের সরকার সেই দেশের মুদ্রার একটি নির্দিষ্ট হার বেধে দেয়। মুদ্রার মূল্য নির্ধারণীটি করা হয়ে থাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে। অতঃপর সেই বিদেশি মুদ্রার বিপরীতে সরকার কর্তৃক দেশীয় মুদ্রা লেনদেন করা হয়, যার মাধ্যমে নির্ধারিত হারটি বজায় থাকে।
বাজারে স্বল্পমেয়াদে ফ্লোটিং রেট যখন ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে, তখন এর নেতিবাচক প্রভাব করে দৈনন্দিন সরবরাহ ও চাহিদায়। এ সময় মুদ্রার দাম একদম পড়ে গেলে অথবা আকাশচুম্বী হয়ে যায়। এই অস্থিতিশীলতাটি দেশের বাণিজ্য, ঋণ পরিশোধসহ সামগ্রিক অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করতে পারে। তাই পরিস্থিতি সামলানোর জন্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো তাৎক্ষণিকভাবে ফিক্স্ড রেটের আশ্রয় নেয়।
বিশ্বের সবচেয়ে দামি ১০টি মুদ্রা
কুয়েতি দিনার (কেডব্লিউডি)
বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী মুদ্রা হলো কুয়েতি দিনার, যুক্তরাষ্ট্রের (ইউএসএ) মুদ্রায় যার বিনিময় হার ৩ দশমিক ২৬ মার্কিন ডলার। এর পেছনে প্রথম কারণ হচ্ছে তেল রপ্তানিতে বিশ্বে কুয়েতের অবস্থান। এই প্রেক্ষাপটটি দেশটিকে একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তি দিয়েছে।
দ্বিতীয়ত, কুয়েতি দিনারে মার্কিন ডলার, ইউরো এবং জাপানি ইয়েনের মতো বিশ্বখ্যাত তিনটি মুদ্রার বিপরীতে ফিক্স্ড রেট আরোপ করা হয়েছে। তাই বৈশ্বিক মুদ্রা বাজার পরিবর্তন এই দিনারের মানকে তেমন প্রভাবিত করতে পারে না।
তৃতীয়ত, কুয়েত একটি রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল দেশ। এতে করে কুয়েত বিপুল পরিমাণে বিদেশি বিনিয়োগ পায়।
তাছাড়া, দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে এই মুদ্রা সরবরাহের উপর। ফলে মুদ্রার দর একটি নির্দিষ্ট হার বজায় রাখতে পারে।
বাহরাইন দিনার (বিএইচডি)
বিশ্বের দ্বিতীয়-সর্বোচ্চ দামি মুদ্রা হলো বাহরাইন দিনার, যার একক মুদ্রার হার ২ দশমিক ৬৫ মার্কিন ডলারের সমান। এর পেছনে প্রধান কারণ তেলের পাশাপাশি বাহরাইন গ্যাস রপ্তানিতেও সেরা।
মার্কিন ডলারের বিপরীতে এই দিনারের বিনিময় হার সুনির্দিষ্ট করায় এর দামে খুব বেশি তারতাম্য থাকে না। এমনকি দেশটির নিম্ন মূল্যস্ফীতির হার মুদ্রার মান স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুন: স্বর্ণ বনাম হীরা: কোন বিনিয়োগটি বেশি লাভজনক?
ওমানি রিয়াল (ওএমআর)
বিশ্বের তৃতীয় দামি মুদ্রাটির নাম ওমানি রিয়াল, যার একক মুদ্রা দিয়ে ২ দশমিক ৬০ মার্কিন ডলার কেনা যায়। কারণ বাহরাইনের মতো ওমানও বিশ্বখ্যাত তেল ও গ্যাস রপ্তানিকারক। আরব উপদ্বীপের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলের এই দেশটির অর্থনীতির বেশিরভাগই নির্ভর করে তাদের কাছে থাকা তেলের মজুদের উপর।
এই রিয়ালের এক হাজার ভাগের এক ভাগকে ‘বাইসা’ বলা হয়, যা অন্যান্য মুদ্রার বিপরীতে ব্যবহার করা হয়। আর ইউএস ডলারের বিপরীতে ওমানের মুদ্রার রেট ফিক্স্ড করা আছে। এছাড়া দেশটির মূল্যস্ফীতির হার তুলনামূলকভাবে কম হওয়ার কারণে মুদ্রার মানের আকস্মিক পরিবর্তন হয় না।
জর্ডানিয়ান দিনার (জেওডি)
তালিকার চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে জর্ডানিয়ান দিনার, যার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রার বিনিময় হার ১ দশমিক ৪১ ডলার। বিশ্ব বাজারে তেল ও গ্যাসের প্রধান বিক্রেতা না হলেও এই অতীব দুটি মূল্যবান সম্পদ জর্ডানের অর্থনীতির মূল শক্তি।
দিনারের ঊর্ধ্বমানের নেপথ্যে রয়েছে আর্থিক এবং রাজস্ব নীতিতে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সতর্কতা। এর ফলে একদিকে আভ্যন্তরীণ বাজারে মুদ্রার মূল্য স্থিতিশীল থাকে। অন্যদিকে, বিশ্ব বাজারের উত্থান-পতনের ধাক্কা থেকে জর্ডানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সুরক্ষিত থাকে।
ব্রিটিশ পাউন্ড (জিবিপি)
পৃথিবীর সর্বোচ্চ দামি মুদ্রাগুলোর শীর্ষ ১০-এর ঠিক মাঝামাঝিতে রয়েছে ব্রিটিশ পাউন্ড। ১ ব্রিটিশ পাউন্ড ১ দশমিক ২৭ মার্কিন ডলারের সমতূল্য। সাম্প্রতিক নানা ধরনের রাজনৈতিক ঝামেলার পরেও পাউন্ড ২০২৪ সালের পঞ্চম শক্তিশালী মুদ্রা। এর পেছনে মূলত দুটি বিষয় দায়ী। এক জিবিপ’র জনপ্রিয়তা এবং দুই, সংগৃহীত মোট রাজস্ব আয়ের দিক থেকে এই দেশটি বিশ্বের বৃহত্তম দেশগুলোর অন্তর্ভূক্ত।
আরও পড়ুন: ডলার এনডোর্সমেন্ট কী, কীভাবে করবেন
৪ মাস আগে
বন্ডে বিনিয়োগের আগে যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখা জরুরি
প্রথাগত সঞ্চয় হিসাবের তুলনায় অধিক লাভ পাওয়ার সেরা উপায় হচ্ছে বিনিয়োগ। এর মাধ্যমে সম্পদের ব্যবস্থা থেকে শুরু করে বার্ধক্যকালীন আর্থিক নিরাপত্তার মতো দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক সুবিধা পাওয়া সম্ভব হয়। শুধু তাই নয়; উপযুক্ত বিনিয়োগ মুদ্রাস্ফীতি মোকাবিলায়ও যুগান্তকারী ভূমিকা রাখতে পারে। এমনি একটি আর্থিক উপকরণ হচ্ছে বন্ড, যেখানে বিনিয়োগের বিনিময়ে স্থির আয় পাওয়া যায়। মেয়াদপূর্তিতে বেশ ভালো পরিমাণের রিটার্ন আসায় বিগত বছরগুলোতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বিনিয়োগের এই মাধ্যমটি। তবে বাজারজুড়ে যথেষ্ট ভিন্নতা থাকায়, সঠিক বন্ডটি কেনার আগে তার যথাযথ যাচাই-বাছাই প্রয়োজন। চলুন, চূড়ান্তভাবে বন্ডে বিনিয়োগের পূর্বে কোন বিষয়গুলো বিবেচনা করা জরুরি, তা জেনে নেওয়া যাক।
বন্ড কী
