বিশ্ব
যুক্তরাষ্ট্র আর ‘হামলা না চালালে’ আলোচনায় বসতে রাজি ইরান
ইরানের ওপর আর কোনো হামলা না চালানোর নিশ্চয়তা দিলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে পুনরায় আলোচনায় বসতে রাজি বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি।
স্থানীয় সময় শনিবার (১২ জুলাই) তেহরানে অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকদের উদ্দেশে দেওয়া এক বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ইরান সবসময়ই সংলাপের জন্য প্রস্তুত ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। তবে আলোচনার পথ যেন যুদ্ধের দিকে না গড়ায়, সে বিষয়ে নিশ্চয়তা থাকতে হবে।’
ইসরায়েলের সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধে ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনাগুলোর ওপর তেল আবিবের অব্যাহত হামলা ও ২২ জুন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘যদি যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য পক্ষগুলো আবারও আলোচনা শুরু করতে চায়, তাহলে সবার আগে নিশ্চিত করতে হবে যে এ ধরনের হামলা আর হবে না। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর হামলা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছানোর পথ আরও কঠিন ও জটিল করে তুলেছে।’
আরও পড়ুন: ইরানের পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কখনোই বন্ধ হবে না: ইরাভানি
ওই হামলার পরই জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থার (আইএইএ) সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করে ইরান। ফলে সংস্থাটির পরিদর্শকরা ইরান ছাড়তে বাধ্য হন।
আরাগচি জানান, আইএইএ’র যেকোনো অনুরোধ এখন ‘ঘটনাভিত্তিক ও স্বার্থ বিবেচনায়’ মূল্যায়ন করবে ইরান। এ ছাড়া, ভবিষ্যতে সংস্থাটির যেকোনো পরিদর্শন ইরানের ‘নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ’ ও পরিদর্শকদের নিরাপত্তার ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে বলেও জানান তিনি।
তিনি সতর্ক করেন, পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ধ্বংসপ্রাপ্ত এলাকাগুলোতে যুদ্ধের সময়কার অব্যবহৃত বিস্ফোরক ও বিকিরণযুক্ত উপাদান ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে।
আরও পড়ুন: সংঘাতের পর প্রথমবার প্রকাশ্যে খামেনি
এ সময় নিজ ভূখণ্ডে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ওপর আবারও জোর দেন আরাগচি। যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার বলেছেন, এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
ইসরায়েলের দাবি, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিল বলেই তারা হামলা চালিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা ও আইএইএ বলছে, ইরান ২০০৩ সালের পর সংগঠিতভাবে কোনো পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি চালায়নি, যদিও দেশটি ইতোমধ্যে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে, যেটি অস্ত্র-যোগ্য ৯০ শতাংশ মাত্রার থেকে খুব একটা দূরে নয়।
এদিকে, গত সোমবার (৭ জুলাই) প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান জানান, যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে কর্তৃপক্ষ এখনও সেগুলোর পূর্ণাঙ্গ ক্ষয়ক্ষতি মূল্যায়নই করতে পারেনি।
১৫৫ দিন আগে
ত্রাণ নিতে গিয়ে মে থেকে প্রায় ৮০০ ফিলিস্তিনি নিহত
টানা তিন মাসের অবরোধের পর গত ২০ মে থেকে গাজায় পুনরায় ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দেয় ইসরায়েল। তবে এই মানবিক সহায়তা ফিলিস্তিনিদের জন্য আরেক মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। মে মাসের শেষ থেকে এ পর্যন্ত ত্রাণ নিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৭৯৮ জন।
সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর থেকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সমর্থনে পরিচালিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) ও অন্যান্য ত্রাণ কেন্দ্র থেকে খাবার আনতে গিয়ে এসব প্রাণহানি ঘটেছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
স্থানীয় সময় শুক্রবার (১১ জুলাই) জেনেভায় এক ব্রিফিংকালে এই প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরেন জাতিসংঘের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি।
