বেড়িবাঁধ
খুলনায় বাঁধ ভেঙে দুই উপজেলা প্লাবিত
খুলনায় বেড়িবাঁধ ভেঙে দাকোপ ও পাইকগাছা উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে খুলনা নগরীর অধিকাংশ রাস্তা।
খুলনার দাকোপ উপজেলায় শিবসা নদীর তীব্র স্রোতে পানখালী বেড়িবাঁধ ভেঙে কয়েকটি গ্রাম তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে মাছের ঘের।
একই সময় পাইকগাছার দেলুটি ইউনিয়নের কালিনগর এলাকায় ওয়াপদার বাঁধ ভেঙে কালিনগর, হরিণখোলা, দারুণমল্লিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে গেছে।
আরও পড়ুন: বন্যাদুর্গতদের সহযোগিতা করার উপায়
এলাকাবাসী জানায়, বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে উপজেলার দেলুটি ইউনিয়নের ২২ নম্বর পোল্ডারের কালিনগর বাওয়ালী বাড়ির দক্ষিণ পাশের পূর্বের আম্ফানের ভাঙনের দক্ষিণের প্রায় ৩০০ ফুটের বেশি এলাকা জুড়ে ওয়াপদার রাস্তা অতি জোয়ারের পানিতে ভেঙে যায়।
ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে যাওয়ার পাশাপাশি ফসলেরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ভেসে গেছে মাছের ঘের, তলিয়ে গেছে বীজতলাসহ ফসলি জমি।
সন্ধ্যার মধ্যে পুরো ২২ নম্বর পোল্ডার প্লাবিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী।
গতকাল সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত এলাকাবাসী বাঁধ মেরামতের কাজ করলেও বিপদের শঙ্কা দূর হচ্ছে না। প্রবল স্রোতের কারণে বিঘ্ন হচ্ছে বাঁধ মেরামতের কাজ।
খুলনা জেলা প্রশাসন বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু করেছে বলে জানায় পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এদিকে গতকাল সারা রাত বৃষ্টি হওয়ায় খুলনা মহানগরীর টুটপাড়া, বয়রা, নিরালা, মৌলভীপাড়া, বায়তি পাড়াসহ অধিকাংশ রাস্তা পানিতে ডুবে গিয়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
আরও পড়ুন: ভেঙে গেছে কুমিল্লার গোমতী প্রতিরক্ষা বাঁধ
৩ মাস আগে
পাহাড়ি ঢলে ভেঙে গেছে সুনামগঞ্জের একাধিক বেড়িবাঁধ
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে টানা বর্ষণ আর ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া পাহাড়ি ঢলে ভেঙে গেছে সুনামগঞ্জের একাধিক স্থানের বেড়িবাঁধ।
পাহাড়ি ঢলে রাস্তা ভেঙে ও তলিয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বন্ধ রয়েছে ছোট-বড় সব ধরনের যান চলাচল। গৃহহীন হয়ে পড়েছে অনেক পরিবার।
এদিকে, সীমান্তের ওপার থেকে বয়ে আসা খাসিয়ামারা নদীর স্রোতে লক্ষীপুর ইউনিয়নের নোয়াপাড়া, ইদ্রিসপুর, চৌকিরঘাট বেড়িবাঁধ ভেঙে বিভিন্ন হাওরে পানি প্রবেশ করায় ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র, গবাদিপশুর ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পানি প্রবেশ করায় আমনের বীজতলা, আউশ ও সবজি খেত তলিয়ে গেছে।
আরও পড়ুন: কয়রায় বেড়িবাঁধ ভেঙে ৫ গ্রাম প্লাবিত
অন্যদিকে, বোগলাবাজারে চিলাই নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে এবং সুরমা ইউনিয়নের টিলাগাও-টেংরাটিলা যাতায়াত রাস্তা ভেঙে গেছে। মহব্বতপুর বাজার-লিয়াকতগঞ্জ বাজার সড়কে নোয়াপাড়ায় বেড়িবাঁধ ভেঙে উপজেলা সদরের সঙ্গে লক্ষীপুর ইউনিয়নের ২৮টি ও সুরমা ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামসহ সীমান্তের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়েছে।
