বাংলাদেশ
বেগম রোকেয়া দিবস আজ
আজ ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া দিবস। বাংলার নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী।
তার পুরো নাম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন। তবে, তিনি সবার কাছে বেগম রোকেয়া নামেই বেশি পরিচিত।
১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুরের পায়রাবন্দে বেগম রোকেয়া জন্মগ্রহণ করেন। এর ঠিক ৫২ বছর পর, ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর তিনি মারা যান। ইতিহাসে একই দিন জন্ম ও মৃত্যুর ঘটনা বিরল। যে ঘটনা বেগম রোকেয়া ক্ষেত্রে ঘটেছিল।
বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস তার বাণীতে উল্লেখ করেন, ‘নারীমুক্তি ও মানবাধিকার নিয়ে ব্যাপক সামাজিক আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে নারীসমাজকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে এসেছিলেন বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন। এই অঞ্চলের নারীসমাজকে যথাযোগ্য মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়াসে তার অসামান্য অবদান জাতি চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।’
তিনি বলেছেন, ‘উনবিংশ শতাব্দীতে রক্ষণশীল সমাজ ব্যবস্থায় পিছিয়ে পড়া নারীদের ভাগ্যোন্নয়নের মূল চাবিকাঠি শিক্ষা। এ উপলব্ধি থেকে বেগম রোকেয়া নারীশিক্ষা বিস্তারে বিরাট সাহসী ভূমিকা পালন করেন। বেগম রোকেয়া নারী উন্নয়নের পথে যে যাত্রা শুরু করেছিলেন, তার ধারাবাহিকতায় নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করে যাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।’
দিবসটি উপলক্ষে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে— গ্রামীণ অসচ্ছল নারীদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভালনারেবল উইমেন বেনেফিট (ভিডব্লিউবি) কর্মসূচি, গ্রামীণ এলাকায় দরিদ্র গর্ভবতী মায়েদের এবং শহর এলাকায় স্বল্প আয়ের কর্মজীবী মায়েদের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান, দেশব্যাপী তৃণমূল পর্যায়ে নারীদের আত্ম-কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনা।
এ ছাড়া প্রান্তিক নারীদের উদ্যোক্তা তৈরিতে সহায়তা প্রদান করাসহ কর্মজীবী নারীদের নিরাপদ আবাসনের লক্ষ্যে কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে। নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিকার ও প্রতিরোধে সমন্বিত সেবা জোরদারকরণ এবং কুইক রেসপন্স টিমের কার্যক্রম প্রকল্পের আওতায় ২৪ ঘণ্টার হটলাইন সেবা ১০৯ চালু আছে।
এ ছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখায় এ বছর ‘বেগম রোকেয়া পদক ২০২৫’ পাচ্ছেন ৪ বিশিষ্ট নারী। নারীশিক্ষা শ্রেণিতে (গবেষণা) রুভানা রাকিব, নারী অধিকার শ্রেণিতে (শ্রম অধিকার) কল্পনা আক্তার, মানবাধিকার শ্রেণিতে নাবিলা ইদ্রিস ও নারী জাগরণ শ্রেণিতে (ক্রীড়া) ঋতুপর্ণা চাকমা এ বছরের বেগম রোকেয়া পদকের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন।
আজ সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে চারজনের হাতে রোকেয়া পদক তুলে দেওয়া হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ।
রোকেয়া খাতুন, রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন, মিসেস আর এস হোসেন নামেও লিখতেন এবং পরিচিত ছিলেন তিনি। ঊনবিংশ শতকে নারীরা যখন অবরোধবাসিনী, সেই সময়ে নারীর পরাধীনতার বিরুদ্ধে তিনি আওয়াজ তুলেছিলেন বেগম রোকেয়া।
তার রচনাগুলোর মধ্যে পিপাসা (১৯০২), মতিচূর (১৯০৪), সুলতানার স্বপ্ন (১৯০৮), সওগাত (১৯১৮), পদ্মরাগ (১৯২৪) ও অবরোধবাসিনী (১৯৩১) উল্লেখযোগ্য।
৬ দিন আগে
নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে অব্যাহতি পেলেন ফজলুর রহমান
নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে আদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ফজলুর রহমান।