এর আগে, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধায়নে গাজায় ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা হতো। পরে জাতিসংঘের সহায়তা ব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে জিএইচএফের প্রস্তাব আনে ইসরায়েল। তবে এই সংস্থাটি কার্যক্রম শুরু করার পর থেকেই মানবিক সহায়তায় নিরপেক্ষতা লঙ্ঘনের অভিযোগে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কড়া সমালোচনার মুখে পড়ে। এমনকি সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধে সহযোগিতার অভিযোগও তোলা হয় সংস্থাটির বিরুদ্ধে।
শুক্রবার রাভিনা শামদাসানি বলেন, ‘৭ জুলাই পর্যন্ত আমরা মোট ৭৯৮টি হত্যাকাণ্ড নথিভুক্ত করেছি, যার মধ্যে ৬১৫টি ঘটেছে জিএইচএফের আশপাশে এবং বাকি ১৮৩টি ঘটেছে ত্রাণকেন্দ্রে যাওয়ার পথে।’
ইসরায়েলের অভিযোগ, জাতিসংঘ পরিচালিত সহায়তা ব্যবস্থার মাধ্যমে হামাস ত্রাণের অপব্যবহার করছে। অন্যদিকে জাতিসংঘের দাবি, এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই।
জিএইচএফ বর্তমানে চারটি খাদ্য বিতরণকেন্দ্র পরিচালনা করছে, যেখানে মার্কিন ভাড়াটে সৈন্যরা নিরাপত্তা রক্ষায় নিয়োজিত। অথচ জাতিসংঘ পরিচালিত আগের ব্যবস্থায় ৪০০টি বেসামরিক বিতরণকেন্দ্র ছিল।
এদিকে, জাতিসংঘের পরিসংখ্যানকে ‘মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর’ দাবি করে জিএইচএফের এক মুখপাত্র বলেন, ‘তাদের সহায়তাকেন্দ্রে কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। বরং সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলাগুলো হয়েছে জাতিসংঘের ত্রাণকেন্দ্রের ওপর।’
আরও পড়ুন: খাবার নিতে আসা শিশুদের ওপর ইসরায়েলের ‘অমার্জনীয়’ হামলা
জিএইচএফ আরও দাবি করেছে, তাদের পরিচালিত কোনো স্থানে কেউ আহত হয়নি। বরং দক্ষিণ ও মধ্য গাজার চারটি সহায়তাকেন্দ্রে পৌঁছাতে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালানোর জন্য তারা ইসরায়েলি সেনাদের দোষারোপ করেছে।
১৫৬ দিন আগে
উড্ডয়নের পরপরই জ্বালানি ‘শেষ হয়ে গিয়েছিল’ এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটের
ভারতের আহমেদাবাদে দুর্ঘটনার শিকার হওয়া এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটটি উড্ডয়নের কয়েক সেকেন্ড পরই জ্বালানি শেষ হয়ে গিয়েছিল বলে জানা গেছে। ভারতের এয়ারক্রাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরোর (এএআইবি) প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য।
গত ১২ জুন লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়ার এআই১৭১ ফ্লাইটটি (বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার) আকাশে ওড়ার অল্প সময়ের মধ্যেই একটি আবাসিক এলাকায় বিধ্বস্ত হয়। এতে বিমানে থাকা ২৪২ জনের মধ্যে ২৪১ জনই নিহত হন। তাছাড়া, যে এলাকায় বিমানটি বিধ্বস্ত হয়, সেখানবকারও ১৯ জন নিহত হন। এটি ছিল গত এক দশকের সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা।
আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল বিধি মতে, দুর্ঘটনার ৩০ দিনের মধ্যে তদন্তকারী রাষ্ট্রকে প্রাথমিক প্রতিবেদন দিতে হয়।
ভারতের তদন্ত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, দুর্ঘটনায় বোয়িং কিংবা ইঞ্জিন নির্মাতা জিই’র কোনো ত্রুটি পাওয়া যায়নি। বরং ককপিটের যে সুইচগুলো দিয়ে ইঞ্জিনে জ্বালানি সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করা হয়, সেগুলো ‘কাট-অফ’, অর্থাৎ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিমানটি স্থানীয় সময় দুপুর ১ টা ৩৮ মিনিট ৪২ সেকেন্ডে ১৮০ নট ইন্ডিকেটেড এয়ারস্পিড (আইএস) গতি অর্জন করে। ঠিক তার পরপরই ইঞ্জিন ১ এবং ইঞ্জিন ২–এর জ্বালানি সরবরাহ সুইচগুলো ‘রান’ থেকে ‘কাট-অফ’ অবস্থায় চলে যায়। এটি মাত্র এক সেকেন্ডের ব্যবধানে এই অবস্থায় চলে যায়। এর ফলে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে ইঞ্জিন দুটির এন১ ও এন২ মান কমতে শুরু করে।
আরও পড়ুন: এবার ভারতে যাত্রীবাহী হেলিকপ্টার বিধ্বস্তে নিহত ৭
প্রতিবেদন আরও জানানো হয়েছে, রানওয়ের সীমানা প্রাচীর অতিক্রম করার আগেই বিমানটির উচ্চতা কমতে শুরু করে। ককপিট ভয়েস রেকর্ডার থেকে জানা গেছে, এক পাইলট অপর পাইলটকে ওই সময় জিজ্ঞেস করেন, ‘তুমি কেন জ্বালানি বন্ধ করলে?’
