বিশেষ সংবাদ
ঠাকুরগাঁওয়ে একটি খাল খননে ফিরেছে কৃষকের ভাগ্য, বদলে গেছে ২৫ হাজার একর জমির চিত্র
ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল উপজেলার সীমান্তবর্তী রাউতনগর খাল পুনঃখননের ফলে এলাকার কৃষিতে দেখা দিয়েছে নতুন সম্ভাবনা, ফিরতে শুরু করেছে কৃষকের ভাগ্য। আট কিলোমিটার দীর্ঘ খালটি ফিরিয়ে আনায় বদলে গেছে আশপাশের ২৫ হাজার একর জমির চিত্র।
খাল পুনঃখননের ফলে এক ফসলি জমিগুলো পরিণত হয়েছে তিন ফসলি জমিতে। এতে কেবল কৃষকের ভাগ্যই ফেরেনি, সরকারি প্রায় ৩০ একর জমিও দখলমুক্ত হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে পলি জমে রাউতনগর খালের পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে পড়েছিল। শ্রীপুর মৌজা থেকে শুরু হয়ে কেউটান বর্ডার ব্রিজ পর্যন্ত বিস্তৃত এই খাল একসময় ছিল জীববৈচিত্র্যের প্রাণকেন্দ্র।
পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রতিবছর আশপাশের জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতো। অধিকাংশ জমিতে বোরো ধান ছাড়া অন্য কোনো ফসল ফলানো সম্ভব ছিল না। ফলে কৃষকরা বছরের অর্ধেক সময় কাজবিহীন থাকতে বাধ্য হতেন।
স্থানীয় বাসিন্দা তোতা মিয়া কঠিন দিনগুলোর কথা স্মরণ করে বলেন, ‘আগে বর্ষায় জমিতে পুকুরের মতো পানি থাকতো, ফসল পচে নষ্ট হতো। আর শীতকালে খাল পুরোপুরি শুকিয়ে যেত, সেচের জন্য সামান্য পানিও মিলতো না। আমাদের বাপ-দাদারাও এই জমিতে একের বেশি ফসল তোলার কথা ভাবতে পারেননি। বর্তমানে আমরা এখানে তিন ফসল বা তার থেকে বেশি করতে পারব।’
আরও পড়ুন: ঝিনাইদহে ভাঙাচোরা সড়কে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত
সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উদ্যোগে খাল পুনঃখননের পর দ্রুত পানি নিষ্কাশন সম্ভব হচ্ছে। ফলে কৃষকেরা এখন ধান ছাড়াও আলু, গম, ভুট্টা, তেলবীজ ও নানা ধরনের উচ্চমূল্যের সবজি চাষ করছেন। এতে কৃষকের আয় কয়েকগুণ বাড়ার আশা করা হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, রাউতনগর খালের পুনঃখননে এলাকার প্রায় ২৫ হাজার একর জমিতে এখন তিন মৌসুমে ফসল ফলবে। এতে প্রতিবছর এই অঞ্চল থেকে শত কোটি টাকার কৃষিপণ্য উৎপাদিত হবে। এই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কেবল কৃষকের জীবনমানই পাল্টাবে না, এটি গ্রামীণ অর্থনীতিতে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
তারা আরও জানান, খাল খননের ফলে একদিকে যেমন জমির দ্রুত পানি নিষ্কাশন নিশ্চিত হচ্ছে, তেমনি শুষ্ক মৌসুমে খাল থেকে সহজেই সেচ নেওয়া যাবে। পানির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত হচ্ছে। পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ দখলে থাকা সরকারি প্রায় ৩০ একর জমি উদ্ধার হয়েছে।
কৃষক শামসুল হক (৪২) খালপাড়ে গড়ে তুলেছেন সবজির বাগান। তিনি বলেন, ‘খাল খননের পর শুধু ধান নয়, খালের দুই পারে আমরা এখন বাঁধাকপি, বেগুন, টমেটোসহ নানা ধরনের উচ্চমূল্যের সবজি চাষ করছি। বাজারে সবজি বিক্রি করে ভালো আয় হবে। আগে কাজের খোঁজে ঢাকা বা চট্টগ্রামে যেতে হতো, এখন নিজের জমিতেই বারো মাস কাজ।’
আরেক কৃষক রফিকুল ইসলাম (৪৬) বলেন, ‘আমার বাবা-দাদারা এক ফসলের বেশি কখনও ভাবতে পারেননি। অভাব ছিল নিত্যসঙ্গী। কিন্তু এখন একই জমি থেকে তিনটা ফসল তুলতে পারব। আগের চেয়ে আয় বাড়বে প্রায় তিনগুণ। ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পড়ার খরচ নিয়ে আর চিন্তা করতে হবে না।’
আরও পড়ুন: রংপুরে বাঁশের মই বেয়ে সেতু পারাপার, চরম দুর্ভোগে ৫ গ্রামের মানুষ
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম জাকারিয়া বলেন, উদ্ধার হওয়া সরকারি জমি স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজে লাগানো হবে। প্রকল্পটি প্রমাণ করে যে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব এবং এর সুফল বহুমাত্রিক।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা খালটি স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের জন্য নতুন পরিকল্পনা নেব, যাতে কৃষকরা বহু বছর ধরে পানির স্বাভাবিক প্রবাহের সুবিধা পান এবং জমির উর্বরতা ও উৎপাদন ক্ষমতা সর্বোচ্চ বৃদ্ধি পায়। রাউতনগর খাল এখন শুধু একটি জলপথ নয়, এটি এই অঞ্চলের মানুষের নতুন স্বপ্ন, সচ্ছলতা ও সম্ভাবনার প্রতীক।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) আলমগীর কবির বলেন, ‘খাল খননের ফলে এখানকার কৃষি অর্থনীতি এখন শক্ত ভিত্তি পেয়েছে। এক সময় যেখানে শুধু ধান হতো, এখন সেখানে আলু, গম, ভুট্টা ও সবজি মিলিয়ে একাধিক ফসল হচ্ছে। কৃষকের জীবনমান পাল্টে গেছে।’
৬৯ দিন আগে
অদক্ষ কর্মীদের কারণে ইসলামী ব্যাংকের বার্ষিক ক্ষতি ১৫০০ কোটি টাকা
সাত বছর ধরে এস আলম গ্রুপ-সংশ্লিষ্ট পূর্ববর্তী ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ৮ হাজার ৩৪০ জনের বেশি অদক্ষ ও অর্ধশিক্ষিত কর্মীর জন্য প্রতি বছর ১৫০০ কোটি টাকারও বেশি আর্থিক ক্ষতির বোঝা টানছে দেশের বৃহত্তম বেসরকারি ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি (আইবিবিএল)।
এস আলমের মাধ্যমে পাচার হওয়া বিপুল অর্থের দায় মেটাতে গিয়ে ব্যাংকটি সঠিক পথে ফেরাতে বর্তমানে কঠিন সংগ্রাম করছে কর্তৃপক্ষ।
