বিশেষ সংবাদ
মেঘনার পাড় ঘেঁষে বালু উত্তোলন: হুমকিতে বাঁধ, আতঙ্কে স্থানীয়রা
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা নদীর পাড় ঘেঁষে অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন চলছে। এতে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে মেঘনা-ধনাগোদা বন্যা নিয়ন্ত্রণ সেচ প্রকল্পের ৬৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। ফলে স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
এই বাঁধের মধ্যে মতলব দক্ষিণের একটি গ্রাম ও মতলব উত্তরের ১৪টি ইউনিয়ন অবস্থিত। সেখানকার জনসংখ্যা প্রায় ৭ লাখ।
গত কয়েকদিন উপজেলার মেঘনা নদী অববাহিকার দশানি, ষাটনল, নাছিরাকান্দি, বোরচর এলাকা ঘুরে প্রকাশ্যে ড্রেজার দিয়ে বালু তুলতে দেখা গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বালু সন্ত্রাসী কিবরিয়া মিয়াজি ও তার সহযোগীরা দীর্ঘদিন ধরেই মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছেন। তাদের এই ধরনের কাজে জড়িত থাকায় দুপক্ষের বিরোধে গোলাগুলিতে একাধিক ব্যাক্তি মারা গেছে, আহত হয়েছে আরও অনেকে। এসব ঘটনায় এখনো মামলা চলছে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো কঠোর পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না। এতকিছুর পরও কীভাবে বালু উত্তোলন হচ্ছে?
দশানি গ্রামের মাজেদুর রহমান বলেন, ‘কী বলমু ভাই, দিন-রাইত ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু তোলে। পাড় ধসে আমাদের ফসলি জমি ও বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বেড়িবাঁধ যদি ভেঙে যায়, তাহলে পুরো মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে তলিয়ে যাবে। কোটি কোটি টাকার সম্পদ শেষ হয়ে যাবে, অথচ কেউ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’
আরও পড়ুন: পদ্মায় বালু উত্তোলনের দায়ে ৪ জনের কারাদণ্ড, একজন মুচলেকায় মুক্ত
ওই এলাকার আরেক বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘প্রশাসনকে বারবার জানালেও কোনো ফল পাইনি। মনে হয় বালু সিন্ডিকেটের কাছে প্রশাসনও জিম্মি। সরকার পরিবতর্ন হলেও কোনো কাম হচ্ছে না।’
১১৭ দিন আগে
নির্বাচন সামনে রেখে সেপ্টেম্বরের মধ্যেই নতুন ডিসিদের নিয়োগ
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে খুব শিগগিরই দেশের সব জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ দিতে যাচ্ছে সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেই নতুন ডিসিদের নিয়োগ চূড়ান্ত করা হবে। এরই মধ্যে নতুন ফিটলিস্ট তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
ইতিমধ্যে সিলেট জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এবার ডিসি নিয়োগে কোনো ধরনের রাজনৈতিক সুবিধাভোগী বা বিতর্কিত কর্মকর্তাকে স্থান দেওয়া হবে না। কেউ ছলচাতুরী বা তথ্য গোপন করে ডিসি পদে নিয়োগ পেলে এবং পরে তা প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইতিমধ্যে গত ১৮ আগস্ট সিলেটের নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ পেয়েছেন প্রশাসনের আলোচিত সেই ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারওয়ার আলম। উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা সারওয়ার আলম বর্তমানে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের একান্ত সচিব (পিএস) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ফিটলিস্ট প্রস্তুত প্রক্রিয়া
চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি থেকে নতুন ফিটলিস্ট তৈরির কাজ শুরু করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর অংশ হিসেবে ছয় ধাপে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২৫তম ও ২৭তম ব্যাচের ২৬৯ জন উপসচিবের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। এর মধ্য থেকে অর্ধশতাধিক কর্মকর্তাকে ফিটলিস্টে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে ২৮তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মৌখিক পরীক্ষা চলছে।
জনপ্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে ২৪তম ব্যাচের ২৬ জন, ২৫তম ব্যাচের ২৫ জন এবং ২৭তম ব্যাচের ১২ জন কর্মকর্তা ডিসির দায়িত্বে রয়েছেন। তবে ২৪তম ব্যাচের ২১ জন কর্মকর্তা গত ২০ মার্চ যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেলেও এখনও মাঠ প্রশাসন থেকে তাদের প্রত্যাহার করা সম্ভব হয়নি।
পূর্বের বিতর্ক ও বর্তমান সতর্কতা
এর আগে ২০২৩ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ১০৮ জন কর্মকর্তার একটি ফিটলিস্ট থেকে ৬১ জেলায় ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। সেই নিয়োগ নিয়ে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়। অনেক কর্মকর্তা নিজেদের ‘বঞ্চিত’ দাবি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন। মারামারি ও হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে, যা সরকারের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ণ করেছিল।
তাছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সুবিধা পাওয়া একাধিক কর্মকর্তা গত বছরের ৫ আগস্টের পরও ডিসি পদে নিয়োগ পেয়েছেন। এসব নিয়ে সমালোচনার পর এবার সরকার অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করছে।
প্রশাসনে অস্থিরতা ও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিয়ে অসন্তোষ
কেবল ডিসি নিয়োগই নয়, বর্তমানে একাধিক মন্ত্রণালয় ও বিভাগে সচিব নেই এবং ভারপ্রাপ্ত সচিব দিয়ে চলছে। কর্মকর্তাদের দাবি, প্রশাসনের শীর্ষ পদগুলোতে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া ছিল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সবচেয়ে বড় ভুল।
তাদের মতে, এক দশক বা দেড় দশক আগে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তারা বর্তমানের ডিজিটাল প্রশাসন ব্যবস্থায় খাপ খাওয়াতে পারছেন না। তারা দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণেও সাহস পান না। এর ফলে প্রশাসনে শৃঙ্খলার অভাব দেখা দিয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে।
জনপ্রশাসনের অবস্থান
