কৃষি
কুড়িগ্রামে বন্যা-খরায় পাটে ক্ষতি ৫৬ কোটি টাকা
খরা,অতিবৃষ্টি ও বন্যায় কুড়িগ্রামের কৃষি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নষ্ট হয়ে গেছে পাট, আমন বীজতলা,শাক সবজি ও আউশসহ বিভিন্ন ফসলের হাজার হাজার হেক্টর জমির আবাদ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নিম্নাঞ্চলের পাটের আবাদ। তথ্যমতে জেলায় এবার কৃষিতে ১০৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আর এই ক্ষতির পরিমাণের অর্ধেকেরও বেশি হয়েছে পাটে।
ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমর ও জিঞ্জিরাম এই পাঁচ আন্তঃসীমান্ত নদীসহ ১৬ নদ নদীর জেলা কুড়িগ্রাম। যার ফলে বন্যাসহ নানা রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ এখানে লেগেই থাকে। এ বছর এপ্রিল ও মে মাসে বৃষ্টি হয়নি। খরার তীব্রতাও ছিল বেশি। এরপর পুরো জুন মাস ধরে অতিবৃষ্টি হয়েছে। যার পরিমাণ ১ হাজার ১০০ মিলিমিটার বলে জানিয়েছে রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিস। পরের মাস জুলাইয়ের প্রথম থেকে শুরু হয়েছে বন্যা। দুই সপ্তাহ ধরে বন্যা চললেও এখন পর্যন্ত নিম্নাঞ্চল থেকে পুরোপুরি পানি নেমে যায়নি।
আরও পড়ুন: খরায় পুড়ছে আম, ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের চাষীরা
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবার ১৭ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে সোনালি আঁশখ্যাত পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও খরার কারণে তা অর্জিত হয়নি। আবাদ হয়েছে ১৭ হাজার ২৫৬ হেক্টর জমিতে। এরপর অতিবৃষ্টি ও বন্যায় ২ হাজার ৮৮৪ হেক্টর জমির পাট সম্পূর্ণরুপে নষ্ট হয়ে গেছে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের কারণে বিচ্ছিন্ন যাত্রাপুর এবং ধরলা নদীর কারণে বিচ্ছিন্ন পাঁচগাছী ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের গ্রামগুলোতে পানিতে ডুবে থাকায় অনেক জমির পাট গাছ মরে গেছে। চাষিরা সেই পাট গাছ কেটে এনে পাটখড়ি হিসেবে ব্যবহারের জন্য শুকাচ্ছেন। কিছু কিছু চাষি পাট জাগ দিয়ে ফসল ঘরে তোলার চেষ্টা করছেন। তবে যেসব ক্ষেত থেকে পাট পাওয়া গেছে তার উৎপাদন ও মান ভালো হয়নি। ফলে লাভ তো দূরে থাক, আবাদ খরচ তোলা নিয়ে দুঃশ্চিতায় পড়েছেন পাটচাষিরা।
সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র পাড়ের ঘন শ্যামপুর এলাকার রহিমুদ্দিন নামের একজন কৃষক বলেন, আমি দুই বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছি। আর অল্প কিছুদিনের মধ্যে পাট কাটা যেত। এর মধ্যে বন্যায় পাট তলিয়ে সব গাছ মরে গেছে। এখন খড়ি করা ছাড়া কোন উপায় নাই। তাই পাট কেটে খড়ি হিসেবে শুকাচ্ছি।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা মো. মামুনুর রহমান জানান, জেলায় এবার ২১ হাজার ৩৪৬ জন কৃষকের ১০ হাজার ২৪০ মেট্রিকটন পাট উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যা টাকার অঙ্কে প্রায় ৫৬ কোটি টাকার মতো বলে জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, নিম্নাঞ্চল থেকে বন্যার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে রোপা আমন আবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এছাড়াও নিম্নাঞ্চলে বন্যার পানি দেরিতে নামলে আগাম রবি ফসল আবাদের পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।
আরও পড়ুন: ডক্টর আবেদ চৌধুরীর পঞ্চব্রীহি ধান: উদ্ভাবন, চাষ পদ্ধতি ও সম্ভাবনা
ডক্টর আবেদ চৌধুরীর পঞ্চব্রীহি ধান: উদ্ভাবন, চাষ পদ্ধতি ও সম্ভাবনা
বৃষ্টির মৌসুমে বন্যা সমস্যার অন্যতম প্রধান শিকার হয় দেশের শস্যখেতগুলো। বিশেষ করে ধানখেতের বিনষ্ট মোটা দাগে দেশকে খাদ্য ঘাটতি ও কৃষিভিত্তিক ক্ষয়ক্ষতির দিকে ঠেলে দেয়। প্রতি বছর প্রধান খাদ্যশস্যের ওপর এই চাপ প্রশমনে এক যুগান্তকারী উপায় হতে পারে পঞ্চব্রীহি ধান। অভিনব এই ধানের উৎপাদন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন অস্ট্রেলিয়া নিবাসী বাংলাদেশি জিনতত্ত্ববিদ ডক্টর আবেদ চৌধুরী। ব্যাপক গবেষণার মাধ্যমে উদ্ভাবিত ধানের এই জাতটি প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বেড়ে উঠতে সক্ষম। জাতটির এক রোপণেই ৫ বার ফলন পাওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমজুড়ে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
চলুন, পঞ্চব্রীহি ধানের উদ্ভাবন, চাষ পদ্ধতি ও সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
