ব্যবসা-বাণিজ্য-বিশ্লেষণ
ই-রিটার্ন: অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করবেন যেভাবে
বিগত করবর্ষের ন্যায় এবারও যথারীতি অনলাইনে ই-রিটার্ন দাখিলের সুবিধা থাকছে। দেশের যেসকল নাগরিকের টিআইএন (ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার) নম্বর আছে, তারা এই সুযোগটি নিতে পারবেন। সুতরাং নথিকরণ, ভিড় এবং সময় ক্ষেপণের বিড়ম্বনা এড়িয়ে এবারও ঘরে বসেই আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া যাবে। সদ্য টিনপ্রাপ্ত থেকে শুরু করে দীর্ঘ দিন যাবত আয়কর প্রদানকারী সব পেশার মানুষকে একটি নির্ভরযোগ্য প্লাটফর্মের আওতাভুক্ত করেছে এই ইলেক্ট্রনিক পরিষেবা। প্রত্যেক ব্যবহারকারীর জন্য পৃথক অ্যাকাউন্ট বা প্রোফাইলের ব্যবস্থা থাকায় প্রতিবার বিগত বছরের হিসেব নিয়ে ঝামেলায় পড়তে হয় না। চলুন, এই পরিষেবাটি ব্যবহারের পূর্বশর্ত এবং পদ্ধতি সম্বন্ধে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
ই-রিটার্ন দাখিলের জন্য কি কি প্রয়োজন
এনবিআর (ন্যাশনাল বোর্ড অফ রেভেনিউ)-এর ইলেক্ট্রনিক ট্যাক্স রিটার্ন সিস্টেমটি ব্যবহারের জন্য দরকার হবে একটি বায়োমেট্রিক করা মোবাইল নাম্বার এবং ই-টিন নম্বর। এখানে মূলত মোবাইল নাম্বারটি জাতীয় পরিচয় পত্র বা এনআইডি কার্ডের সঙ্গে যুক্ত আছে কিনা তা যাচাই করা হয়।
বায়োমেট্রিক যাচাইয়ের জন্য মোবাইল থেকে *১৬০০১# নাম্বারে ডায়াল করতে হবে। এরপরের কাজ হলো এনআইডির সর্বশেষ চারটি সংখ্যা উল্লেখ করে সেন্ড করা। এর কিছুক্ষণ পরেই মোবাইলে ম্যাসেজের মাধ্যমে উল্লেখিত এনআইডি নাম্বারের সঙ্গে সংযুক্ত ফোন নাম্বারগুলোর তালিকা পাঠানো হবে। এই নাম্বারগুলো প্রত্যেকটি বায়োমেট্রিক করা। অন্যথায় এই তালিকা সম্বলিত ম্যাসেজটি আসবে না।
আরো পড়ুন: আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার পদ্ধতি
ই-রিটার্নের সঙ্গে সংযুক্তি হিসেবে আলাদা করে কোনো কাগজপত্র দিতে হয় না। কেবল প্রয়োজনীয় তথ্যাবলি নির্ভুলভাবে দিতে হয়। তবে তথ্যের ত্রুটিহীনতা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট নথিপত্র সঙ্গে থাকা আবশ্যক। তাছাড়া কর অফিস থেকে যাচাইয়ের ক্ষেত্রে প্রতিটি তথ্য-প্রমাণ যেন দেখানো যায় তার জন্যও কাগজপত্র আগে থেকেই প্রস্তুত রাখা বাঞ্ছনীয়।
অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার পদ্ধতি
.
ই-ট্যাক্স এনবিআর সাইটে নিবন্ধন
প্রথমেই সরাসরি চলে যেতে হবে এনবিআর-এর ই-রিটার্ন ওয়েবসাইটে (https://etaxnbr.gov.bd/)। এখানে প্রদত্ত পরিষেবাগুলো থেকে ‘ই-রিটার্ন’ অপশনে গেলে একটি নতুন উইন্ডো আসবে, যেখানে সাইটটিতে নিবন্ধন করা আছে কিনা- তা জানতে চাওয়া হবে।
এখানে ‘আই অ্যাম নট ইয়েট রেজিস্টার্ড’ বাটনে ক্লিক করা হলে নিবন্ধন পেজে নিয়ে যাওয়া হবে।
এই সাইনআপ পেজে ১২ সংখ্যার টিন নাম্বার,বায়োমেট্রিক করা মোবাইল নাম্বার এবং ক্যাপচা সঠিকভাবে পূরণ করে ‘ভেরিফাই’তে ক্লিক করতে হবে।
এরপর উল্লেখিত ফোন নাম্বারে ম্যাসেজের মাধ্যমে ছয় অংকের একটি ওটিপি কোড আসবে। এটি সাইনআপ পেজের নির্দিষ্ট স্থানে বসিয়ে পরপর দুইবার একটি নতুন পাসওয়ার্ড সরবরাহ করতে হবে।
এখানে উল্লেখ্য যে,পাসওয়ার্ডটি অবশ্যই আলফানিউমেরিক তথা অঙ্ক,অক্ষর ও বিভিন্ন চিহ্ন সম্বলিত হতে হবে। সহজ বা ছোট পাসওয়ার্ড গ্রহণযোগ্য নয়। বিধায় নিবন্ধন প্রক্রিয়া সামনের দিকে অগ্রসর হবে না। শক্তিশালী পাসওয়ার্ড দিয়ে সাবমিট করার সঙ্গে সঙ্গেই ই-রিটার্ন অ্যাকাউন্ট তৈরি হয়ে যাবে।
এখানে মনে রাখতে হবে যে,ই-টিন যেহেতু এনআইডি দিয়ে করা হয় তাই এই সিস্টেমে দেওয়া নাম এবং মোবাইল নাম্বারের সঙ্গে বায়োমেট্রিক করা ব্যক্তির নাম একই হতে হবে। অর্থাৎ একজ ন ব্যক্তি তার নিজের বায়োমেট্রিক ভেরিফাই করা ফোন নাম্বার দিয়ে অ্যাকাউন্ট তৈরি করে তা থেকে অন্যজনের রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন না।
নিবন্ধনের পর এবার সেই টিন নাম্বার,পাসওয়ার্ড ও নতুন ক্যাপচা পূরণ করে সাইন ইন করলে ই-রিটার্ন ড্যাশবোর্ডটি দেখা যাবে।
আরো পড়ুন: সঞ্চয়পত্রে যেভাবে বিনিয়োগ করবেন
রিটার্ন জমার ক্যাটাগরি নির্বাচন
ড্যাশবোর্ডে বাম পাশের মেনু বারে ‘সাবমিশন’ মেনুতে রয়েছে দুই ধরনের রিটার্ন পেজ। একটি সিঙ্গেল পেজ ও অপরটি রেগুলার রিটার্ন পেজ।
সিঙ্গেল পেজ রিটার্ন
প্রধানত ৭টি শর্ত পূরণ সাপেক্ষে এক পেজ-এ রিটার্ন জমা দেওয়া যেতে পারে। সেগুলো হলো:
• বার্ষিক করযোগ্য আয় অনূর্ধ্ব পাঁচ লাখ টাকা
• সঞ্চিত সম্পদের পরিমাণ ৫০ লক্ষ টাকার কম
• গণকর্মচারী নন
• মোটরগাড়ির মালিকানা নেই
• সিটি করপোরেশনে কোনো বাড়ির মালিকানা নেই
• বিদেশে কোনো পরিসম্পদ নেই
• কোনো কোম্পানির শেয়ার নেই
এই মাধ্যমে এক পেজের মধ্যেই রিটার্নের যাবতীয় তথ্যাদির খসড়া করা যায়। এর মধ্যে থাকে আয়ের উৎস,মোট আয়,জীবনযাপন ব্যয়,সামগ্রিক পরিসম্পদ,আরোপযোগ্য কর,কর রেয়াত,উৎসে কর্তিত কর, প্রদেয় কর এবং রিটার্নের সঙ্গে দেওয়া কর।
সব তথ্য প্রদান শেষে পেজটি ড্রাফট হিসেবে রাখা যায়,আবার ‘সাবমিট’ বাটনে ক্লিক করে সঙ্গে সঙ্গেই অনলাইন জমা সম্পন্ন করা যায়।
আরো পড়ুন: বন্ডে বিনিয়োগের আগে যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখা জরুরি
রেগুলার ই- রিটার্ন
উপরোক্ত ৭ শর্তের বাইরে থাকা প্রত্যেক ব্যক্তিকেই এই বিস্তারিত রিটার্ন পদ্ধতিতে অগ্রসর হতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় কর যাচাই, আয়-ব্যয়,বিনিয়োগ,সম্পদ,ঋণ এবং কর রেয়াতের মতো সনাতন পদ্ধতির বিষয়গুলো বিস্তারিত তথ্যের জন্য পৃথক স্ক্রিনে দেখানো হবে।
কর যাচাইয়ের তথ্য
এ অংশে প্রথমেই রিটার্ন স্কিম ঘরে সেল্ফ,এসেস্মেন্ট বর্ষ ও ইনকাম বর্ষের ঘরে সাল ও তারিখ পূর্ব নির্ধারিত থাকবে। আয় করমুক্ত হলে আয়ের পরিমাণের পাশাপাশি ‘রেসিডেন্ট স্ট্যাটাস’ উল্লেখ করে দিতে হবে।
ডানপাশের হেডস অব ইনকামের নিচে যে অপশনগুলো রিটার্নদাতার জন্য প্রযোজ্য শুধুমাত্র সেগুলোতেই তিনি টিক দেবেন। এই হেডগুলোর মাধ্যমে ব্যক্তির আয়ের উৎস বা খাত নির্ধারিত হয় এবং সে অনুসারে পরের স্ক্রিণগুলো ভিন্ন হয়ে থাকে।
পরবর্তী ধাপে যাওয়ার জন্য একদম নিচের দিকে রয়েছে ‘সেভ অ্যান্ড কন্টিনিউ’ বাটন।
আরো পড়ুন: ২০২৪ সালে পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান ১০ মুদ্রা
অতিরিক্ত তথ্য
পূর্বের স্ক্রিণে প্রদত্ত তথ্যে জের ধরে এখানে যাচাইকরণের জন্য আরও বিস্তারিত তথ্য দিতে হয়। যেমন- কাজের স্থান,মুক্তিযোদ্ধা বা প্রতিবন্ধী কিংবা অন্য প্রতিবন্ধীর আইনি অভিভাবক কিনা, বিনিয়োগের জন্য কর রেয়াত,কোনো কোম্পানির শেয়ার আছে কিনা,মোটরগাড়ি বা সিটি করপোরেশনে নিজস্ব বাড়ি ইত্যাদি।
আইটি১০বি
এই সেকশনটির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে আইটি১০বি। যাবতীয় সম্পদের পরিমাণ যদি ৪০ লাখ টাকা বা তার বেশি হয় সেক্ষেত্রে এই হেডটিতে টিক মার্ক দিতে হবে। প্রদত্ত পরিমাণ সম্পদ না থাকলে আর এই অপশনে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে এক্ষেত্রে ব্যক্তির পরিবারের বার্ষিক খরচের হিসেব অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।
এরপর ‘সেভ অ্যান্ড কন্টিনিউ’ দিয়ে পরবর্তী ধাপে যাওয়ার পর একে একে এসেস্মেন্ট,ইনকাম,এক্সপেনডিচার,এসেট্স অ্যান্ড লায়াবিলিটিস এবং ট্যাক্স অ্যান্ড পেমেন্ট ট্যাবগুলোর ভিন্ন ভিন্ন পেজগুলো আসবে।
আরো পড়ুন: ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডে প্রবাসী বাংলাদেশিরা যেভাবে বিনিয়োগ করবেন
আয়ের বিস্তারিত বিবরণ
এখানে রয়েছে বৈদেশিক আয় বা কর-অব্যাহতি এবং বেতন বা করযোগ্য বিনিয়োগ ছাড়া অন্যান্য উৎস থেকে আয়।
‘এনি আদার ইনকাম’ অপশনে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বিস্তারিত তথ্যসহ অন্যান্য আয়ের উৎস এবং সংশ্লিষ্ট ব্যয়ের হিসেব যুক্ত হবে। এই তথ্যগুলো নেট আয়ের হিসাবে যুক্ত হবে।
ব্যয়ের খাত
