মতামত
বাংলাদেশের অর্থনীতি সংস্কারে ভূমিকা রাখবে আইএমএফের ঋণ
গত ফেব্রুয়ারি মাসে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ‘রেসিলিয়েন্ট সাসটেইনেবল ফান্ড’ এর আওতায় ঋণ সহায়তার প্রথম কিস্তি পেয়েছে বাংলাদেশ। ডলারের হিসেবে যার পরিমাণ ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার।
আইএমএফ থেকে সাড়ে তিন বছর ধরে সাত কিস্তিতে যে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ পাচ্ছে, তার মূল্যও কম নয়।
কারণ, এ ঋণের বিপরীতে মোটা দাগে ৩৮টি শর্ত পূরণ করতে হবে বাংলাদেশকে। আর এই অর্থনীতি সংস্কারের শর্ত পূরণের মূল্য দিতে হতে পারে দেশের খেটে খাওয়া মানুষদের।
আইএমএফের মূল শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে- আন্তর্জাতিক নিয়মের সঙ্গে মিল রেখে এদেশের রিজার্ভ ব্যবস্থা পুনর্গঠন করা, ব্যাংকঋণের সুদহারের সীমা তুলে দেওয়া, ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দিয়ে একটি নির্দিষ্ট দাম ঠিক করা, সব সময় জ্বালানি তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিলিয়ে সমন্বয় করা, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় রাজস্ব সংগ্রহের হার বৃদ্ধি ইত্যাদি।
এছাড়াও বিভিন্ন খাত থেকে উল্লেখযোগ্য হারে ভর্তুকি কমানো, ব্যাংকঋণের সুদের হার বৃদ্ধি, ডলারের একদর করাসহ আইএমএফ যে সকল সুপারিশ বাংলাদেশ সরকারকে বাস্তবায়ন করতে বলেছে; সেগুলার একটি সরাসরি প্রভাব দেশের সাধারণ জনগণের ওপর পড়ছে।
বাংলাদেশ মূলত জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসে ভর্তুকি দিয়ে থাকে; যার পরিমাণ জিডিপির ০.৪ শতাংশ।
বিদ্যুৎ খাতে বাংলাদেশ সরকারের ভর্তুকির পরিমাণ প্রতিবছর প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার এবং গ্যাসে প্রায় ০.৪ বিলিয়ন ডলার।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ ব্যাংকের আশা আইএমএফ ঋণের প্রথম কিস্তি আগামী মাসের মধ্যে আসবে: মুখপাত্র
বাংলাদেশে বিগত বছরগুলোতে কয়েক দফায় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। কারণ আইএম এফ এর শর্ত হলো অলাভজনক খাতগুলো থেকে ভর্তুকি তুলে নেওয়া।
মূলত গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়েনি, বরং এসব পণ্যের মূল্যের বড় একটি অংশ আগে সরকার পরিশোধ করত, কিন্ত এখন সেটি ভোক্তা পর্যায়ে পরিশোধ করতে হচ্ছে।
ব্যাংকঋণের সুদহারের সীমা তুলে দিলে ব্যাংকগুলো ঋণের সুদ বাড়িয়ে দেবে। এতে পণ্য ও সেবা উৎপাদনের খরচ বেড়েছে, ফলে বেড়েছে পণ্যের দামও। যার ভুক্তভোগী হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষ।
যদি ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে রাতারাতি এদেশে ডলারের দাম বেড়ে যাবে এবং ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়ন হতে পারে।
তখন পণ্য আমদানিতে খরচ আরও বেড়ে যেতে পারে, যা মূল্যস্ফীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।
এদিকে, ঋণপ্রাপ্তির প্রথম দুই বছরে কর-জিডিপি দশমিক ৫০ শতাংশ এবং তিন বছরে দশমিক ৭০ শতাংশ হারে বৃদ্ধির কথা বলেছে আইএমএফ।
দেশের রাজস্ব প্রশাসনের প্রবণতা হচ্ছে, যারা কর দেন তাদের ওপরই বাড়তি করের বোঝা চাপানো।
অর্থাৎ এদেশের কর-রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রটি বিস্তৃত হলেও আমাদের কর সংগ্রহ ব্যবস্থায় যথেষ্ট ফাঁক-ফোকর রয়েছে। এদেশের চাকরিজীবীরাই একমাত্র নিয়মিত কর দেয়।
যদি কর-রাজস্ব আয় বৃদ্ধির জন্য মাথাপিছু কর বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়, তবে সেটি হবে কিছু নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষের ওপর একটি বাড়তি বোঝা।
সরকার ইতোমধ্যে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে; যার প্রভাব জিনিসপত্রের দামের ওপর পড়েছে। এগুলোতে সরকার আর ভর্তুকি দিতে রাজি নয়। জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম বাড়িয়ে বর্তমানে যে জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তা আন্তর্জাতিক বাজারদরের কাছাকাছিই আছে।
আরও পড়ুন: সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ চুক্তি চূড়ান্ত করতে ঢাকায় আসছেন আইএমএফ’র ডিএমডি
২০২৬ সালের মধ্যে সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ১০ শতাংশের মধ্যে ও বেসরকারি খাতের ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনতে বলেছে আইএমএফ।
এদিকে আইএমএফকে বাংলাদেশ জানিয়েছে, ব্যাংকের পুনঃতফসিল করা ঋণকেও খেলাপি ঋণের হিসাবে আনা হচ্ছে, যা আগামী জুনের মধ্যে কার্যকর হবে।
এর বাইরে দ্রুততম সময়ে আয়কর আইন ও শুল্ক আইন প্রণয়ন, ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধন, ফাইন্যান্স কোম্পানি আইনের সংশোধন এবং দেউলিয়া আইন প্রণয়নের শর্তও রয়েছে আইএমএফের।
শুধু ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ৩ মাসে বাংলাদেশের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১৩৪৩.৯৬ বিলিয়ন টাকা এবং এই খেলাপী ঋণের পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলছে।
আইএমেফের এই শর্তটি বাস্তবায়ন করা গেলে দেশে ঋণ খেলাপির পরিমাণ অনেকটা কমে যাবে বলে আশা করা যায়।
এছাড়াও, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে তিন মাস পরপর জিডিপির তথ্য প্রকাশ, প্রকৃত ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভের হিসাবায়ন পদ্ধতি এবং আন্তর্জাতিক নিয়মের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মুদ্রাস্ফীতি পরিমাপ পদ্ধতির প্রণয়ন আগামী জুনের মধ্যেই বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
আইএমএফের ঋণের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির যে সংস্কার হবে বলে মনে করা হচ্ছে, সেই সংস্কারের ঢেউয়ের প্রভাব শুধু নির্দিষ্ট কোনো একটি শ্রেণির মানুষের ওপরে না পড়ে, দেশের সকল মানুষের ওপর ন্যায়সঙ্গতভাবে পড়ুক; তবেই দেশের উন্নয়ন টেকসই হবে।
(প্রকাশিত মতামতের দায় লেখকের, ইউএনবির নয়)
আরও পড়ুন: আইএমএফ’র ঋণ একটি চারিত্রিক সনদের মতো: প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা মশিউর
হিরো আলমের যুদ্ধ চলবেই
হিরো আলম একজন বাজে গায়ক এবং ততোধিক খারাপ অভিনেতা। তিনি তার নিতান্ত ‘অনাকর্ষণীয়’ রূপ নিয়েই সমাজের প্রতিষ্ঠিত ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাতে শুরু করেছেন। তার আগেও অল্পকিছু মানুষ এমনটি করার দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন।
সমাজের প্রতিষ্ঠিত মানুষেরা তাকে ‘অসৎ, সংস্কৃতি জ্ঞানহীন, নিচু শ্রেণির ও অশিক্ষিত’-বলে সম্বোধন করলেও, তার ভক্তরা এসব বিষয়কে খুব একটা পাত্তা দেয় বলে মনে হয় না।
বাংলাদেশের শহুরে অভিজাত সুশীল শ্রেণির অনেকেই আলমকে ‘অচ্ছুৎ’ বলে মনে করেন। তার ব্যক্তিত্ব ও কর্মকাণ্ড সবকিছুরই অপব্যাখা করেন তারা। কিন্তু এরপরেও কোনোভাবেই তারা আলমকে আটকাতে পারছে না, এটাই তাদের মূল সমস্যা।
তারা সবচেয়ে খুশি হয়েছিল যখন পুলিশ হিরো আলমকে গ্রেপ্তার করে এবং সেসব গান গাইতে নিষেধ করে; বিশেষত যেগুলো রবীন্দ্র অনুরাগী সুশীলদের ‘সংবেদনশীলতায়’ আঘাত করে।
সেসময় বেশ কয়েকজন শীর্ষ স্থানীয় সুশীল ও কণ্ঠশিল্পী পুলিশের কাছে হিরো আলমের গান গাওয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন।
পরবর্তীতে রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রণীত সংগীত আইন মেনে চলার প্রতিশ্রুতিতে তাকে মুক্তি দেয়া হয়েছিল।
তবে বলতেই হয় আলম একজন ভাগ্যবান মানুষ, তাই র্যাব তাকে তুলে নিয়ে যায়নি। ভাগ্যিস, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ছিল!