জবাবে অপর পাইলট বলেন যে, তিনি জ্বালানি বন্ধ করেননি।
তবে কোন পাইলট এই কথা বলেছিলেন কিংবা কে ‘মে ডে, মে ডে, মে ডে’ সংকেত পাঠিয়েছিলেন, সে বিষয়ে প্রতিবেদনে কিছু উল্লেখ নেই।
দুর্ঘটনায় নিহত বিমানটির কমান্ডার ছিলেন ৫৬ বছর বয়সী সুমিত সাবরওয়াল, যার ১৫ হাজার ৬৩৮ ঘণ্টার বেশি ফ্লাইট পরিচালনার অভিজ্ঞতা ছিল। এ ছাড়া এয়ার ইন্ডিয়ার প্রশিক্ষক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন তিনি। সহকারী পাইলট ক্লাইভ কুন্ডারের বয়স ছিল ৩২ বছর, তার মোট ফ্লাইট অভিজ্ঞতা ছিল ৩ হাজার ৪০৩ ঘণ্টা।
তবে সুইচগুলো কীভাবে কাট-অফ অবস্থায় গেল, প্রতিবেদনে সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু উল্লেখ করা হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের বিমান নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ জন কক্স বলেন, ‘পাইলটের পক্ষে ভুল করে এই সুইচ টেনে ফেলা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ‘এই সুইচগুলো এমন নয় যে হঠাৎ ধাক্কা লাগলে নিজেরা সরবে।’ সুইচগুলোর কাট-অফ মোডে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায় বলে জানান এই বিশেষজ্ঞ।
আরও পড়ুন: আহমেদাবাদে বিমান বিধ্বস্ত: ২৪১ জন নিহত, একমাত্র জীবিত উদ্ধার
সাধারণত রানওয়েতে পৌঁছানোর পর ফ্লাইটের ইঞ্জিন বন্ধ করতে কিংবা বিশেষ জরুরি পরিস্থিতিতে, যেমন: ইঞ্জিনে আগুন লাগলে এই সুইচ ব্যবহার করা হয়। কিন্তু ওই ফ্লাইটে এমন কোনো জরুরি পরিস্থিতির কথা প্রতিবেদনে বলা হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের আরেক বিমান নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি ব্রিকহাউস বলেন, ‘যদি পাইলট সুইচ ঘুরিয়ে থাকেন, তাহলে তিনি তা কেন করলেন?’ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুটি সুইচ এক সেকেন্ডের ব্যবধানে কাট-অফ অবস্থায় চলে যায়।
বিশেষজ্ঞ জন ন্যান্সের মতে, সময়ের এই ব্যবধান দেখেই বোঝা যায়, একজন ব্যক্তি প্রথমে একটি এবং পরেই আরেকটি সুইচ ঘোরালে এমনটি হতে পারে। তিনি বলেন, ‘উড্ডয়নের ঠিক পরপরই পাইলট কখনোই স্বেচ্ছায় এই সুইচ বন্ধ করবেন না।’
প্রতিবেদনের একটি অংশে বলা হয়, ইঞ্জিন ১ কাট-অফ হওয়া সত্ত্বেও কিছুটা পুনরুদ্ধার শুরু করেছিল, তবে ততক্ষণে বিমানের গতি কমে যাওয়া তা আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইঞ্জিন ১–এর ‘কোর ডেসিলারেশন’ বন্ধ হয়ে উল্টো ঘুরে গিয়ে কিছুটা পুনরুদ্ধার শুরু করে, তবে ইঞ্জিন ২ ‘রিলাইট’ (পুনরায় চালু) হলেও গতি কমা ঠেকাতে পারেনি।
এয়ার ইন্ডিয়া এক বিবৃতিতে জানায়, তারা ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সহযোগিতা করছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনো মন্তব্য করেনি।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড এক বিবৃতিতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছে, এই প্রতিবেদনটিতে বোয়িং ৭৮৭ জেট বা জিই ইঞ্জিন পরিচালকদের জন্য কোনো সতর্কতামূলক সুপারিশ নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বলছে, তারা তদন্তে বেরিয়ে আসা সত্যের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে এবং কোনো ঝুঁকি চিহ্নিত হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে।
আরও পড়ুন: আহমেদাবাদে বিমান বিধ্বস্ত: ৫ মেডিকেল শিক্ষার্থী নিহত, আহত ৪০
তাছাড়া বোয়িং জানিয়েছে, তদন্তকাজে তারা এয়ার ইন্ডিয়াকে সহায়তা করছে। তবে জিই অ্যারোস্পেসের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান।
বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ফলে অন্তত পাঁচটি ভবন ধ্বংস হয়েছে এবং নিচে থাকা ১৯ জন মারা গেছেন। বিধ্বস্ত হওয়া ভবনগুলোর মধ্যে একটি ছিল বাইরামজি জিজিভয় মেডিকেল কলেজ ও সিভিল হাসপাতালের ছাত্রাবাস।
দুর্ঘটনার কয়েকদিন পর দুটি ব্ল্যাক বক্স উদ্ধার হয়। ১৩ জুন একটি ব্ল্যাক বক্স দুর্ঘটনাস্থলের একটি ভবনের ছাদ থেকে এবং ১৬ জুন অপরটি ধ্বংসস্তূপের ভেতরে পাওয়া যায়।
