বিশেষ সংবাদ
চট্টগ্রামের খাল খনন প্রকল্পে আবারও সংশোধন, খরচ কমল ১৯.৪০ কোটি টাকা
বছরের পর বছর দেরি আর একের পর এক সংশোধনের পরও এখনো আলোর মুখ দেখেনি চট্টগ্রামের ভয়াবহ জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রত্যাশিত বহদ্দারহাট-বারইপাড়া খাল খনন প্রকল্প। তৃতীয়বারের মতো আবারও প্রকল্পটিতে সংশোধন করা হয়েছে। তবে এবার ব্যয় কমিয়ে আনা হয়েছে ১৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
পরিকল্পনা কমিশনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে (সিসিসি) বাস্তবায়িত এ প্রকল্পের খরচ এখন দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৪৩ কোটি ২১ লাখ টাকা। দ্বিতীয় সংশোধনে এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৩৬২ কোটি ৬২ লাখ টাকা।
২০১৪ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এই প্রকল্পটি প্রথম অনুমোদন পায়। সে সময় ব্যয় ধরা হয় ৩২৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এরপর একাধিকবার সংশোধনের কারণে প্রকল্পটি বিলম্বের শিকার হয়। সর্বশেষ সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত।
প্রকল্পটির লক্ষ্য হলো খাল খননের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা নিরসন, খালের দুই পাশে সড়ক নির্মাণের মাধ্যমে যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত করা, যানজট কমানো এবং হাঁটার পথ তৈরির মাধ্যমে নগরবাসীর জন্য বিনোদনের নতুন সুযোগ সৃষ্টি করা।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে টানা বৃষ্টিতে ব্যাপক জলাবদ্ধতা, জনদুর্ভোগ চরমে
কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেও গত এক দশকের বেশি সময় ধরে নানা ড্রেনেজ প্রকল্প হাতে নিলেও বর্ষাকালে চট্টগ্রাম নগরীতে এখনও ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) ১৯৯৫ সালের ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যানে খালটির সুপারিশ করা হলেও গত ৩০ বছরে তা বাস্তবায়িত হয়নি। অসামঞ্জস্যপূর্ণ উদ্যোগ, প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি, দুর্বল নগর পরিকল্পনা এবং জনসচেতনতার অভাবে জলাবদ্ধতার এই সমস্যা শহরবাসীর জন্য দীর্ঘমেয়াদি ভোগান্তিতে পরিণত হয়েছে।
মাস্টার প্ল্যানে বৃষ্টির পানি দ্রুত অপসারণে বিদ্যমান প্রাকৃতিক খাল সংস্কার, নতুন খাল খনন এবং পানি ধরে রাখার জন্য পুকুর খননের সুপারিশ করা হয়েছিল।
পরবর্তীতে ২০১৮ সালের নভেম্বরে একনেক সভায় প্রকল্পটির প্রথম সংশোধন অনুমোদিত হয়। সংশোধনে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। এ সময় এক লাফে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে হয়ে যায় ১ হাজার ২৫৬ কোটি টাকা। পরে করোনা মহামারির কারণে সময়সীমা ফের ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
দ্বিতীয় সংশোধন অনুমোদন হয় ২০২২ সালের ১৯ জানুয়ারি। প্রকল্প ব্যয় ৮ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে তখন ১ হাজার ৩৬২ কোটি ৬২ লাখ টাকা হয়। সে সময় ২০২৬ সালে জুন মাস পর্যন্ত প্রকল্প শেষ হওয়ার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, নতুন সংযোজন থাকা সত্ত্বেও ব্যয় কমানো সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে খনন যন্ত্রপাতি রাখার জন্য মেইনটেন্যান্স ইয়ার্ড এবং দুর্ঘটনা এড়াতে সাড়ে ৫ হাজার মিটার ওয়াকওয়ের পাশে রেলিং স্থাপন।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে ব্যর্থতার মূল্য: মেগা প্রকল্পের পরও জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ
সংশোধিত নকশায় খালের দুই পাশের সড়কগুলোতে টেকসই রিইনফোর্সড সিমেন্ট কংক্রিট (আরসিসি) ব্যবহার করা হবে, যাতে এক্সকাভেটর ও ডাম্প ট্রাকের মতো ভারী যানবাহন চলাচল করতে পারে।
২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৮৫ শতাংশ এবং ভৌত অগ্রগতি ৯৩ দশমিক ১৪ শতাংশ।
প্রকল্পটি শেষ হলে চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে এবং নগরবাসীর জীবনমান উন্নত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
১১১ দিন আগে
জুলাই শহীদ পরিবারে অনুদান-ভাতা বণ্টনে সরকারের নতুন বিধিমালা
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের পরিবারকে দেওয়া এককালীন অনুদান ও মাসিক ভাতা স্বামী বা স্ত্রী, সন্তান এবং বাবা-মায়ের মধ্যে সমান তিন ভাগে বণ্টনের বিধান রেখে নতুন বিধিমালা জারি করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
সরকারি সহায়তাকে কেন্দ্র করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অনেক শহীদ পরিবারের স্বামী-স্ত্রী, সন্তান ও বাবা-মায়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেওয়ার প্রেক্ষাপটে সরকার বণ্টনের এই পদ্ধতি নির্ধারণ করে দিল।
সমস্যা সমাধানে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার এবং জুলাইযোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসন বিধিমালা, ২০২৫’ জারি করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সহায়তা নিয়ে শহীদ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বিভিন্ন দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এসব দ্বন্দ্ব মেটাতে হয়রান মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। প্রতিনিয়তই এ বিষয়ে বিচার-সালিশ আসছে। এমনকি শহীদদের উত্তরাধীকারীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেওয়ায় সহায়তা কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটার পাশাপাশি বিলম্ব হচ্ছে বলেও জানান তারা।
এই প্রেক্ষাপটে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় যার যার ধর্মীয় উত্তরাধিকার আইন মেনে সহায়তার এককালীন অর্থ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া শুরু করেন। কিন্তু পরিবারের অনেক সদস্য এটি মানছিলেন না। যেহেতু অনুদান-ভাতার অর্থ উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া কোনো সম্পদ নয়, তাই এটি কেন ধর্মীয় উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী বণ্টন করা হচ্ছে— এমন প্রশ্ন ওঠে। এ পরিস্থিতিতে বিধিমালা করে সহায়তার অর্থ বণ্টন করার পদ্ধতি নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রণালয়।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের ‘জুলাই শহীদ’ ও আহতদের ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে সরকার। সরকারিভাবে জুলাই শহীদ পরিবারকে সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ৩০ লাখ টাকা দেওয়া হচ্ছে। গত অর্থবছরে (২০২৪-২০২৫) ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র দেওয়া হয়েছে। বাকি ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র চলতি (২০২৫-২০২৬) অর্থবছরে দেওয়া হচ্ছে। গত জুলাই থেকে শহীদ পরিবারকে মাসিক ২০ হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়ার কথা জানায় সরকার। এ পর্যন্ত ৮৪৪ জন শহীদের গেজেট প্রকাশিত হয়েছে, পরে অবশ্য আটজনের গেজেট বাতিল করা হয়।