এই বিভাগটিতে সারা কর বছরে মোট আয়ের বিপরীতে প্রতিটি ব্যয়কে একত্রিত করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে গৃহস্থালি ও ইউটিলিটিসহ বাসস্থান, খাদ্য, পোশাক, পরিবহন, বাচ্চাদের স্কুল খরচ এবং অন্যান্য বিবিধ ব্যয়।
সম্পদ, ঋণ ও বিনিয়োগ খাত
এখানে যুক্ত হবে বিমা, ডিপোজিট প্রিমিয়াম সার্ভিস, সঞ্চয়পত্র, প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং স্টক বা শেয়ারসহ যাবতীয় বিনিয়োগগুলো। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে প্রত্যেকটি অপশনের সংশ্লিষ্ট স্থানগুলোতে রয়েছে স্পষ্ট ও বিস্তারিত তথ্য প্রদানের জায়গা।
কর ও পরিশোধ
সামগ্রিক রিটার্নে কোনো করযোগ্য আয় বা বকেয়া অথবা অগ্রিম কর থাকলে তার স্বয়ংক্রিয় হিসাব হবে এই অংশে। উৎসে কর্তনকৃত কর এবং অগ্রিম কর প্রদান করা হলে তা নেট হিসেবে বাদ যাবে। আয়ের উপর কোনো কর বকেয়া বা ধার্য না হলে প্রদেয় করের পরিমাণ শূন্য হবে আর এভাবে প্রদান করা রিটার্ন ‘শূন্য রিটার্ন’ নামে পরিচিত।
আরো পড়ুন: পুরনো স্বর্ণ বিক্রির সময় যে কারণে দাম কেটে রাখা হয়
যাবতীয় ডেটা সরবরাহের পর ট্যাক্স পেমেন্ট স্ট্যাটাসে ক্লিক করলে কর হিসাবের একটি সারাংশ দেখানো হবে। অতঃপর কোনো করযোগ্য পরিমাণ উল্লেখ থাকলে এবার তা পরিশোধের পালা।
এর জন্য ‘পে নাউ’ বাটনে ক্লিক করলে অর্থপ্রদানের জন্য কার্ড, অনলাইন ব্যাংকিং এবং মোবাইল ব্যাংকিং-এই তিনটি অপশন প্রদর্শিত হবে। এগুলোর যেকোনোটি নির্বাচন করে অনায়াসে নেট করটি তাৎক্ষণিকভাবে পরিশোধ করা যাবে।
ই-রিটার্ন সনদ সংগ্রহ
রিটার্ন জমা দেওয়ার পর কর প্রদানের রশিদ ও রিটার্ন সনদসহ প্রত্যেকটি ট্যাক্স রেকর্ড সঙ্গে সঙ্গেই প্রস্তুত হয়ে যাবে। এই গুরুত্বপূর্ণ নথিগুলো যেকোনো সময় বিভিন্ন প্রয়োজনে এখান থেকে ডাউনলোড এবং প্রিন্ট করে কাজে লাগানো যাবে।
এতক্ষণ ধরে যে যে তথ্য দেওয়া হয়েছে তার সবগুলো সহ পুরো রিটার্নটি অ্যাকাউন্টে নিরাপদে সংরক্ষিত অবস্থায় থেকে যায়। এতে করে পরের বছরে নতুন করে পুরোনো হিসাব নিয়ে চিন্তায় পড়তে হয় না।
আরো পড়ুন: সঞ্চয়পত্রের সঙ্গে সংযুক্ত ব্যাংক পরিবর্তন করে অন্য ব্যাংকে স্থানান্তরের উপায়
শেষাংশ
অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের এই পদ্ধতি পুরোনো নথিকরণ এবং জটিল হিসেব-নিকেশের বিড়ম্বনা অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে। তবে ই-ট্যাক্স এনবিআর সাইটে তথ্য প্রদানের পূর্বে অবশ্যই রিটার্নের সঙ্গে সম্পর্কিত প্রতিটি কাগজপত্র যোগাড় করে রাখা উচিত। ই-রিটার্নের সঙ্গে কোনো কাগজ জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা না থাকলেও তথ্য পূরণে ত্রুটিহীনতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সেগুলো সঙ্গে রাখা জরুরি। অ্যাকাউন্ট খোলা এবং তা যেকোনো সময় ব্যবহারের ক্ষেত্রে বায়োমেট্রিক ভেরিফাইড ফোন নম্বর অপরিবর্তিত রাখার কোনো বিকল্প নেই। প্রদান করা প্রতিটি তথ্য এই অ্যাকাউন্টে সংরক্ষিত থাকে ফলে পরের বছরে জমা দেওয়ার সময় রিটার্নের তথ্যে সামঞ্জস্যতা রাখা যায়।
আরো পড়ুন: সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষে নগদায়ন বা পুনরায় চালু করার উপায়
৩ সপ্তাহ আগে
সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষে নগদায়ন বা পুনরায় চালু করার উপায়
দীর্ঘমেয়াদি উপযুক্ত লাভসহ আর্থিক সঞ্চয়ের একটি নির্ভরযোগ্য উপায় হলো সঞ্চয়পত্র। বিভিন্ন কিস্তিতে এর মুনাফা লাভের পাশাপাশি, মেয়াদ পূর্ণ হলে ফিরতি মূলধন নানা আর্থিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সহায়ক হয়। অপরদিকে, অনেকেই সঞ্চয়পত্র নবায়নের মাধ্যমে সঞ্চয় বৃদ্ধি এবং মুনাফাপ্রাপ্তির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেন। উভয় ক্ষেত্রেই পদ্ধতিগত বিষয়গুলো মূলত ইস্যুকারী কর্তৃপক্ষ তথা সরকার এবং সঞ্চয়পত্রটি যে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রদান করা হচ্ছে, তার উপর নির্ভর করে। চলুন, মেয়াদ শেষে সঞ্চয়পত্রের নগদায়ন বা নবায়নেরর পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নিই।
সঞ্চয়পত্র নগদায়নের উপায়
প্রদানকারী ব্যাংকের ওপর নির্ভর করে মেয়াদ শেষে সঞ্চয়পত্রের নগদায়নে সাধারণত ২ থেকে ৩ কার্যদিবস সময় লাগে। কিছু ব্যাংকের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া কিছুটা বেশি সময় নিতে পারে।
নগদায়নের জন্য প্রতিটি ব্যাংকের নিজস্ব ফরম রয়েছে। টাকা উত্তোলনের জন্য প্রথমে ওই ফরমটি পূরণ করতে হবে। এরপর, ফরমে স্বহস্তে সই করে সেটি সঞ্চয়পত্র কেনা ব্যাংকের শাখায় জমা দিতে হবে।
আরো পড়ুন: পুরনো স্বর্ণ বিক্রির সময় যে কারণে দাম কেটে রাখা হয়
যদি ক্রেতা সশরীরে ব্যাংকে উপস্থিত হতে বা সই করতে অপারগ হন, তবে তার নমিনি নগদায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবেন। তবে এই ক্ষেত্রে, ক্রেতার শারীরিক অবস্থার প্রমাণ হিসেবে চিকিৎসকের সনদ দেখাতে হবে।
এছাড়া, নমিনির বাইরে বিনিয়োগকারীর মনোনীত ব্যক্তি শুধু মুনাফার অর্থই নগদে উত্তোলন করতে পারবেন। তবে এজন্য সঞ্চয়পত্রের ক্রেতা বা মালিকের পক্ষ থেকে লিখিত অনুমতিপত্র এবং মুনাফা কুপনের ছাড়পত্র দিতে হবে। সঞ্চয়পত্রের আসল অর্থ কোনোভাবেই অনুমতিপত্র বা অথরাইজেশন লেটারের মাধ্যমে উত্তোলন করা যায় না।
তবে, অনলাইন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়াগুলোর প্রয়োজন হয় না। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, জাতীয় সঞ্চয় স্কিমের অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম থেকে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের মূলধন মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার দিনই গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে জমা হবে। এমনকি মুনাফাগুলোও কিস্তি অনুযায়ী সঠিক সময়ে গ্রাহকের কাছে পৌঁছে যাবে। এই সমস্ত লেনদেনের জন্য ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি) সিস্টেম ব্যবহৃত হবে। এর ফলে, বিনিয়োগকারী বা তার মনোনীত ব্যক্তিকে মুনাফা বা মূলধন উত্তোলনের জন্য ব্যাংকে যেতে হবে না।
আরো পড়ুন: সঞ্চয়পত্রে যেভাবে বিনিয়োগ করবেন
সঞ্চয়পত্র পুনরায় চালু করার পদ্ধতি
নতুন পদ্ধতিতে স্বয়ংক্রিয়করণ ব্যবস্থা থাকায় নথিপত্র সংক্রান্ত জটিলতাগুলো দূর হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসারে সঞ্চয়পত্র রিনিউ পদ্ধতির পরিবর্তনগুলো নিম্নরূপ:
* পরিবার সঞ্চয়পত্র, ৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, এবং পেনশনার সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে শুধু বিনিয়োগকৃত আসল অর্থ স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনরায় বিনিয়োগ হবে।* ৫ বছর মেয়াদি এবং ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে মুনাফাসহ আসল অর্থ স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনরায় বিনিয়োগ হবে।* এই নবায়নের ক্ষেত্রে পুনঃবিনিয়োগের তারিখ থেকে বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা অনুসরণ করা হবে।* পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মুনাফা ত্রৈমাসিকের বদলে প্রতি মাসে প্রদান করা হবে।
আরো পড়ুন: বাংলাদেশ সরকারের ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করার পদ্ধতি
শেষাংশ
সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষে নগদীকরণ অথবা নবায়নের সাম্প্রতিক অগ্রগতিগুলো বিনিয়োগকারীদের সিদ্ধান্তে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষত, সেভিংস স্কিমের অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম পুরোদমে সক্রিয় হয়ে উঠলে মূলধনের টাকা পাওয়া নিয়ে যাবতীয় হয়রানির অবসান ঘটবে। মেয়াদপূর্তির দিনই টাকা সরাসরি অ্যাকাউন্টে ইএফটি (ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার) হলে আলাদা করে আর ব্যাংকে যাওয়া লাগবে না। বিষয়টি স্বয়ংক্রিয় নবায়নের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এই নথিবিহীন পদ্ধতি প্রশাসনিক বিলম্বসহ সামগ্রিক জটিলতা দূর করবে, যা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ বৃদ্ধির সহায়ক হতে পারে।