পঞ্চব্রীহি ধান: এক রোপণে ৫ ফলন
‘পঞ্চ’ মানে ৫, আর ‘ব্রীহি’ অর্থ ধান। একবার রোপণে একই শস্য থেকে বছরের ভিন্ন মৌসুমে মোট ৫ বার ফলনের কারণে ধানের নাম হয়েছে পঞ্চব্রীহি। ধান উৎপাদনের এই নতুন পদ্ধতিটি উদ্ভাবন করেছেন অস্ট্রেলিয়া নিবাসী বাংলাদেশি জিনতত্ত্ববিদ ডক্টর আবেদ চৌধুরী। ২০২৩ সালের ১২ অক্টোবর লন্ডন-বাংলা প্রেসক্লাবের এক সেমিনারের মাধ্যমে তিনি এই উদ্ভাবনের বিষয়টি প্রকাশ করেন। তার এই পদ্ধতিতে প্রথমবার ফসল তোলার পরে ধান গাছ সম্পূর্ণ না কেটে আরও চারবার ফলন পাওয়া যায়।
পঞ্চব্রীহি ধানের সুবিধা
ধান গাছের সাধারণত একবার ফলন পর্যন্ত আয়ু থাকে। কিন্তু এই ধান প্রথমবার ফসল তোলার পর ৪ বার পর্যন্ত বাড়তে পারে। যে কোনো ঋতুতে বৃদ্ধি পাওয়া এই শস্য প্রায় সারা বছর ধান দিতে পারায় এটি বর্ষজীবীর কাতারেও পড়ে।
আরও পড়ুন: প্রধান খাদ্যশস্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা ধরে রাখতে পেরেছে বাংলাদেশ: কৃষিমন্ত্রী
সাধারণ ধানের ক্ষেত্রে বোরো কাঁটার পরে আউশ রোপণ করা হয়। তারপর আউশের মৌসুমে ফসল তুলে ধরা হয় আমন। এভাবে প্রতিবার চাষের সময় জমি থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড, মিথেন, ও নাইট্রাস অক্সাইডের মতো দূষিত গ্যাস নিঃসরণ হয়। কিন্তু পঞ্চব্রীহির ক্ষেত্রে এক চাষেই ৫ বার ফলন পাওয়ার কারণে পরিবেশ দূষণের মাত্রা ৮০ ভাগ হ্রাস পায়।
চাষাবাদ অন্যান্য ধানগুলোর মতো সহজ হওয়ায় সামগ্রিক খরচও অনেকটা কম হয়।
উদ্ভাবনের নেপথ্যের গবেষণা
পূর্বে ডক্টর আবেদ চৌধুরী তার পিএইচডি গবেষণাকালে ‘রেকডি’ নামক একটি নতুন জিন আবিষ্কার করেন। এই উদ্ভাবন ৮০’র দশকে ইউরোপ ও আমেরিকাজুড়ে ব্যাপক আগ্রহের জন্ম দিয়েছিল। তার উদ্ভাবিত ক্যান্সার ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধক রঙিন ভুট্টা বিশ্বজুড়ে বহুল সমাদৃত। বর্তমানে তিনি অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় বিজ্ঞান সংস্থার অধীনে একদল বিজ্ঞানীর সমন্বয়ে গঠিত গবেষকদলের প্রধান হিসেবে কাজ করছেন।
ধান গবেষণার জন্য ডক্টর আবেদ চৌধুরী বেঁছে নিয়েছিলেন নিজের জন্মস্থান সিলেটের মৌলভীবাজার জেলা। সেখানকার কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের কানিহাটি গ্রামে প্রায় ২০ বছর ধরে তিনি ধান নিয়ে গবেষণা করেন। শুরুটা হয়েছিল ২০১০ সালে ২৫ বর্গমিটার জমিতে ২০টি ধানের জাত নিয়ে। এগুলোর মধ্যে স্থানীয় জাতের পাশাপাশি ছিল ফিলিপাইন ও চীন সহ বিভিন্ন দেশের কয়েকটি ধান।
তার গবেষণার সহযোগী ছিল গ্রামের স্বল্পশিক্ষিত ও নিরক্ষর কৃষকগণ, যারা মাঠপর্যায়ের গবেষণায় পুরোটা সময় পরিশ্রম করেছে।
আরও পড়ুন: পরিবর্তনশীল জলবায়ুর জন্য কাসাভা উপযুক্ত, হেক্টরপ্রতি ফলন ৩৫-৫০ টন: বাকৃবি অধ্যাপক
কোনো রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার ছাড়াই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ধানের বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে হাইব্রিড ঘটানো হয়। অতঃপর যে জাতগুলোর ধান পেঁকে যাওয়ার পর কাটা হলে আবার ধানের শীষ বের হয়, সেগুলোকে আলাদা করা হয়। এভাবে বেশ সুক্ষ্ম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচিত হয় মোট ১২টি জাত।
এরপর টানা ৩ বছর চলে চাষাবাদ। এখানে দেখা যায় জাতগুলোর প্রত্যেকটিই দ্বিতীয়বার ফলন দিচ্ছে। একই গাছে তৃতীয়বার ফলনের চেষ্টা করা হলে সেটিও সফলতা পায়। পরিশেষে ৪টি জাত বাদে বাকি সবগুলো চতুর্থবার ফলন দেওয়া পর্যন্ত টিকে থাকে।
অতঃপর গবেষণালব্ধ এই ৪টি জাতের ওপর আলাদাভাবে মনোন্নিবেশ করে আরও সুক্ষ্মভাবে গবেষণা শুরু হয়। ২০২১ সালে জানুয়ারিতে ২ বিঘা পরিমাণ জমিতে রোপণ করা হয় বোরো ধানের এই ৪টি জাত। উপযুক্ত ইউরিয়া সার প্রয়োগের পাশাপাশি নেওয়া হয় সঠিক সেচ ও পরিচর্যা। এর ফলে ১১০ দিনের মধ্যে ফসল চলে আসে ৮৫ সেন্টিমিটার থেকে ১ মিটার উচ্চতার গাছে। পরে পরিকল্পনামাফিক মাটি থেকে ঠিক ৩৫ সেন্টিমিটার উচ্চতায় ধান কেটে সংগ্রহ করা হয়।
সে বছর মে মাসের প্রথম দিকে প্রথম পর্যায়ে কাটা ধানে হেক্টরপ্রতি উৎপাদন হয় ৪ টন। তারপর থেকে ৪৫ দিন পর পর প্রতি মৌসুমে হেক্টরপ্রতি ফলন আসে ২ থেকে ৩ টন। সব মিলিয়ে জাতগুলো থেকে হেক্টরপ্রতি প্রায় ১৬ টন ফসল পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন: মিয়াজাকি বা সূর্যডিম আম কেন এত দামি
পঞ্চব্রীহি ধান চাষের পদ্ধতি
