বিশেষ সংবাদ
বাঁশের সরু সাঁকোই আট গ্রামের মানুষের ভরসা
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে আটটি গ্রামের ১০ হাজারের বেশি মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেছে একটি সরু বাঁশের সাঁকো।
উপজেলার ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নের নীলকমল নদীর ওপর নির্মিত এই সাঁকো ব্যবহার করছেন বালাটারী, চন্দ্রখানা, জেলেপাড়া, কুমারপাড়া, বামনটারী, আবাসন, বৈরাগিপাড়া ও দাশিয়ারছড়ার মানুষ। এতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা।
স্থানীয়রা জানান, গত তিন বছর ধরে ঝুঁকি নিয়ে তারা প্রতিদিন এই সাঁকো দিয়ে পার হচ্ছেন। আগে এখানে একটি কাঠের সেতু ছিল, কিন্তু সেটি ভেঙে যাওয়ার পর এ দুর্ভোগ শুরু হয়। জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের লোকজন এসে আশ্বাস দিলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
তাদের অভিযোগ, এ ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো থেকে পড়ে অনেকেই আহত হয়েছেন। এক যুবক চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রাণও হারিয়েছেন। তারপরও নিরুপায় গ্রামবাসী প্রতিদিন সাঁকোটি ব্যবহার করছেন। তবে ভারী মালপত্র আনা-নেওয়ার জন্য তাদের নৌকার ওপর নির্ভর করতে হয়।
আরও পড়ুন: ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় চট্টগ্রামের মেগা সড়ক প্রকল্পে বিলম্ব
৬০ বছর বয়সী কৃষক এহসান আলী জানান, এক বছর আগে তার ছেলে আতিকুর রহমান (৩৬) সাঁকো থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন এবং এক মাস চিকিৎসার পর মারা যান।
কান্নাজড়ানো কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমি নিজেও দুইবার এই সাঁকো থেকে পড়ে আহত হয়েছি। প্রতিবার শুধু প্রতিশ্রুতি পাই, সেতু পাই না। কবে নীলকমলের ওপর একটি সেতু হবে, আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না।’
১০০ দিন আগে
রোহিঙ্গাদের তবহিল নভেম্বরের মধ্যেই ফুরাবে, বিশ্বজুড়ে জরুরি পদক্ষেপের আহ্বান ডব্লিউএফপির
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) উপপরিচালক ও প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) কার্ল স্কাউ সতর্ক করে বলেছেন, নভেম্বরের মধ্যেই রোহিঙ্গাদের জন্য সংস্থাটির তহবিল ফুরিয়ে যাবে। এ অবস্থায় রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর মানুষের জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে বিশ্বব্যাপী সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেছেন, ‘রোহিঙ্গাদের সামনে আর কোনো পথ খোলা নেই। তাদের কাজ করার সুযোগ নেই, স্থানীয় সমাজে মেশার সুযোগ নেই, আবার নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে রাখাইনেও ফিরে যাওয়াও উপায় নেই। ফলে তারা আমাদের সহায়তার ওপর শতভাগ নির্ভরশীল।’
সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরকালে ইউএনবিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, ‘অভিজ্ঞতা থেকে আমরা জানি, যখন সহায়তা দেওয়া বন্ধ করা কিংবা কমিয়ে আনা হয়, তখন বাধ্য হয়ে মানুষ নেতিবাচক উপায়ে বেঁচে থাকার পথ খোঁজে।’
ফুরিয়ে আসছে তহবিল
সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশের মানুষের উদারতা ও কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সহযোগিতার প্রশংসা করেন স্কাউ। তিনি বলেন, ‘আমরা সর্বদা আশ্রয়দাতা সম্প্রদায়গুলোতে বিনিয়োগ করি। রোহিঙ্গাদের জন্য যে খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে, তা কক্সবাজারসহ বাংলাদেশ থেকেই সংগ্রহ করা হয় যাতে এ দেশের অর্থনীতিও উপকৃত হয়।’
‘কিন্তু আমাদের তহবিল ফুরিয়ে আসছে। নভেম্বরের পর এই সহায়তা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার মতো তহবিল আমাদের হাতে নেই।’
এ কারণেই বাংলাদেশের সরকার, অংশীদার, দাতা ও ডব্লিউএফপির মাঠকর্মীদের সঙ্গে দেখা করতে বাংলাদেশ সফর করছেন বলে জানান সংস্থাটির উপপরিচালক।
তিনি বলেন, ‘মাসিক ভিত্তিতে আমরা ক্যাম্পের সব মানুষের জন্য খাদ্য সরবরাহ করি। এটি বন্ধ হলে মানুষ যে শুধু ক্ষুধার কারণেই ভুগবে তা নয়, বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক প্রভাবও পড়বে। জীবীকার সন্ধানে অনেকে ক্যাম্প ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হবেন।’
১০০ দিন আগে
নির্বাচনী প্রচারে এআইয়ের অপপ্রয়োগ, পোস্টার ও ড্রোন ব্যবহারে ইসির নিষেধাজ্ঞা
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা সংশোধন করে চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
এতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের পাশাপাশি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে কোনো ধরনের কনটেন্ট তৈরি ও প্রচার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে নির্বাচনী প্রচার ও ভোটগ্রহণের সময় পোস্টার, ড্রোন, কোয়াডকপ্টার বা এ জাতীয় যন্ত্র ব্যবহারের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচনী প্রচারসামগ্রীতে পলিথিন ও রেক্সিনের ব্যবহারেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) এই আচরণবিধি চূড়ান্ত করে ইসি। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনের আগেই এ বিধান কার্যকর হবে।
এআই ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহার
আচরণবিধি অনুযায়ী, নির্বাচনী প্রচারসহ যেকোনো বিষয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) অসৎ বা ক্ষতিকর উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে না।
প্রার্থী, তার এজেন্ট বা দলীয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নাম, অ্যাকাউন্ট আইডি, ই-মেইল আইডি এবং অন্যান্য পরিচয়-সংক্রান্ত তথ্য প্রচার শুরুর আগে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে হবে।
আরও পড়ুন: নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না হলে আ. লীগ নির্বাচন করতে পারবে না: ইসি সানাউল্লাহ
তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘৃণামূলক বক্তব্য, ভ্রান্ত তথ্য, কারও মুখ বিকৃত করা, মিথ্যা তথ্য প্রচারসহ ক্ষতিকর কনটেন্ট তৈরি বা প্রচার কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে ইসি। বিশেষ করে প্রতিপক্ষ, নারী, সংখ্যালঘু বা অন্য কোনো গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে ঘৃণামূলক, ব্যক্তিগত আক্রমণ বা উসকানিমূলক ভাষা ব্যবহার করা যাবে না।
আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘনের ঘটনায় শাস্তি বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সংশোধিত বিধিমালায় প্রার্থিতা বাতিলের বিধান যুক্ত করা হয়েছে এবং জরিমানার পরিমাণ ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে দেড় লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে আগের ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার (ইসি) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নির্বাচনী প্রচারে এআই ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এমন কোনো ব্যবহার করা যাবে না, যা আচরণবিধি লঙ্ঘন করে।