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগ) মো. এরফানুল হক ইউএনবিকে বলেন,
‘ডিসি নিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। কবে নাগাদ নিয়োগ হবে তা জনপ্রশাসনবিষয়ক কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে। তবে আমরা আশা করছি দ্রুতই নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হবে।’
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস-উর রহমান ইউএনবিকে বলেন,‘ডিসি ফিটলিস্ট থেকেই নিয়োগ দেওয়া হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে যোগ্য ও দক্ষ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হবে, যাতে কোনো প্রশ্ন না ওঠে।’
বিশেষজ্ঞ মতামত
সাবেক সচিব ও প্রশাসন বিশেষজ্ঞ এ কে এম আব্দুল আউয়াল মজুমদার বলেন,‘১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়নি। বর্তমান প্রশাসনের দুর্বলতা দ্রুত সমাধান করতে হবে। একটি সৎ, দক্ষ ও পেশাজীবী আমলাতন্ত্র ছাড়া রাষ্ট্র পরিচালনা সম্ভব নয়। এখনো সময় আছে—সরকারকে গুরুত্বপূর্ণ পদে যোগ্য লোক নিয়োগ দিয়ে প্রশাসনের প্রাণ ফিরিয়ে আনতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এ আমলাতন্ত্রের ওপর ভর করে রাষ্ট্র পরিচালনা করা সত্যিই অসাধ্য। তাই এখনো সময় আছে প্রশাসনের প্রাণ ফিরে আনতে হবে। মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও ডিসি সহ প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় যোগ্য ও দক্ষ লোক নিয়োগ দিতে হবে।’
নিয়োগে কমিটি
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, যুগ্ম সচিব ও তদূর্ধ্ব পদে নিয়োগ, বদলি ও শৃঙ্খলাজনিত বিষয়ে পরামর্শ প্রদানের জন্য চারজন উপদেষ্টা, মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং জনপ্রশাসন সচিবকে নিয়ে ‘জনপ্রশাসনবিষয়ক কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিই ডিসি নিয়োগসহ অন্যান্য বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন।
১১৭ দিন আগে
চীনা বিনিয়োগ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া, দীর্ঘমেয়াদে আশাব্যঞ্জক নয়
চলতি বছর মার্চে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরের বড় অংশজুড়ে ছিল বাংলাদেশে বিনিয়োগে দেশটির ব্যবসায়ীদের উদ্বুদ্ধ করা। এর অংশ হিসেবে সাম্প্রতিক সময় বাড়ছে চীনের বেসরকারি কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ। তবে এ নিয়ে ব্যবসায়ী এবং অর্থনীতিবিদদের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
চলতি বছর হংকংভিত্তিক কোম্পানি হান্ডা ইন্ডাস্ট্রিজ বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় চীনা বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। শুরুতে তারা ১৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের আশ্বাস দিলেও, পরবর্তীতে তা বাড়িয়ে ২৫০ মিলিয়ন ডলারে উত্তীর্ণ করেছে কোম্পানিটি। হান্ডা মূলত দেশের টেক্সটাইল খাতে বিনিয়োগ করবে। কোম্পানিটির দেওয়া দুটি পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এবং একটি নিট অ্যান্ড ডাইং প্রতিষ্ঠানে ২৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে।
আরেক চীনা কোম্পানি খিয়াশি চট্টগ্রামের মিরসারাইয়ে বেপজা ইকোনোমিক জোনে ৪০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। কোম্পানিটি বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে আন্ডারগার্মেন্টেসের ব্যবসা করছে, যেখানে ৩ হাজার ৭০০ বাংলাদেশি শ্রমিক কর্মরত আছে। এর অংশ হিসেবে মিরসারাইয়েও বড় আকারে আন্ডার গার্মেন্টেসের নতুন কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা খিয়াশির।
চীনের বিখ্যাত কোম্পানি চায়না লেসো গ্রুপ বাংলাদেশে ৩২.৭৭ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ নিশ্চিত করেছে। ইতোমধ্যে ন্যাশনাল স্পেশাল ইকোনোমিক জোনে কোম্পানিটিকে সাড়ে ১২ একর জমিও লিজ দিয়েছে বাংলাদেশ ইকনোমিক জোন অথরিটি (বেজা)।
এর আগের দুই কোম্পানি পোশাক খাতভিত্তিক বিনিয়োগ করলেও লেসো গ্রুপের বিনিয়োগ মূলত পিভিসি পাইপ, পিইএক্স পাইপ, সোলার প্যানেল, কিচেন ইকুইপমেন্ট, স্যানিটারি ওয়্যার, ওয়াটার পিউরিফাইয়ারসহ নানা ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য তৈরিতে।
আরও পড়ুন: ইউনানে বাংলাদেশিদের জন্য উচ্চমানের চিকিৎসাসেবার প্রতিশ্রুতি চীনের
বাংলাদেশে যখন অন্য কোনো দেশ থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) আসছে না, সেখানে চীনের বিনিয়োগ আশার আলো, নাকি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া তা নিয়ে আছে নানা মুনির নানা মত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, ‘১৯ খাতকে চার ক্যাটাগরিতে ভাগ করে বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে কাজ চালাচ্ছে বিডা। সেখানে ক্যাটাগরি ‘এ’-তে থাকা অ্যাপারেল, অ্যাডভান্স টেক্সটাইল এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ করেছে চীন। চীনের লেসো গ্রুপ যে বিনিয়োগ করেছে, এ ধরনের বিনিয়োগ তারা আগে বাংলাদেশে করেনি।’
ফিলিপাইন, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে চীনের অনেক কাজ থাকলেও বাংলাদেশে বেসরকারি চীনা কোম্পানির তেমন কোনো বিনিয়োগ নেই বললেই চলে। এ খাতে চীনের বিনিয়োগ দেশে দক্ষ মানবসম্পদ এবং কর্মসংস্থান গড়ে তুলতে সাহায্য করবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
তিনি আরও বলেন, ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে অনেক দেশই কাজ করছে, তারা দেশের বাইরে বিনিয়োগ করতে চায়। চীনের এই বিনিয়োগ সফল হলে অন্যান্য দেশও বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে উদ্বুদ্ধ হবে।’
তবে হঠাৎ করে বাংলাদেশে চীনের এমন আগ্রহকে ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের আঙ্গিকে দেখছেন অর্থনীতিবিদরা। এর বাইরে ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া এবং ফিলিপাইনে যে ধরনের বিনিয়োগ হয় তার তুলনায় বাংলাদেশের বিনিয়োগ অপ্রতুল বলে মনে করেন তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে দেশে মোট বৈদেশিক বিনিয়োগ এসেছে ১.২৭ বিলিয়ন ডলার, ২০২৩ সালে যা ছিল ১.৪৬ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে বৈদেশিক বিনিয়োগ কমেছে ১৯৩.৭৪ মিলিয়ন ডলার।