বছরের যে কোনো সময়ে রোপণ করা যায় এ ধান। চারাগুলো রোপণ করতে হয় পরস্পরের থেকে ৪ থেকে ৫ সেন্টিমিটার দূরত্বে। এতে করে প্রত্যেকটি গাছ মাটি থেকে সমান শক্তি নিয়ে বেড়ে উঠতে পারে।
বছরের প্রথমে বোরোর মৌসুমে এ ধান পাঁকতে ১১০ দিন সময় নেয়। অন্যান্য ধানের ক্ষেত্রে সাধারণত প্রথমবার ধান কাটার পরে জমিকে আবার প্রথম থেকে প্রস্তুত করতে হয়। কয়েক সপ্তাহ এমনকি গোটা মাস খালি রাখার পর জমিতে আউশ বা আমন লাগানো যায়। কিন্তু এখানে ঐ বোরোর গাছ থেকেই ৪৫ দিন অন্তর অন্তর ২ বার আউশ এবং সবশেষে ২ বার আমন ধান পাওয়া যায়। প্রথমবারের তুলনায় পরের ফলনগুলোতে উৎপাদন কিছুটা কম হলেও ৫ বারের ফলন মিলিয়ে মোট উৎপাদন প্রায় ৫ গুণ বেশি হয়।
ধানের বীজ সংগ্রহের সময় পৃথক কোনো প্রক্রিয়া নেই। অন্যান্য ধানের মতো কৃষকরা নিজেরাই বীজ সংগ্রহ করতে পারেন। অন্য ধানের মতো একই ভাবে চারা তোলার আগে বীজতলায় রোপণ করতে হয়।
নির্দিষ্ট পরিমাপে ধান কেটে নেওয়ার পর মোড়া অংশগুলোতে থাকা লতাপাতা ও ঘাস ছেটে সার দিতে হয়। পোকামাকড় ধরলে অন্য ধানের মতোই সামান্য কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। খুব শক্ত ধান পঞ্চব্রীহির বেড়ে ওঠার জন্য পরিচর্যার এটুকুই যথেষ্ট। কেননা ঝড়-বৃষ্টি ও বন্যা এই গাছ নষ্ট করতে পারে না।
আরও পড়ুন: জিনোম সেন্টারকে কাজে লাগিয়ে পাটের উৎপাদন বাড়াতে হবে: কৃষিমন্ত্রী
নতুন উদ্ভাবিত এই ধানের সম্ভাবনা
হেক্টর প্রতি ২০ টন উৎপাদন করা সম্ভব এই নতুন ধান। কিন্তু তার জন্য দেশের প্রতিটি কৃষকের জন্য এই ধান সহজলভ্য হতে হবে।
ডক্টর আবেদ চৌধুরীর মতে, এ নতুন ধান চাষ পদ্ধতি সারা দেশের কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে গেলে আগামী ৫০ বছর দেশবাসীর খাদ্যের যোগান নিয়ে আর চিন্তার অবকাশ থাকবে না। এই চাষ একদিকে যেমন সময় বাঁচায়, অন্যদিকে অর্থের দিক থেকেও সাশ্রয়ী।
পঞ্চব্রীহি নিয়ে এখনও গবেষণা অব্যাহত রয়েছে। এই জাত থেকে শুধু ৫ বার নয়, ভবিষ্যতে ১৫ বা ২০ বারও ধান পাওয়া যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ডক্টর আবেদ।
ধানের চাষাবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারের অনুমোদনক্রমে বীজগুলো বিনামূল্যে দেশের ৮৭ হাজার গ্রামে সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ড. আবেদ। এর ফলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকগণ নতুন এই চাষাবাদের প্রতি উদ্বুদ্ধ হবেন।
শেষাংশ
প্রতি বছর বন্যা প্রবণ দেশের ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর খাদ্যসংকটের একটি কার্যকর সমাধান হতে পারে পঞ্চব্রীহি ধান। একবার রোপণ করে ৫ বার ফলনে কমে যাবে কৃষকদের সময়, শ্রম ও খরচ। মাঠ পর্যায়ে ঘন ঘন চাষাবাদের পাশাপাশি উত্তরোত্তর গবেষণা নতুন ধান উৎপাদন পদ্ধতিটিকে আরও বিকশিত করে তুলতে পারে। এর নিরিখে কৃষি ক্ষেত্রে অপার সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচন করতে পারে ডক্টর আবেদের সৃষ্টি করা মাইলফলক।
আরও পড়ুন: বছরে চার ফসলের সম্ভাবনা জাগাচ্ছে ব্রি৯৮ আউশ ধান: কৃষিমন্ত্রী
চকচকে চাল খাওয়া বন্ধ করলে চালের দাম কমবে: খাদ্যমন্ত্রী
চকচকে চাল খাওয়া বন্ধ করলে চালের দাম কমবে বলে মন্তব্য করেছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
আজ বৃহস্পতিবার (৯ মে) ঢাকায় ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) একটি আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘গত ২০২২-২৩ অর্থ বছরে এক কেজি চালও আমদানি করতে হয়নি। বরং উৎপাদন চাহিদার চেয়ে বেশি হয়েছে। এখন আমরা অনায়াসে ৫-৭ লাখ টন চাল রপ্তানি করতে পারি, সে অবস্থা হয়েছে।’
আরও পড়ুন: কৃষকদের হয়রানি করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে: খাদ্যমন্ত্রী
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের শুধু পলিশ করে যে চাল নষ্ট হচ্ছে সেটা অর্ধেক রপ্তানি করলেই হবে। কারণ উৎপাদিত প্রায় ৪ কোটি টনের মধ্যে ৩ শতাংশ হারে প্রায় ১২ লাখ টন চাল পলিশ করার কারণে অপচয় হচ্ছে। আমাদের চাল ৫ দফা পলিশ করে চকচকে করা হচ্ছে। দুবার পলিশ করলেও ৫-৭ লাখ টন চাল বাড়বে।’
তিনি বলেন, দফায় দফায় পলিশ করার পর চালের মধ্যে শুধু কার্বোহাইড্রেট ছাড়া অন্য কোনো পুষ্টি থাকছে না। এতে খরচ হচ্ছে বিদ্যুৎ, শ্রমিকের মজুরি সবকিছু মিলে প্রতি কেজিতে প্রায় ৪ টাকা। যে ভার ভোক্তাকে বহন করতে হচ্ছে।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা নতুন আইন করে এ পলিশ বন্ধ করছি। মিনিকেট বা বিভিন্ন নামে চাল বাজারজাত করাও বন্ধ করেছি। ভোক্তাদের আমি বলব, আপনারা চকচকে চাল খাওয়া বন্ধ করুন। তাহলে যেমন চালের দাম কমবে, আমরা চাল রপ্তানি করতেও সফল হব। এ আইন কার্যকর হওয়ার পর আগামী আমন মৌসুম থেকে চাল পলিশ করলে মিলমালিকরা জরিমানার শিকার হবে। আসুন সকলের প্রচেষ্টায় আমরা চাল রপ্তানির প্রস্তুতি নেই।’