তদন্তে জানা গেছে, কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বা আনুষ্ঠানিক পরীক্ষা ছাড়াই কেবল মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে পানের দোকানদার, গৃহকর্মী, অটোরিকশা চালক, রাজমিস্ত্রির সহকারী এবং রংমিস্ত্রীসহ বিভিন্ন শ্রেণির ব্যক্তিকে এই বিশাল সংখ্যক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।
অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত এসব কর্মকর্তার পেছনে বছরে ১৫০০ কোটি টাকারও বেশি ব্যয় হওয়ায় গত সাত বছরে ব্যাংকটির ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে। এই বিশাল আর্থিক বোঝা এবং ব্যাংক থেকে ১ লাখ কোটি টাকারও বেশি লোপাট হওয়ার অভিযোগ—সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যৎ আর্থিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখা ‘প্রায় অসম্ভব’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ব্যাংকিং বিশেষজ্ঞ ও পেশাজীবীরা মন্তব্য করেছেন, ইসলামী ব্যাংকের অবৈধ নিয়োগ এবং অর্থ আত্মসাতের কারণে পুরো ব্যাংকিং খাতই ধ্বংসের মুখে পড়েছে।
ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তাদের যোগ্যতা যাচাইয়ের প্রক্রিয়া শুরু হলে দেখা যায়, নিয়োগপ্রাপ্ত এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর অনেকেই জাল সার্টিফিকেট ব্যবহার করে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। ইতিমধ্যে জালিয়াতির প্রমাণ মেলায় অনেককে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং সার্টিফিকেট যাচাই প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
কর্মকর্তাদের বিদ্রোহ ও নিরাপত্তা উদ্বেগ
সম্প্রতি সংকট আরও তীব্র হয়েছে, যখন বর্তমান ব্যাংক ব্যবস্থাপনা তাদের পেশাগত দক্ষতা পুনর্মূল্যায়নের জন্য বিশেষ দক্ষতা যাচাই পরীক্ষা আয়োজন করে। অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রায় ৯০ শতাংশ কর্মকর্তা সেই পরীক্ষা বয়কট করেন, যা ব্যাংক কর্তৃপক্ষের প্রতি তাদের প্রকাশ্য অবাধ্যতা প্রকাশ করে।
এই কর্মকর্তারা ব্যাংকের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার, সংবাদ সম্মেলন এবং বর্তমান ম্যানেজমেন্টকে নানা ধরনের হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। এসব কার্যকলাপের অংশ হিসেবে শুক্রবার ভোরে ব্যাংকের ফেসবুক পেজও হ্যাক করা হয়, যার পেছনে ‘বাইরের লোকের’ ইন্ধন রয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
প্রশাসক বসবে একীভূত হতে যাওয়া সংকটাপন্ন পাঁচ ইসলামী ব্যাংকে
ইসলামী ব্যাংকের সাবেক একজন পরিচালক এ বিষয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, এসব বিদ্রোহী কর্মীর হাতে গ্রাহকের টাকা নিরাপদ নয়। তাদের এই প্রকাশ্য অবাধ্যতা প্রমাণ করে যে ব্যাংকের ভল্ট বা ক্যাশ কাউন্টার তাদের কাছে কোনোভাবেই সুরক্ষিত নয়। তিনি সতর্ক করে বলেন, দ্রুত সিদ্ধান্ত না নিলে ব্যাংকটি ভয়ঙ্কর সংকটে পড়বে।
গ্রাহক সেবার মান তলানিতে
গত সাত বছরে অনিয়ন্ত্রিত নিয়োগের ফলে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই ব্যাংকটি কার্যত আঞ্চলিক ব্যাংকে পরিণত হয়েছে, যেখানে চট্টগ্রাম অঞ্চলের কর্মীদের প্রাধান্য বেশি। এই কর্মীরা অফিসে সবসময় চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতেন এবং বারবার নির্দেশনার পরও নিজেদের পরিবর্তন করেননি। তাদের অদক্ষতা ও উদ্ধত আচরণে গ্রাহক সেবার মান চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ব্যাংকটির সাবেক ওই পরিচালক বলেন, ভাষা বুঝতে না পারা ও সেবার মান নিম্ন হওয়ায় গ্রাহক সেবায় ইসলামী ব্যাংকের যে সুনাম ছিল, তা তলানিতে চলে গেছে এবং গ্রাহকদের মাঝে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।
ক্ষমতার অপব্যবহার ও বিশৃঙ্খলা
ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এস আলম-সমর্থিত পূর্ববর্তী ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অধিকাংশেরই পেশাগত দক্ষতা ছিল না। তারা এস আলমের ক্ষমতা দেখিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেন, ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশনা মানতেন না এবং খেয়ালখুশি মতো চলতেন। নিজেদের পছন্দের চট্টগ্রাম অঞ্চল বা সুবিধাজনক জায়গায় বদলি করতে বাধ্য করতেন।
যেসব ম্যানেজার বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাদের নিয়মের মধ্যে আনতে চেয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে তাদের পোস্টিং বা চাকরি ঝুঁকিতে ফেলা হয়েছে। কর্মকর্তাদের ক্ষমতা ও ঔদ্ধত্যের কারণে পুরো ব্যবস্থাপনা, এমনকি জোনাল হেডরাও আতঙ্কে ছিল।
নির্বাচনের আগে ব্যাংকিং সেক্টরে সাইবার নিরাপত্তা বড় চ্যালেঞ্জ: ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, এই কর্মকর্তারা এখনো এস আলমসহ আগের অবস্থানে ফিরে আসার হুমকি দিচ্ছেন।
সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, “এস আলম একাই পুরো ব্যাংক খাত ধ্বংস করেছেন।”
আমিনুল ইসলাম নামের এক গ্রাহক ব্যক্তিগত ফেসবুক পোস্টে প্রশ্ন তুলেছেন, “পটিয়ার অবৈধ ব্যাংকাররা চাকরি রক্ষার আন্দোলন করেন, কিন্তু আপনাদের ডাকাত সর্দার এস আলম ব্যাংক থেকে যে ১ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে, তা ফিরিয়ে আনার আন্দোলন করেন না কেন?”