আরো পড়ুন: সঞ্চয়পত্রের সঙ্গে সংযুক্ত ব্যাংক পরিবর্তন করে অন্য ব্যাংকে স্থানান্তরের উপায়
১ মাস আগে
সঞ্চয়পত্রের সঙ্গে সংযুক্ত ব্যাংক পরিবর্তন করে অন্য ব্যাংকে স্থানান্তরের উপায়
কেবল নিরাপদ সঞ্চয় পরিকল্পনাই নয়, অনেকের জন্য আয়ের একটি নির্ভরযোগ্য উৎস এবং আর্থিক স্থিতিশীলতার বাহক সঞ্চয়পত্র। সরকার কর্তৃক জারি করা এই বিনিয়োগ প্রকল্পগুলো পরিচালনা করা হয় বিভিন্ন ব্যাংকে গ্রাহকের অ্যাকাউন্টের সাপেক্ষে। তাই এই বিনিয়োগ থেকে নির্ধারিত মুনাফা প্রাপ্তির সম্ভাবনা ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মূলত সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের সময়েই ব্যাংকের সার্বিক দিক যাচাই করে নেওয়া জরুরি। এসব সত্ত্বেও পরে যেকোনো ব্যাংক নানা কারণে আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। এ অবস্থায় সঞ্চয়পত্রের সঙ্গে সংযুক্ত ব্যাংকটি পরিবর্তন করা আবশ্যক হয়ে পড়ে। চলুন, সঞ্চয়পত্রের ব্যাংক পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা এবং অন্য ব্যাংকে স্থানান্তরের পদ্ধতিটি জেনে নেওয়া যাক।
কোন অবস্থায় সঞ্চয়পত্রের ব্যাংক পরিবর্তন জরুরি
সঞ্চয়পত্র বিক্রয়কারী ব্যাংক যখন সার্বিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয় তখন এই প্রভাব সঞ্চয়পত্রের উপরও পড়ে। এ সময় বিনিয়োগ প্রকল্পটির স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার ফলে এর গ্রাহকরা হয়রানির শিকার হন। মেয়াদ শেষের পরেও নগদ মুনাফার জন্য অপেক্ষার সময় ক্রমাগত দীর্ঘায়িত হতে থাকে। তখন প্রয়োজনের সময়ে অর্থপ্রাপ্তির ঝুঁকিতে পড়ে যান সঞ্চয়পত্র ধারকরা। এই ঝুঁকি থেকে বাঁচার জন্যই দুর্বল ব্যাংক থেকে সঞ্চয়পত্রটি অন্য কোনো সবল ব্যাংকে স্থানান্তর করা প্রয়োজন।
আরো পড়ুন: সঞ্চয়পত্রে যেভাবে বিনিয়োগ করবেন
এক ব্যাংকের সঞ্চয়পত্র অন্য ব্যাংকে স্থানান্তর করার পদ্ধতি
• প্রয়োজনীয় নথিপত্র
• জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি
• সঞ্চয়পত্রের প্রত্যয়নপত্র, যেটি ক্রয়ের সময় ব্যাংক থেকে দেওয়া হয়েছিল
• বর্তমান এবং নতুন যে ব্যাংকে সঞ্চয়পত্র স্থানান্তর করা হবে; উভয় ব্যাংকের চেক
• টিন সার্টিফিকেট
• ব্যাংক সংক্রান্ত তথ্য পরিবর্তন ফর্ম পূরণ
প্রথমেই নিম্নোক্ত লিংক থেকে আবেদন ফর্মটি ডাউনলোড; অতঃপর প্রিন্ট করে নিতে হবে: https://file-dhaka.portal.gov.bd/uploads/570e08be-5c15-4b2a-ae5d-2279c68459c4//624/035/312/624035312e5a4337251782.pdf
ফর্মের শুরুতেই প্রদর্শিত অনুচ্ছেদের শূন্যস্থানগুলো সঞ্চয়পত্র সার্টিফিকেট অনুসারে নির্ভূলভাবে পূরণ করতে হবে। এ সময় সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের তারিখ, টাকার পরিমাণ, ধরন, রেজিস্ট্রেশন নম্বর এবং ব্যাংক পরিবর্তনের কারণ উল্লেখ করতে হবে।
এরপর টেবিল অংশে ‘বিদ্যমান তথ্য’-এর কলামে দিতে হবে বর্তমান ব্যাংক সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যাবলি। অপরদিকে ‘সংশোধিত তথ্য’ থাকবে নতুন যে ব্যাংকের সঙ্গে সঞ্চয়পত্রটি যুক্ত হবে তার সব তথ্য।
এ সময় উভয় ব্যাংকের চেক অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের নাম, শাখা, রাউটিং নম্বর, অ্যাকাউন্টের ধরন, অ্যাকাউন্ট নম্বর, এবং অ্যাকাউন্টের শিরোনাম বা অ্যাকাউন্টের মালিকের নাম লিপিবদ্ধ করতে হবে।
রাউটিং নম্বর মূলত ৯ অংকের একটি সংখ্যা, যেটি চেক বইয়ের ব্যাংকের শাখার নামের আশেপাশে থাকে। এছাড়া গুগলে ব্যাংকের নির্দিষ্ট শাখার নাম লিখে সার্চ করেও পাওয়া যাবে।
সংশ্লিষ্ট ব্যাংক দুটির সঙ্গে যে মোবাইল নম্বরগুলো নিবন্ধিত রয়েছে, শুধুমাত্র সেগুলো উল্লেখ করা আবশ্যক। এগুলোর স সর্বশেষে তালিকাভুক্ত হবে এনআইডি ও টিন নম্বর।
উপরন্তু, সঞ্চয়পত্রের মালিক/ধারকের সইয়ের স্থানে আবেদনকারীর নাম ও ঠিকানা অবশ্যই এনআইডির অনুরূপ হতে হবে। অতঃপর একটি সক্রিয় মোবাইল নম্বর প্রদানের মাধ্যমে ফর্ম পূরণ সম্পন্ন হবে।
আরো পড়ুন: পুরনো স্বর্ণ বিক্রির সময় যে কারণে দাম কেটে রাখা হয়
আবেদন জমা এবং প্রক্রিয়াকরণের সময়
সঞ্চয়পত্র যার নামে তাকে সশরীরে পূরণ করা ফর্ম জমা দিতে হবে। এ জন্য যে ব্যাংকের যে শাখা থেকে সঞ্চয়পত্র নেওয়া হয়েছিল সেই শাখায় উপস্থিত হতে হবে। জমা দেওয়ার পর আবেদন প্রক্রিয়াকরণে ২ মাস পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে।
বিকল্প উপায় হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের যেকোনো শাখায়ও আবেদন জমা দেওয়া যেতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকে সঞ্চয়পত্রের জন্য একটি পৃথক সেকশনই থাকে। আবেদন ফর্ম জমা দেওয়ার জন্য সরাসরি সেই সেকশনে যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে সঞ্চয়পত্রের স্থানান্তর সম্পন্ন হতে সময় লাগতে পারে ১৫ দিন থেকে সর্বোচ্চ ১ মাস।
আরো পড়ুন: ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডে প্রবাসী বাংলাদেশিরা যেভাবে বিনিয়োগ করবেন
পরিশিষ্ট
এভাবে সঞ্চয়পত্রের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পরিবর্তনের প্রচেষ্টা ভবিষ্যতে নিরাপদ মুনাফাপ্রাপ্তির পথ সুগমের ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে। এই প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য সঞ্চয়পত্র সনদ, বর্তমান এবং উদ্দিষ্ট ব্যাংকের চেক, এনআইডি ও টিন সনদ সঙ্গে রাখা জরুরি। এই স্থানান্তরকরণে বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বোচ্চ এক মাস সময় নেয়, যা অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় যথেষ্ট দ্রুত প্রক্রিয়া। সর্বপরি, ভবিষ্যতে একই সংকটময় পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তিতে এই প্রচেষ্টাটি গ্রাহকদের সতর্কতামূলক প্রস্তুতির নিশ্চায়ক।
আরো পড়ুন: বাংলাদেশ সরকারের ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করার পদ্ধতি
১ মাস আগে
২৬ অক্টোবর পর্যন্ত বৈধ চ্যানেলে ১.৯৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে
বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স বেড়েছে। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরে অক্টোবরে বিদেশে কর্মরত নাগরিকরা প্রতিদিন গড়ে ৭৫ মিলিয়ন ডলার পাঠাচ্ছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত দেশে ১.৯৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।
আরও পড়ুন: অক্টোবরে ১৯ দিনে ১.৫৫৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছে বাংলাদেশ
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি ব্যাংকে রেমিট্যান্স এসেছে ৫৪৭ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে রেমিট্যান্স এসেছে ৯৯.৯৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বেসরকারি খাতের ৪২টি ব্যাংকে মোট ১.২৯৬ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। ছয়টি বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে ১ থেকে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত ৫.১২ মিলিয়ন ডলার এসেছে।
তবে এ সময়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ শূন্যের মুখে পড়েছে নয়টি ব্যাংকের। এর মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল) ও বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (আরকেইউবি), বেসরকারি কমিউনিটি ব্যাংক, সিটিজেন ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংক।হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান ও স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়াসহ বিদেশি ব্যাংকগুলোতেও রেমিট্যান্স লেনদেন হয়নি।
আরও পড়ুন: অক্টোবরের প্রথম ১২ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ৯৮৬ মিলিয়ন ডলার
১ মাস আগে