ট্রাইব্যুনালের তলবে সোমবার (৮ ডিসেম্বর) হাজির হয়ে নিজের মন্তব্যের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলে তাকে সতর্ক করে দিয়ে আদালত অবমাননা প্রশ্নে জারি করা ‘কারণ দর্শাও নোটিশটি’ নিষ্পত্তি করে দেন ট্রাইব্যুনাল।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই আদেশ দেন।
আদালতে ফজলুর রহমানের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। এ সময় ট্রাইব্যুনালে ফজলুর রহমানের পক্ষে ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ও অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজলসহ বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন গাজী এমএইচ তামীম। এ সময় ট্রাইব্যুনালে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামসহ অপর প্রসিকিউটররা উপস্থিত ছিলেন।
গত ৩০ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল এক আদেশে ফজলুর রহমানকে অ্যাকাডেমিক সনদ ও বার কাউন্সিলের সনদসহ সশরীরে উপস্থিত হয়ে আদালত অবমাননার অভিযোগের ব্যাখ্যা দিতে বলেছিল। সেই অনুযায়ী এদিন ফজলুর ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চান।
তার আগে, গত ২৬ নভেম্বর ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার একটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। যেখানে গত ২৩ নভেম্বর বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের ‘মুক্তবাক: রাজনীতির তর্ক-বিতর্ক’ টকশোতে ফজলুর রহমানের দেওয়া বক্তব্যকে আদালত অবমাননাকর উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।
গত ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আদালত অবমাননার অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে সশরীরে ফজলুর রহমানকে হাজিরের নির্দেশ দিয়ে ৮ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেছিলেন।
৭ দিন আগে
‘মোবাইল ফোন’ ইস্যুতে প্রবাসীদের স্পষ্ট বার্তা আইন উপদেষ্টার
বিদেশ থেকে মোবাইল ফোন আনা নিয়ে প্রবাসীদের বিভিন্ন ধোঁয়াশা স্পষ্ট করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে প্রবাসীদের উদ্দেশে তিনি এ বার্তা দেন।
সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য তুলে ধরে আসিফ নজরুল বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার বা আমার সম্পর্কে মিথ্যাচার নতুন কিছু নয়। সোশ্যাল মিডিয়াতে কিছু মানুষ এখন প্রচার করছে যে মোবাইল ফোন সেট নিয়ে প্রবাসীদের প্রতি অন্যায় ও বৈষম্য করা হচ্ছে। এ সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য নিচে তুলে ধরছি।
‘মিথ্যা— সরকার নতুন নিয়ম করেছে, একটার বেশি মোবাইল সেট বিদেশ থেকে নিয়ে আসলে ট্যাক্স দিতে হবে।
‘সত্য— শেখ হাসিনার আমলে প্রবাসী কর্মীরা নিজের ব্যবহৃত ফোনসেটের সঙ্গে মাত্র একটা নতুন সেট আনতে পারত। প্রবাসীদের সুবিধা বাড়ানোর জন্য বর্তমান সরকার আরও বেশি (২টা নতুন) ফোনসেট আনার অনুমতি দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘অর্থাৎ প্রবাসী কর্মীরা নিজের ব্যবহৃত সেটের সঙ্গে ২টা নতুন সেট আনতে পারছে। ২টার বেশি আনলে তার জন্য শুধু ট্যক্স দিতে হবে। এনবিআর ব্যগেজ রুল পরিবর্তন করে এই আইনটা করেছে প্রবাসীদের সুবিধা দেওয়ার জন্য। তবে এই সুবিধা বিএমইটি (প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়) থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বিদেশে যাওয়া প্রবাসী কর্মী ভাইদের জন্য। অন্যদের জন্য আগের নিয়মই প্রযোজ্য থাকছে।
‘মিথ্যা— প্রবাসী ভাইদের ফোন রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। সত্য— শুধু প্রবাসীদের জন্য এ ধরনের কোনো আইন করা হয়নি।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রকৃত তথ্য হচ্ছে, আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে যে কেউ নতুন মোবাইল ফোনসেট ব্যবহার শুরু করলে ৬০ দিনের মধ্যে সেটির রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এটা বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের জন্য প্রযোজ্য। মানে হচ্ছে, এটি দেশে থাকা মানুষ বা দেশে আসা প্রবাসী—সবার জন্য প্রযোজ্য।
