বিশেষ সংবাদ
সরকারি গুদামে রেকর্ড মজুত, বোরোতে সর্বোচ্চ ধান-চাল সংগ্রহের আশা
সম্প্রতি সরকারি গুদামে ধান ও চালের মজুত ২০ লাখ ৫০ হাজার টন ছাড়িয়েছে। খাদ্যশস্যের এই মজুতকে স্বাধীনতার পর সর্বোচ্চ বলে অভিহিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। একই সঙ্গে চলতি বোরো মৌসুমে ধান ও চালের সর্বোচ্চ সংগ্রহ হতে পারে বলে আশা করছে সরকার।
খাদ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলমান বোরো মৌসুমে ১৫ লাখ টনের বেশি ধান ও চাল সংগ্রহ হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। আগামী ১৫ আগস্ট থেকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালু হলে বাজারে চালের দামে স্বস্তি আসবে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। একইসঙ্গে বেসরকারিভাবে চাল আমদানির জন্য আবেদনও আহ্বান করেছে সরকার।
কর্মকর্তারা জানান, বোরো সংগ্রহ চলমান থাকায় মজুত আরও বাড়বে। তবে মজুত আর খুব বেশি বাড়ার সম্ভাবনা নেই, কারণ সরকারি গুদামের খাদ্যশস্য ধারণের সক্ষমতা সাড়ে ২২ লাখ টনের মতো।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ জানায়, বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার তার মজুত ব্যবহার করে থাকে। খোলাবাজারে বিক্রি (ওএমএস), খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিসহ বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মাধ্যমে খাদ্যশস্য বিতরণ করে সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। সরকারের হাতে যত বেশি মজুত থাকবে, সরকার তত বেশি সফলভাবে বাজারে প্রভাব বিস্তার করতে পারবে।
আর অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ধান, চাল ও গম সংগ্রহ এবং বিদেশ থেকে আমদানির মাধ্যমে সরকার তার মজুত গড়ে তোলে। অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে সংগ্রহের সবচেয়ে বড় অংশটি করা হয় বোরো মৌসুমে। এ ছাড়া সরকারের বোরো সংগ্রহ কর্মসূচিও চলছে।
বোরো ধান ও চাল কেনা চলবে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। অন্যান্য বছর বার বার সময় বাড়িয়েও যেখানে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয় না, এবার সেখানে এক মাস বাকি থাকতেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণের কাছাকাছি চলে এসেছে।
খাদ্য অধিদপ্তরের ২৭ জুলাইয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সরকারি মজুতে চাল রয়েছে ১৭ লাখ ৯৫ হাজার টন, ধান ১ লাখ ২৪ হাজার টন এবং গম রয়েছে ১ লাখ ৭৮ হাজার টন।
আরও পড়ুন: চালের মূল্যবৃদ্ধি: ধানের স্বল্পতা নাকি মিল মালিকদের কারসাজি?
সরকার অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে চাহিদা অনুযায়ী ধান-চাল কিনতে পারলে আমদানি-নির্ভরতা অনেকটাই কমে যায়। এতে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হয়।
অন্যদিকে, বাজারে চালের দাম কিছুটা বেড়ে স্থির হয়ে আছে। আগস্টের মাঝামাঝি চালু হচ্ছে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি। এরপর চালের দাম কমতির দিকে যাবে বলে আশা করছেন খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
খাদ্য অধিদপ্তর মহাপরিচালক মো. আবুল হাছানাত হুমায়ুন কবীর ইউএনবিকে বলেন, ‘আমরা ভালো একটা মজুত গড়ে তুলেছি। বোরোতে আমরা ১৪ লাখ টনের বেশি সংগ্রহ করব।’
তিনি জানান, চলতি অর্থবছরে সরকারিভাবে ৪ লাখ টন চাল আমদানির জন্য সরকারের অনুমোদন নিয়ে রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি অনুযায়ী আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
মহাপরিচালক আরও জানান, ১৫ আগস্ট থেকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি শুরু হবে। এই কর্মসূচির আওতায় ১৫ টাকা দরে ৫৫ লাখ পরিবারকে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে। কর্মসূচিটি চলবে নভেম্বর মাস পর্যন্ত। তখন চালের বাজার আবার কমতির দিকে যাবে বলে মনে করেন তিনি।
হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘বোরোর পর আমন পর্যন্ত যে সময়, এ সময়ে দামটা একটু বাড়ে। এখন বাজারে আমরা তো ক্রেতা, বোরো সংগ্রহ চলছে। সবকিছু মিলিয়েই চালের দামটা একটু বেড়ে থেমে আছে। আশা করি আগস্টের মাঝামাঝি থেকে দাম কমবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের মজুত সাড়ে ২০ লাখ টন ছাড়িয়ে গেছে। স্বাধীনতার পর সরকারি খাদ্যশস্যের মজুত কখনো এ সীমায় পৌঁছায়নি। বোরো সংগ্রহ চলছে, আরও ২ লাখ টন চাল আসবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বোরো সংগ্রহের ক্ষেত্রেও রেকর্ড করছি আমরা। ইতোমধ্যে সোয়া ১৪ লাখ টনের বেশি বোরো ধান ও চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। এটি আরও বাড়বে।’
বোরোতে রেকর্ড সংগ্রহের পথে সরকার
খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির (এফপিএমসি) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চলতি বোরো মৌসুমে ৩৫ হাজার টন ধান, ১৪ লাখ টন সিদ্ধ চাল এবং ৩৫ হাজার টন আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। প্রতি কেজি ধানের সংগ্রহ মূল্য ৩৬ টাকা ও চাল ৪৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ১৪ এপ্রিল শুরু হওয়া এই সংগ্রহ কর্মসূচি চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত।
খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানান, নির্ধারিত সময়ের আগেই অতিরিক্ত ২৬ হাজার ৯৪২ টন ধান সংগ্রহ হয়েছে। সিদ্ধ চাল সংগ্রহও লক্ষ্যমাত্রার খুব কাছে পৌঁছেছে। ইতোমধ্যে ১১ লাখ টনের বেশি সিদ্ধ চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় আরও ৫০ হাজার টন সিদ্ধ চাল ও ১৫ হাজার টন আতপ চাল অতিরিক্ত সংগ্রহের অনুমতি দিয়েছে।
বিগত বছরগুলোতে ধান সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও পূরণ হয়নি, যদিও চাল সংগ্রহ কিছুটা ভালো ছিল। এবার সেই ধারা ভেঙে সরকার নির্ধারিত সময়ের আগেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সক্ষম হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির আবেদন আহ্বান
চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার বেসরকারিভাবে ৫ লাখ টন চাল আমদানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
আরও পড়ুন: দুই সপ্তাহের মধ্যে চালের দাম কমবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা
খাদ্য মন্ত্রণালয় গত ২৩ জুলাই এ বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, আগ্রহী আমদানিকারকদের আগামী ৭ আগস্টের মধ্যে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। সরাসরি কোনো আবেদন গ্রহণ করা হবে না।
সরকারের ধারণা, অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ সফল হলে আমদানির প্রয়োজন কমবে, ফলে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে এবং বাজার নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে।
বাজারে সরকারের শক্তিশালী মজুত ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কারণে চালের দাম ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
১৩৩ দিন আগে
ভাঙন ঝুঁকিতে দৌলতদিয়ার সবগুলো ফেরিঘাট
জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিয়েছে ভাঙন। ভাঙন বেড়ে যাওয়ায় রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ার তিনটি ফেরিঘাটের সবকটি ভাঙন ঝুঁকিতে পড়েছে। জরুরি মেরামতের অংশ হিসেবে বিআইডব্লিউটিএ ফেরিঘাট রক্ষায় বালুভর্তি বস্তা ফেললেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল। এ ছাড়া ঘাটসংলগ্ন তিনটি গ্রাম, বাজার, মসজিদ, স্কুল, মাদরাসাসহ বহু স্থাপনাও ঝুঁকিতে পড়েছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) আরিচা কার্যালয় জানায়, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ায় ৭টি ফেরিঘাট রয়েছে। এর মধ্যে ৩, ৪ ও ৭ নম্বর ঘাট তিনটি সচল রয়েছে। ৬ নম্বর ঘাট থাকলেও সেটি এখনো সচল হয়নি। ঘাটটি পানি উঁচু স্তরের হওয়ায় ভরা বর্ষায় সেটি সচল হবে। এ ছাড়া কয়েক বছর আগে ১, ২ ও ৫ নম্বর ঘাটগুলো নদীভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে।