ছাত্র আন্দোলনে সহিংসতা ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ২৮ কোটি টাকা দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক
কোটা সংস্কার আন্দোলন ও স্বৈরাচারী সরকারের পতনের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে আহত ও নিহতদের জন্য গঠিত ফাউন্ডেশনকে ৫ কোটি টাকা অনুদান দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এছাড়াও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একদিনের বেতন এবং ব্যাংকের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল থেকে বন্যাদুর্গতদের জন্য প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে ২৩ কোটি টাকা দেওয়া হবে।
বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: এস আলম গ্রুপের সম্পদ কিনবেন না: বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর
এস আলম গ্রুপের তিন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক
৩ মাস আগে
পুরনো স্বর্ণ বিক্রির সময় যে কারণে দাম কেটে রাখা হয়
বিনিয়োগ বা সঞ্চয়ের জন্য নির্ভরযোগ্য একটি খাত স্বর্ণ। দীর্ঘদিন ধরে সঞ্চিত স্বর্ণ নিতান্ত প্রয়োজনের সময় অনেক কাজে লাগে। তাই আর্থিক স্বচ্ছলতা তৈরির ক্ষেত্রে অন্যান্য যে কোনো সম্পদের বিপরীতে স্বর্ণ একটি সেরা বিকল্প। অনেক দিন আগে কেনা স্বর্ণ বিক্রি বা বিনিময় করে নতুন স্বর্ণ কেনার সময় কিছু খরচ রয়েছে, যা স্বর্ণের দাম থেকে কেটে রাখা হয়। কেটে নেওয়া অংশটি স্বর্ণ থেকে অর্জিত লাভে তেমন কোনো প্রভাব না ফেললেও বিষয়টি জেনে রাখা জরুরি। চলুন, স্বর্ণ সংক্রান্ত কোন কোন খাতের খরচগুলোর স্বর্ণের দামের সঙ্গে অন্তর্ভূক্ত করা হয় তা জেনে নেই।
বর্তমানে স্বর্ণের দাম থেকে কত শতাংশ কাটা হয়
২০২৪ সালের ৮ মে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) বিক্রির সময় স্বর্ণের দাম থেকে কর্তন বাবদ নতুন পরিমাণ নির্ধারণ করে। পুরনো স্বর্ণ বিক্রির সময় তার বর্তমান ওজন থেকে ১৫ শতাংশ বাদ দিয়ে অবশিষ্ট অংশের দামকে বিক্রয়মূল্য ধরা হবে। উদাহরণস্বরূপ ১০০ গ্রাম স্বর্ণ বিক্রি করতে গেলে তার দাম পাওয়ার যাবে ৮৫ গ্রামের জন্য।
যারা পুরনো সোনা দিয়ে নতুন সোনা নিতে চান তাদের ক্ষেত্রে আগের সোনার ওজন থেকে ১০ শতাংশ কেটে নতুন সোনা দেওয়া হবে। অর্থাৎ ১০০ গ্রাম পুরনো সোনার বদলে পাওয়া যাবে ৯০ গ্রাম সোনা।
এর সঙ্গে ধার্যকৃত যাবতীয় মজুরি এবং মূল্য সংযোজন করও (ভ্যাট) সোনার দাম থেকে বাদ যাবে।
আগে সোনা বিক্রির ক্ষেত্রে কর্তনের হার ছিল ১৩ শতাংশ, আর বিনিময়ের সময় কাটা হতো ৯ শতাংশ।
আরও পড়ুন: ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডে প্রবাসী বাংলাদেশিরা যেভাবে বিনিয়োগ করবেন
যে কারণে বিক্রির সময় স্বর্ণের দাম কমে আসে
স্বর্ণের বিশুদ্ধতা যাচাই
সোনার অলঙ্কারে তামা বা রৌপ্যের মতো সংকর ধাতু মিশ্রিত থাকে। এই সংকর ধাতু মিশ্রিত থাকা মানেই সোনার সামগ্রিক বিশুদ্ধতায় ঘাটতি থাকা। পুনঃবিক্রয়ের সময় স্বর্ণের এই বিশুদ্ধতা বা গুণগত মান নির্ণয়ের জন্য শিখা পরীক্ষা, অ্যাসিড পরীক্ষা ও এক্সআরএফ বা হলমার্কের মতো বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। উচ্চ বিশুদ্ধতা (২৪ ক্যারেট) সম্পন্ন সোনা কম বিশুদ্ধগুলোর (২২ ক্যারেট বা ১৮ ক্যারেট) তুলনায় অধিক মূল্যের হয়। বাজুস স্বচ্ছতা ও ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে সেই বিশুদ্ধতা পরীক্ষা এবং সার্টিফিকেশন বাধ্যতামূলক করে থাকে।
অবচয় খরচ
যে কোনো ব্যবহার্য সম্পদের মতো সোনারও অবচয় ঘটে। পুরনো সোনাগুলোর মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই স্ক্র্যাচ, আঘাতের চিহ্ন ও দীপ্তি হ্রাসসহ গুণগত মান নষ্টের আশঙ্কা থাকে। এতে অল্প হলেও ১০ বছর আগের ও পরের সোনার মধ্যে তারতম্য থেকে যায়। আর এই অপূর্ণতাকে সামঞ্জস্য করার জন্য কর্তনকৃত অংশ নির্ধারণ করা হয়। একদম সামান্য অংশ হলেও বিষয়টিতে বিক্রেতাদের সচেতন থাকা উচিৎ। অবশ্য পুনঃব্যবহারে অতিরিক্ত অবচয়ে স্বল্প ওজনের সোনার দামে উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়তে পারে।
আরও পড়ুন: ২০২৪ সালে পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান ১০ মুদ্রা
লেনদেনের খরচ
সোনা বিক্রি শুধুমাত্র কিছু পরিমাণ ধাতু হস্তান্তর করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। পুরো বিক্রয় প্রক্রিয়াটির সঙ্গে আরও কিছু কার্যক্রম জড়িত থাকে। যেমন বিক্রয় প্রক্রিয়াকরণে প্রশাসনিক ফি, পরীক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে সোনার বিশুদ্ধতা যাচাই ফি, স্বর্ণ মজুদ ও পরিবহনের নিরাপত্তা এবং লজিস্টিক খরচ ইত্যাদি। এই যাবতীয় খরচ একত্রিত হয়ে অবদান রাখে সোনার বিক্রয়মূল্যের অধোগতিতে। তাই এই খরচগুলোর ব্যাপারে বিক্রেতাদের সম্যক ধারণা থাকা জরুরি।
স্বর্ণ ব্যবসায়ীর খরচ ও ঝুঁকি
সোনার বাজারের ডিলার বা বিপণী মালিকদের ব্যবসা পরিচালনা বাবদ বিভিন্ন খরচ যুক্ত হয় এই তালিকায়। এগুলো হচ্ছে দোকান ভাড়া, কর্মচারীদের বেতন ও ইউটিলিটি বিল। প্রত্যেকটির ব্যয়ভার বহনের সাপেক্ষে যাচাই করা হয় বাজারের বর্তমান অবস্থা। এই সার্বিক দিক বিবেচনায় খরচের পরিধি অনেকটা বেড়ে যায়। আর এই খরচটিই ক্রেতারা পুষিয়ের নেওয়ার চেষ্টা করেন বিক্রয়কালে ভোক্তাদের নিকট থেকে। এটি ডিলারদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, কেননা এটি তাদের স্বর্ণ কেনা এবং ব্যবসার আনুষঙ্গিক খরচ থেকে উদ্বৃত্ত লাভের উপর প্রভাব ফেলে।
তাছাড়া পুরনো সোনা কেনার সময় ক্রেতারা স্বভাবতই একটু বেশি ঝুঁকির মুখে থাকেন। বিশেষ করে কেউ লেনদেনে জালিয়াতি করলে বা পণ্যের সত্যতা সংক্রান্ত কাগজপত্রে ঘাটতি থাকলে পরবর্তীতে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।
আরও পড়ুন: বন্ডে বিনিয়োগের আগে যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখা জরুরি
৫ মাস আগে
ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডে প্রবাসী বাংলাদেশিরা যেভাবে বিনিয়োগ করবেন
রিয়েল এস্টেট, স্টক মার্কেট, স্টার্ট-আপ বা ক্ষুদ্র ব্যবসাগুলো বিনিয়োগের অনুকূল দিগন্ত উন্মোচন করে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য। মার্কিন ডলারের হার বেড়ে যাওয়ার ধারাবাহিকতায় ইতিবাচক প্রভাব পড়ে বিনিয়োগের বিনিময় হারে। অন্যদিকে, উচ্চ মূল্যের ডলার আয়ের সঙ্গে উন্নত হয় রেমিটেন্স ক্রয় ক্ষমতা। প্রবাসীদের এই অর্থ দেশে থাকা তাদের পরিবারের জন্য যেমন সহায়ক হয়, তেমনি সম্ভাবনা তৈরি হয় দেশের বাজারে আরও বিনিয়োগের। এই পরিপ্রেক্ষিতে তাদের নির্ভরযোগ্য বিনিয়োগের উপায় বাংলাদেশ সরকারের নন-রেসিডেন্স বাংলাদেশি (এনআরবি) বন্ডগুলো। এগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে ইউ.এস. ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড বা ইউএসডিআইবি।চলুন, এই বন্ডে বিনিয়োগের পদ্ধতি সম্বন্ধে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
ইউ.এস. ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড কী
সরাসরি বাংলাদেশ সরকারের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই এনআরবি বন্ড ইস্যু করা হয় মার্কিন ডলারে।
এটি মূলত রেমিটেন্সের বিপরীতে ফরেন কারেন্সি (এফসি) বা বৈদেশিক মুদ্রার অ্যাকাউন্টধারীদের জন্য নিবেদিত একটি সঞ্চয় প্রকল্প। অন্যান্য অধিকাংশ বন্ডের মতো এই বন্ডেও রয়েছে মুনাফা লাভ এবং সুদাসলের উপর কর-মুক্তির সুবিধা।
ইউ.এস. ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডের বৈশিষ্ট্য
- এই বিনিয়োগ সুবিধাটি অনিবাসী বাংলাদেশি বা বাংলাদেশে বংশোদ্ভূত বিদেশি নাগরিকদের জন্য
- বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের এই বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশে তাদের এফসি অ্যাকাউন্টের প্রয়োজন হয়
- বন্ডের মূল্য রেমিটেন্সের উপর মার্কিন ডলারে যে কোনো মূল্যের হয়ে থাকে
- বন্ডের মেয়াদ ৩ বছর
- বর্তমানে সাধারণত ৫০০, ১ হাজার, ৫ হাজার, ১০ হাজার, এবং ৫০ হাজার মার্কিন ডলার মূল্যমানের ইউএসডিআইবি ইস্যু করা হয়