‘অবৈধ সেট ব্যবহার করে দেশে ও প্রবাসে অপহরণ, হুমকি, চাঁদাবাজি, জুয়া—এসব নিয়ন্ত্রণের জন্য এই আইন করা হয়েছে। কাউকে হয়রানিতে ফেলার জন্য না, বরং হয়রানি থেকে বাঁচার জন্য এই আইন করা হয়েছে।’
গুজব প্রতিরোধে প্রবাসীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘প্রবাসী ভাইদের কাছে আবেদন, গুজবকারী ও গিবতকারীদের থেকে সতর্ক থাকুন। মিথ্যা গুজব ছড়ানো ও গিবত করা ইসলামের দৃষ্টিতে অনেক বড় পাপ।’
‘গুজব কোন জায়গায় গেছে দেখেন, কেউ কেউ এই অবিশ্বাস্য তথ্য প্রচার করছে যে প্রবাসীরা নাকি দেশে ৬০ দিন থাকতে পারবেন! এই সব জঘন্য মিথ্যাচারকে প্রতিরোধ করুন।’
আসিফ নজরুল পরিশেষে বলেন, ‘আমি জানি, আরও কিছু বিষয়ে আপনাদের প্রশ্ন আছে। সেগুলো আমি দ্রুত জানাব। সবাই ভালো থাকবেন। আল্লাহ্ হাফেজ।’
৭ দিন আগে
সালমান শাহ হত্যা মামলা: পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন জমার দিন পেছাল
চিত্রনায়ক সালমান শাহ হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আগামী ১৩ জানুয়ারি দেওয়া নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
রবিবার (৭ ডিসেম্বর) মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমার দিন ধার্য ছিল। তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা মডেল থানার পরিদর্শক আতিকুল ইসলাম খন্দকার এদিন প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেননি জানিয়ে আরও সময়ের আবেদন করেন। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল নতুন করে ১৩ জানুয়ারি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার দিন ধার্য করেন।
সালমান শাহর মৃত্যুর ২৯ বছর পর গত ২০ অক্টোবর তার মা নীলা চৌধুরীর পক্ষে ভাই মোহাম্মদ আলমগীর কুমকুম এ মামলাটি করেন। মামলায় ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন সালমানের স্ত্রী সামিরা হক, সামিরা হকের মা লতিফা হক লুসি, ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই, খল অভিনেতা ডন, ডেডিড, জাভেদ, ফারুক, রুবী, আব্দুস ছাত্তার, সাজু ও রিজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদ।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, আসামিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে সালমান শাহকে হত্যা করেছেন। আসামিরা যেন দেশত্যাগ করতে না পারেন, সেজন্য ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার ইস্কাটনে নিজ ফ্ল্যাটে সালমান শাহ মারা যান। সে সময় তার বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী একটি অপমৃত্যু মামলা করেন।
পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই আদালতে সালমান শাহকে হত্যা করা হয়েছে বলে একটি আবেদন করা হয়। তখন অপমৃত্যু মামলার সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ তদন্ত করতে সিআইডিকে নির্দেশ দেন আদালত। এরপর ১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে সিআইডি জানায়, সালমান শাহ ‘আত্মহত্যা’ করেছিলেন।
তবে সিআইডির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে কমরউদ্দিন চৌধুরী রিভিশন মামলা করেন। পরে ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠান আদালত। তার দীর্ঘ ১১ বছর পর ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইমদাদুল হক। তাতেও হত্যার অভিযোগ নাকচ করা হয়।
সালমান শাহর বাবার মৃত্যুর পর তার মা নীলা চৌধুরী মামলটি চালিয়ে যান। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি নীলা চৌধুরী বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনে ‘নারাজি’ দেন। সে সময় তিনি ১১ জনের নাম তুলে ধরে দাবি করেন, এরা তার ছেলেকে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে।
এরপর মামলাটির তদন্তে নামে র্যাব। তখন রাষ্ট্রপক্ষ আপত্তি তুললে ২০১৬ সালের ২১ অগাস্ট ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ৬-এর বিচারক ইমরুল কায়েশ র্যাবকে মামলাটি আর তদন্ত না করার আদেশ দেন। পরে তদন্তের দায়িত্বে বর্তায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ওপর। চার বছর তদন্তের পর ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিবিআই চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়।
ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদ ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর পিবিআইয়ের প্রতিবেদন আমলে নিয়ে আসামিদের অব্যাহতির দেন। কিন্তু সালমান শাহর পরিবারের পক্ষ থেকে মহানগর দায়রা জজ আদালতে রিভিশন আবেদন করা হয়। ২০২২ সালের ১২ জুন আদালত রিভিশন আবেদন গ্রহণ করেন।
এরপর চলতি বছরের ২০ অক্টোবর ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক রিভিশন আবেদন মঞ্জুর করেন। এ বিষয়ে সালমান শাহর বাবা কমরউদ্দিনের অভিযোগ এবং ঘটনায় জড়িত রিজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদের জবানবন্দি সংযুক্ত করে হত্যা মামলা দায়েরের নির্দেশ দিয়ে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে রমনা মডেল থানা পুলিশকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন তিনি।
৮ দিন আগে
কওমি মাদ্রাসার ডিগ্রিধারীরা কাজী হতে পারবেন: আইন উপদেষ্টা
কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃত ডিগ্রিধারীরা এখন থেকে নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজী) হতে পারবেন বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
রবিবার (৭ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজের দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ তথ্য জানান।
তিনি লিখেছেন, এখন থেকে কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃত ডিগ্রিধারীরা নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজী) হতে পারবেন। আগে এই সুযোগ আলিম সনদধারী ব্যক্তিদের জন্য সীমাবদ্ধ ছিল। আইন মন্ত্রণালয় এই সুযোগ বাড়ানোর জন্য আইন সংশোধন করেছে।
তিনি আরও লিখেছেন, আজ থেকে কওমী মাদ্রাসার স্বীকৃত বোর্ড হতে দাওরায়ে হাদিস সনদধারী ব্যক্তিরাও এই পদে আবেদন করতে পারবেন।
এর আগে গত ৫ আগস্ট ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন দাওরায়ে হাদিস সনদধারীদের নিকাহ রেজিস্ট্রারের লাইসেন্স প্রদানে অগ্রাধিকার দেয়ার বিষয়ে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টাকে উদ্যোগ নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন চিঠি পাঠিয়েছিলেন।
৮ দিন আগে
আসন্ন নির্বাচন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য অ্যাসিড টেস্ট: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য বড় পরীক্ষা বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেছেন, নির্বাচনে পরাজিত ব্যক্তি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করবে। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সজাগ থাকতে হবে।
শনিবার (৬ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে রংপুর জেলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘দেশের সবকিছুর ভিত্তি আইনশৃঙ্খলা। শুরুতে সমস্যা থাকলেও এখন অবস্থা ভালো। পুলিশ গুছিয়ে উঠে নিজেরা সংহত হতে পেরেছে। সামনে নির্বাচন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য বড় টেস্ট (পরীক্ষা)। কেননা অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন, সামনের নির্বাচন একটি আদর্শ নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচন নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সজাগ থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘পুলিশ ইতোমধ্যেই তাদের অবস্থান সুসংগঠিত করেছে। সামনে জাতীয় নির্বাচন, আমাদের অ্যাসিড টেস্ট। নির্বাচনে পরাজিত ব্যক্তি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করবে। আমরা চাই, ভালো একটা নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব দিয়ে চলে যেতে।’