২০২৪ সালে চীন থেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ এসেছে ২০৮.২৩ মিলিয়ন ডলার, যা মোট বৈদেশিক বিনিয়োগের ১৬.৪০ শতাংশ। ২০২৩ সালে এই বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ২৩০.২৫ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশে বেশিরভাগ চীনা কোম্পানির বিনিয়োগই টেক্সটাইল এবং তৈরি পোশাকভিত্তিক।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতির সঙ্গে চীনা রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ
অন্যদিকে, পোশাকখাতে বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনামে চীনের বিনিয়োগ কয়েকগুণ বেশি। চীনের স্টেট কাউন্সিল ইনফরমেশন অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ভিয়েতনামে ২.৫ বিলিয়ন ডলারের ওপরে বিনিয়োগ করেছে চীন। ২০০৪ সাল থেকে ভিয়েতনামে প্রতি বছর চীনের বিনিয়োগ বেড়েছে ১৩.৫ শতাংশ।
এশিয়ার আরেক দেশ কম্বোডিয়ার বৈদেশিক বিনিয়োগের প্রায় ৫০ শতাংশের জোগানদাতা চীন। কাউন্সিল ফর দ্য ডেভলপমেন্ট অব কম্বোডিয়ার হিসাব অনুযায়ী, বিগত এক দশকে দেশটিতে চীনের বিনিয়োগ ছাড়িয়েছে ৩০ বিলিয়ন ডলার। রিজিওনাল কম্প্রেহেনসিভ ইকনোমিক পার্টনারশিপ (আরসিইপি) এবং চায়না-কম্বোডিয়া ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্টের (সিসিএফটিএ) আওতায় প্রতি বছর বাড়ছে দেশদুটির দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিধি।
এ অবস্থায় চলতি বছর বাংলাদেশে তিন চীনা কোম্পানির ৩২২ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ এবং প্রধান উপদেষ্টাকে প্রতিশ্রুত ১ বিলিয়ন ডলারের আশু বিনিয়োগ ‘বড় কিছু নয়’ উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, ‘সাধারণত এখন বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ আসার কথা না। তবে ভূ-রাজনৈতিক জায়গা থেকে বাংলাদেশে চীন তাদের ব্যবসার পরিধি বিস্তৃত করতে চাইছে। তার অংশ হিসেবেই এই বিনিয়োগ।’
চীন-যুক্তরাষ্ট্রের চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের মাঝে গেল এপ্রিলে চীনের ওপর আরোপিত যুক্তরাষ্ট্রের ৫৫ শতাংশ ট্যারিফের ক্ষতি এড়াতে দেশটি বিকল্প পথ হিসেবে অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশকেও বেছে নিয়েছে উল্লেখ করে আকাশ জানান, ‘ভূ-রাজনৈতিক কারণে দেশে কিছু বিনিয়োগ আসছে বটে, তবে প্রত্যাশার তুলনায় তা অপ্রতুল।’
চীনের সঙ্গে এমন বাণিজ্য ঘনিষ্ঠতা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন এই অর্থনীতিবিদ।
তবে এখানে শঙ্কার কিছু নেই উল্লেখ করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) ফেলো গবেষক অর্থনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘দ্বিপাক্ষিক এ সম্পর্কের জায়গায় বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক খারাপ হওয়ার সুযোগ নেই। ভিয়েতনাম-কম্বোডিয়ায় বাংলাদেশের চেয়েও কয়েক গুণ বড় বিনিয়োগ আছে চীনের।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের প্রধান খাতগুলোতে বিনিয়োগে আগ্রহী চীনা ব্যবসায়ীরা: বিডা
এই বিনিয়োগ ব্যতিক্রম কিছু নয় উল্লেখ করে মোস্তাফিজুর বলেন, ‘বাংলাদেশ ইউরোপ, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়ার বাজারে এখনো ডিউটি ফ্রি সুবিধা পাচ্ছে। এই সুবিধা কাজে লাগাতেই চীন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করছে। এ ছাড়া চীন এশিয়ার বাজারে নিজেদের বিস্তৃতি বাড়াচ্ছে। এমন নয় যে ভিয়েতনাম বা কম্বোডিয়ার বাজার স্থানান্তর হয়ে বাংলাদেশে আসছে।’
দেশের তৈরি পোশাকখাতে (আরএমজি) চলতি সময়ে চীনের বিনিয়োগকে আলাদা গুরুত্ব দিচ্ছেন না দেশীয় ব্যবসায়ীরাও। তারা বলছেন, ভিয়েতনাম এবং কম্বোডিয়ায় চীন আধুনিক প্রযুক্তির ম্যানুফেকচারিং এবং ইলেকট্রনিক্স কারখানা স্থাপন করছে। সেখানে বাংলাদেশে গড়পড়তা গার্মেন্টস কারখানা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে ঠিকই, কিন্তু উন্নত প্রযুক্তিতে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে পারছে না।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফেকচারারস অ্যান্ড এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, ‘দেশের আরএমজি খাত দেশীয় ব্যবসায়ীদের দ্বারাই স্বয়ংসম্পূর্ণ। এ খাতে চীনের বিনিয়োগ যতটা না গুরুত্বপূর্ণ, তার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হাইটেক ইলেকট্রনিক্স খাতে। ভিয়েতনাম-কম্বোডিয়ায় চীন সেমিকন্ডাক্টর বানাচ্ছে, আর বাংলাদেশে গড়ে তুলছে গড়পড়তা পোশাক কারখানা। এতে করে দেশের কর্মসংস্থানে দক্ষতা একমুখী হয়ে পড়ছে।’
চীন গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলেও প্রযুক্তিগত দক্ষতা ট্রান্সফার হচ্ছে না উল্লেখ করে শামীম জানান, বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পলিস্টার স্পিনিং কারখানা নেই, নেই বাইওক্সিয়ালি ওরিয়েন্টেড পলিপ্রোপেলিন (বিওপিপি) ফিল্ম কারখানা।
এসব পণ্যে বাংলাদেশ প্রায় পুরোটাই আমদানি নির্ভর। চীনের উচিত ছিল আরএমজি বা ম্যানুফেকচারিংয়ে এসব পণ্যে বিনিয়োগ করা। এতে করে বাংলাদেশ নতুন প্রযুক্তিতে দক্ষ হয়ে উঠত, রপ্তানি খাতেও বৈচিত্র্য আসতো বলে মনে করেন এ ব্যবসায়ী।
সাম্প্রতিক চীনা বিনিয়োগ দেশের অর্থনীতিতে সাময়িক সুফল আনলেও দীর্ঘমেয়াদে এর প্রভাব তেমন একটা আশাব্যঞ্জক নয় বলেই মত অর্থনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ীদের। তবে বিডা সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা, চীনের এই বিনিয়োগের মাধ্যমে এফডিআই খরা কাটতে শুরু করলে দেশের অন্যান্য খাতেও বৈদেশিক বিনিয়োগ আসতে শুরু করবে।
১১৮ দিন আগে
বহুল প্রতীক্ষীত তৃতীয় তিস্তা সেতু চালু হচ্ছে আজ
দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটতে যাচ্ছে তিস্তাপাড়ের মানুষের। আজ বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হতে চলেছে বহুল প্রত্যাশিত তৃতীয় তিস্তা সড়ক সেতু।