এছাড়া বাংলাবাজার ইউনিয়নের পেকপাড়া, চৌধুরী পাড়া, মৌলারপাড়, চিলাইপাড়, পুরান বাশতলা গ্রামের অনেক ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে।
লক্ষীপুর ইউপি চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম বলেন, খাশিয়ামারা নদীর স্রোতে আমার ইউনিয়নে নোয়াপাড়া, ইদ্রিসপুর ও চৌকির গাঁটে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। প্লাবিত হচ্ছে বেশ কিছু গ্রাম।
শুকনো খাবার ও নিরাপদ পানি জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো করা হয়েছে বলে জানান লক্ষীপুর ইউপি চেয়ারম্যান।
সুরমা ইউপির চেয়ারম্যান হারুন অর রশীদ বলেন, খাশিয়ামারা নদীর স্রোতে সুরমা ইউনিয়নের কিছু সংখ্যক বাড়িঘরে পানি উঠেছে, তাদের জন্য শুকনো খাবার ও নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বোগলাবাজার ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মিলন খান বলেন, চিলাই নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে বোগলাবাজার ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পুকুরের মাছ ও বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উপজেলার দোয়ারাবাজার সদর ইউনিয়নের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানিয়েছেন দোয়ারাবাজারে নিকট সুরমা নদী ২১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, তিন দিন ধরে টানা বর্ষণ ও মেঘালয় থেকে নেমে আসা ঢলে উপজেলার সুরমা, চেলা, চলতি, মরা চেলা, খাসিয়ামারা, মৌলা, কালিউরি, ধূমখালিসহ উপজেলার সব নদী-নালা, হাওর ও খাল-বিলের পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
উপজেলার বিভিন্ন সড়ক ও বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে বলেও জানান সুনামগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী।
আরও পড়ুন: নওগাঁয় বেড়িবাঁধ ভেঙে ১৫০০ পরিবার পানিবন্দি
কয়রায় অনেক বেড়িবাঁধ অরক্ষিত, আতঙ্কে খুলনার উপকূলবাসী
৬ মাস আগে
খুলনায় ‘অপরিকল্পিত’ শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ, মরে যাচ্ছে শত শত গাছ
অপরিকল্পিতভাবে শহর রক্ষা বেড়িবাঁধ নির্মাণ করায় বৃষ্টির পানিতে ডুবে খুলনার পাইকগাছা উপজেলার শিবসার চরে বনায়ন প্রকল্পের শতাধিক গাছ মরে যাচ্ছে।
পাইকগাছা উপজেলার শিবসার নিম্নাঞ্চলে লবণ পানির অনুপ্রবেশ ঠেকাতে চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু এই বেড়িবাঁধের উদ্বোধন করেন।
বেড়িবাঁধের কারণে মাত্র তিন মাসের মধ্যে বাঁধের ভেতরে পানি জমে এলাকার গাছপালা মারা যাচ্ছে। ফলে এক সপ্তাহের মধ্যে স্থানীয় পৌরসভাকে বাঁধ অপসারণের নির্দেশ দিয়েছেন পাইকগাছার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)।
আরও পড়ুন: গণপরিবহন বন্ধ, খুলনাবাসী নগর পরিবহন ফেরার অপেক্ষায়
শিবসা উপজেলায় নদীর তীরে অবস্থিত পাইকগাছা পৌরসভা ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এপ্রিল মাসে নির্মিত একটি বাঁধ ছাড়া গত ২৪ বছরে এই এলাকায় কোনো বাঁধ নির্মিত হয়নি। পূর্ণিমা ও অমাবস্যার সময় নদীর পানি ফুলে উঠে এবং পুরো এলাকার ঘরবাড়ি, দোকান-পাট এবং রাস্তা-ঘাট প্লাবিত হয়।
এছাড়া গত কয়েক বছর থেকে খুলনা সদর থেকে হাড়িয়া নদী পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকা ভরাট করছে দখলকারীরা। এই সময় দখল ঠেকাতে ভরা অংশের বিভিন্ন এলাকায় বনায়ন গড়ে তুলে উপজেলা প্রশাসন। এতে একদিকে যেমন বন্ধ হয় দখল প্রক্রিয়া অন্যদিকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