ঋণের বিনিময়ে একটি নিরাপত্তা চুক্তিপত্রের নাম বন্ড, যে চুক্তি ঋণগ্রহীতা হিসেবে বন্ড ইস্যুকরা প্রতিষ্ঠান এবং ঋণদাতার মধ্যে হয়ে থাকে। এখানে ঋণদাতা বা বিনিয়োগকারীকে বন্ড ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠান প্রাপ্ত ঋণের উপর নির্দিষ্ট হারে বিভিন্ন কিস্তিতে সুদ প্রদান করে থাকে। এভাবে পূর্বনির্ধারিত মেয়াদ পার হওয়ার পর ঋণের টাকা সুদসহ পরিশোধ করা হয়। বন্ডের অর্থের উপর নির্দিষ্ট মেয়াদে ধার্যকৃত সুদের হারকে কুপন রেটও বলা হয়। বন্ড ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠান ও কুপন রেটসহ মূল অর্থ প্রদানের নানা মাধ্যমের উপর ভিত্তি করে বন্ডগুলো বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন: সঞ্চয়পত্রে যেভাবে বিনিয়োগ করবেন
বাংলাদেশে বন্ডের প্রকারভেদ
বন্ডে বিনিয়োগের সুবিধা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ধরনের উপর ভিত্তি করে বন্ড ৩ প্রকার।
সরকারি বন্ড
এই বন্ডগুলোর আরেক নাম ট্রেজারি বন্ড, যেগুলোর মেয়াদ ন্যূনতম ২ বছর থেকে সর্বোচ্চ ২০ বছরের হয়ে থাকে। এখানে সুদের হার অন্যান্য বন্ডের তুলনায় সর্বাপেক্ষা বেশি থাকে।
করপোরেট বন্ড
ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো যে ধরনের বন্ড ইস্যু করে থাকে, সেগুলো করপোরেট বন্ড। এই বন্ড কোম্পানিগুলোর ব্যাংক ছাড়া টাকা উত্তোলনের একটি সেরা মাধ্যমে। এখানে কুপন রেট কম থাকলেও বিনিয়োগকারীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বেশি থাকে।
এজেন্সি বন্ড
সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো এই বন্ড ইস্যু করে থাকে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ ডিজেল প্লান্টস লিমিটেড এবং বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ সরকারের ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করার পদ্ধতি
সুদ প্রদানের পদ্ধতির ভিত্তিতে বন্ডের শ্রেণীবিন্যাস নিম্নরূপ:
জিরো কুপন বন্ড
এই বন্ডগুলোতে কোনো সুদ বা কুপন দেওয়া হয় না তবে মেয়াদপূর্তিতে বন্ডের ফেস ভ্যালুতে মূল টাকা পরিশোধ করা হয়। প্রথমেই দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে মেয়াদ শেষে প্রদানকৃত অর্থের পরিমাণ বা বন্ডের ফেস ভ্যালু ঠিক হয়। আর বন্ড ইস্যুর সময় এই ফেস ভ্যালুর থেকে কম মূল্যে বন্ড ছাড়া হয়। আর এই ডিস্কাউন্ট রেটটাই বিনিয়োগকারীদের লাভ।
কনভার্টিবল বা রূপান্তরযোগ্য বন্ড
এই করপোরেট বন্ডগুলোতে বিনিয়োগের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট সময় পর বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির শেয়ার হোল্ডারে পরিণত হতে পারেন। তুলনামূলক কম সুদ প্রদান করতে হয় বিধায় কোম্পানি কনভার্টিবল বন্ড ইস্যু করে। এমনকি এখানে বন্ড হোল্ডাররা শেয়ার হোল্ডারে পরিণত হওয়ায় নির্দিষ্ট সময় পর তাদের মূলধন ফেরত দেওয়ার বাধ্যবাধকতা কোম্পানির থাকে না।
কল-এবল বন্ড
যে বন্ডের মেয়াদ উত্তীর্ণের পূর্বেই তার ইস্যুকারী নতুন করে সুদের হার ধার্য করতে পারে, তাকে কল-এবল বন্ড বলে। মেয়াদ চলাকালেই বন্ড ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠানের ক্রেডিট কোয়ালিটি বৃদ্ধি পেতে পারে কিংবা বাজারে সুদের হার কমে যেতে পারে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি আগের থেকে কম কুপন রেট দিয়ে পুনরায় বন্ডটি ইস্যু করতে পারে। এতে ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠানের লাভ হয় এবং বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি হয়।
পুট-এবল বন্ড
এখানে মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই বন্ড হোল্ডাররা বন্ড ইস্যুকারীকে বন্ড বিক্রি করার ক্ষমতা অর্পণ করতে পারে। এতে করে বাজারে বন্ডের দর কমে যাওয়া অথবা সুদের হার বেড়ে যাওয়ার পূর্বেই বিনিয়োগকারীরা বন্ড বিক্রির সুযোগ পায়। এই সুবিধা থাকার জন্য পুট-এবল বন্ড বাজারে অন্যান্য বন্ড থেকে একটু বেশি মূল্যে বিক্রি হয়।
ইনকাম বন্ড
এটি অনেকটা জিরো কুপন বন্ডের মতো, তবে এখানে সুদ দিতে হয়। এই সুদ তখনই প্রদান করা হয় যখন প্রতিষ্ঠানের কাছে কুপন দেওয়ার মতো যথেষ্ট পরিমাণ আয় থাকে।
পারপিচুইটি বন্ড
এই বন্ডগুলোতে মূলত কোনো মেয়াদ নেই। বন্ডের মূলধন শোধ না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকাল ধরে বন্ড হোল্ডাররা নিয়মিতভাবে কুপন বা সুদ পেয়ে যাবেন।
জামানতযুক্ত বা সিকিউরড বন্ড
এই বন্ড বিক্রির সময় ঋণ পরিশোধের নিশ্চয়তা স্বরূপ একটি স্থায়ী সম্পদের দলিল বন্ধক রাখা হয়। জামানতযুক্ত বন্ডের ইস্যুকারী কোনো কারণে ঋণ খেলাপি হলে ঐ বন্ধককৃত সম্পদ বিক্রি করে বিনিয়োগকারীদের মূলধন সুদসহ ফেরত দেওয়া হয়।
জামানতবিহীন বা আন-সিকিউরড বন্ড
এই বন্ড বিক্রির সময় কোনো কিছু বন্ধক রাখার সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে বন্ড ক্রয়ের জন্য ক্রেতাকে কোম্পানির আয়, সুনাম এবং ঋণ প্রদানের ক্ষমতার উপর নির্ভর করতে হয়।
এখানে প্রতিষ্ঠান কোনো কারণে ঋণ খেলাপি হলে বন্ড হোল্ডারদের স্বাভাবিকভাবেই সম্পূর্ণ মূলধন হারানোর ঝুঁকি থাকে।
আরও পড়ুন: ডলার এনডোর্সমেন্ট কী, কীভাবে করবেন
৪ মাস আগে
সঞ্চয়পত্রে যেভাবে বিনিয়োগ করবেন
দীর্ঘমেয়াদে আর্থিক নিরাপত্তার জন্য বিনিয়োগের কোনো বিকল্প নেই। সাধারণত সমাজে ব্যক্তির অবস্থানের ভিত্তিতে তারতম্য ঘটে বিনিয়োগের সম্ভাবনার। এর বাইরে বিনিয়োগের সিদ্ধান্তের উপর প্রভাব ফেলে ঝুঁকি সহনশীলতা, আর্থিক লক্ষ্য এবং বাজার পরিস্থিতি। এগুলো দীর্ঘমেয়াদে ব্যক্তির আর্থিক স্থিতিশীলতার নির্ধারক হিসেবে কাজ করে। বিশেষ করে যখন ঝুঁকি ও বাজার পরিস্থিতি যাচাইয়ের প্রসঙ্গ ওঠে, তখন প্রথমেই আসে সঞ্চয়পত্রের কথা। কেননা সুদের হার এবং নীতি নির্ধারকের বিবেচনায় এটি অন্যতম একটি দুশ্চিন্তামুক্ত বিনিয়োগের খাত। চলুন, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ পদ্ধতির ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