এর আগে পাঁচ দফা সময়সীমা পেছালেও অবশেষে সেতুটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে। প্রায় দেড় কিলোমিটার (১.৪৯ কিলোমিটার) দীর্ঘ এই সেতুটি কুড়িগ্রামের চিলমারী এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার মানুষের বহুকালের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিচ্ছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে নির্মিত এ সেতুর মূল কাঠামো নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩৬৭ কোটি টাকা। আর সংযোগ সড়ক, নদীশাসন, কালভার্ট ও জমি অধিগ্রহণে খরচ হয়েছে আরও ৩৬৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। তিস্তা নদীর বুকে এটি হলো তৃতীয় সড়ক সেতু। তবে ধৈর্ঘ্যে এই সেতুটিই সবচেয়ে বড়।
প্রথম তিস্তা সড়ক সেতুটি নির্মিত হয় ২০১২ সালে লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা এলাকায়, যার দৈর্ঘ্য ৭৫০ মিটার এবং ব্যয় হয়েছিল ৮৭ কোটি টাকা। দ্বিতীয়টি নির্মিত হয় ২০১৮ সালে রংপুরের গঙ্গাচড়ার মহিপুরে। সেটির দৈর্ঘ্য ৮৫০ মিটার এবং ব্যয় হয়েছিল ১৩১ কোটি টাকা।
এবার চালু হতে যাচ্ছে সবচেয়ে আধুনিক তৃতীয় সেতুটি, যা উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতি ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে।
এলজিইডি কার্যালয় সুত্র জানায়, এলজিইডির অধীনে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ইফাদের (ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট) অর্থায়নে এবং চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের মাধ্যমে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। শুরুতে ২০২৩ সালের জুনে শেষ করার কথা থাকলেও, নানা কারণে পাঁবার সময়সীমা পিছিয়ে অবশেষে এ বছরের আগস্টে শেষ হয় কাজ।
আরও পড়ুন: রংপুরে তিস্তা বাঁধে ধস, শঙ্কায় হাজারো পরিবার
সেতুটি নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে ২৯০টি পাইল, ৩০টি পিলার, ২৮টি স্প্যান এবং ১৫৫টি গার্ডার। উভয় প্রান্তে পানি নিষ্কাশনের জন্য তৈরি করা হয়েছে ১২টি ব্রিজ ও ৫৮টি বক্স কালভার্ট। পাশাপাশি ১৩৩ একর জমি অধিগ্রহণ করে নদীশাসনসহ মোট ৫৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।
১১৮ দিন আগে
ভবদহের দেড়শ গ্রাম পানিবন্দি, পাঁচ লাখ জীবন দুর্বিষহ
ভবদহ অঞ্চল একসময় উর্বর ফসলি জমি ও প্রাণবন্ত জনবসতির জন্য পরিচিত ছিল। তবে বর্তমানে এটি পরিণত হয়েছে এক বিস্তীর্ণ জলাভূমিতে। গত এক দশকের অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি ও অপরিকল্পিত নীতির কারণে ভবদহ প্রতি বছরই ভয়াবহ জলাবদ্ধতার শিকার হচ্ছে।
সর্বশেষ জুলাই মাসের টানা বৃষ্টিপাত ও নদ-নদী, খাল-নালার নাব্যতা হ্রাসের কারণে ভবদহের ৫২টি বিল প্লাবিত হয়েছে। এর ফলে অভয়নগর, মণিরামপুর, কেশবপুর, খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার দেড়শ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি। ফসলি মাঠ, বসতবাড়ি, অধিকাংশ শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।
ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি এই পরিস্থিতির জন্য সরাসরি পানি উন্নয়ন বোর্ডের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছে। তারা গত ৭ আগস্ট যশোর জেলা প্রশাসকের কাছে ছয় দফা দাবি পেশ করেছেন।
দাবির মধ্যে রয়েছে স্লুইসগেটের সব ভেন্ট খুলে দেওয়া, আমডাঙ্গা খালের জমি অধিগ্রহণ ও ৮১ কিলোমিটার নদী খনন প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন। বর্তমানে ভবদহে স্লুইসগেটের ২১টি ভেন্টের মধ্যে মাত্র আটটি খোলা রাখা হয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। কমিটির অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই ধরনের সিদ্ধান্তের কারণে পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
সবচেয়ে হতাশাজনক বিষয় হলো, গত এক দশকে ভবদহ প্রকল্পে প্রায় ১২৫০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। তবুও কার্যত কোনো স্থায়ী সমাধান হয়নি। এলাকাবাসী ও পরিবেশবিদরা এই অর্থের অপচয় ও প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন। তাদের মতে, ভবদহে শুধু অর্থ বরাদ্দ করলেই কাজ হবে না; অর্থটি যদি সঠিকভাবে ও স্বচ্ছভাবে ব্যবহার না করা হয়, তাহলে কোনো সুফল মিলবে না।
আরও পড়ুন: বন্যার পানি নামছে, জেগে উঠছে ক্ষত
১১৮ দিন আগে
কৃষি ঋণে কি বেসরকারি ব্যাংক ও প্রান্তিক কৃষকের অনাগ্রহ বাড়ছে?
চলতি অর্থবছরের জন্য কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যেখানে গত বছরের চেয়ে এ বছর ঋণের পরিমাণ নতুন করে ১ হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হলেও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালার হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কৃষি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৮ হাজার কোটি টাকা, যার বিপরীতে ঋণ প্রদান করা হয়েছে ৩৭ হাজার ৩২৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ, লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ঋণ প্রদান কম ৬৭৪ কোটি টাকা।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ৬টি বাণিজ্যিক ব্যাংক, ২টি বিশেষায়িত ব্যাংক, ৪২টি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ৮টি বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংক কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণ করেছে, যা মোট লক্ষ্যমাত্রার ৯৮.২৩ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কৃষি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৫ হাজার কোটি টাকা, বিপরীতে ঋণ প্রদান করা হয়েছে ৩৭ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় ৪ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা বেশি।
অন্যান্য বছরগুলোতে কৃষি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেলেও সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ঋণ প্রদান কমে আসার কারণ অনুসন্ধান করে দেখা যায়, ক্ষুদ্র কৃষক, প্রান্তিক চাষি এবং নতুন উদ্যোক্তাদের মধ্যে কৃষি ঋণ গ্রহণের প্রবণতা কমেছে। বিশেষত আশপাশের যারা কৃষি ঋণ নিয়েছেন, তাদের তিক্ত অভিজ্ঞতার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন বাকিরা।
বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং বেসরকারি দেশীয় ব্যাংকের মধ্যেও ঋণ প্রদানের পরিমাণ কমেছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকেও ঋণ প্রদানের পরিমাণ অন্যান্য সময়ের তুলনায় কম ছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণা বিভাগের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক উইংয়ের সর্বশেষ মে মাসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সঙ্গে তুলনা করলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকে কৃষি ঋণ প্রদানের পরিমাণ কমেছে ১১.৩৫ শতাংশ।
বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকে এই ঋণ প্রদানের পরিমাণ কমেছে ৯.৭৪ শতাংশ এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকে তা কমেছে ০.৩০ শতাংশ। এই তিন ক্যাটাগরির ব্যাংকের অধীনে লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে ২৮ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ঋণ প্রদানের কথা থাকলেও সবচেয়ে কম ঋণ দিয়েছে এসব ব্যাংকই।
অন্যদিকে, দুই বিশেষায়িত ব্যাংকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় ঋণ প্রদানের পরিমাণ বেড়েছে ১১.৬৯ শতাংশ। যেখানে বিশেষায়িত ব্যাংকের অধীনে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।
এদিকে, ঋণ প্রদান কমলেও বেড়েছে ঋণ আদায়ের পরিমাণ। মে মাসের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ২০২৩-২৪-এর তুলনায় ঋণ আদায় বেড়েছে ৪.৬৮ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি ঋণ আদায় বেড়েছে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকে, ৮.৭৬ শতাংশ; যাদের হাতে ঋণ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা ২৪ হাজার ১২১ কোটি টাকা।
অর্থাৎ, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক ঋণ কম দিলেও আদায়ের ক্ষেত্রে এগিয়ে ছিল এবং এটিই কৃষকদের ওপর চাপ বাড়িয়েছে বলে অভিযোগ মাঠ সংশ্লিষ্টদের।
ক্ষুদ্র কৃষক এবং কৃষি উদ্যোক্তাদের অনাগ্রহ
কৃষি ঋণে ধীরে ধীরে অনাগ্রহ তৈরি হচ্ছে ক্ষুদ্র কৃষক এবং নতুন কৃষি উদ্যোক্তাদের মধ্যে। বাংলাদেশের দুই জেলা ময়মনসিংহ এবং বরিশালের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকেই তারা ঋণ থেকে নিজেদের সরিয়ে নিচ্ছেন।
ময়মনসিংহের কৃষি উদ্যোক্তা আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘কৃষি ঋণ আমাদের কাছে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেসরকারি ব্যাংকে কাঠখড় পুড়িয়ে ঋণ পেলেও এ ঋণের দেনা শোধ করতে বিক্রি করতে হচ্ছে জমি। স্বল্প সুদের কথা বললেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সুদ বাড়ছে। অন্যদিকে, বৈরি আবহাওয়ার কারণে কৃষি ফসলে ক্ষতি হয়েছে, অনেকের মাছের ঘের ডুবে গেছে। তাদের জন্য ঋণ শোধ করা কষ্টসাধ্য।’
নিজের প্রসঙ্গে আবু বকর বলেন, ‘ঋণ নিয়ে ফসল ফলানোর পর ফসলের ক্ষতি হলে সেখানে কৃষককে কে বাঁচাবে তার কোনো পরিকল্পনা নেই। এতে করে আমিসহ আশপাশের অনেক কৃষক আছেন যারা পাঁচ-ছয় মাস ঋণের কিস্তি দিতে পারেননি। তাদের অনেকের নামে মামলার নোটিশ এসেছে।’
একই জেলার আরেক কৃষক সামসুদ্দিন বলেন, ‘কৃষককে ঋণ দেওয়ার নামে প্রতি মাসে যদি সুদ বাড়িয়ে ব্যবসা করার চিন্তা করে ব্যাংক, তাহলে কৃষকদের উন্নতি কীভাবে হবে? একদিকে ফসল হয়নি, যা বিক্রি করেছি তা থেকেও মুনাফা ওঠেনি, অন্যদিকে প্রতিমাসে সুদের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে প্রাণ ওষ্ঠাগত।’
কৃষি ঋণের খোঁজ নিতে গিয়ে বরিশালে দেখা গেল একেবারেই ভিন্ন চিত্র। দক্ষিণাঞ্চলের এ জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলায় যেসব কৃষক কৃষি ঋণ নিয়েছেন, তারা কৃষক হলেও ঋণের অর্থ কাজে লাগিয়েছেন অন্য খাতে।
এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই এলাকার এক কৃষক বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং মেম্বারদের থেকে প্রত্যয়নপত্র নিয়ে অনেকে কৃষি ঋণ নিয়েছেন। ঋণের অর্থে কেউ দিয়েছেন দোকান, কেউবা করছেন জমির ব্যবসা।’
ঋণ নেওয়া এমন আরও কয়েকজন কৃষক জানান, কৃষি ঋণ নিয়ে ফসলের মাঠে অর্থলগ্নি করলে ঋণের টাকা শোধ করা কঠিন হয়ে ওঠে। বেশিরভাগ সময়ই ফসলের যে দাম অনুমান করে ঋণ নেওয়া হয় তার অর্ধেক দামও ওঠে না। তাই ফসলের চাষ করার পাশাপাশি ঋণের অর্থ দোকান বা জমি বেচা-কেনায় অর্থ লগ্নি করেন তারা।
কৃষকরা জানান, একমাত্র বিনা সুদে ঋণ দিলে কৃষকরা ঋণের সুবিধাভোগী হতে পারবে। সুদের চাপ থাকলে ঋণ নিয়ে তারা মুনাফা অর্জন করতে পারে না। যারা একবার কৃষি ঋণ নিয়ে শুধু কৃষিকাজই করেছেন তারা আর দ্বিতীয়বার ঋণ নেননি, তারপরও মেটাচ্ছেন আগের ঋণের দেনা।
বিনা সুদে ঋণ কতটা যৌক্তিক?
নির্দিষ্ট কিছু আমদানি বিকল্প ফসলে ৪ শতাংশ রেয়াতি সুদে ঋণ দেওয়ার নির্দেশনা আছে বাংলাদেশ ব্যাংকের। এর বাইরে ৫-৬ শতাংশ সুদে ঋণ নিতে হয় কৃষকদের, অনেক ক্ষেত্রে এ ঋণে সুদের পরিমাণ আরও বেশি।
সুদহার প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, কৃষি ঋণের সুদহার ব্যাংকগুলো নিজেরাই নির্ধারণ করবে, তবে সর্বোচ্চ সুদহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে মানতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা। অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষণা অনুযায়ী, এ খাতে সুদহার হবে সরল এবং নমনীয়।
কৃষকদের বিনা সুদের ব্যাপারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সাবেক উপাচার্য এবং কৃষি অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ আবদুল বায়েস বলেন, ‘বিনা সুদে ঋণ দিলে ব্যাংক ব্যবস্থার কাঠামো বলে কিছু থাকে না। এই ঋণ অপারেশনের (পরিচালনা) ক্ষেত্রেও ব্যাংকের একটি খরচ আছে। বেসরকারি ব্যাংককে ঋণ প্রদানের আওতার মধ্যে রাখতে চাইলেও সুদের ব্যবস্থা রাখতে হবে। তবে এই সুদ যাতে কৃষকবান্ধব হয় সেদিকে নজরদারির দায়িত্ব সরকারের।’