এদিকে দৌলতদিয়া ঘাটের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন দেখা দেওয়ায় সবকটি (৩, ৪ ও ৭ নম্বর) ফেরিঘাট এখন ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে ৪ ও ৭ নম্বর ফেরিঘাট রয়েছে অধিক ঝুঁকিতে। ঘাটসংলগ্ন বাহির চর ছাত্তার মেম্বার পাড়া, মজিদ মাতুব্বর পাড়া ও শাহাদত মেম্বার পাড়াসহ স্থানীয় বাজার, মসজিদ, স্কুলসহ একাধিক স্থাপনাও রয়েছে ঝুঁকিতে।
দৌলতদিয়া ঘাটের সর্বশেষ পরিস্থিতি দেখতে শনিবার (২ আগস্ট) ভাঙনকবলিত এলাকায় আসেন বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী প্রকৌশলীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ। তারা ঘাটের সার্বিক খোঁজখবর নেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান।
আরও পড়ুন: ধরলার ভাঙনে নিঃস্ব অর্ধশতাধিক, ঝুঁকিতে আরও পাঁচ শতাধিক পরিবার
সরেজমিন দেখা যায়, দৌলতদিয়ার ৩, ৪ ও ৭ নম্বর ফেরিঘাটসহ মধ্যবর্তী এলাকার সর্বত্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। কয়েক দিনের বৃষ্টিতে ভাঙন বাড়ায় ৭ নম্বর ঘাটে ফেরির পন্টুন ধরে রাখা কষ্টকর হয়ে পড়ছে। ৪ ও ৭নম্বর ফেরিঘাটে কিছু বালুর বস্তা ফেলা হলেও প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য। আতঙ্কে অনেকে আশপাশের স্থাপনা সরিয়ে নিয়েছেন। ছাত্তার মেম্বার পাড়ার চারটি পরিবার তাদের ঘরও সরিয়ে নিয়েছে।
১৩৪ দিন আগে
অটোরিকশা চলবে নির্দিষ্ট রুটে, নিবন্ধন ও ড্রাইভিং লাইসেন্স বাধ্যতামূলক
দেশে অটোরিকশা চলাচলে শৃঙ্খলা আনতে কঠোর নীতিমালা আসছে। এক্ষেত্রে নিবন্ধন ও চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষায় সেইসঙ্গে করা হচ্ছে নানা নিয়ম।
মহাসড়ক বাদে নির্ধারিত রুটে চলতে পারবে এসব যানবাহন। তবে কত সংখ্যক অটোরিকশা চলবে, তা ঠিক করবে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটি। একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ তিনটি মধ্যম গতির ও পাঁচটি ধীরগতির অটোরিকশার মালিক হতে পারবেন। যাত্রাপথের ভাড়া নির্ধারণ করবে বিআরটিএ এবং এক বছরের মধ্যে সব অটোরিকশাকে নিরাপদ মডেলে রূপান্তর করতে হবে। মধ্যম গতির অটোরিকশার সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার ও ধীরগতির জন্য ৩০ কিলোমিটার নির্ধারিত হয়েছে।
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বা ইজিবাইক নিয়মের মধ্যে আনতে ‘বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার ব্যবস্থাপনা নীতিমালা, ২০২৫’–এর খসড়া করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।
খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কাছ থেকে ব্যাটারিচালিত রিকশার নিবন্ধন ও চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স বাধ্যতামূলকভাবে নিতে হবে। কোনো এলাকায় কত সংখ্যক অটোরিকশা নিবন্ধন পাবে বা চলাচল করবে, সেই সীমা নির্ধারণ করবে সড়ক পরিবহন আইন অনুযায়ী গঠিত যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটি।
কোনো ব্যক্তি মধ্যম গতির ৩টি ও ধীরগতির ৫টির বেশি অটোরিকশার মালিক হতে পারবেন না। এ যানগুলো কোথায় চলাচল করতে পারবে, কোথায় পারবে না—সেটিও নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘অন্যের টাকায় বাঁচতে চাই না,’ বাবার কথায় যা করলেন অটোরিকশাচালক
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে জানা যায়, আন্তঃমন্ত্রণালয় সভাসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে নীতিমালাটি চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে এটি চূড়ান্ত করা হবে। এ ছাড়া নীতিমালা অনুযায়ী, এ জাতীয় মোটরযানকে ফিটনেস সনদ নিতে হবে। অটোরিকশা চালকেরা প্রশিক্ষণের আওতায় আসবেন।
মধ্যম ও স্বল্পগতির অননুমোদিত ও ঝুঁকিপূর্ণ বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার (ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বা ইজিবাইক) রাজধানীসহ সারা দেশে চলাচল করছে। ফিটনেসবিহীন এ যানবাহনের বেপরোয়া চলাচল ট্রাফিক ব্যবস্থাকে চরম বিশৃঙ্খল করে তুলেছে। নিয়ন্ত্রণহীনভাবে সংখ্যায় এ যানবাহন এত বেড়েছে যে রাজধানীর প্রধান সড়ক থেকে এগুলোকে কয়েক দফা তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেও আন্দোলনের মুখে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলারগুলোর জন্য কোনো আইন, নীতিমালা বা বিধিবিধানও নেই।
কোনো সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও বিআরটিএ বলছে, সারা দেশে ৬০ লাখের বেশি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বা ইজিবাইক রয়েছে। মনে করা হয়, এর মধ্যে ঢাকাতেই রয়েছে ১০ থেকে ১২ লাখ।
বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর যাতায়াতের চাহিদার কথা বিবেচনা করে, কারিগরিভাবে ত্রুটিমুক্ত ডিজাইন অনুসরণ করে এসব যানবাহন তৈরি করে। সড়কের ধারণক্ষমতা অনুযায়ী এ ধরনের যানের সংখ্যা নির্ধারণ করে মহাসড়ক ছাড়া সুনির্দিষ্ট এলাকায় চলাচল নিশ্চিত করার মাধ্যমে দুর্ঘটনা ও নিরাপত্তা ঝুঁকি কমানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। তাই বিদ্যমান বাস্তবতার আলোকে স্থানীয় জনগণের চাহিদা ও সড়কের ধারণক্ষমতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সুনির্দিষ্ট সংখ্যক কারিগরিভাবে ত্রুটিমুক্ত বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার চলাচলের অনুমতি দেওয়ার মাধ্যমে জনগণের জন্য নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এ নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে।
এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এহসানুল হক ইউএনবিকে বলেন, ‘বহুসংখ্যক ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বা ইজিবাইক রাজধানীসহ সারা দেশে চলাচল করছে। ফিটনেসবিহীন এ যানবাহনের বেপরোয়া চলাচল ট্রাফিক ব্যবস্থাকে চরম বিশৃঙ্খল করে তুলেছে। নিয়ন্ত্রণহীনভাবে সংখ্যায় এ যানবাহন এত বেড়েছে যে রাজধানীর প্রধান সড়ক থেকে এগুলোকে কয়েক দফা তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেও বন্ধ করা যায়নি।’
সচিব বলেন, ‘থ্রি-হুইলার বা অটোরিকশাগুলোকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে অনেক দিন থেকেই বিভিন্ন পর্যায় থেকে একটি নীতিমালা করার দাবি ছিল। আমরা একটি নীতিমালার খসড়া করেছি। বাস্তবতার নিরিখেই খসড়াটি করা হয়েছে। এখন সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মতামত নিয়ে এটি চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। খুব শিগগিরই তা চূড়ান্ত হবে। চূড়ান্ত নীতিমালাটি হলে ব্যাটারিচালিত রিকশার যে বিশৃঙ্খলা, তা কেটে যাবে বলে আমরা মনে করি।’
আরও পড়ুন: অটোরিকশা চলাচল বন্ধে শিগগিরই অভিযান: ডিএনসিসি প্রশাসক
নীতিমালার প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, স্বল্প নিয়ন্ত্রণ-ক্ষমতাসম্পন্ন, ধীরগতির বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার দ্রুতগতিসম্পন্ন মোটরযানের সঙ্গে একই মহাসড়কে চলাচলের সময় গতির পার্থক্যের কারণে প্রায়ই সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে। অন্যদিকে, সড়কের ধারণক্ষমতার তুলনায় বেশি সংখ্যক বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার চলাচল করায় অসহনীয় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে যা ভ্রমণ সময় ও বিদ্যুতের অপচয় বাড়াচ্ছে।
খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, বিআরটিএ নির্ধারিত নমুনা অনুযায়ী বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার তৈরি হতে হবে এবং এর টাইপ বিআরটিএ অনুমোদিত হতে হবে।
বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলারে ব্যবহৃত দেশে তৈরি বৈদ্যুতিক মোটর, কন্ট্রোলার, গিয়ার বক্স, এক্সেল, হুইল রিম, ব্রেক, স্পিডোমিটার, হেডলাইট, শক অ্যাবজরভার, ব্যাটারি, চার্জার ইত্যাদি বিএসটিআই অনুমোদিত হতে হবে। তবে বিএসটিআই এ ধরনের মোটরযানের যন্ত্রাংশ অনুমোদনের ক্ষেত্রে বিআরটিএর মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবে।
অনুমোদিত মডেল বা বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলারের যন্ত্রাংশ প্রস্তুতকারককে বিআরটিএর তালিকাভুক্ত হতে হবে জানিয়ে নীতিমালায় বলা হয়েছে, তালিকাভুক্ত না হয়ে কোনো প্রস্তুতকারী বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার বা এর যন্ত্রাংশ প্রস্তুত করতে পারবে না। প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই নিজস্ব ব্র্যান্ড নামে এ ধরনের মোটরযান বা এর যন্ত্রাংশ বাজারজাত করতে হবে বলে জানানো হয়েছে।
বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার বা এর যন্ত্রাংশ প্রস্তুতকারী, উৎপাদনকারী অথবা সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে নিবন্ধন নিতে হবে।
নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, কোনো আমদানিকারক বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার বা এর যন্ত্রাংশ আমদানি কিংবা বাজারজাত করলে বিআরটিএর অনুমোদন নিতে হবে। তবে শুধুমাত্র নতুন বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার বা বিএসটিআই অনুমোদিত মানসম্পন্ন নতুন যন্ত্রাংশ আমদানি করা যাবে। এ জাতীয় মোটরযানের নির্দিষ্ট স্থানে খোদাই করা বডি বা চেসিস নম্বর উল্লেখ করতে হবে।
এ জাতীয় মোটরযানের ব্যাটারি চার্জের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের ‘বৈদ্যুতিক যান চার্জিং নির্দেশিকা, ২০২১’ অনুসরণ করে নির্ধারিত স্থানে চার্জিং স্টেশন স্থাপন করা যাবে।
বিআরটিএ নিবন্ধন লাগবে
সংশ্লিষ্ট এলাকায় যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটির নির্ধারিত সংখ্যা অনুযায়ী বিআরটিএ মধ্যম ও স্বল্পগতির বৈদ্যুতিক অটোরিকশা নিবন্ধন দেবে। তবে সীমা নির্ধারণের ক্ষেত্রে জনসংখ্যা, সড়ক নেটওয়ার্ক ও অর্থনৈতিক গুরুত্বের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। সীমা পুনর্নির্ধারণের ক্ষেত্রে অবশ্যই সরকারের অনুমোদন নিতে হবে বলে খসড়া নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
কোনো ব্যক্তি নিজের নামে মধ্যম গতির তিনটির বেশি বা গঠিত পরিবহন কোম্পানির নামে ২৫টির বেশি অটোরিকশা ক্রয় ও নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে পারবে না। অন্যদিকে ধীরগতির অটোরিকশার ক্ষেত্রে একই ব্যক্তি সর্বোচ্চ পাঁচটি কিনতে ও নিবন্ধন করতে পারবেন।
অনুমোদিত ডিলার বা বিক্রেতা নিবন্ধনসংক্রান্ত যাবতীয় কার্যসম্পন্ন না করে মধ্যম ও ধীরগতির বৈদ্যুতিক অটোরিকশা ক্রেতার কাছে হস্তান্তর করতে পারবেন না।
এ জাতীয় মোটরযান বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়ায় চলাচল করবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ধীরগতির অটোরিকশার সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ৩.৯ মিটার, প্রস্থ ১.৫ মিটার এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে উচ্চতা ২.১ মিটার, সর্বোচ্চ ওজন (ব্যাটারিসহ) ৫০০ কেজি হবে।
আরও পড়ুন: ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় না চড়তে ডিএনসিসি প্রশাসকের আহ্বান
বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলারের ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্ধারিত হারে কর বা শুল্ক প্রযোজ্য হবে। এ নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত থ্রি-হুইলার ও সমজাতীয় মোটরযান চলাচলের ক্ষেত্রে নিবন্ধন সনদ, হালনাগাদ ফিটনেস সনদ, ট্যাক্স টোকেন আবশ্যক হবে।
সর্বোচ্চ গতিসীমা
নীতিমালায় বলা হয়েছে, মধ্যম গতির বৈদ্যুতিক অটোরিকশা, মোটরক্যাব রিকশা ও অটোটেম্পু এবং থ্রি-হুইল ভ্যান সড়কে চলাচলের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গতিসীমা হবে ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার। ধীরগতিসম্পন্ন বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলারের সর্বোচ্চ গতিসীমা হবে ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার।
এ জাতীয় মোটরযানের ইকনোমিক লাইফ ‘সড়ক পরিবহন আইন–২০১৮’ এবং ‘ইলেকট্রিক মোটরযান রেজিস্ট্রেশন ও চলাচল সংক্রান্ত নীতিমালা, ২০২৩’ অনুযায়ী সরকার নির্ধারণ করে দেবে বলে নীতিমালায় জানানো হয়েছে।
কোথায় চলাচল করবে, কোথায় চলতে পারবে না
খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, মধ্যম ও স্বল্পগতির বৈদ্যুতিক অটোরিকশা মহাসড়কে চলাচল করতে পারবে না। তবে মহাসড়কের সার্ভিস লেনে এ জাতীয় মোটরযান চলাচল করতে পারবে।
মহাসড়ক ছাড়া অন্যান্য নির্দিষ্ট এলাকা বা রুটে এ জাতীয় মোটরযান চলাচল করতে পারবে। সিটি করপোরেশন ও ‘এ’ ক্যাটাগরির পৌরসভার ভেতরে মধ্যম গতির বৈদ্যুতিক অটোরিকশা, অটোটেম্পু ও মোটরক্যাব রিকশা এবং থ্রি-হুইল ভ্যান চলাচল করতে পারবে। এর বাইরে জেলা ও উপজেলার নির্ধারিত রুটেও চলাচল করতে পারবে।
ধীরগতির অটোরিকশা শুধু জেলা, মেট্রোপলিটন, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের স্থানীয় রুটে চলাচল করতে পারবে। সংশ্লিষ্ট জেলা, মেট্রোপলিটন, উপজেলা ও ইউনিয়ন এলাকায় যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটি এ জাতীয় মোটরযানের সংখ্যার সীমা ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে রুট নির্ধারণ করবে বলে জানানো হয়েছে প্রস্তাবিত নীতিমালায়।
অপরাধের শাস্তি কী
বিদ্যমান আইন ও বিধিবিধান অনুসরণ করে অটোরিকশা মোটরযান চলাচল করবে এবং এর কোনো ধরনের ব্যত্যয় হলে ‘সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮’-এ বর্ণিত অপরাধের ধরন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে বলে খসড়া নীতিমালায় জানানো হয়েছে।
নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার চালকদের প্রশিক্ষণের জন্য যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটির পরামর্শে বিআরটিএ জেলাভিত্তিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে। এ জাতীয় মোটরযানের অভ্যন্তরে যাত্রীর দৃশ্যমান স্থানে মোটরযানের মালিক ও চালকের মোবাইল ফোন নম্বর প্রদর্শন করতে হবে।
এ জাতীয় মোটরযান চালকের জন্য বিআরটিএ ইস্যুকৃত ড্রাইভিং লাইসেন্স গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক। চালনার সময় ড্রাইভিং লাইসেন্স অবশ্যই চালকের সঙ্গে থাকতে হবে বলে খসড়া নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
নিরাপদ মডেলে রূপান্তরে সময় এক বছর
বিদ্যমান অনিরাপদ ধীরগতির বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার ‘ইলেকট্রিক মোটরযান রেজিস্ট্রেশন ও চলাচল সংক্রান্ত নীতিমালা, ২০২৩’ অনুযায়ী এক বছরের মধ্যে স্বউদ্যোগে নিরাপদ মডেলের থ্রি-হুইলার মোটরযানে রূপান্তর করতে হবে। এ সময় পার হওয়ার পর অননুমোদিত মোটরযানের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কৃষিকাজে ও নৌযানে ব্যবহৃত ডিজেল ও পেট্রোল ইঞ্জিন দিয়ে স্থানীয়ভাবে প্রস্তুত করা অননুমোদিত যান্ত্রিক যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ করে সংশ্লিষ্ট যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটি উপযুক্ত অনুমোদিত যানবাহন চালুর উদ্যোগ নেবে বলে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে।
১৩৪ দিন আগে
ভরসা রেমিট্যান্সের ওপর, ভবিষ্যৎ নিশ্চিত কতখানি?