সঞ্চয়পত্র কী
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার পরিচালিত এই বিনিয়োগ প্রকল্পের আরেক নাম সেভিংস ইন্সট্রুমেন্ট্স বা সেভিংস সার্টিফিকেট। এই সনদপত্রে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে নির্ধারিত সময় পরপর আসে মুনাফা। আর নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে সেই বিনিয়োগকৃত মূলধনটি পাওয়া যায়। এটি দেশের স্বল্প আয়ের জনসাধারণের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য সঞ্চয়ের মাধ্যম। মূলত অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, বায়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক, নারী এবং শারীরিক প্রতিবন্ধীরা সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতাভুক্ত হন। এভাবে নির্ভরতা হ্রাসের পাশাপাশি মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্যও সঞ্চয়পত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে প্রতীয়মান হয়।
বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র
মেয়াদ এবং বিনিয়োগকৃত অর্থের উপর ভিত্তি করে সরকার ৪ ধরনের সঞ্চয়পত্র জারি করে। এগুলো হলো:
১. পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র
শিরোনামের মতই এই সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ ৫ বছর। এখানে সর্বনিম্ন ১০ টাকা থেকে শুরু করে ব্যাক্তি পর্যায়ে এক নামে সর্বোচ্চ ৩০ লাখ, এবং যুগ্ম নামে সর্বোচ্চ ৬০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা যায়। প্রাতিষ্ঠানিক ঊর্দ্ধসীমা নেই।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ সরকারের ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করার পদ্ধতি
২. পরিবার সঞ্চয়পত্র
এখানে ৫ বছর মেয়াদে সর্বনিম্ন ১০ হাজার থেকে ব্যাক্তি পর্যায়ে শুধুমাত্র একক নামে সর্বোচ্চ ৪৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা যায়।
৩. তিন মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র
এই সঞ্চয়পত্রে ৩ বছরের জন্য সর্বনিম্ন ১ লাখ টাকা রাখা যায়। এই মেয়াদে ব্যাক্তি পর্যায়ে বিনিয়োগের সর্বোচ্চ পরিমাণ এক নামে ৩০ লাখ টাকা এবং যুগ্ম নামে ৬০ লাখ টাকা।
৪. পেনশনার সঞ্চয়পত্র
এখানে ৫ বছর মেয়াদে বিনিয়োগের সর্বনিম্ন পরিমাণ ৫০ হাজার টাকা এবং ব্যক্তি পর্যায়ে শুধুমাত্র এক নামে সর্বোচ্চ পরিমাণ ৫০ লাখ টাকা। তবে তা অবশ্যই গ্র্যাচুইটি এবং সর্বশেষ প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে প্রাপ্ত অর্থের মধ্যে হতে হবে।
আরও পড়ুন: ২০২৩ সালে বিশ্বের শীর্ষ ১০ শক্তিশালী মুদ্রা
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ
৫ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র এবং ৩ মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের কোনো উর্ধ্বসীমা নেই। অপরদিকে দুই প্রকল্পে এই বিনিয়োগের নিম্নসীমা ব্যক্তি পর্যায়ের মতই যথাক্রমে ১০ টাকা এবং ১ লাখ টাকা।
সমন্বিত সঞ্চয়পত্র
এখানে বিনিয়োগটি হয় ৩-মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, পরিবার সঞ্চয়পত্র, এবং ৫-বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র- এই তিনটির বিপরীতে একসঙ্গে। এই বিনিয়োগের উর্ধ্বসীমা এক নামে ৫০ লাখ টাকা এবং যৌথ নামে ১ কোটি টাকা।
সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের সুবিধা
- আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রচলিত যে কোনো বিনিয়োগের মাধ্যমগুলোর তুলনায় সঞ্চয়পত্রে সুদের হার বেশি।
- সরকারি কর্তৃত্ব থাকায় এখানে ঝুঁকির পরিমাণ অন্যান্য বিনিয়োগের খাত থেকে অনেক কম। মেয়াদপূর্তীতে সুদ-আসল সহজেই পাওয়া যায়। সুদের হার বেশি হওয়ায় মোট আয়ের পরিমাণ অনেক বেশি আসে।
- সঞ্চয়পত্র ইস্যুকারী অফিসগুলোর যে কোনোটিতে নিবন্ধন করার পর প্রয়োজনে সে সঞ্চয়পত্র সেই অফিসের অন্য শাখায় স্থানান্তর করা যায়।
আরও পড়ুন: সমতা স্কিম: স্বল্প আয়ের ব্যক্তিরা যেভাবে সর্বজনীন পেনশন স্কিম-এ রেজিস্ট্রেশন করবেন
সঞ্চয়পত্র কেনার যোগ্যতা
ব্যক্তিপর্যায়ে প্রতিটি সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে প্রথম শর্ত হচ্ছে- একক বা যুগ্ম যে নামেই হোক না কেন, তাকে অবশ্যই প্রাপ্তবয়স্ক বাংলাদেশি নাগরিক হতে হবে। এছাড়া আরও যে যোগ্যতাগুলো প্রয়োজন্য তা হচ্ছে:
পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র
সঞ্চয়পত্র সাধারণত যে কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য নয়। তবে কৃষিভিত্তিক শিল্পের আয়ের ১০ শতাংশ অর্থ এবং কমকর্তা-কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থ দিয়ে এই সঞ্চয়পত্র কেনা যেতে পারে।
পরিবার সঞ্চয়পত্র
- ন্যূনতম ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সের যে কোনো বাংলাদেশি নারী
- কমপক্ষে ৬৫ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সের যে কোনো বাংলাদেশি নাগরিক
- শারীরিক প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে তাকে অবশ্যই একজন প্রাপ্তবয়স্ক বাংলাদেশি নাগরিক হতে হবে। এখানে প্রতিবন্ধীতার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের মাধ্যমে সত্যায়িত হওয়া আবশ্যক।
- নাবালক বা অপ্রাপ্তবয়স্ক অথবা তার পক্ষে পক্ষে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবে না।
আরও পড়ুন: স্বর্ণ বনাম হীরা: কোন বিনিয়োগটি বেশি লাভজনক?