তিনি বলেন, ‘বিনা সুদে ঋণের ব্যবস্থা করলে টাকা যাবে অন্যদের পকেটে, বঞ্চিত হবে কৃষক। এ ক্ষেত্রে কৃষক যাতে ঋণের ফাঁদে না পড়ে, সেজন্য আলাদা ভর্তুকি এবং বিশেষ ব্যবস্থায় ঋণের গ্রেস পিরিয়ড বাড়ানোর মতো উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। কোনো এলাকায় বন্যা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো ঘটনা ঘটলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত এসব এলাকায় ঋণ নেওয়া কৃষকদের ঋণ পরিশোধে ছাড় দেওয়া।’
এক মৌসুমের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হলে অন্য মৌসুম পর্যন্ত কৃষকদের ছাড় দেয়ার ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জোর দিতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক যেন ঋণ পরিশোধে ১২ কিস্তি পর্যন্ত সুযোগ পায় এবং মামলার মতো হয়রানির শিকার না হয়, সেদিকে জোর দেন এই কৃষি অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ।
ঋণ প্রদানে বেসরকারি ব্যাংকের অনাগ্রহ
বেশ কয়েকটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জামানত নীতি থেকে শুরু করে অনেক বেসরকারি ব্যাংকের মাঠ পর্যায়ে ঋণ প্রদানে যাচাই বাছাইয়ের সক্ষমতা নেই। এ ছাড়া উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে বেসরকারি অনেক ব্যাংকের কোনো শাখা না থাকায় তারা কৃষকদের কাছে পৌঁছাতে পর্যন্ত পারে না। প্রান্তিক এবং ক্ষুদ্র কৃষকরাও শহরে এসে ঋণ গ্রহণে আগ্রহী হয় না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, শস্য জামানত নীতিতে ফসল উৎপাদনের জন্য একজন কৃষককে সর্বোচ্চ ১৫ বিঘা জমি চাষাবাদের জন্য ঋণ প্রদান করা যাবে। সে হিসাবে যারা প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষি, তাদের প্রত্যেকের জমির পরিমাণ ০.৪৯৪ একর থেকে ২.৪৭ একর। এরা প্রত্যেকেই জামানত হিসাবে শস্য-ফসল দায়বদ্ধকরণ বা ক্রপ হাইপোথিসিসের মাধ্যমে ঋণ নিতে সক্ষম। সেক্ষেত্রে কৃষক ঋণ পরিশোধে সক্ষম না হলে ব্যাংক ফসল থেকে দেনা মেটাতে পারবে।
তবে এ ব্যাপারে আগ্রহ দেখায় না বেসরকারি ব্যাংকগুলো। তাদের কর্মকর্তারা জানান, কৃষককে যে পরিমাণে ঋণ দেওয়া হয়, শুধু ফসলের জামানত দিয়ে সেই ঋণের অর্থ আদায় ব্যাংকের জন্য কঠিন।
এ প্রসঙ্গে সায় দিয়ে শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক রিপন কুমার মণ্ডল বলেন, ‘বেসরকারি ব্যাংকের মূল সমস্যা ঋণ প্রদানের পর তাদের ঋণ আদায়ের সক্ষমতা নেই। এ ধরনের নিরাপত্তাহীনতার কারণেই তারা ঋণ দিতে চায় না। আবার অনেক বড় বড় ব্যাংক এসব ক্ষুদ্র ঋণের জন্য লোকবল নিয়োগেও আগ্রহী নয়।’
এ ছাড়া বেশিরভাগ কৃষক জানেনই না যে কোন ব্যাংকে কত সুদে এই ঋণ দেওয়া হচ্ছে এবং কীভাবে ব্যাংকে গিয়ে ঋণের আবেদন করবেন। এজন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা বেসরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ না নিয়ে স্থানীয় এনজিও বা সরকারি বিশেষায়িত ব্যাংকের দ্বারস্থ হন বলে মনে করেন রিপন।
তবে কৃষি ঋণে বেসরকারি ব্যাংক আরও সম্পৃক্ত হচ্ছে জানিয়ে ট্রাস্ট ব্যাংকের পরিচালক আনিসউদ্দিন আহমেদ খান বলেন, ‘কৃষি ঋণ প্রদানে ব্যাংকের অনেক লোকবল দরকার, যারা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে যাচাই বাছাই করে ঋণ দেবে। এত লোকবল নিয়োগের সক্ষমতা বেসরকারি ব্যাংকের নেই। তাই ক্রেডিট এবং ডেভেলপমেন্ট ফোরামের রেটিং দেখে (সিডিএফ) ভালো এনজিওর মাধ্যমে ঋণ ছাড়ের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বেসরকারি ব্যাংকগুলো।’
জামানত নীতি বদল নয়, বেসরকারি ব্যাংকের ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘কৃষকদের কাছ থেকে ঋণ আদায়ের হার ৯৫ শতাংশ, যা সবচেয়ে বেশি। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর জামানত নিয়ে শঙ্কিত না হয়ে সক্ষমতা বাড়ালে একদিকে প্রান্তিক এবং ক্ষুদ্র কৃষকরা লাভবান হবেন, অন্যদিকে দেশের কৃষিখাতেও প্রবৃদ্ধি বাড়বে।’
১১৯ দিন আগে
ভূমি অফিস নয়, এখন সেবা মিলছে ঘরে বসেই
ভূমি ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতি ও হয়রানির দীর্ঘ ইতিহাস ছাপিয়ে এখন ডিজিটাল যুগের অনেক ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। ভূমিকে জনবান্ধব করতে ভূমি মন্ত্রণালয় নিয়েছে একের পর এক যুগান্তকারী উদ্যোগ। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনের প্রতিটি ধাপ ভূমির সাথে জড়িত। তাই এ খাতে স্বচ্ছতা ও নাগরিকবান্ধব সেবা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এএসএম সালেহ আহমেদ ইউএনবিকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এসব তথ্য জানান।
সিনিয়র সচিব জানান, জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ভূমি সেক্টরে ডিজিটাল রূপান্তরের গতি বেড়েছে। নাগরিক হয়রানি রোধ, দুর্নীতি বন্ধ এবং সেবার স্বচ্ছতা আনতে নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। ভূমি মন্ত্রণালয় এখন ‘ল্যান্ড সিঙ্গেল গেটওয়ে’ চালু করেছে—যার মাধ্যমে সকল ডিজিটাল ভূমি সেবা এক প্ল্যাটফর্মে পাওয়া যাচ্ছে।
তিনি জানান, বর্তমানে ঘরে বসেই নাগরিকরা অনলাইনে নামজারি, খতিয়ান, মৌজা ম্যাপ সংগ্রহ, ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধসহ একাধিক সেবা নিতে পারছেন। একাধিক সফটওয়্যার আপডেট করে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয় এসব সেবা। বর্তমানে তা লাইভ রয়েছে।
সচিব বলেন, নাগরিকদের জন্য সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো—ভূমি অফিসে না গিয়েই মোবাইল অ্যাপ কিংবা কল সেন্টারের মাধ্যমে খতিয়ান সংগ্রহ বা নামজারি করা যাচ্ছে। শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিদেশ থেকেও +8809612316122 নম্বরে কল করে বা “ই-খতিয়ান” অ্যাপের মাধ্যমে সেবা পাওয়া সম্ভব।
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতায় জোর
সকল নামজারি আবেদন নির্ধারিত সময়সীমার (২৮ দিন) মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনো আবেদন অযথা ঝুলে থাকলে মনিটরিং কর্মকর্তারা তা যাচাই করবেন। ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাদের জন্যও রয়েছে পরিষ্কার নির্দেশনা—নাগরিকের আবেদন পেন্ডিং রাখা যাবে না।
ভূমি সচিব বলেন, দুর্নীতি রোধে আমার কঠোর অবস্থান। ভূমি উপদেষ্টার নির্দেশে আমি মাঠ প্রশাসনে কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ডিজিটাল খামারি: বাকৃবি গবেষকের অ্যাপে বিনামূল্যে প্রাণিসেবা