আরও পড়ুন: এবার জরিমানার ফাঁদে হিরো আলম!
গলার কাঁটা
গ্রেপ্তারের বিষয়টি তার জন্য সাপে বর হয়ে যায় এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হিরো আলম আরও বেশি আলোচিত হয়ে ওঠেন। এমনকি সেসময় হিরো আলম নিজেও সামাজিক মাধ্যমের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে নিজের অবস্থান ও বিভিন্ন অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছিলেন।
সরকারের পক্ষ থেকে পুলিশকে এ বিষয়ে জড়ানোর কথা বলাটা আসলেই হাস্যকর ছিল।
কারণ, বাজে গান যদি আইন-শৃঙ্খলার জন্য সমস্যা হয়; তবে দেশের অনেক রাজনৈতিক নেতার বক্তব্য ও হাস্যরসাত্মক মন্তব্যের জন্য পুলিশকে প্রতিদিন কয়েক ঘন্টা নষ্ট করতে হবে।
দুঃখজনকভাবে, সুশীলদের জন্য এরপর আরও বড় ধামাকা অপেক্ষা করছিল।
গান গাওয়ার ব্যাপারটা ওখানেই শেষ হলেও, এরপরই শোনা যায় এবার হিরো আলম সংসদ উপনির্বাচনে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন।
অনেক ব্যঙ্গবিদ্রুপের পরে নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর দেখা যায়, হিরো আলমকে মাত্র ১ হাজারেরও কম ভোটে হারানো হয়েছে।
দুঃখজনকভাবে বিজয়ী জাসদের প্রার্থী তানসেন জাতীয় পর্যায়ে পরিচিত মুখ না হওয়ায়, তার জয়ের চেয়ে হিরো আলমের পরাজয়ই বড় খবর হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুন: মাইক্রোবাস উপহার নিতে হিরো আলম যাচ্ছেন হবিগঞ্জ
তানসেন যেহেতু আ.লীগ সমর্থিত প্রার্থী ছিলেন, অতীতের নির্বাচনী অভিজ্ঞতার আলোকে স্বভাবতই জনগণ মনে করছে হিরো আলমকে সংসদে যেতে না দেয়ার জন্যই জোর করে তাকে হারানো হয়েছে।
ইসি অবশ্য নির্বাচনে কারচুপির কথা অস্বীকার করেন এবং এ বিষয়ে হিরো আলমের তোলা অভিযোগ প্রত্যাখান করেন।
তবে সংশ্লিষ্ট সবার মাথাব্যাথা আরও বেড়ে যায় তখন, যখন মানুষ ইসির কথা না বিশ্বাস করে হিরো আলমের কথাই বিশ্বাস করে।
তবে এখন মনে হচ্ছে এই মানুষটিকে (হিরো আলম) ঘিরে অনেক কিছু চলছে এবং গান গাওয়া ও ভোট দেয়ার বাইরেও তার আরও অনেক বড় বড় ‘শত্রু’ হয়ে গেছে।
আলো ঝলমলে ঢাকা থেকে অনেক দূরের কোনও এক গ্রামীণ পশ্চাৎপদ পরিবেশ থেকে উঠে আসা ‘একগুঁয়ে' মানুষটির একটি অনিশ্চিত পেশা, কিছু নোংরা প্রেমের সম্পর্ক এবং জনগণের মনোযোগ আকর্ষণের দক্ষতা; সমাজের প্রতিষ্ঠিত মানুষদেরকে বিভ্রান্ত ও হতবুদ্ধি করে তুলেছে।
শুধু তাই নয়, একজন তাকে একটি মাইক্রোবাস উপহার দিল এবং কেউ যা করে না আলম তাই করলো; সেটি দান করে দিলেন। আর এ বিষয়টি এতটাই আলোচিত হয়ে উঠল, যে সংসদেও এসব নিয়ে আলোচনা উঠল।
সুশীলদের ওপর ফের আঘাত
ইউএনবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায় যাওয়ার পথে হিরো আলমকে ২৫০০ টাকা জরিমানা করে হাইওয়ে পুলিশ। ওই উপজেলার নরপতি গ্রামের আব্দুল জব্বার গাউছিয়া একাডেমির প্রিন্সিপাল এম মখলিছুর রহমানের কাছ থেকে উপহারের মাইক্রোবাস আনতে গিয়েছিলেন তিনি।
কারণ মখলিছুর সম্প্রতি ফেসবুক লাইভে ওয়াদা করেছিলেন যে বগুড়া দুই আসনে উপনির্বাচনে জিতলে বা হারলে হিরো আলমকে তিনি গাড়ি উপহার দেবেন। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে হিরো আলম গাড়িটি গ্রহণ করেন এবং তারপর লাশ বহনের অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে ব্যবহার করার জন্য এটি দান করেন।
আরও পড়ুন: যারা হিরোকে জিরো বানাতে চায় তারাই জিরো হয়ে গেছে: হিরো আলম
আলমকে জরিমানা করা পুলিশের এই পদক্ষেপটিতে কি কিছুটা প্রতিহিংসার গন্ধ ছিল! যে দেশে মন্ত্রীরা ঢাকার ব্যস্ত সড়কে জাতীয় পতাকা লাগানো তাদের সরকারি গাড়ি নিয়ে রংসাইড দিয়ে যাওয়া দোষের কিছু মনে করেন না, মোটরসাইকেলগুলো ফুটপাতকে সাব-রোড হিসেবে ব্যবহার করে, ফুটপাতে পার্ক করা গাড়ির জ্বালায় জনগণের হাঁটা দুষ্কর এবং এমনকি ‘ট্রাফিক নিয়ম লঙ্ঘন’- বলে যে কিছু আছে, অনেকে তা জানেই না। সেখানে আলমকে নিয়ে সরকারি বাহিনীর এত উদ্বেগ কিসের?
নিম্নশ্রেণির উত্থান
হিরো আলম ব্যক্তিগতভাবে ও সাংস্কৃতিকভাবে নিম্নশ্রেণির মানুষের উত্থানের প্রতিনিধিত্ব করছেন। শিল্পের মানদণ্ড কি তা নির্ধারণ করে রেখে সুশীলরা এতদিন যে একচেটিয়া সুবিধা ভোগ করছে, প্রথমেই তা হুমকির মুখে পড়েছিল গ্রামীণ ধর্মীয় সংস্কৃতির উত্থানের ফলে।
রাজনীতি ছাড়াও, হেফাজতের ঢাকা অবরোধের মধ্যদিয়ে দেখা যায় যে, জেগে উঠলে মুহূর্তে তারা ব্যক্তিগত ও সামাজিক যে কোনও বাধা অতিক্রম করতে পারে।
‘আধুনিক ও ধর্মনিরপেক্ষ’ সুশীল সংস্কৃতির জন্য ওয়াজ মাহফিল বা হেফাজত ও তাবলিগ সংস্কৃতিকে প্রত্যাখান করা সহজ, কারণ তারা একটি রাজনৈতিক ও বিশেষ গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করে।
কিন্তু এখানেই হিরো আলম তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলছে।
সারা বাংলাদেশের শহুরে অভিজাত বা সুশীলদের চর্চিত সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড আর হিরো আলমের কর্মকাণ্ড তো একই।
হিরো আলম হয়তো ভালোভাবে কাজগুলো করতে পারে না, তবে অভিজাত বা সুশীলরা তাদের কমন স্পেসে যা করে সেও ঠিক তাই করে ।
আলম তাদেরই মতো গান করেন, তাদের মতো বিভিন্ন নায়ক ও আইকনদের নকল করেন এবং এমনকি তাদের অনেকের মতো নারীও সাজেন।
কেউ তাকে অপছন্দ করতেই পারে, যেমনটি অধিকাংশ সুশীলই তা করেন। তবে কেউ তার সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডকে বন্ধ করতে পারে না, কারণ সুশীল অভিজাতরাও ঠিক এ কাজগুলোই করে।
হিরো আলম ও তার সমগোত্রীয়রা ক্রমে উঠে আসছে এবং শিগগিরই সুশীলদের একচেটিয়া দখলদারিত্বের ভিত্তি নড়িয়ে দিতে পারে তারা। মূলত এ ভয়েই তারা এত উদ্বিগ্ন।
কিন্তু ইতিহাস বলে, এ শ্রেণির মানুষেরা আজীবনই অপ্রতিরোধ্য। নিম্নশ্রেণির মানুষেরাই হয়তো একদিন শখের গায়ক ও তথাকথিত সৌন্দর্য্য সর্বস্ব শ্রেণির মানুষের ওপর আধিপত্য বিস্তার করবে।
(প্রকাশিত মতামতের দায় লেখকের, ইউএনবির নয়)
আরও পড়ুন: হিরো আলমকে তাচ্ছিল্য করে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের বক্তব্য শিষ্ঠাচার বহির্ভূত ও বৈষম্যমূলক: টিআইবি
কোন দেশে বেশি স্মার্টফোন ব্যবহার, বেশি মানসিক রোগ?
