ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার সকালে অভিযান চালিয়ে নান্নু মিয়া ও তাফসির নামের দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) এবিএম দোহা জানান, মাগুরা সদর উপজেলার শত্রুজিৎপুর ইউনিয়নের ভুক্তভোগী তরুণী (২২) প্রতিবেশি নান্নু মিয়াকে বিদেশে যাওয়ার জন্যে ৬০ হাজার টাকা দেন। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি নান্নু মিয়ার সহযোগিতায় শহরের নিজনান্দুয়ালী গ্রামের তাফসির বিশ্বাস ওই তরুণীকে ঢাকার মিরপুর-১ নম্বরের একটি বাড়িতে জোছনা বেগম নামে এক নারীর কাছে দিয়ে আসে। সেখানে তিনদিন থাকার পর গত ২৮ ফেবরুয়ারি রবিবার রাত ৮টার দিকে ওই বাসার একটি কক্ষে অজ্ঞাত দুই ব্যক্তি তাকে ধর্ষণ করে।
আরও পড়ুন: নবীনগরে ধর্ষণ ও অবৈধ গর্ভপাতের অভিযোগ মামলা, অভিযুক্ত গ্রেপ্তার
ধারের টাকা শোধ করতে না পারায় ‘জুয়াড়ির’ স্ত্রীকে তিন মাস ধরে ‘ধর্ষণ’
পরে রাতেই কৌসলে বাসা থেকে পালিয়ে মেয়েটি মাগুরায় তার বোনের বাড়িতে ফিরে আসে। সোমবার দুপুরে মাগুরা সদর থানায় নান্নু মিয়া, তাফসির ও জোছনাসহ অজ্ঞাতনামা আরও দুজনের নাম উল্লেখ করে থানায় অভিযোগ দায়ের করে। তার অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার সকালে তাফসির এবং নান্নুকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এবিএম দোহা জানান, গ্রেপ্তাদের থানায় জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। মেয়েটির ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে।
দেশের ধর্ষণ পরিস্থিতি
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস্) সম্প্রতি জানিয়েছে, সদ্য সমাপ্ত হওয়া বছরে সারাদেশে ১২ জন গৃহকর্মী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এছাড়া ২০২০ সালে মোট ৪৪ জন গৃহকর্মী নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে চারজনকে হত্যা এবং ১২ জনের রহস্যজনক মৃত্য, ধর্ষণের শিকার ১২ জন, শারীরিক আঘাত ও নিপীড়নের শিকার ১২ জন এবং নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে চারজন আত্মহত্যা করেছেন।
এদিকে করোনাকালে সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ও শিশুদের জনসমাগমের অনুপস্থিতি সত্ত্বেও ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর সময়ে ৭১৬ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে।
গত ৯ জানুয়ারি অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে ‘বাংলাদেশ শিশু পরিস্থিতি ২০২০’ শিরোনামে এ চিত্র তুলে ধরে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ)।
শিশু অধিকার বিষয়ক সংবাদের আধেয় বিশ্লেষণ করে প্রাপ্ত তথ্য থেকে সার্বিক চিত্র উপস্থাপন করেন এমজেএফের শিশু সুরক্ষা বিভাগের সমন্বয়ক রাফেজা শাহীন।
পাঁচটি জাতীয় বাংলা দৈনিক এবং তিনটি জাতীয় ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত শিশু অধিকার বিষয়ক সংবাদ পর্যালোচনা অনুযায়ী, গত বছর ৭১৬ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। তাদের মধ্যে করোনাকালে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৬২৬ শিশু এবং ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ৩৭ শিশুকে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, সদস্য সমাপ্ত ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯৭৫ নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে, যার মধ্যে ২০৮ জনকে গণধর্ষণ করা হয়। এর মধ্যে ধর্ষণের পরে ৪৫ জনকে হত্যা করা হয়েছে এবং অন্য ১২ জন আত্মহত্যা করেছে।
এছাড়াও, মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠনটি বলছে যে ১৬১ জন নারীকে যৌন হয়রানি করা হয়েছে এবং তাদের মধ্যে ১২ জন আত্মহত্যা করেছেন।
আরও পড়ুন: মাগুরায় ৭ বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ
স্কুলছাত্রীকে বিয়ের আশ্বাসে ধর্ষণ: পুলিশ সদস্য গ্রেপ্তার
চট্টগ্রামে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে যুবক গ্রেপ্তার
আসক আরও বলছে, যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করায় তিনজন নারী ও নয়জন পুরুষকে হত্যা করা হয়। এছাড়া ৬২৭টি শিশুকে ধর্ষণ করা হয়েছে এবং ২০ জন ছেলেকে শ্লীলতাহানি করা হয়েছে এবং ২১ জন নারী অ্যাসিড আক্রমণের শিকার হয়েছেন।
ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড
ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে গত ১৭ নভেম্বর জাতীয় সংসদে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) বিল-২০২০’ পাস হয়।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০-এর ৯ (১) ধারা অনুযায়ী ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। এখন ওই ধারায় ‘যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড’ শব্দগুলো প্রতিস্থাপিত করা হয়েছে।
এর আগে, দেশে সম্প্রতি ধর্ষণের ক্রমবর্ধমান ঘটনার বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদের পরিপ্রেক্ষিতে সংসদের অধিবেশন না থাকায় গত ১৩ অক্টোবর ঘৃণ্য এ অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে এ সংক্রান্ত আইনের (নারী ও শিশু নির্যাতন দমন) একটি সংশোধনী প্রস্তাব অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয়েছিল।
বিশেষ করে সিলেট এমসি কলেজে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে শ্লীলতাহানির প্রতিবাদে দেশজুড়ে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন বিরোধী আন্দোলন এবং ধর্ষণকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করার দাবির মধ্যেই সরকার এ পদক্ষেপ নিয়েছিল।