আরও পড়ুন: সরকারি খাদ্য গুদামে হয়রানি করা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে: খাদ্যমন্ত্রী
প্রধান খাদ্যশস্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা ধরে রাখতে পেরেছে বাংলাদেশ: কৃষিমন্ত্রী
কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুস শহীদ বলেছেন, চাল, শাকসবজি, আমসহ অনেক ফসল উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের অব্যাহত কৃষিবান্ধব নীতির কল্যাণে ২০০৯ সাল থেকে কৃষি উৎপাদন ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সোমবার (৬ মে) সন্ধ্যায় নেদারল্যান্ডসের ওয়াগেনিঙেন বিশ্ববিদ্যালয় ও রিসার্চে 'বাংলাদেশের কৃষির রূপান্তর ও ভবিষ্যৎ সহযোগিতা' শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: তরুণ প্রজন্মকে কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে এগিয়ে আসতে হবে: সিমিন হোসেন
মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রধান খাদ্যশস্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা ধরে রাখতে পেরেছে এবং কিছু শাকসবজি, ফলমূল এবং মাছ উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষস্থানে উঠে এসেছে ও নেতৃত্বে দিচ্ছে। কৃষিখাতে বিশাল ভর্তুকি প্রদান, গবেষণার মাধ্যমে কৃষিতে উদ্ভাবন, আধুনিক প্রযুক্তির সম্প্রসারণ এবং যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে এই অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে।’
তিনি বলেন, কৃষিপণ্যের প্রক্রিয়াজাতকরণ ও টেকসই সরবরাহ ব্যবস্থা (সাপ্লাই চেইন) গড়ে তোলা এখন আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। পর্যাপ্ত সংরক্ষণাগারের অভাব ও প্রক্রিয়াজাতকরণ বা ভ্যালু চেইন ব্যবস্থা শক্তিশালী না হওয়ায় ফসল তোলার পর অনেক অপচয় হচ্ছে। এতে কৃষকরা অনেক সময় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
ড. আব্দুস শহীদ বলেন, ‘নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার ক্ষেত্রে কৃষিখাত আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। বাংলাদেশের কৃষিকে রূপান্তরের মাধ্যমে টেকসই ও লাভজনক করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এক্ষেত্রে নেদারল্যান্ডসের কিছু যুগান্তকারী প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও গবেষণা বাংলাদেশে প্রবর্তন করা হবে।’
আরও পড়ুন: খরায় পুড়ছে আম, ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের চাষীরা
কৃষি মন্ত্রণালয় এবং নেদারল্যান্ডসের বাংলাদেশ দূতাবাস কৃষি উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট বৈশ্বিক অংশীজন ও কৃষি ব্যবসায়ীদের নিকট বাংলাদেশের কৃষিখাতের সম্ভাবনা ও বিনিয়োগের সুযোগ তুলে ধরতে এ গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে।
নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম. রিয়াজ হামিদুল্লাহ গোলটেবিল আলোচনাটি সঞ্চালনা করেন। কৃষিসচিব ওয়াহিদা আক্তার, ওয়াগেনিঙেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী বোর্ডের সদস্য রেন্স বোচওয়াল্ড, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার, কানাডার সাস্কাচুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট বালজিত সিং, কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ড. মো: মাহমুদুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
আরও পড়ুন: পরিবর্তনশীল জলবায়ুর জন্য কাসাভা উপযুক্ত, হেক্টরপ্রতি ফলন ৩৫-৫০ টন: বাকৃবি অধ্যাপক
তরুণ প্রজন্মকে কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে এগিয়ে আসতে হবে: সিমিন হোসেন
তরুণ প্রজন্মকে কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে এগিয়ে আসতে আহ্বান জানিয়েছেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন (রিমি)।
তিনি বলেন, কৃষি উদ্যোক্তাদের সর্বাত্মক সহায়তা দিতে সরকার সব ধরনের প্রণোদনা দিচ্ছে। দেশের তরুণ প্রজন্মের এই সুযোগটি গ্রহণ করা উচিত। তারাই হতে পারে কৃষিখাতের পরিবর্তনের প্রতিনিধি।