দেশের রিজার্ভ বৃদ্ধি, বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ, আমদানি ব্যয় মেটানোর অনেকটাই রেমিট্যান্সের ওপর নির্ভরশীল। বিগত ছয় মাসে রেমিট্যান্সের পালে সুবাতাস বইছে, কিন্তু রেমিট্যান্স নির্ভরতার ভবিষ্যৎ কতটা নিশ্চিত—এমন প্রশ্ন অর্থনীতিবিদ ও অভিবাসন সংশ্লিষ্টদের।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৩০ বিলিয়ন ডলারের বেশি, অর্থাৎ প্রতি মাসে গড়ে আড়াই বিলিয়ন ডলার। চলতি বছর মার্চে দেশের ইতিহাসে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স আসে ৩ বিলিয়ন ডলার। রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রতিটি হিসাবে বিগত সময়ের তুলনায় এগিয়ে আছে বাংলাদেশ।
রেমিট্যান্সের ওপর দিন দিন ভরসা বাড়লেও আগামীতে এ খাত থেকে অর্থনীতিতে কতটা সহায়তা মিলবে, বিশ্ব বাজারের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সে কথা হলফ করে বলা কঠিন।
বাংলাদেশ কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, দেশের বাইরে প্রায় দেড় কোটি প্রবাসীর বাস, যাদের মধ্যে নিয়মিত রেমিট্যান্স পাঠান ৬০-৬৫ লাখের মতো প্রবাসী। প্রবাসীদের পাঠানো এ রেমিট্যান্সের বড় অর্থ আসে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে। এক মধ্যপ্রাচ্যেই ৩৪ শতাংশ প্রবাসী থাকেন যাদের বেশিরভাগ কাজ করেন বিভিন্ন খাতে শ্রমিক হিসাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রেমিট্যান্স হালনাগাদ প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কুয়েত ও কাতারের মতো দেশ থেকে বড় সংখ্যক রেমিট্যান্স আসে। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে যারা বিদেশে কাজের সন্ধানে পাড়ি জমিয়েছেন, তাদের ৭০ শতাংশের বেশির গন্তব্য সৌদি আরব।
অন্যান্য দেশে কেন প্রবাসীদের চাপ কমছে—এমন তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আপতত সংযুক্ত আরব আমিরাত বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিচ্ছে না যেখান থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসে। ওমানেও বন্ধ শ্রমবাজার। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্য সবচেয়ে বেশি শ্রমিক যেত মালয়েশিয়া। গত বছর থেকে সেখানেও শ্রমিক পাঠানো একেবারেই বন্ধ। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ইতালি শ্রমিকদের বড় গন্তব্য, অথচ বৈধ পথে দেশটিতে পাড়ি জমানো দিন দিন কঠিন হয়ে উঠছে। ইউরোপের অন্যান্য দেশেও সুবিধা করতে পারছেন না বাংলাদেশি শ্রমিকরা। অনেকেই দেশে ফিরে আসছেন কাজ না পেয়ে।
আরও পড়ুন: জুলাইয়ের ২৭ দিনে রেমিট্যান্স ২০০ কোটি ডলার ছাড়াল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকোনোমিকস স্টাডি সেন্টারের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রকৃত উৎসের চিত্র।
‘দ্য ইকোনোমিক সিগনিফিকেন্স অব রেমিট্যান্স ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশে পাঠানো রেমিট্যান্সের সবচেয়ে বড় মাধ্যম বিদেশে কর্মরত শ্রমিক বা যারা ছোট খাটো চাকরি করেন এমন মানুষ।
‘ব্লু-কলার’ ট্যাগধারী নিম্ন আয়ের এসব শ্রমিকের ঘামে ভেজা অর্থ দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করলেও মানবেতর হয়ে পড়েছে তাদের জীবন। বিদেশে কাজ করে নিজের অবস্থা উন্নয়নের যে পথ এতদিন সুগম ছিল, ধীরে ধীরে তা কঠিন হয়ে উঠছে।
বিএমইটির তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে যেখানে ১৩ লাখের মতো মানুষ কাজের সন্ধানে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে, সেই সংখ্যা ৩ লাখ কমে ২০২৪ সালে নেমেছে ১০ লাখে। ২০২৩ সালে যারা বিদেশে গিয়েছিলেন তাদের অনেকে আবার ফিরে এসেছেন কাজ না পেয়ে। প্রতি বছর কত সংখ্যক শ্রমিক আউটপাস নিয়ে দেশে ফিরে আসছেন, তার কোনো সঠিক হিসাব নেই সংস্থাটির কাছে।
ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী, সবশেষ ২০২৪ সালে ৮০ হাজারের ওপরে শ্রমিক আউটপাস নিয়ে দেশে ফিরেছেন। ১০ বছর আগেও দেশে ফিরে আসার এ সংখ্যা ছিল ৫০ হাজারের কিছু বেশি। যারা দেশে ফিরে আসছেন তাদের অনেকেই সহায়সম্বল বিক্রি করে, অনেকে আবার ঋণ নিয়ে কিংবা ধারকর্জ করে বিদেশে গিয়েছিলেন কাজের সন্ধানে। কিন্তু যে কাঙ্ক্ষিত কাজের কথা বলে তাদের নেওয়া হয়েছিল, সেই কাজ না পেয়ে বাধ্য হয়ে ফিরে আসতে হয়েছে। অনেকে আবার বৈধ পথে গিয়ে ফিরে এসেছেন অবৈধ শ্রমিক হিসেবে।
যারা কোনোরকমে পেটের দায়ে দেশের বাইরে সর্বাত্মকভাবে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন তাদের বেশিরভাগই ভুগছেন হতাশায়, পড়ছেন অপমৃত্যুর কবলে।
রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) এ বছরের এক জরিপে দেখা যায়, দেশে গড় আয়ু ৭০ বছরের ওপরে হলেও প্রবাসী শ্রমিকদের গড় আয়ু ঠেকেছে মাত্র ৩৭ বছরে।
যে কাজের কথা বলে দেশ থেকে শ্রমিকদের প্রবাসে পাঠানো হয়, সিংহভাগ ক্ষেত্রে তাদের সেই কাজ দেওয়া হয় না। টিকে থাকতে কম টাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে হয় প্রবাসী শ্রমিকদের। প্রবাসে যেসব বাংলাদেশি কর্মী থাকেন তাদের ৩১ শতাংশের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়, ১৬ শতাংশ মারা যান কোনো না কোনো দুর্ঘটনায় এবং ২৮ শতাংশের ভাগ্যে জোটে স্বাভাবিক মৃত্যু। তবে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর তথ্য হচ্ছে, প্রবাসের হতাশ জীবনের ভার বইতে না পেরে ১৫ শতাংশ কর্মী আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
যারা রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখেন, তাদের ভাগ্য এমন নির্মম হলে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহের ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে রামরুর পরিচালক অভিবাসন বিষয়ক গবেষক মেরিনা সুলতানা বলেন, ‘প্রবাসী কর্মীদের কেবল টাকার মেশিন মনে করা হয়। তারা টাকা পাঠাচ্ছে, রিজার্ভ বাড়ছে। কিন্তু যারা টাকা পাঠাচ্ছে তাদের নিশ্চিত ভবিষ্যৎ নির্ধারণে নীতি নির্ধারকদের বরাবরই অবহেলা। অন্যান্য দেশ যেখানে নিজ দেশ থেকে প্রেরিত শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার, সেখানে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। এতে করে একটু একটু করে বিদেশে যাওয়ার আগ্রহ হারাচ্ছে মানুষ। এতে চাপ পড়ছে দেশের কর্মসংস্থানে; বাড়ছে বেকারত্ব। সর্বোপরি প্রভাব পড়ছে দেশের অর্থনীতিতে।’
বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক বিদেশে পাঠাতে প্রায় ৩ হাজারের মতো এজেন্সি রয়েছে। এসব এজেন্সির বিরুদ্ধে বহুকাল ধরে উঠছে নানা ধরনের অভিযোগ। কয়েকটি এজেন্সি শাস্তির মুখোমুখি হলেও আসেনি কোনো দৃশ্যমান পরিবর্তন। রাজনৈতিক প্রভাবে এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর একটি গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে অনেক রিক্রুটিং এজেন্সি নিজেদের আলাদা সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে।
রিক্রুটিং এজেন্সির দুর্নীতির চিত্র ফুটে উঠেছে এ বছর এপ্রিলে হাইকোর্টে জমা দেয়া প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে। তাতে বলা হয়েছে, গত বছর ১৭ হাজার ৭৭৭ শ্রমিক মালয়েশিয়া যেতে না পারার দায় একান্তই এসব এজেন্সির। একদিকে তারা মালয়েশিয়া কর্মী পাঠাতে পারেনি, অন্যদিকে সরকার-নির্ধারিত ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকার পরিবর্তে গমনেচ্ছু শ্রমিকদের থেকে আদায় করেছে অতিরিক্ত অর্থ।
এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের মে মাসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মালয়েশিয়া যেতে ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা সরকার-নির্ধারিত ফি হলেও গমনেচ্ছুদের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা করে আদায় করেছে এসব এজেন্সি। বিভিন্ন পর্যায়ে ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১৩টি এজেন্সির তালিকা করেছে দুদক, যারা হাজার কোটি টাকার ওপরে আত্মসাৎ করেছে প্রবাস গমনেচ্ছু কর্মীদের থেকে।
আরও পড়ুন: প্রবাসীদের স্বীকৃতি ও প্রণোদনার পর রেমিট্যান্স প্রবাহে রেকর্ড
প্রবাসে শ্রমিক পাঠানোর নীতি-নৈতিকতার সঙ্গে রেমিট্যান্সের প্রসঙ্গ টেনে মেরিনা বলেন, ‘যতদিন না এথিকাল রিক্রুটিং নিশ্চিত করা যাবে ততদিন পর্যন্ত রেমিট্যান্সকে অর্থনীতির একটি স্থায়ী মজবুত ভিত্তি হিসাবে বিবেচনা করা যাবে না। দেশে এত এত এজেন্সি, তারা কেন বারবার ব্যর্থ হচ্ছে, কেন দুর্নীতির আশ্রয় নিচ্ছে—এসব সমস্যার সমাধান না করলে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ হঠাৎ করে মুখ থুবড়ে পড়বে।’
অদক্ষ শ্রমিক পাঠানো এবং রেমিট্যান্সের বাজারকে বিস্তৃত না করা আগামীর জন্য বিপজ্জনক উল্লেখ করে মেরিনা বলেন, ‘নেপাল-শ্রীলঙ্কার মতো দেশ বিদেশে দক্ষ শ্রমিক পাঠাচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশে এত এত ট্রেনিং সেন্টার থাকার পরও শ্রমিকদের কেন দক্ষ করে গড়ে তোলা যাচ্ছে না, সেটি বড় প্রশ্ন। চাইলেই হংকং-সিঙ্গাপুরের মতো দেশে নারী শ্রমিক পাঠানো যায়, বাংলাদেশের জন্য সম্ভাব্য ভালো বাজার এটি, কিন্তু ঘুরে ফিরে সেই মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক অদক্ষ শ্রমিকের ওপর নির্ভরশীলতা এখন ভালো রেমিট্যান্স এনে দিলেও আগামীতে তা কতদিন বহাল থাকবে সেটি অনিশ্চিত।’
অভিবাসন বিশ্লেষকদের মতে, মধ্যপ্রাচ্যে দক্ষ শ্রমিকদের চাহিদা বাড়ছে। বাংলাদেশের রেমিট্যান্স আহরণের প্রাণকেন্দ্র সৌদি আরবে ২০৩৪ ফিফা বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে যেসব কর্মী নেওয়া হচ্ছে, তাদের জন্য দক্ষতার মাপকাঠি ঠিক করে দিচ্ছে দেশটি। একই অবস্থা অন্যান্য দেশেও।
এ অবস্থায় রেকর্ড রেমিট্যান্স নিয়ে উদযাপনের পাশাপাশি রেমিট্যান্সের মূল উৎস প্রবাসী কর্মীদের ব্যাপারে কার্যকরী সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এখনই বলে মত খাত সংশ্লিষ্টদের।
১৩৪ দিন আগে
তিন বছরেও সংস্কার হয়নি জগন্নাথপুরের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন সড়ক
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় ২০২২ ও ২০২৪ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৭০ কিলোমিটার সড়ক এখনো সংস্কার হয়নি। শুধু ২০২২ সালের বন্যায়ই উপজেলার ছোটবড় গুরুত্বপূর্ণ ৮৫ কিলোমিটার সড়ক ও সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তার প্রায় ১২ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত সড়কে সংস্কারকাজ শুরু হলেও ৭০ কিলোমিটার গুরুত্বপূর্ণ সড়কে এখনো সংস্কারের অনুমোদন হয়নি।
এরই মধ্যে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৯টি সেতুর টেন্ডার হয়েছে বলে উপজেলা প্রকৌশলীর অফিস সূত্রে জানা গেছে। তবে তিন বছর পেরিয়ে গেলেও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এসব সড়ক সংস্কার না হওয়ায় যানবাহন ও জনসাধারণকে চরম ভোগান্তি নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
২০২২ সালের বন্যায় কলকলিয়া ইউনিয়নের কলকলিয়া-তেলিকোনা (চণ্ডীঢহর) সাদিপুর পয়েন্টসহ প্রায় ১০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব সড়কের বিভিন্ন অংশে ভাঙন ও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। জগন্নাথপুর-বেগমপুর সড়কের প্রায় ৭ কিলোমিটার সড়ক যাতায়াতের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আছিমপুর-শিবগঞ্জ সড়ক, জালালপুর সড়ক, রানীগঞ্জ-বাগময়না সড়ক, শ্রীরামশী-নয়াবন্দর সাড়ে ৫ কিলোমিটার সড়কসহ উপজেলা বিভিন্ন ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর অবস্থা নাজুক।
এলজিইডির বেশিরভাগ সড়কেই খানাখন্দ থাকায় সেগুলো যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী পড়ছে। এ ছাড়াও ইটের কার্পেটিং করা এবং মাটির রাস্তার অধিকাংশ ভাঙাচোরা। বর্ষার মৌসুমে এসব সড়কপথে যানবাহন চলাচলে ভোগান্তির শিকার হতে হয় জনসাধারণকে।
কলকলিয়ার দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘বিগত তিন বছর ধরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর একটিও সংস্কার করা হয়নি। এর মধ্যে প্রায় ১০ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা মারাত্মক। ভাঙা রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে কষ্ট হয়, বাধ্য হয়েই আমরা চলাচল করি।’
আরও পড়ুন: রংপুরে মহাসড়ক সংস্কারে অনিয়ম ধরল সেনাবাহিনী
মিরপুর ইউনিয়নের শ্রীরামসী গ্রামের মো. হাসন আলী বলেন, ‘বছরের পর বছর যায়, শুধু শোনা যায় যে ভাঙা সড়কের টেন্ডার হইছে, কিন্তু পরবর্তীতে আর কাজ হয় না। মেঘবৃষ্টির দিন ভাঙা সড়কের গর্তে পানি জমে বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।’
রানীগঞ্জের বাগময়না গ্রামের মো. আলমগীর মিয়া বলেন, ‘আমাদের একমাত্র সড়কটি বন্যায় বারবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, তবু একবারও সংস্থার করা হয়নি। অনেক কষ্ট করে যানবাহনে আমাদের চলাচল করতে হয়।’
উপজেলার ভুক্তভোগী জনসাধারণের দাবি, আগামী বর্ষার মৌসুম আসার আগেই যেন ভাঙা সড়কগুলোর সংস্কার করা হয়।
জনসাধারণের ভোগান্তির এসব বর্ণনায় সমর্থন দেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও।
এ বিষয়ে রানীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শেখ ছদরুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছরের বন্যায় রানীগঞ্জ ইউনিয়নের অনেকগুলো রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ভাটি অঞ্চলের সঙ্গে একমাত্র রানীগঞ্জের যোগাযোগ রাস্তা বাগময়া-হলিকোনা সড়কটি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। এ ছাড়া আছিমপুর হয়ে শিবগঞ্জ রাস্তাটিরও একই অবস্থা। এমন অসংখ্য সড়ক সংস্কারের অভাবে মানুষের যাতায়াতে ভোগান্তি হচ্ছে।’
পাইলগাঁওয়ের ভারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান নজম উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর মধ্যে জগন্নাথপুর-বেগমপুর সড়কটি গুরুত্বপূর্ণ। এই সড়কটির বিভিন্ন অংশ ভেঙে ছোটবড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সড়কটি সংস্কার না হওয়ায় উপজেলার সঙ্গে আমাদের এই অঞ্চলের মানুষের যাতায়াতে নিয়মিত ভোগান্তি হচ্ছে।’
তিনি বলেন, পাইলগাঁও ইউনিয়নে এলজিইডির বেশ কয়েকটি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত। সেগুলোর সংস্কার প্রয়োজন হলেও এখনো তা করা হয়নি।
জগন্নাথপুর উপজেলা প্রকৌশলী সোহরাব হোসেন বলেন, ‘২০২২ সালে জগন্নাথপুর উপজেলায় প্রায় ৮৫ কিলোমিটার সড়ক ও কয়েকটি সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সে বছরই এসব ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের তালিকা করে সংস্কারের জন্য সদরদপ্তরে পাঠাই যাতে দ্রুত সংস্কারের ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘যেহেতু সিলেট বিভাগসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় বন্যায় সড়ক ও সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সবকটি জেলার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে প্রকল্প চালু করতে করতে ২০২৩ সাল চলে আসে। এর মধ্যে জগন্নাথপুর উপজেলায় ৯টি সেতু ও কিছু সড়ক সংস্কারের অনুমোদন পায়। এই অনুমোদন প্রক্রিয়ার মধ্যেই ২০২৪ সালের বন্যা চলে আসে। বন্যার কারণে সড়কগুলোর সংস্কারকাজ আমরা পুরোদমে শুরু করতে পারিনি।’
