পরিবেশ
শৈবাল: সুন্দরবন উপকূলে স্বপ্ন দেখাচ্ছে কৃষকদের
সামুদ্রিক শৈবাল বাণিজ্যিক চাষের সম্ভাব্যতা যাছাই চলছে। সফলতাও পেয়েছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। এতে নতুন আয়ের পথ সৃষ্টি হয়েছে সুন্দরবন উপকূলে। সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগ সংলগ্ন খুলনার কয়রায় ও সাতক্ষীরার শ্যামনগরে সামুদ্রিক শৈবাল চাষের সম্ভাব্যতা যাচাই করে সফলতা পায় সরকারের কৃষির উন্নয়ন নিয়ে কাজ করা সংস্থাটি।
বর্তমানে সামুদ্রিক শৈবালের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে আন্তর্জাতিক বাজারেও। ফলে সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকায় চাষ সম্প্রসারণ করার পাশাপাশি বাজারজাতের ব্যবস্থা করতে পারলে নতুন আয়ের দুয়ার খুলবে।
শ্যামনগর উপজেলার দাতিনাখালীর মো. শাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রায় দু’বছর আগে প্রশিক্ষণ দেয়ার পরে বীজ দিয়েছিল। এখানে আমরা ৩০ জন চাষ করি। তেমন কোন কষ্ট নেই। মাঝেমধ্যে রশিতে আবর্জনা বাধলে ছাড়িয়ে দিতে হয়। দুই রকম বীজ দিয়েছিল। এর মধ্যে বারি ১ খুব ভালো হয়।
তিনি আরও বলেন, শৈবাল কাঁচা অবস্থায় আমাদের কাছ থেকে স্যারেরা প্রতি কেজি ১২০ টাকা দরে কিনে নেয়। আমি এ পর্যন্ত ১০ হাজার টাকার শৈবাল বিক্রি করেছি। বড় আকারে চাষ করতে পারলে তেমন কোনো পরিশ্রম ছাড়াই বেশ আয় যোগ করা যাবে।
আরও পড়ুন: শাবি অধ্যাপকের উদ্ভাবন: স্থলজ পরিবেশে হবে সামুদ্রিক শৈবাল
খুলনার কয়রা উপজেলার টেপাখালী গ্রামের বাসন্তী মুন্ডার বলেন, নোনা পানির মাছের ঘেরের মধ্যে রশি টানিয়ে শৈবালের বীজ বেঁধে রেখে দেই। এই শৈবাল পানি থেকে সরাসরি পুষ্টি নিয়ে বাড়ে। এদের কোনো মূল, কাণ্ড, পাতা, ফুল বা ফল হয় না। এটা দেখতে সেমাইয়ের মত।
তিনি বলেন, সরেজমিন কৃষি গবেষণা বিভাগ থেকে প্রশিক্ষণ দেয়ার পাশাপাশি বীজসহ যাবতীয় উপকরণের ব্যবস্থা করেছে।
একই উপজেলার ছয় নং কয়রা গ্রামের গোলাম মোস্তফাও মৎস্য ঘেরের মধ্যেও একইভাবে শৈবাল চাষ করছেন।
তিনি বলেন, পানির এক ফুট নিচ দিয়ে শক্ত রশি টানটান করে টানানো হয়েছে, বাঁশের সঙ্গে রশি বাঁধা রয়েছে। সেই রশিতে ১৫ সেন্টিমিটার পরপর শৈবালের বীজ বেঁধে দেয়া হয়। কোনো পরিচর্যা ছাড়াই বড় হয়। পরে আমাদের কাছ থেকে স্যারেরা নিয়ে যাচ্ছে। শুনেছি এগুলো অনেক কাজে লাগে, মানুষেও খায়।
পরীক্ষামূলক সামুদ্রিক শৈবাল চাষ চলছে সুন্দরবন উপকূলীয় শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জের পালবাড়িওতে। সুন্দরবন উপকূলের প্রায় শতাধিক চাষির ঘেরের নোনাপানির নিচে রশিতে দুলছে নতুন স্বপ্ন।
সরেজমিন গবেষণা বিভাগ, কয়রার (এমএলটি সাইট) সহকারী বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জাহিদ হাসান বলেন, কৃষকদের উৎপাদন ভালো হচ্ছে। যা উৎপাদন হচ্ছে সেটা শুকিয়ে রেখে দেয়া হচ্ছে। বাজারজাতের ব্যবস্থা করতে পারলে কৃষকরা আরও আগ্রহী হবে এবং লাভবান হবে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রিটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের সহযোগী অধ্যাপক ড. দেবেষ দাস (উবনবংয উধং) বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের ল্যাবরেটরির আওতায় স্বল্প পরিসরে একটি গবেষণা প্রকল্প চলমান রয়েছে। এখনও ফলাফল পাওয়া যায়নি।