৩ মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র
যে সকল প্রতিষ্ঠান প্রতিবন্ধীদের জন্য কাজ করে বা শুধুমাত্র প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখানে মুনাফার অর্থ প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে ব্যয় হবে- এই মর্মে সংশ্লিষ্ট জেলা সমাজ সেবা কার্যালয় থেকে প্রত্যয়নকৃত হওয়া আবশ্যক।
পেনশনার সঞ্চয়পত্র
- সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা-সরকারী, আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী
- সুপ্রীম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত মাননীয় বিচারপতি
- সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য
উপরোক্ত তিন ক্যাটাগরির অন্তর্ভূক্ত মৃত চাকরিজীবীর পারিবারিক পেনশন সুবিধাপ্রাপ্ত স্বামী/স্ত্রী/সন্তানগণ
সঞ্চয়পত্র কেনার পদ্ধতি
যে কোনো ধরনের সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের জন্য প্রথমে কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করতে হবে। অতঃপর যথাযথভাবে পূরণকৃত আবেদন ফর্মের সঙ্গে সংযুক্ত করে জমা দিতে হবে সঞ্চয়পত্র ইস্যূকারী সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে। চলুন, প্রথমে জরুরি নথিপত্রের ব্যাপারে পরিপূর্ণ ধারণ নেওয়া যাক।
আরও পড়ুন: জাতীয় পেনশন স্কিম: প্রবাসীদের আকৃষ্ট করছে না প্রবাস স্কিম
সঞ্চয়পত্র কেনার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
ব্যক্তিপর্যায়ে বিনিয়োগের জন্য
- প্রার্থী ও নমিনি প্রত্যেকের ২ কপি করে পাসপোর্ট আকারের সত্যায়িত ছবি (নমিনির ছবি ক্রেতা সত্যায়িত করবেন)
- আবেদনকারী ও নমিনির প্রত্যেকের জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি (নমিনি অপ্রাপ্তবয়স্ক হলে তার জন্মনিবন্ধন এবং সত্যায়নকারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি)
- বিনিয়োগের পরিমাণ ১ লাখ টাকার বেশি হলে প্রার্থীর (যুগ্মভাবে কেনার ক্ষেত্রে সকল প্রার্থীদের) ই-টিন সনদের কপি
- প্রার্থীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের এমআইসিআর (ম্যাগনেটিক ইন্ক ক্যারেক্টার রিকগনিশন) চেক ও এমআইসিআর সাদা চেকের কপি (যুগ্ম নামের ক্ষেত্রে যুগ্মভাবে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের চেক)
- পেনশনার সঞ্চয়পত্রের জন্য নিয়োগকর্তার পূরণকৃত কর্মকর্তা/কর্মচারির প্রাপ্ত গ্র্যাচুইটি ও প্রভিডেন্ট ফান্ড সনদপত্র এবং পিপিও (পেনশন পেমেন্ট অর্ডার)/ইপিপিও (ইলেক্ট্রনিক পেনশন পেমেন্ট অর্ডার)-এর ফটোকপি অথবা নিয়োগকর্তার অনুমোদনকৃত পিএসপি-২ ফরম।
আরও পড়ুন: সঞ্চয়পত্রে নয়, সুদ কমেছে ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমের: অর্থ মন্ত্রণালয়
প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে বিনিয়োগের জন্য
- প্রভিডেন্ট ফান্ড ও কৃষি ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের অর্থ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে,
- কর কমিশনারের কার্যালয় থেকে ইস্যু করা স্বীকৃতপত্র কিংবা সরকার গেজেট প্রজ্ঞাপন
- প্রভিডেন্ট ফান্ডের নামে ই-টিন
- পরিচালনা পরিষদ সভার কার্যবিবরণী
- লেনদেন পরিচালনাকারীদের স্বাক্ষর সংক্রান্ত প্রত্যয়ন
- প্রভিডেন্ট ফান্ডের ব্যাংক হিসাব বিবরণী এবং উক্ত হিসাবের এমআইসিআর চেক এবং এমআইসিআর সাদা চেকের কপি
- প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানের অর্থ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে
- সংশ্লিষ্ট সমাজসেবা জেলা কার্যালয় থেকে প্রত্যয়নপত্র
- পরিচালনা পরিষদের সভার কার্যবিবরণী
- লেনদেন পরিচালনাকারীদের স্বাক্ষর সংক্রান্ত প্রত্যয়ন
- প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব বিবরণী এবং উক্ত হিসাবের এমআইসিআর চেক এবং এমআইসিআর সাদা চেকের কপি।
আরও পড়ুন: ময়মনসিংহের সেই শিশুকে ১৩ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনে দেওয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের
সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের জন্য আবেদন
সব ধরনের সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের জন্যই একটি নির্দিষ্ট আবেদন ফর্ম পূরণ করে স্বাক্ষর করতে হয়। ফর্মটি সঞ্চয়পত্র ইস্যুকারী যে কোনো সরকারি অফিস থেকে বিনামূল্যেই দেওয়া হয়। এছাড়া জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের ওয়েব সাইট (https://nationalsavings.gov.bd/) থেকেও ডাউনলোড করা যাবে।
যে প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে সঞ্চয়পত্রের আবেদন ফর্ম প্রদান, জমা, এবং সঞ্চয়পত্র ইস্যু করা হয়, সেগুলো হলো:
- জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের অধীনস্থ সকল সঞ্চয় ব্যুরো কার্যালয়
- সদরঘাট ও ময়মনসিংহ অফিস ব্যতীত বাংলাদেশ ব্যাংকের সকল কার্যালয়
- ডাকঘর
- শরীয়াহ ভিত্তিক ব্যাংক ব্যতীত সকল তফসিলি ব্যাংক
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ সংক্রান্ত সঞ্চয়পত্র কেবল জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের অধীনস্থ সঞ্চয় ব্যুরোগুলোতে পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন: প্রবাস স্কিম: প্রবাসী বাংলাদেশিরা যেভাবে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে রেজিস্ট্রেশন করবেন
সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের সময় যে বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ
বিনিয়োগের উদ্দেশ্য