৭২ দিন আগে
ঝিনাইদহে ভাঙাচোরা সড়কে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত
অতিবর্ষণ ও অপ্রতুল বরাদ্দের কারণে বেহালদশায় পরিণত হয়েছে ঝিনাইদহসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। ভাঙাচোরা সড়কে কমে যাচ্ছে যান চলাচল, প্রতিনিয়ত যানবাহন ভেঙে রাস্তায় পড়ে থাকছে। এতে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন পরিবহন মালিকরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহ জেলাজুড়ে প্রায় ১৫২ কিলোমিটার সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে সড়ক বিভাগের আওতায় ২৫ কিলোমিটার এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতায় ১২৭ কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে। এতে জেলার কয়েক লাখ মানুষ প্রতিদিন চরম দুর্ভোগে পড়ছেন।
ঝিনাইদহ জেলায় এলজিইডির আওতায় মোট কাঁচা সড়কের দৈর্ঘ্য ৩ হাজার ২৯৪ কিলোমিটার এবং পাকা সড়কের দৈর্ঘ্য ৬ হাজার ৩৮৭ কিলোমিটার।এ ছাড়া সড়ক বিভাগের আওতায় জেলায় ৪০৬ কিলোমিটার রাস্তা দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়া এবং টানা বর্ষণের পানির চাপে বিভিন্ন সড়কের অংশ ভেঙে পড়েছে। অনেক জায়গায় বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় যানবাহন চলাচল কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে।
এলজিইডির ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর মধ্যে সদর উপজেলায় প্রায় ৩০ কিলোমিটার, হরিণাকুন্ডুতে ১৮ কিলোমিটার, কালীগঞ্জে ১২ কিলোমিটার, কোটচাঁদপুরে ১২ কিলোমিটার, মহেশপুরে ২০ কিলোমিটার এবং শৈলকুপায় ৩৫ কিলোমিটার রাস্তা চলাচলের অযোগ্য হয়ে গেছে।
আরও পড়ুন: রংপুরে বাঁশের মই বেয়ে সেতু পারাপার, চরম দুর্ভোগে ৫ গ্রামের মানুষ
সড়ক বিভাগের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঝিনাইদহ-মাগুরা সড়কের হাটগোপালপুর, ডাকবাংলা বাজার, আরাপপুর ইন্টারসেকশন থেকে আলহেরা, ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া সড়কের ভাটই, শেখপাড়া ও গাড়াগঞ্জ সড়ক এবং আমেরচারা-তেলটুপি রাস্তা। এগুলো ভাঙাচোরা হয়ে একেবারেই চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা সড়কের বিভিন্ন অংশে বড় বড় খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। প্রতিদিন হাজারো মানুষ ঝুঁকি নিয়ে এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করছেন। সড়কে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা। শৈলকুপা উপজেলার বিভিন্ন সড়কও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ঝিনাইদহ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের সময় নিয়ন্ত্রক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে সড়কগুলোর বেহালদশা তৈরি হয়েছে। বর্ষণে দুরবস্থা আরও তীব্র হয়েছে। অনেক জায়গায় সড়কের ইট উঠে গিয়ে এখন কাদা-পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে। ঢাকাগামী যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রোগী ও শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি সবচেয়ে বেশি হচ্ছে। দূরপাল্লার গাড়িগুলোর বেশির ভাগ এখন গ্যারেজে মেরামত চলছে।’
যাত্রীসেবা কমিটির নেতা সাব্বির আহমদ জুয়েল জানান, সড়ক সংস্কারের উদ্যোগ দ্রুত না নিলে জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়বে। এতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের মতো প্রতিটি খাত স্থবির হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ঝিনাইদহ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন জানান, সড়ক মেরামতে অতিরিক্ত কোনো বরাদ্দ নেই। প্রতি বছর যেমন আসে, তেমনই এ বছর পাওয়া গেছে। বৃষ্টি কমলে ভাঙাচোরা সড়ক মেরামতের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. জিয়াউদ্দীন জানান, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এখনো কোনো আর্থিক বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। আগের বরাদ্দ দিয়ে ভাঙাচোরা রাস্তা মেরামত করা হচ্ছে।
৭৮ দিন আগে
লালমনিরহাটে শারদীয় দুর্গোৎসবের আমেজ, প্রস্তুত ৪৬৮ মণ্ডপ
আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা ঘিরে লালমনিরহাটে বইছে উৎসবের আমেজ। শহর থেকে গ্রাম—প্রতিটি স্থানেই চলছে জমজমাট প্রস্তুতি। জেলার বিপণিবিতান ও মার্কেটগুলোতে এখন চোখে পড়ছে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়।
আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। যা ২ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হবে।
এ উপলক্ষে দুপুর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত লালমনিরহাট শহরের মার্কেটগুলোতে কেনাকাটায় ব্যস্ত মানুষ। নারীদের শাড়ি, থ্রি-পিস, শিশুদের পোশাক, পুরুষদের শার্ট-প্যান্ট-পাঞ্জাবি, কসমেটিকস, গহনা ও ঘর সাজানোর সামগ্রী কেনার হিড়িক পড়েছে। ঋতুভিত্তিক ছাড় (সিজনাল ডিসকাউন্ট) ও ক্যাশব্যাক সুবিধার কারণে বিক্রি বেড়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, শাহান শপিং কমপ্লেক্স, পাটোয়ারী শপিং কমপ্লেক্স, পৌর শপিং কমপ্লেক্স, ফ্যাশন পার্ক, চয়েস ফ্যাশন, জেলা পরিষদ সুপার মার্কেট, একতা বস্ত্রালয়, সিটি গার্মেন্টস, আড়ং ফেব্রিক্স ও দুলাল গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন বিপণিবিতানে ক্রেতাদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। দর্জির দোকানগুলোতেও ব্যস্ততা বেড়েছে।
শহরের বাটা মোড়ে কেনাকাটা করতে আসা তিলোত্তমা চক্রবর্তী বলেন, বাবার জন্য ২ হাজার টাকায় জামা-প্যান্ট, দাদুর জন্য ৮০০ টাকায় ফতুয়া কিনেছি। মায়ের জন্য শাড়ি ও বোনের জন্য পোশাক কিনতে প্রায় সাড়ে চার হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় দাম কিছুটা বেশি।