শুক্রবার (৩ মে) গাজীপুরের কাপাসিয়ায় বরুন উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী কৃষি উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণে এ কথা বলেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসি (ইউসিবি) তাদের সামাজিক দায়িত্বের অংশ হিসেবে কৃষিখাতে সহায়তামূলক প্রকল্প ‘ভরসার নতুন জানালা’র উদ্যোগে এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচি আয়োজন করে।
সিমিন হোসেন বলেন, ‘কৃষকেরা যেমন আমাদের অনুপ্রেরণার একটি বড় উৎস, ঠিক তেমনই আমাদের তরুণরাও। অনেক তরুণ উদ্যোক্তা আজকাল কৃষিখাতে আগ্রহী হচ্ছেন এবং অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন। তবে, তাদের সঠিক নির্দেশনা দরকার। ইউসিবির এই উদ্যোগ তরুণদের এ বিষয়ে আলোকিত করবে এবং সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’
গাজীপুরের বিভিন্ন উপজেলা থেকে নির্বাচিত ২০০ কৃষি উদ্যোক্তার উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয় এই দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মসূচি।
এ সময় ব্যবসায়িক পরিকল্পনা, বিপণন, ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতা, ব্যাংকিং ও কৃষি উদ্যোগের আর্থিক দিক সম্পর্কিত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোকপাত করার পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে আরও ছিলেন- বিটিভির কৃষিভিত্তিক অনুষ্ঠান ‘মাটি ও মানুষ’-এর জনপ্রিয় উপস্থাপক ও কৃষিতথ্য বিশ্লেষক রেজাউল করিম সিদ্দিকসহ স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
দেশে এই প্রথম কোনো বাণিজ্যিক ব্যাংক কৃষিখাতে এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরাসরি কৃষকদের সহায়তা করছে।
এই উদ্যোগের আওতায় দেশব্যাপী বৃক্ষরোপণ, কৃষি উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ, বজ্রপাতপ্রবণ এলাকায় বজ্রপাত নিরোধক দণ্ড স্থাপন, এআই-নির্ভর ‘আরো মাছ (মোরফিশ)’ ডিভাইসের মতো কৃষি-সম্পর্কিত স্মার্ট ডিভাইস বিতরণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
পাশাপাশি, এই প্রকল্পের আওতায় চর ও লবণাক্ততাপ্রবণ এলাকায় খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা উন্নত করতে জলবায়ুসহিষ্ণু প্রযুক্তি বিকাশের মাধ্যমে ক্লাইমেট-স্মার্ট কৃষি বিপণন ব্যবস্থা উন্নয়নের লক্ষ্যে গবেষণা পরিচালনা করা হচ্ছে।
খরায় পুড়ছে আম, ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের চাষীরা
আমের রাজধানী হিসেবে পরিচিত চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবার প্রচণ্ড দাবদাহে আম চাষে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। তীব্র তাপপ্রবাহে বোঁটা শুকিয়ে গাছ থেকে ঝরে পড়ছে আম। পরিস্থিতি সামাল দিতে চাষীরা আমগাছে সেচ ও বালাইনাশক স্প্রে দিলেও তেমন কাজে আসছে না। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে এবার জেলায় আমের মারাত্মক ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আম উৎপাদনে এ বছর এমনিতেই অফ ইয়ার, অর্থাৎ কম ফলনের বছর। তার উপর বিরূপ আবহাওয়া যেন পিছু ছাড়ছে না আম চাষীদের। মৌসুমের শুরুতেই অতিরিক্ত শীতের কারণে আমের মুকুল এসেছে দেরিতে; মুকুল ফোটার সময় হয়েছে বৃষ্টি। তাতে অনেক মুকুল নষ্ট হয়ে আম এসেছে কম। এ নিয়ে এমনিতেই মুখে হাঁসি ছিল না চাষী ও বাগান মালিকদের। আর এখন তীব্র দাবদাহে ঝরে পড়ছে আম। ফলে আমের ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তারা। যাদের সেচ দেয়ার সুবিধা আছে তারা বাড়তি টাকা খরচ করে বাগানে সেচ দিয়ে ও স্প্রে করে আমের ঝরে পড়া রোধের চেষ্টা করছেন।
আরও পড়ুন: পরিবর্তনশীল জলবায়ুর জন্য কাসাভা উপযুক্ত, হেক্টরপ্রতি ফলন ৩৫-৫০ টন: বাকৃবি অধ্যাপক
জেলার বেশ কয়েকটি এলাকার আম বাগান ঘুরে দেখা গেছে, গাছের নিচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ঝরে পড়া ছোট ছোট আম। অন্যান্য বছর এ সময়ে আমের আকার অনেকটা বড় হয়ে যায়, কিন্তু বৃষ্টির অভাবে এবার আমগুলো তেমন বড় হয়নি। কোনো কোনো বাগানে ডিজেলচালিত সেচযন্ত্র বসিয়ে গাছের গোড়ায় পানি দেওয়া হচ্ছে। আবার অনেক বাগানে সে সুযোগ নেই। বৈরী আবহাওয়ার কারণে আম ঝরে পাড়া অব্যাহত থাকায় চাষীদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই।
জেলা শহরের আমচাষী আব্দুল অহিদ বলেন, ‘এবার আমের মুকুল এমনিতেই কম হওয়ায় গুটিও খুব কম ছিল, কিন্তু পরবর্তীতে বৃষ্টির দরকার থাকলেও এখন পর্যন্ত বৃষ্টির দেখা নেই, চলছে খরা। বৃষ্টির অভাবে বোটা শুকিয়ে প্রতিদিন ঝরে পড়ছে আম। গাছের গোড়ায় পানি দিয়ে সেচ দিচ্ছি, স্প্রে করছি, কিন্তু তারপরও আমের ঝরে পড়া বন্ধ হচ্ছে না।’