গত ৭ আগস্ট উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকেও সরকারি এসব সহায়তা নিয়ে শহীদ পরিবারের মধ্যে দ্বন্দ্বের বিষয়টি আলোচিত হয়। বৈঠকে এ বিষয়ে একটি বিধিমালা করে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘জুলাই শহীদদের পরিবারের মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব দেখছি, শহীদদের জন্য যে সম্মানী দেওয়া হচ্ছে সেটা নিয়ে। কে টাকাটা পাবেন তা নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব হচ্ছে। এজন্য একটি বিধি করে দেওয়া হবে। কে কতটুকু অংশ পাবে সেটা বিধিতে উল্লেখ করা হবে। এ বিষয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে জানতে পারবেন।’
এ বিষয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মশিউর রহমান ইউএনবিকে বলেন, ‘শহীদ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সহায়তার অর্থ কীভাবে বণ্টন করা হবে সেটি বিধিমালয় উল্লেখ করা হয়েছে। আগে অনুদানের প্রথম কিস্তির যে অর্থ বণ্টন করা হয়েছে সেটি বিধিমালা অনুযায়ী সমন্বয়ের চেষ্টা করা হবে। অনুদানের বড় অংশটি চলতি অর্থবছরে বিতরণ করা হবে; এটি বিধিমালা অনুযায়ী হবে। এই অর্থ বিতরণের কাজটি করছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘নতুন বিধিমালা জারি হওয়ার মাধ্যমে জুলাই শহীদ পরিবার ও যোদ্ধাদের সহায়তা ও পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে আমরা একটি গাইডলাইন পেলাম। প্রাথমিকভাবে কোনো বিধি-বিধান না থাকায় আমরা ধর্মীয় উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী শহীদ পরিবারকে সহযোগিতা দেওয়া শুরু করেছিলাম। এখন বিধিমালা অনুযায়ী সহযোগিতার কার্যক্রম চলবে।’
অর্থ যেভাবে বণ্টন হবে
জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবারের সদস্য হিসেবে শহীদদের স্বামী বা স্ত্রী, ঔরসজাত বা গর্ভজাত সন্তান এবং মাতা ও পিতার মধ্যে সরকারের দেওয়া আর্থিক সহায়তা তিন ভাগে বণ্টন করতে হবে বলে বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
শহীদের স্বামী বা স্ত্রী আর্থিক সহায়তার এক-তৃতীয়াংশ পাবেন। তবে একাধিক স্ত্রী থাকলে আর্থিক সহায়তা সমানভাবে বণ্টন করতে হবে।
শহীদের ঔরসজাত বা গর্ভজাত সন্তানও আর্থিক সহায়তার এক-তৃতীয়াংশ পাবেন। তবে একাধিক সন্তান থাকলে আর্থিক সহায়তা সমানভাবে বণ্টন করতে হবে।
বিধিমালায় বলা হয়েছে, শহীদের বাবা-মা আর্থিক সহায়তার এক-তৃতীয়াংশ পাবেন। তবে মা ও বাবার অনুকূলে দেওয়া আর্থিক সহায়তা সমানভাবে বণ্টন করতে হবে। আবার মা ও বাবার মধ্যে কোনো একজনের অবর্তমানে অপরজন আর্থিক সহায়তা উভয়ের সম্মিলিত অংশ অর্থাৎ এক-তৃতীয়াংশই পাবেন। তবে যদি শহীদের স্বামী বা স্ত্রী না থাকে তবে স্বামী বা স্ত্রীর জন্য নির্ধারিত আর্থিক সহায়তার অংশটি শহীদের সন্তান ও বাবা মায়ের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ হবে।
তবে সন্তান না থাকলে সন্তানের সহায়তার অংশটি স্বামী বা স্ত্রী এবং বাবা-মায়ের মধ্যে সমানভাবে ভাগ হবে। আর যদি বাবা-মা না থাকেন, তবে বাবা-মায়ের অংশ স্বামী বা স্ত্রী এবং সন্তানদের মধ্যে সমানভাগে ভাগ হবে।
এ ছাড়া কোনো অবিবাহিত ব্যক্তি শহীদ হলে তার জন্য প্রদত্ত আর্থিক সহায়তা তার বাবা-মায়ের মধ্যে সমানভাগে ভাগ করতে হবে। তবে বাবা ও মায়ের মধ্যে যেকোনো একজনের অবর্তমানে অপরজন সম্পূর্ণ আর্থিক সহায়তা পাবেন বলে বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
ভাতাপ্রাপ্ত সদস্য মারা গেলে ভাতা বন্ধ
বিধিমালায় বলা হয়েছে, জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবারের মাসিক ভাতা সহায়তাপ্রাপ্ত কোনো সদস্য মারা গেলে মারা যাওয়ার তারিখ থেকে ভাতার অবসান ঘটবে। পরবর্তী সময়ে এ ভাতা শহীদ পরিবারের অন্য কোনো সদস্য দাবি করতে পারবেন না।
শহীদের স্বামী বা স্ত্রী অন্যত্র বিয়ে করলে বিয়ে হওয়ার তারিখ থেকে তার মাসিক অনুদান বা ভাতার অংশের অবসান ঘটবে। পরিবারের অন্য কোনো সদস্য এই ভাতা পাবেন না।
এককালীন সহায়তা গ্রহণের আগে জুলাই যোদ্ধা মারা গেলে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে তা তিন ভাগে ভাগ করতে হবে। শহীদ পরিবারের মত এক্ষেত্রে একই নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। একই সঙ্গে জুলাই যোদ্ধা মারা গেলে তার মাসিক ভাতার অংশের অবসান ঘটবে বলেও বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলে ‘শহীদ’
বিধিমালায় জানানো হয়েছে, যদি কোনো জুলাই যোদ্ধা অভ্যুত্থানের সময় এক বা একাধিক শারীরিক আঘাতজনিত কারণে অতি গুরুতর হয়ে অব্যাহতভাবে দেশে বা বিদেশে কোনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় মারা যান, তিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ হিসেবে গণ্য হবেন এবং তার পরিবার সুযোগ-সুবিধা পাবে বলে বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যরা এককালীন ৩০ লাখ টাকা সমমূল্যের পরিবার সঞ্চয়পত্র পাওয়ার অধিকারী হবেন। তবে যদি তিনি আহত হিসেবে এককালীন আর্থিক সহায়তা নেন, সেই অংশ কেটে রাখা হবে। একই সঙ্গে তার পরিবার শহীদ পরিবারের মতো মাসে ২০ হাজার টাকা ভাতা পাবেন।
যেভাবে চিকিৎসা নিতে হবে
সব সরকারি হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সরকারি ক্লিনিক বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং সরকার নির্ধারিত বিশেষায়িত হাসপাতাল সব শ্রেণির আহত জুলাই যোদ্ধাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেবে।
চিকিৎসা সহায়তা নিতে হাসপাতাল, ক্লিনিক বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোনো লিখিত আবেদন করার প্রয়োজন হবে না। তবে সেবা গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের দেওয়া পরিচিতিমূলক হেলথ কার্ডের মূল কপি দেখিয়ে জুলাইযোদ্ধার স্বাক্ষর সম্বলিত একটি ফটোকপি দাখিল করতে হবে।
কল্যাণ-পুনর্বাসনের জন্য ৩ কমিটি
বিধিমালায় বলা হয়েছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার এবং জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসনের জন্য তিনটি কমিটি থাকবে। এর মধ্যে রয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি, জেলা কমিটি ও উপজেলা কমিটি।
কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হবেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বা উপদেষ্টা, জেলা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং উপজেলা কমিটির সভাপতি হবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। বিধিমালায় তিনটি কমিটির গঠন ও কার্যাবলী উল্লেখ করা হয়েছে।
পুনর্বাসনে বিধির প্রয়োগ
শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের পুনর্বাসনের জন্য গৃহীত পরিকল্পনা বা প্রকল্পের পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিধি দ্বারা নির্ধারণ করতে হবে। তবে বিধি না হওয়া পর্যন্ত প্রচলিত বিধি-বিধান ও পদ্ধতি অনুযায়ী পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন কাজ সম্পাদন করা যাবে বলে বিধিমালায় জানানো হয়েছে।