আরও পড়ুন: সড়ক ও সেতুর পর রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বেও শেখ মইনউদ্দিন
তিনি জানান, ২০২৫ সালে বেশ কিছু সংস্কার কাজ অনুমোদিত হয়ে এসেছে এবং আমরা কাজ শুরু করেছি। পৌরসভাসহ উপজেলার চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়নে ২ কিলোমিটার, জগন্নাথপুর-শিবগঞ্জ সড়কে ২.৫ কিলোমিটার, জগন্নাথপুর-কেশবপুর হয়ে এড়ালিয়া বাজার পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার সড়কের সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে, এড়ালিয়া থেকে লামা রসুলপুর পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার সড়কের টেন্ডার ঠিকাদার নিয়োগ হয়েছে।
এই প্রকৌশলী বলেন, ‘এভাবেই আমাদের বিভিন্ন সড়কের সংস্কার কাজ চলমান থাকবে। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত সেতুগুলোর টেন্ডার সম্পন্ন হয়েছে এবং টিকাকারও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এবার বর্ষার আগে কাজ শুরু করতে না পারলেও বর্ষার পরপরই কাজ শুরু হবে।’
১৩৫ দিন আগে
মেরামত হয়নি বেড়িবাঁধ, বন্যার আশঙ্কায় আতঙ্কে ফেনীবাসী
ফেনীর তিন উপজেলা ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়ায় গত ৮ জুলাই ভয়াবহ বন্যায় মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর ৪২টি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। বন্যার পানি নেমে গেলেও এখনো সেসব বাঁধ মেরামত করা হয়নি। গত বছরের ভয়াবহ বন্যার এক বছর পার না হতেই বন্যায় আবারও বাঁধ ভাঙায় আতঙ্কে রয়েছে স্থানীয়রা।
আকাশে মেঘ জমলেই আতঙ্ক দেখা দেয় ফেনীর নদীতীরের বাসিন্দাদের মনে। গত বছরের ভয়াবহ বন্যার ক্ষত না শুকাতেই এ বছর আবারও বৈরী আবহাওয়া দেখা যাচ্ছে। সাগরে নিম্নচাপ বা টানা বৃষ্টির পূর্বাভাস দেখলেই কপালে পড়ছে শঙ্কার ভাঁজ। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, আতঙ্কিত না হয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
ফেনীতে গত শনিবার থেকে দিনভর থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে জনজীবনে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। ভারী বৃষ্টির কারণে শহরের বেশ কিছু নিচু এলাকায় সাময়িক জলাবদ্ধতা দেখা গেছে।
অপরদিকে, গত ২০ জুলাই বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু করলেও নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় মেরামত কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বাঁধ মেরামত করতে না পারায় গত ২১ জুলাই ভারতের উজানের পানির চাপে ভাঙ্গা স্থান দিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকে চিথলিয়া ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রাম দ্বিতীয় দফায় প্লাবিত হয়।
টেকসই বাঁধ নির্মাণসহ ৮ দফা দাবিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) অভিমুখে পদযাত্রাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (২৩ জুলাই) সকালে ফেনী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে মহিপাল পানি উন্নয়ন বোর্ড অভিমুখে এ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।
এ ছাড়া বিভিন্ন সংগঠন দ্রুত বেড়িবাঁধ মেরামত করে বন্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য গত প্রায় এক মাস ধরে মানববন্ধন করে যাচ্ছে। সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে আয়োজিত ও ফেনী প্রবাসী উদ্যোগের সার্বিক সহযোগিতায় এতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন অংশগ্রহণ করেন।
এর আগে, পরশুরামে দ্রুত বেড়িবাঁধ মেরামতের দাবিতে মানববন্ধন করেছে ৫৬টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
এরই মধ্যে শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে বৃষ্টি। এতে ভাঙা বাঁধ দিয়ে আবারও নদীর পানি ঢুকে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় রয়েছে স্থানীয়রা।
আরও পড়ুন: ফেনীতে ৪৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত, বেড়িবাঁধে ভাঙন
মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে এই বৃষ্টি হচ্ছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া বার্তা অনুযায়ী, দেশের বেশ কিছু জায়গায় ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। টানা বৃষ্টি হলে মুহুরি, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি আবারও বেড়ে যাবে।
গত ৮ জুলাই ভয়াবহ বন্যায় মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর ৪২টি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। ওইসব স্থান দিয়ে পানি ঢুকে ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়ার ১৩৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কয়েক লাখ মানুষ; ক্ষতি হয়েছে ফসল, সড়ক, সেতু ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের।
দ্রুত বেড়িবাঁধ মেরামতের দাবিতে স্থানীয় আবু তালেব রিপন বলেন, ‘বেড়িবাঁধের ভাঙা স্থানগুলো এখনো মেরামত হয়নি। বৃষ্টি বেড়ি গেলেই ভাঙনকবলিত বাসিন্দারা আবারও বন্যার কবলে পড়বেন। তাই বাঁধ-সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা চরম আতঙ্কে রয়েছেন।’
পরশুরামের নিজ কালিকাপুরের বাসিন্দা শফিক আহম্মদ বলেন, ‘গত বছরের বন্যায় সব হারিয়েছি। বাশেঁর বেড়ার ঘরে জোড়াতালি দিয়ে বসবাস করছি। রাত এলেই ভয়ে থাকি, কখন পানি এসে আবার সব ভাসিয়ে নিয়ে যায়।’
তিনি বলেন, মুহুরী নদীর বাঁধের যে স্থান দিয়ে পানি ঢুকেছিল সেই বাঁধটির কাজ এখনো হয়নি। ভারি বৃষ্টি হলেই সেখান দিয়ে পানি ঢুকবে।’
ফুলগাজী উপজেলার স্থানীয় সাংবাদিক জহিরুল ইসলাম রাজু বলেন, ‘গত বছরের বন্যা আতঙ্কের কারণে বৃষ্টির শুরু হওয়ায় স্থানীয় লোকজন বন্যার আশঙ্কায় রাত জেগে ঘরের সামনে বসে থাকে।’
পরশুরাম উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম অলকা গ্রামের গত ৮ জুলাইয়ের বন্যায় বসতঘর হারানো মাসুম চৌধুরী বলেন, ‘আকাশে মেঘ জমলে শরীরে কাপন শুরু হয়। নদীর পাড়ে ভাঙ্গা স্থানে গিয়ে বসে থাকি, কখন আবার পানি লোকালয়ে ঢুকে আবারও নিঃস্ব করে দিয়ে যায়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে বারবার দাবি জানিয়েছি টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে আমাদের বন্যার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য। বাঁধ মেরামত না হওয়ায় প্রতিটি রাত আতঙ্কে কাটতে হয়।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদার দি নিউ ট্রেড লিংকের স্বত্ত্বাধিকারী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘পরশুরামের পশ্চিম অলকা গ্রামের মুহুরী নদীর ৮০ মিটার ভাঙ্গা বাঁধ মেরামত কাজ শুরু হয়েছিল। রাতে হঠাৎ নদীর পানি বেড়ে গিয়ে মাটি খনন যন্ত্রসহ মেরামত শ্রমিকদের বিভিন্ন সরঞ্জাম পানির স্রোতে নিয়ে যায়। পানি কমে গেলে আবারও বাঁধ মেরামত কাজ শুরু করা হবে।’