তিনি আরও বলেন, সামুদ্রিক শৈবাল মানুষের ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এটি গুড়া করে হারবাল পণ্য হিসেবে মানুষ ব্যবহার করতে পারে। প্রসাধনী তৈরিতেও এটির গুরুত্ব রয়েছে। এছাড়া কৃষিক্ষেত্রে এটির ব্যাপক গুরুত্ব রয়েছে। শুকিয়ে পাউডার হিসেবে মাটিতে ব্যবহার করলে মাটির পুষ্টি ধারণ ও পানি শোষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে, লবণাক্ততার প্রভাব কমাবে।
এছাড়া ক্ষতিকর ব্যাকটোরিয়া যেগুলো ফসলে রোগ সৃষ্টি করে সেটা নিয়ন্ত্রণেও কাজ করে।
আরও পড়ুন: রঙে রঙিন হয়ে উঠেছে দেশের সবচেয়ে বড় শিমুল বাগান
ক্ষতিকর প্লাস্টিকের ব্যবহার ৯০ শতাংশ কমানো হবে: পরিবেশমন্ত্রী
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেছেন, সরকার প্রণীত টেকসই প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনা অ্যাকশন প্ল্যান অনুসরণ করে ২০২৬ সালের মধ্যে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার ৯০ শতাংশ কমানোর লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে।
এছাড়াও, ২০৩০ সালের মধ্যে প্লাস্টিক বর্জ্য পুনর্ব্যবহার ৮০ শতাংশে উন্নীত করা এবং এই সময়ে প্লাস্টিক বর্জ্য সৃষ্টি ৩০ শতাংশে কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে।সরকার উপকূলীয় এলাকায় একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধে তিন বছর মেয়াদি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। পরিবেশবান্ধব ও জৈব-পচনশীল বস্তুর ব্যবহার বৃদ্ধি করা হবে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক হোটেল সোনারগাঁও এ আয়োজিত ‘কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সেমিনার’-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: পরিবেশবান্ধব ইট উৎপাদনে সহজ শর্তে ঋণ দিবে সরকার: পরিবেশমন্ত্রী
তিনি বলেন, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে ২০২১ সালে এ সংক্রান্ত বিধিমালা ছাড়াও ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০২১ প্রণয়ন করা হয়েছে। চিকিৎসা বর্জ্য বিধিমালা হালনাগাদকরণের কাজ চলছে। সরকারের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ন্যাশনাল ৩আর পলিসির লক্ষ্য হলো উন্মুক্ত জমি, নদী, নালা, খাল এবং সমভূমিতে বর্জ্য নিষ্পত্তি সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করা এবং উৎসে বর্জ্যের বাধ্যতামূলক পৃথকীকরণের মাধ্যমে বর্জ্য পুনর্ব্যবহারকে উৎসাহিত করা। এছাড়া এর পাশাপাশি পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্যগুলোর জন্য একটি বাজার তৈরি করা।
মন্ত্রী বলেন, দূষণ নিয়ন্ত্রণে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সাধারণ জনগণের সহযোগিতা প্রয়োজন।
জনগণের সহযোগিতায় অদূর ভবিষ্যতে কঠিন বর্জ্য সংক্রান্ত সমস্যার টেকসই সমাধান অর্জন করতে সক্ষম হওয়া সম্ভব বলে মন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড ফারহিনা আহমেদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, এ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহম্মদ ইব্রাহিম, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবদুল হামিদ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব পরিবেশ সঞ্জয় কুমার ভৌমিক, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এর প্রধান নির্বাহী মো. সেলিম রেজা এবং বুয়েটের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন প্রমুখ।
আরও পড়ুন: দেশকে বিপজ্জনক জৈব রাসায়নিক কীটনাশক ডিডিটি মুক্ত ঘোষণা পরিবেশমন্ত্রীর
পরিবেশ রক্ষায় প্লাস্টিক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকেই দায়িত্ব নিতে হবে: মেয়র আতিক