এছাড়া বৃষ্টি না হওয়ায় আমের আকারও বড় হচ্ছে না বলে জানান তিনি।
আজাইপুর এলাকার আম চাষী আবদুর রাকিব বলেন, ‘আম নিয়ে মন ভালো নেই। প্রচণ্ড খরায় আম ঝরে পড়ছে। গাছে সেচ দিচ্ছি, ছত্রাকনাশক স্প্রে করছি, কিন্তু কাজ হচ্ছে না। প্রচণ্ড দাবদাহে আম ঝরছে তো ঝরছেই। এ পর্যন্ত তিনবার স্প্রে করলাম, উপাদন খরচ বাড়তেই আছে। তার উপর যদি আমের ফলনে মার খাই তাহলে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ব।’
শিবগঞ্জ এলাকার আমচাষী আহসান হাবিব বলেন, ‘এবার শীতের কারণে মুকুল দেরিতে এসেছে। তারপর গত ২০ মার্চ যে বৃষ্টি হয়েছিল, তাতে মুকুলের ক্ষতি হয়েছিল। এখন যে তাপদাহ চলছে এর ফলে গাছে যে আম আছে সেগুলোও ঝরে পড়ছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় অনেকে গাছে সেচ দিতে পারছে না। আবার কেউ সেচ দিচ্ছে তো খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় আমরা শঙ্কায় আছি যে আমের উৎপাদন কমে যাবে এবং আমরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে যাব।’
আরও পড়ুন: বোরো মৌসুমে ১৭ লাখ টন ধান-চাল সংগ্রহ করবে সরকার
একই এলাকার আরেক আমচাষী শামীম বলেন, ‘সামগ্রিক দিক বিবেচনা করলে আমাদের জেলায় এবার আমের অবস্থা খুবই খারাপ। কারণ আমরা যে লক্ষ্য নিয়ে বাগানের পরিচর্যা করেছি বা করে যাচ্ছি, সেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে এবার আমরা পৌঁছাতেই পারব না। কারণ আমার কাছে মনে হচ্ছে, এবার আমের উৎপাদনে বিপর্যয় ঘটবে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. পলাশ সরকার বলেন, ‘আমাদের চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবার আমের মুকুল কম হয়েছে। দেখা গেছে, ফেব্রুয়ারি মাসে ও মার্চ মাসে সকালের দিকে ঘন কুয়াশা পড়েছে; সেটা ক্ষতি করেছে। আবার বৃষ্টি হয়েছে, হালকা ঝড়ও হয়েছে; এতে যে আম গাছগুলোতে মুকুল ফুল পর্যায়ে ছিল বৃষ্টিতে সে ফুল নষ্ট হয়ে গেছে। তারপর এখন তীব্র তাপদাহ চলছে। এতে আম ঝরে পড়ছে। সামনে শিলাবৃষ্টি, কালবৈশাখী ঝড়ের আশঙ্কাও থাকছে। ফলে আমরা যে কাঙ্ক্ষিত ফলন চাচ্ছি সেটা হয়তো নাও হতে পারে।’
কৃষি বিভাগের হিসেবে চলতি মৌসুমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৩৭ হাজার ৬০৪ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। আর এ থেকে এবার জেলায় আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিকটন। গত মৌসুমে জেলায় আম উৎপাদন হয়েছিল ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৬২৫ মেট্রিকটন।
পরিবর্তনশীল জলবায়ুর জন্য কাসাভা উপযুক্ত, হেক্টরপ্রতি ফলন ৩৫-৫০ টন: বাকৃবি অধ্যাপক
দেশের খরাসহিঞ্চু অঞ্চলে ও কম উর্বরতা সম্পন্ন মাটিতে অন্য কোনো ফসল ভালোভাবে না জন্মালেও কাসাভা হেক্টরপ্রতি ফলন দেয় গড়ে ৩৫ থেকে ৫০ টন। যেখানে ধান ও অন্যান্য দানাদার ফসলের ফলন হেক্টরপ্রতি ২ থেকে ১০ টন।
এছাড়া পাহাড়ের ঢাল, উঁচু জমি, খেতের আইল এমনকি পতিত জমিতেও কাসাভার ভালো ফলন পাওয়া যায়।
শিমুল আলু বা কাসাভা চাষে ধানের মতো জলাবদ্ধতা পরিবেশের প্রয়োজন হয় না। তাই কাসাভা চাষে কৃষকের সেচের খরচ নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। এছাড়া কাসাভা গাছে তেমন কোনো রোগবালাইও হয় না।
বুধবার (২৪ এপ্রিল) বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সভাকক্ষে বিকাল ৪টায় কৃষকদের মাঝে কাসাভার বীজ বিতরণ করার সময় এসব তথ্য জানান ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. মো. ছোলায়মান আলী ফকির।
আরও পড়ুন: মশার দেহে ডেঙ্গু ভাইরাসের উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ বাকৃবি গবেষকের
এ সময় কৃষকদের মাঝে তিনি কাসাভার বিভিন্ন উপকার, খাবার পদ্ধতি, বাণিজ্যিক ব্যবহার, চাষাবাদ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
কাসাভাকে আপদকালীন একটি ফসল উল্লেখ করে অধ্যাপক বলেন, কাসাভা পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম শর্করা উৎপাদনকারী ফসল এবং বিশ্বের প্রায় ৮০ কোটি মানুষের প্রধান খাদ্য। পরিবর্তনশীল জলবায়ুর জন্য কাসাভা উপযুক্ত একটি ফসল। পতিত জমিতে চাষাবাদ করা বলে জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার করা যাবে।