তবে পাখির সঙ্গে ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনার আশঙ্কা প্রতিবেদনে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। ওই ফ্লাইটপথে পাখির তেমন উপস্থিতির প্রমাণ মেলেনি বলেও জানানো হয়েছে।
বিমানটিতে ১৬৯ জন ভারতীয় নাগরিক, ৫৩ জন ব্রিটিশ, সাতজন পর্তুগিজ, একজন কানাডীয় এবং ১২ জন ক্রু সদস্য ছিলেন।
এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় একমাত্র যাত্রী হিসেবে বেঁচে যান ব্রিটিশ নাগরিক বিশ্বাস কুমার রমেশ। তিনি বিমানের ধ্বংসস্তূপের একটি ফাঁকা জায়গা দিয়ে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন।
হাসপাতালের শয্যা থেকে গত মাসে রমেশ বলেছিলেন, ‘উড্ডয়নের ঠিক পরপরই মনে হয়েছিল বিমানটি যেন আকাশে আটকে গেছে। এরপর বিমানের লাইটগুলো জ্বলা–নেভা শুরু করে।’
তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই বিমানটি একটা ভবনে ধাক্কা মেরে বিস্ফোরিত হয়।’
‘আমি ভাবতেই পারিনি বেঁচে যাব। এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিল, আমিও মারা যাব। কিন্তু যখন চোখ খুলে চারপাশে তাকালাম, তখন বুঝলাম বেঁচে আছি। এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না—কীভাবে বেঁচে ফিরলাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি নিজের সিটবেল্ট খুলে পা দিয়ে ধাক্কা দিয়ে সেই ফাঁকা জায়গা দিয়ে বেরিয়ে আসি। জানি না কীভাবে বেঁচে গেছি। আমার চোখের সামনেই মানুষ মরতে দেখেছি—এয়ার হোস্টেসরা, আমার পাশের দুজন… আমি হাঁটতে হাঁটতে ধ্বংসস্তূপ থেকে বেরিয়ে এসেছি।’
১৫৬ দিন আগে
মার্কিন পণ্যে পাল্টা ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি ব্রাজিলের
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্রাজিলের রপ্তানিপণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। এর জবাবে পাল্টা একই হারে মার্কিন পণ্যে শুল্ক বসানোর হুমকি দিয়েছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা।
বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) ব্রাজিলের একটি সংবাদমাধ্যমের বরাতে ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের খবরে জানানো হয়, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আমাদের পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক বসালে আমরাও তাদের পণ্যে ৫০ শতাংশ বসাবো।’
আরও পড়ুন: কানাডায় ৩৫ শতাংশ শুল্কারোপের সিদ্ধান্ত ট্রাম্পের, অনিশ্চয়তায় ইউএসএমসিএ চুক্তি
ট্রাম্প সম্প্রতি এক বিবৃতিতে ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর বিরুদ্ধে চলমান বিচার কার্যক্রমকে ইঙ্গিত করে দেশটিকে ‘উইচ-হান্ট’ চালানোর অভিযোগে অভিযুক্ত করেন।
শুল্ক আরোপের বিষয়ে তিনি আরও জানান, ব্রাজিল সরকার বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) কাছে আপিল করে আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বান এবং ব্যাখ্যা দাবি করতে পারে।
বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) সকালে লুলা তার মন্ত্রিসভার সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন। ট্রাম্পের ঘোষণার জবাব কীভাবে দেওয়া হবে—তা নির্ধারণে একটি স্টাডি গ্রুপ গঠন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ওই বৈঠকে।
অন্যদিকে, ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, ব্রাজিল পাল্টা শুল্ক আরোপ করলে আরও বেশি হারে শুল্ক বসানো হবে।
চলতি সপ্তাহে ট্রাম্প বাংলাদেশ, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ একাধিক দেশকে নতুন শুল্কের বিষয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। চুক্তি না হলে ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে।
১৫৭ দিন আগে
কানাডায় ৩৫ শতাংশ শুল্কারোপের সিদ্ধান্ত ট্রাম্পের, অনিশ্চয়তায় ইউএসএমসিএ চুক্তি