আরও পড়ুন: ২০২৪ সালে পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান ১০ মুদ্রা
ইউ.এস. ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড কেনার উপায়
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- বৈধ পাসপোর্টের অনুলিপি (বাংলাদেশে অবস্থান করলে দেশে আগমন ও প্রস্থানের সিলসহ পৃষ্ঠা প্রদর্শন করতে হবে)
- সম্প্রতি তোলা আবেদনকারি এবং নমিনি উভয়ের এক কপি করে পাসপোর্ট আকারের ছবি
- ওয়ার্ক পারমিট অথবা ভিসার অনুলিপি
- তহবিলের উৎস সম্পর্কিত কাগজপত্র (চাকরির পরিচয়পত্র বা বেতন প্রাপ্তির স্লিপ)
- অন্য কেউ স্পন্সর করে থাকলে তার পাসপোর্টের অনুলিপি এবং আয় সংক্রান্ত নথি
- সম্পূর্ণ পূরণকৃত এবং স্ব-হস্তে স্বাক্ষরকৃত আবেদনপত্র
বন্ড ক্রয় পদ্ধতি
বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর বা আভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের ওয়েব পোর্টাল থেকে বন্ড ক্রয়ের আবেদন ফর্ম ডাউনলোড করা যায়।
এছাড়া দেশে বা বিদেশে এই বন্ড ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও বিনামূল্যেই এই ফর্ম বিতরণ করে থাকে।
ফর্ম পূরনের পর ফর্ম সহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের স্ক্যান কপি যে কোনো ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠানে ইমেল করতে হবে। উপরোক্ত নথিপত্র ছাড়াও বন্ড ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য আরও কিছু দরকারি কাগজপত্র প্রয়োজন হয়। এ সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ফিরতি ইমেলে এনআরবি গ্রাহককে অবহিত করবেন।
এরপর স্ব-হস্তে স্বাক্ষরকৃত আবেদন ফর্মসহ যাবতীয় কাগজপত্র কুরিয়ারের মাধ্যমে সেই প্রতিষ্ঠানের ঠিকানায় পাঠাতে হবে। তারপর আবেদনকারির বন্ডের মূল্য পরিশোধের সাপেক্ষে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বন্ড ইস্যু করবেন। পরিশেষে ক্রয়কৃত বন্ডের পরিচিতি স্বরূপ একটি অ্যাডভাইস কপি গ্রাহককে প্রেরণ করা হবে।
আরও পড়ুন: বন্ডে বিনিয়োগের আগে যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখা জরুরি
যে প্রতিষ্ঠানগুলো এই বন্ড ইস্যু করে থাকে, সেগুলো হলো:
- বাংলাদেশ ব্যাংক
- দেশের ভেতর ও বাইরে অবস্থিত বাংলাদেশের তফসিলভুক্ত ব্যাংকগুলোর এডি (অনুমোদিত ডিলার) শাখা
- প্রতিনিধি অফিস, ফরেন করেসপন্ডেন্ট
- শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংক ছাড়া বাংলাদেশের অন্যান্য তফসিলি ব্যাংকগুলোর এক্সচেঞ্জ হাউস
বন্ড ক্রয়ের জন্য আবেদন পদ্ধতি
নিম্নের লিঙ্ক থেকে বন্ডে বিনিয়োগের আবেদন ফর্মটি সরাসরি ডাউনলোড করে পূরণ করা যাবে। https://ird.gov.bd/sites/default/files/files/ird.portal.gov.bd/forms/6ef7c349_b2ef_4608_bd1d_3c7b80b2f3f6/Editable_Purchase_US_Dollar_Investment_Bond_converted.pdf
ফর্ম পূরণে যে তথ্যগুলো প্রয়োজন হয়, তা হলো:
- আবেদনকারী বা বন্ড ক্রেতা এবং তার নমিনির নাম ও ঠিকানা
- নমিনির সঙ্গে আবেদনকারীর সম্পর্ক
- বন্ড ক্রেতার পাসপোর্ট নম্বর
- বন্ডের মূল্য
- এফসি অ্যাকাউন্ট নম্বর এবং যেই ব্যাংকের যে শাখাতে অ্যাকাউন্টটি রয়েছে, তার নাম ও ঠিকানা
- আবেদনকারীর পাসপোর্ট নম্বর, পাসপোর্ট ইস্যুর স্থান, এবং পাসপোর্ট অনুযায়ী জন্ম তারিখ
- বন্ড ক্রেতার চাকরির পদবি, কোম্পানির নাম
- বন্ড ক্রেতার বাংলাদেশ ও বিদেশের ঠিকানা
- সবশেষে আবেদনকারীর সই
আরও পড়ুন: সঞ্চয়পত্রে যেভাবে বিনিয়োগ করবেন
৬ মাস আগে
২০২৪ সালে পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান ১০ মুদ্রা
যে কোনো দেশের মুদ্রার মানের উল্লেখযোগ্য হ্রাস-বৃদ্ধি নির্ভর করে সুদের হার, মুদ্রাস্ফীতি, বাজারের চাহিদা এবং ব্যবসায়িক লেনদেনের ভারসাম্যের ওপর। এই সূচকগুলোর পেছনে প্রধান চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে দেশটিতে সঞ্চিত সম্পদের পরিমাণ এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি। এভাবে সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তনের সঙ্গে কখনও মুদ্রা দর পতন ঘটে কখনও বা তা বেড়ে যায়। অত্যধিক হারে বেড়ে যাওয়া মুদ্রামান বিশ্বজুড়ে ব্যবসায়িক লেনদেনে সেই মুদ্রার একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করে। চলুন, ২০২৪ সালে এখন পর্যন্ত কোন ১০টি মুদ্রা সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে তা জেনে নেওয়া যাক।
বৈদেশিক মুদ্রার মূল্য যেভাবে নির্ধারণ হয়
এক দেশের মুদ্রা থেকে অন্য দেশের মুদ্রার বিনিময় হারের পরিবর্তন মূলত দুটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে।
ফ্লোটিং রেট
মুক্ত বাজারে মুদ্রার সরবরাহ ও চাহিদার বর্তমান অবস্থা ঠিক করে দেয় মুদ্রার ফ্লোটিং রেট। যখন একটি মুদ্রার চাহিদা বাড়লে এর দাম বাড়ে, একইভাবে চাহিদা কমলে দামটাও কমে। এই হ্রাস-বৃদ্ধির নেপথ্যে কাজ করে বিনিময় হার সম্পর্কে মানুষের সাধারণ ধারণা। বিনিময় হারের এই বদলে যাওয়ার ধারাবাহিকতায় পরিবর্তন হতে থাকে মানুষের চাহিদা এবং বাজারে মুদ্রার সরবরাহ।
যেমন ইউরোর তুলনায় মার্কিন ডলারের (ইউএস ডলার) চাহিদা বৃদ্ধি মানে ইউরোর দাম মার্কিন ডলারের দাম থেকে কমে যাওয়া। চাহিদা বৃদ্ধির মূলে থাকে বেকারত্বের হার, মুদ্রাস্ফীতি এবং সুদের হারের পরিবর্তনের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনা।
আরও পড়ুন: ২০২৩ সালে বিশ্বের শীর্ষ ১০ শক্তিশালী মুদ্রা
ফিক্স্ড রেট
একটি বিদেশি মুদ্রার সঙ্গে বিনিময়ের জন্য একটি দেশের সরকার সেই দেশের মুদ্রার একটি নির্দিষ্ট হার বেধে দেয়। মুদ্রার মূল্য নির্ধারণীটি করা হয়ে থাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে। অতঃপর সেই বিদেশি মুদ্রার বিপরীতে সরকার কর্তৃক দেশীয় মুদ্রা লেনদেন করা হয়, যার মাধ্যমে নির্ধারিত হারটি বজায় থাকে।
বাজারে স্বল্পমেয়াদে ফ্লোটিং রেট যখন ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে, তখন এর নেতিবাচক প্রভাব করে দৈনন্দিন সরবরাহ ও চাহিদায়। এ সময় মুদ্রার দাম একদম পড়ে গেলে অথবা আকাশচুম্বী হয়ে যায়। এই অস্থিতিশীলতাটি দেশের বাণিজ্য, ঋণ পরিশোধসহ সামগ্রিক অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করতে পারে। তাই পরিস্থিতি সামলানোর জন্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো তাৎক্ষণিকভাবে ফিক্স্ড রেটের আশ্রয় নেয়।
বিশ্বের সবচেয়ে দামি ১০টি মুদ্রা
কুয়েতি দিনার (কেডব্লিউডি)
বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী মুদ্রা হলো কুয়েতি দিনার, যুক্তরাষ্ট্রের (ইউএসএ) মুদ্রায় যার বিনিময় হার ৩ দশমিক ২৬ মার্কিন ডলার। এর পেছনে প্রথম কারণ হচ্ছে তেল রপ্তানিতে বিশ্বে কুয়েতের অবস্থান। এই প্রেক্ষাপটটি দেশটিকে একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তি দিয়েছে।
দ্বিতীয়ত, কুয়েতি দিনারে মার্কিন ডলার, ইউরো এবং জাপানি ইয়েনের মতো বিশ্বখ্যাত তিনটি মুদ্রার বিপরীতে ফিক্স্ড রেট আরোপ করা হয়েছে। তাই বৈশ্বিক মুদ্রা বাজার পরিবর্তন এই দিনারের মানকে তেমন প্রভাবিত করতে পারে না।
তৃতীয়ত, কুয়েত একটি রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল দেশ। এতে করে কুয়েত বিপুল পরিমাণে বিদেশি বিনিয়োগ পায়।
তাছাড়া, দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে এই মুদ্রা সরবরাহের উপর। ফলে মুদ্রার দর একটি নির্দিষ্ট হার বজায় রাখতে পারে।
বাহরাইন দিনার (বিএইচডি)
বিশ্বের দ্বিতীয়-সর্বোচ্চ দামি মুদ্রা হলো বাহরাইন দিনার, যার একক মুদ্রার হার ২ দশমিক ৬৫ মার্কিন ডলারের সমান। এর পেছনে প্রধান কারণ তেলের পাশাপাশি বাহরাইন গ্যাস রপ্তানিতেও সেরা।
মার্কিন ডলারের বিপরীতে এই দিনারের বিনিময় হার সুনির্দিষ্ট করায় এর দামে খুব বেশি তারতাম্য থাকে না। এমনকি দেশটির নিম্ন মূল্যস্ফীতির হার মুদ্রার মান স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুন: স্বর্ণ বনাম হীরা: কোন বিনিয়োগটি বেশি লাভজনক?