কাসাভার বিভিন্ন ব্যবহার সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ছোলায়মান আলী ইউএনবিকে বলেন, গার্মেন্টস, কাগজ, ওষুধ, বেকারি, টেস্টিং সল্টসহ বিভিন্ন শিল্পে এর ব্যবহার রয়েছে। এছাড়া কাসাভা থেকে আটা তৈরি করা যায়। এমনকি কাসাভা পশুখাদ্য ও জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।
আরও পড়ুন: তাপপ্রবাহে বাকৃবিতে ক্লাস অনলাইনে, পরীক্ষা সশরীরে
কাসাভার বীজ পাওয়া ময়মনসিংহের চকছত্রপুর এলাকার এক কৃষক রিয়াদ হোসেন বলেন, ‘আজকের এই প্রদর্শনী থেকে কাসাভা ও এর বিভিন্ন ব্যবহার সম্পর্কে জানতে পেরেছি। কাসাভার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে না জানায় চাষাবাদে আগ্রহী ছিলাম না। এখন নিজেও চাষাবাদ করব এবং অন্য কৃষককেও জানাব।’
আরেক কৃষক মো. মিলন কাসাভার বীজ নিজ জমিতে আবাদ করবেন বলে জানান।
বীজ বিতরণের সময় অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. শাহানারা বেগম ও অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. আজাদ-উদ-দৌলা প্রধানসহ ময়মনসিংহের বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষক।
আরও পড়ুন: বাকৃবি: একজনও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নেই ৬ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য
বোরো মৌসুমে ১৭ লাখ টন ধান-চাল সংগ্রহ করবে সরকার
আসন্ন বোরো মৌসুমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ১৭ লাখ টন ধান ও চাল কিনবে সরকার। এর মধ্যে ৫ লাখ টন ধান, ১১ লাখ টন সেদ্ধ চাল, ১ লাখ টন আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রতি কেজি বোরো ধানের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ধান ৩২ টাকা, সেদ্ধ চাল ৪৫ টাকা এবং আতপ চাল ৪৪ টাকা।
আজ রবিবার (২১ এপ্রিল) সচিবালয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের সভাপতিত্বে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে খাদ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। একই সঙ্গে ৩৪ টাকা দরে ৫০ হাজার টন গম কেনারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিটি।
খাদ্যমন্ত্রী জানান, গত বছর ধানের সংগ্রহমূল্য ছিল ৩০ টাকা ও চালের সংগ্রহ মূল্য ছিল ৪৪ টাকা। ৭ মে থেকে ধান-চাল কেনা শুরু হবে, চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত।
ধান কেনার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘ধান যদি ৫ লাখ টনের বেশি কেনা যায় তা করা হবে। কৃষকের সুবিধার্থে আরও ধান আমরা কিনব। এক্ষেত্রে ওপেন রাখা হয়েছে। কমিটিতে সেটাই সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
হাওরসহ যেখানে যেখানে ধান কাটা শুরু হয়েছে, সেখানে ৭ মে থেকে ধান সংগ্রহ শুরু হবে বলেও জানান মন্ত্রী।
বোরো ধান ও চালের উৎপাদন খরচ গত বছরের থেকে বেশি হওয়ায় এবার সংগ্রহ মূল্য কিছুটা বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দামের কারণে কৃষক একটু উৎসাহিত হোক। না হয় কৃষক অন্য শস্যে চলে যাচ্ছে। কিন্তু, আমাদের চালের প্রয়োজন।’
বর্তমানে সরকারি গুদামে চাল ও গম মিলিয়ে মোট খাদ্যশস্যের মজুত ১২ লাখ টন রয়েছে বলে জানিয়েছেন সাধন চন্দ্র মজুমদার।
ইতোমধ্যে বন্দরে ১ লাখ ২০ হাজার টন গম এসে পৌঁছেছে জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আরও ৩ লাখ গম কেনা প্রক্রিয়াধীন।’
বার্ষিক ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০২৬ অর্থবছরে কৃষিতে সাড়ে ৩৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের মধ্যে কৃষি খাতের গড় বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে তিন বছরে কৃষি উন্নয়নে ৩৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে বাংলাদেশ সরকার।
'মধ্যমেয়াদী সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি (২০২৩-২৪ থেকে ২০২৫-২৬)' অনুসারে, এই বিনিয়োগ খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন এবং ন্যায়সঙ্গত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে কৃষির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার উপর জোর দেয়।
জিডিপিতে একটি হ্রাস প্রবণতা থাকা সত্ত্বেও এটি বিশেষত গ্রামীণ অঞ্চলে কৃষিনির্ভর সংখ্যাগরিষ্ঠদের জীবিকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্য উৎপাদন ও প্রতিকূলতা মোকাবিলায় সক্ষমতা বাড়াতে সরকারের গৃহীত কৌশলগুলোর মধ্যে রয়েছে- উচ্চফলনশীল ও প্রতিকূলতা সহিষ্ণু ফসলের জাত উদ্ভাবন, যান্ত্রিকীকরণ-সেচ সম্প্রসারণ এবং বীজ ও সারের মতো সাশ্রয়ী মূল্যের উপকরণের প্রাপ্যতা বাড়ানো।