শিবসা নদীতে শহর রক্ষা বাঁধের ফলে জোয়ার-ভাটার পানি প্রবেশ করতে না পারলেও বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে বাঁধ এলাকা।
আরও পড়ুন: গণপরিবহন বন্ধ, খুলনাবাসী নগর পরিবহন ফেরার অপেক্ষায়
পাইকগাছা উপজেলা বন কর্মকর্তা প্রেমানন্দ রায় জানান, শিবসা নদীর চর ভরাটি জায়গায় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সুন্দরবনাঞ্চলীয় বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা রোপনের মাধ্যমে বনায়ন করা হয়েছে। যার মধ্যে বাইন, কেওড়া, ওঁড়া, সুন্দরী ও গোলপাতাগাছ রয়েছে।
তিনি বলেন, এ গাছগুলো জোয়ার-ভাটার সঙ্গে সম্পর্কিত। যদি বাঁধ দিয়ে জোয়ার-ভাটা বন্ধ করে দেয়া হয়, তা হলে জলাবদ্ধতার কারণে সেখানকার সব গাছ মরে যাবে। ইতোমধ্যে গাছ মরা শুরু হয়েছে। যতদ্রুত সম্ভব এ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারলে ক্রমশ সব গাছের মৃত্যুর সম্ভাবনা রয়েছে।
পাইকগাছা উপজেলা নাগরিক কমিটির সভাপতি মোস্তফা কামাল জাহাঙ্গীর বলেন, নদীর মাঝখানে না করে লোকালয়ের পাশে বাঁধ তৈরি করলে গাছগুলো বেঁচে থাকত।
পাইকগাছা উপজেলা নাগরিক অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি প্রশান্ত কুমার মন্ডল বলেন, নদী দখলের জন্য বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বাঁধের কারণে শিবসা নদী তার গভীরতা হারাচ্ছে। এছাড়া নদীটি সংকুচিত হয়ে উপচে পড়া পানিতে পৌর এলাকা তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
পাইকগাছা উপজেলার চেয়ারম্যান আনোয়ার ইকবাল মন্টু নদীর মাঝখানে বাঁধ নির্মাণে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতু: খুলনার পর্যটন শিল্পের দুয়ার উন্মোচন
পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মমতাজ বেগম বলেন, ‘নদীর জায়গা দখল করে শহর রক্ষা বাঁধ দেয়া যাবে না। মানুষের প্রয়োজনে শহর রক্ষা বাঁধটি হতে হবে শহরের পাশ দিয়ে। বনায়ন ও নদীর ক্ষতি করে এমনভাবে বাঁধ দেয়া যাবে না।
তিনি বলেন, বাঁধ অপসারণে পৌরসভাকে সাত দিনের সময় দেয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাঁধ অপসারণ না করা হলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তা অপসারণ করা হবে।
২ বছর আগে
উপকূলজুড়ে ছড়াচ্ছে পানিবাহিত রোগ, সংকট সুপেয় পানির
খুলনার উপকূলজুড়ে সুপেয় পানির সংকটের পাশাপাশি পানিবাহিত রোগও ছড়াতে শুরু করেছে। কয়রার ৭টি কমিউনিটি ক্লিনিকসহ উপকূলীয় এলাকায় বেশ কিছু কমিউনিটি ক্লিনিক পানিতে ডুবে আছে। ফলে ওই সব এলাকায় চিকিৎসাসেবা প্রায় গতিহীন হয়ে পড়েছে। মেডিকেল টিম থাকলেও বাঁধ ভাঙা থাকার কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়ায় দুর্গম এলাকার মানুষ চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে না।
প্লাবিত এলাকায় এখন খাবার পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। লোকজনকে অনেক দূর থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। এছাড়া প্লাবিত এলাকার বেশিরভাগ নলকূপের পানি পানযোগ্য নয়। খাবার পানির প্রধান উৎস পুকুর ডুবে যাওয়ায় পিএসএফ থেকে পানি নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