ওমানি রিয়াল (ওএমআর)
বিশ্বের তৃতীয় দামি মুদ্রাটির নাম ওমানি রিয়াল, যার একক মুদ্রা দিয়ে ২ দশমিক ৬০ মার্কিন ডলার কেনা যায়। কারণ বাহরাইনের মতো ওমানও বিশ্বখ্যাত তেল ও গ্যাস রপ্তানিকারক। আরব উপদ্বীপের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলের এই দেশটির অর্থনীতির বেশিরভাগই নির্ভর করে তাদের কাছে থাকা তেলের মজুদের উপর।
এই রিয়ালের এক হাজার ভাগের এক ভাগকে ‘বাইসা’ বলা হয়, যা অন্যান্য মুদ্রার বিপরীতে ব্যবহার করা হয়। আর ইউএস ডলারের বিপরীতে ওমানের মুদ্রার রেট ফিক্স্ড করা আছে। এছাড়া দেশটির মূল্যস্ফীতির হার তুলনামূলকভাবে কম হওয়ার কারণে মুদ্রার মানের আকস্মিক পরিবর্তন হয় না।
জর্ডানিয়ান দিনার (জেওডি)
তালিকার চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে জর্ডানিয়ান দিনার, যার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রার বিনিময় হার ১ দশমিক ৪১ ডলার। বিশ্ব বাজারে তেল ও গ্যাসের প্রধান বিক্রেতা না হলেও এই অতীব দুটি মূল্যবান সম্পদ জর্ডানের অর্থনীতির মূল শক্তি।
দিনারের ঊর্ধ্বমানের নেপথ্যে রয়েছে আর্থিক এবং রাজস্ব নীতিতে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সতর্কতা। এর ফলে একদিকে আভ্যন্তরীণ বাজারে মুদ্রার মূল্য স্থিতিশীল থাকে। অন্যদিকে, বিশ্ব বাজারের উত্থান-পতনের ধাক্কা থেকে জর্ডানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সুরক্ষিত থাকে।
ব্রিটিশ পাউন্ড (জিবিপি)
পৃথিবীর সর্বোচ্চ দামি মুদ্রাগুলোর শীর্ষ ১০-এর ঠিক মাঝামাঝিতে রয়েছে ব্রিটিশ পাউন্ড। ১ ব্রিটিশ পাউন্ড ১ দশমিক ২৭ মার্কিন ডলারের সমতূল্য। সাম্প্রতিক নানা ধরনের রাজনৈতিক ঝামেলার পরেও পাউন্ড ২০২৪ সালের পঞ্চম শক্তিশালী মুদ্রা। এর পেছনে মূলত দুটি বিষয় দায়ী। এক জিবিপ’র জনপ্রিয়তা এবং দুই, সংগৃহীত মোট রাজস্ব আয়ের দিক থেকে এই দেশটি বিশ্বের বৃহত্তম দেশগুলোর অন্তর্ভূক্ত।
আরও পড়ুন: ডলার এনডোর্সমেন্ট কী, কীভাবে করবেন
৬ মাস আগে
বন্ডে বিনিয়োগের আগে যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখা জরুরি
প্রথাগত সঞ্চয় হিসাবের তুলনায় অধিক লাভ পাওয়ার সেরা উপায় হচ্ছে বিনিয়োগ। এর মাধ্যমে সম্পদের ব্যবস্থা থেকে শুরু করে বার্ধক্যকালীন আর্থিক নিরাপত্তার মতো দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক সুবিধা পাওয়া সম্ভব হয়। শুধু তাই নয়; উপযুক্ত বিনিয়োগ মুদ্রাস্ফীতি মোকাবিলায়ও যুগান্তকারী ভূমিকা রাখতে পারে। এমনি একটি আর্থিক উপকরণ হচ্ছে বন্ড, যেখানে বিনিয়োগের বিনিময়ে স্থির আয় পাওয়া যায়। মেয়াদপূর্তিতে বেশ ভালো পরিমাণের রিটার্ন আসায় বিগত বছরগুলোতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বিনিয়োগের এই মাধ্যমটি। তবে বাজারজুড়ে যথেষ্ট ভিন্নতা থাকায়, সঠিক বন্ডটি কেনার আগে তার যথাযথ যাচাই-বাছাই প্রয়োজন। চলুন, চূড়ান্তভাবে বন্ডে বিনিয়োগের পূর্বে কোন বিষয়গুলো বিবেচনা করা জরুরি, তা জেনে নেওয়া যাক।
বন্ড কী
ঋণের বিনিময়ে একটি নিরাপত্তা চুক্তিপত্রের নাম বন্ড, যে চুক্তি ঋণগ্রহীতা হিসেবে বন্ড ইস্যুকরা প্রতিষ্ঠান এবং ঋণদাতার মধ্যে হয়ে থাকে। এখানে ঋণদাতা বা বিনিয়োগকারীকে বন্ড ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠান প্রাপ্ত ঋণের উপর নির্দিষ্ট হারে বিভিন্ন কিস্তিতে সুদ প্রদান করে থাকে। এভাবে পূর্বনির্ধারিত মেয়াদ পার হওয়ার পর ঋণের টাকা সুদসহ পরিশোধ করা হয়। বন্ডের অর্থের উপর নির্দিষ্ট মেয়াদে ধার্যকৃত সুদের হারকে কুপন রেটও বলা হয়। বন্ড ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠান ও কুপন রেটসহ মূল অর্থ প্রদানের নানা মাধ্যমের উপর ভিত্তি করে বন্ডগুলো বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন: সঞ্চয়পত্রে যেভাবে বিনিয়োগ করবেন
বাংলাদেশে বন্ডের প্রকারভেদ
বন্ডে বিনিয়োগের সুবিধা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ধরনের উপর ভিত্তি করে বন্ড ৩ প্রকার।
সরকারি বন্ড
এই বন্ডগুলোর আরেক নাম ট্রেজারি বন্ড, যেগুলোর মেয়াদ ন্যূনতম ২ বছর থেকে সর্বোচ্চ ২০ বছরের হয়ে থাকে। এখানে সুদের হার অন্যান্য বন্ডের তুলনায় সর্বাপেক্ষা বেশি থাকে।
করপোরেট বন্ড
ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো যে ধরনের বন্ড ইস্যু করে থাকে, সেগুলো করপোরেট বন্ড। এই বন্ড কোম্পানিগুলোর ব্যাংক ছাড়া টাকা উত্তোলনের একটি সেরা মাধ্যমে। এখানে কুপন রেট কম থাকলেও বিনিয়োগকারীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বেশি থাকে।
এজেন্সি বন্ড
সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো এই বন্ড ইস্যু করে থাকে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ ডিজেল প্লান্টস লিমিটেড এবং বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ সরকারের ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করার পদ্ধতি
সুদ প্রদানের পদ্ধতির ভিত্তিতে বন্ডের শ্রেণীবিন্যাস নিম্নরূপ:
জিরো কুপন বন্ড
এই বন্ডগুলোতে কোনো সুদ বা কুপন দেওয়া হয় না তবে মেয়াদপূর্তিতে বন্ডের ফেস ভ্যালুতে মূল টাকা পরিশোধ করা হয়। প্রথমেই দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে মেয়াদ শেষে প্রদানকৃত অর্থের পরিমাণ বা বন্ডের ফেস ভ্যালু ঠিক হয়। আর বন্ড ইস্যুর সময় এই ফেস ভ্যালুর থেকে কম মূল্যে বন্ড ছাড়া হয়। আর এই ডিস্কাউন্ট রেটটাই বিনিয়োগকারীদের লাভ।
কনভার্টিবল বা রূপান্তরযোগ্য বন্ড
এই করপোরেট বন্ডগুলোতে বিনিয়োগের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট সময় পর বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির শেয়ার হোল্ডারে পরিণত হতে পারেন। তুলনামূলক কম সুদ প্রদান করতে হয় বিধায় কোম্পানি কনভার্টিবল বন্ড ইস্যু করে। এমনকি এখানে বন্ড হোল্ডাররা শেয়ার হোল্ডারে পরিণত হওয়ায় নির্দিষ্ট সময় পর তাদের মূলধন ফেরত দেওয়ার বাধ্যবাধকতা কোম্পানির থাকে না।
কল-এবল বন্ড
যে বন্ডের মেয়াদ উত্তীর্ণের পূর্বেই তার ইস্যুকারী নতুন করে সুদের হার ধার্য করতে পারে, তাকে কল-এবল বন্ড বলে। মেয়াদ চলাকালেই বন্ড ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠানের ক্রেডিট কোয়ালিটি বৃদ্ধি পেতে পারে কিংবা বাজারে সুদের হার কমে যেতে পারে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি আগের থেকে কম কুপন রেট দিয়ে পুনরায় বন্ডটি ইস্যু করতে পারে। এতে ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠানের লাভ হয় এবং বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি হয়।
পুট-এবল বন্ড
এখানে মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই বন্ড হোল্ডাররা বন্ড ইস্যুকারীকে বন্ড বিক্রি করার ক্ষমতা অর্পণ করতে পারে। এতে করে বাজারে বন্ডের দর কমে যাওয়া অথবা সুদের হার বেড়ে যাওয়ার পূর্বেই বিনিয়োগকারীরা বন্ড বিক্রির সুযোগ পায়। এই সুবিধা থাকার জন্য পুট-এবল বন্ড বাজারে অন্যান্য বন্ড থেকে একটু বেশি মূল্যে বিক্রি হয়।
ইনকাম বন্ড
এটি অনেকটা জিরো কুপন বন্ডের মতো, তবে এখানে সুদ দিতে হয়। এই সুদ তখনই প্রদান করা হয় যখন প্রতিষ্ঠানের কাছে কুপন দেওয়ার মতো যথেষ্ট পরিমাণ আয় থাকে।
পারপিচুইটি বন্ড