কানাডার পণ্যে অতিরিক্ত ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ বাণিজ্যিক অংশীদার দেশের ওপর অতিরিক্ত ১৫ বা ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকিও দিয়েছেন তিনি। এতে, যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো-কানাডা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (ইউএসএমসিএ) নতুন করে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নেকে লেখা চিঠি আপলোড দিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘আগামী ১ আগস্ট থেকে এই শুল্কহার বাস্তবায়িত হবে।’ কানাডা পাল্টা পদক্ষেপ নিলে শুল্ক হার আরও বাড়ানোর হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
চলতি বছর মার্চে ট্রাম্প কানাডা থেকে আমদানি করা গাড়ি ও গাড়ির যন্ত্রাংশে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন। এরপর জুনে তিনি কানাডার স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামে ৫০ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা করেন। এবার তিনি জানালেন, এই শুল্কহার অন্যান্য কানাডিয়ান পণ্যের ওপরও কার্যকর হতে পারে।
এর আগে, কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি এক্সে লিখেছিলেন, ‘আমরা আমাদের শ্রমিক ও ব্যবসার স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় অটল থাকব।’ তবে, নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণার পর চলমান আলোচনার ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
আরও পড়ুন: মহারাষ্ট্রে হিন্দি ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ, রাজ্যজুড়ে উত্তেজনা
২০২০ সালে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে নাফটা বাতিল করে এই নতুন ইউএসএমসিএ চুক্তি চালু করা হয়। বর্তমানে, কানাডা ও মেক্সিকো তিন দেশের চুক্তি স্থিতিশীল করতে নতুন করে সমঝোতার পথ খুঁজছে।
চলতি বছরের শুরুতে ট্রাম্প দুই প্রতিবেশী দেশের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন, যদিও কানাডার জ্বালানি রপ্তানিতে কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়। তিনি অভিযোগ করেন, এই দুই দেশ অবৈধ অভিবাসন ও মাদক পাচার রোধে যথেষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
যদিও ইউএসএমসিএ’র আওতায় কিছু পণ্য এখনও শুল্কমুক্ত থাকছে। গত ৬ মে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প ও কার্নির মধ্যে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এরপর কার্নি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ওপর প্রস্তাবিত ডিজিটাল সার্ভিস কর প্রত্যাহার করেন।
তবে, ট্রাম্প ক্রমেই বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্ক আরোপ করছেন। তিনি সম্প্রতি জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের পণ্যে নতুন শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন।
এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছেন, ‘সরাসরিই বলি, বাকি দেশগুলোকে এখন থেকে ১৫ বা ২০ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে।’
এদিকে, ট্রাম্প প্রশাসনের এসব পদক্ষেপের বৈধতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে গড়িয়েছে। দেশটির একটি ফেডারেল আদালত এরই মধ্যে রায় দিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট তার ক্ষমতার সীমা ছাড়িয়ে গেছেন। এই আপিলের শুনানি আগামি ৩১ জুলাই ওয়াশিংটনের আদালতে অনুষ্ঠিত হবে।
১৫৭ দিন আগে
মহারাষ্ট্রে হিন্দি ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ, রাজ্যজুড়ে উত্তেজনা
ভারতের সবচেয়ে ধনী রাজ্য মহারাষ্ট্রে হিন্দি ভাষা শিক্ষা বাধ্যতামূলক করাকে কেন্দ্র করে কয়েক সপ্তাহ ধরে উত্তেজনা চলছে। সম্প্রতি রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে মারাঠি ভাষা অধিকার রক্ষার দাবিতে বিক্ষোভ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