তৌহিদ হোসেনের মতে, ‘দুটো সেক্টরে (খাতে) বেশি গুরুত্ব দেওয়া দরকার: শিক্ষা ও স্বাস্থ্য। বাইরের দেশে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়, কিন্তু আমরা পারছি না। আমরা চেষ্টা করছি। ডাক্তার, নার্সের সমস্যা নিরসনের অংশ হিসেবে (অন্তর্বর্তী সরকারের) এই স্বল্প সময়ে সাড়ে ৩ হাজার নার্স ও ৩ হাজার ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই খাতে বাজেট বাড়ানো হয়েছে। আগামী বছর তা দেখা যাবে। আমরা কিছু প্রকল্প শুরু করেছি। আশা করছি, পরের সরকার তা ধরে রাখবে।’
প্রাথমিক শিক্ষার মান নিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশের প্রাথমিক শিক্ষার খুব ভয়ঙ্কর বাজে অবস্থা। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমরা প্রাইমারি শিক্ষকদের অনেক বেশি বেতন দিই, কিন্তু তাদের মধ্যে কোনো কর্মস্পৃহা দেখতে পাই না।’
৯ দিন আগে
মুক্তিযুদ্ধ: যশোর মুক্ত দিবস আজ
আজ ৬ ডিসেম্বর, যশোর মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দখলমুক্ত হয় যশোর।
দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের লক্ষ্যে শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) রাত ১২টা থেকেই জেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এবং বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন, পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং আলোচনাসভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি সকাল থেকেই শুরু হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় যশোর ছিল কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চৌগাছা উপজেলার সলুয়া বাজারে পাকিস্তানি বাহিনী অগ্রবর্তী ঘাঁটি তৈরি করেছিল। অন্যদিকে, যশোর সেনানিবাসের তিন দিক ঘিরে অবস্থান নেন মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যোদ্ধারা। প্রতিরোধ যুদ্ধের শেষ দফার অভিযান চলে টানা তিন দিন—৩, ৪ ও ৫ ডিসেম্বর। এই সময়ে যশোর অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে তুমুল যুদ্ধ হয়।
মিত্রবাহিনী সীমান্ত এলাকা থেকে যশোর সেনানিবাসসহ পাকবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণ চালায়। যুদ্ধের চাপে পর্যুদস্ত পাক সেনারা ৫ ডিসেম্বর দুপুরের পর থেকেই যশোর ছেড়ে পালানোর প্রস্তুতি নেয়। সেদিন পাকিস্তানের নবম ডিভিশন ও ভারতীয় নবম পদাতিক ও চতুর্থ মাউন্টেন ডিভিশনের মধ্যে ভয়াবহ লড়াই হয়। বিকেলেই পাকবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বুঝতে পারেন যে যশোর দুর্গ আর কোনোভাবেই রক্ষা করা সম্ভব নয়।
৯ দিন আগে
লালমনিরহাট হানাদারমুক্ত দিবস আজ
আজ ৬ ডিসেম্বর, হানাদারমুক্ত দিবস পালন করছে উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাট। ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তিযোদ্ধাদের ত্রিমুখী আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী পরাজয় নিশ্চিত জেনে লালমনিরহাট থেকে পালিয়ে যায়। এর মাধ্যমে মুক্ত হয় পুরো জেলা।
মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নে ৩ মার্চ পাকসেনারা সড়কপথে লালমনিরহাট দখল করে। দখলের পর বিহারী, রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সহায়তায় দখলদাররা শহর ও বিভিন্ন উপজেলায় ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ চালায়। এসব নৃশংসতার সাক্ষী হয়ে আছে জেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা বহু গণকবর।
বীর মুক্তিযোদ্ধা নিজাম উদ্দিন জানান, পাকিস্তানি বাহিনী হেলিকপ্টারযোগে লালমনিরহাটে পৌঁছালে স্থানীয় পুলিশ ও মুক্তিযোদ্ধারা শহীদ ওসি মীর মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এতে বহু পাক সেনা ও অবাঙালি সহযোগী নিহত হয়। প্রতিশোধ নিতে দখলদাররা বাঙালিদের ওপর নির্বিচারে হামলা শুরু করে; হত্যা, অগ্নিসংযোগ এবং নারী-শিশুদের ওপর নির্যাতন চালায়।
তিনি জানান, মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের যৌথ ত্রিমুখী আক্রমণে পাকিস্তানি বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত ৬ ডিসেম্বর ভোরে তারা রাজাকার ও আলবদরদের নিয়ে লালমনিরহাট রেলস্টেশন থেকে দুটি বিশেষ ট্রেনে রংপুর ও সৈয়দপুরের দিকে পালিয়ে যায়। তিস্তা নদী পার হওয়ার পর ফেরার পথে তারা তিস্তা রেলসেতুতে বোমা বর্ষণ করে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