এই বন্ডগুলোতে মূলত কোনো মেয়াদ নেই। বন্ডের মূলধন শোধ না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকাল ধরে বন্ড হোল্ডাররা নিয়মিতভাবে কুপন বা সুদ পেয়ে যাবেন।
জামানতযুক্ত বা সিকিউরড বন্ড
এই বন্ড বিক্রির সময় ঋণ পরিশোধের নিশ্চয়তা স্বরূপ একটি স্থায়ী সম্পদের দলিল বন্ধক রাখা হয়। জামানতযুক্ত বন্ডের ইস্যুকারী কোনো কারণে ঋণ খেলাপি হলে ঐ বন্ধককৃত সম্পদ বিক্রি করে বিনিয়োগকারীদের মূলধন সুদসহ ফেরত দেওয়া হয়।
জামানতবিহীন বা আন-সিকিউরড বন্ড
এই বন্ড বিক্রির সময় কোনো কিছু বন্ধক রাখার সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে বন্ড ক্রয়ের জন্য ক্রেতাকে কোম্পানির আয়, সুনাম এবং ঋণ প্রদানের ক্ষমতার উপর নির্ভর করতে হয়।
এখানে প্রতিষ্ঠান কোনো কারণে ঋণ খেলাপি হলে বন্ড হোল্ডারদের স্বাভাবিকভাবেই সম্পূর্ণ মূলধন হারানোর ঝুঁকি থাকে।
আরও পড়ুন: ডলার এনডোর্সমেন্ট কী, কীভাবে করবেন
৭ মাস আগে
সঞ্চয়পত্রে যেভাবে বিনিয়োগ করবেন
দীর্ঘমেয়াদে আর্থিক নিরাপত্তার জন্য বিনিয়োগের কোনো বিকল্প নেই। সাধারণত সমাজে ব্যক্তির অবস্থানের ভিত্তিতে তারতম্য ঘটে বিনিয়োগের সম্ভাবনার। এর বাইরে বিনিয়োগের সিদ্ধান্তের উপর প্রভাব ফেলে ঝুঁকি সহনশীলতা, আর্থিক লক্ষ্য এবং বাজার পরিস্থিতি। এগুলো দীর্ঘমেয়াদে ব্যক্তির আর্থিক স্থিতিশীলতার নির্ধারক হিসেবে কাজ করে। বিশেষ করে যখন ঝুঁকি ও বাজার পরিস্থিতি যাচাইয়ের প্রসঙ্গ ওঠে, তখন প্রথমেই আসে সঞ্চয়পত্রের কথা। কেননা সুদের হার এবং নীতি নির্ধারকের বিবেচনায় এটি অন্যতম একটি দুশ্চিন্তামুক্ত বিনিয়োগের খাত। চলুন, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ পদ্ধতির ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
সঞ্চয়পত্র কী
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার পরিচালিত এই বিনিয়োগ প্রকল্পের আরেক নাম সেভিংস ইন্সট্রুমেন্ট্স বা সেভিংস সার্টিফিকেট। এই সনদপত্রে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে নির্ধারিত সময় পরপর আসে মুনাফা। আর নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে সেই বিনিয়োগকৃত মূলধনটি পাওয়া যায়। এটি দেশের স্বল্প আয়ের জনসাধারণের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য সঞ্চয়ের মাধ্যম। মূলত অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, বায়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক, নারী এবং শারীরিক প্রতিবন্ধীরা সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতাভুক্ত হন। এভাবে নির্ভরতা হ্রাসের পাশাপাশি মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্যও সঞ্চয়পত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে প্রতীয়মান হয়।
বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র
মেয়াদ এবং বিনিয়োগকৃত অর্থের উপর ভিত্তি করে সরকার ৪ ধরনের সঞ্চয়পত্র জারি করে। এগুলো হলো:
১. পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র
শিরোনামের মতই এই সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ ৫ বছর। এখানে সর্বনিম্ন ১০ টাকা থেকে শুরু করে ব্যাক্তি পর্যায়ে এক নামে সর্বোচ্চ ৩০ লাখ, এবং যুগ্ম নামে সর্বোচ্চ ৬০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা যায়। প্রাতিষ্ঠানিক ঊর্দ্ধসীমা নেই।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ সরকারের ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করার পদ্ধতি
২. পরিবার সঞ্চয়পত্র
এখানে ৫ বছর মেয়াদে সর্বনিম্ন ১০ হাজার থেকে ব্যাক্তি পর্যায়ে শুধুমাত্র একক নামে সর্বোচ্চ ৪৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা যায়।
৩. তিন মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র
এই সঞ্চয়পত্রে ৩ বছরের জন্য সর্বনিম্ন ১ লাখ টাকা রাখা যায়। এই মেয়াদে ব্যাক্তি পর্যায়ে বিনিয়োগের সর্বোচ্চ পরিমাণ এক নামে ৩০ লাখ টাকা এবং যুগ্ম নামে ৬০ লাখ টাকা।
৪. পেনশনার সঞ্চয়পত্র
এখানে ৫ বছর মেয়াদে বিনিয়োগের সর্বনিম্ন পরিমাণ ৫০ হাজার টাকা এবং ব্যক্তি পর্যায়ে শুধুমাত্র এক নামে সর্বোচ্চ পরিমাণ ৫০ লাখ টাকা। তবে তা অবশ্যই গ্র্যাচুইটি এবং সর্বশেষ প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে প্রাপ্ত অর্থের মধ্যে হতে হবে।
আরও পড়ুন: ২০২৩ সালে বিশ্বের শীর্ষ ১০ শক্তিশালী মুদ্রা
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ
৫ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র এবং ৩ মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের কোনো উর্ধ্বসীমা নেই। অপরদিকে দুই প্রকল্পে এই বিনিয়োগের নিম্নসীমা ব্যক্তি পর্যায়ের মতই যথাক্রমে ১০ টাকা এবং ১ লাখ টাকা।
সমন্বিত সঞ্চয়পত্র
এখানে বিনিয়োগটি হয় ৩-মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, পরিবার সঞ্চয়পত্র, এবং ৫-বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র- এই তিনটির বিপরীতে একসঙ্গে। এই বিনিয়োগের উর্ধ্বসীমা এক নামে ৫০ লাখ টাকা এবং যৌথ নামে ১ কোটি টাকা।
সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের সুবিধা
- আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রচলিত যে কোনো বিনিয়োগের মাধ্যমগুলোর তুলনায় সঞ্চয়পত্রে সুদের হার বেশি।
- সরকারি কর্তৃত্ব থাকায় এখানে ঝুঁকির পরিমাণ অন্যান্য বিনিয়োগের খাত থেকে অনেক কম। মেয়াদপূর্তীতে সুদ-আসল সহজেই পাওয়া যায়। সুদের হার বেশি হওয়ায় মোট আয়ের পরিমাণ অনেক বেশি আসে।
- সঞ্চয়পত্র ইস্যুকারী অফিসগুলোর যে কোনোটিতে নিবন্ধন করার পর প্রয়োজনে সে সঞ্চয়পত্র সেই অফিসের অন্য শাখায় স্থানান্তর করা যায়।
আরও পড়ুন: সমতা স্কিম: স্বল্প আয়ের ব্যক্তিরা যেভাবে সর্বজনীন পেনশন স্কিম-এ রেজিস্ট্রেশন করবেন
সঞ্চয়পত্র কেনার যোগ্যতা
ব্যক্তিপর্যায়ে প্রতিটি সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে প্রথম শর্ত হচ্ছে- একক বা যুগ্ম যে নামেই হোক না কেন, তাকে অবশ্যই প্রাপ্তবয়স্ক বাংলাদেশি নাগরিক হতে হবে। এছাড়া আরও যে যোগ্যতাগুলো প্রয়োজন্য তা হচ্ছে:
পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র
সঞ্চয়পত্র সাধারণত যে কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য নয়। তবে কৃষিভিত্তিক শিল্পের আয়ের ১০ শতাংশ অর্থ এবং কমকর্তা-কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থ দিয়ে এই সঞ্চয়পত্র কেনা যেতে পারে।
পরিবার সঞ্চয়পত্র
- ন্যূনতম ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সের যে কোনো বাংলাদেশি নারী
- কমপক্ষে ৬৫ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সের যে কোনো বাংলাদেশি নাগরিক
- শারীরিক প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে তাকে অবশ্যই একজন প্রাপ্তবয়স্ক বাংলাদেশি নাগরিক হতে হবে। এখানে প্রতিবন্ধীতার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের মাধ্যমে সত্যায়িত হওয়া আবশ্যক।
- নাবালক বা অপ্রাপ্তবয়স্ক অথবা তার পক্ষে পক্ষে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবে না।
আরও পড়ুন: স্বর্ণ বনাম হীরা: কোন বিনিয়োগটি বেশি লাভজনক?