তিনি আরও জানান, এই সংশোধিত বিধিমালা আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে।
পোস্টার ও ব্যানারে নিষেধাজ্ঞা
আচরণবিধি অনুযায়ী, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারে পোস্টার ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়াও রেক্সিন, পলিথিন, প্লাস্টিক, পিভিসি বা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর উপাদানে তৈরি কোনো ধরনের লিফলেট, হ্যান্ডবিল, ফেস্টুন বা ব্যানার ব্যবহারেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: নির্বাচনে ‘না ভোট’ দেওয়ার সুযোগ রাখার খসড়া আইন ইসির
একজন প্রার্থী কোনো নির্বাচনী এলাকায় সর্বোচ্চ ২০টি বিলবোর্ড স্থাপন করতে পারবেন। প্রতিটি বিলবোর্ডের আকার সর্বোচ্চ ১৬ ফুট বাই ৯ ফুট হতে পারবে।
ভিভিআইপি-সংক্রান্ত বিধান
আচরণবিধিতে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, উপমন্ত্রী, সংসদ সদস্য, মেয়রসহ সাংবিধানিক পদে থাকা ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, উপদেষ্টা বা সমপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (ভিভিআইপি) হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। এই শ্রেণির ব্যক্তিদের নির্বাচনী প্রচারে অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রার্থীরা কোনো প্রতিষ্ঠান, সংগঠন বা সমিতি থেকে সংবর্ধনা নিতে পারবেন না।
ড্রোন, হেলিকপ্টার ও লাউড স্পিকার
নির্বাচনী প্রচার ও ভোট গ্রহণের সময় কোনো ধরনের ড্রোন, কোয়াডকপ্টার বা এ ধরনের যন্ত্র ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
সাধারণ সম্পাদক বা সমপর্যায়ের ব্যক্তিরা নির্বাচনী প্রচারে হেলিকপ্টার ব্যবহার করতে পারবেন, তবে হেলিকপ্টার থেকে কোনো লিফলেট, ব্যানার বা প্রচারসামগ্রী বিতরণ বা ঝোলানো যাবে না। এর আগে কেবল দলীয় প্রধান বা সমপর্যায়ের নেতাদেরই হেলিকপ্টার ব্যবহারের অনুমতি ছিল।
মাইক বা লাউড স্পিকারের শব্দ ৬০ ডেসিবেলের বেশি হতে পারবে না। প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মাইক ব্যবহার করার অনুমতি থাকবে।
আচরণবিধি ভঙ্গ করলে প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল পর্যন্ত হতে পারে।
আরও পড়ুন: নির্বাচনের প্রস্তুতি পুরোদমে চলছে: সিইসি নাসির
ইসি আবদুর রহমানেল মাছউদ সাংবাদিকদের জানান, আচরণবিধি ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। শাস্তি আরও কঠোর করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
ইসি মাছউদ আরও বলেন, এই আচরণবিধি চূড়ান্ত এবং এ বিষয়ে সরকারের আলাদা অনুমোদন প্রয়োজন নেই।
১০২ দিন আগে
চিকিৎসক সংকটে বন্ধ হয়ে গেল চাঁদপুরের শতবর্ষী দাতব্য চিকিৎসালয়
অবশেষে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ‘প্রাথমিক চিকিৎসার বাতিঘর’ খ্যাত চাঁদপুর পৌরসভার শতবর্ষী দাতব্য চিকিৎসালয়। চিকিৎসক সংকটের কারণে এটি আপাতত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত ১ মাস ধরে বন্ধ রাখা রয়েছে মেঘনাপাড়ে অবস্থিত গরীবের চিকিৎসাসেবার এই অন্যতম এই কেন্দ্রটি। এতে করে নদীভাঙন-কবলিত ও চরম দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করা মানুষেরা আরও বিপাকে পড়েছেন। ফলে স্থানীয়দের মাঝে দেখা দিয়েছে চাপা ক্ষোভ। ১০৫ বছর পুরনো এই চিকিৎসাকেন্দ্রটি ফের চালু করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, চাঁদপুর জেলার প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা পুরানবাজারের দরিদ্র ও অসহায় মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে একশ বছরের বেশি সময় আগে প্রতিষ্ঠা করা হয় পৌর দাতব্য চিকিৎসালয়টি।
ব্রিটিশ সরকার, পাকিস্তান সরকার এবং স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের শাসনামলে সগৌরবে এই প্রতিষ্ঠানটি নামমাত্র মূল্যে (২ টাকা) মানুষকে চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ সরবরাহ করে আসছিল। সবশেষ চাঁদপুর পৌরসভার অর্থায়নে মাত্র ২ টাকার টিকিটে চিকিৎসা ও ওষুধ দিয়ে ‘মানবতার বাতিঘর’ হিসেবে দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে ব্যাপক সুনাম কুড়ায় প্রতিষ্ঠানটি।
আরও পড়ুন: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে ফি আছে, চিকিৎসা নেই!
হাবিবুর রহমানসহ (৭৫) স্থানীয় কয়েকজন বর্ষীয়ানের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রথম দিকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটিতে অস্ত্রোপচারসহ গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা দেওয়া হতো। পরবর্তীতে অর্থ সংকটে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকলেও পৌরসভার ২ জন স্বাস্থ্য সহকারী দিয়ে রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসার কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া হচ্ছিল। এতে হতদরিদ্র মানুষের ছোটখাট অসুখের চিকিৎসার আশ্রয়স্থল হয়ে উঠে দাতব্য চিকিৎসালয়টি। দৈনিক প্রায় ৮০/৯০ জন রোগী এখানে সেবা নিতে আসতেন বলে জানান তারা।
তবে হঠাৎ করেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সংকটের কারণ দেখিয়ে গত মাসে চিকিৎসালয়টি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে দূর-দূরান্ত থেকে আসা হতদরিদ্র মানুষজন পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে।
১০৩ দিন আগে
ভরা মৌসুমেও খুলনায় ধরাছোঁয়ার বাইরে ইলিশের দাম
মাছের রাজা ইলিশ, স্বাদে এই মাসের তুলনা মেলা ভার। তবে ভরা মৌসুমেও এবার সেভাবে ইলিশের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না খুলনার বাজারে, যা-ও আসছে তার দাম ক্রেতাদের নাাগলের বাইরে। গত বছরের তুলনায় এবার খুলনার বাজারগুলোতে ইলিশের দাম কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানা গেছে।
ইলিশ ঘাট বলে পরিচিত ভৈরব নদের পাড়ের ৫ নম্বর ঘাট এবং রুপসা মাছ ঘাটে গত দুদিন সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইলিশের সরবরাহ নেই বললেই চলে। কেবল কিছু জাটকা ইলিশ এ সময় চোখে পড়ে।
ইলিশ মাছের আড়তদার সাঈদ আলী বলেন, আমার বাবা ও দাদা ইলিশ মাছের আড়তদার ছিলেন। প্রায় ৭০/৮০ বছরের ব্যবসা আমাদের। কিন্তু কখনো এ বছরের মতো ইলিশের আকাল পড়েনি। আমরা সাধারণত খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছেই ইলিশ বিক্রি করি, কিন্তু দামের কারণে তারা এখন অন্য মাছের ব্যবসা করছেন।
খুলনার নিউমার্কেটে কাঁচাবাজারের সামনে থেকে রিকশাচালক জালাল বলেন, ‘ইলিশ এখন শুধু বাজারের দোকানেই সাজানো দেখি, কিন্তু কিনে খাওয়া আর হয় না। দুই বছর আগে ছোট মেয়েটা বায়না ধরেছিল, তখন সাড়ে ৫০০ টাকা দিয়ে চারটা জাটকা ইলিশ কিনেছিলাম। এরপর আর কেনা হয়নি। এখন বাজারে যাই, শুধু দূর থেকে দেখি। যখন অন্যরা বাজার করে ফিরে যায়, তখন তাদের কাছে দাম শুনি; কেনা আর হয়ে ওঠে না।’
আরও পড়ুন: কিছুতেই নাগালে আসছে না সবজির দাম
তিনি আরও বলেন, ‘সারা দিন রিকশা চালিয়ে যে কয়টা টাকা হাতে আসে, তা দিয়েই পাঁচজনের সংসার চালাতে হয়। ঘরভাড়া, বাজারঘাট, দুই মেয়ে আর ছেলের খরচ—সব মিলিয়ে মাস পার করতে কষ্ট হয়ে যায়। সেখানে ইলিশ মাছ কিনে খাওয়ার মতো বাড়তি পয়সা কই?’