৯ দিন আগে
হানাদারমুক্ত হয়ে ঝিনাইদহের আকাশে আজ উদিত হয়েছিল লাল-সবুজের পতাকা
আজ ৬ ডিসেম্বর; ঝিনাইদহ হানাদারমুক্ত দিবস। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক-হানাদারদের হটিয়ে ঝিনাইদহকে শত্রুমুক্ত করে মুক্তিকামী বাংলার দামাল ছেলেরা। আজকের এই দিনেই ঝিনাইদহে প্রথম উদিত হয় লাল-সবুজের পতাকা। মানুষ নির্ভয়ে রাস্তায় নেমে আসে এবং উল্লাস করতে থাকে।
১৯৭১ সালের পহেলা এপ্রিল স্বাধীনতা সংগ্রামে এ দেশে প্রথম যে সম্মুখযুদ্ধ সংঘটিত হয়, তা ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বিষয়খালী গ্রামে। ওই দিন পাকবাহিনী যশোর ক্যান্টমেন্ট থেকে ভারী অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঝিনাইদহ দখলের উদ্দেশ্যে এগিয়ে আসতে থাকে।
আক্রমণ প্রতিহত করতে বিষয়খালী গ্রামের বেগবতী নদীর তীরে তাদের জন্য প্রবল বাধা হয়ে দাঁড়ান মুক্তিযোদ্ধারা। পাকবাহিনীকে রুখতে নদীর ওপর নির্মিত সেতু গুঁড়িয়ে দেন তারা। প্রায় ৮ ঘণ্টা ধরে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর তুমুল যুদ্ধ হয়। নদীতীরে সম্মুখযুদ্ধে ব্যর্থ হয়ে পাক-হানাদারবাহিনী পিছু হটে এবং নিকটস্থ গড়িয়ালা গ্রামে প্রবেশ করে নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা করতে থাকে।
৪ এপ্রিল শৈলকূপা উপজেলার গাড়াগঞ্জ যুদ্ধ, ৪ আগস্ট একই উপজেলার আলফাপুর যুদ্ধ, ১৪ অক্টোবর আবাইপুর যুদ্ধ ও ২৬ নভেম্বর কামান্না যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ ছাড়াও ৬ আগস্ট, ১৭ আগস্ট ও ১১ নভেম্বর জেলার বিভিন্ন স্থানে তুমুল যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসে গেরিলা যুদ্ধ চরম আকার ধারণ করে। অপরদিকে, ভারতীয় বাহিনী ও মুক্তিবাহিনী যৌথভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে ভেতরে ঢুকে পড়ে। মুক্তিসেনাদের সাঁড়াশি আক্রমণে ৩ ডিসেম্বর মুক্ত হয় ঝিনাইদহের মহেশপুর, ৪ ডিসেম্বর কোটচাঁদপুর এবং ৫ ডিসেম্বর কালীগঞ্জ উপজেলা।
এদিকে চুয়াডাঙ্গা এলাকা দিয়ে কপোতাক্ষ নদ ও চিত্রা নদী অতিক্রম করে ৬ ডিসেম্বর মুক্তিকামীরা ঝিনাইদহে প্রবেশ করে জেলা শহর মুক্ত করে। এসব যুদ্ধে সারা জেলায় ২৭৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। তাদের মধ্যে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন দুজন। তারা হলেন— বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান ও বীর প্রতীক সিরাজুল ইসলাম।
স্মৃতিচারণ করে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কামালুজ্জামান বলেন, ৬ ডিসেম্বর ঝিনাইদহ হানাদারমুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়িঘর থেকে দলে দলে সর্বস্তরের মানুষ রাস্তায় নেমে এসে জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে বিজয় উল্লাস করতে থাকেন। ফুল দিয়ে তারা মুক্তিসেনাদের বরণ করে নেন।
ঝিনাইদহ মুক্ত দিবস পালনে জেলার বিভিন্ন সংগঠন আজ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
৯ দিন আগে
৬ ডিসেম্বর ফেনীতে উড়েছিল মুক্ত বাংলার পতাকা
১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর। মুক্তিযোদ্ধারা সম্মুখ সমরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে ফেনীর মাটিতে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছিলেন। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা সংগ্রামে হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার-আলবদর-আলশামস বাহিনীর নৃশংস বর্বরতায় ক্ষত-বিক্ষত ফেনী শহরে স্বাধীনতাকামী বাঙালিরা বিজয়ের নিশান উড়িয়ে উল্লাস করেছিলেন আজকের দিনেই।
১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হয় ফেনী। সেই থেকে এ দিনটি ফেনী মুক্ত দিবস হিসেবে পরিচিত। বছর ঘুরে এলেই নানা আনুষ্ঠানিকতায় পালিত হয় দিবসটি।