যদি ভেবে থাকেন আমেরিকা, আপনি ফেল। এটা হলো চীন। কানাডার ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটি এক গবেষণা চালিয়ে বলেছেন। ২০১৪ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ২৪টি দেশের ৩৪ হাজার ব্যবহারকারীর তথ্য ও তালিকা নির্ণয় করে তারা জানিয়েছে। আচ্ছা চীন না হয় বোঝা গেলো, তারপর কে? সৌদি আরব, আছে মালয়েশিয়া। কিন্তু ১০ নম্বরে কে? ভাবুন একবার, নেপাল। তারা ভারত থেকে এগিয়ে? জি-তাই, ভারত ১৭ নম্বরে। সবই এশিয়ান দেশ। বরং ইউরোপ কমের দিকে। জার্মানি ও ফ্রান্স ২৩ ও ২৪ তম স্থানে।এই ধরনের বড় আকারের গবেষণা কমই হয়েছে যেখানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের তথ্য নেয়া হয় পরিমাপের জন্য। কিন্তু স্মার্টফোন ব্যবহার থেকে অনেক ধরনের মানসিক বৈকল্য ও শান্তি জন্মায়। তার হিসেবেও করে এই গবেষণা। তারা ‘স্মার্টফোন এডিকশন স্কেল’(এসএএস) ব্যবহার করে এই ক্ষেত্রে। ইউরোপ, আমেরিকার অবস্থা কি রকম?এই জরিপ মতে কানাডা দখল করে আছে সপ্তম স্থান আর মার্কিনিরা অনেক নিচে-১৮ মানে ভারতেরও নিচে। ফ্রান্স ২৩ আর জার্মানি ২৪। তুরস্ক , ইরান, মালয়েশিয়া সবাই এই তালিকায় আছে যেমন আছে নাইজেরিয়া। ইসরাইল আছে ১৩ নম্বর দখল করে। কেন এক দেশে বেশি, অন্য দেশে কম সেটা বোঝার চেষ্টা চলছে তবে গবেষকরা বলছেন, হয়তো এশিয়ার সাবেকি সমাজে পারিবারিক ও সামষ্টিক যোগাযোগ রাখার একটা তাগিদ আছে যা স্মার্টফোন পূরণ করে। তবে এটা একেবারেই অনুমান।স্মার্টফোন নেশা কত ব্যাপক?আইপাস নামক যোগাযোগ সংস্থা আমেরিকা ও ইউরোপের ১৭০০ লোকের ওপর এক জরিপ চালায়। তাদের কয়েকটি তথ্য বেশ চমকানোর মতো: কি সব অদ্ভুত ও উদ্ভট পরিস্থিতিতে মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করার তাগিদ অনুভব করেন বা করেছেন তার কয়েকটি উদাহরণ: * ৭ শতাংশ যৌন কর্মকালে * মল ত্যাগ করতে গিয়ে ৭২ শতাংশ* অন্তোষ্টক্রিয়ায় ১১ শতাংশ* ৬১ শতাংশ জানায় ওয়াইফাই ছাড়া থাকা তাদের পক্ষে সম্ভব নয় * এর চাহিদা যৌন কর্মের চেয়ে বেশি (৫৮ শতাংশ)* জাঙ্ক ফুডের চেয়ে বেশি (৪২ শতাংশ)* ধূমপানের চেয়ে (৪১ শতাংশ)* মদের চেয়ে (৩৩ শতাংশ) * মাদকের চেয়ে ৩১ (শতাংশ)* গোসল করার চেয়ে বেশি (২৫ শতাংশ) আর ১৯ শতাংশ বলেছে তারা মানব সঙ্গ ত্যাগ করতে পারবে কিন্তু ওয়াইফাই নয়।২৪টি জরিপ করা দেশের তালিকা। পাশে ১-৬০ হিসেবে স্মার্টফোন জনিত মানসিক সমস্যার সূচক ২৪ দেশের তালিকা১ . চীন (৩৬ .১৮)২ . সৌদি আরবে (৩৫.৭৩)৩ . মালয়েশিয়া (৩৫.৪৩)৪ . ব্রাজিল (৩২ )৫ . দক্ষিণ কোরিয়া (৩১.৬২)৬ . ইরান (৩১.৫২)৭ . কানাডা (৩১ .১১ )৮ . টার্কি (৩০.৯২)৯ . মিশর (২৯.৫৪)১০. নেপাল (২৯.৪১)১১ . ইতালি (২৮ .৮২)১২ . অস্ট্রেলিয়া (২৮.৬১ )১৩ . ইসরাইল (২৮.২৯ )১৪ . সার্বিয়া (২৮ .১৬ )১৫ . জাপান (২৭.৭১)১৬ . যুক্তরাজ্য (২৭.৬৯)১৭ . ভারত (২৭.২)১৮ . যুক্তরাষ্ট্র (২৬ .৬৮ )১৯ . রোমানিয়া (২৫.৫২ )২০ . নাইজেরিয়া (২৪.৭৩ )২১ . বেলজিয়াম (২৪.২৪)২২ . সুইজারল্যান্ড (২৩.৪৫)২৩ . ফ্রান্স (২০.২৯)২৪ . জার্মানি (১৮.৪৪)
(প্রকাশিত মতামতের দায় লেখকের, ইউএনবির নয়)
পড়ুন: যোগ্য পাকিস্তানের কাছে চূর্ণ হলো বাংলাদেশি নারীদের অতি আত্মবিশ্বাস!
মিডিয়া: মরিয়ম মান্নান, শাকিব খান, বুবলী...
হিরো আলম: আসল ঝামেলাটা কি গান না শ্রেণি?
যোগ্য পাকিস্তানের কাছে চূর্ণ হলো বাংলাদেশি নারীদের অতি আত্মবিশ্বাস!
নারী এশিয়া কাপে পাকিস্তানের কাছে ৯ উইকেটে পরাজিত হওয়ার পর বাংলাদেশ নারী ক্রিকেটকে ঘিরে যে ধরনের উচ্ছ্বসিত প্রচারণা ছিল তা অনেকটাই ম্লান হয়েছে। পাকিস্তান খেলেছে জায়গা মতো আর বাংলাদেশ পড়েছে বেকায়দায়।
বাংলাদেশ আয়ারল্যান্ড ও থাইল্যান্ডকে পরাজিত করে এই কাপে এবং তাদের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের কাপ জয়ের পর পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের প্রত্যাশা করেছিল সবার। কিন্তু পুরাই ব্যর্থ হয়েছে। সত্যিকার অর্থে পাকিস্তান একটি শক্তিশালী দল। কিন্তু কাপের ডিফেন্ডার হিসেবে বাংলাদেশে কাছ থেকে অনেক ভালো করার প্রত্যাশা ছিল। তা হয়নি।
যেমন ক্রিকেট সাইট ক্রিকবাজ তাদের লাইভ ধারাভাষ্যে অকপটে বলেছে, ‘বাংলাদেশের ব্যাটিং ও বোলিংয়ের অবস্থা ভয়ঙ্কর বাজে ছিল’। অর্জনের পর বাজে খেলা, স্পষ্টতই একটি ব্যাধি- যা আমরা ভালো ভাবেই জানি যখন বাংলাদেশের ক্রিকেটের কথা আসে।
আরও পড়ুন: হিরো আলম: আসল ঝামেলাটা কি গান না শ্রেণি?
জঘন্য ব্যাটিং
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ ৮ উইকেট হারিয়ে ৭০ রান করে। সালমা খাতুন সর্বোচ্চ ২৪ রান করেন এবং মাত্র অন্য দুইজন খেলোয়াড় দুই অঙ্কে পৌঁছেতে পারেন। আমাদের ‘ভয়ঙ্কর’ ব্যাটিং সম্পর্কে ভালো জানান দেয়। যারা ম্যাচটি দেখেছেন তারা প্রায় সবাই বলেছেন একটি কথা। খেলাটা জেতার ইচ্ছাটা অভাব ছিল যেন। হয় তারা ম্যাচটিকে হালকাভাবে নিয়েছে বা কীভাবে এটিকে সিরিয়াসলি নিতে হবে তা জানে না।
বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানা যথারীতি অজুহাত দিলেও সেগুলো অন্তঃসারশূন্য শোনায়। ‘টপ অর্ডার ভেঙে পড়েছে এবং উইকেট স্লো হওয়ায় আমরা আমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারিনি। আমরা ভেবেছিলাম এটা ব্যাটিং করার জন্য ভালো পিচ। কিন্তু পিচটি ছিল স্যাঁতসেঁতে। বোলাররা সঠিক জায়গায় বল করতে পারেনি। আমি মনে করি আমাদের কিছু বিষয়ে কাজ করতে হবে এবং আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসতে হবে।’
অবশ্যই পিচটি স্যাঁতসেঁতে ছিল, এটি ক্রিকেট জীবনের অংশ। কিন্তু কীভাবে একজন আঠালো পিচে ব্যাট করেন তা বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়ার অংশ। দুর্ভাগ্যবশত, এই ম্যাচে বাংলাদেশ সেই প্রবণতা বা অভিপ্রায় দেখিয়েছে বলে মনে হয় না।
আরও পড়ুন: ভারতে এতো ঝামেলা হচ্ছে কেন?