প্রতিটি সঞ্চয়পত্র ১ বছর পূর্তির পূর্বে নগদায়ন করা হলে তথা ভেঙ্গে ফেললে কোনো মুনাফা পাওয়া যায় না। শুধু বিনিয়োগকৃত মূল টাকাটি ফেরত দেওয়া হয়।
শুধুমাত্র ৫ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে পুনঃবিনিয়োগের জন্য পরবর্তীতে অতিরিক্ত ১ মেয়াদ নেওয়া যায়।
বিনিয়োগের পূর্বেই এই দুটি বিষয় ভালোভাবে খেয়াল রাখতে হবে। বিশেষ করে যারা জরুরি নগদ অর্থের প্রয়োজন অনুভব করে থাকেন, তাদের সঞ্চয়পত্র কেনার ব্যাপারে একটু সুক্ষভাবে চিন্তা করা উচিৎ।
অপরদিকে বিনিয়োগ উৎসাহীদের যথাযথ হিসেব করে নিতে হবে যে, ঠিক কত সময় পরে কাঙ্ক্ষিত রিটার্নটি তিনি আশা করছেন।
আয়করের উপর প্রভাব
সকল প্রকার সঞ্চয়পত্রের মুনাফা ১০ শতাংশ উৎসে কর কেটে তারপর প্রদান করা হয়। এর সুবাদেই আয়কর জমা দানের সময় মোট আয় থেকে কর রেয়াত পাওয়া যায়।
কিন্তু গত ২০২৩ সাল থেকে এই কর রেয়াত তুলে নেওয়া হয়েছে। নতুন আইন অনুযায়ী সঞ্চয়পত্রের মুনাফা দেওয়ার সময় সেই ১০ শতাংশ উৎসে কর কাটা হবে। সেই সঙ্গে আয়কর দেওয়ার সময় অন্যান্য আয়ের সঙ্গে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা যোগ করে মোট আয়ের উপর কর আরোপ হবে। ফলশ্রুতিতে কর রেয়াত তো থাকছেই না, বরং গুণতে হবে বাড়তি কর। এমন পরিস্থিতি সঞ্চয়পত্রের সুবিধাগুলোর ব্যাপারে নতুন করে ভাবার প্রয়াস যোগায়।
আরও পড়ুন: সুরক্ষা স্কিম: স্ব-নিযুক্ত বা অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মীরা যেভাবে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে রেজিস্ট্রেশন করবেন
মূল্যস্ফীতি
বাজারের সব থেকে আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি হচ্ছে মূল্যস্ফীতি। এর পরিণতিতে ব্যাংকিং অবস্থায় ভারসাম্যহীনতার মাধ্যমে সামগ্রিক অর্থনীতি অস্থিতিশীলতার দিকে এগিয়ে যায়।
২০২০ সাল থেকে ব্যাংকঋণের সুদ ছিলো সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ। কিন্তু ২০২২ সালে একদিকে শুরু হয় ডলার-সংকট, অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি উঠে যায় ১০ শতাংশের কাছাকাছি। ফলে ব্যাংকগুলোতে সুদের হারে শুরু হয় ভারসাম্যহীনতা। এ রকম অসঙ্গতিতে সঞ্চয়পত্রের উপযুক্ততা প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
শেষাংশ
বাজারে উপলব্ধ আর্থিক নিরাপত্তামুলক পণ্যগুলোর মধ্যে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ তুলনামুলক ভাবে ঝুঁকিহীন উপায়। মূল্যস্ফীতির বিচারে সরাসরি সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত এই খাত অধিকাংশ সময় নিজের ইতিবাচক অবস্থান ধরে রাখে। তবে বাজারের আকস্মিক অযাচিত পরিবর্তন ভিন্ন মেয়াদ ও সরকারি বিধিমালা নির্বিশেষে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে সঞ্চয়পত্রের উপর।
যেখানে বিলুপ্তি ঘটতে পারে এর ঐতিহ্যবাহী সুবিধাগুলোর। এমতাবস্থায় অনাকাঙ্ক্ষিত আর্থিক ক্ষতি থেকে বাঁচতে মূখ্য বিষয় হয়ে ওঠে বিনিয়োগের উদ্দেশ্য নিয়ে গবেষণা করা। কারণ দিন শেষে বিনিয়োগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার মূল চাবিকাঠি ব্যক্তির হাতে।
আরও পড়ুন: প্রগতি স্কিম: বেসরকারি চাকরীজীবীরা যেভাবে সর্বজনীন পেনশন স্কিম-এ রেজিস্ট্রেশন করবেন
৪ মাস আগে
বাংলাদেশ সরকারের ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করার পদ্ধতি
সঠিক বিনিয়োগের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে আর্থিক স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা। অর্থের বিচক্ষণ ব্যবহারে অর্জিত হয় সম্পদের বৃদ্ধি, দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক লক্ষ্য এবং মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে সুরক্ষা। এই অর্জনগুলোর নেপথ্যে থাকে গবেষণালব্ধ সিদ্ধান্ত, যা ঝুঁকি হ্রাস এবং সর্বোচ্চ আয় বাড়ানোর মোক্ষম হাতিয়ার। এর মাধ্যমে যেমন বাজারের অবস্থা সম্পর্কে সঠিক বুঝ পাওয়া যায়, তেমনি মূল্যায়ন করা যায় নিজের ঝুঁকি সহনশীলতা। এই পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণের মাধ্যমে একজন বিনিয়োগকারী তার আর্থিক উদ্দেশ্য হাসিলের পথে এগিয়ে যেতে পারেন। স্টক, বন্ড এবং সঞ্চয়পত্রের মতো আর্থিক উপকরণগুলো সময়ের সঙ্গে বিনিয়োগ করা মূলধনের বিপরীতে রিটার্নকে প্রভাবিত করে। চলুন, এগুলোর মধ্যে স্থায়ী আয়ের নিরাপত্তা থাকা বাংলাদেশ সরকারের ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করার পদ্ধতি জেনে মতো যাক।
সরকারি বা ট্রেজারি বন্ড কী
দীর্ঘমেয়াদি এবং স্থায়ী সুদের হারের এই বন্ডটির নাম বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট ট্রেজারি বন্ড বা বিজিটিবি। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক জারি করে এই বন্ড। তাই এটি দেশের প্রধান গভর্নমেন্ট সিকিউরিটিস বা জি-সেক এবং সর্বোচ্চ ঝুঁকিমুক্ত বন্ড।
এই বন্ডের সুবিধাগুলো
- এটি ২, ৫, ১০, ১৫ এবং ২০ বছরের জন্য; তথা দীর্ঘ মেয়াদে জারি করা হয়
- বিনিয়োগকৃত মুলধনের সুদ বা কুপন বছরে ২ বার প্রদান করা হয় এবং মেয়াদপূর্তিতে মূলধন পরিশোধ করা হয়
- নির্দিষ্ট মেয়াদে স্থায়ী সুদের হার বা কুপন রেট নিলাম কমিটির মাধ্যমে নির্ধারিত হয়
- সেকেন্ডারি মার্কেটেও তথা বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কেনাবেচা করা যায়
- বন্ডের জন্য ন্যূনতম ১ লাখ টাকা জমা রাখতে হয়
- এই বিনিয়োগের জন্য বিনিয়োগকারী ব্যক্তি ট্যাক্স রিবেট সুবিধা পান, অর্থাৎ তার আয়করের পরিমাণ কমে আসে।
আরও পড়ুন: স্বর্ণ বনাম হীরা: কোন বিনিয়োগটি বেশি লাভজনক?