পুনর্বাসনের জন্য জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক; ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স-বিষয়ক; ডিজিটাল মার্কেটিং, আইটি সাপোর্ট সার্ভিস, গ্রাফিক্স ডিজাইন এবং ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট; ফ্রিল্যান্সিং, মোবাইল সার্ভিসিং, অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট, মেকানিক্যাল ও অটোমোবাইল-বিষয়ক; ড্রাইভিং, আধুনিক অফিস ব্যবস্থাপনা, নির্মাণ ও প্রকৌশল-বিষয়ক; খাদ্য ও আতিথেয়তা-বিষয়ক; বিউটিফিকেশন আর্টস অ্যান্ড ক্রাফটস; বস্ত্রশিল্প-বিষয়ক; কৃষি, নার্সারি, গবাদি পশুপালন, মৎস্য হ্যাচারি ও মৎস্য চাষ এবং পোল্ট্রি ফার্মিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেবে।
উপার্জনমুখী কাজ বা আত্মকর্মসংস্থানের জন্য সহজ শর্তে ঋণ বা এমন সুবিধাদি দিতে অধিদপ্তর উদ্যোগ নিতে পারবে বলেও বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
বিরোধ নিষ্পত্তিতে সালিশ বোর্ড
আর্থিক সহায়তা বা পুনর্বাসন-সংক্রান্ত বিষয়ে জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কোনো বিরোধ দেখা দিলে তা নিষ্পত্তিতে একটি সালিশ বোর্ড গঠন করা হবে বলে বিধিমালায় জানানো হয়েছে। শহীদ পরিবারের বিরোধ-সংশ্লিষ্ট সদস্য, গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের মনোনীত কমপক্ষে সহকারী পরিচালক পদমর্যাদার একজন প্রতিনিধি, দুই পক্ষের ভিত্তিতে মনোনীত একজন সালিশকারীর সমন্বয়ের সালিশ বোর্ড গঠন করা হবে।
বিধিমালায় বলা হয়েছে, সালিশ বোর্ডের সিদ্ধান্তের কারণে কোনো ব্যক্তি সংক্ষুব্ধ হলে তিনি ৩০ দিনের মধ্যে অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে আপিল করতে পারবেন। এই ক্ষেত্রে মহাপরিচালকের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
১১২ দিন আগে
কাজ শেষ হওয়ার আগেই রংপুরে নদী তীর রক্ষা বাঁধে ধস
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায় নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই আখিরা শাখা নদীর তীর রক্ষা বাঁধের একাংশ ধসে পড়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করা হয়েছে বলে বাঁধের এই দশা হয়েছে বলে অভিযোগ তাদের।
শনিবার (২৩ আগস্ট) পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাপাউবো) তত্ত্বাবধানে পরিচালিত আখিরা শাখা নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধের প্রায় ১০০ মিটার অংশ ধসে পড়ে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বৃষ্টির মধ্যে তড়িঘড়ি করে কাজ করায় এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। কোটি কোটি টাকা খরচ হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে নদীর তীর সংরক্ষণের মূল উদ্দেশ্যই ভেস্তে যেতে বসেছে।
তবে ব্লক ধসে যাওয়ার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করলেও নিম্নমানের কাজের অভিযোগ অস্বীকার করে মাটির সমস্যার কথা জানিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, নদী তীর সংরক্ষণ, খালবিল পুনর্খনন ও জলাবদ্ধতা নিরসন (১ সংশোধিত) প্রকল্পের আওতায় রংপুরের পীরগঞ্জের চতরা ইউনিয়নে ৮০০ মিটার নদী তীর সংরক্ষণ বাঁধের কাজ চলছে। ৫ কোটি ৩৮ লাখ ৩৪ হাজার ৭৪৭ টাকার কাজটি করছেন রংপুরের ঠিকাদার ভরত প্রসাদ। দুই বছর মেয়াদি কাজটি শুরু হয় ২০২৪ সালের জুলাই মাসে। ২০২৬ সালের ৩০ জুন কাজটি শেষ হওয়ার কথা।
শনিবার দুপুরে সরেজমিনে সংশ্লিষ্ট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রকল্পের অধিকাংশ কাজই প্রায় শেষ। বসানো হচ্ছে ব্লক। তবে, ব্লক বসানো শেষ হওয়ার আগেই অনেক অংশের ব্লক খসে পড়েছে। ওয়াকওয়ের টাইলস উঠে যাচ্ছে। পাশে কোনো সাইনবোর্ডও নেই।
আরও পড়ুন: কুষ্টিয়ায় শতবর্ষী ভবনের ছাদ ধসে গুরুতর আহত মা-ছেলে
স্থানীয়রা বলেন, কাজের মান এতই নিম্নমানের যে বন্যা হলে তীর সংরক্ষণ বাঁধ রক্ষা করাই সম্ভব হবে না। তাদের অভিযোগ, মাটি ফেলে তা সঠিকভাবে ডাম্পিং করা হয়নি। মাটি নরম থাকায় ব্লক ঠিকমতো থাকছে না।
কাজের তদারকিতে থাকা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক শ্যামল চন্দ্র রায় বলেন, কাজের মেয়াদ এখনও শেষ হয়নি। যেখানে যেখান সমস্যা হচ্ছে বা হবে, সেখানে মেরামত করা হচ্ছে।
তবে স্থানীয়দের দাবি, দায় সারা কাজ করার কারণে বাঁধ বেশিদিন টিকবে না। সরকারের কোটি কোটি টাকা পানিতে ভেসে যাবে। নদীর পাড় রক্ষায় সরকার কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে কাজ করছে যাতে স্থানীয়দের উপকার হয়। কিন্তু যে কাজ করছে তা শুরু হতে না হতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। এই কাজে আমাদের বসতবাড়ি ও আবাদি জমি রক্ষা পাবে না। বন্যা হলে আবারও নদীর পাড় ভাঙতে পারে।
স্থানীয় এক ইউপি সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ঠিকাদারের লোকজন তড়িঘড়ি করে ব্লক নির্মাণ করে পাড়ে সারিবদ্ধভাবে বসিয়ে দেন। সে কারণেই এই অবস্থা। সেখানে ব্লক নির্মাণেও ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের সামগ্রী। এসব দেখেও না দেখার ভান করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের তদারক কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে ঠিকাদার ভরত প্রসাদ বলেন, দুই পাশে ৪৮০ মিটার কাজ প্রায় শেষ করেছি। ১৩০ মিটার কাজ ঠিক আছে। তবে কোথাও কোথাও মাটির লেয়ারে সমস্যা থাকায় ধসে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘একবার ঠিক (মেরামত) করেছি, আবারও সমস্যা হয়েছে। এই মৌসুমে ঠিক করা যাবে না। মাটির লেয়ারে সমস্যা ছিল। পরিস্থিতি ভালো হলে আবার কাজটি ঠিক করা হবে।’
প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী টিএম ইসরাফিল হক বলেন, ‘কোনো অনিয়ম হয়নি। প্রকল্পটি ছিল সৌন্দর্যবর্ধনের। চুক্তিতে ডাম্পিং ছিল না। অতিরিক্ত পানির চাপের কারণে কিছু অংশ ধসে গেছে। আমরা ঠিকাদারকে চিঠি দিয়ে সেটি মেরামত করতে বলেছি।’
আরও পড়ুন: রংপুরে তিস্তা বাঁধে ধস, শঙ্কায় হাজারো পরিবার
স্থানীয়দের অনিয়মের অভিযোগ প্রসঙ্গে সহকারী প্রকৌশলী বলেন, ‘অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই। ব্লক তৈরিতে বুয়েট থেকে টেস্ট করিয়েছি। শুরুতে কিছু সমস্যা ধরা পড়লে সেগুলো বাতিল করা হয়। এক বছরে এই ব্লকে কোনো সমস্যা হলে ঠিকাদার তা মেরামত করবেন—তার সঙ্গে আমাদের এই চুক্তি রয়েছে।’
পাউবো রংপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘কাজটিতে তাড়াহুড়োর কারণে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। ওই খাল লিজ দেওয়া ছিল। এপ্রিল পর্যন্ত তাতে পানি ছিল, আবার মে মাসে নতুন করে পানি হয়েছে। মূলত পানি ও মাটির সমস্যার কারণে এই ধস।’
‘তিনি বলেন, ‘কাজের কোনো সমস্যা হলে ঠিকাদার এক বছর মেরামত করে দেবেন। সেই হিসেবে তারা কাজ করছে।’
১১৩ দিন আগে
মজুদ করা আলু নিয়ে বিপাকে লালমনিরহাটের কৃষক-ব্যবসায়ীরা
আলুর দাম না থাকায় হিমাগারে সংরক্ষিত আলু নিয়ে মহাবিপদে পড়েছেন লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলার কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। হিমাগারে রাখা ৬০ কেজির এক বস্তা আলুর উৎপাদন ব্যয় ও ভাড়া মিলিয়ে প্রায় দেড় হাজার টাকা খরচ পড়লেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়। এতে প্রতি বস্তায় লোকসান হচ্ছে অন্তত ৬০০ টাকা।