নগরীর নিউমার্কেট ও ময়লাপোতা বাজার ঘুরে দেখা যায়, ‘এক কেজির উপরে ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৭০০ টাকা দরে, কেজির নিচে ৭০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২০০ টাকা দরে এবং ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৯০০ টাকা আর ৪০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১ হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
নিউমার্কেটে বাজার করতে আসা মাসুমা লিমা নামে এক নারী বলেন, ‘ভরা মৌসুমেও সাধারণ ক্রেতার নাগালের বাইরে ইলিশের দাম। তাই সাধ থাকলেও এখনো মুখে তোলা হয়নি মাছটি। মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য হিসেবে সাধ্যের মধ্যে বাজার সামলানোই কঠিন হয়ে পড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘নদীর একটু বড় ইলিশ বছরে এক-দুবার খেতে পারি। কিন্তু সেটাও আমাদের জন্য কষ্টকর হয়ে যায়। সিজনের (মৌসুম) সময়ও যদি এমন দাম থাকে, তাহলে আমরা খাবো কীভাবে? এখন ফেসবুকে ছবি দেখেই স্বাদ মেটাতে হচ্ছে।’
ইলিশের দাম বেশি হওয়ায় বাজারে ক্রেতাদের সাড়া মিলছে না বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
আরও পড়ুন: দাম কমেছে ইলিশের, উর্ধ্বমুখী সবজির বাজার
নিউমার্কেটের মাছ ব্যবসায়ী বাদশা মোড়ল বলেন, ‘এখনকার বাজারে মাছের যে দাম তাতে দোকানে মাছ তোলা আমাদের জন্য ভীষণ কঠিন হয়ে পড়েছে। ক্রেতারা আগের মতো আর আসেন না। সারা দিন বসে থেকেও হাতেগোনা কয়েকটি মাছ বিক্রি হয়। সেই টাকায় মাছ কেনার খরচ, দোকান পর্যন্ত আনা-নেওয়ার ভাড়া আর কর্মচারীর বেতন মিটিয়ে কিছুই হাতে থাকে না। অথচ আমাদের সংসার চলে মাছ বিক্রি করে। মৌসুমের সময়টাতেও আগের মতো লাভ হয় না, দুই-চারটা মাছ বিক্রি করেও তেমন লাভ থাকে না। এভাবে দিন চালানো কঠিন।’
আরেক মাছ ব্যবসায়ী প্রান্ত বলেন, ‘সারা দিনে পাঁচ-সাত জন ক্রেতা এলেও দুই-একজন দাম শুনে চলে যান। ফলে ইলিশের প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। অনেক সময় মাছ দুই থেকে চার দিনের বেশি দোকানে পড়ে থাকে, তখন বাধ্য হয়ে কেনা দামে বা তার চেয়ে কমে বিক্রি করতে হয়। সব মিলিয়ে এখন বাজারে ইলিশের ব্যবসা করা বেশ কষ্টকর।’
১০৪ দিন আগে
প্রতিকূল আবহাওয়ার নেতিবাচক প্রভাবে বিপর্যস্ত জনজীবন
মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত ১৩ বার সমুদ্র বন্দরসমূহকে সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। টানা নিম্নচাপ ও সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর কারণে সৃষ্ট বৈরি আবহাওয়ার কারণে প্রায়ই সমুদ্রবন্দরগুলোতে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়ে থাকে।
আবহাওয়ার এই অবনতির কারণে একদিকে যেমন বাংলাদেশের দুর্যোগঝুঁকিতে থাকার বিষয়টি সামনে এসেছে, তেমনি সারা দেশেই এর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
বিরুপ আবহাওয়ার কারণে উপকূলে বারবার আছড়ে পড়ছে জোয়ারের প্রচণ্ড ঢেউ, নদনদীর পানি ফুলে উঠে অতিক্রম করেছে বিপৎসীমা। আবার কখনো কখনো ভারী বৃষ্টিপাতে জনজীবনে নেমে আসে চরম দুর্ভোগ। বিরূপ আবহাওয়ার এসব প্রত্যক্ষ প্রভাবে আচমকাই জনমানুষের জীবনযাত্রা ও ব্যবসা-বাণিজ্যে বিঘ্ন ঘটছে।
এ তো গেল প্রত্যক্ষ প্রভাবের কথা, জোয়ারের পানি কিংবা ভারী বৃষ্টিপাতে কৃষকের ফসল যখন তলিয়ে যায়, তখন নগরবাসীকে সবজি কিনতে গুনতে হয় বাড়তি টাকা। আকস্মিক বন্যায় এ বছরও বহু মানুষের ঘরবাড়ি তলিয়েছে, ভেসে গেছে চাষের মাছ, গবাদি পশুসহ আরও অনেক কিছু।
আবার লঘুচাপ সৃষ্টির কারণে মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে প্রায়ই উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়ে থাকে। লঘুচাপ থাকাকালে জেলেদের গভীর সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়।
এসবের পরোক্ষ প্রভাবে সারা দেশের বাজারগুলোতে বাড়ে মূল্যস্ফীতি। বিশেষত ইলিশ ও সবজির দাম চলে যায় নাগালের বাইরে। আর এসব প্রভাবই বর্তমানে দেশের কাঁচাবাজারগুলোতে বিরাজমান। কাঁচা খাদ্যদ্রব্য কিনতে মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে।
পটুয়াখালীর মহিপুরের মাছ ব্যবসায়ী আল আমিন বলেন, খারাপ আবহাওয়ার কারণে এবার ইলিশ উৎপাদন অনেক কমেছে। সাগর এতবার উত্তাল থাকায় মাছ ধরতে যাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
তিনি জানান, সম্প্রতি বঙ্গোপসাগরে পাঠানো তার তিনটি ট্রলার দুই দিনের মধ্যেই ফিরে এসেছে। প্রতিটি ট্রলারে গড়ে মাত্র ৫ লাখ টাকার মতো ইলিশ ধরা পড়েছে, যা মৌসুমের স্বাভাবিক উৎপাদনের পাঁচভাগের একভাগ।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ও ইলিশ গবেষক মো. আনিসুর রহমান বলেন, বার্ষিক ইলিশ উৎপাদনের অন্তত ৭০ শতাংশ আসে সাগর থেকে। সাধারণত ইলিশ ধরতে জেলেদের ১২ ঘণ্টার সমুদ্রপথ অতিক্রম করতে হয়।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপকূল থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে ট্রলার দিয়ে মাছ ধরা শুরু হয়েছে। অথচ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস পৌঁছায় সর্বোচ্চ ৫৭ কিলোমিটার পর্যন্ত।
যেখানে আগস্ট মাস সাধারণত ইলিশ মৌসুমের প্রধান সময়, সেখানে এই মাসের ২৭ থেকে ২৯ তারিখের মধ্য বঙ্গোপসাগরে দুটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে। অথচ এ সময় নদী ও উপকূলে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ে এবং গৃহস্থের রান্নাঘর ভরে ওঠে ইলিশের ঘ্রাণে।