কারা এই বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারবেন
বাংলাদেশে নিবাসী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান যেমন-
- ব্যক্তি
- ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান
- বিমা কোম্পানি
- করপোরেট সংস্থা
- প্রভিডেন্ট ফান্ড ও পেনশন ফান্ড
বাংলাদেশে অনিবাসী ব্যক্তি এবং বাংলাদেশের কোনো ব্যাংকে নন-রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি অ্যাকাউন্টধারী কোনো প্রতিষ্ঠান।
আরও পড়ুন: স্মার্ট এনআইডি কার্ডের জন্য অনলাইনে আবেদন করার উপায়
ট্রেজারি বন্ড ও সঞ্চয়পত্রের মধ্যে পার্থক্য
সঞ্চয়পত্র কমপক্ষে ৩ মাস থেকে সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত মেয়াদের জন্য কেনা যায়। কিন্তু ট্রেজারি বা টি-বন্ড জারি করা হয় দীর্ঘ মেয়াদের জন্য, যা কমপক্ষে ২ থেকে সর্বোচ্চ ২০ বছরের হয়ে থাকে।
টি-বন্ডে বিনিয়োগের জন্য ন্যূনতম ১ লাখ টাকা রাখতে হয়। অন্যদিকে সঞ্চয়পত্রের ন্যূনতম বিনিয়োগের কোনো সীমা নেই। ৫ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে ১০ টাকা থেকে শুরু করা যায়।
সঞ্চয়পত্র ১ বছরের আগে যে কোনো সময় নগদায়ন করা বা ভেঙে ফেলা হলে কোনো মুনাফা পাওয়া যায় না বরং অতিরিক্ত ফি দিতে হয়। কিন্তু টি-বন্ড মেয়াদপূর্তির পূর্বে যে কোনো সময় বিক্রিতে কোনো বাধ্য-বাধকতা নেই।
সব ধরনের মেয়াদের টি-বন্ডের মুনাফা বছরে ২ বার দেওয়া হয়। আর বিভিন্ন মেয়াদের সঞ্চয়পত্রের মুনাফা বিতরণের সময় ভিন্ন ভিন্ন এবং খুব কম সময়ে পাওয়া যায়। যেমন পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফা দেওয়া হয় প্রতি মাসেই। এরপর রয়েছে প্রতি ৩ মাসে এবং ৫ বছরে মুনাফা পাওয়ার সুযোগ।
আরও পড়ুন: ১৫০০ কোটি টাকার জিরো কুপন বন্ড ছাড়বে বেক্সিমকো
ট্রেজারি বন্ড কেনার উপায়
সরকারি বন্ডে বিনিয়োগের পদ্ধতি ২টি। একটি নিলামের মাধ্যমে এবং অন্যটি সেকেন্ডারি মার্কেট থেকে।
প্রতি মাসেই টি-বন্ডের প্রাইমারি নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। বার্ষিক নিলাম ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এই নিলামে অংশ নিয়ে বিনিয়োগকারীরা টি-বন্ড কিনতে পারেন। এর জন্য তাদেরকে প্রাথমিক ডিলারদের (পিডি) মাধ্যমে নিলামে অংশ নিতে হয়। কারণ নিলামে শুধুমাত্র পিডিদেরই নিলামে বিড জমা দেওয়ার অনুমতি রয়েছে। এই পিডি সাধারণত ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজগুলোর মতো বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো হয়ে থাকে।
দ্বিতীয়ত, সেকেন্ডারি মার্কেট থেকে সাধারণ পণ্য কেনাবেচার মতো যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সরাসরি টি-বন্ড ক্রয় করতে পারেন। তবে সব ব্যাংকেই সরকারি বন্ড বিক্রির অনুমতি নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত ডিলার ব্যাংকগুলোই শুধু এই বন্ড বিক্রি করতে পারে।
চলুন, টি-বন্ড কেনার এই উপায় দুটি এবার বিস্তারিত দেখে মতো যাক।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ খাতের পাওনা পরিশোধে ৫৬৬৫ কোটি টাকার বন্ড ইস্যুতে সম্মত ২৪ ব্যাংক
প্রাথমিক নিলাম থেকে ট্রেজারি বন্ড ক্রয়
প্রাথমিক নিলামের মাধ্যমে টি-বন্ডে বিনিয়োগ করতে হলে বিনিয়োগকারীদের নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করতে হয়:
- প্রথমেই বিনিয়োগকারী তার হয়ে প্রাথমিক নিলামে অংশগ্রহণের জন্য পিডিকে অনুমোদন দেন। এর জন্য বন্ডের টাকার পরিমাণ, মেয়াদ, সুদের হার এবং নিলামের তারিখ উল্লেখ করে বিনিয়োগকারীকে পিডি বরাবর একটি লিখিত নির্দেশনা পাঠাতে হয়। সাধারণত প্রতি সপ্তাহের মঙ্গলবার এই নিলাম হয়ে থাকে। বার্ষিক নিলাম ক্যালেন্ডারের লিংক- https://www.bb.org.bd/en/index.php/monetaryactivity/auc_calendar
লিখিত অনুমোদনের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীর পক্ষ হয়ে পিডি প্রাথমিক নিলামে বিড করতে পারে। এই নির্দেশনা নিলামের একদিন আগে পিডির কাছে পাঠাতে হয়।
- পরবর্তী বিভিন্ন লেনদেন নিরবচ্ছিন্নভাবে সম্পন্ন করার জন্য বিনিয়োগকারীকে পিডি-এর অধীনে একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়। ব্যাংকের ক্ষেত্রে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এটি পিডি অ্যাকাউন্ট নামে গণ্য হয়। আর শেয়ার মার্কেটের ক্ষেত্রে ব্রোকারেজ হাউজের অধীনে খোলা অ্যাকাউন্টকে বেনেফিশারি ওনার বা বিও অ্যাকাউন্ট বলা হয়।
- বন্ডের টাকা নিলামের আগের দিন দুপুর ১২টার আগে পিডির কাছে জমা করতে হয়। বন্ডের অর্থ যে মাধ্যমেই পাঠানো হোক না কেন তা অবশ্যই উক্ত সময়ে পিডির কাছে থাকতে হয়।
- নিলামের তারিখের দিন শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিড ফলাফল প্রকাশ করে। অতঃপর বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শের ভিত্তিতে বিনিয়োগকারীদেরকে পিডি সেই বন্ডের জন্য একটি বরাদ্দপত্র প্রদান করে।
আরও পড়ুন: আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার পদ্ধতি
সেকেন্ডারি মার্কেট থেকে ট্রেজারি বন্ড ক্রয়
এ পদ্ধতিতে বন্ড কেনার জন্য বিনিয়োগকারীকে যে পদক্ষেপগুলোর ভেতর দিয়ে যেতে হয়, তা হলো:
- প্রথমে বিনিয়োগকারী নিজের জন্য উপযুক্ত সুদের হার ও মেয়াদ সম্পন্ন টি-বন্ড নির্বাচন করে তা পিডিকে জানাবে। অতঃপর পিডি ও বিনিয়োগকারী উভয় পার্টি বন্ডের মূল্য, মেয়াদ এবং পরিমাণের বিষয়ে সম্মতো হবেন।
- পিডি বন্ডের সমস্ত প্রয়োজনীয় বিবরণ উল্লেখ করে বিনিয়োগকারীর কাছে একটি চুক্তি নিশ্চিতকরণ পাঠাবে।
- বিনিয়োগকারী বন্ড ক্রয়ের মূল্যের সমপরিমাণ তহবিল পিডির অ্যাকাউন্টে জমা করবেন।
- তহবিল নিশ্চিতকরণের পর পিডি বিনিয়োগকারীর অ্যাকাউন্টে বন্ড স্থানান্তর করবে।
আরও পড়ুন: অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যম: বৈধভাবে টাকা কোথায় বিনিয়োগ করবেন?