৩ মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র
যে সকল প্রতিষ্ঠান প্রতিবন্ধীদের জন্য কাজ করে বা শুধুমাত্র প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখানে মুনাফার অর্থ প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে ব্যয় হবে- এই মর্মে সংশ্লিষ্ট জেলা সমাজ সেবা কার্যালয় থেকে প্রত্যয়নকৃত হওয়া আবশ্যক।
পেনশনার সঞ্চয়পত্র
- সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা-সরকারী, আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী
- সুপ্রীম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত মাননীয় বিচারপতি
- সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য
উপরোক্ত তিন ক্যাটাগরির অন্তর্ভূক্ত মৃত চাকরিজীবীর পারিবারিক পেনশন সুবিধাপ্রাপ্ত স্বামী/স্ত্রী/সন্তানগণ
সঞ্চয়পত্র কেনার পদ্ধতি
যে কোনো ধরনের সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের জন্য প্রথমে কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করতে হবে। অতঃপর যথাযথভাবে পূরণকৃত আবেদন ফর্মের সঙ্গে সংযুক্ত করে জমা দিতে হবে সঞ্চয়পত্র ইস্যূকারী সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে। চলুন, প্রথমে জরুরি নথিপত্রের ব্যাপারে পরিপূর্ণ ধারণ নেওয়া যাক।
আরও পড়ুন: জাতীয় পেনশন স্কিম: প্রবাসীদের আকৃষ্ট করছে না প্রবাস স্কিম
সঞ্চয়পত্র কেনার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
ব্যক্তিপর্যায়ে বিনিয়োগের জন্য
- প্রার্থী ও নমিনি প্রত্যেকের ২ কপি করে পাসপোর্ট আকারের সত্যায়িত ছবি (নমিনির ছবি ক্রেতা সত্যায়িত করবেন)
- আবেদনকারী ও নমিনির প্রত্যেকের জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি (নমিনি অপ্রাপ্তবয়স্ক হলে তার জন্মনিবন্ধন এবং সত্যায়নকারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি)
- বিনিয়োগের পরিমাণ ১ লাখ টাকার বেশি হলে প্রার্থীর (যুগ্মভাবে কেনার ক্ষেত্রে সকল প্রার্থীদের) ই-টিন সনদের কপি
- প্রার্থীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের এমআইসিআর (ম্যাগনেটিক ইন্ক ক্যারেক্টার রিকগনিশন) চেক ও এমআইসিআর সাদা চেকের কপি (যুগ্ম নামের ক্ষেত্রে যুগ্মভাবে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের চেক)
- পেনশনার সঞ্চয়পত্রের জন্য নিয়োগকর্তার পূরণকৃত কর্মকর্তা/কর্মচারির প্রাপ্ত গ্র্যাচুইটি ও প্রভিডেন্ট ফান্ড সনদপত্র এবং পিপিও (পেনশন পেমেন্ট অর্ডার)/ইপিপিও (ইলেক্ট্রনিক পেনশন পেমেন্ট অর্ডার)-এর ফটোকপি অথবা নিয়োগকর্তার অনুমোদনকৃত পিএসপি-২ ফরম।
আরও পড়ুন: সঞ্চয়পত্রে নয়, সুদ কমেছে ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমের: অর্থ মন্ত্রণালয়
প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে বিনিয়োগের জন্য
- প্রভিডেন্ট ফান্ড ও কৃষি ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের অর্থ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে,
- কর কমিশনারের কার্যালয় থেকে ইস্যু করা স্বীকৃতপত্র কিংবা সরকার গেজেট প্রজ্ঞাপন
- প্রভিডেন্ট ফান্ডের নামে ই-টিন
- পরিচালনা পরিষদ সভার কার্যবিবরণী
- লেনদেন পরিচালনাকারীদের স্বাক্ষর সংক্রান্ত প্রত্যয়ন
- প্রভিডেন্ট ফান্ডের ব্যাংক হিসাব বিবরণী এবং উক্ত হিসাবের এমআইসিআর চেক এবং এমআইসিআর সাদা চেকের কপি
- প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানের অর্থ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে
- সংশ্লিষ্ট সমাজসেবা জেলা কার্যালয় থেকে প্রত্যয়নপত্র
- পরিচালনা পরিষদের সভার কার্যবিবরণী
- লেনদেন পরিচালনাকারীদের স্বাক্ষর সংক্রান্ত প্রত্যয়ন
- প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব বিবরণী এবং উক্ত হিসাবের এমআইসিআর চেক এবং এমআইসিআর সাদা চেকের কপি।
আরও পড়ুন: ময়মনসিংহের সেই শিশুকে ১৩ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনে দেওয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের
সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের জন্য আবেদন
সব ধরনের সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের জন্যই একটি নির্দিষ্ট আবেদন ফর্ম পূরণ করে স্বাক্ষর করতে হয়। ফর্মটি সঞ্চয়পত্র ইস্যুকারী যে কোনো সরকারি অফিস থেকে বিনামূল্যেই দেওয়া হয়। এছাড়া জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের ওয়েব সাইট (https://nationalsavings.gov.bd/) থেকেও ডাউনলোড করা যাবে।
যে প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে সঞ্চয়পত্রের আবেদন ফর্ম প্রদান, জমা, এবং সঞ্চয়পত্র ইস্যু করা হয়, সেগুলো হলো:
- জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের অধীনস্থ সকল সঞ্চয় ব্যুরো কার্যালয়
- সদরঘাট ও ময়মনসিংহ অফিস ব্যতীত বাংলাদেশ ব্যাংকের সকল কার্যালয়
- ডাকঘর
- শরীয়াহ ভিত্তিক ব্যাংক ব্যতীত সকল তফসিলি ব্যাংক
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ সংক্রান্ত সঞ্চয়পত্র কেবল জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের অধীনস্থ সঞ্চয় ব্যুরোগুলোতে পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন: প্রবাস স্কিম: প্রবাসী বাংলাদেশিরা যেভাবে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে রেজিস্ট্রেশন করবেন
সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের সময় যে বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ
বিনিয়োগের উদ্দেশ্য
প্রতিটি সঞ্চয়পত্র ১ বছর পূর্তির পূর্বে নগদায়ন করা হলে তথা ভেঙ্গে ফেললে কোনো মুনাফা পাওয়া যায় না। শুধু বিনিয়োগকৃত মূল টাকাটি ফেরত দেওয়া হয়।
শুধুমাত্র ৫ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে পুনঃবিনিয়োগের জন্য পরবর্তীতে অতিরিক্ত ১ মেয়াদ নেওয়া যায়।
বিনিয়োগের পূর্বেই এই দুটি বিষয় ভালোভাবে খেয়াল রাখতে হবে। বিশেষ করে যারা জরুরি নগদ অর্থের প্রয়োজন অনুভব করে থাকেন, তাদের সঞ্চয়পত্র কেনার ব্যাপারে একটু সুক্ষভাবে চিন্তা করা উচিৎ।
অপরদিকে বিনিয়োগ উৎসাহীদের যথাযথ হিসেব করে নিতে হবে যে, ঠিক কত সময় পরে কাঙ্ক্ষিত রিটার্নটি তিনি আশা করছেন।
আয়করের উপর প্রভাব
সকল প্রকার সঞ্চয়পত্রের মুনাফা ১০ শতাংশ উৎসে কর কেটে তারপর প্রদান করা হয়। এর সুবাদেই আয়কর জমা দানের সময় মোট আয় থেকে কর রেয়াত পাওয়া যায়।
কিন্তু গত ২০২৩ সাল থেকে এই কর রেয়াত তুলে নেওয়া হয়েছে। নতুন আইন অনুযায়ী সঞ্চয়পত্রের মুনাফা দেওয়ার সময় সেই ১০ শতাংশ উৎসে কর কাটা হবে। সেই সঙ্গে আয়কর দেওয়ার সময় অন্যান্য আয়ের সঙ্গে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা যোগ করে মোট আয়ের উপর কর আরোপ হবে। ফলশ্রুতিতে কর রেয়াত তো থাকছেই না, বরং গুণতে হবে বাড়তি কর। এমন পরিস্থিতি সঞ্চয়পত্রের সুবিধাগুলোর ব্যাপারে নতুন করে ভাবার প্রয়াস যোগায়।
আরও পড়ুন: সুরক্ষা স্কিম: স্ব-নিযুক্ত বা অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মীরা যেভাবে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে রেজিস্ট্রেশন করবেন
মূল্যস্ফীতি
বাজারের সব থেকে আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি হচ্ছে মূল্যস্ফীতি। এর পরিণতিতে ব্যাংকিং অবস্থায় ভারসাম্যহীনতার মাধ্যমে সামগ্রিক অর্থনীতি অস্থিতিশীলতার দিকে এগিয়ে যায়।
২০২০ সাল থেকে ব্যাংকঋণের সুদ ছিলো সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ। কিন্তু ২০২২ সালে একদিকে শুরু হয় ডলার-সংকট, অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি উঠে যায় ১০ শতাংশের কাছাকাছি। ফলে ব্যাংকগুলোতে সুদের হারে শুরু হয় ভারসাম্যহীনতা। এ রকম অসঙ্গতিতে সঞ্চয়পত্রের উপযুক্ততা প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
শেষাংশ
বাজারে উপলব্ধ আর্থিক নিরাপত্তামুলক পণ্যগুলোর মধ্যে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ তুলনামুলক ভাবে ঝুঁকিহীন উপায়। মূল্যস্ফীতির বিচারে সরাসরি সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত এই খাত অধিকাংশ সময় নিজের ইতিবাচক অবস্থান ধরে রাখে। তবে বাজারের আকস্মিক অযাচিত পরিবর্তন ভিন্ন মেয়াদ ও সরকারি বিধিমালা নির্বিশেষে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে সঞ্চয়পত্রের উপর।
যেখানে বিলুপ্তি ঘটতে পারে এর ঐতিহ্যবাহী সুবিধাগুলোর। এমতাবস্থায় অনাকাঙ্ক্ষিত আর্থিক ক্ষতি থেকে বাঁচতে মূখ্য বিষয় হয়ে ওঠে বিনিয়োগের উদ্দেশ্য নিয়ে গবেষণা করা। কারণ দিন শেষে বিনিয়োগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার মূল চাবিকাঠি ব্যক্তির হাতে।
আরও পড়ুন: প্রগতি স্কিম: বেসরকারি চাকরীজীবীরা যেভাবে সর্বজনীন পেনশন স্কিম-এ রেজিস্ট্রেশন করবেন
৭ মাস আগে