জিরো টলারেন্সে ভূমি মন্ত্রণালয়:
ভূমি উপদেষ্টা ও সিনিয়র সচিব মহোদয়ের নির্দেশনায় মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এসিল্যান্ড পর্যন্ত সবাই ভূমি সেবায় যুক্ত রয়েছেন। অভিযোগ পাওয়া মাত্র তদন্ত এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
ভূমি ব্যবস্থাপনায় এই রূপান্তর কেবল প্রশাসনিক নয়, এটি একটি নাগরিক বিপ্লব—যেখানে ভূমি সেবাকে ঘরে পৌঁছে দিয়ে মানুষের সময়, অর্থ এবং আস্থা—তিনটিকেই সংরক্ষণ করা হচ্ছে।
মেলাভিত্তিক সেবা
প্রতি বছর মে মাসে পালিত হয় ভূমি সেবা সপ্তাহ। এই সময়টিতে ভূমি মেলা ও ক্যাম্প আয়োজনের মাধ্যমে সরাসরি জনগণকে সেবা দেওয়া হয়। এতে করে সেবাগ্রহীতারা যেমন উপকৃত হন, তেমনি নীতি-নির্ধারকরা পান গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক পরামর্শ।
আইনগত সংস্কার:
ভূমি সেবায় স্বচ্ছতা আনতে ইতোমধ্যে পাস হয়েছে একাধিক আইন: ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩; ভূমি উন্নয়ন কর আইন, ২০২৩; ভূমি সংস্কার আইন, ২০২৩; হাট ও বাজার (স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা) আইন, ২০২৩; স্টেট অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড টেন্যান্সি (সংশোধন) আইন, ২০২৩; বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) আইন, ২০২৩।
পাশাপাশি নতুন করে প্রণয়নাধীন রয়েছে:
জলমহাল সুরক্ষা ও ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ-২০২৪, হাট ও বাজার বিধিমালা-২০২৫, ভূমি অধিগ্রহণ বিধিমালা-২০২৫, ভূমি জোনিং ও সুরক্ষা অধ্যাদেশ-২০২৫।
আরও পড়ুন: একবছরে ৫ হাজার ৯৩ একর বনভূমি উদ্ধার
আর্থিক স্বচ্ছতা ও রাজস্ব বৃদ্ধির ধারা:
অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে ও ‘এ-চালান’ সিস্টেম যুক্ত হওয়ায় ভূমি উন্নয়ন কর এখন সহজে প্রদান করা যাচ্ছে। দৈনিক প্রায় ১০-১২ কোটি টাকা ভূমি সেবা থেকে সরকারি কোষাগারে জমা হচ্ছে।
ভূমি সেবার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে সিনিয়র সচিব বলেন, ২০২৬ সালের মধ্যে এমন একটি সিস্টেম তৈরি করা হবে, যেখানে নাগরিকরা শুধুমাত্র এনআইডি দিয়েই তাদের ভূমির সব তথ্য জানতে পারবেন। ভূমি অধিগ্রহণে আইবাসের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ প্রদান, স্বয়ংক্রিয় ভূমি ডাটাব্যাংক, নামজারির অটো আপডেট, এবং সরকারি জমি রক্ষা ব্যবস্থাও সংযুক্ত হবে ল্যান্ড সার্ভিস গেটওয়েতে।
১২০ দিন আগে
বন্যার পানি নামছে, জেগে উঠছে ক্ষত
উত্তরের ৫ জেলা রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী ও গাইবান্ধার নদী অববাহিকা থেকে নামতে শুরু করেছে পানি। বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় প্লাবিত নিম্নাঞ্চলের ক্ষতবিক্ষত চেহারা বের হতে শুরু করেছে। রোপা আমন খেত পঁচে নষ্ট হয়েছে, ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে, পুকুরের মাছ বেরিয়ে গেছে; সব মিলিয়ে অপুরণীয় ক্ষতিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে নদীপাড়ের মানুষ।
উজানের ঢল ও টানা ভারী বৃষ্টিতে হু হু করে বাড়ে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ। গেল সোমবার রাতে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহ বিপদসীমা অতিক্রম করে। টানা ৫ দিনের বন্যায় ডুবে যায় নদী তীরবর্তী অঞ্চলের ফসলি খেত। পানিবন্দি হয়ে পড়ে ৫ জেলার প্রায় ৪০ হাজার পরিবার। পানি তোড়ে ভেসে গেছে চাষিদের পুকুরের মাছ। বিশেষ করে আমন খেত ও বীজতলা ডুবে যাওয়ায় কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। রবিবার থেকে বন্যার পানি নামতে শুরু করায় ধীরে ধীরে জেগে উঠছে বন্যার ক্ষত।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বন্যার পানি নেমে গেলেও দুর্ভোগ কমেনি নদীপাড়ে। বন্যার পানিতে অনেকের গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র ভিজে নষ্ট হয়েছে। পানির তোড়ে নষ্ট হওয়া ঘরবাড়ির বেড়া মেরামত করতে দেখায় যায় অনেককে। বন্যার পানির সঙ্গে ভেসে আসা ময়লা আবর্জনায় পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর হয়ে গেছে। বাড়ির আশপাশের ঝোপঝাড়ে সাপও দেখা যায় বেশ কয়েকটি। পানিতে ডুবে নষ্ট হয়েছে নদীপাড়ের বেশ কিছু বিদ্যালয়ের আসবাবপত্রও।
এ ছাড়া, আমনের লাগানো চারা বন্যার পানিতে পচেগলে নষ্ট হয়েছে। অধিকাংশ খেতে শুধু মাটি-বালু পড়ে রয়েছে। কিছু খেতে চারা গাছ দেখা গেলেও রবিবার প্রচণ্ড রোদে তা পচেগলে নষ্ট হচ্ছিল।
আরও পড়ুন: চাঁপাইয়ে পদ্মার পানি বেড়ে প্লাবিত নিম্নাঞ্চল, পানিবন্দি সাড়ে ৮ হাজার পরিবার
মাত্র এক সপ্তাহ আগে দ্বিতীয় দফার বন্যায় নষ্ট হওয়া আমন খেতে নতুন করে চারা লাগান নদী পাড়ের কৃষকরা। তা-ও তৃতীয় দফার বন্যায় ৩/৪ দিন নিমজ্জিত থেকে নষ্ট হয়েছে। নতুন করে লাগানোর মতো চারা নেই অধিকাংশ চাষির কাছে। ফলে আমন নিয়ে দুঃচিন্তার ভাঁজ পড়েছে তিস্তাপাড়ের কৃষকের কপালে।
১২০ দিন আগে
রিজার্ভ চুরিতে জড়িত ৫ দেশের নাগরিক, চার্জশিট শেষ পর্যায়ে
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঘটা বহুল আলোচিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা নতুন মোড় নিয়েছে। দীর্ঘ তদন্ত শেষে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির অনুসন্ধানে বাংলাদেশ ছাড়াও অন্তত চার দেশের নাগরিকের এই অপরাধে জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। মামলার চার্জশিট প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে রয়েছে, শিগগিরই আদালতে দাখিল হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র ইউএনবিকে জানিয়েছে, অভিযুক্তদের মধ্যে শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক রয়েছেন। এ ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের আইটি বিভাগের তৎকালীন কয়েকজন কর্মকর্তা, কর্মচারী ছাড়াও ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তার গুরুতর গাফিলতি ছিল। এমনকি তাদের কারও কারও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পৃক্ততাও ছিল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিআইডির এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, অত্যাধুনিক ম্যালওয়্যার ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক হ্যাকার চক্র এ চুরির ঘটনা ঘটায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের আইটি বিভাগ থেকে সচেতনভাবেই ওই ম্যালওয়্যারযুক্ত ফাইল খোলা হয়েছিল। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার অবৈধভাবে স্থানান্তরিত হয়।