কয়রার দশালিয়ার ইকবাল হোসেন বলেন, ‘গত চারদিন ধরে আমরা ১০টি পরিবার মাধ্যমিক বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছি। কিন্তু গত রবিবার দুপুর পর্যন্ত কোনও ধরনের চিকিৎসাসেবা বা খাদ্য সহায়তা পাওয়া যায়নি। এখানে শিশুসহ ৬-৮ জন ডায়রিয়াসহ নানা সমস্যায় রয়েছেন।’
দশালিয়ার সফুরা বেগম বলেন, ‘দুই দিন ধরে পায়খানা ও বমি হচ্ছে। কিন্তু কোনও চিকিৎসাসেবা পাচ্ছি না। স্থানীয় কমিউনিটি ক্লিনিক পানিতে ডুবে থাকায় তা বন্ধ রয়েছে। আর কয়রা সদর ২৫ কিলোমিটার দূরে। যোগাযোগ সমস্যার কারণে সেখানে যাওয়াও যাচ্ছে না।’
কয়রার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সদীপ বালা বলেন, ‘সাতটি কমিউনিটি ক্লিনিক পানিতে ডুবে আছে। তারপরও সেখান থেকে চিকিৎসাসেবা দেয়ার চেষ্টা চলছে। এছাড়া প্রতিটি ইউনিয়নে মেডিকেল টিম দেয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত ওরস্যালাইন ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট মজুত রয়েছে। যা সরবরাহ করা হচ্ছে।’
কয়রা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আরএমও ডা. তমাল কুমার দাশ বলেন, ‘এখানে এমনিতেই ডায়রিয়ার রোগী নিয়মিত আসে চিকিৎসাসেবা নিতে। তবে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের পর ২-৩ দিনে এ ধরনের রোগী বেড়েছে।’
কয়রার আটরা গ্রামের সাজেদা খাতুন বলেন, ‘গ্রামের সব মানুষ পাশের একটি পুকুরের পানি পান করতাম। সেটি ডুবে যাওয়ার পর তিন মাইল দূরের কালনা সরকারি পুকুর থেকে পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে।’ এভাবে ভেলায় চড়ে পানি সংগ্রহ করতে তাদের একদিনের অর্ধেক সময় ব্যয় হচ্ছে।
কলেজ শিক্ষক মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘প্লাবিত এলাকাজুড়ে এখন খাবার পানির কষ্ট দেখা দিয়েছে। দূর থেকে খাবার পানি আনার কষ্টে অনেকেই এলাকার নলকূপের আয়রনযুক্ত পানি পান করছেন। এতে অনেক পরিবারের সদস্যদের ইতোমধ্যেই পেটের পিড়া দেখা দিয়েছে।’
গৃহিনী সালমা বেগম বলেন, ‘দুর্যোগের দিন অনেক বৃষ্টি হয়েছিল। তখন অনেকেই পানি ধরতি পারলিও আমরা পারিনি। সে সময় গাঙের পানির তোড়ে সব ভাসায়ে নিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়। তখন ঘরের মালামাল ও বাচ্চা-কাচ্চা সামলাতি আমাগের হিমশিম অবস্থা। খাবার পানি ধরার সময় পাইনি।’
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় ইয়াস: খুলনা উপকূলে ৬০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি
কয়রার মহারাজপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. বায়জিদ হোসেন বলেন, ‘দশহালিয়া বেঁড়িবাধ ভেঙে মহারাজপুরে প্রায় সব এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গত শুক্রবার ও শনিবার দুপুরের জোয়ারের পানি প্রবেশ করে নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ দুই দিনে রাস্তায়ও পানি উঠেছে। ফলে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে এখানকাবাসীকে।’
৩ বছর আগে
সাতক্ষীরা উপকূলীয় এলাকার মানুষ দিন কাটাচ্ছে উদ্বেগ আর উৎকন্ঠার মধ্যে
সাতক্ষীরায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব এখনো কাটেনি।
শুক্রবার সকাল থেকে উপকূলীয় এলাকায় মাঝে মাঝে দমকা হাওয়া ও গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।