সরকারি ট্রেজারি বন্ডের লাভ-ক্ষতি হিসাব পদ্ধতি
সুদ বা কুপন অথবা মূলধনী লাভ বা ক্ষতি- এই দুই পদ্ধতিতে বন্ডের লাভ-ক্ষতি হিসাব হয়।
টি-বন্ডে সুদের হার বা কুপন রেট নির্দিষ্ট মেয়াদকালের মধ্যে ঐ বন্ডের জন্য আর পরিবর্তন হয় না। অর্থাৎ ১০ শতাংশ কুপন রেটে ১ লক্ষ টাকা ১০ বছর ধরে রাখা হলে প্রতি বছর ১০ হাজার টাকা করে ১০ বছরে মোট ১ লাখ টাকা পাওয়া যাবে।
মূলধনী লাভ বা ক্ষতি মুলত বন্ডটি কত দিন ধরে রাখা হচ্ছে তার উপর নির্ভর করে। বন্ডটি কেনার পর থেকে যদি মেয়াদপূর্তি পর্যন্ত ধরে রাখা হয়, তাহলে এতে কোনো লাভ বা ক্ষতি নেই। কিন্তু মেয়াদপূর্তির আগেই বন্ড বিক্রি করলে লাভ কিংবা ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
খুব সহজ হিসাব- যদি ক্রয়মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করা যায় তাহলে মূলধনী লাভ। আর বন্ড কেনার সময়ের দাম থেকে বিক্রির সময় কম দাম পেলে ক্ষতি।
এই মূলধনী লাভ বা ক্ষতির সঙ্গে মোট সুদের পরিমাণ একত্রিত করে বন্ডের মোট লাভ বা ক্ষতি নির্ধারণ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, ১০ শতাংশ কুপন রেটের বন্ডে ১ লক্ষ টাকা ১০ বছরের জন্য বিনিয়োয়োগ করেছেন এবং ৩ বছরে ৩০ হাজার টাকা সুদ পেয়েছেন। ৩ বছর মেয়াদপূর্তির পর আপনি বন্ডটি ১ লাখ ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করে ফেলেছেন যার হলে আপনার ১০ হাজার টাকা মূলধনী লাভ হয়েছে। এখন ৩ বছরে এই বন্ড থেকে আপনার মোট লাভের পরিমান দাঁড়ালো (৩০ হাজার + ১০ হাজার) টাকা অর্থাৎ ৪০ হাজার টাকা।
অন্যথায়, ৩ বছর মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর বন্ডটি ৯৬ হাজার টাকায় ছেড়ে দিলে মূলধনী ক্ষতির পরিমাণ দাড়াচ্ছে ৪ হাজার টাকা। তখন বন্ড থেকে মোট লাভ হচ্ছে (৩০ হাজার - ৪ হাজার) টাকা তথা ২৬ হাজার টাকা।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে বৈধভাবে রেমিটেন্স পাঠানোর সেরা কয়েকটি মাধ্যম: বিদেশ থেকে টাকা পাঠাবেন যেভাবে
বাংলাদেশ সরকারের ট্রেজারি বন্ড কেনার সময় যে বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ
বাজারের বন্ডের সুদের হার
সরকারি বন্ডের কুপন হারের সঙ্গে বাজারের প্রচলিত অন্যান্য বন্ডে সুদের হার তুলনা করা জরুরি। যদি বাজারের হার বাড়তে থাকে, তাহলে নিশ্চিন্তে দীর্ঘমেয়াদি টি-বন্ড বেছে নেয়া যেতে পারে। কিন্তু হার যদি কমার দিকে থাকে, তাহলে নিরাপদ অবস্থায় থাকার জন্য স্বল্পমেয়াদী টি-বন্ড বেছে মতোই উত্তম।
বিনিয়োগের উদ্দেশ্য ও ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতা
বিনিয়োগকারীকে সর্বপ্রথম ঠিক করতে হবে আসলে তিনি কি উদ্দেশ্যে বিনিয়োগটি করতে চাচ্ছেন। এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে যে, ঠিক কত দ্রুত বন্ডটির নগদায়ন তার দরকার। এভাবে বন্ডের তারল্য বিবেচনা করে একটি উপযুক্ত মেয়াদের বন্ড বাছাই করা উচিৎ। সাধারণত স্বল্পমেয়াদি বন্ডগুলো থেকে দ্রুত অর্থ প্রাপ্তির সম্ভাবনা থাকে।
আর দীর্ঘ মেয়াদে পাওয়া যায় বেশি রিটার্ন। তাই এখানে উদ্দেশ্যটা নির্ধারণ করা জরুরি। যেমন অনেকে সন্তানের শিক্ষার জন্য ১০ বছরের বন্ড কিনে থাকেন। এ থেকে ১০ বছর পরে তাদের সন্তানের শিক্ষার জন্য নির্দিষ্ট কোন কার্যক্রমের জন্য বিরাট অঙ্কের সাহায্য পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন: ট্রেড লাইসেন্স করার পদ্ধতি: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, খরচ ও সময়
মুদ্রাস্ফীতির হার
বন্ডের সুদের হার নির্বাচন করার সময় মুদ্রাস্ফীতির হিসেব করাটা আবশ্যক। যদিও টি-বন্ডের কুপন রেট অন্যান্য বন্ড থেকে বেশি, কিন্তু অযাচিত মুদ্রাস্ফীতি এই বন্ডের সুবিধাকেও পেছনে ফেলতে পারে।
যেমন মুদ্রাস্ফীতি যদি ৯ শতাংশ হয়, তাহলে ৪ বছর আগের ৮ শতাংশ বন্ড থেকে এখন আর লাভজনক রিটার্ন পাওয়া যাবে না। সুদের হার কমপক্ষে ১০ শতাংশ হলে এই বিনিয়োগটি উপযুক্ত হবে।
শেষাংশ
সরকারের কর্তৃত্ব থাকায় আর্থিক নিরাপত্তা পণ্যের বাজারে অন্যান্য বন্ড থেকে ট্রেজারি বন্ডে ঝুঁকি কম। সেই সঙ্গে কাঙ্ক্ষিত কুপন রেট এবং ট্যাক্স রিবেট সুবিধা বিনিয়োগের নির্ভরযোগ্য পছন্দে পরিণত করেছে এই সরকারি বন্ডকে। ক্রমান্বয়ে ব্যাংকিং ব্যবস্থার সংযোগ এবং পদ্ধতিগত উন্নতি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য সহজতর করেছে এই বিনিয়োগের মাধ্যমকে।
এরপরেও উপযুক্ত সুদের হার ও মেয়াদ নির্বাচনে তুলনামুলক গবেষণা প্রয়োজন। কেননা বিনিয়োগের উদ্দেশ্য ও ঝুঁকি গ্রহণের প্রবণতা একেক ব্যক্তির মাঝে একেক রকম। তাছাড়া বাজারের আকস্মিক পরিবর্তন উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে মুলধন থেকে প্রাপ্ত লাভের উপর। তাই একটি নিরবচ্ছিন্ন আয় পাওয়ার স্বার্থে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কেও অবগত থাকা জরুরি।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে
৫ মাস আগে
পোশাক শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধের জন্য ৫, ৬ ও ৭ এপ্রিল খোলা থাকবে ব্যাংক