অক্টোবরের নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়া পর্যন্ত পর্যন্ত ইলিশ ধরার এই মৌসুম চলতে থাকে। কিন্তু ১৩ আগস্টের পর থেকে চারবার সতর্ক সংকেত জারি করা হয়। এ ছাড়া জুলাইয়ে চারবার, জুনে তিনবার ও মে মাসেও দুবার সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছিল।
মার্চ-এপ্রিলের দুই মাসব্যাপী সার্বিক নিষেধাজ্ঞার পর এই ঘনঘন সতর্ক সংকেত জারির ফলে মাছ ধরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
প্রতিটি সতর্ক সংকেত কার্যকর থাকে অন্তত তিন থেকে পাঁচ দিন। এ সময় ভারী বৃষ্টি, ৫০ কিলোমিটার গতির বাতাস এবং পাঁচ মিটার পর্যন্ত জোয়ার একসঙ্গে বা আলাদাভাবে দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থাকে। বাতাস ও তাপমাত্রার মিথস্ক্রিয়ার কারণে গত প্রায় ১০০ দিনের মধ্যে ৩৯ থেকে ৬৫ দিনই বঙ্গোপসাগরে এমন আবহাওয়া বিরাজ করেছে।
আরও পড়ুন: আরও একটি লঘুচাপ আসছে, তিন নম্বর সংকেত বহাল
আবহাওয়া অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ মোহাম্মদ আবুল কালাম মাল্লিক বলেন, এ বছর মৌসুমি বায়ু বেশ শক্তিশালী ছিল, সামগ্রিক আবহাওয়া অনেকের জন্য আরামদায়ক ছিল না।
আগের চেয়ে খারাপ হয়েছে দেশের আবহাওয়া পরিস্থিতি
এ বছর বাংলাদেশে মৌসুমি বায়ু প্রায় চার দশকের মধ্যে সবচেয়ে আগে চলে এসেছে। সাধারণত জুনে শুরু হলেও এবার মে মাসের শেষ সপ্তাহেই সারা দেশে পড়তে শুরু করে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ২০২৪ সালের ‘চেঞ্জিং ক্লাইমেট অব বাংলাদেশ’ নামক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৮১ সালের পর থেকে মে মাসের শেষ দিকে ১১ বার দেশে মৌসুমি বায়ু প্রবেশ করেছে, যার মধ্যে আটবারই প্রবেশ করেছে ২০০০ সালের পর।
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে মৌসুমি বায়ুর আগমন ও প্রকৃতি পরিবর্তিত হচ্ছে কিনা, তা এখনো গবেষণার বিষয়। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টির হার কমছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত গবেষণাটি বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সেখানে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বাংলাদেশে আবহাওয়ার ধরন পাল্টে দিতে শুরু করেছে।
১৯৮১ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে প্রতি মৌসুমে ১০টির বেশি নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ার ঘটনা ঘটেছে মাত্র ছয়বার। তার মধ্যে ১৯৮৯ সালে সর্বোচ্চ ১৩টি নিম্নচাপ তৈরি হয়েছিল।
চলতি মৌসুমে ইতোমধ্যে ছয়টি নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে, অথচ মৌসুমের শেষ মাস সেপ্টেম্বর এখনো বাকি। এই মাসেই সবচেয়ে বেশি নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ার ইতিহাস রয়েছে।
এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) এক পূর্বাভাসে বলেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মৌসুমি বায়ু ও ঘূর্ণিঝড় মৌসুম একসঙ্গে মিলে গিয়ে দশকে একবার শতাব্দী-বিরল জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি করতে পারে।
বিশ্বের অন্যতম জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ। বারবার নিম্নচাপ তৈরি হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা দেশের জন্য দীর্ঘমেয়াদি বিপদ ডেকে আনছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
চলতি মৌসুমে নিম্নচাপজনিত বৈরি আবহাওয়ায় বাঁধ ভেঙেছে, ঘরবাড়ি-ফসল ভাসিয়ে নিয়েছে, বহু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হয়েছে। এ সময় বন্ধ থেকেছে নৌপথে যোগাযোগ, গ্রাম-শহর প্লাবিত হয়েছে, পাহাড়ি এলাকায় আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসে শত শত মানুষ গৃহহীন হয়েছে।
আর্থিকভাবে সচ্ছল মানুষ এই বিপদের আঁচ তুলনামূলক কম পেলেও দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনে এর প্রভাব হয়ে উঠছে ভয়াবহ। বিশেষত কৃষক, রিকশাচালক, পরিবহনশ্রমিক বা নির্মাণশ্রমিকদের মতো মানুষ, যাদের জীবিকা প্রতিদিন বাইরে গিয়ে রোজগারের ওপর নির্ভরশীল, তাদের জন্য এসব দুর্যোগের সময় হয়ে ওঠে দুঃসহ।
আরও পড়ুন: নিম্নচাপের প্রভাবে ঝড়োবৃষ্টি ও উপকূলীয় অঞ্চলে জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা
চলতি বছরের জুন মাসে প্রায় রেকর্ড ভাঙা বৃষ্টি হয়েছে। টেকনাফে ১ হাজার ১৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে, যা স্বাভাবিকের চার গুন বেশি। একই মাসে খাগড়াছড়ির রামগড় ও ফেনীর পরশুরামেও স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে।
জুলাই মাসে টেকনাফেও স্বাভাবিকের চার গুন বেশি বৃষ্টি হয়েছে। কক্সবাজারে রেকর্ড হয়েছে ১ হাজার ৪০১ মিলিমিটার বৃষ্টি, যেখানে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৯৪৫ মিলিমিটার। নোয়াখালীতে ১ হাজার ১৭১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, যেখানে স্বাভাবিক ৭৩৯ মিলিমিটার, আর পরশুরামে ৮৭২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, যেখানে সাধারণত ৫৬২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে।
১০৬ দিন আগে
ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় চট্টগ্রামের মেগা সড়ক প্রকল্পে বিলম্ব
ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতায় কাজ আটকে যাওয়ায় চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতু থেকে চাকতাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়েছে সরকার। প্রায় ৮২ শতাংশ কাজ সম্পন্ন এবং ২ হাজার ২০০ কোটি টাকার বেশি খরচ হওয়ার পরও ২০২৬ সালের জুন মাসের মধ্যে প্রকল্পটি এখন শেষ করতে নতুন সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