আরও পড়ুন: নিম্নচাপ: পটুয়াখালীতে বেড়িবাঁধ ভেঙে ২০ গ্রাম প্লাবিত
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, ‘চলতি বছরের ৮ জুলাইয়ের ভয়াবহ বন্যায় পরশুরামের ১৫টি স্থানে বাঁধ ভেঙ্গে যায়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে ঠিকাদার নিয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামত কাজ শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু গত ২০ জুলাই দ্বিতীয় দফা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় বাঁধ মেরামত কাজ বন্ধ হয়ে যায়। নদীর পানি কমে গেলে আবার মেরামত কার্যক্রম শুরু করা হবে।’
১৩৬ দিন আগে
ফল বিপর্যয়ে কুমিল্লায় ৪৬৮ কলেজে খালি থাকবে দেড় লাখ আসন
চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় ফল বিপর্যয় হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে কলেজগুলোতে। আশঙ্কা করা হচ্ছে হয়তো শিক্ষার্থী সংকটে বন্ধ হয়ে যাবে অনেক কলেজ।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী একাদশ শ্রেণির ভর্তিতে কুমিল্লা বোর্ডে ৪৬৮ কলেজে খালি থাকবে দেড় লাখ আসন। ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় এ বোর্ডে গণিতে ভরাডুবির কারণে ফল বিপর্যয়ে এমন পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে। ছয় জেলার ৪৬৮টি কলেজে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর সংকট দেখা দিয়েছে।
কুমিল্লা বোর্ডের কলেজগুলোতে ২ লাখ ৫৯ হাজার ২৬০টি আসন রয়েছে। কিন্তু ২০২৫ সালের এসএসসি পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে ১ লাখ ৬ হাজার ৫৮১ জন। সেই হিসাবে এ বছর আসন খালি থাকবে ১ লাখ ৫২ হাজার ৬৭৯টি।
সূত্রমতে, কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের অধিভুক্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী ও কুমিল্লা জেলায় ৪৬৮টি কলেজ রয়েছে। এর মধ্যে কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজ ও ফেনী গার্লস ক্যাডেট কলেজে নিজস্ব শিক্ষার্থী ছাড়া বাইরের কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হবে না। শিক্ষার্থী না পেলে অনেক কলেজ বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলেও জানিয়েছে শিক্ষা বোর্ড সূত্র। তবে এ বিষয়ে এখনো মন্ত্রণালয় কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।
পড়ুন: এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ: পাশের হার ৬৮.৪৫ শতাংশ
একাধিক অভিভাবক ও শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শহরের কলেজগুলোর মধ্যে প্রথম পছন্দ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ, এরপর কুমিল্লা সরকারি কলেজ ও কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড মডেল কলেজ।
কুমিল্লা কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ হুমায়ুন কবীর মাসউদ বলেন, কুমিল্লা বোর্ড এবার লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডে পরীক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করেছে। যার কারণে এবার এসএসসির ফলাফলে শিক্ষার প্রকৃত চিত্র উঠে এসেছে। সব কলেজে শিক্ষার্থী সংকট হবে, বিষয়টি আমি বিশ্বাস করি না। কারণ যেসব কলেজে মানসম্মত পাঠদান হয়, তাদের শিক্ষার্থী পেতে সমস্যা হবে না।
চৌদ্দগ্রাম আলহাজ্ব নূর মিয়া ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মুহাম্মদ মহিব বুল্লাহ বলেন, শহরের তুলনায় গ্রামের কলেজগুলোতে এ বছর শিক্ষার্থীর সংখ্যা কিছুটা কম হতে পারে। কিন্তু শিক্ষার মান বাড়বে বলে মনে করেন এই শিক্ষক।
কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের উপ-কলেজ পরিদর্শক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন মজুমদার বলেন, কুমিল্লা বোর্ডের অধীনে মোট ৪৬৮টি কলেজ রয়েছে। কলেজগুলোতে ২ লাখ ৫৯ হাজার ২৬০টি আসন থাকলেও এবার অনেক কলেজ প্রত্যাশিত শিক্ষার্থী পাবে না। দেড় লাখেরও বেশি আসন খালি থাকবে। ২০২৪ সালে এসএসসি পাস করেও ১৯ হাজার ৪৫৬ জন ভর্তি হয়নি। বাল্যবিয়ে, বিদেশগামী প্রবণতা, দরিদ্রতা ও অন্যবোর্ডে স্বল্পসংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি ও বদলির কারণে তারা ভর্তি হয়নি। এদের সিংহভাগই ঝরে গেছে।
পরিদর্শক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন মজুমদার আরও বলেন, অনলাইনে ভর্তি ফরম পূরণ শুরু ৩০ জুলাই থেকে। চলবে আগামী ১১ আগস্ট পর্যন্ত। অনলাইন ব্যতীত ম্যানুয়ালি কোনো ভর্তি কার্যক্রম করা হবে না। এবার ভর্তির আবেদন ফি ২২০ টাকা। প্রথম পর্যায়ের আবেদনের ফল প্রকাশ ২০ আগস্ট রাত আটটা। শিক্ষার্থীর কলেজ নির্বাচন নিশ্চায়ন ফল প্রকাশের পর থেকে ২২ আগস্ট রাত আটটা পর্যন্ত।
তিনি আরও বলেন, দ্বিতীয় পর্যায়ে আবেদন গ্রহণ ২৩ থেকে ২৫ আগস্ট রাত আটটা পর্যন্ত। দ্বিতীয় পর্যায়ের আবেদনের ফল প্রকাশ ২৮ আগস্ট রাত আটটায়। দ্বিতীয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীর কলেজ নির্বাচন নিশ্চায়ন ২৯ থেকে ৩০ আগস্ট রাত আটটা পর্যন্ত।
একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি নীতিমালা ২০২৫ মোতাবেক আবেদন যাচাই-বাছাই ও নিষ্পত্তি ১২ আগস্ট। এসএসসির পুনঃনিরীক্ষণের ফলাফল পরিবর্তিত শিক্ষার্থীদের আবেদন গ্রহণ ১৩ ও ১৪ আগস্ট। পছন্দক্রম পরিবর্তনের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ আগস্ট।
১৩৬ দিন আগে
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে ফি আছে, চিকিৎসা নেই!
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ জেলার একটি সুপরিচিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তবে এখানে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে চিকিৎসার জন্য অর্থ নেওয়া হলেও তারা কোনো সেবা পান না—এমন অভিযোগ উঠেছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকলেও প্রতিবছর একবার করে ‘চিকিৎসা বাবদ’ অর্থ নিচ্ছে কলেজ প্রশাসন।
কলেজ প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে এ কলেজের শিক্ষার্থী প্রায় ২৮ হাজার। ভর্তির সময় একজন শিক্ষার্থীকে চিকিৎসার জন্য ২০ টাকা দিতে হয়। হিসাব অনুযায়ী, এই বাবদ প্রতিবছর আদায় হয় প্রায় ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এ বছরের ভর্তি রসিদেও চিকিৎসা বাবদ ২০ টাকা নেওয়ার উল্লেখ রয়েছে।
তবে বিগত বছরগুলোতে চিকিৎসা খাতে কত টাকা নেওয়া হয়েছে, তার কোনো হিসাব প্রকাশ করা হয়নি। এদিকে, কলেজে একটি চিকিৎসা কেন্দ্র থাকা জরুরি বলে মনে করেন কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আবুল বাসার ভূঁইয়া।
তিনি বলেন, ‘আমাদের কলেজে খুব দ্রুত একটি মেডিকেল সেন্টার হবে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে।’
কলেজের শিক্ষার্থীরা জানান, একজন শিক্ষার্থী কলেজ ক্যাম্পাসে এসে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য কলেজকেন্দ্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন: প্রভোস্টবিহীন জাবির কাজী নজরুল হল, ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা
তাদের ভাষ্য, এ কলেজে গুরুত্বপূর্ণ অনেক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এসব পরীক্ষায় অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা আসেন। এছাড়াও নিয়মিত ক্লাস, টেস্ট ও ইনকোর্স পরীক্ষা চলে।
বন্ধের দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল-বিকেলে কলেজে যাতায়াত করেন হাজার হাজার শিক্ষার্থী। পাশাপাশি কলেজের চারটি আবাসিক হলে নিয়মিত কয়েক হাজার শিক্ষার্থী থাকেন।
