সিলেটের হজরত শাহজালাল (র.)-এর মাজারের নারী ইবাদতখানার সামনে থেকে শিশু চুরির ঘটনায় এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ। ধরা পড়ার পর নিজেদের সন্তান নেই, তাই শিশুটিকে প্রতিপালনের জন্য চুরি করেছিলেন বলে সরল স্বীকারোক্তি দিয়েছেন তিনি।
গত ২৮ অক্টোবর বিকেল সোয়া ৫টার দিকে জকিগঞ্জ উপজেলার বাল্লা গ্রামের শাকিল আহমদের দেড় বছরের মেয়ে সিনহা আক্তার তাবাসসুমকে চুরি করে নিয়ে যান মো. আলী (২৭)। এরপর সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) মাজার এলাকা থেকেই তাকে আটক করা হয়।
আটক মো. আলী (২৭) মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল থানার নোয়াপাড়ার বাসিন্দা। তবে কাজের সুবাদে তিনি হবিগঞ্জে থাকেন।
এদিকে, মেয়েকে হারিয়ে ঘর ভাঙার উপক্রম শিশুটির মা রেহানা বেগমের (২৮)।
তিনি জানান, আরও কয়েকটা বাচ্চার সঙ্গে খেলার জন্য নিজের মেয়েটিকে তিনি কোল থেকে নামিয়ে দেন। একপর্যায়ে খেয়াল করেন, তার মেয়েটিকে কোলে নিয়ে এক যুবক দ্রুত হাঁটছেন। তিনিও দ্রুত হেঁটে তাকে ধরতে গেলে মুহুর্তের মধ্যে ভিড়ের মধ্যে লোকটিকে হারিয়ে ফেলেন তিনি।
এরপর রেহানার জীবনে নেমে আসে নরক যন্ত্রণা। মেয়েকে হারিয়ে বাড়ি ফেরায় তার স্বামী তাকে ঘর থেকে বের করে দেন। মানসিক যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে ঘুরতে থাকেন রাস্তায় রাস্তায়। তার পর থেকে হজরত শাহজালাল (র.)-এর মাজার প্রাঙ্গণ ও গ্রামের বাড়ি জকিগঞ্জে দৌড়াদৌড়ি করেই তার দিন পার হচ্ছিল। তবে মেয়েকে ফিরে পাওয়ার আশায় অধিকাংশ সময় তিনি মাজার প্রাঙ্গণেই পড়ে থাকতেন। শিশুটিকে হারানোর পর সিলেট মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেছিলেন তিনি।
রেহানা বলেন, মেয়েকে হারিয়েছি ৪৮ দিন হয়ে গেছে। গতকালও (সোমবার) দরগাহ প্রাঙ্গণে হাঁটছিলাম। সেখানে হঠাৎ সেই যুবককে দেখতে পাই, যে আমার মেয়েকে নিয়ে হাওয়া হয়ে গিয়েছিল। পরে স্থানীয়দের জানালে সবাই মিলে তাকে আটক করে। এরপর জিডির তদন্ত কর্মকর্তাকে ফোন করলে তিনি এসে লোকটিকে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে যায়।
তিনি আরও জানান, মো. আলী স্বীকার করেছে যে, মেয়েটি তার স্ত্রীর কাছে আছে। তাদের কোনো সন্তান নেই। তাই লালন-পালন করতেই ওকে নিয়ে গিয়েছিলেন। ক্ষোভ প্রকাশ করে রেহানা বলেন, ‘তার বাচ্চা নেই, তাই বলে আমার মেয়েকে নেবে কেন?’
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাঈনুল জাকির বলেন, আলী আমাদের হেফাজতে আছেন। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে। ঘটনার বিস্তারিত পরে জানানো হবে।