পাকিস্তান ছিল বিধ্বংসী
পাকিস্তান একই পিচে খেলেছে এবং তাদের স্পিনাররা খুব বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যাটার দের মাথা নত করিয়ে দেয়। তারা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছিল যে আমাদের মেয়েদের অযোগ্য দেখায়। পাকিস্তান যখন ব্যাট করতে শুরু করে তখন উইকেটের কিছুটা উন্নতি হয়েছিল কিন্তু দলটি স্পষ্টতই আরও আত্মবিশ্বাসী এবং জয়ের অভিপ্রায় নিয়ে খেলে এবং মাত্র ১২ ওভারে তা করেছিল। পুরো ম্যাচে বাংলাদেশ কখনোই চ্যাম্পিয়নদের মতো দেখতে মনে হয়নি।
পাকিস্তান দলের পারফরম্যান্স নিয়ে এমনটাই বলেছেন পাকিস্তান অধিনায়ক বিসমাহ মারুফ। ‘বোলারদের কাছ থেকে খুবই ক্লিনিক্যাল সাফল্য পেয়েছি। প্রথম দিকের উইকেট হারাবার পর তাদের চাপে ফেলে দেয় আমাদের বোলাররা I আমরা আমাদের স্পিন নিয়ে কাজ করছি। আমরা আমাদের পরিকল্পনা ভালোভাবে বাস্তবায়ন করেছি। তারা একটি ভাল টিম। আমাদের বিরোধী দলকে সম্মান দিতে হবে। তবে আমাদের আজকের পারফরম্যান্স ভালো ছিল।’ এটি এমন একটি দলের কাছ থেকে একটি অত্যন্ত নম্র প্রতিক্রিয়া ছিল যারা মূলত ‘চূর্ণ’- বিডি মিডিয়ার পরাজয় বর্ণনা করার জন্য প্রিয় শব্দ - করেছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের এবং টেবিলের শীর্ষে চলে গেছে।
বিসিবি প্রধান পাপন তাদের জিততে দেখে এবং তাদের পারফরম্যান্সের প্রশংসা করার পর দলটি কুফা লেগেছে বলে যে গুজব চলছে, সেটা গুজব , সত্য নয় তা আমরা তা নিশ্চিত করতে পারি।
(প্রকাশিত মতামতের দায় লেখকের, ইউএনবির নয়)
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে বিরোধী দলের বন্ধ্যাত্ব
মিডিয়া: মরিয়ম মান্নান, শাকিব খান, বুবলী...
অনেকেই ক্লিক বাজ খবর পড়ে না যেমন আমি ও আরো কয়েকজন। তবে আমরা বয়স্ক মানুষ তাই চটুল খবরের অজুহাতে এদের এড়িয়ে যাই। কিন্তু প্রায় সবাই পড়ে এবং এটাই স্বাভাবিক কারণ মিডিয়ায় যা আসে তার ভোক্তা আছে বলেই আসে। যে মিডিয়া আউটলেট এদের অস্বীকার করে যাবে, তাকে মূলধারা মিডিয়ায় কি বলা যাবে? তবে এটা ঠিক কিছু মিডিয়ায় থাকবে যাদের পদচারণা বাজারের বাইরে হবে। এদের অর্থায়ন সমস্যা নাই তাই সেটা করতে পারে কিন্তু তারা কি সবল ও প্রভাবশালী? বাকিদের জন্য ওই কয়েকটা নাম কি বাস্তবতার প্রকৃত চেহারার প্রতিচ্ছবি?
২
রাহিমা খাতুন ও মরিয়মের সংবাদটা অন্তর্ধান, অপহরণ, লুকিয়ে যাওয়া কেন্দ্রিক। সেই অর্থে কেলেঙ্কারি বিষয়ক নয়। তবে এক দিক থেকে বিষয়টা তাই। তাদের বিরুদ্ধে চার্জ হচ্ছে তারা মিথ্যাচার করেছে, সাজানো নাটক করে সবাইকে বোকা বানাতে চেয়েছে। এর ফলে কিছু নিরপরাধ মানুষ জেলে গেছে। কিন্তু কে করেছে, কিভাবে করেছে এবং কেন করেছে এখনো পরিষ্কারভাবে জানা যায়নি। পুলিশ বলেছে রহিমাকে অপহরণ করা হয়নি। মরিয়ম বলছে সে নিশ্চিত না। তাকে মেয়ে নিয়ে গেছে মানসিক হাসপাতালে। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কি হয়। কিন্তু মিডিয়া জগতে তারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নেতিবাচক চরিত্রে, হয়তো আরো বেশি কিছু।
৩
শাকিব খান, বুবলী, অপু বিশ্বাস, পূজা চেরি, সবাই সিনেমা জগতের নাম এবং ব্যক্তিগত সম্পর্কের মাধ্যমে একে অন্যের সাথে জড়িত। শাকিবের প্রথম গোপন সম্পর্কে-অপু বিশ্বাস থেকে এক সন্তানের জন্ম, দ্বিতীয় গোপন সম্পর্ক-বুবলী-থেকে আর এক সন্তান আর মিডিয়ার অভ্যাস তার থার্ড গোপন সম্পর্ক চলছে পূজা চেরির সাথে, সন্তানও নাকি হতে পারে আবার। বিষয়টা বিষয় নয় কারণ তাবৎ দুনিয়ার এন্টারটেইনমেন্ট জগতে এসব হয়, খবর হয় , পাঠক দর্শক, দেখে পড়ে। কিন্তু এদেরকে বিষয় হিসেবে অস্বীকার করা স্রেফ অদ্ভুত অন্ধ হওয়ার সাধ জাগার মতো মিডিয়ার জন্য। কে কিভাবে এই সব কভার করছে সেটাই বিষয়, কভার করছে কি করছে না, সেটা নয়।
পড়ুন: শেহজাদ খান বীর আমার এবং বুবলীর সন্তান: শাকিব খান
হিরো আলম: আসল ঝামেলাটা কি গান না শ্রেণি?
সোশ্যাল মিডিয়া না থাকলে হইতো হিরো আলমকে নিয়ে এতো সব যে ঘটছে তার কিছুই ঘটতো না। হইতো কেউ জানতোও না তার কথা। বড় জোর মফস্বল পর্যায়ের হাস্য-রস উদ্রেককারী একজন মানুষ হিসেবেই থাকতেন তিনি। কিন্তু পাল্টে গেছে দুনিয়া, বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে। এতেই হিরো আলম জাতীয় পর্যায়ের একজন ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন।
২
কেউ তাকে নিয়ে হাসে। কিন্তু অনেকেই আবার তাকে পছন্দ করে, বিশেষ করে তার ফলোয়াররা। তারা আমার-আপনার মতো সুশীল ভদ্রলোক না, তাদের বলা যায় নিম্ন পদস্থ মানুষ। তাদের কোনোদিনই আমাদের সাথে দেখা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু গণযোগাযোগ মাধ্যম এমনি বাস্তবতা, (আমরা না চাইলেও) আমাদের ঘরে অনেক মেহমান এনে দেয়।
আরও পড়ুন: ভারতে এতো ঝামেলা হচ্ছে কেন?
যেমন- হিরো আলম। আমি অনেক কিছুই সহ্য করি এসবের মধ্যে এটাও একটা। কিন্তু ডিবি পুলিশের কাছে অভিযোগ দেই না। তবে কয়েকজন দিয়েছেন। তাই রবীন্দ্র-নজরুলের গান গাইবেন না- এই মর্মে তার (আলম) কাছ থেকে মুচলেকা নিয়েছে পুলিশ।
৩
সবই ঠিক ছিল। তবে এখানেও এসে দাঁড়ায় সোশ্যাল মিডিয়া। একজন গায়ককে পুলিশ দিয়ে শাসানো অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারীর পছন্দ হয়নি। বিশেষ করে পুলিশ দিয়ে গান বন্ধ করা। আর এতেই শুরু হলো গালি বর্ষণ, ব্যঙ্গ, বিদ্রুপ, তিরস্কার। যারা তাকে মুচলেকা দিয়ে অপমানিত করে মুখ বন্ধ করতে চেয়েছিল তাদের চেষ্টার ফল হলো উল্টো। হিরো আলম বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় সকল রাজনীতিবিদ ও সংস্কৃতি-কর্মীর চেয়ে পরিচিত ও জনপ্রিয়। এখন তিনি প্রতিবাদের প্রতীক। তার রবীন্দ্র-নজরুল দরকার নেই। আজ হিরো আলম একাই যথেষ্ট।
৪
যারা তাকে ঝামেলায় ফেললো শোনা যাচ্ছে তারা শিল্প সংগীতের মানুষ। আবার তাদের মধ্যে টেলিফোনে এক নারীকে হেনস্তার অভিযোগে পদ হারানো সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুরাদও রয়েছেন। তার একাধিক ভিডিও আছে যেখানে তিনি বলেন, ‘কী করে সাহস হয় এই লোকের আমার সামনে গান গাইবার? যখন তার কোনো সংগীত জ্ঞান নাই। আল্লাহ যে একখান গলা ও চেহারা দিয়েছে তাকে। তার গান নিচু শ্রেণির মানুষেরা শোনে। সে তাদের জন্য গাক। কিন্তু গুলশানে এসে গাইবে কেন?’
আরও পড়ুন: স্বাধীনতার ইতিহাসে তাদের স্থান কি হবে?