পোশাক শ্রমিকদের বেতন, ঈদ বোনাস, ভাতা ও রপ্তানি বিল পরিশোধের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় ৫, ৬ ও ৭ এপ্রিল তফসিলি ব্যাংকের শাখা খোলা রাখার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
রবিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপারভিশন (ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপারভিশন) এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের কাছে পাঠিয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সীমিত আকারে ব্যাংক খোলা থাকবে।
এতে ঢাকা মহানগরী, আশুলিয়া, টঙ্গী, গাজীপুর, সাভার, ভালুকা ও নারায়ণগঞ্জ এবং চট্টগ্রামে অবস্থিত ব্যাংকের শিল্প সংশ্লিষ্ট শাখাসমূহে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ঈদের আগেই পোশাক শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দাবি
গাজীপুরে সরকার নির্ধারিত মজুরির দাবিতে পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ
৬ মাস আগে
ডলার সংকটে সৌদি আরবের কাছে মূল্য পরিশোধের বাড়তি সময় চেয়েছে বাংলাদেশ: সালমান এফ রহমান
সম্প্রতি সৌদি আরব সফরকালে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান বাংলাদেশের ডলার সংকটে মূল্য পরিশোধের বাড়তি সময় চান।
সৌদি আরব থেকে জ্বালানি আমদানির জন্য দীর্ঘ সময়ে অর্থ প্রদানের সুবিধার্থে এই অনুরোধটি করা হয়।
দেশে ফেরার পর মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ৩ দিনের সফরের চিত্র তুলে ধরেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে সৌদি আরব থেকে জ্বালানি আমদানির অর্থ পরিশোধের জন্য আমাদের ৪৫ দিনের সময়সীমা রয়েছে। ডলারের ঘাটতি বিবেচনায় এটি এক বছর পর্যন্ত বাড়ানো আমাদের জন্য বেশ সুবিধাজনক হবে। সৌদি কর্মকর্তারা এই প্রস্তাব বিবেচনায় নিতে সম্মত হয়েছেন।’
আরও পড়ুন: রমজানে নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে না: সালমান এফ রহমান
রহমান ইসলামিক মিলিটারি কাউন্টার টেরোরিজম কোয়ালিশনের (আইএমসিটিসি) বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের দৃঢ় অবস্থান ও এ জাতীয় কাজকে ন্যায্যতা দেওয়ার ক্ষেত্রে ইসলামের অপব্যবহারের বিষয় উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসের কোনো ধর্ম নেই এবং আইএমসিটিসির মাধ্যমে ইসলামী দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করে আমরা সন্ত্রাসবাদের দ্বারা ইসলামের অবমাননার বিরুদ্ধে লড়াই করার লক্ষ্য রাখছি।’
উপদেষ্টা গাজায় চলমান সংকটের সর্বসম্মত নিন্দার পাশাপাশি অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে সাক্ষাতের মাধ্যমে সমাধানের জন্য একটি সম্মিলিত আহ্বানের কথা তুলে ধরেন। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দুর্দশার বিষয়টিও সমাধান করার অঙ্গীকার করা হয়।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে রহমান বাংলাদেশে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় সৌদি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের কথা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সৌদি আরবকে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল বরাদ্দ দিতে আগ্রহী। তাদের বিনিয়োগমন্ত্রী এই প্রকল্প নিয়ে উৎসাহ দেখিয়েছেন।’
আরও পড়ুন: সালমান এফ রহমান আবারও বিজয়ী
৮ মাস আগে
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে
জানুয়ারি শেষে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের নিচে নেমে এসেছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্যে উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী ৩১ জানুয়ারি দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার। যা গত ৩১ ডিসেম্বর ছিল ১৭ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, জানুয়ারি শেষে দেশের মোট রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৫ দশমিক ০৯ বিলিয়ন ডলার।
আইএমএফের ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট পজিশন ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে করা হিসাব অনুযায়ী রিজার্ভ তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবহারযোগ্য, অন্যদিকে বিনিয়োগের আদায় সাপেক্ষে মোট রিজার্ভও ব্যবহারযোগ্য।
বাংলাদেশের মতো একটি ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির জন্য ছয় মাসের আমদানি ব্যয়ের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যথেষ্ট বলে মনে করা হয়।
তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, বিদ্যমান রিজার্ভ দিয়ে বাংলাদেশ প্রায় চার মাসের আমদানি বিল পরিশোধ করতে সক্ষম হবে।
২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
দেশের সঙ্কুচিত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানোর লক্ষ্যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিদেশে অবস্থানরত ও কর্মরত লাখ লাখ বাংলাদেশি প্রবাসীর কাছ থেকে আরও বেশি রেমিট্যান্স আকৃষ্ট করতে রেমিট্যান্স পাঠানোর নিয়ম বা বিধি শিথিলসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
৮ মাস আগে