আরও পড়ুন: চিকিৎসক সংকটে বন্ধ হয়ে গেল চাঁদপুরের শতবর্ষী দাতব্য চিকিৎসালয়
বিক্রেতারা জানান, চাহিদা অনুযায়ী পোশাক আনার ফলে বিক্রি ভালো হচ্ছে। সন্ধ্যার পর ভিড় বেড়ে যায়।
প্রশাসনের তথ্য মতে, এ বছর জেলায় মোট ৪৬৮টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১৬২টি, আদিতমারীতে ১১৪টি, কালীগঞ্জে ৯১টি, হাতীবান্ধায় ৭২টি এবং পাটগ্রামে ২৯টি মণ্ডপে পূজা হবে।
শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপনে জেলা প্রশাসন ইতোমধ্যে একাধিক মতবিনিময় সভা করেছে। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারাও পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করছেন। বড়বাড়ী বাজারের শিবকালী ও দুর্গা মন্দিরের সভাপতি নিমাই চন্দ্র পাল বলেন, প্রশাসনের সহযোগিতায় আনন্দঘন পরিবেশে পূজার প্রস্তুতি চলছে।
বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্ট লালমনিরহাট সদর উপজেলার আহ্বায়ক হিরালাল রায় বলেন, শারদীয় দুর্গোৎসব শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের নয়, এটি আমাদের সামগ্রিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উৎসব। এই উৎসবকে ঘিরে লালমনিরহাটে অসাম্প্রদায়িক চেতনা, সম্প্রীতি আর ভ্রাতৃত্বের যে সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, তা আমাদের গর্বের বিষয়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই ধারা অটুট রেখে আনন্দ ও নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে এবারের দুর্গোৎসব উদযাপন করা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
আরও পড়ুন: বিলীন হয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ উৎসবের সোনালি দিন
বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্ট লালমনিরহাট সদর উপজেলার সদস্য সচিব ধনঞ্জয় কুমার রায় বলেন, লালমনিরহাটে অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলুর মতো ধর্মনিরপেক্ষ নেতা থাকায় আমাদের বিশ্বাস, দুর্গাপূজার মতো বড় ধর্মীয় উৎসব নির্বিঘ্নে ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হবে। তার আন্তরিক সহযোগিতা ও প্রশাসনের প্রস্তুতি আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই সুন্দর ধারা ভবিষ্যতেও অটুট থাকবে বলে মনে করেন তিনি।
লালমনিরহাট জেলা পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম জানান, প্রতিটি মণ্ডপে পুলিশের বিশেষ নজরদারি থাকবে, পাশাপাশি গোয়েন্দা সদস্যরাও সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করবেন।
এ বিষয়ে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, দুষ্কৃতিকারীদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের কোনো চেষ্টাই সফল হবে না। পূজা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে আমাদের নেতাকর্মীরা একযোগে কাজ করবে।
৮৪ দিন আগে
লালমনিরহাটে যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে এলপিজি সিলিন্ডার, বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা
বিস্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স ছাড়াই লালমনিরহাট জেলায় যেখানে-সেখানে বিক্রি হচ্ছে এলপিজি (তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস) সিলিন্ডার। এতে যে কোনো সময় ভয়াবহ দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শুরু করে উপজেলা শহরের হাট-বাজার—সব জায়গায় অবাধে এ সিলিন্ডার পাওয়া যাচ্ছে। বিস্ফোরক পরিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়াই অনেক দোকানদার ঝুঁকিপূর্ণ এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে হাট-বাজারের চায়ের দোকানে, চুলার পাশে গ্যাস সিলিন্ডার মজুদ রাখা হচ্ছে। পান-সিগারেটের দোকান, খুচরা বাজারের দোকান, এমনকি হার্ডওয়্যার, সিমেন্ট কিংবা মুদি দোকানেও সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে। দোকানিরা কোনো ধরনের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছাড়াই নানা ব্র্যান্ডের সিলিন্ডার রাখছেন। এতে সবসময় আতঙ্কের মধ্যে থাকেন ক্রেতা ও স্থানীয়রা।
তাদের অভিযোগ, প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ছোট-বড় প্রায় সব বাজারেই এই ব্যবসা চলছে। অনেক ব্যবসায়ী এ বিষয়ে সচেতন নন। সামান্য অসাবধানতায় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। বিশেষ করে ট্রাক ও ভ্যানযোগে সিলিন্ডার পরিবহনের সময় ছুড়ে নামানো হয়। এতে গ্যাস লিক হয়ে অগ্নিকাণ্ড বা বিস্ফোরণের ঝুঁকি থেকে যায়।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার খোর্দ্দ বামনডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা নুর আলম বলেন, ‘রাস্তার পাশের চায়ের দোকানে গ্যাস সিলিন্ডার রাখা হয়। দোকানে সবসময় আগুন জ্বলে, কিন্তু গ্যাস রাখার কোনো নিরাপদ ব্যবস্থা নেই। আমরা প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে চলাফেরা করি।’
অন্যদিকে হাতীবান্ধা উপজেলার এক দোকানি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তারা লাইসেন্স ছাড়াই সিলিন্ডার বিক্রি করেন। ট্রাক থেকে মাল কিনে দোকানে মজুদ রাখেন। তবে ঝুঁকি সম্পর্কে তাদের স্পষ্ট ধারণা নেই।
আরও পড়ুন: রংপুরে বাঁশের মই বেয়ে সেতু পারাপার, চরম দুর্ভোগে ৫ গ্রামের মানুষ
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স লালমনিরহাট স্টেশন অফিসার রোকনুজ্জামান বলেন, জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে দাহ্য পদার্থ বোঝাই সিলিন্ডার অবৈধভাবে বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসাটি অবশ্যই একটি নিয়ম ও কাঠামোর মধ্যে হতে হবে। এ জন্য তারা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন বলেও জানান তিনি।
জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, ‘বিস্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স ছাড়া কেউ সিলিন্ডার বিক্রি করতে না পারে, সে জন্য আমরা কড়াকড়ি আরোপ করেছি। নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালানো হচ্ছে। ভবিষ্যতেও এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
এদিকে সচেতন মহল বলছে, এলপিজি সিলিন্ডার একটি অতি দাহ্য পদার্থ। এটি যত্রতত্র বিক্রি হলে যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই প্রশাসনের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের সচেতন হতে হবে। একইসঙ্গে সাধারণ মানুষকেও ঝুঁকি এড়াতে লাইসেন্সধারী অনুমোদিত বিক্রেতার কাছ থেকে সিলিন্ডার কেনার পরামর্শ দেন তারা।
বর্তমানে গৃহস্থালি রান্না থেকে শুরু করে ছোট ব্যবসা পর্যন্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় জ্বালানি হিসেবে এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহৃত হচ্ছে। চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অসাধু ব্যবসায়ীরাও সুযোগ নিচ্ছেন। কিন্তু সঠিক ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে এই চাহিদাই এক সময় সাধারণ মানুষের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
৮৫ দিন আগে
রংপুরে বাঁশের মই বেয়ে সেতু পারাপার, চরম দুর্ভোগে ৫ গ্রামের মানুষ
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বড় হযরতপুর ইউনিয়নের রামনাথেরপাড়া এলাকায় সেতু নির্মাণ শেষ হলেও তৈরি হয়নি দুই পাশের সংযোগ সড়ক (এপ্রোচ রোড)। এতে চলাচলে বিপাকে পড়েছেন আশপাশের পাঁচ গ্রামের মানুষ। বাধ্য হয়ে বাঁশের মই লাগিয়ে সেতুর সঙ্গে রাস্তার অস্থায়ী সংযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
প্রতিদিন শতশত মানুষ, শিক্ষার্থী, এমনকি রোগীও ঝুঁকিপূর্ণ ওই মই বেয়ে চলাচল করছেন। এতে দিন দিনই বাড়ছে দুর্ঘটনার শঙ্কা।
মিঠাপুকুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণের দায়িত্ব পায় মেসার্স মুনতাহা কন্সট্রাকশন। প্রায় এক বছর আগে মূল সেতুর কাজ শেষ হলেও এখনো সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়নি।
সরেজমিনে দেখা যায়, বড় হযরতপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সদুরপাড়া হয়ে একটি হেরিংবন সড়ক রামনাথের পাড়ার সাথে যুক্ত হয়েছে। ওই সড়কের মাত্র ১০০ মিটার দূরেই সেতুটি নির্মাণ করা হলেও সংযোগ সড়ক না থাকায় এখনো তা ব্যবহারের অনুপযোগী। দুই পাশে বাঁশের মই বসিয়ে নামা-ওঠার ব্যবস্থা করেছেন স্থানীয়রা।
ফলে নানকর, ফতেপুর, রামনাথের পাড়া, সদূরপাড়া ও কাঠালী গ্রামের প্রায় ২০-২৫ হাজার মানুষকে প্রতিদিন এভাবে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। শিশু, বৃদ্ধ ও নারীদের ওই মই বেয়ে সেতুতে ওঠানামা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছোট-বড় যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় কৃষকরা কৃষিপণ্য পরিবহনে মারাত্মক সমস্যায় পড়ছেন।ৎ
আরও পড়ুন: খুঁড়ে রাখা সড়কের হাঁটু পানিতে ভাসছে ভেলা, চরম ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ
স্থানীয় বাসিন্দা নিতাই চন্দ্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘১০-১১ মাস আগে ব্রিজের কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু ঠিকাদার রাস্তার কাজ করে নাই। এখন এই ব্রিজ মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। আমরা চরম ভোগান্তিতে আছি।’
দলিল লেখক ধনেশ্বর রায় বলেন, ‘আমাদের ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে না ঠিকমতো। পানি হলে বাঁশের মই একেবারেই পিচ্ছিল হয়ে যায়। তখন আমরা গ্রামের মানুষ মিলে নিজের খরচে সাঁকো বানাই। একটু ভারি জিনিসপত্র নিয়ে তো যাওয়াই যায় না। সরকার ব্রিজ করে দিয়েছে, কিন্তু সংযোগ সড়ক না থাকায় সেটা কোনো কাজে আসছে না।’
এলাকাবাসী জানান, প্রতিদিন শতশত শিক্ষার্থী ওই সেতু দিয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে। ইতোমধ্যে কয়েকজন মই বেয়ে ওঠার সময় পড়ে গিয়ে আহতও হয়েছে। বৃষ্টির সময় মই পিচ্ছিল হয়ে গেলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়। বাধ্য হয়ে অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়।
৮৬ দিন আগে
খুঁড়ে রাখা সড়কের হাঁটু পানিতে ভাসছে ভেলা, চরম ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের কাজ করার জন্য সেটি খুঁড়ে ফেলে রাখা হয়েছে। তাতে বৃষ্টির পানি জমে পরিণত হয়েছে নালায়, হয়ে উঠছে মরণফাঁদ। ভেলায় চড়ে সড়ক পাড়ি দিচ্ছেন স্থানীয়রা। তবে নিত্যদিন দুর্ঘটনা ঘটলেও কর্তৃপক্ষের নজর নেই সংকটময় এ সড়কে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, কালীগঞ্জ উপজেলার চলবলা ইউনিয়নের দুহুলি–জোরগাছ জিসি সড়ক (দৈর্ঘ্য ৫ কিমি ২৫০ মিটার) উন্নয়ন প্রকল্পে ৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়। দরপত্র অনুযায়ী কাজ পায় বরেন্দ্র কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। তারা পারফরমেন্স সিকিউরিটি জমা দিলেও কার্যাদেশ না পাওয়ায় কাজ শুরু করতে পারেনি।
এরই মধ্যে আগস্টের প্রথম সপ্তাহে সড়কের কাজ হাতিয়ে নেয় এক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। এ ঘটনায় এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী ও কালীগঞ্জ থানায় অভিযোগ করা হয়।
আরও পড়ুন: বাঁশের সরু সাঁকোই আট গ্রামের মানুষের ভরসা
পরে প্রশাসন অভিযান চালিয়ে কাজ বন্ধ করে দিলেও আগেই প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়ক খুঁড়ে ফেলা হয়। এতে সড়কটি এখন পুরোপুরি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
স্থানীয়রা জানান, সড়কটি এখন হাঁটু পানির নালায় পরিণত হয়েছে। এতে পায়ে হেঁটে চলাও কষ্টকর। ভ্যান, রিকশা কিংবা অ্যাম্বুলেন্স চলাচল একেবারেই বন্ধ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এ সমস্যার সমাধান ও সড়ক সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন তারা।