আবাসন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) বাস্তবায়নাধীন ২ হাজার ৭৭৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকার এ প্রকল্প অনুমোদন হয়েছিল ২০১৭ সালের জুলাইয়ে। প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের জুনে। তবে একের পর এক সময় বাড়াতে গিয়ে ইতোমধ্যে চার দফায় সময়সীমা পেছানো হয়েছে। প্রথমে ২০২১ সালে, এরপর ২০২২ সালে, ২০২৪ আরও একবার, তারপর ২০২৫ সালে আরও এক দফায় মেয়াদ বৃদ্ধি করে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে। অবশ্য সর্বশেষ মেয়াদ বাড়লেও ব্যয় বাড়ানো হয়নি।
সরকারি নথি অনুযায়ী, ভূমি অধিগ্রহণে দেরি এবং কারিগরি জটিলতার কারণে একাধিকবার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পটির প্রাথমিক অনুমোদনের সময় ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার ২৭৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা। পরে প্রথম সংশোধনে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ৩১০ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এরপর দ্বিতীয় সংশোধনে তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ৭৭৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকায়।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রকল্পটি চাকতাই, খাতুনগঞ্জ, বকশিরহাট, বাকলিয়া, চান্দগাঁও ও কালুরঘাট শিল্পাঞ্চলকে জোয়ারের পানি ও বন্যার ঝুঁকি থেকে সুরক্ষিত রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। পাশাপাশি ঢাকা-চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সংযোগ তৈরি করে যানজট নিরসন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং প্রস্তাবিত আউটার রিং রোডের অংশ হিসেবে শহরকে জোয়ারের পানির আক্রমণ থেকে রক্ষাই এর লক্ষ্য।
চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত দৃশ্যমান কাজের ৮২ শতাংশ এবং ব্যয়ের প্রায় ৭৯ শতাংশ (২ হাজার ২০৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা) শেষ হলেও ভূমি ক্রয়ের অর্থ ছাড়ে জটিলতা দেখা দেওয়ায় ২ কিলোমিটার সড়ক ও দুটি রেগুলেটর নির্মাণ আটকে আছে।
প্রকল্পের আওতায় দেড় কিলোমিটার বাঁধ-কাম-সংযুক্ত সড়ক, ১২টি খালের মুখে ১২টি রেগুলেটর, স্লোপ প্রটেকশন, রিটেইনিং ওয়াল ও নৌপথ নির্মাণের কথা রয়েছে।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামের খাল খনন প্রকল্পে আবারও সংশোধন, খরচ কমল ১৯.৪০ কোটি টাকা
দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপি ২০২২ সালের ১৬ আগস্ট একনেকে অনুমোদিত হয়। বাকি কাজের দরপত্র ২০২৩ সালের জুলাইয়ে অনুমোদন পায় এবং ওই মাসেই চুক্তি সই হয়। কিন্তু ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে অর্থ মন্ত্রণালয় ভূমি অধিগ্রহণ খাতে বরাদ্দ আটকে দেওয়ায় ক্ষতিপূরণ পরিশোধ হয়নি, ফলে কাজও স্থগিত থাকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা জানান, ‘অবশিষ্ট ভূমি অধিগ্রহণের অর্থ ছাড়ের জন্য বর্তমানে ডিপিপি সংশোধনের কাজ চলছে।’
তিনি বলেন, ‘নির্ধারিত সময়সীমা ২০২৫ সালের জুন শেষ হলেও প্রকল্প শেষ করার জন্য এক বছর বাড়িয়ে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। তবে অতিরিক্ত কোনো ব্যয় বাড়ানো হয়নি এবার।’
নির্ধারিত কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী বাকি সব কাজ শেষ করা এবং প্রকল্প সমাপ্তির তিন মাসের মধ্যে সমাপনী প্রতিবেদন জমা দেওয়ার শর্তে নতুন সময়সীমা অনুমোদন করেছে বাস্তবায়ন তদারকি ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। এ ছাড়া অবশিষ্ট ২ কিলোমিটার ভূমি অধিগ্রহণ দ্রুত শেষ করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।
১০৭ দিন আগে
রংপুরে বিরল রোগে আক্রান্ত দুই শতাধিক মানুষ, দেখা দিয়েছে আতঙ্ক
রংপুরের পীরগাছায় বিরল রোগে আক্রান্ত হয়েছে দুই শতাধিক মানুষ। এতে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। তবে এমন বিরূপ পরিস্থিতিতেও স্বাস্থ্য বিভাগকে পাশে পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। এতে বড় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ওই উপজেলার হাজারো মানুষ। স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীরা বলছেন, অ্যানথ্রাক্স রোগের উপসর্গের সঙ্গে এই সংক্রমণের হুবহু মিল রয়েছে।
এমন অবস্থায় সির্ভিল সার্জন ডা: শাহিন সুলতানার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
ডা: শাহিন সুলতানা বলেন, যদি এমন কিছু ঘটে থাকে তাহলে প্রাণী সম্পদ বিভাগ ব্যবস্থা নিবে। পাশাপাশি স্বাস্থ্য বিভাগের মাঠকর্মীরা প্রতিবেদন দিলে মেডিকেল টিম গঠন করা হবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলার পীরগাছায় গবাদি পশু থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হচ্ছে বিরল প্রজাতির মারাত্মক এক রোগ। শরীরে প্রথমে ফুসকুড়ি হয়, পরে তা ঘা-তে পরিণত হয়, এরপর তা থেকে তৈরি হয় গভীর ক্ষত।
এমন উপসর্গ নিয়ে দিনের পর দিন মানুষ আক্রান্ত হলেও এখন পর্যন্ত স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রাণিসম্পদ দপ্তর কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় সমস্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীরা বলছেন, অ্যানথ্রাক্স রোগের উপসর্গের সঙ্গে এই সংক্রমণের হুবহু মিল রয়েছে। তবে এখনো প্রাণিসম্পদ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তাই আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয়রা।
এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পীরগাছার সদর, তাম্বুলপুর, ছাওলা, পারুল, ইটাকুমারী ইউনিয়নসহ প্রায় পুরো উপজেলায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এই রোগ। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত সদর, ছাওলা ও তাম্বুলপুর ইউনিয়ন।
পীরগাছা উপজেলা সদরের অনন্তরাম বড়বাড়ি এলাকার বাসিন্দা সাবিনা আক্তার জানান, গৃহস্থালি কাজের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি গরু ও ছাগল লালনপালন করতেন তিনি। সপ্তাহ দেড়েক আগে হঠাৎ তীব্র জ্বরে অসুস্থ হয়ে মারা যায় একের পর এক পশু। অসুস্থ গবাদি পশুর সেবা করতে গিয়ে তিনিও আক্রান্ত হন অজানা রোগে।
তিনি বলেন, তিনদিনের মধ্যে তিনটি গরু ও চারটি ছাগল মারা যায়। পরে হঠাৎ দেখি আমার হাতে ফুসকুড়ির মতো কী যেন উঠতেছে। দুই দিন যেতেই সেই ফুসকুড়ি বড় ঘায়ে পরিণত হয়। এখন প্রচণ্ড যন্ত্রণা করে, চুলকায়। স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের পরামর্শ চিকিৎসা চলছে।’
সাবিনার মতো পুরো পীরগাছায় এ অজানা রোগে আক্রান্ত হয়েছেন দুই শতাধিক মানুষ। যাদের সবাই অসুস্থ পশুর সংস্পর্শে ছিলেন অথবা অসুস্থ পশু জবাই করার পর মাংস স্পর্শ করেছেন।
আরও পড়ুন: ঠাকুরগাঁওয়ে লাম্পি স্কিন রোগে ৭২ গরুর মৃত্যু
স্থানীয়রা জানান, গত দেড় মাস ধরেই এমন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই। এমনকি অসুস্থ হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মারা যাচ্ছে আক্রান্ত গবাদি পশুও।
বিরল রোগে আক্রান্ত পঞ্চাশোর্ধ্ব জাহেদা বেগম বলেন, ‘১০ থেকে ১২ দিন আগে হঠাৎ ডান হাতের একটি আঙ্গুলে চুলকানি শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে ফুসকুড়ি ঘা-তে পরিণত হয়েছে। এরপর ওই জায়গার মাংস পচে গিয়ে কালো হয়ে গেছে। ভিতরে প্রচণ্ড জ্বালাপোড়া করে। নতুন করে আরও একটি আঙ্গুলে একইভাবে চুলকানি শুরু হয়েছে।’
ছাওলা ইউনিয়নের কৃষক আজিজুল হক বলেন, ‘পশু অসুস্থ হলে তার পরিচর্যা করতে হয়। বেশি অসুস্থ হলে অনেকে জবাই করে বিক্রি করেন। সেই মাংস কিনে খাওয়ায় অনেকে এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। খাওয়ার দু-চার দিন পর শরীরে বড় বড় ঘা হয়।’
পীরগাছা সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা আবুল কাশেম বলেন, ‘মাস দেড়েক আগে একটি ছাগলের প্রচণ্ড জ্বর আসে। অনেক চেষ্টার পরেও বাঁচার কোনো সম্ভাবনা না থাকায় ছাগলটাকে জবাই করি। ওই মাংস কাটাকাটি করার পরের দিন থেকে হাতে ছোট ছোট ফুসকুড়ি ওঠা শুরু হয়। পরে তা বড় ঘায়ে পরিণত হয়ে শেষের দিকে পচে যায়। অনেক ওষুধ খাওয়ার পর এখন একটু সুস্থ। স্থানীয় চিকিৎসক বলেছেন এটা নাকি অ্যানথ্রাক্স রোগ।’
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার আঁখি সরকার বলেন, প্রায় প্রতিদিনই এমন রোগে আক্রান্ত ৫ থেকে ৭ জন রোগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসছেন। অনেক সময় একই পরিবারের সব সদস্য আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে। এখন পর্যন্ত পরীক্ষা করা না হলেও অ্যানথ্রাক্স রোগের উপসর্গের সঙ্গে এই সংক্রমণের হুবহু মিল রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এ দিকে পুরো উপজেলায় এই রোগে সাধারণ মানুষ আক্রান্তের পাশাপাশি কয়েকশ’ গবাদি পশু আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেও নির্বিকার উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর।
স্থানীয়রা জানান, খামারিদের কাছে যাওয়া তো দূরের কথা এমন সমস্যা নিয়ে প্রাণিসম্পদ দপ্তরে গেলে বেশিরভাগ সময়ই কোনো কর্মকর্তাকে পাওয়া যায় না। ফলে সঠিক চিকিৎসা না মেলায় মারা যাচ্ছে আক্রান্ত পশুগুলো।
অন্যদিকে আক্রান্ত হলেই তড়িঘড়ি করে ওই পশুকে কম দামে হলেও বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন খামারিরা। এতে খামারিরা যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তেমনি আক্রান্ত পশুর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে এই রোগ।
রংপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আবু ছাঈদ বলেন, “এটা একটা ‘জেনেটিক ডিজিজ’। এখানে মূল সমস্যা করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। একজন মেডিকেল অফিসার অথবা প্যারামেডিক জানে এটা কি হতে পারে। এই রোগ নিয়ে যখন সাধারণ মানুষ চিকিৎসা নিতে গেছে সঙ্গে সঙ্গে তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো উচিত ছিল। তাহলে শুরু থেকেই এই সমস্যা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিলে সুবিধা হত। এখন সবার আগে আমাদের কাজ হলো এই রোগ শনাক্ত করা।”
এ দিকে এই রোগ শনাক্তের পাশাপাশি প্রতিরোধে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া না গেলে মহামারিতে রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
আরও পড়ুন: ফরিদগঞ্জে চিকিৎসকের অবহেলায় রোগীর মৃত্যু, হাসপাতাল ভাঙচুর
জনস্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের সভাপতি বেলাল হোসেন বলেন, ‘এমন উপসর্গ নিয়ে দিনের পর দিন মানুষ আক্রান্ত হলেও এখন পর্যন্ত স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রাণীসম্পদ দফতর কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় সমস্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। তাই যা ধারণা করা হচ্ছে, দ্রুত শনাক্তের মাধ্যমে যদি তা নিশ্চিত হওয়া যায় তাহলে এই সমস্যা সমাধান দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে এই সমস্যা মহামারি আকার ধারণ করে পুরো দেশে ছড়িয়ে পারবে।’