৫
অতএব শ্রেণির বিষয়টা পরিষ্কার। ওপর তলা চায় না নিচের শ্রেণির মানুষ একই পরিসরে সংস্কৃতি চর্চা করুক। কিন্তু কপাল এমনি যে সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে নিম্নদের কালচার তাদের ঘরের ভেতর ঢুকে পড়ছে। এটা সহ্য না হবারই কথা!
আরেকটা বিষয় হলো সোশ্যাল মিডিয়াতে কিন্তু প্রায় সকলেই হিরো আলমের পক্ষে লিখেছেন, কিছু মানুষ ছাড়া। অর্থাৎ ‘রাবীন্দ্রিক’ নাক উঁচু শুদ্ধবাদী সুশীলের চেয়ে বিপক্ষ সুশীলের সংখ্যা অনেক বেশি। এদের পুরনো রক্ষণশীলতা নেই। ‘রবি-রক্ষা’ প্রথম অগ্রাধিকার না। বরং তারা মনে করে যে ভাবে গাক করুক না কেন সবার জায়গা আছে।
আগে গান হতো মজলিশে। কিন্তু সে দিন শেষ। ডিজিটাল দুনিয়ায় সবার জায়গা হয়। অধিকাংশই এটা মেনে নেয়, কয়েকজন ছাড়া।
(প্রকাশিত মতামতের দায় লেখকের, ইউএনবির নয়)
ভারতে এতো ঝামেলা হচ্ছে কেন?
দক্ষিণ এশিয়ায় অন্যদের তুলনায় ভারতের অবস্থা অনেক ভালোI তারা নিজেরাও এটা ভাবে ও বলেI এতো বড় দেশে, এতো সম্পদ, ভূমি, মানুষ ... ইন্ডিয়া নিজেকে একটা উঠতি পরাশক্তি ভাবে। কিন্তু ইদানীংকালের কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে যা চিন্তিত হওয়ার মতো। ভারতের রাজনৈতিক নেতারা কি পাবলিকের বাস্তবতা ও মন ধরতে পারছেন না?
তিনটি উদাহরণ
ভারতের কৃষি নীতি দারুণ সমালোচিত হয় বিশেষ করে তাদের খাদ্য উৎপাদনকারী পাঞ্জাবে। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়ে ওঠে সেখানে প্রধান রাজনৈতিক বিষয়I শেষ পর্যন্ত মোদিকে পিছিয়ে আসতে হয়, নীতি পাল্টাতে হয়I এবং রাজনৈতিক দামও দিতে হয়েছে। এর জন্য যে ঝামেলা বিরোধী দলগুলা ফেলে তাতে মনে হয়েছে, এই কৃষি নীতি খুব একটা পরিপক্ক ভাবনার ফসল ছিল না।
দ্বিতীয়টা হচ্ছে, হযরত মোহম্মদকে নিয়ে শর্মা-জিন্দালের বক্তব্য। এটাতেও বিপাকে পড়ে ভারত, দেশের ভেতর ও বাইরেI যদিও বিজেপি জানে জনগণ এই বক্তব্যের পক্ষে এবং এতে তাদের রাজনৈতিক লাভ হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা ছিল কিছুটা আলাদাI এর বিরুদ্ধে সহিংস প্রতিবাদ হয়েছে এবং অনেক স্থানে তা ছড়িয়েছে। এতে অবশ্য বিজেপি'র লাভ। কারণ মুসলমান বিরোধী মনোভাব এই দলের অন্যতম সমর্থনের শক্তি। তারা এই দলকে ভোট দেয় না। কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী কোনো দ্বন্দ্ব-সহিংসতা অর্থনীতির ওপর চাপ ফেলতে বাধ্য, যেটা তাদের হিসেবে ছিল না।
সেটা ছাড়া রয়েছে আন্তর্জাতিক ‘ইসলামী উম্মা’ বিশেষ করে আরব দেশসমূহ যার সঙ্গে ভারত সম্পর্ক রাখতে চায়। যেখানে ভারতীয় মালামাল ও ভারতীয়দের চাকরির বড় বাজার, সেখানে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়েছে যা ভারতকে বিব্রত করেছেI এবং সেই কারণে এই দুই নেতাকে দল থেকে সাসপেন্ড করা হয়I কিন্তু তাদের সমর্থন ও প্রভাব বেড়েছে।
তবে ধর্ম কেন্দ্রিক রাজনীতিকে হাতিয়ার হিসেবে প্রয়োগ করা যায় রাজনৈতিকভাবে। কিন্তু তার অসুবিধাও আছেI মুসলমানদের প্রান্তিক করলেই শুধু চলবে না, সে তুলনায় অন্যদের লাভ হতে হবেI সকল রাজনীতির প্রধান সূত্র অর্থনীতি এবং সেখানেই ভারত খেলেও তৃতীয় ধাক্কা।
অগ্নি-পরীক্ষা
এই তৃতীয় ধাক্কাটি সবচেয়ে বড় যদিও দেশের বাইরে এটা নিয়ে কম আলোচনা হচ্ছে। এটি ভারতের অগ্নিবীর প্রকল্প যার মাধ্যমে প্রশিক্ষণের পর সামরিক বাহিনীতে সাময়িকভাবে কন্ট্রাক্ট কর্মী নিয়োগ হওয়ার কথা। মেয়াদ শেষ হলে তাদের এক অংশ আর্মির পূর্ণ সদস্য হবেI এটি নিয়ে মোদির অনেক আশা গর্ব ছিল। কারণ সেনাবাহিনীর বৃদ্ধিকরণ দরকার এবং এরা কিছুদিনের জন্য কম খরচে অনেকে কাজে লাগবে তারI এছাড়া একটি প্রশিক্ষিত জনবল তৈরি হবে যারা সাচ্চা ভারতীয় দেশ প্রেমিক।
বিরাট উৎসাহের সঙ্গে এর ঘোষণা করা হয়। কিন্তু প্রায় সঙ্গে সঙ্গে তীব্র সহিংস প্রতিবাদে ফেটে পড়ে সেই সব এলাকা যেটা বিজেপি'র একাট্টা সমর্থক এলাকা হিসেবে পরিচিতI উত্তর প্রদেশ, বিহার, হরিয়ানা ও অন্য কয়েকটি জায়গার ওপর ভিত্তি করে বিজেপি দাঁড়িয়ে। এটি তারা আশা করেনি। কারণ উদ্দেশ্য ছিল এদের সহায়তা করা, সমর্থন আরও সবল করাI ফলে ধাক্কা লেগেছে।
প্রতিবাদ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে প্রকল্পে যাতে পরিস্থিতি ঠান্ডা হয়।
এছাড়া, দলের প্রধান নেতারা মাঠে নেমেছেন তরুণদের বোঝাতে। কারণ সরকার নিশ্চিত যারা হাঙ্গামা করছে তারা তাদের ভোটার।
পাবলিকের চাহিদা
যেটা মনে হচ্ছে সেটা হলো বিজেপি ভাবছে দেশের মানুষ রাজনীতিকে প্রধান স্থান দেয়, অর্থনীতিকে নয়। এই ধারণা খুবই সনাতনী, কলোনিয়াল যুগের চেয়ে পুরাতন। এটা দিয়ে বর্তমানে চলবে না যদিও এতদিন নির্বাচনে তাদের লাভ হয়েছেI নেতারা কি জনমতের আসল চাহিদা ধরতে পারছেন না? তারা কি ভাবছেন, ভারতের মানুষ স্লোগান শুনে ভোট দেবে আজীবন। কিন্তু মানুষ তো চায় রুজি, চায় বেতন ইত্যাদি। এটা ঠিক ভারতের মুসলমানদের প্রান্তিক করলে অন্যরা বেশি সুবিধা পাবে। কিন্তু যদি লাভ না হয় তাহলে প্রান্তিক করে কি লাভ? কৃষি নীতি, ধর্ম নীতি ও সামরিক নীতি তিনটায় প্রমাণ করলো বিজেপি পাবলিককে নিজেদের মতো ইডিওলজিকাল ভাবলেও পাবলিকের প্রধান ইডিওলজি পেট। ওটা ঠান্ডা করতে হবে।
রাজনীতির প্রধান কথাই অর্থনীতি
আরও পড়ুন: স্বাধীনতার ইতিহাসে তাদের স্থান কি হবে?
বাংলাদেশে বিরোধী দলের বন্ধ্যাত্ব
আন্দ্রে রাসেল একাই খেলা দেখাল কিন্তু পারল না কলকাতা
স্বাধীনতার ইতিহাসে তাদের স্থান কি হবে?