৮৯ দিন আগে
১ ট্রিলিয়ন ডলারের সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে এখনো প্রস্তুত নয় বাংলাদেশ
প্রযুক্তির এই অভাবনীয় বিকাশের যুগে অনন্য সম্ভাবনাময় একটি অর্থনৈতিক খাত হয়ে উঠেছে সেমিকন্ডাক্টর। এই খাত ২০৩৩ সালের মধ্যে এক ট্রিলিয়ন ডলারের রাজস্ব আয়ের প্রত্যাশা করছে। অথচ বিনিয়োগহীনতা ও পরিকল্পনার অভাবে বাংলাদেশ এখনো বৈশ্বিক সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে প্রবেশের জন্য প্রস্তুতই নয়।
বর্তমান সরকারসহ আগেও কয়েক দফায় এই শিল্প গড়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও কথার ফুলঝুরি ছাড়া কোনো বাস্তব অগ্রগতি হয়নি। এশিয়াজুড়ে যখন সেমিকন্ডাক্টর শিল্প দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে, তখন বাংলাদেশ এ খাতে বিনিয়োগ আকর্ষণে ব্যর্থ হয়েছে।
গত অর্থবছরে সেমিকন্ডাক্টর খাত থেকে বাংলাদেশে মাত্র ৮ মিলিয়ন ডলার রাজস্ব এসেছে, তাও মূলত ফ্রিল্যান্সার ও বেসরকারি তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগের ফল।
এশিয়ার অন্যান্য দেশে এই শিল্পের বিকাশে সরকারি প্রণোদনা বড় ভূমিকা রেখেছে। অনেক দেশে কর ছাড়, জমি বরাদ্দ, এমনকি ভর্তুকিও দেওয়া হয়েছে বিনিয়োগকারীদের।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ন্যানোম্যাটেরিয়ালস ও সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এএসএমএ হাসিব বলেছেন, এই খাতে সবচেয়ে সফল দেশের মধ্যে রয়েছে তাইওয়ান, চীন, ভারত, ভিয়েতনাম। এসব দেশে সরকারের বড় সহায়তা ছিল। বাংলাদেশকেও সফল হতে হলে কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিক ভর্তুকি ও শুল্কমুক্ত সুবিধা দিতে হবে।
আধুনিক প্রযুক্তির মূলভিত্তি সেমিকন্ডাক্টর
সেমিকন্ডাক্টরকে আধুনিক ইলেকট্রনিক প্রযুক্তির ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি একদিকে পরিবাহক, অন্যদিকে নিরোধক হিসেবে কাজ করে ডিভাইসের কার্যকারিতা নিশ্চিত করে। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র এই উপাদান লাখো কোটি সংখ্যায় একেকটি ডিভাইসের অংশ হয়ে থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক ইতিহাসের শিক্ষক ও অর্থনৈতিক ইতিহাসবিদ ক্রিস্টোফার মিলার তার ২০২২ সালে প্রকাশিত বই চিপ ওয়ার-এ ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, ভবিষ্যতে সেমিকন্ডাক্টরের মূল্য তেলের চেয়েও বেশি হবে।
আরও পড়ুন: সেমিকন্ডাক্টর খাত দেশে কর্মসংস্থানের বড় উৎসে পরিণত হচ্ছে: বিএসআইএ সভাপতি
তিনি বলেছিলেন, আধুনিক যুগে একজন মানুষ স্মার্টফোন, ল্যাপটপ ও স্মার্টওয়াচ ব্যবহার করে দৈনিক ৬০–১১০ বিলিয়ন সেমিকন্ডাক্টর ব্যবহার করছে।
সেমিকন্ডাক্টরের কারণেই সিলিকন ভ্যালি প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের স্বর্ণভূমি হয়ে উঠেছে। প্রথমদিকে সেখানে নিজস্ব চিপ তৈরি হলেও পরে ব্যয় কমাতে প্যাকেজিং, ডিজাইন ও উৎপাদনের বিভিন্ন ধাপ এশিয়ায় স্থানান্তরিত হয়।
অ্যাপলের ক্ষেত্রে দেখা যায়, মেমোরি চিপ আসে জাপান থেকে, রেডিও চিপ ক্যালিফোর্নিয়া থেকে, অডিও চিপ টেক্সাস থেকে; তবে প্রসেসর তৈরি হয় তাইওয়ানে আর স্মার্টফোন সংযোজন হয় চীন ও ভারতে।
১৯৪৭ সালে ট্রানজিস্টরের আবিষ্কার সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের সূচনা ঘটায়। তারপর থেকে এর চাহিদা কেবল বেড়েই চলেছে।
এশিয়ায় সেমিকন্ডাক্টরের দাপট
বিশ্বের সবচেয়ে বড় সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানি তাইওয়ানে অবস্থিত, যারা ১৯৯০-এর দশক থেকেই উৎপাদন শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্রে তাদের মোট বিনিয়োগ এ বছর পৌঁছাবে ১৬৫ বিলিয়ন ডলারে। তাইওয়ানের বার্ষিক উৎপাদন এখন এক কোয়াড্রিলিয়ন সেমিকন্ডাক্টর। দেশটির সরকার ২০৩৩ সাল পর্যন্ত ৯৩০ কোটি ডলার ভর্তুকি ঘোষণা করেছে।
ভিয়েতনাম ২০১০ সালে সেমিকন্ডাক্টর শিল্প চালু করে এবং ইতোমধ্যেই ১ এক হাজার ৫০০ কোটি ডলার রাজস্ব আয় করেছে। দেশটি মূলত প্যাকেজিং, টেস্টিং ও ডিজাইনিংয়ে যুক্ত। ২০২৪ সালে ভিয়েতনাম প্রায় ১৭৪টি এফডিআই প্রকল্প আকর্ষণ করেছে, যার পরিমাণ ছিল ১১৬০ কোটি ডলার। একই বছরে দেশটির সরকার এই খাতে আরও ৫০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে।
আরও পড়ুন: ফোরজির সর্বনিম্ন গতি হবে ১০ এমবিপিএস, সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর
ভারত ১৯৭০-এর দশকে এই শিল্পে প্রবেশ করে। দেশটির লক্ষ্য ২০২৫ সালে সর্বোচ্চ ৫ হাজার কোটি ডলার এবং ২০৩০ সালে ১০ হাজার কোটি ডলার আয়ের। গত আগস্টে ভারত ৭০০ কোটি ডলারের প্রণোদনা ঘোষণা করেছে।
২০২৪ সালে মালয়েশিয়া ১৩ হাজার কোটি ডলারের সেমিকন্ডাক্টর রপ্তানি করেছে, যা ১৯৭০-এর দশক থেকেই গড়ে ওঠা শিল্পের ফল।
চীন ২০২৪ সালে ১৪ হাজার ২০০ কোটি ডলারের সেমিকন্ডাক্টর রপ্তানি করেছে, এর আগে ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করে।
বাংলাদেশের অবস্থান
এদিকে বাংলাদেশ এখনো এই খাতে প্রবেশের কোনো পরিকল্পনাই তৈরি করতে পারেনি।
প্রতিবছর ইলেকট্রিক্যাল-ইলেকট্রনিক্স ও কম্পিউটার সায়েন্সে ডিগ্রিধারী প্রায় ২ লাখ প্রকৌশলী কর্মসংস্থানের সংকটে পড়েন।
অধ্যাপক হাসিব বলেন, যদিও বাংলাদেশ এখনো উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত নয়, তবে প্যাকেজিং বাজারে প্রবেশ করতে পারে। কম খরচের কারণে অনেক দেশ বিনিয়োগে আগ্রহী হবে।
২০২৩ সালে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) পাঁচ বছরের মধ্যে ৩০০ কোটি ডলারের রপ্তানি লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল। আগের সরকার একটি পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।
সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারকে প্রতিস্থাপন করা বর্তমান সরকার স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নিয়ে কিছু কৌশল গ্রহণ করেছে।
বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সভাপতি ফজলে শামীম এহসান জানান, বর্তমানে বিদেশি বিনিয়োগ মূলত প্রচলিত খাতগুলোতে সীমিত। গার্মেন্টসের চেয়ে সেমিকন্ডাক্টরে দেশে বিনিয়োগ বেশি প্রয়োজন। এতে একক পণ্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমবে এবং দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি হবে। এজন্য আলাদা বিনিয়োগ মডেল দরকার বলে মনে করেন তিনি।
বিডার ব্যবসা উন্নয়ন বিভাগের প্রধান নাহিয়ান রহমান রোচি মনে করেন, সেমিকন্ডাক্টর বাংলাদেশের জন্য একেবারেই নতুন খাত। বিনিয়োগ আকর্ষণে একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও প্রস্তাব দরকার।
তিনি জানান, প্রতিবন্ধকতা দূর করার উদ্যোগ চলছে। বিডা এই খাতে বড় বিনিয়োগ সম্ভাবনা দেখছে বলেও উল্লেখ করেন বিডার এই কর্মকর্তা।
৯০ দিন আগে
শাহজালাল বিমানবন্দর: নতুন টার্মিনালে আন্তর্জাতিক মানের সেবা নিশ্চিত করার আশ্বাস দিলেন উপদেষ্টা
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের (এইচএসআইএ) নতুন টার্মিনালে যাত্রীসেবার মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত করা হবে বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন বিষয়ক উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন। শিগগিরই বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছাতে সক্ষম হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) উপদেষ্টা বশির ইউএনবি জানান, সেবার মান নিশ্চিত করতে সরকার নবনির্মিত তৃতীয় টার্মিনালে বিমানের পাশাপাশি আরেকটি আন্তর্জাতিক গ্রাউন্ড হ্যান্ডলারকে অনুমোদন দিতে পারে।
তিনি বলেন, 'গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং বিষয়ে আমরা ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং শিগগিরই তা প্রকাশ করব।' আগামী সপ্তাহেই এ ঘোষণা আসতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, 'আমরা একটি প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি করতে চাই। আমাদের লক্ষ্য হলো সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে সেবা উন্নত করা। আমরা সমন্বিত একটি পদ্ধতি চাই।'
বিমান প্রতিযোগিতাহীন হয়ে যাক সেটি না চাইলেও যাত্রীসেবাও যাতে নষ্ট না হয় সেদিকেও জোর দিয়েছেন উপদেষ্টা।
উপদেষ্টা আরও বলেন, বাংলাদেশ হয়তো এখনই সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছাতে পারবে না, কিন্তু নতুন টার্মিনালে অন্তত মর্যাদাপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য মানের সেবা নিশ্চিত করতে হবে। তাই তারা প্রতিযোগিতা আনার পরিকল্পনা করছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আরও পড়ুন: সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্রি ওয়াইফাই সেবা চালু
এদিকে, নতুন নির্মিত তৃতীয় টার্মিনালের পরিচালনা নিয়ে সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশ (সিএএবি) এবং একটি জাপানি কনসোর্টিয়ামের মধ্যে তিনদিনব্যাপী আলোচনার চূড়ান্ত পর্ব বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে।
প্রথম দুটি অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেছেন সিএএবি চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক, আর উপদেষ্টা বশির শেষ দিনের আলোচনায় সভাপতিত্ব করবেন। লেনদেন উপদেষ্টা হিসেবে আন্তর্জাতিক অর্থ করপোরেশন (আইএফসি) সহ সব স্টেকহোল্ডারের প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন।
সিএএবি সূত্র জানায়, বিমানের জন্য দুই বছরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং দায়িত্ব দেওয়ার নীতি সিদ্ধান্ত জাপানি কনসোর্টিয়ামের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি করেছে। তারা আরও বিস্তৃত পরিচালন ও রাজস্ব ভাগাভাগির অধিকার চাইছে।
পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ব্যবস্থায় বিমানের সাথে টার্মিনাল পরিচালনাকারী বেসরকারি অংশীদারের মধ্যে একটি সার্ভিস লেভেল এগ্রিমেন্ট (এসএলএ) স্বাক্ষরিত হবে।
পিপিপির ভাষ্যে, যদি বিমান দুই বছরের মধ্যে কর্মদক্ষতার মানদণ্ড পূরণে ব্যর্থ হয়, তবে অপারেটর বিমানের পাশাপাশি একটি স্বনামধন্য আন্তর্জাতিক গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কোম্পানিকে নিয়োগ দিতে পারবে।
গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং দীর্ঘদিন ধরে বিতর্কিত বিষয়। সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারও বিমানের সেবার মান নিয়ে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর উদ্বেগের পর একটি জাপানি কোম্পানিকে আনার ইঙ্গিত দিয়েছিল।
বর্তমানে বাংলাদেশে সব বিমানবন্দরে একমাত্র গ্রাউন্ড হ্যান্ডলার হিসেবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কাজ করছে। প্রায় ৪০টি আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্সের জন্য সেবা দিয়ে বছরে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ কোটি টাকা আয় করছে।
কর্মকর্তাদের দাবি, নতুন সরঞ্জাম ও জনবল যুক্ত হওয়ায় সেবার মান উন্নত হয়েছে। তবে যাত্রী ও এয়ারলাইনগুলো এখনও দেরি, অদক্ষতা এবং মাঝেমধ্যে চুরির অভিযোগ তোলে।
কিছু বিদেশি এয়ারলাইন্স বিমানের ফি দেওয়ার পাশাপাশি নিজেদের কর্মী নিয়োগ করে সেবার মান বজায় রাখার চেষ্টা করছে।
তবে বিমানের কর্মকর্তারা আত্মবিশ্বাসী। তাদের দাবি, ২০২৩ সালে তারা ৫৭ হাজারেরও বেশি ফ্লাইট পরিচালনা করেছে এবং গত এক বছরে ৩ হাজার ৬০০ নতুন গ্রাউন্ড সাপোর্ট ইকুইপমেন্ট কেনায় এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। আরও ক্রয় ও জনবল নিয়োগ চলছে।
বিমানের এক মুখপাত্র বলেন, বিমানের গ্রাউন্ড সাপোর্ট ইকুইপমেন্টে ইতোমধ্যে বিভিন্ন ধরনের যন্ত্র যুক্ত হয়েছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে প্রায় ৭০ প্রকার নতুন সরঞ্জাম যুক্ত হবে।
