বাংলাদেশের ইসলামী চিন্তাবিদরা অবশ্য মনে করেন, কোনো বিপর্যয়ের সময় মসজিদে গিয়ে জুমার নামাজ বা অন্যান্য নামাজ আদায় বাধ্যতামূলক নয়।
তারা আরও বলেন, মানুষদের এখন ঘরে বসেই নামাজ আদায় করা উচিত কারণ সঙ্কটকালীন সময়ে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) একই নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আরও ৩ বাংলাদেশি
এদিকে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে বিদেশফেরত বাংলাদেশি এবং যারা জ্বর, হাঁচি-কাশি, গলাব্যথা বা শ্বাসকষ্টের মতো করোনার লক্ষণে ভুগছেন, তাদেরকে মসজিদ ও জনসমাবেশ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
এছাড়া সকলে করোনাভাইরাস থেকে যাতে নিরাপদ থাকতে পারে সেজন্য মসজিদের ইমাম ও খতিবদের প্রতি বিশেষ প্রার্থনা করা এবং জুমার নামাজের খুতবা চলাকালীন করোনাভাইরাস ইস্যুটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করার অনুরোধ জানিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
ইউএনবি’র সাথে আলাপকালে ধর্ম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আবদুল্লাহ সবাইকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নির্দেশনা অনুসরণ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমরা এখনও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নির্দেশনাকে সমর্থন করছি। এ বিষয়ে অন্যান্য সিদ্ধান্ত পরে নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন: বিমানবন্দর থেকেই বিদেশফেরত ১০ জনকে হাসপাতালে প্রেরণ
এর আগে বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সব ধরনের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় সমাবেশ স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছে সরকার।
এদিকে, টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার ২০১ গম্বুজ মসজিদের মসজিদ পরিচালনা কমিটি জুমার নামাজ স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সবারই উচিত নিজ নিজ বাড়িতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এবং জুমার নামাজ আদায় করা।’
তিনি জানান, ‘ইসলামী বিধি এবং মহানর্ব হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর নির্দেশ অনুযায়ী, যদি কোনো অসুস্থ ব্যক্তির দ্বারা অন্যদের আক্রান্ত হওয়ার বা মৃত্যুর ঝুঁকি অথবা কোনো মহামারী ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে তাহলে মানুষজন মসজিদে যাওয়া এড়াতে পারবেন।’
আরও পড়ুন: মসজিদে শুধু জুমার নামাজের ফরজ আদায় করুন: ইসলামিক ফাউন্ডেশন
একটি হাদিসের কথা উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বলেন, একবার মহানবী (সা:) তার কয়েকজন সহযোগীসহ সফরে গিয়েছিলেন। ‘সেসময় শীতল আবহাওয়া, বৃষ্টিপাত এবং ঝড়ের কারণে মানুষজন মসজিদে যাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুতর সমস্যায় পড়ে। তখন মহানবী তার এক সহযোগীকে আযান দেয়ার আহ্বান জানান, যাতে যে যেখানে আছেন, সেখান থেকেই নামাজ আদায় করতে পারেন।’
ড. মো. শহীদুল বলেন, ‘সৌদি আরবসহ উপসাগরীয় বিভিন্ন দেশ এ হাদিসের সাথে সামঞ্জস্যতা রেখেই মসজিদে নামাজ স্থগিত করেছে। এ হাদিস অনুযায়ী আমরা বলতে পারি যে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রোধে এখন মানুষজন ঘরে বসে নামাজ আদায় করতে পারেন।’
তিনি বলেন, জুমার নামাজ বাড়িতে আদায় করা যায় না কারণ এটি শুধু মসজিদে অনুষ্ঠিত হতে পারে। ‘তাই, মানুষজন শুক্রবার জুমার নামাজের পরিবর্তে জোহরের নামাজ আদায় করতে পারেন।’
অন্য একটি হাদিসের কথা উল্লেখ করে ঢাবি অধ্যাপক বলেন, মহানবী (সা:) এর দিকনির্দেশনা রয়েছে যে, কোনো অঞ্চলে মহামারী ছড়িয়ে পড়লে সেখানকার বাসিন্দাদের বাইরে বের হওয়া এবং সংক্রমিত এলাকায় অন্য অঞ্চলের মানুষের ভ্রমণ করা উচিত নয়।
ঢাকার সরকারি আলিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আলমগীর রহমান বলেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রোধে এবং মানুষের সুরক্ষায় সৌদি আরব এবং উপসাগরীয় দেশগুলো কুরআন ও হাদিসের সাথে মিল রেখেই মসজিদে নামাজ আদায় স্থগিত করেছে।
‘যেহেতু কোনো ইসলামী বিশেষজ্ঞ এ সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করেননি, তাই আমরাও এটি অনুসরণ করতে পারি,’ যোগ করেন তিনি।
তবে কেউ যদি মসজিদে যেতে চান তাহলে অবশ্যই মাস্কসহ অন্যান্য সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করেই যাওয়া উচিত বলে জানান আলমগীর রহমান।
আরও পড়ুন: করোনাভাইরাসে বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়াল
সম্প্রতি আরব নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মক্কা ও মদিনার দুটি পবিত্র মসজিদ ছাড়া দেশের অন্য সকল মসজিদে জামাত নামাজ স্থগিত করা হয়েছে।
করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে মসজিদে নামাজ আদায়সহ সকল উপাসনালয় স্থগিত করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। একই পদক্ষেপ নিয়েছে কুয়েত সরকারও।