বিষয়টি নিয়ে রংপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) রবিউল ফয়সালের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ওই এলাকা থেকে আমাকে ফোনে জানানো হয়েছে। আমি স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে কথা বলেন দ্রুত ব্যবস্থা নিব। আপাতত উপজেলা নিবার্হী অফিসার কে বিষয়টি তদারকি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ।
১০৮ দিন আগে
৬২ বছর ধরে স্কুল আছে শিক্ষার্থী নেই, জানেন ঊর্ধ্বতনরাও
প্রতি ক্লাসে ৩ থেকে ৪ জন শিক্ষার্থী, তারপরও খিচুড়ি খাওয়া হলেই ছুটি; বাড়ি চলে যায় তারা। এভাবেই দীর্ঘদিন ধরে চলছে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম। গাইবান্ধা শহরের প্রাণকেন্দ্র ভি এইড রোডে অবস্থিত কে এন রোড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিত্যকার চিত্র এটি। গত ৬২ বছর থেকে এভাবেই বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চললেও বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অজানা নয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠা হলেও বিদ্যালয়টির সরকারিকরণ করা হয় ১৯৭৩ সালে। শুরু থেকে এমপি মন্ত্রীদের সুপারিশে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়ে আসছে বিদ্যালয়টিতে। এ কারণে প্রথম থেকেই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কম থাকলেও শিক্ষক ছিল পর্যাপ্ত।
বিদ্যালয়টি বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে সুন্দর মনোরম পরিবেশে পর্যাপ্ত শিক্ষার্থীর কোলাহলপূর্ণ একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু বাস্তবে তা নয়, কোমলমতি শিশুদের ফাঁকি দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে স্কুলের কার্যক্রম।
প্রতিষ্ঠার ৬২ বছর পরও স্কুলের শিক্ষকের সংখ্যা কম না হলেও শিক্ষার্থী নেই বললেই চলে। কোনো বছর প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত কোনো শিক্ষার্থীই ছিল না বলেও স্কুলের খাতাপত্র ঘেটে দেখা যায়। আবার কোনো কোনো ক্লাসে ছিল ১০ জন, কোনো ক্লাসে ১৫ থেকে ২০ জনের বেশি শিক্ষার্থী ছিল না।
আবার দুটি ক্লাস চলে একই কক্ষে। দুই শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা কীভাবে এক সঙ্গে নেওয়া হয়, তা অভিভাবকদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ।
আরও পড়ুন: প্রভোস্টবিহীন জাবির কাজী নজরুল হল, ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত ৬২ বছরেও স্কুলের শিক্ষার্থীদের ভালো ফলাফল দেখাতে পারেনি বিদ্যালয়টি। অথচ শিক্ষকরা তাদের কর্তাব্যক্তিদের ‘ম্যানেজ’ করে মাসিক ভুয়া প্রতিবেদন দাখিল করে বহাল তবিয়তে চাকরি করে আসছেন।
অনিয়মের পাশাপাশি এই বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ না থাকায় কেউ এখানে ভর্তি হয় না বলে জানান স্থানীয় কাচ্চু মিয়া। তিনি বলেন, পড়ালেখার পরিবেশ নেই, শুধু ফাঁকিবাজি। সব জেনেও শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা সব হজম করে পকেট ভরছেন আর ভালো রিপোর্ট দিচ্ছেন।
সম্প্রতি স্কুলের পড়ালেখার পরিবেশ তৈরি করতে ৬ জন শিক্ষিকা ছাড়াও একজন দপ্তরি নিয়োগ করা হয়। নতুন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষিকারা কোমলমতি শিশুদের শিক্ষার মান উন্নয়নের চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। শিক্ষার্থী পেতে বাড়ি বাড়ি ঘুরেছেন, কিন্তু কাজ হয়নি। বরং শিক্ষার্থী না পেয়ে তারাও হতাশ। অনেক চেষ্টা করে ৬টি শ্রেণির জন্য মাত্র ৬০ জন শিক্ষার্থীকে ধরে রাখতে পেরেছেন তারা। তার মধ্যে তৃতীয় শ্রেণিতে ৩ জন আর চতুর্থ শ্রেণিতে ৪ জন শিক্ষার্থী ক্লাস করে।
স্কুলের সামনের বাসিন্দা এবং ওই স্কুলের একসময়ের শিক্ষার্থী দুলাল মিয়া বলেন, ‘স্কুলের চারদিকে ভালো ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। শিশুরা সেখানে পড়তে যায়। সেই কারণে কে এন রোড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিন দিন কমে আসছে।’
স্কুলের প্রধান শিক্ষক ওয়াহিদা শিরিন বলেন, ‘স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়াতে আমরা কম চেষ্টা করিনি। বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিশুদের স্কুলে পাঠানোর অনুরোধ করেছি, কিন্তু কাজ খুব বেশি হয়নি। তাছাড়া এই স্কুলের চারপাশে কোচিং সেন্টারসহ ভালো কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সে কারণে শিশুরা ওই দিকে ঝুঁকে পড়ছে।’
স্কুলের অন্যান্য শিক্ষিকারা বলেন, স্কুলে শিক্ষার্থী ধরে রাখতে এবং উপস্থিতি বাড়াতে আমরা নিজেদের বেতনের টাকায় ছাত্রছাত্রীদের দুপুরে খিচুড়ি খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু তাতেও কাজ হচ্ছে না। খিচুড়ি খেয়েই শিক্ষার্থীরা চলে যায়। এই স্কুলের অবস্থা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও গুঞ্জন থাকলেও শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা তা এড়িয়ে যান। তারা কোনো পরামর্শ দিতেও স্কুলে আসেননি।
গাইবান্ধা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা লক্ষণ কুমার দাস স্কুলের বেহাল অবস্থার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘জেলা পর্যায়ের সভায় বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। আমরা স্কুলে শিক্ষার্থী বৃদ্ধির জন্য চেষ্টা করছি।’