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সুফল যা একটি কঠিন বাস্তবতা। এদেশের আপামর জনতার পরোক্ষ প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ, মা বোনের ইজ্জত, মানবিক বিপর্যয়, ত্যাগ তিতিক্ষার কথা ইতিহাসে স্থান পেয়েছে। অসমাপ্ত রয়ে গেছে ইতিহাসের অনেক উপাদান। গবেষকরা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
দেশের বাইরে থেকেও যারা যুদ্ধে সমর্থন জুগিয়েছিল তাদের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। অনেকেই দেশের মাটিতে পা না দিয়েও মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় আছেন এবং ভাতা গ্রহণ করছেন। এমনকি বিজয়ের মুহূর্তে কোন অবদান না রেখেও শুধু মাত্র স্বাধীনতা বিরোধীদের হাতে নিহত হয়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান সম্বোধিত হচ্ছেন। কিন্তু উল্লেখ্যযোগ্য সংখ্যক বাঙালিরা যুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তানে মানসিক চাপ, নির্যাতন, জেল ও অনেক কষ্ট করে পালাতে গিয়ে ধরা পড়ে নিগৃহীত হয়েছিলেন। তাদের ইতিহাস অনুচ্চারিত রয়ে গেছে।
সামরিক বেসামরিক সকল শ্রেণিই নিজের মাতৃভূমিতে ফেরত এসে বাঙালী মূল স্রোতের সঙ্গে একাত্ম হতে চেয়েছিলেন। তাদের এই ত্যাগ তিতিক্ষা কি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে স্থান পাওয়ার যোগ্য নয়? সে উদ্যোগ কেউ নিয়েছেন কি না জানা নেই।
জানামতে আমাদের অনেক আত্মীয় স্বজন পালাতে গিয়ে ধরা পড়েছে । আফগানিস্তান হয়ে কপর্দকশূন্য অবস্থায় অনেকে দেশে ফিরেছেন। দুর্গম পর্বত অতিক্রম করতে গিয়ে নিজের কোলের সন্তান শত ফুট নিচে গড়িয়ে পড়েছে। পরিবার ছাড়া বসবাসকারী অনেকেই পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছে। এসব কি ইতিহাসের উপাদান নয়?
এবার আসি সামরিক বাহিনীর সদস্যদের প্রসঙ্গে।
২৫ শে মার্চ কালো রাতে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী যখন পূর্ব পাকিস্তানের নিরীহ বাঙালিদের ওপর হামলা চালায় তখন যুদ্ধের সূচনা হয়। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থানরত দি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের পাঁচটি ব্যাটালিয়ন বিদ্রোহ করে ও পাকিস্তান পক্ষ ত্যাগ করে সসস্ত্র প্রতিরোধে অংশ নেয়। সেদিন থেকেই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাঙালী সদস্যরা গাদ্দার নামে অভিহিত হয়। তারা পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষার শপথ ভঙ্গ করেছে। পূর্ব পাকিস্তানে প্রত্যক্ষ লড়াইয়ে বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও গণ যোদ্ধাদের সম্মিলিত শক্তির মুখোমুখি পাকিস্তানী বাহিনী। অপর দিকে পাকিস্তানে আটকে পড়া বাঙালী সামরিক সদস্যরা ( তাদের ভাষায় গাদ্দার) কড়া নজরদারির আওতায় এলেন।
এসব ভুক্তভোগী অফিসারদের থেকে অনেক কিছু জানা যায়। যুদ্ধের প্রথম দিকে হালকা নজরদারি। এর মধ্যে সুযোগ বুঝে দু একজন যখন পালিয়ে ভারতীয় সীমান্ত অতিক্রম করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয় তখন আরও কড়া নজরদারি আরোপিত হয়। অনেকে পালাতে গিয়ে ধরা পড়ে জেল খাটেন, সুবিধা বঞ্চিত হন।
পাকিস্তান মিলিটারি সদর দপ্তর ধরে নিয়েছিল ডান্ডা মেরে বাঙালিকে দু একমাসের মধ্যে ঠান্ডা করে দেয়া যাবে। কিছুদিন পরেই বোঝা গেলো এ ধারণা ভুল। সামগ্রিক অবস্থা পাকিস্তানের অনুকূলে নয়। এর পর থেকে বাঙালীদেরকে যথাসম্ভব দায়িত্বপূর্ণ কাজ থেকে সরিয়ে দেয়া হলো। তাদেরকে বিভিন্ন স্থানে একত্রিত করে কঠিন প্রহরায় রাখা হলো। অদম্য বাঙালিরা এখান থেকেও পালিয়ে যাবার চেষ্টা চালিয়ে গেলো।
৭১ সালের যুদ্ধের চূড়ান্ত পর্বে পাকিস্তানের পরাজয়ে ( পূর্ব ও পশ্চিম উভয় সীমান্তে) বাঙালিরা আরও রোষানলে পড়ে। এবার শুরু হয় সকল বাঙ্গালীদের একত্র করে দুটি গ্রুপে ভাগ করে বিভিন্ন ক্যাম্পে বন্দী করা। একটি গ্রুপ অবিবাহিত ও সিঙ্গেল অফিসারদের, আরেকটি গ্রুপ পরিবারসহ বসবাসকারীদের। সৈনিকদের বেলায় ও একই অবস্থা। কড়া পাহারার মাঝে কারো সঙ্গে কোনো যোগাযোগ, দেখা সাক্ষাৎ কিছুই সম্ভব নয়। দেশের সঙ্গে যোগাযোগ ও নেই। কবে ছাড়া পাবে তার নিশ্চয়তা নেই। দেশ স্বাধীন হয়েছে। পুনর্গঠনের কাজ চলছে। পাকিস্তানে আটক বাঙ্গালীদের ফেরত নেয়ার দৃশ্যমান অগ্রগতি না দেখে বন্দী শিবিরে অবস্থানরত ব্যক্তিরা আরো হতাশ হলেন।
আটকে পড়া বাঙ্গালীদের নিয়ে পাকিস্তানীরা নুতন ষড়যন্ত্র শুরু করে। যুদ্ধে বিপর্যস্ত ও পরাজিত পাকিস্তানীদের মনোবল শূন্যের কোঠায়। ৯৩ হাজার যুদ্ধবন্দী কিভাবে কখন ফেরত আসবে। এর মাঝে অনেকের পুত্র, জামাই, নিকটাত্মীয় রয়েছে। এ ৯৩ হাজারের বিপরীতে পাকিস্তানীদের হাতে কোনো ভারতীয় যুদ্ধবন্দী নেই। তাই ওরা চেষ্টা চালালো আটকে পড়া বাঙালিদের যুদ্ধবন্দী বানিয়ে দর কষাকষির ক্ষেত্র তৈরি করার।
বন্দী শিবিরগুলোতে কঠোর নিয়ম কানুন চালু হলো । লয়ালপুর জেল, সাগাই দুর্গ, খাজুরি ক্যাম্পের বিভীষিকার কথা অনেক শুনেছি। বাইরে যোগাযোগ নেই, অর্থকষ্টে অনেকেই বিপদে ছিলো। বেসামরিক ঠিকাদারের সরবরাহকৃত খাবার ক্রয় করে খেতে হতো। কয়েকদিন পরপর বিছানাপত্র ব্যাক্তিগত বাক্স পেটরা তল্লাশি, রেডিও, টেপ রেকর্ডার ক্যামেরা ইত্যাদি বাজেয়াপ্ত করা হতো। সন্দেহ এতই প্রবল যে প্রায়ই দল বদল, রুম বদল, ক্যাম্প বদল ইত্যাদি রুটিন হয়ে দাঁড়ালো। ক্যাম্পের পাহারায় ছিলো উপজাতীয় মিলিশিয়ারা। ওরা ওদের ভাষা ছাড়া আর কারো ভাষা বুঝতো না। ক্যাম্প ইনচার্জ কারো সাথে যোগাযোগের কোনো সুত্রই রাখেননি।
জুনিয়র অফিসারগণ বন্দীত্ব ঘুচাতে সদা তৎপর। ওরা পালিয়ে যাবার চেষ্টা চালিয়ে গেলো। এতো নজরদারির ভেতরেও গোপনে সুড়ঙ্গ তৈরির পরিকল্পনা করলো। সুড়ঙ্গ খননের যন্ত্রপাতি যোগাড় করা, গোপনীয়তা বজায় রেখে খনন কাজ চালানো কঠিন ব্যাপার ছিল । খননের আওয়াজ লুকানোর জন্য হারমোনিয়াম বাজিয়ে উচ্চস্বরে গান করা হতো। খননের বাড়তি মাটি লুকানোর জন্য নিজের সুটকেস খালি করে মাটি ভরা হলো। তাদের চেষ্টা, বুদ্ধিমত্তা ও স্পৃহা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করতে হয়। এতো চেষ্টার পর ও তীরে এসে তরী ডুবলো। সুড়ঙ্গ তৈরি হলো কিন্তু তার শেষ প্রান্ত গিয়ে ঠেকলো কর্তব্যরত এক সেন্ট্রির পায়ের কাছে। উদ্যোক্তাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলো। নেমে এলো সবার উপর অত্যাচার ও নিপীড়ন। রূপকথার কাহিনীকেও এসব বাস্তব গল্প হার মানায়। কিন্তু কোথাও উল্লেখ না থাকায় বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্ম জানবে না এ কাহিনী।
লেখক: কলামিস্ট কর্নেল (অব.) মো. শাহ জাহান মোল্লা
(প্রকাশিত মতামতের দায় লেখকের, ইউএনবির নয়)
পড়ুন: বাংলাদেশে বিরোধী দলের বন্ধ্যাত্ব
গণতন্ত্রের মোহমুক্তি
বাংলাদেশে বিরোধী দলের বন্ধ্যাত্ব
