বাঁধ ভাঙনের পাশে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছিলেন খুলনার দাকোপ উপজেলার পানখালী ইউনিয়নের খোনা গ্রামের কৃষক শেখর সরদার। তার মতো ওই গ্রামের অন্তত ৬০ কৃষককে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার কারণে আমন ধান হারানোর ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে।
অতি বৃষ্টিতে বেড়িবাঁধ ভেঙে উপজেলার দুটি গ্রামের জমির আমন ধান জোয়ারের পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। কষ্টের ফসল হারানোর শঙ্কায় দিশেহারা সেখানকার কৃষক।
কয়েকজন স্থানীয়ের সাথে কথা বলে জানা গেছে, খোনা গ্রামের পাশেই ঢাকি নদী। গত কয়েক দিনের বৃষ্টি ও নিম্নচাপের কারণে নদীতে পানি বেশি ছিল। তার ওপর গত সোমবার রাতে ব্যাপক বৃষ্টি হয়। পানির চাপে রাতে খোনা গ্রামের বাঁধের একাংশ ভেঙে যায়। এতে প্লাবিত হয় খোনা গ্রামসহ তিলডাঙা ইউনিয়নের চরডাঙা গ্রামটিও। ভেসে যায় পুকুরের মাছ।
খোনা গ্রামের মোল্লা বাড়ির সামনের ওয়াপদার বেড়িবাঁধটি ঢাকি নদীতে বিলীন হওয়ার ১০ দিন পার হলেও এখনও পর্যন্ত মেরামত করা সম্ভব হয়নি।
খোনা গ্রামের কৃষক ইমরান গাজী বলেন, ‘পানিতে পুরা গ্রামের ধান তলাই গিছে। গ্রামের দিকে চাইলে অখন খালি পানি দেখা যায়। রাতে যেভাবে মেঘ (বৃষ্টি) অইছে তখনই বুজছি ধান সব শেষ।’
প্রতিদিন জোয়ারের পানিতে আমন খেত তলিয়ে যাওয়ার ফলে ধানের ফলন নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান কৃষি কর্মকর্তারা।
তারা বলেন, যদি আরও সাত দিন এভাবে পানিতে তলিয়ে থাকে তাহলে এখানকার ফসল এ বছর হবে না।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দাকোপে এ বছর জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৮ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে বাঁধ ভেঙে দুটি গ্রামের প্রায় ৮০ হেক্টর জমি তলিয়ে গেছে। নষ্ট হয়েছে ১৫ হেক্টর জমির সবজির আবাদ।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য মো. শাহাবুদ্দীন মোল্লা বলেন, ‘খোনার অধিকাংশ আমন ধানই পানিতে তলিয়ে গেছে। সবজির খেত সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। যেভাবে পানি ঢুকছে তাতে মনে হয় গ্রামের কোনো ধানই আর কৃষক কাটতে পারবেন না।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩১ নম্বর পোল্ডারের আওতায় থাকা ভাঙনকবলিত এলাকাটিতে নিম্নচাপ ও ভারী বর্ষণের কারণে নদীতে পানি বেড়ে গেছে। পানির চাপে হঠাৎ বেড়িবাঁধটি ভেঙে জমি প্লাবিত হয়ে ফসলহানি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন এ ইউপি সদস্য।
কৃষক দীপক সরদার বলেন, ‘এমন সময় বাঁধ ভেঙেছে যখন ধানের থোড় এসেছে। সার ও কীটনাশক ব্যবহার করতে পারছি না। কয়েক দিন বাদে ধান গাছের বুক চিরে শীষ বের হবে। কিন্তু জোয়ারের পানিতে প্রতিদিন ডুবে যাচ্ছে ধান খেত। গত বছরের মতো এ বছরও আমন ধান না পাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।’
দাকোপ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান খান বলেন, ‘অধিকাংশ খেতে ধানের থোড় এসেছে। কিছু জায়গায় শীষও বের হয়েছে। তবে, প্রতিদিন জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় খেতের ওপর নদীর পলি জমে থাকায় থোড় নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে ধান গাছের পরাগ রেণু আসার সময়। যদি এভাবে প্রতিদিন তলিয়ে যায়, তাহলে কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হবে।’
খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জি বলেন, ‘বাঁধ ভাঙার পর দুই দিন নিম্নচাপ থাকায় বাঁধ নির্মাণ করতে একটু দেরি হচ্ছে। ভেতরে যাতে পানি ঢুকতে না পারে সেজন্য কিছুটা বাঁধ দেয়া হয়েছে। তবে পূর্ণিমার কারণে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাঁধ ছাপিয়ে তা প্রবেশ করছে। বাঁধের ভেতরে নদীর পানি প্রবেশ আটকানোর জন্য চেষ্টা করছি।’