খবরে বলা হয়, ভাষা নিয়ে চলমান এই বিতর্কের সূত্রপাত এপ্রিল মাসে। সে সময় মহারাষ্ট্র সরকার ঘোষণা দেয়, রাজ্য পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ইংরেজি ও মারাঠির পাশাপাশি তৃতীয় ভাষা হিসেবে হিন্দি ভাষাও শেখানো হবে। রাজ্য সরকারের দাবি, এটি কেন্দ্রীয় সরকারের জাতীয় শিক্ষানীতির (এনইপি) অংশ।
১৯৬৮ সালে চালু হওয়া এনইপি দেশটির শিক্ষাব্যবস্থাকে উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যেই প্রণয়ন করা হয়। সময়ে সময়ে এই নীতিতে সংশোধন আনা হয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার পাঁচ বছর আগে এর সর্বশেষ সংস্করণ চালু করেন, যা ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তবে এটি নিয়ে এর আগেও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল।
রাজ্যটির ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন, বিরোধী দল ও নাগরিক সমাজ এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। তাদের অভিযোগ, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে মারাঠি ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর হিন্দিকে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন: খাবার নিতে আসা শিশুদের ওপর ইসরায়েলের ‘অমার্জনীয়’ হামলা
এ নিয়ে রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মধ্যে সহিংসতার ঘটনাও ঘটে। এপ্রিল মাসে রাজ্যের থানে জেলায় দুই নারীকে মারাঠি না বলার কারণে হামলার শিকার হতে হয়। একই মাসে মুম্বাইয়ে এক নিরাপত্তাকর্মী মারাঠি না জানায় মারধরের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া, গত সপ্তাহে মুম্বাইয়ের এক দোকানদারকে মারাঠি না বলায় মারধরের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।
এই পরিস্থিতিতে বিজেপি নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার সিদ্ধান্তটি বাতিল করে এবং বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য একটি কমিটি গঠন করে। তবে, এখানেই বিতর্কের অবসান হয়নি। আসন্ন স্থানীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে স্থানীয় রাজনীতিও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
যদিও ভাষা বিতর্কটি সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করেছে, তবুও এটি দুই পুরনো রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে প্রায় দুই দশক পর এক মঞ্চে নিয়ে এসেছে।
আরও পড়ুন: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে ‘বাণিজ্যযুদ্ধ’ নিয়ে সতর্ক করলেন আনোয়ার ইব্রাহিম
দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক বিরোধ ভুলে হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দল শিবসেনার প্রধান উদ্ধব ঠাকরে এবং তার চাচাতো ভাই মারাঠি জাতীয়তাবাদী দল এমএনএস প্রধান রাজ ঠাকরে একসঙ্গে একটি জনসভায় অংশ নেন। তারা হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে মারাঠি ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার আহ্বান জানান।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ভাষা ও পরিচয় ঘিরে এই ইস্যুটি আগামী নির্বাচনে ভোটারদের প্রভাবিত করতে পারে। তবে অনেকে বলছেন, ভাষাকেন্দ্রিক রাজনীতি দিয়ে দীর্ঘস্থায়ী জনপ্রিয়তা ধরে রাখা কঠিন।
১৫৭ দিন আগে
খাবার নিতে আসা শিশুদের ওপর ইসরায়েলের ‘অমার্জনীয়’ হামলা
চলমান যুদ্ধবিরতি আলোচনা ও রাফায় ফিলিস্তিনিদের বিতর্কিত পুনর্বাসন পরিকল্পনার মধ্যেই ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় অন্তত ৮২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এদিন শিশুদের খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়ে প্রাণ গেছে ৯টি শিশুর।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) ভোর থেকে চালানো হামলায় এসব হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে কাতার ভিত্তিক মার্কিন সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রীয় গাজার দেইর আল-বালাহ এলাকায় শিশুদের জন্য পুষ্টি সহায়তা সংগ্রহ করতে আসা ফিলিস্তিনিদের ওপর চালানো বিমান হামলায় ১৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন। তাদের মধ্যে ৯টি শিশু ও ৪ জন নারী রয়েছেন। এ ঘটনায় আরও অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১৯টিই শিশু।
জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল হামলাটিকে ‘অমার্জনীয়’ বলে অভিহিত করে বলেন, ‘সাহায্যের অপেক্ষায় থাকা পরিবারগুলোর ওপর এমন হামলা অত্যন্ত নির্মম ঘটনা। এটি গাজায় চলমান ভয়াবহতার বাস্তব প্রতিচ্ছবি।’
তিনি বলেন, ‘অপর্যাপ্ত সহায়তার কারণে গাজায় শিশুদের না খেয়ে থাকার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এবং বর্তমানে সেখানে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি বাড়ছে। জরুরি সহায়তা ও সেবা পূর্ণমাত্রায় চালু না হলে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের সংখ্যা বাড়তেই থাকবে।’
আরও পড়ুন: গাজায় সেনা রাখতে অনড় ইসরায়েল, ব্যর্থ হওয়ার শঙ্কায় যুদ্ধবিরতি
ইউনিসেফের এই নির্বাহী পরিচালক ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে চলার আহ্বান জানান এবং এই ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান।
ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস এই হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছে, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর ‘গণহত্যা অভিযান’ চলছে। এক বিবৃতি গোষ্ঠীটি জানায়, ‘ইসরায়েল বেসামরিক নাগরিকদের ওপর পরিকল্পিতভাবে একের পর এক গণহত্যা চালাচ্ছে। তারা স্কুল, রাস্তা, উদ্বাস্তু ক্যাম্প ও চিকিৎসাকেন্দ্র—সব জায়গায় হামলা চালাচ্ছে, যা সারা বিশ্বের চোখের সামনেই সংঘটিত হওয়া জাতিগত নিধনের সুস্পষ্ট প্রমাণ।’
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে ১২০০ জন নিহত এবং ২৫১ জন জিম্মি হয়। এরপরই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েল।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এরপর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৫৭ হাজার ৭৬২ ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরও ১ লাখ ৩৭ হাজার ৬৫৬ জন আহত হয়েছেন।
এদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইসরায়েলের সঙ্গে নতুন একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে। এর আওতায় খাদ্য ও জ্বালানিসহ জরুরি ত্রাণ সহায়তা গাজায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
১৫৭ দিন আগে
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে ‘বাণিজ্যযুদ্ধ’ নিয়ে সতর্ক করলেন আনোয়ার ইব্রাহিম
বৈশ্বিক বাণিজ্য এখন ‘অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। এ কারণে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোকে ‘বাণিজ্যযুদ্ধে’ না জড়িয়ে পড়ার বিষয়ে সতর্ক করেছেন তিনি।
স্থানীয় সময় বুধবার (৯ জুলাই) আসিয়ান জোটের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এই সতর্কতার আহ্বান জানান।
যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্কের কারণে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলো বর্তমানে উদ্বিগ্নতার মধ্যে রয়েছে। এরই মধ্যে এই সতর্কতা দিলেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১০টি দেশের আঞ্চলিক জোট হচ্ছে আসিয়ান। বিশ্বের সবচেয়ে বাণিজ্যনির্ভর অর্থনীতির দেশগুলোর বেশ কয়েকটি এই জোটের সদস্য বলে মনে করা হয়। তবে জোটের ১০টির মধ্যে আটটি দেশই পড়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কের মুখে, যা আগামী ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।