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সমাপ্তির পর প্রবাসী সরকার দেশে ফিরে এসেই রাষ্ট্রের সংবিধান প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। তাকে সামনে রেখেই গঠিত হয় গণপরিষদ যার কাজ একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সম্বলিত সংবিধান প্রণয়ন করা। ১৯৭০ সালের পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনে নির্বাচিত পূর্ব পাকিস্তানের অংশের এমএনএ (মেম্বার অব নেশনাল এসেম্বলি) ও এমপিএ ( মেম্বার অব প্রভিন্সিয়াল এসেম্বলি) গণ এ গণপরিষদের সদস্য নিযুক্ত হন। এ পরিষদে অন্য দলের দু একজন ছাড়া বাকি সকলেই আওয়ামী লীগের। কারণ ৭০ এর নির্বাচনে নির্বাচিত সকলেই ছিল আওয়ামী লীগের। সঙ্গত কারণেই মুক্তিযুদ্ধকালে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। জাতীয় স্বার্থে অন্য সকল দল আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে।
অবশেষে সংবিধান প্রণীত হলো। তার আলোকে ১৯৭৩ সালে জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা এলো।
স্বাধীন দেশে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ের রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা অটুট থাকবে এটাই সবার কাম্য ছিল। কিন্তু ১৯৭২ সালেই আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে ছাত্রলীগ বিভক্ত হয়। আওয়ামী লীগ কিংবা বঙ্গবন্ধুর বিরোধিতা অন্য কোনো দল সাহস না করলেও ছাত্রলীগের একাংশ তা করে। ছাত্রলীগের বার্ষিক সম্মেলনে মুখোমুখি দু’পক্ষ পৃথক সম্মেলনের আয়োজন করে এবং উভয় দলই বঙ্গবন্ধুকে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রচার চালায়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু নূরে আলম সিদ্দিকী ও আব্দুল কুদ্দুস মাখনের নেতৃত্বাধীন অংশের সম্মেলনে যোগ দেন। এ অংশ মুজিববাদী ছাত্রলীগ নামে পরিচিত হয়। বঙ্গবন্ধুর সমর্থন হারা অংশটি বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রী ছাত্রলীগ নামে পরিচিত হয় যার নেতৃত্বে ছিলেন আ স ম আবদুর রব ও শাহজাহান সিরাজ। তারা সরাসরি সরকারের সমালোচনায় লিপ্ত হয় যা ছিল সেসময়ে অকল্পনীয়।
সংখ্যাগরিষ্ঠ আওয়ামী লীগের পর রাজনৈতিক দল হিসেবে সংগঠিত ছিল ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)। পাকিস্তানে এ দলটি ওয়ালী ন্যাপ নামে পরিচিত ছিল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দলটি ওয়ালীর পরিবর্তে মোজাফফর নামে ব্রাকেটবন্দি হয়। তারা মস্কোপন্থী নামেও পরিচিত ছিল। এ দলটি স্বাধীনতাত্তোর সরকারের সমালোচনা এড়িয়ে চলে। মূলত তারা ব্যস্ত ছিল মহান সোভিয়েত ইউনিয়নের গুন গান গাইতে। সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে ছাত্রবৃত্তি সহ সুযোগ সুবিধাগুলো তারাই বেশি ভোগ করে। অবশ্য লড়াকু মনোভাবের পরিবর্তে সোভিয়েতপন্থীরা সব সময়ই নৃত্য গীত ও রাস্তায় চিকা মারার মধ্যেই বিপ্লব খুঁজতেন যার উল্টোটা ছিল ছাত্রলীগ।
তৃতীয় অবস্থানে ছিল ভাসানীপন্থী তথা চীনপন্থী ন্যাপ। তবে এ দলটি বিপ্লবের মত ও পথ নিয়ে অনেক ভাগে ভাগ হয়ে পড়ে। মাওলানা ভাসানী অনেক জনপ্রিয় ছিলেন কিন্তু লোকসংখ্যা ও সমর্থক কম থাকায় দলটি শক্তিহীন ছিল। তবে মাওলানা ভাসানী স্বাধীনতার পর থেকেই সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন ও ভুখা মিছিল, হরতাল ইত্যাদি কর্মসূচি প্রদান করেন।
মোটামুটি বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে ন্যাপ মোজাফফর, ন্যাপ ভাসানী ও নব্য গঠিত জাসদের নাম উল্লেখ করা যায়।
সংবিধান পাস হওয়ার পর সংসদীয় ব্যবস্থায় সরকার ও বিরোধী দলে কে থাকবে কি ভূমিকা হবে তার ব্যাপক আলোচনা চলতে থাকে। এর মধ্যে ন্যাপ মোজাফফর হঠাৎ করে রাজনৈতিক অঙ্গন সরগরম করে তোলে। ১৯৭৩ এর ১ জানুয়ারি ন্যাপ ও তার অঙ্গ সংগঠনগুলো চিলির নিহত নেতা সালভাদর আলেন্দের সমর্থনে রাজধানীতে এক মিছিল বের করে। তারা পল্টনের মার্কিন তথ্য কেন্দ্রে হামলা চালানোর চেষ্টা করে। পুলিশের গুলিতে মতিউল কাদের নিহত হয়। স্বাধীন দেশে নিজেদের পুলিশের গুলিতে প্রথম মৃত্যু। পুলিশের হস্তক্ষেপে আন্দোলন স্তিমিত হয়। এর পরই ঘটে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। সারা দেশে মোজাফফর ন্যাপের অফিসগুলোতে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা কর্মীরা হামলা চালায়। স্থানে স্থানে অগ্নিসংযোগ ঘটে। অবশেষে ন্যাপের নেতাকর্মীরা হার্ড লাইন ছেড়ে আওয়ামী লীগকে সহযোগিতার আশ্বাস দেয়। একটা অলিখিত আপোষ হয়। তখন থেকেই ন্যাপ আওয়ামী লীগের বি টিম হিসাবে পরিচিত।
১৯৭৩ সালে নতুন সংবিধান অনুযায়ী দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রজাতন্ত্রের প্রথম নির্বাচনই কলংকিত, প্রার্থী হাইজ্যাক, বাক্স ছিনতাই, জালভোট, খুন খারাবি দিয়ে। জনগণের প্রত্যাশা মিটল না। বিসমিল্লায় গলদ রয়ে গেল যা ৫০ বছরেও ঠিক হলো না। পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর। হাতে গোনা কয়েকজন বিরোধী দলীয় সদস্য। তিন শত আসনের মাঝে আওয়ামী লীগ বিরোধীরা মাত্র ৭টি আসন লাভ করে যা দিয়ে বিরোধী দল গঠন করা সম্ভব নয়। শুরু থেকেই সরকার ও বিরোধীদলের কাধে কাধ মিলিয়ে যে গণতন্ত্রের সূচনা হওয়া উচিত ছিল তা হয়নি।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর মুসলিম লীগ বেপরোয়া হয়ে ওঠে এবং বিরোধী দলকে রাস্তায় দাড়াতেই দেয়নি। বাংলাদেশের অবস্থাও তাই হলো। ক্ষমতাসীন দলের বাইরে কাউকে কল্পনা করা যায়নি।
বিরোধী দল গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যর্থতা পরিষ্কার। প্রথম জাতীয় সংসদে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ( মোজাফফর) যথাযথ বিরোধী দল হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি। সরকারি দলের নেতারাও মাথা নিচু করে সরকারি দলকে সমর্থন দেয়ার কারণ ছিল সরকারের সাথে সোভিয়েত ইউনিয়নের সখ্যতা। কারণ বৃহৎ শক্তি আমেরিকা ও চীনা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল বলেই রাশিয়া একমাত্র মিত্র ছিল।
চীনপন্থী ভাসানী ন্যাপ আদর্শ কিংবা অতি বিপ্লবী চরিত্রের কারণে কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়। তাই তারা সাংগঠনিকভাবে বিরোধী দল গঠনে ভূমিকা রাখতে পারেনি। তাছাড়া চীন বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে থাকায় চীনপন্থী দলগুলো বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে।
নবগঠিত জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল ( জাসদ) সংসদে দুজন প্রতিনিধি প্রেরণ করেছিল যা বিরোধী দল গঠনের সহায়ক ছিল না। এক সময় জাসদের দুর্দিন নেমে আসে। তারা পল্টনের জমায়েত থেকে ঘোষণা দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাস ভবন ঘেরাও করে। পুলিশের গুলিতে আ স ম আব্দুর রবসহ অনেকে আহত হন। অনেকে গ্রেপ্তার হন। জাসদের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে।
