বুধবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আগামী ২ মের মধ্যে দুদককে এই প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দেন।
এ সময় পাটকল শ্রমিক জাহালম হাইকোর্টে উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। অপরপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট অমিত দাশগুপ্ত। দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান।
এর আগে গত ৬ মার্চ জাহালম প্রশ্নে ব্যাংক ঋণ জালিয়াতির ৩৩ মামলার এফ আই আর, চার্জশিট, সম্পূরক চার্জশিট এবং সকল ব্যাংকের এ সংক্রান্ত নথিপত্র দাখিল করতে দুদককে নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। ১০ এপ্রিলের মধ্যে এ নথিপত্র দাখিলের নির্দেশ ছিল। কিন্তু গত ১০ এপ্রিল দুদকের অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান সময় চান। এরপর ওই দিন আদালত জাহালমকে আসতে বলে ১৭ এপ্রিল পরবর্তী দিন ধার্য করে।
এর ধারাবাহিকতায় মামলাটি বুধবার শুনানির জন্য উঠলে জানানো হয় প্রয়োজনীয় নথি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে আদালতে আসেনি। এ সময় খুরশীদ আলম খান এ সংক্রান্ত দুদকের ৩৩টি মামলার নথি দাখিল করতে সময় চান।
এক পর্যায়ে আদালত বলে, ‘এই ঘটনার জন্য কে দায়ী সেটা আমরা দেখতে চাই।প্রতিবেদনটা অনেক জরুরি।’
সেই সঙ্গে ৩৩টি মামলার নথির দাখিলের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। এরপর আদালত ২ মে পরবর্তী দিন ঠিক করে।
দুদকের তদন্তের বিষয়ে খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, এটার একটা অভ্যন্তরীণ তদন্ত হচ্ছে। একজন তদন্ত করছেন। উনাকে ২০ দিনের সময় দেয়া হয়েছিল। এ সময় শেষ হওয়ার আগে আরও ৭ দিন সময় চেয়েছেন। আদালত প্রতিবেদন দেখতে চাচ্ছেন। সমস্ত কিছু দেখতে চাচ্ছেন- দায়টা কার।
প্রসঙ্গত, সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগে আবু সালেক নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা করে দুদক। কিন্তু দুদকের ভুলে সালেকের বদলে তিন বছর ধরে কারাগারে কাটাতে হয় টাঙ্গাইলের জাহালমকে। এ নিয়ে গত ৩০ জানুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিকে ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
প্রতিবেদনটি সেদিন বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসানের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাশ গুপ্ত। পরে আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করে। সব পক্ষের বক্তব্য শুনে গত ৩ ফেব্রুয়ারি নিরপরাধ পাটকল শ্রমিক জাহালমকে অর্থ জালিয়াতির মামলা থেকে অব্যহতি দিয়ে ওই দিনই মুক্তির নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।
আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, সেদিন জাহালম কারাগার থেকে মুক্তি পান। একই সঙ্গে এই ঘটনার বিস্তারিত প্রতিবেদন হলফনামা আকারে দুদককে দাখিলের নির্দেশ দিয়ে ৬ মার্চ পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করে। কিন্তু ওই দিন দুদকের পক্ষ থেকে অস্পূর্ণ প্রতিবেদন দাখিল করায় হাইকোর্ট ক্ষোভ প্রকাশ করে। পাশাপাশি ৩৩টি মামলারই নথি দাখিল করতে নির্দেশ দিয়ে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করে।