চট্টগ্রামের বাঁশখালীর গন্ডামারায় এস আলমের মালিকানাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিক্ষোভে পুলিশের সাথে শ্রমিকদের সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে।
এর মধ্যে মালিক পক্ষ তাদের প্রতিষ্ঠানে হামলার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেছে। আর সরকারি কাজে বাধাদান ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে অন্য মামলাটি দায়ের করেছে বাঁশখালী থানা পুলিশ।
বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সফিউল কবীর বলেন, শনিবার রাতে দায়েরকৃত দুটি মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে।
এর আগে শনিবার দুপুরে বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিক্ষোভে পুলিশের সাথে শ্রমিকদের সংঘর্ষের জেরে গুলিতে মোট পাঁচজন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছেন কমপক্ষে ২৫ জন৷
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান চৌধুরী জানান, শ্রমিকরা সকালে তাদের দাবি দাওয়া নিয়ে আন্দোলনে গিয়ে সহিংস হয়ে উঠলে পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি করে৷
কিন্তু শ্রমিকরা দাবি করেছেন, পুলিশ আগেই গুলি করেছে৷
একজন শ্রমিক বলেন, ‘আমাদের রমজানে ইফতারের সময় দেয়া হয় না৷ আমরা বলেছি আমাদেরকে নামাজ, ইফতার ও রোজার ছুটি দিতে হবে৷ এসব দাবি না মেনে পুলিশকে দিয়ে আমাদের আন্দোলনে গুলি চালানো হয়েছে৷’
আরেকজন শ্রমিক অভিযোগ করেন, ‘আন্দোলন শুরুর পরই পুলিশ গোলাগুলি শুরু করে৷ অনেকের মাথায় পিঠে গুলি লাগে৷ যে যেভাবে পেরেছি ছুটে পালিয়েছি৷’ নির্মাণাধীন বিদ্যুৎ প্ল্যান্টের মধ্যেই পুলিশের একটি ক্যাম্প আছে৷
আরও পড়ুন: বাঁশখালীতে এস আলম বিদ্যুৎকেন্দ্রে পুলিশ-শ্রমিক সংঘর্ষে নিহত বেড়ে ৫
শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, মালিকপক্ষ তাদের ন্যায্য আন্দোলন দমনে পুলিশকে ব্যবহার করেছেন
ঘটনার পর বাঁশখালী এবং হাসপাতালে আহত শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, তাদের বেশ কয়েক মাস ধরে নিয়মিত বেতন দেয়া হচ্ছিল না৷ সেই সাথে তারা বেতন বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন৷ রোজার মাসে কাজের সময় পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছিলেন তারা, তাও মানা হচ্ছিল না৷
এছাড়াও শ্রমিকদের অভিযোগ সেখানে পানি ও টয়লেটের সংকট রয়েছে৷ আট ঘণ্টার পরিবর্তে ১০ ঘণ্টা কাজে বাধ্য করা হয়৷ তাদের সাথে সবসময় খারাপ ব্যবহার করা হয়৷ এনিয়ে তারা ১১ দফা লিখিত দাবি দিয়েছিল৷ শুক্রবারও তাদের কাজ করতে হয়৷ এনিয়ে শুক্রবার তারা বিক্ষোভ করেন৷ শনিবার সকালে তারা আবার বিক্ষোভ করলে তা দমনে গুলি চালানো হয়৷
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘শ্রমিকদের মধ্যে বেতন ও কর্মঘণ্টা নিয়ে অসন্তোষ ছিল৷ তবে শনিবারের বিক্ষোভে শ্রমিক ছাড়াও স্থানীয় লোকজন অংশ নেয়৷ তারা গাড়ি পোড়ায়, ভাঙচুর করে৷ নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে৷’
এদিকে সংঘর্ষের পর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি এবং জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। জেলা প্রশাসনের কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে এবং পুলিশের তদন্ত কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
পুলিশের গুলিতে নিহত প্রত্যেক পরিবারকে তিন লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ এবং আহতদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে সহযোগিতা দেয়া হবে বলে বিদ্যুৎকেন্দ্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, চীনের সাথে যৌথ উদ্যোগে দেশের বৃহৎ শিল্প গ্রুপ এস আলমের কয়লাভিত্তিক এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থাপনের প্রাথমিক কাজ শুরু হয় প্রায় আট বছর আগে৷ ২০১৬ সালের এপ্রিলে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের রিরোধিতা করে স্থানীয়রা আন্দোলন করেন৷ তখন গুলিতে ছয়জন নিহত হন৷
কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারণে স্থানীয়রা শুরু থেকেই পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা প্রকাশ করে এর বিরোধিতা করে আসছেন৷ এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৪০ হাজার কোটি টাকা৷ ২০২২ সাল নাগাদ কেন্দ্রটি উৎপাদনে যাওয়ার কথা৷ এই প্রকল্পে চীনের একটি প্রতিষ্ঠানে ৩০ ভাগ বিনিয়োগ রয়েছে।