১১০ দিন আগে
বিলীন হয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ উৎসবের সোনালি দিন
ধান-চালের সঙ্গে বাঙালির সম্পর্ক শত বছরের। সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, পারিপার্শ্বিক প্রায় সব বিষয়ে কোনো না কোনোভাবে চালের একটি প্রভাব রয়েছে। খাদ্যশস্য ধান এবং ধান থেকে পাওয়া চাল ঘিরে বাঙালির সাংস্কৃতিক উৎসবের যে ভিত্তি, কালের পরিক্রমায় ধীরে ধীরে তা ফিকে হয়ে যাচ্ছে।
বরিশালের বাসিন্দা আবদুল খালেক একজন কৃষক। বয়স তার আশির ঘরে। স্মৃতিচারণ করে এই বৃদ্ধ জানান, ধর্মীয় উৎসবের বাইরে প্রতিটি উৎসবের সঙ্গে ঘরে ধান ওঠার সম্পর্ক ছিল। কার্তিকের শেষের দিকে সবুজ ধানের ডগা সোনালি হতে শুরু করে, আর পাকা ধান ওঠে অগ্রাহয়ণের প্রথম দিন।
তিনি বলেন, ‘অগ্রাহায়ণের আগেই ধান পাকে, কিন্তু তোলা হয় এক তারিখে। অনেক মুসলিমপ্রধান গ্রামে আবার অগ্রহায়ণের প্রথম শুক্রবার ধান ঘরে তোলা হয়। ২০-৩০ বছর আগেও ধান তোলার দিন ঈদের দিনের মতো আনন্দ হতো।’
বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ধানের আবাদ হয় বোরো মৌসুমে। কিন্তু নবান্ন উৎসব মূলত আমন ধানকেন্দ্রিক। কৃষকের কাছে বোরো ধানের চেয়ে আমন ধানের গুরুত্ব বেশি।
গ্রামবাংলার কৃষকদের জীবন নিয়ে গবেষণামূলক কাজ করেন মঞ্জুর হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমন শব্দটি এসেছে আরবি আমান শব্দ থেকে। এই আমান মানে হচ্ছে আমানত। কৃষক বোরো ধান বিক্রি করে নগদ টাকা আয় করে, আর আমন ধান গোলা ভরে রাখে সারা বছর খাওয়ার জন্য। নতুন এই আমন ধান নিয়েই মূলত কৃষকের নবান্ন উৎসব।’
আরও পড়ুন: নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ‘তারুণ্যের উৎসব’, চলবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত
তিনি বলেন, ‘যতদিন গরু দিয়ে ধান মাড়াই করা হয়েছে, ততদিনই গ্রামে ঘরে ঘরে হয়েছে নবান্ন উৎসব। ভোরে ফজরের আজানের পরপরই দল বেঁধে কৃষকরা যেতেন ধান কাঁটতে। দুপুরের মধ্যে আটি বেঁধে ধান এনে বাড়ির উঠানে জড়ো করতেন তারা। সেই ধান গরু দিয়ে মাড়াই করত আরেক দল। ধান মাড়াই শেষ হতে রাত হয়ে যেত। তবে মাড়াইয়ের প্রথম ধাপে বিকেলের মধ্যে চাল নিয়ে মহাজনদের ঘরে রান্না হতো খিচুড়ি আর পায়েস। অনেক সময় দেশি মুরগির মাংস দিয়ে গরম ভাত।’
কয়েক দশক আগেও দেশের বেশিরভাগ কৃষকই ছিল বর্গাচাষি। নিজেদের জমি না থাকায় গ্রামের মহাজনদের জমিতে ধান চাষ করতেন। মহাজন পেতেন ধানের তিন ভাগের দুই ভাগ, আর বর্গাচাষি পেতেন এক ভাগ। ধান মাড়াই শেষে রাতে নতুন ধান নিয়ে ঘরে ফিরত কৃষক। এই ধানই ছিল কৃষকের সারা বছরের খোরাক।
কৃষকের ঘরে নবান্নের মূল আনন্দ ছিল নতুন ধানের পিঠাপুলি আর ক্ষিরসা। দেশের অনেক জেলার রীতি অনুযায়ী, অগ্রহায়ণের মাঝামাঝি সময়ে বিবাহিত মেয়েরা স্বামীর সঙ্গে বাপের বাড়ি বেড়াতে আসতেন। এ সময় কৃষকের ঘরে না ছিল ক্ষুধার কষ্ট, না ছিল অভাবের তাড়না। সব মিলিয়ে সচ্ছলতার দিনগুলোই বেছে নেওয়া হতো জামাই আদরের জন্য।
নবান্নকে কেন্দ্র করে অগ্রহায়ণের শেষ ১৫ দিনে মেলা বসত গ্রামেগঞ্জে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের গ্রামের মেলার বড় আকর্ষণ ছিল ঘোড়দৌড়। উত্তরাঞ্চলের মেলার আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ছিল বিভিন্ন ধরনের মাটি এবং পিতলের তৈজসপত্র। গ্রামে বিদ্যুৎ না থাকায় নতুন কুপিবাতিও কিনতেন মেলায় আগত নারী-পুরুষেরা। তবে বর্তমানে এসব সুদূর অতীত।
নওগাঁর কৃষি উদ্যোক্তা মেহেদি হাসান রাজন বলেন, ‘কুপিবাতির দিন পেরিয়ে বৈদ্যুতিক বাতির দিন এসেছে ঠিকই, কিন্তু জ্বলতে থাকা সলতের স্বল্প আলোর দিনগুলোর নবান্নের আনন্দ এখন আর নেই। এত এত আলোর মাঝেও সুন্দরতম দিনের খোঁজে ফিরে তাকাতে হয় স্বল্প আলোর অতীতের দিকে।’
বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি জেলায় খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, নবান্নের উৎসব এখনো অনেক গ্রামে হলেও আগের সেই সর্বজনীন আনন্দ নেই। নওগাঁর নাজিরপুরের পদ্মপুকুরের শত বছরের নবান্ন মেলা এখনো টিকে থাকলেও হারিয়ে গেছে তার অতীতের জৌলুস।
যাত্রাপালা ও পুথি গান
অগ্রাহয়ণের পর পৌষের শীতে গ্রামে গ্রামে বিশেষ আয়োজন ছিল যাত্রাপালার। তখন কৃষকের হাতে সদ্য ওঠা ধান থাকায় কিছুটা ধান বিক্রি করে পরিবার নিয়ে যাত্রা দেখার আনন্দ ভাগাভাগি করত কৃষক।
সাধারণত কয়েক গ্রাম মিলিয়ে বড় বড় যেসব গঞ্জ গড়ে উঠত, সেখানে আয়োজন হতো যাত্রাপালার। তবে অবস্থাসম্পন্ন মহাজনরা নিজ উদ্যোগে বাড়ির বড় উঠান কিংবা এলাকার মাঠে যাত্রাপালার আয়োজন করতেন।
চট্টগ্রামের বাসিন্দা আবদুস সোবহান বলেন, ‘সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের মেয়েদের পক্ষে গঞ্জে গিয়ে যাত্রা দেখা ছিল অসম্ভব। সেসব পরিবারের ছেলেদের বেলায়ও ছিল নানা রকম বিধিনিষেধ। তবে আনন্দ থেকে যাতে কেউ বঞ্চিত না হয়, তাই নিজ উদ্যোগে আয়োজন হতো যাত্রাপালার।’
‘সে সময়ে গ্রামে বিদ্যুৎ নেই, টিভি নেই; ব্যাটারিতে চলতো রেডিও, তাও হাতেগোনা কয়েকজনের ঘরে ছিল এই বেতার যন্ত্র। যাত্রাপালা ছিল মানুষের বিনোদনের সর্বোচ্চ মাধ্যম। নবান্নের আমেজ কাটতে না কাটতেই শুরু হতো এই যাত্রাপালা।’
অন্যদিকে, বাংলা সাহিত্যের বড় একটি অংশজুড়ে আছে পুথি সাহিত্য। পুথি সাহিত্যের উদ্ভব মূলত মানুষের মুখে মুখে। কমলা সুন্দরী, লাইলি-মজনু, সোহরাব-রুস্তম, ইউসুফ-জুলেখা, রাধা-কৃষ্ণ— এসবের বেশিরভাগ কাহিনী বাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছে যাওয়ার প্রধান মাধ্যম ছিল পুথি গান।
১১১ দিন আগে