কৃষকরা বলছেন, বাজারে দাম না থাকায় তারা আলু বিক্রি করছেন না। ফলে হিমাগারে মজুদ কমছে না। গত বছর এ সময়ে হিমাগার থেকে ৪০ ভাগ আলু বিক্রি হলেও এ বছর এখন পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে ২০ ভাগেরও কম। এতে লোকসানের পাশাপাশি নতুন করে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন হিমাগার মালিকরাও।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে ৭ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৪ হাজার টন। জেলার ৯টি হিমাগারে সংরক্ষণ করা হয়েছে ৭৮ হাজার টন আলু।
এ বছর আলুর উৎপাদন বেশি হওয়ায় মৌসুমের শুরু থেকেই কৃষকরা আশানুরূপ দাম পাননি। অথচ গত বছর ভালো দাম থাকায় কৃষক ও ব্যবসায়ী উভয়েই লাভবান হন। সেই ধারাবাহিকতায় এবার অধিকাংশ ব্যবসায়ীও কৃষকদের পাশাপাশি হিমাগারে আলু মজুদ করেছিলেন।
আরও পড়ুন: ওএমএসের মাধ্যমে আলু বিক্রির চিন্তা করছে সরকার: কৃষি উপদেষ্টা
হিসাব অনুযায়ী, হিমাগারে আলু মজুদের সময় এক বস্তার খরচ হয়েছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা। এর সঙ্গে ভাড়া যোগ করে মোট খরচ দাঁড়িয়েছে প্রায় দেড় হাজার টাকা। কিন্তু চার মাস সংরক্ষণের পর এখন ওই এক বস্তা আলু বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়। সেখান থেকে হিমাগার ভাড়া বাদ দিলে কৃষকের হাতে থাকছে মাত্র ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।
১১৩ দিন আগে
জাকসু নির্বাচন: সাইবার বুলিং ও সামাজিক হেনস্তা, প্রার্থিতায় অনাগ্রহ নারীদের
আসন্ন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে বর্তমান নানা বাস্তবতায় নারীদের অংশগ্রহণ সীমিত হয়েছে বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা। ভোটারদের মধ্যে অর্ধেক নারী। তবুও সাইবার বুলিং, সামাজিক হেনস্তা, চরিত্রহনন, ব্যক্তিগত আক্রমণ, ছবি বিকৃতির ভয়, পরিবার-সমাজ থেকে নিরুৎসাহিত করা, সমান সুযোগ সুবিধার অভাব, পুরুষ-প্রধান রাজনীতির সংস্কৃতি ও অনুকূল পরিবেশের অভাবকে দায়ী করছেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আসন্ন জাকসু নির্বাচনে নারীদের অনাগ্রহের পেছনে কিছু কারণ রয়েছে। প্রথমত, ৩৩ বছর পর জাকসু নির্বাচন হওয়ায় অনেকের মধ্যে পরিষ্কার ধারণা নেই। আবার সক্রিয় রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর অংশগ্রহণের কারণে অনেকেই এটিকে রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে দেখছে। তাই অনেকেই প্রার্থী হতে অনীহা প্রকাশ করছেন।
তারা জানান, নির্বাচনে প্রার্থিতায় অনীহার বড় একটি কারণ হলো সাইবার বুলিং ও সামাজিক হেনস্তা। চরিত্রহনন, গুজব, প্রপাগাণ্ডা, ছবি বিকৃতির ভয় নারীদের নির্বাচন থেকে দূরে রেখেছে। এছাড়াও পরিবার বা আত্মীয় স্বজনদের থেকে অনাগ্রহ, আপত্তি ও নিরুৎসাহিত করা, নির্বাচনে অনুকূল পরিবেশের অভাব এবং সমান সুযোগ-সুবিধার অভাব তাদের নির্বাচনবিমুখ করেছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক নারী শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের আরেকটি অংশ বলছেন, বিগত জুলাই আন্দোলনের পর থেকে দেশের ক্যাম্পাসগুলোতে একাধিক নারী নেতৃত্ব তৈরি হয়েছে। কিন্তু তারাও সাইবার বুলিং ও সামাজিক হেনস্তার শিকার হওয়া থেকে দূরে থাকতে পারেননি। সেই জায়গায় জাকসু নির্বাচনে নির্দিষ্ট কোনো প্যানেলে যুক্ত হয়ে নির্বাচন করা তাদের জন্য দুরূহ ব্যাপার বলেই মনে করছেন কেউ কেউ।
পড়ুন: ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন: ভোটার তালিকা ওয়েবসাইটে প্রদর্শন বন্ধ থাকছে
আসন্ন জাকসু নির্বাচনে 'শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম' প্যানেল থেকে এজিএস (ছাত্রী) প্রার্থী মালিহা নামলাহ বলেন, ‘নারীদের প্রার্থী না হওয়ার পিছনে প্রধান কারণ হলো সাইবার বুলিং ও হেনস্তা। সবক্ষেত্রে সমান সুযোগ সুবিধা না পাওয়াও প্রধান কারণ। ব্যক্তিগত আক্রমণ, প্রপাগাণ্ডা, চরিত্রহননের ভয় তো থাকেই। এছাড়াও ছাত্ররাজনীতি নিয়ে অনীহা এবং পরিবার বা আত্মীয় স্বজন থেকে অনীহা এবং আপত্তির কারণেও নারীরা ফ্রন্ট লাইনে আসতে চায় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদি সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা যায় এবং বিভিন্ন সেমিনার বা ক্যাম্পেইন আয়োজন করা যায় তাহলে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়বে। এছাড়াও সাইবার বুলিংকারীদের আইনের আওতায় নিয়ে এসে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করলে এবং সমান সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করলে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।’
'সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট' প্যানেল থেকে এজিএস (ছাত্রী) প্রার্থী আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা বলেন, ‘‘নারীদের নেতৃত্বে না আসার প্রধান কারণ আমাদের সমাজ ব্যবস্থা। কোনো নারী যখন নেতৃত্বে আসতে চায়, তখন সাইবার বুলিং, ট্যাগিং, ব্যাশিংয়ের শিকার হয়। চরিত্র তুলে কথা বলা হয়। ইসলামী মতাদর্শের হলে 'ছাত্রীসংস্থার' বলা হয় আর মুক্তমনা হলে 'শাহাবাগী গোসল কর' বলা হয়৷’’
তিনি আরও বলেন, ‘একজন নারী যখন নেতৃত্বে আসতে চান, তখন তার পরিবার চিন্তা করে তার মেয়ের সঙ্গে নোংরামো হবে। এই একটি মাত্র ভয়ে মেয়েরা ইচ্ছা এবং যোগ্যতা থাকার পরেও পরিবারের বাধার কারণে সামনে আসতে পারে না।’
এদিকে জাকসু নির্বাচনে অংশ নিতে নারীদের অনাগ্রহের কারণে কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ এবং হল সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী সংকট দেখা দিয়েছে। মেয়েদের অধিকাংশ হলে একাধিক পদে কোনো প্রার্থী পাওয়া যায়নি, ফলে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘাটতি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
মেয়েদের হলে প্রার্থী সংকট, একাধিক পদ শূন্য
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ২১টি আবাসিক হলে জাকসু নির্বাচনের প্রস্তুতি চললেও ছেলেদের ১১টি হলের প্রায় সব পদে একাধিক প্রার্থী নমিনেশন জমা দিয়েছেন।
অন্যদিকে মেয়েদের হলে চিত্র সম্পূর্ণ আলাদা- কোনো হলে ৬টি, কোথাও ১০টি আবার কোনো কোনো হলে ১১টি পদে মনোনয়নপত্র বিক্রি হলেও বহু পদ শূন্য থেকে গেছে।
জাকসু নির্বাচনে এবার কেন্দ্র ও হল মিলিয়ে মোট ৮১৩টি মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হলেও নমিনেশন জমা পড়েছে মোট ৭৪০টি। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে জমা হয়েছে ২৭৩টি এবং হলভিত্তিক জমা পড়েছে মোট ৪৬৭টি মনোনয়নপত্র।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী-কেন্দ্রীয় সংসদের জন্য ২৯৯টি মনোনয়নপত্র দেওয়া হলেও জমা হয়েছে ২৭৩টি। অন্যদিকে হল পর্যায়ে ৫১৪টি মনোনয়ন বিতরণ করা হলেও জমা পড়েছে ৪৬৭টি।
পড়ুন: জাকসু নির্বাচন: 'সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট' নামে ছাত্রশিবিরের প্যানেল ঘোষণা
জাকসু নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, মেয়েদের হলগুলোর মধ্যে জাহানারা ইমাম হলে মনোনয়ন জমা পড়েছে ১৬টি, প্রীতিলতা হলে ১৩টি এবং বেগম খালেদা জিয়া হলে ১১টি। বেগম সুফিয়া কামাল হলে জমা পড়েছে ১০টি মনোনয়নপত্র। ১৩ নম্বর ছাত্রী হল (সাবেক শেখ হাসিনা হল) ও নওয়াব ফয়জুন্নেছা হলে জমা পড়েছে সর্বনিম্ন সংখ্যক মাত্র ৬টি করে মনোনয়ন।