১৯৭৪ সালে বাকশাল গঠিত হলে বিরোধী দলের অংশ গ্রহণের সুযোগ ছিল না। খোদ আওয়ামী লীগসহ সকল রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত হয়।
১৯৭৯ সালে পরবর্তী সংসদে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে এবং আওয়ামী লীগ বিরোধী দল হিসেবে সংসদে বসে যার নেতৃত্বে ছিলেন খন্দকার আসাদুজ্জামান। আওয়ামীলীগের এক অংশ মিজান চৌধুরীর নেতৃত্বে ভিন্নমতের আওয়ামী লীগ সৃষ্টি করে। আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বাধীন জাতীয় লীগ বিরোধী অবস্থানে থাকলেও জনসমর্থন ছিল না।
এরপর সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে জেনারেল এরশাদ দেশের নির্বাচিত রাষ্ট্রপতিকে সরিয়ে মার্শাল ল জারি করে দেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করেন। পুরনো দল ভেঙে মিজানুর রহমান চৌধুরী, আতাউর রহমান খান, মওদুদ আহমেদ, কাজী জাফরের মত নেতারা এরশাদের জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। আতাউর রহমান খান তার দলীয় প্রতীক লাঙ্গল এরশাদ সাহেবের কাছে বিক্রয় করে দেন। এরশাদ সাহেবের আমলে নির্বাচন হয় এবং সংসদে জাতীয় পার্টি সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করে। আ স ম আব্দুর রব বিরোধী দলের নেতার পদ গ্রহণ করলেন। দেশের সাংবিধানিক ইতিহাসে গৃহপালিত বিরোধী দল শব্দটি সংযোজিত হলো
এরশাদের স্বৈরাচরী সরকারের পতন হলে নির্বাচিত সরকারের সূচনা হয়। এখানে গ্রহণযোগ্য একটা বিরোধী দল সচল থাকলেও তারা সংসদ বর্জন, আন্দোলন করে যা স্থিতিশীল একটা গণতান্ত্রিক পদ্ধতির সহায়ক হয়নি। পরবর্তী নির্বাচনে সরকারি ও বিরোধী দল তাদের স্থান অদল বদল করলেও উভয় পক্ষই তাদের চরিত্র পাল্টায়নি।
এরপর দেশে ওয়ান ইলেভেন আসে। দু বছর পর নির্বাচন হলে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ক্ষমতা প্রাপ্ত হয় যা দীর্ঘ ১২ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলে আসছে। বিরোধী দলের কার্যক্রম আরও সংকীর্ণ হয়ে ওঠে। সরকারি দল নির্ধারিত করে দেয় কে বা কারা সংসদ সদস্য হবে। বিরোধী দল গৃহপালিত রয়ে গেলো। সাথে যোগ হয় উচ্ছিষ্ট ভোগী নেতা সর্বস্ব দলের বিরোধী দলে অবস্থান। হোসেইন মোহাম্মদ এরশাদ, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ইত্যাদি নেতারা সরকারি দল নির্ধারিত বিরোধী দলে সংসদে বসে। প্রহসনের নির্বাচনের পক্ষ নিয়ে এসব নেতারা দেশের জন্য কি অবদান রেখেছেন তা প্রশ্নবোধক হয়ে থাকল। চ্যালেঞ্জহীন সরকারি দল শত ভাগ লাভেও অপরিতৃপ্ত যা প্রধানমন্ত্রী নিজেও বলেছেন। এমনকি স্বৈরাচারী এরশাদও একবার বলেছিলেন যে তিনি বিরোধী দল খুঁজে পান না।
প্রশ্ন থেকে যায় পঞ্চাশ বছরেও কোনো দল বিরোধী অবস্থানে শক্ত ভিত নিয়ে এগোতে পারেনি কেন? এর জন্য দায়ী রাজনৈতিকদের নীতিহীনতা ও অর্থ লোভ। এর নির্লজ্জ প্রকাশ ঘটেছে সরকারি দলের শক্তিতে টিকে থাকা বিরোধী নেতারা যখন সরকার বিরোধী বক্তব্য দেন ও হুমকি ধামকি দেন। এটা খুবই ব্যাঙ্গাত্মক বিষয়।
বিরোধী দল দাড়াতে না দেয়ায় সরকারের দোষ খুঁজে লাভ নেই। কারণ ক্ষমতা যেখানে হাতের তালুয় সেটা অন্য কারও হাতে যেতে দেয়া বোকামি। স্যাক্রিফাইস শব্দটা দেশের রাজনীতিতে আর নেই। নেতারা ক্ষমতা কুক্ষিগত, আকড়ে রাখাকে নীতি হিসেবে ধারণ ও লালন করে আসছে। ভবিষ্যৎ এর জন্য ভালো কিছু স্থায়ী করার চিন্তাও মাথায় রাখেননি।
দেশের শাসনতান্ত্রিক ইতিহাসে একটি শক্তিশালী বিরোধী দলের প্রয়োজনের কথা প্রথম থেকেই ভাবা উচিত ছিল। জাতীয় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক খোলাখুলিভাবেই বলেছিলেন বিরোধী দলের জন্য কিছু সিট ছেড়ে দিয়ে তাদেরকে সচল রাখতে। উদাহরণ স্বরূপ তিনি ইন্দিরা গান্ধীর নীতির কথাও উল্লেখ করেছিলেন। সে উপদেশ বিবেচনায় এনে যদি তা কার্যকর হতো তাহলে আজ সংসদ নেতার অন্ধকারে বিরোধী দলের অস্তিত্ব হাতড়াতে হতো না। সরকারি দলের অবস্থান হতো গৌরবের।
লেখক: কলামিস্ট কর্নেল (অব.) মো. শাহ জাহান মোল্লা
(প্রকাশিত মতামতের দায় লেখকের, ইউএনবির নয়)
পড়ুন: গণতন্ত্রের মোহমুক্তি
সমস্যা কি শুধুই ইউক্রেনের?
আন্দ্রে রাসেল একাই খেলা দেখাল কিন্তু পারল না কলকাতা
এমন কোনো সুন্দর ব্যাটিং করেনি আইপিএল টেবিলের শীর্ষ দল গুজরাট টাইটান্স। তাদের চমক ছিল টস জিতে ব্যাটিং নেয়া।এ ঘটনা এই মৌসুমে প্রথম। তাদের ব্যাটিং ছিল দুই ভাগের খেলা ১৬.৩ ওভারে ছিল ১৩৩/৩ রানে আর পরের ৬ উইকেটে করলো ২৬ রান মাত্র। সাংঘাতিকভাবে টেনে ধরেছিল কলকাতা, আশাও জেগেছিল।
২
এবারের লিগে সবাই ভালো পাঠাচ্ছে তাই ছক্কা দেখার মজা কম। এতো ছক্কা আগে কোন বার মারা হয়নি আর এখনও তো প্রায় অর্ধেক লিগ বাকি।ছক্কার স্বর্গ হবে আইপিএল কিন্তু তাতে একটা মজা হয়েছে বোলারদের, হঠাৎ যে দুর্দান্ত এবং অবিশ্বাস্য উইকেটে নেয়া হয় সেটা আগের চেয়ে সবাই বেশি উপভোগ করছে। তেমনি একটা শেষ ওভারের ম্যাজিক দেখালো আন্দ্রে রাসেল, ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড়।
৩
গুজরাট টাইটান্স আশা করছিল যে শেষ দুই ওভারে কিছু ঘাটতি রান ওঠাবে কিন্তু ১৯তম ওভারে শুরু হলো রাসেলের ওভার। তিনটা উইকেট আসে বাউন্ডারি লাইন থেকে আর মজার বিষয় হলো তিনটাই ধরে রিঙ্কু সিং। একবার ৪ আসে তার বলে কিন্তু শেষ বলে নিজেই কট এন্ড বোল্ড করে উইকেট নেয় রাসেল। গোটা খেলার এটাই ছিল সবচেয়ে মজাদার।
আরও পড়ুন: মুস্তাফিজ টেস্ট খেলা ছাড়তে না চাইলেও কমাতে চায়
৪
কিন্তু ব্যাটিংয়ে নেমে কলকাতা কিছু করতে পারেনি। টিমের মনে হয় প্রণোদনার ঘাটতি আছে কারণ কেউ দাঁড়াতে পারেনি গুজরাটের বোলিংয়ের সামনে, গরমও হতে পারে। ঘর্মাক্ত খেলোয়াড় দেখা এখন মাঠের স্বাভাবিক ব্যাপার ই। পানি আর তোয়ালে, বল ব্যাটের মতোই জরুরি এবারের আইপিএল মাঠে।
৫
কলকাতার হাল কিন্তু শেষ পর্যন্ত ধরল সেই আন্দ্রে রাসেল। সবচেয়ে বেশি তারই রান ছিল (৪৮ ) শেষ ওভারে রান দরকার ছিল ১৮। প্রথম বলে ছক্কা মারলো রাসেল। কলকাতা সমর্থকরা দারুণ খুশি কিন্তু দ্বিতীয় বলে আউট আলজারি জোসেফের বলে। বাকিটা বলার দরকার নেই। শেষ ওভারে ৯ রান করে ৮ রানে হার। গুজরাট শীর্ষে, কলকাতা তলাচ্ছে ই।
আরও পড়ুন: সমালোচনার মাঝে ইংল্যান্ডের টেস্ট অধিনায়কত্ব ছাড়লেন রুট
কোহলি আবার ডিম
৯ উইকেটে হারাল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর (আরসিভি)। তবে এই রেজাল্ট শুনে বোঝা যাবে না কত বাজেভাবে আরসিভি হেরেছে মাত্র ৬৮ রান করে। এটি আইপিএলের ইতিহাসের অন্যতম কম রানের স্কোর তবে তারা এরকম আগেও করেছে। বোলারেরা ভীষণ চেপে রেখেছিল ব্যাঙ্গালোরকে এবং কোহলি যথারীতি আবার ডিম খেলো, পরপর দ্বিতীয় বার। কেন এটা হচ্ছে বোঝা যাচ্ছে না তবে আরসিভি জমতে পারছে না।
লেখক: এডিটর এট লার্জ, ইউএনবি
(প্রকাশিত মতামতের দায় লেখকের, ইউএনবির নয়)