কলেজ সূত্রে আরও জানা যায়, আগে প্রতি সপ্তাহে সোমবার কুমিল্লা সিভিল সার্জন অফিস থেকে একজন মেডিকেল অফিসার কলেজের একটি কক্ষে বসতেন। কিন্তু কী কারণে বর্তমানে সেই সেবা বন্ধ হয়েছে, তা শিক্ষার্থীরা জানেন না।
তবে কলেজে আবাসিক হল ও গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার সময় চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকা জরুরি বলে মনে করেন কলেজের একাধিক শিক্ষক ও কর্মচারী।
১৩৭ দিন আগে
গাইবান্ধার তিন নদীর বাঁধ হতে পারে উন্মুক্ত বিনোদন কেন্দ্র
তিস্তা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর ৬৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ডান তীরের প্রশস্ত বাঁধ হতে পারে মানুষের বিনোদনের উন্মুক্ত এলাকা। একটু সৌন্দর্য বৃদ্ধিই এই এলাকাকে শুধু মৌসুমি নয়, বরং স্থায়ীভাবে পর্যটকদের আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত করতে পারে। পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হতে পারে নদীর দুই তীরের অনেক মানুষের।
গাইবান্ধার চার উপজেলাজুড়ে নদীর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া চকচকে বাঁধ, বাঁধের পাশে সারি সারি সিমেন্টের বোল্ডার, বিস্তীর্ণ নদী ও বালুচর এই এলাকাকে দিয়েছে ভিন্নমাত্রার সৌন্দর্য। ডান তীরে রয়েছে বিস্তৃত জনপদ ও সবুজ আবাদি জমি। ছুটির দিন ছাড়াও সকাল-বিকালে এখানে মানুষের ভিড় লেগেই থাকে। দূরদূরান্ত থেকেও নানা বয়সী নারী-পুরুষ ছুটে আসেন এই নদীতীরের দৃশ্য উপভোগ করতে।
সরকারি উদ্যোগে আধুনিকায়ন করা হলে এটি হতে পারে একটি মনোরম পর্যটন কেন্দ্র। গাইবান্ধা শহর থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বালাসীঘাট। ব্রহ্মপুত্র নদীর ডান তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় এখানে ৬৪ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। বাঁধের দুপাশে লাগানো হয়েছে সবুজ ঘাস। এছাড়া বালাসীঘাটে গড়ে তোলা হয়েছে বিআইডব্লিউটিএ-এর সুদৃশ্য গেস্ট হাউস, ট্রাক টার্মিনালসহ নানা অবকাঠামো।
আরও পড়ুন: বিপৎসীমার ওপরে তিস্তার পানি, ধুবনি বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকছে লোকালয়ে
মুক্তিযুদ্ধের গবেষক ও সাংস্কৃতিক সংগঠক অধ্যাপক জহুরুল কাইয়ুম বলেন, ‘আমরা চাই গাইবান্ধার চরাঞ্চল, বালাসীঘাট ও নতুন নির্মিত বাঁধগুলো পর্যটকদের দর্শনীয় স্থানে পরিণত হোক। কী নেই সেখানে—ঘোড়ার গাড়ি, ছোট-বড় নৌকা, নৌযান, নৌপুলিশ। বিকেলে বালাসীঘাট থেকে দেখা যায় ভারতের গারো পাহাড়।’
বালাসীঘাটের ইজারাদার জানান, বর্ষায় নদীর ভরা মৌসুমে তিস্তা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর পাড় দেখা যায় না। বালাসীঘাট থেকে নৌকা চলে কুড়িগ্রামের চিলমারী, রৌমারী, রাজীবপুর, গঙ্গাচড়া, জামালপুরের ইসলামপুর, বাহাদুরাবাদঘাটসহ বিভিন্ন স্থানে। এসব পথে নৌপথে পণ্য বহন করে পাঠানো হয় ঢাকা, টাঙ্গাইলসহ দেশের নানা জায়গায়।
উৎসব এলে তো কথাই নেই। নদী ভরা হোক বা শুকনো—দুই সময়েই নদী নেয় ভিন্ন রূপ। নববর্ষ, পূজা, ঈদ কিংবা ছুটির দিনগুলোতে বালাসীঘাট পরিণত হয় আনন্দঘন মিলনমেলায়। কেউ নৌকায় এপার-ওপার হন, কেউ বা নৌকায় চরে ঘুরে বেড়ান। নদীর হিমেল হাওয়ায় নারী-পুরুষ একত্রিত হন আনন্দ উপভোগে। নদীতীরের এই বাঁধকে ঘিরে গড়ে উঠেছে চরাঞ্চল ভ্রমণ, বালুচরে ঘোরাঘুরি, নদীপারে বসে আড্ডা দেওয়ার সংস্কৃতি।
বর্ষায় যখন নদী যৌবনে, তখন শত শত নৌকায় করে উত্তরাঞ্চল থেকে ধান-পাটসহ নানা পণ্য চলে যায় বগুড়া, টাঙ্গাইলসহ দেশের অন্যত্র। দুই মৌসুমে নদী নেয় ভিন্ন রূপ—বর্ষায় এক রকম, শীতে আরেক রকম। ছুটির দিনে শত শত মানুষ বালাসীঘাটে আসেন সৌন্দর্য উপভোগ করতে। অনেকে ছোট বড় নৌকায় চরে বেড়ান, চরাঞ্চলের জীবনযাপন দেখেন।
বালাসীঘাট ছাড়াও ফুলছড়ি ঘাট, সৈয়দপুর ঘাট, কামারজানি ঘাট, শ্রীপুর ঘাট, পোড়ার চর, হরিপুর ঘাটসহ রয়েছে আরও অনেক ঘাট। দিনের বেলা চরাঞ্চল ঘোরা কিংবা সুযোগ বুঝে এনজিও কর্মীদের আবাসস্থলে রাত যাপন করাও সম্ভব।
ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, ‘খুব অল্প খরচে এখানে খাবার পাওয়া যায়। ২০ টাকায় গাইবান্ধা শহর থেকে অটোতে চড়ে চলে আসা যায় বালাসীঘাটে। নদীর টাটকা মাছের ঝোল খাওয়ার মজাই আলাদা। চরাঞ্চলের মানুষের আতিথেয়তা মন ভরিয়ে দেবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সেখানে দেখা যাবে চরের হাটবাজার, জীবন-জীবিকা ও চিরায়ত বাংলার ঐতিহ্য।’
চরাঞ্চলে উৎপাদিত ফসলের মধ্যে রয়েছে ধান, পাট, ভুট্টা, সরিষা, বাদাম, চিনা, কাউন, তিল, তিশি, টমেটো, বেগুন, ঢেঁড়স, পটল, মরিচ, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, ফুলকপি, বাঁধাকপি ইত্যাদি। এক সময়ের বালুচর এখন রূপ নিয়েছে সোনার চরে। তবে বর্ষায় সেই চরাঞ্চল ডুবে যায়। ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট—সবই চলে যায় পানির নিচে।
আরও পড়ুন: ফেনীতে টেকসই বাঁধ নির্মাণসহ ৮ দাবিতে পদযাত্রা
এই তিন নদীর পারে বাঁধের পাশে বসার স্থান, দোলনা, স্পিডবোটে ভ্রমণের ব্যবস্থা, রিসোর্ট, আনন্দতরী, হোটেল-মোটেল তৈরি হলে এই স্থান হয়ে উঠবে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। নিরাপত্তায় রয়েছে নৌপুলিশ ফাঁড়ি। এসব বাস্তবায়িত হলে শুধু পর্যটন নয়, কর্মসংস্থান ও রাজস্ব আয়েরও সম্ভাবনা রয়েছে।
গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জেম আহম্মদ বলেন, ‘বালাসীঘাট একটি ঐতিহ্যবাহী স্থান। এর সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য সরকার ও পানি উন্নয়ন বোর্ড ইতোমধ্যে ভালো ভূমিকা রেখেছে। আমরা সরকারি সহযোগিতা অব্যাহত রাখব।’
১৩৭ দিন আগে
আটবছর ধরে নাফ নদীতে মাছ ধরা বন্ধ, জেলেপল্লির চুলায় জ্বলছে না আগুন
প্রতিক্ষণ নানা ঝুঁকি ও শঙ্কা নিয়ে দিন চলে তাদের। নিরাপত্তার বেড়াজালে আটকে আছে ভবিষ্যতের স্বপ্ন। না পারছে বাপ-দাদার ভিটেমাটি ছাড়তে, না পারছে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে। অনিশ্চিত জীবনের মধ্যেও মুক্তির পথ খুঁজছে তারা।
বলছি, বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবিরসংলগ্ন টেকনাফ-উখিয়ার সীমান্ত এলাকার মানুষের কথা—যাদের বেঁচে থাকার অবলম্বনটুকুও নেই।
মিয়ানমারের দুই সশস্ত্র গোষ্ঠীর সংঘর্ষে সবসময় আতঙ্কে থাকে সীমান্তবাসী। প্রতিবেশী দেশ থেকে ছোড়া মর্টারশেলে বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হন, নিহত হন রোহিঙ্গাও। আহত হন সীমান্ত এলাকার অনেক মানুষ। মাইন বিস্ফোরণে হতাহত হচ্ছেন স্থানীয় কৃষিজীবীরাও। সময় সময়ে বন্ধ থাকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
সীমান্তজুড়ে চলে অপহরণ, মাদক, মানবপাচার ও অস্ত্রপাচার। সীমান্তে কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করেছে সরকার। কিন্তু এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা সীমান্তের সাধারণ মানুষের জীবনধারণকে করে তুলেছে দুর্বিষহ। এর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ৫ হাজারেরও বেশি জেলেপরিবার।
টেকনাফের হ্নীলা জলদাস পাড়ার ৭০ বছর বয়সী সমপ্তি দাস। ৯৬ বছর বয়সী মাকে নিয়ে জাল বুনে কোনো মতে দুমুঠো ভাত জোগাড় করার চেষ্টা করতেন। কিন্তু এখন মাছ ধরা বন্ধ থাকায় জালের আর চাহিদা নেই। তাই জাল তৈরির কাজও বন্ধ।
আরও পড়ুন: ভোলায় ২০ কেজি হাঙ্গরসহ ৮০০ কেজি সামুদ্রিক মাছ জব্দ
১৩৮ দিন আগে