অন্যদিকে, ১৫ নম্বর ছাত্রী হল (সাবেক বঙ্গমাতা হল), রোকেয়া হল ও বীর প্রতীক তারামন বিবি হলে জমা পড়েছে ১৭টি করে মনোনয়নপত্র। আর বেগম ফজিলাতুন্নেছা হলে জমা পড়েছে মোট ১৫টি মনোনয়ন।
এদুদি জাকসু নির্বাচনে পুরুষ প্রার্থীদের তুলনায় নারী প্রার্থীদের অংশগ্রহণ সীমিত হওয়ায় ক্যাম্পাসে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচনের পরিবেশ নারী শিক্ষার্থীদের জন্য অনুকূলে নয় এবং সাইবার বুলিং, সামাজিক হেনস্তাসহ প্রতিনিয়ত ট্যাগিং ও ব্যাশিংয়ের শিকার হচ্ছেন নারী শিক্ষার্থীরা। এতে করে ছাত্ররাজনীতি বা নির্বাচন থেকে তারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
অন্যদিকে শিক্ষকরা বলছেন, কাঠামোগত পরিবর্তন, পরিবার ও সমাজ থেকে নিরুৎসাহিত করা ও জাকসু নির্বাচন সম্পর্কে সম্মক ধারণা না থাকায় নারী শিক্ষার্থীরা নির্বাচনবিমুখ হতে পারেন।
সার্বিক বিষয়ে জাকসু নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের কাছে নারী শিক্ষার্থীদের হেনস্তা বা সাইবার বুলিংয়ের কোনো অভিযোগ এখনো আসেনি। অভিযোগ এলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
পড়ুন: জাকসু নির্বাচন: ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’ নামে বাগছাস সমর্থিত প্যানেল ঘোষণা
তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘ ৩৩ বছর পরে আমরা জাকসু নির্বাচন আয়োজন করতে যাচ্ছি। এখানে সবাইকে অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে। কাউকে হেনস্তা করা বা সাইবার বুলিং করে নির্বাচন থেকে দূরে রাখা কারো কাম্য নয়। এছাড়াও তিনি নির্বাচন আয়োজনে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।’
১১৩ দিন আগে
উত্তরে হারিয়ে যাচ্ছে শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী বাঁশ শিল্প
উত্তরের বিভিন্ন গ্রামে একসময় বাঁশ শিল্পের জমজমাট ব্যবসা ছিল। কিন্তু কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে সেই শিল্প। ডিজিটাল প্রযুক্তি প্রবেশ করায় গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী বাঁশ শিল্প এখন মুখ থুবড়ে পড়েছে।
রংপুর বিভাগীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প অধিদপ্তর জানায়, উত্তরের ৮ জেলার ১১৪টি গ্রামের মানুষ বাঁশ শিল্পে কর্মরত থেকে পরিবার-পরিজন পরিচালনা করত। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় দেশ ডিজিটাল এবং আধুনিকায়নের যুগে প্রবেশ করায় ঐতিহ্যবাহী এই শিল্প এখন হারিয়ে যেতে বসেছে।
রংপুরের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আবু জাফর জানান, একসময় বাঁশ শিল্পে এই অঞ্চলের ৭০ হাজার পরিবার তাদের জীবিকা নির্বাহ করত। কিন্তু বর্তমানে এই শিল্পে কর্মরত রয়েছে মাত্র ১২ হাজার পরিবার। প্রতিদিনই কমছে এই শিল্পের ব্যবহার। তাই এই শিল্পের শিল্পীরা এখন পেশা বদল করতে বাধ্য হচ্ছেন।
এই চিত্র শুধু রংপুরেই নয়, উত্তরের ৮ জেলা লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়েও। আধুনিকতার কারণে এসব জেলা থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে বাঁশ শিল্প।
তবে বিসিকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শিল্পটি ধরে রাখতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, একসময় বাঁশ কাটার শব্দে মুখর থাকত রংপুরের গঙ্গাচড়ার বড়বিল ইউনিয়নের মনিরাম গ্রাম। গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে ছিল বাঁশের তৈরি হস্তশিল্প— ডালি, কুলা, ঝুড়ি, চাটাই, হাঁস-মুরগির টোপা, মাছ ধরার ফাঁদ, হাতপাখা থেকে শুরু করে নানা প্রয়োজনীয় ও নকশাদার সামগ্রী। এই শিল্পই ছিল গ্রামের অনেক পরিবারের একমাত্র জীবিকা। তবে আধুনিকতার স্রোতে হারিয়ে যেতে বসেছে শত বছরের এই ঐতিহ্য। এখন বাঁশের কাজ করা মানুষগুলো টিকে থাকার লড়াইয়ে হেরে যাচ্ছেন।
মনিরামের প্রবীণ বাঁশশিল্পী আবদুল ওয়াহেদ (৮৫) বলেন, ‘আমার বাবার হাত ধরে এই কাজ শিখেছি। আগে অনেক অভাব-অনটন ছিল, এই কাজ করেই আমাদের ১৪ ভাই-বোনের সংসার চালাতেন বাবা। কখনোই হিমশিম খেতে হয়নি তাকে। বাবার আমল থেকে বাঁশের কাজ করছি। কিন্তু আগে যেমন বেচাবিক্রি হত, এখন আর সে রকম হয় না।’
নগরায়নের দৌঁড়ে পাল্লা দিয়ে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগছে বাংলাদেশের গ্রামগুলোতেও। ফলে গড়ে উঠছে নতুন নতুন জনবসতি। কমে যাচ্ছে কৃষি জমি ও বনাঞ্চল। গ্রামাঞ্চলে এখন বাঁশবন উজাড় করা হচ্ছে। তাই একদিকে বাড়ছে বাঁশের দাম, অন্যদিকে কমছে এর সহজলভ্যতা। ফলে এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে বাঁশশিল্পীদের কর্মসংস্থানে।
মনিরামের বাঁশশিল্পী কেনজুল বলেন, ‘আগে বাঁশ শিল্পের সোনালী অতীত ছিল, এখন সেগুলো কেবলই গল্প। আগে বাঁশ পাওয়া যেত ৫০ থেকে ১০০ টাকায়। আর এখন কিনতে হয় ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়। একটা বাঁশ দিয়ে পাশ থেকে ছয়টি মুরগির টোপা তোলা সম্ভব। একটা টোপা আমরা পাইকারদের কাছে বিক্রি করি ১০০ টাকায়। তাহলে সারা দিন পরিশ্রম করেও আমাদের লাভ তেমন থাকে না।’
১১৪ দিন আগে
১৪ জেলায় নতুন ফায়ার স্টেশন নির্মাণ ও সংস্কার করছে সরকার
দ্রুত বর্ধনশীল শিল্পায়ন, নগরায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় আরও ২০টি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন নির্মাণ ও সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
পরিকল্পনা কমিশনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মানবসৃষ্ট ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণহানি ও সম্পদের ক্ষতি কমিয়ে আনার লক্ষ্যেই এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, যাতে খরচ হবে প্রায় ৬৫০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।
বাংলাদেশে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, অগ্নিকাণ্ড, সড়ক ও নৌদুর্ঘটনার মতো বিপর্যয় ঘটে চলেছে প্রতিনিয়ত। পাশাপাশি ভূমিকম্পের ঝুঁকিও এখানে অনেক বেশি, কারণ টেকটনিক প্লেটের সংঘর্ষ অঞ্চলে অবস্থিত আমাদের দেশ। তবে যথাযথ সরঞ্জামের অভাব থাকলেও এসব দুর্যোগে দ্রুত সাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স।
ওই কর্মকর্তা বলেন, বিশ্বের অন্যতম দুর্যোগপ্রবণ এই দেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সক্ষমতা জোরদার করতে ২০টি ফায়ার স্টেশন নির্মাণ এবং সংস্কার করা হবে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের ১৪টি জেলার ফায়ার সার্ভিসের সেবার আওতার বাইরে থাকা ১০টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এসব স্টেশন নির্মাণ এবং সংস্কার করা হবে। এর মধ্যে ১২টি হবে নতুন স্টেশন এবং ৮টি স্টেশনের সংস্কার করা হবে।
আরও পড়ুন: ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে হঠাৎ ফায়ার এলার্ম, সাময়িক স্থগিত সংলাপ
২০২৫ সালের জুলাই থেকে এই কাজ শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ২০২৮ সালের জুন পর্যন্ত তিন বছর মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে। সরকারের অর্থায়নে এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন করছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। পাশাপাশি গণপূর্ত অধিদপ্তরকেও এই কর্মযজ্ঞে যুক্ত করা হবে।