এই আবহাওয়ার মধ্যে স্থানীয় লোকজন তাদের জান, সম্পদ রক্ষার্থে স্বেচ্ছা শ্রমের ভিত্তিতে বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ অব্যাহত রেখেছে। যে ৪৪ টি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়েছিল তার অধিকাংশ সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
আরও পড়ুন: পটুয়াখালীতে ইয়াসের প্রভাবে ১৬ গ্রাম প্লাবিত
শ্যামনগর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের লোকসংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন লাখ। আর আশাশুনি উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে লোকসংখ্যা প্রায় দুই লাখ ৭০ হাজার। এ দুই উপজেলা খোলপেটুয়া, ইছামতি চুনকুড়ি, চুন, মালঞ্চ নদনদী দিয়ে বেষ্টিত। এসব জনপদ নদনদীর পানি থেকে রক্ষা করতে রয়েছে ২০৫ কিলোমিটার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধে ঘেরা। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে এ দুই উপজেলার মানুষ টিকে আছে। প্রায় প্রতিবছর কোনো না দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হয় এসব জনপদের মানুষের।
আরও পড়ুন: 'ইয়াস' মোকাবিলায় জনপ্রতিনিধিদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর
২০২০ সালের ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে এ দুই উপজেলা লন্ডভন্ড করে দিয়ে যায়। এখন মানুষ সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠে ঘুরে দাঁড়িতে পারেনি। ঠিক এক বছর পর আবার ঘূর্ণিঝড় ইয়াস এর কবলে পরে এসব জনপদ।
সরেজমিনে শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও কথা বলে দেখা গেছে, বুধবার জোয়ারে যেসব বাঁধ ভেঙ্গে ও পানি উপচে লোকালয়ে পানি ঢুকেছিল, তার অধিকংশ এলাকা থেকে পানি নেমে গেছে। শ্যামনগরের দ্বীপ ইউনিয়ন পদ্মপুকুর ও আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধ এখনও সংস্কার করা সম্ভব হয়নি। ফলশ্রুতিতে ঐ দুটি ইয়নিয়নের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড ধ্বসে পড়া বেড়িবাঁধ নির্মাণের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ঐ এলাকায় শুকনো খাবার ও সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় বেড়িবাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি ঢুকছে।
আরও পড়ুন: ভোলায় ইয়াসের প্রভাবে চরাঞ্চল প্লাবিত, ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল জানান, পদ্মপুকুর ও প্রতাপনগর ইউনিয়নে ধ্বসে পড়া বেড়িবাঁধ এখনো নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। অন্য স্থানে সংস্কার কাজ সম্ভব হয়েছে। দূর্গত এলাকায় শুকনো খাবার ও সুপেয় পানি পৌছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জোয়ারের পানি বৃদ্ধি না পেলে দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।
৩ বছর আগে
ঘূর্ণিঝড় ইয়াস: বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি ঢুকছে সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায়
ঘূর্ণিঝড় ইয়াস এর প্রভাবে নদীর পানি প্রায় তিন ফুট বৃদ্ধি পেয়ে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা, কৈখালী, মুন্সিগঞ্জ ও পদ্মপুকুর ইউনিয়নের কয়েকটি স্থানে মঙ্গলবার বিকাল থেকে বেড়িবাঁধ ভেঙে এবং বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। স্থানীয় লোকজন ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ সংস্কারের আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে আনার আগাম ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারা বহনযোগ্য সম্পদ নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যাবার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে বলে জানা গেছে।