তিনি আরও বলেন, চার্জশিটে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) বিস্তারিত প্রতিবেদন অন্তর্ভুক্ত থাকবে, যাতে বিদেশি নাগরিকদের সম্পৃক্ততার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ রয়েছে। ওই প্রতিবেদন আনুষ্ঠানিকভাবে পাঠাতে এরই মধ্যে এফবিআইকে অনুরোধ করা হয়েছে। সেটি হাতে পেলেই তদন্ত শেষ করে চার্জশিট জমা দেওয়া হবে।
২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) রাতে সংঘটিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি বিশ্বের অন্যতম বড় সাইবার ডাকাতির ঘটনা। সে সময় বাংলাদেশে ব্যাংক কার্যক্রম বন্ধ ছিল এবং যুক্তরাষ্ট্রেও সাপ্তাহিক ছুটি শুরু হয়েছিল। সেই সুযোগে হ্যাকাররা নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে প্রায় ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার স্থানান্তরের চেষ্টা করে, তবে ১০১ মিলিয়ন বা ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার সরাতে পারে তারা।
আরও পড়ুন: ৮৬ বারের মতো রিজার্ভ চুরি মামলার প্রতিবেদন পেছাল
চুরি হওয়া ওই অর্থের বড় অংশ দুর্বল নজরদারির ফাঁক গলে ফিলিপাইনের ক্যাসিনো শিল্পের গোপনীয়তা আইনের অধীনে পাচার হয়ে যায়। এর মধ্যে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপাইনে এবং প্রায় ২ কোটি ডলার শ্রীলঙ্কায় পাঠানো হয়। পরে শ্রীলঙ্কায় প্রেরিত অর্থ ফেরত আনা সম্ভব হলেও ফিলিপাইন থেকে অর্থ উদ্ধার জটিল হয়ে পড়ে। এখন পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ ডলার উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে সরকার।
এ ঘটনার তদন্তে সিআইডির পাশাপাশি এফবিআই, ফিলিপাইনের ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এনবিআই) এবং শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক অংশ নেয়। পরবর্তীতে জাতিসংঘকেও এ অপরাধে ব্যবহৃত কৌশল ও লেনদেনের ধারা সম্পর্কে জানানো হয়।
ঘটনার ৩৯ দিন পর ওই বছরের ১৫ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব ও বাজেট বিভাগের তৎকালীন উপপরিচালক জোবায়ের বিন হুদা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মতিঝিল থানায় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন এবং তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে অভিযোগ এনে একটি মামলা করেন। পরে মামলাটি সিআইডির কাছে হস্তান্তর করা হয়।
প্রায় নয় বছরের তদন্তে দেশি-বিদেশি শতাধিক সাক্ষীর জবানবন্দি, আইপি ঠিকানা, নেটওয়ার্ক লগ, ব্যাংক লেনদেনের তথ্য এবং ড্রিডেক্স ম্যালওয়্যার কোডসহ বিস্তৃত প্রযুক্তিগত প্রমাণ খতিয়ে দেখা হয়েছে। এর ফলে হামলার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি মামলা: প্রতিবেদন ফের পিছিয়ে ২ জুলাই
সিআইডির আরেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ইউএনবিকে বলেন, এই তদন্তে আন্তর্জাতিক আর্থিক অপরাধ চক্রের কৌশল, তাদের দেশীয় সহযোগীদের ভূমিকা এবং আমাদের সাইবার নিরাপত্তার দুর্বলতার মতো বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চার্জশিট এমনভাবে প্রস্তুত করতে চাই যাতে অপরাধীরা শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আইনের মুখোমুখি হয়।’
চার্জশিট দাখিলের মাধ্যমে বিশ্বের অন্যতম আলোচিত এ সাইবার ডাকাতির রহস্য উন্মোচিত হবে এবং বাংলাদেশের আর্থিক খাতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলে আশা করছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।
১২১ দিন আগে
তিস্তায় পানি কমলেও দুর্ভোগ কমেনি স্থানীয়দের
লালমনিরহাটে উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে টানা চার দিন ধরে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এতে করে লালমনিরহাটের তিস্তাপাড়ে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। তবে আজ সকাল থেকে তিস্তার পানি বিপৎসীমার নিচে নামলেও স্থানীয়দের দুর্ভোগ কমেনি।
শুক্রবার (১৫ আগস্ট) দুপুর ২টায় ডালিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫১ দশমিক ৯২ মিটার, যা বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার নিচে।
তিস্তাপাড়ের মানুষ ও বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, চার দিনের ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সোমবার (১১ আগস্ট) রাত থেকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) দুপুর ১২টায় বিপৎসীমা অতিক্রম করে তা টানা তিন দিন ধরে বিপৎসীমার ওপর দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছিল। পানি বাড়ার ফলে লালমনিরহাট সদর, পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ ও আদিতমারী উপজেলার বেশ কিছু এলাকা বন্যার কবলে পড়েছে। নদীর দুই পাড়ের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে নতুন নতুন এলাকা ডুবে গেছে; পানিবন্দি হয়ে পড়েছে জেলার প্রায় ১০ হাজার মানুষ।
এর মধ্যে পাটগ্রামের দহগ্রাম; হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, সানিয়াজান, সিঙ্গামারী, সিন্দুর্না, হলদিবাড়ী, ডাউয়াবাড়ী; কালীগঞ্জের ভোটমারী, শৈলমারী, নোহালী; আদিতমারীর মহিষখোচা, গোবর্দ্ধন, বাহাদুরপাড়া; সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, কুলাঘাট, মোগলহাট, রাজপুর, বড়বাড়ী ও গোকুন্ডা ইউনিয়নের নিচু অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: তিস্তার পানি বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপরে, পানিবন্দি ৪০ হাজার মানুষ
টানা চার দিনের বন্যায় পানিবন্দি পরিবারগুলো আগে থেকেই রয়েছে চরম দুর্ভোগের মধ্যে। এখন পানি কমতে থাকলেও শুরু হয়েছে নতুন উপদ্রব। পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ হানা দিচ্ছে বন্যাকবলিত এলাকায়।
১২২ দিন আগে