এ ছাড়া পরিবর্তিত দুর্যোগ পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশেষায়িত ইউনিট গঠন এবং সারা দেশে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কার্যক্রম সম্প্রসারণের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
এই প্রকল্পের নথি ইউএনবির হাতে এসেছে। নথি অনুযায়ী, প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট উভয় ধরনের দুর্যোগে দ্রুত ও কার্যকর সাড়া দেওয়ার মাধ্যমে সম্পদ ও প্রাণহানি কমিয়ে দেশকে একটি শক্তিশালী দুর্যোগ নিরাপত্তা নেটওয়ার্কের আওতায় আনার লক্ষ্যে এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার।
নথিতে বলা হয়েছে, দেশে শিল্পায়ন ও নগরায়ন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দুর্যোগের ধরনও পরিবর্তিত হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি এখন রাসায়নিক দুর্ঘটনা, ভবন ধস, বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ড, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, বিদ্যুৎকেন্দ্র, তেল শোধনাগার ও কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগার মতো ঘটনা বাড়ছে।
এসব দুর্যোগ ও দুর্ঘটনা মোকাবিলায় ইতোমধ্যে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় ফায়ার স্টেশন গড়ে তোলা হয়েছে। তবে দীর্ঘমেয়াদে টেকসই দুর্যোগ মোকাবিলা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে প্রতিটি উপজেলায় অন্তত একটি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
প্রকল্পের প্রধান বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে— মূল ভবন, ইউটিলিটি ও আবাসিক ভবন, পানি সরবরাহ ব্যবস্থা, বৈদ্যুতিক অবকাঠামো, প্রশিক্ষণ টাওয়ার, রিসেপশন এলাকা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার সরঞ্জাম সংগ্রহ।
এ লক্ষ্যে ছয়টি বিভাগের বিভিন্ন সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও উপজেলায় স্টেশন নির্মাণের জন্য মোট ৮.৭১ একর জমি অধিগ্রহণ বা ক্রয় করা হবে।
আরও পড়ুন: বৈঠক চলাকালে ফায়ার এলার্মের ঘটনার তদন্ত চায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন
প্রকল্পের বিভিন্ন খাতে ব্যয়ের মধ্যে রয়েছে— ২০টি ফায়ার স্টেশনের মূল ভবন নির্মাণে ২১১ কোটি ৮২ লাখ ২৭ হাজার টাকা, পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় ১২ কোটি ৮ লাখ টাকা, বৈদ্যুতিক অবকাঠামো নির্মাণে ৪৯ কোটি ৮৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা, ইউটিলিটি ও আবাসিক ভবনে ৮০ কোটি ৮৩ লাখ ৬৪ হাজার টাকা; ড্রেন, প্রশিক্ষণ টাওয়ার, রিসেপশন, ওয়াকওয়ে ও জ্বালানি গুদাম নির্মাণে ৯ কোটি ৭৩ লাখ ৮৭ হাজার টাকা; জমি অধিগ্রহণ ও ক্রয়ে ৩৩ কোটি ৮৩ লাখ ৯১ কোটি টাকা এবং অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার সরঞ্জাম কিনতে ১৯০ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তা জানান, প্রকল্পটি অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সক্ষমতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি ব্যবহারের লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অনুযায়ী দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসের উদ্দেশ্য পূরণেও সহায়ক হবে।
তিনি আরও বলেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় ফায়ার সার্ভিসের আওতা বাড়বে, সেই সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতাও জোরদার হবে। এতে করে তাৎক্ষণিক ও কার্যকর দুর্যোগ মোকাবিলা আরও সহজ হবে বলে মন্তব্য করেন ওই কর্মকর্তা।
১১৪ দিন আগে
সংস্কার হয়নি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ২৮৪ বিদ্যালয়, ফেরত গেল সাড়ে ১২ কোটি টাকা
ফেনীর ৬ উপজেলায় ২০২৪ সালের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৩১৪টি ক্ষতিগ্রস্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মেরামত ও সংস্কারের জন্য ১২ কোটি ৯৯ লাখ ৭০ হাজার ৮১২ টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার। তার মধ্যে ৩০টি বিদ্যালয়ের মেরামত ও সংস্কার কাজে মাত্র ৩১ লাখ ৭৩ হাজার ৩৩৪ টাকা ব্যয় হলেও বাকি ২৮৪টি বিদ্যালয়ের সংস্কার না করেই অবশিষ্ট ১২ কোটি ৬৭ লাখ ৯৭ হাজার ৪৭৮ টাকা ফেরত গিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলীর দাবি, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) থেকে কোনো নির্দেশনা না পাওয়ায় বিদ্যালয়গুলোর মেরামত সম্ভব হয়নি। যে কারণে বরাদ্দকৃত টাকা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে ফেরত চলে গিয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, বিদ্যালয়গুলোর সংস্কারে চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে সময়মতো ২৮৪টি বিদ্যালয়ের সংস্কার কার্যক্রম শুরু না করায় সেই অর্থ ফেরত চলে গিয়েছে।
আরও পড়ুন: ফেনীতে বন্যা: সব হারিয়ে নিঃস্ব ৪৯ পরিবার, ক্ষতিগ্রস্ত ৯১৫ ঘরবাড়ি
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেড় লাখ টাকার নিচে বরাদ্দ পাওয়া ৩০টি বিদ্যালয় মেরামত সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ২৮৪টি বিদ্যালয়ের প্রত্যেকটি দেড় লাখ টাকার বেশি বরাদ্দ পাওয়ায় সেগুলো মেরামতের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা প্রকৌশলীকে চিঠি দেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। তবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে কোনো নির্দেশনা না পাওয়ায় উপজেলা প্রকৌশলী মেরামত কাজে অনীহা প্রকাশ করেন। এরপর সময়মতো টেন্ডার আহ্বান না করায় প্রকল্পের নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। ফলে জেলার অধিকাংশ বিদ্যালয়ের মেরামত বাকি থাকলেও বরাদ্দকৃত অবশিষ্ট টাকা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে ফেরত যায়।
ফেনীতে ৫৫৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ফেনী সদর উপজেলায় ১৫১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১১৫টি বিদ্যালয় মেরামতের জন্য ৫ কোটি ২ লাখ ২৬ হাজার ৫১৪ টাকা বরাদ্দ আসে। এর মধ্যে ৫ লাখ ৬২ হাজার ১৫৯ টাকা ব্যয়ে মাত্র পাঁচটি বিদ্যালয়ের সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ১১০টি বিদ্যালয়ের মেরামত ও সংস্কারের জন্য বরাদ্দ ৪ কোটি ৯৬ লাখ ৬৪ হাজার ৩৫৫ টাকা ফেরত গেছে।
দাগনভূঞা উপজেলায় ১০২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে গত বছরের বন্যায় ১৬টি বিদ্যালয়ের আসবাবপত্রসহ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মেরামতের জন্য সেখানে মোট ৭৬ লাখ ১১ হাজার ৯৬০ টাকা বরাদ্দ পেলেও মেরামত কাজ বাস্তবায়নের জন্য দাগনভূঞা উপজেলা প্রকৌশলীর কোনো সহযোগিতা না পাওয়ায় টাকাগুলো ফেরত চলে যায়।
সোনাগাজী উপজেলার ১১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১০২টি বিদ্যালয় মেরামতের জন্য ২ কোটি ৮৩ লাখ ২৯ হাজার ৯৪১ টাকা বরাদ্দ আসে। এর মধ্যে ২৫টি বিদ্যালয়ের সংস্কারে ২৬ লাখ ১১ হাজার ১৭৫ টাকা ব্যয় করা হয়। বাকি ৭৭টি বিদ্যালয়ের বরাদ্দকৃত ২ কোটি ৫৭ লাখ ১৮ হাজার ৭৬৬ টাকা ফেরত গেছে।