আরও পড়ুন: বাকৃবিতে এনএসটির অর্থায়নে বিটরুট গবেষণায় দ্বিগুণ ফলন
নীতি নথিতে প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষির আধুনিকায়নের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি উদ্যোগ তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- সম্পদ সংরক্ষণের জন্য ভূগর্ভস্থ পানির উপর সেচের জন্য ভূপৃষ্ঠের পানির ব্যবহার বাড়ানো, নবায়ণযোগ্য জ্বালানি সমাধানগুলো অন্তর্ভুক্ত করা এবং ফসল পরিচর্যার জন্য রিমোট সেন্সিং নিয়োগ করা।
সরকার একটি টেকসই ও স্বনির্ভর কৃষি কাঠামো গড়ে তুলতে ভর্তুকি, আর্থিক প্রণোদনা এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের মাধ্যমে এই খাতকে সহায়তা অব্যাহত রেখেছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের উপখাত থেকেও উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। এটি কেবল জিডিপি যথাক্রমে ২ দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং ১ দশমিক ৯১ শতাংশই বৃদ্ধি করে না, বরং জনসংখ্যার ১২ শতাংশেরও বেশি মানুষের প্রয়োজনীয় প্রোটিনের উৎস হিসেবে কাজ করে এবং জীবিকার সংস্থান করে। এই ক্ষেত্রগুলোর অর্জনসমূহের মধ্যে রয়েছে মাছ, মাংস এবং ডিম ও দুধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের আশা করা হচ্ছে। তাছাড়া রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের জন্য এসব খাত অত্যাবশ্যক।
আরও পড়ুন: নওগাঁয় জিরা চাষে সফলতা, জহুরুল ইসলামের দৃষ্টান্ত
ভবিষ্যতে এসব খাতের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি, উন্নত ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তি গ্রহণ এবং সংরক্ষণ প্রক্রিয়া উন্নত করার জন্য বিশেষ করে ছোট ইলিশ মাছের ('জাটকা') জন্য উন্নয়ন প্রকল্প চালু করতে প্রস্তুত মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
টেকসই কৃষির গুরুত্ব বিবেচনায় পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা আরেকটি মৌলিক ক্ষেত্র। আন্তঃসীমান্ত নদী থেকে ন্যায়সঙ্গত পানির হিস্যা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জলাশয় খনন ও উপকূলীয় বনায়ন বৃদ্ধির মাধ্যমে ভূ-উপরিস্থ পানির প্রাপ্যতা উন্নয়নের উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক ক্ষতির হুমকির মধ্যে - ২০৩০ সালের মধ্যে জিডিপিতে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ হ্রাসের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। সরকার এই প্রভাবগুলো হ্রাস করার বিস্তৃত কৌশলগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনাটি জলবায়ু সম্পর্কিত বাধাগুলোর বিরুদ্ধে সহনশীলতা এবং স্থিতিশীলতা বাড়ানোর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ খাত এবং সম্প্রদায়গুলোকে সরঞ্জাম দিয়ে প্রস্তুত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
এই বহুমুখী প্রচেষ্টার মাধ্যমে বাংলাদেশ ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দেশের কৃষি ঐতিহ্যকে কেবল সুরক্ষাই নয়, বরং এগিয়ে নিতেও সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে।
আরও পড়ুন: গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়াতে প্রায় ১৪ কোটি টাকার প্রণোদনা
গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়াতে প্রায় ১৪ কোটি টাকার প্রণোদনা
গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়াতে ২৪ জেলার ৩৬ হাজার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে ১৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকার প্রণোদনা দেয়া হবে বলে জানিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
এতে একজন কৃষক এক বিঘা জমিতে চাষের জন্য প্রয়োজনীয় ১ কেজি বীজ, ২০ কেজি ডিএপি ও ২০ কেজি এমওপি সার বিনামূল্যে পাবেন।
মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত সরকারি আদেশ জারি হয়েছে।
আরও পড়ুন: বর্জ্য থেকে সার উৎপাদনে কর্মসূচি গ্রহণ করছে সরকার: পরিবেশমন্ত্রী
কৃষি মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত বাজেট কৃষি পুনর্বাসন সহায়তা এবং বীজ ও চারা খাত থেকে এ প্রণোদনা প্রদান করা হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে শিগগিরই এসব প্রণোদনা বিতরণ কার্যক্রম শুরু হবে।
এসব বীজ সরবরাহ করবে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)।
আরও পড়ুন: পেঁয়াজ বীজ চাষে বদলেছে ফরিদপুরের এক দম্পতির জীবন