দিনটি যথাযথ মর্যাদায় উদযাপনের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন আয়োজন করেছে নানা আয়োজন। ফেনী মুক্ত দিবস উপলক্ষে কলেজ রোডের মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে র্যালি বের হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন দিবসটি উদযাপনের নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
জানা যায়, ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ভোর থেকে সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধারা ফেনীর পূর্বাঞ্চল দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ২ নম্বর সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন জাফর ইমামের নেতৃত্বে ফেনী শহরে প্রবেশ করতে থাকেন। পরে শহরের রাজাঝির দীঘির পাড়ে ডাকবাংলোর সামনে স্বাধীন বাংলাদেশের ফেনীতে প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। সেখানে জড়ো হওয়া মুক্তি সংগ্রামীরা মিছিল থেকে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে স্লোগানে শহর প্রকম্পিত করে।
মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেই ফেনী প্রেসক্লাবের সামনে মিছিল দেখে উৎফুল্ল হয়ে ওঠেন। বিকেল নাগাদ সেখানে বিএলএফ কমান্ডার জয়নাল আবেদিনের নেতৃত্বে যুক্ত হন মুক্তিযোদ্ধারা। সেখানে ‘ফেনীর রাজা’ খ্যাত খাজা আহম্মদ সব মুক্তিযোদ্ধাদের দেশ গড়ার কাজে নেমে পড়তে আহ্বান জানিয়ে দিকনির্দেশনা দেন।
একপর্যায়ে সাধারণ মানুষ মিছিলে অংশ নিতে শুরু করে। স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধের লক্ষণ দেখে পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাক বাহিনী আর তাদের দোসর রাজাকার, আলবদর, আল-শামস বাহিনী ফেনীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ফেনী শহর হয়ে চট্টগ্রামের দিকে পালিয়ে যায়। এভাবেই দীর্ঘ ৯ মাসের বজ্রকঠিন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মুক্তিকামীরা ফেনীর জমিনে লাল-সবুজের এক টুকরো পতাকা ওড়ান।
মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য বীরত্বের জন্য ফেনীর ৩১ জন মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয় খেতাবে ভূষিত করা হয়। খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে চারজন বীর উত্তম, সাতজন বীর বিক্রম এবং ২০ জন বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত হন।
সেদিনের বিবরণ দিতে গিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মোতালেব বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা সকালেই ফুলগাজীর বন্দুয়া থেকে এসে ফেনী সার্কিট হাউজে (বর্তমান ফেনী সড়ক ও জনপথ বিভাগের রেস্ট হাউজ) প্রথম বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। বিকেলের মধ্যেই মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক জয়নাল আবেদীন ভিপির নেতৃত্বে মুজিব বাহিনী রাজাপুর, কোরাইশ মুন্সী ও সোনাগাজীর নবাবপুর থেকে ট্রাংক রোডে চলে আসেন। সন্ধ্যায় সেখানে মুক্তিযোদ্ধারা সমাবেশ করেন।
ফেনী মুক্ত দিবস সম্পর্কে বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন ভিপি বলেন, ডিসেম্বরের শুরুতেই গেরিলা যুদ্ধের নীতি ‘হিট অ্যান্ড রান’ প্রয়োগ করে যুদ্ধ করতে করতে আমরা পাঁচগাছিয়া এলাকার কাছাকাছি চলে আসি। রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের এদিকে এসে হিট (হামলা) করে আবার চলে যাই। ৫ ডিসেম্বর আমরা ঠিক ফেনীর কাছাকাছি যখন আসি, তখন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী রণে ভঙ্গ দিয়ে শেষ রাতের দিকে শুভপুর ও বারইয়ারহাট হয়ে চট্টগ্রামের দিকে পালিয়ে যায়।
ফেনী জেলা প্রশাসক মনিরা হক বলেন, ‘৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন। এদিন বীর মুক্তিযোদ্ধারা ফেনীকে হানাদারমুক্ত করেছিল। দিনটিকে আমরা নানা উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালন করে থাকি। সেদিন ফেনীর বীর মুক্তিযোদ্ধারা যে অসামান্য বীরত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন, সেটিকে আমরা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করব।’
৯ দিন আগে