এ ছাড়া ছাগলনাইয়া উপজেলায় ৭৮টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ৬৫টি বিদ্যালয় মেরামতের জন্য ৩ কোটি ৫১ লাখ ৬৬ হাজার ৯৭৮ টাকা, পরশুরাম উপজেলায় ৭টি বিদ্যালয়ের জন্য ২৯ লাখ ৫৮ হাজার ৮৭৫ টাকা এবং ফুলগাজী উপজেলায় ৯টি বিদ্যালয়ের জন্য ৫৫ লাখ ৭৬ হাজার ৫৪৬ টাকা ফেরত চলে গেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়গুলোর প্রধান শিক্ষকরা জানান, সময় কম থাকায় বরাদ্দ পেলেও তা কাজে লাগানো যায়নি। এতে বিদ্যালয়গুলো পাঠদানের উপযোগী হয়ে ওঠেনি। অনেক শিক্ষক বাধ্য হয়ে নিজ পকেটের টাকা খরচ করে জরুরি সংস্কার কাজ করেছেন যা ফেরত পাওয়ার ব্যাপারেও এখন অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয়েছিল ফেনী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুলতানা নাসরিন কান্তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বরাদ্দ বাস্তবায়নে দরপত্র করার মতো সময় ছিল না বলেই অর্থ ফেরত গেছে। তবে বিষয়টি যেহেতু গুরুত্বপূর্ণ, তাই আগামী অর্থবছরে ফের বরাদ্দ চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দেওয়া হবে।’
আরও পড়ুন: মেরামত হয়নি বেড়িবাঁধ, বন্যার আশঙ্কায় আতঙ্কে ফেনীবাসী
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফিরোজ আহাম্মেদ বলেন, ‘গত অর্থবছর শেষ হওয়ার আগেই এই বরাদ্দ আসে। সময় কম থাকায় অর্থ ব্যয় সম্ভব হয়নি। তবে বছরের শুরুতে এই বরাদ্দ এলে বা মেয়াদ বৃদ্ধি করলে তা সংস্কার কাজে ব্যয় করা যেত।’
তিনি আরও জানান, দেড় লাখ টাকার কম বরাদ্দ হলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সরাসরি খরচ করতে পারে। তার বেশি হলে উপজেলা প্রকৌশলীর মাধ্যমে ব্যয় করতে হয়।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহমুদ আল ফারুক বলেন, ‘প্রাথমিক বিদ্যালয় মেরামত ও সংস্কার কাজের বরাদ্দকৃত টাকা ফেরত যাওয়ার কথা জানা নেই। এ ব্যাপারে আমার সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেননি।’
ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) ফাতিমা সুলতানা বলেন, ‘আমরা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেছি। আশা করছি, চলতি অর্থবছরের আগস্ট মাসের মধ্যে অর্থ ফেরত পাব এবং নতুন করে ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলগুলোর সংস্কারকাজ শুরু করা হবে।’
১১৫ দিন আগে
উড়োজাহাজ কেনার আগে ব্যবস্থাপনায় সংস্কার, দক্ষ জনবল গড়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে একের পর এক যান্ত্রিক ত্রুটি ও শিডিউল বিপর্যয়ের ঘটনায় যাত্রীসেবা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন উড়োজাহাজ কেনা বা ইজারা নেওয়ার আগে বিমানের ব্যবস্থাপনা সংস্কার, দক্ষ পাইলট-ইঞ্জিনিয়ার ও কেবিন ক্রু তৈরি করা জরুরি। তারা মনে করেন, অদক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিমান চালালে আরও সংকটে পড়বে প্রতিষ্ঠানটি।
অ্যাডহক বেসিস কিংবা আমলাতন্ত্রের অদক্ষ লোক দিয়ে বিমানের কার্যক্রম পরিচালনা করলে হবে না। স্থায়ী, দক্ষ ও কমার্শিয়াল লোকজন দিয়ে তা করতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এয়ারক্রাফট কেনার ক্ষেত্রে ছোট এয়ারক্রাফট বা রিজনাল এয়ারক্রাফট ক্রয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ রিজনাল এয়ারক্রাফটে মেইনটেন্স খরচ কম।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে একের পর এক যান্ত্রিক ত্রুটির ঘটনা ঘটছে। কোনো উড়োজাহাজ মেরামতের পর উড্ডয়ন করছে, কোনোটা গ্রাউন্ডেড করা হচ্ছে। নিয়মিত শিডিউল বিপর্যয়ের পাশাপাশি বাতিল হচ্ছে ফ্লাইট। এর খেসারত দিতে হচ্ছে যাত্রী ও বিমান কর্তৃপক্ষকে।
গত এক মাসে দেশি-বিদেশি রুটে অন্তত ৯টি উড়োজাহাজে বিভিন্ন ধরনের ত্রুটি শনাক্ত হয়েছে। যদিও বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো গেছে, তবে এসব ঘটনায় যাত্রীসেবা ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
বিমান সুত্রে জানা যায়, যাত্রী ভোগান্তি কমাতে দুটি উড়োজাহাজ লিজ (ইজারা) নেওয়ার প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এর পাশাপাশি নতুন উড়োজাহাজ কেনার পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: লাগাতার কারিগরি ত্রুটি নিয়ন্ত্রণে বিমানের একাধিক পদক্ষেপ
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারস্পরিক বাণিজ্য ঘাটতি কমানো এবং বাড়তি শুল্ক প্রত্যাহারে কূটনৈতিক আলোচনার অংশ হিসেবে মার্কিন উড়োজাহাজ নির্মাতা কোম্পানি বোয়িংয়ের কাছ থেকে ২৫টি উড়োজাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। বিমান ক্রয়ের বিষয়টি সরকার ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করবে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র থেকে জানা গেছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এমন সিদ্ধান্ত জানালেও বিমান বাংলাদেশ এখনো কোনো চুক্তি করেনি বলে সংস্থাটি জানিয়েছে।
এ বিষয়ে বিমানের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য ও এভিয়েশন বিশ্লেষক কাজী ওয়াহিদুল আলম ইউএনবিকে বলেন, ‘নতুন উড়োজাহাজ ক্রয় ও লিজ নেওয়ার আগে ম্যানেজমেন্ট ঠিক করতে হবে। বিমানের ব্যব্যবস্থাপনা আরও গতিশীল করতে হবে। পাশাপাশি অভিজ্ঞ পাইলট, ইঞ্জিনিয়ার ও কেবিন ক্রু তৈরি করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের এয়ারক্রাফট সংকট আছে। অনেক এয়ারক্রাফট লাগবে, এটা ঠিক। তবে বিমানে পরিচালনা-সংক্রান্ত অভিজ্ঞতাও লাগবে। আগে প্রতিষ্ঠানকে বাঁচাতে হবে, তারপর এয়ারক্রাফট কিনতে হবে।’
এই এভিয়েশন বিশ্লেষক বলেন, ‘আমাদের দক্ষ পাইলট, ইঞ্জিনিয়ার ও কেবিন ক্রু তৈরি করতে হবে। দেশের বাইরে থেকে পাইলট, ইঞ্জিনিয়ার ও কেবিন ক্রু আনতে গেলে অনেক টাকার প্রয়োজন। বিদেশ থেকে নিয়োগ দিলে তাদের বেতন দিতে হবে প্রায় ১০ হাজার ডলার। তাই দেশেই দক্ষ জনবল তৈরী করতে হবে আগে।’
তিনি বলেন, ‘অ্যাডহক বেসিস বা ব্যুরোক্রেসির অদক্ষ ম্যানেজমেন্ট দিয়ে বিমান চালালে হবে না। স্থায়ী দক্ষ ও কমার্শিয়াল লোকজন দিয়ে বিমান চালাতে হবে।’
আরও পড়ুন: ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিমানে রেকর্ড ৯৩৭ কোটি টাকা মুনাফা
‘আরেকটি বিষয় হচ্ছে, এয়ার ক্রাফট ক্রয় করার ক্ষেত্রে ছোট এয়ারক্রাফট বা রিজনাল এয়ারক্রাফট ক্রয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ আমাদের লং রুট কম, শর্ট রুট বেশি। তাছাড়া ছোট বা রিজনাল এয়ারক্রাফটে মেইনটেন্স খরচও কম, বড় এয়ারক্রাফটে যা অনেক বেশি।’
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশের জন্য কী ধরনের বিমান দরকার, সেটি আগে স্টাডি করে তারপর বিমান কিনতে যাওয়া উচিৎ। মনে রাখতে হবে, আমাদের লং রুট মাত্র ৪/৫টি দেশের সঙ্গে। শর্ট রুটই বেশি আমাদের। ১২টি ছোট এয়ারক্রাফট কিনলে ৮টি বড় এয়ারক্রাফট কেনা যেতে পারে। ছোটর মধ্যে ৭৩৭, আর বড় কিনলে ৭৭৭/৭৮৭ এয়াক্রাফট।’