এছাড়া উপকূল এলাকা আশাশুনির প্রতাপনগর, শ্রীউলা, আনুলিয়া, খাজরা এবং শ্যামনগরের পদ্মপুকুর, গাবুরা, বুড়িগোয়ালিনী, আটুলিয়া, কৈখালি , ঈশ্বরীপুর ,রমজাননগর, কাশিমারিসহ সুন্দরবন লাগোয়া মুন্সিগঞ্জ হরিনগর এলাকায় মাইকিং করে জনগনকে সতর্ক করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, ১৪৫টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। দেড় হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে প্রস্তুত করা হয়েছে মানুষের আশ্রয়ের জন্য। এর মধ্যে শ্যামনগর উপজেলার ১০৩টি আশ্রয়কেন্দ্রের ধারণ ক্ষমতা ৭৫ হাজার বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আ ন ম আবু জার গিফারি।
আরও পড়ুন: 'ইয়াস' মোকাবিলায় জনপ্রতিনিধিদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর
পটুয়াখালীতে ইয়াসের প্রভাবে ১৬ গ্রাম প্লাবিত
এছাড়াও জেলায় দেড় হাজার স্কুল কলেজ মাদরাসা ও আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। কোভিড চলাকালীন নিরাপত্তা বজায় রেখে তাদের খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন ইউএনও।
এলাকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধগুলি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার বেড়িবাঁধের ৫৫টি পয়েন্ট অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। পূর্নিমার ভরাকাটাল ও পূর্নচন্দ্র গ্রহণের সময় ইয়াস এর দাপটে জলোচ্ছাসের আশঙ্কা করছেন উপকূলবাসী।
এদিকে, পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের বন বিভাগের ৮টি টহল ফাঁড়ির সব সদস্যকে নিরাপদে সরে যাবার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সহকারি বন সংরক্ষক এম এ হাসান বলেন, ইয়াস আঘাত করলে এবং অস্বাভাবিক জলোচ্ছাস হলে তাদেরকে উদ্ধার করে আনার জন্য নৌযানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
৩ বছর আগে
সুনামগঞ্জে বেড়িবাঁধের কাজ শেষ না হওয়ায় মানববন্ধন
বর্ধিত সময়ে সুনামগঞ্জে বেড়িবাঁধের কাজ শেষ না হওয়ার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটি।
৩ বছর আগে
মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের মূল বেড়িবাঁধে ফের ধস
চাঁদপুরের মতলব উত্তরে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের মূল বেড়িবাঁধে ফের ৫০ মিটার এলাকা ধসে গিয়ে গর্ত ও ফাটল দেখা দিয়েছে।
৩ বছর আগে
কয়রায় বাঁধে ভাঙন, ৩ গ্রামের মানুষ পানিবন্দী
খুলনার কয়রা উপজেলা সদর ইউনিয়নের ঘাটাখালির রিংবাঁধ ভেঙে পানিতে তলিয়ে গেছে গোররা, ঘাটাখালি ও হরিণখোলা গ্রাম। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন অন্তত তিন হাজার মানুষ।
৪ বছর আগে
দাকোপে বাঁধ ভাঙা পানিতে আমন হারানোর শঙ্কায় কৃষকরা
‘গেল বার ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আম্যাগি জমির ধান হুতি দ্যায়নি। সব নষ্ট ক্যুরি দ্যে গেলো। ধান না প্যায়ি জমি করার খরচ তুলতে পারিনি। এ বছর আবার ধার-দেনা ক্যুরি ধান লাগাইছি। কিন্তু রাস্তা ভ্যাঙি গ্যাংয়ের পানি খেতের ম্যধি ডুকতিছে। জুয়ারে প্রতিদিন জমিতে পানি ডুকি ধান তুল্যায় যাতিছে।’
৪ বছর আগে