তবে আন্তর্জাতিক কোম্পানিকে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ছেড়ে দিলে 'রাষ্ট্রীয় রাজস্বে বড় ক্ষতি' হবে বলেও সতর্ক করেন তিনি।
আরও পড়ুন: কক্সবাজার বিমানবন্দরে ক্রিকেট ব্যাটের ভেতরে ইয়াবা, আটক ২
জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) বড় অঙ্কের অর্থায়নে ২১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এইচএসআইএ-এর তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে বার্ষিক যাত্রী ধারণক্ষমতা ২ কোটি ৪০ লাখে উন্নীত হবে এবং কার্গো পরিবহন ক্ষমতা দাঁড়াবে ১২ লাখ টনে।
২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার আয়তনের এ টার্মিনালে থাকবে ২৬টি বোর্ডিং ব্রিজ, ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার, ৬৬টি প্রস্থান ইমিগ্রেশন ডেস্ক, ৫৯টি আগমন ইমিগ্রেশন ডেস্ক এবং ৩টি ভিআইপি ইমিগ্রেশন ডেস্ক।
৯৯ দিন আগে
জ্বালানি তেল না থাকায় ফাঁকা রংপুরের ডিপো
চট্টগ্রাম থেকে রংপুরের তিনটি ডিপোতে নিয়মিত তেল সরবরাহ না হওয়ায় রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলায় দেখা দিয়েছে তীব্র জ্বালানি তেলের সংকট। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রেলওয়ের ইঞ্জিন সংকটই এর প্রধান কারণ।
রংপুরে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ডিপো থেকে রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও নীলফামারীতে তেল সরবরাহ হয়ে থাকে। গত আগস্ট মাসে মাসিক চাহিদা আড়াই কোটি লিটার থাকলেও সরবরাহ হয়েছে প্রায় ৩০ লাখ লিটার। গত ছয় মাস ধরেই চলছে এমন পরিস্থিতি। ফলে তিন ডিপোর অধীনে থাকা পেট্রলপাম্প মালিক ও এজেন্টদের চাহিদামতো তেল সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।
পেট্রোলিয়াম ডিলার্স ডিস্ট্রিবিউটরস এজেন্ট অ্যান্ড পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা জানান, রেলওয়ের পর্যাপ্ত ইঞ্জিন না থাকায় চট্টগ্রাম থেকে তেলবাহী ওয়াগন সময়মতো ছাড়তে পারছে না। এ কারণে রংপুর ডিপোগুলো প্রায় ফাঁকা পড়ে আছে।
রংপুর জেলা পেট্রোলিয়াম ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আজিজুর ইসলাম মিন্টু বলেন, ‘পাঁচ মাস ধরে রংপুরের ডিপোতে চাহিদার তুলনায় অনেক কম তেল আসছে। রংপুর থেকে আমরা তেল পাচ্ছি না। আমরা চাই, আগের মতো নিয়মিত এখানে তেল সরবরাহ হোক। এভাবে তেল আসা বন্ধ থাকলে কৃষি, কলকারখানা থেকে শুরু করে সব খাতে মারাত্মক প্রভাব পড়বে।’
রংপুর নগরীর ফিলিং স্টেশনের মালিক মঞ্জুর আজাদ বলেন, রংপুর ডিপোতে তেল না থাকায় পার্বতীপুর ও বাঘাবাড়ী থেকে তেল আনতে হচ্ছে। এতে পরিবহন খরচ দ্বিগুণ হচ্ছে এবং সিরিয়াল মেনে তেল সংগ্রহ করতে দু–তিন দিন সময় লাগছে। এতে শুধু ব্যবসায়ী নয়; কৃষি ও পরিবহন খাতও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
নগরীর চারতলা মোড় এলাকার মিজান ফিলিং স্টেশনের মালিক মিজানুর রহমান বলেন, ‘রংপুরের ডিপো থেকে তেল পাওয়া যাচ্ছে না। ট্রেনের ওয়াগনে করে তেল না আসায় তেলের সংকট রয়েছে। আমরা চট্টগ্রাম, পার্বতীপুরসহ বিভিন্ন স্থান থেকে তেল নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। এতে করে আমাদের খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। রংপুর ডিপো থেকে তেল পেলে খরচ অনেক কম হতো।’
আরও পড়ুন: নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বাংলাদেশের যথাযথ স্থানান্তরের আহ্বান জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের
এদিকে, জ্বালানি তেল পর্যাপ্ত না আসায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন এই খাতের শ্রমিকেরা। এ প্রসঙ্গে রংপুর ট্যাংকলরি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আলাউল মিয়া লাল্লু বলেন, ‘ডিপোতে তেল না থাকায় ছয় শতাধিক শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছে। তাদের জীবন এখন সংকটে। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার চিঠি দিয়েছি। কোনো কাজ হয়নি। দ্রুত নিয়মিত সরবরাহ না হলে আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।’
রংপুরে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি তেল সরবরাহের জন্য পেট্রোলিয়াম ডিলার্স ডিস্ট্রিবিউটরস এজেন্ট অ্যান্ড পেট্রলপাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন রংপুর জেলার পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর এবং রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে এতেও কোনো কাজ হয়নি।
মেঘনা পেট্রোলিয়াম ডিপোর ইনচার্জ জাকির হোসেন পাটোয়ারী বলেন, ‘চট্টগ্রামে আমাদের পর্যাপ্ত তেল রয়েছে। সেখান থেকে তেল পাঠাতে কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা হচ্ছে, লোকোমোটিভ ইঞ্জিনের কারণে তেল পাঠাতে পারছে না। আমাদের মাসে ২৫ লাখ লিটার চাহিদা থাকলেও আমরা পাচ্ছি ৫ লাখ লিটার। এ সংকট নিরসনের জন্য হেড অফিস থেকে ডিজিএম, জিএম স্যাররা রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। রেল থেকে ইঞ্জিন সংকটের কথাই বলা হচ্ছে।’
পদ্মার পেট্রোলিয়াম ডিপোর ইনচার্জ আমিনুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দুটি ইঞ্জিন ছিল। আগে মাসে ৮ থেকে ১০ বার তেল আসত। দুটি থেকে একটি করল, তাতেও ৪ থেকে ৫ বার তেল আসত। কিন্তু সেই ইঞ্জিনও কেটে নিয়ে গেছে; যার কারণে এই গ্যাপ হয়েছে। রংপুরে তিন ডিপো মিলে প্রায় আড়াই কোটি লিটার তেলের চাহিদা। কিন্তু আমরা পাচ্ছি ৩০ লাখ লিটারের মতো।’
জ্বালানি তেল সংকটের কথা স্বীকার করে রংপুরের জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল বলেন, ইঞ্জিন সংকটের কারণে চট্টগ্রাম থেকে তেল সরবরাহ বিঘ্ন হচ্ছে। এক সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
৯৯ দিন আগে