একের পর এক যান্ত্রিক ত্রুটির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বহরের বেশিরভাগ উড়োজাহাজ অনেক পুরনো হওয়ায় সমস্যা নিয়মিত দেখা দিচ্ছে। আরও তদারকি বাড়াতে হবে। তবে এসব ত্রুটি প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।’
‘যেহেতু উড়োজাহাজগুলো পুরনো, তাই নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও মান নিয়ন্ত্রণ পরীক্ষা করতে হবে। ইঞ্জিনিয়ার ও পাইলট নিয়োগে স্বজনপ্রীতি করা যারে না। যোগ্য লোক নিয়োগ দিতে হবে।’
বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বহরে রয়েছে ১৯টি উড়োজাহাজ। এর মধ্যে ১৪টি যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং এবং ৫টি কানাডার ড্যাশ-৮ কিউ৪০০ মডেলের। বোয়িংয়ের উড়োজাহাজগুলোর মধ্যে রয়েছে ৪টি বোয়িং ৭৩৭-৮০০, ৪টি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর, ৪টি বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার ও দুটি বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার।
১১৬ দিন আগে
জাকসু নির্বাচন: ভিপি-জিএস-এজিএস হিসাবে আলোচনায় যারা
সুদীর্ঘ ৩৩ বছরের অচলাবস্থা ভেঙে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে অবশেষে আগামী ১১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলো তাদের প্যানেল গোছাতে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ত সময় পার করছে।
এবারের জাকসু নির্বাচনে মোট ২৫ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন প্রার্থীরা। প্রার্থী হতে বয়সের কোনো বাধা না থাকলেও স্নাতক অথবা স্নাতকোত্তরের নিয়মিত শিক্ষার্থী হতে হবে।
জাকসু নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ হাজার ৯১৯ জন। জাকসু সভাপতি এবং কোষাধ্যক্ষ পদ দুটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হাতে থাকলেও, আগের মতো শিক্ষার্থীদের হাতে থাকছে সহ-সভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) মতো গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো।
তবে এবার গঠনতন্ত্রে কিছুটা সংস্কার করা হয়েছে। সংযোজন করা হয়েছে নতুন কিছু পদ, বিশেষ করে ছাত্রীদের জন্য নির্ধারিত পদ। সেগুলো হলো— যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী), সহ-ক্রীড়া সম্পাদক (নারী), সহ-সমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক (নারী)। এছাড়া কার্যকরী সদস্য হিসাবে থাকবেন তিনজন নারী।
আরও পড়ুন: জাকসু নির্বাচন: দ্বিতীয় দিন শেষে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন ৩২৮ প্রার্থী
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার জাকসুতে পাঁচ থেকে ছয়টি প্যানেল হতে পারে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের পক্ষ থেকে একটি প্যানেল আসতে পারে বলে সংগঠনের একাধিক নেতাকর্মী জানিয়েছেন।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ সেশনের বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকিউলার বায়োলজি বিভাগের শিক্ষার্থী এবং বিগত জুলাই আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা ছাত্রদল নেতা আব্দুল গাফফার জিসান এবং ২০১৮-১৯ সেশনের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী শেখ সাদি ভিপি প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আছেন।
এছাড়া জিএস পদে ২০১৯-২০ সেশনের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী হামিদুল্লাহ সালমান, ২০১৯-২০ সেশনের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী রুবেল মিয়া এবং একই সেশনের নাটক ও নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান ইমন এজিএস প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন।
এবারের নির্বাচনে চমক দেখাতে পারে ২৪-এর গণঅভ্যুত্থান থেকে উঠে আসা বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস)। সংগঠনের জাবি শাখার আহ্বায়ক ২০১৭-১৮ সেশনের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল ভিপি প্রার্থী, ২০১৯-২০ সেশনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম জিএস প্রার্থী এবং ২০২০-২১ সেশনের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী জিয়াউদ্দিন আয়ান এজিএস প্রার্থী হতে পারেন বলে নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের দুইটি আলাদা প্যানেল হতে পারে। ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সদ্য সাবেক সভাপতি অমর্ত্য রায় বলেন, ‘আমাদের প্যানেলে অনেকেই যুক্ত হতে পারেন। আমি সভাপতি ও ভিপি প্রার্থী এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক জোটের একাংশের সভাপতি ফাইজা মেহেজাবিন জিএস প্রার্থী হতে পারেন।’
অন্যদিকে ছাত্র ইউনিয়নের অপর অংশের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ইমন জানান, ‘আমরা বিভিন্ন মতের শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি ইনক্লুসিভ প্যানেল করব। আমাদের প্যানেলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক জোটের অন্য অংশের সভাপতি মাহফুজুর রহমান মেঘ ভিপি প্রার্থী, ছাত্র ইউনিয়ন একাংশের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ইমন জিএস প্রার্থী এবং সেক্রেটারি তানজিম ইসলাম এজিএস প্রার্থী হতে পারেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সংগঠক ও নাটক ও নাট্যকলা ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী সোহাগি সামিয়া এবং দর্শন বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী সজিব আহমেদ জেনিচের নেতৃত্বে আলাদা দুটি প্যানেল হতে পারে।
দীর্ঘ ৩৫ বছর পর ইসলামী ছাত্রশিবিরও এবার প্যানেল দেবে। সংগঠনের সভাপতি মুহিবুর রহমান মুহিব জানিয়েছেন, ‘আমাদের প্যানেলে ২০১৮-১৯ সেশনের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মাজহারুল ইসলাম ফাহিম ভিপি প্রার্থী, ২০১৯-২০ সেশনের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী শাফায়াত মীর জিএস প্রার্থী এবং একই সেশনের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী ফেরদৌস আল হাসান এজিএস প্রার্থী হবেন।’
আরও পড়ুন: জাকসু নির্বাচন সামনে রেখে ১৬ আগস্টের মধ্যে অছাত্রদের হল ছাড়ার নির্দেশ
জাবিতে সক্রিয় গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক ২০১৭-১৮ সেশনের তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আব্দুর রশিদ জিতু নেতৃত্বে একটি স্বতন্ত্র প্যানেল হতে পারে।
মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময়সীমা ১৮ ও ১৯ আগস্ট থাকলেও শিক্ষার্থীদের দাবিতে তা দুদিন বাড়িয়ে ২১ আগস্ট দুপুর ২টা পর্যন্ত করা হয়েছে।
জাকসু নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ২১ আগস্ট বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে। যাচাই-বাছাই ২১ থেকে ২৪ আগস্ট, খসড়া প্রার্থী তালিকা প্রকাশ ২৫ আগস্ট। বৈধতা-বাতিলের আপিলের শেষ তারিখ ২৬ আগস্ট, শুনানি ও রায় ২৭ আগস্ট, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৮ আগস্ট। চূড়ান্ত তালিকা ২৯ আগস্ট প্রকাশ হবে। নির্বাচনী প্রচার ২৯ আগস্ট থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে। ভোটগ্রহণ হবে ১১ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।
১১৬ দিন আগে