জোটের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে আনোয়ার বলেন, বিশ্ব এখন এমন এক যুগে প্রবেশ করেছে, যেখানে নীতিকে অস্থির করে তুলছে ক্ষমতা। একসময় যে বিষয়গুলো প্রবৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত হতো, এখন তা চাপ সৃষ্টি, একঘরে করা ও নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।
এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের নাম সরাসরি উল্লেখ না করলেও চলমান বাণিজ্য হুমকি মোকাবিলায় আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
জোটভুক্ত দেশগুলোকে পারস্পরিক বাণিজ্য বাড়ানো, আঞ্চলিক সংহতি জোরদার এবং বাইরের শক্তির ওপর নির্ভরতা কমানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, ‘আমাদের সংহতি কেবল ঘোষণার মধ্যে সীমিত থাকলে চলবে না। এই বাণিজ্য হুমকি কোনো ক্ষণস্থায়ী ঝড় নয়। এটি আমাদের সময়ের নতুন বাস্তবতা।’
চলতি বছরের এপ্রিলে প্রথম এই শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন ট্রাম্প। অবশ্য সমঝোতার সুযোগ দিতে সে সময় ৯০ দিনের জন্য শুল্ক স্থগিত করা হয়। এরপর সোমবার (৭ জুলাই) ও বুধবার (৯ জুলাই) নতুন করে ২০ থেকে ৪০ শতাংশ হারে, কোনো দেশের ওপর আবার ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। কোনো সমঝোতায় না এলে ১ আগস্ট থেকে এই হারে শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। একই সঙ্গে, কোনো দেশ পাল্টা পদক্ষেপ নিলে তার বিরুদ্ধে আরও শুল্ক বাড়ানোর হুমকিও দিয়েছেন তিনি।
প্রথমবারে শুল্ক আরোপের পর কেবল ভিয়েতনামই একটি চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক হার ৪৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে নামাতে পেরেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী, ব্রাজিলের ওপর সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার ওপর ৩৬ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার ওপর ৩২ শতাংশ, মালয়েশিয়া ও ব্রুনাইয়ের ওপর ২৫ শতাংশ, ফিলিপাইনের ওপর ২০ শতাংশ, আর লাওস ও যুদ্ধবিধ্বস্ত মিয়ানমারের ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ হতে পারে। বাংলাদেশের ওপরও শুল্কের এই খড়্গ নেমে এসেছে ৩৫ শতাংশ হারে।
আসিয়ানভুক্ত অনেক দেশ এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা শুরু করেছে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি বছরের শেষ দিকে আসিয়ান-যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে, যেখানে তারা যৌথ অবস্থান তৈরির চেষ্টা করবে।
১৫৮ দিন আগে
গাজায় সেনা রাখতে অনড় ইসরায়েল, ব্যর্থ হওয়ার শঙ্কায় যুদ্ধবিরতি
হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি আলোচনায় অগ্রগতির মধ্যেই গাজা উপত্যকার দক্ষিণ করিডরে সৈন্য রাখার শর্ত দিয়েছে ইসরায়েল। এই প্রস্তাব যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌছানোর পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৮ জুলাই) মার্কিন, ইসরায়েলি ও কাতারি শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যকার যুদ্ধবিরতি আলোচনায় এই সেনা মোতায়েনের প্রসঙ্গটি উঠে আসে।
সম্প্রতি প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় ৬০ দিন যুদ্ধ স্থগিত রাখার কথা রয়েছে। এই সময়ে কিছু জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে এবং গাজায় আরও ত্রাণ প্রবেশ করবে।
তবে এরই মধ্যে ইসরায়েল নতুন শর্ত জুড়ে দেওয়ায় এই চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আলোচনা-সংশ্লিষ্ট এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) জানিয়েছেন, ৬০ দিনের সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির সময় ইসরায়েল তাদের সেনা মোতায়েন রাখবে। বিশেষত ইসরায়েলের কাছে ‘মোরাগ করিডর’ হিসেবে পরিচিত পূর্ব-পশ্চিম করিডরে সেনা মোতায়েনের কথা জানিয়েছেন তিনি।
মূলত, মোরাগ করিডরে উপস্থিতি বজায় রাখার মাধ্যমে কয়েক লাখ ফিলিস্তিনিকে গাজার দক্ষিণে সীমান্তঘেঁষা একটি সংকীর্ণ এলাকায় ঠেলে নিয়ে যেতে চায় ইসরায়েল, যেটিকে তারা ‘মানবিক শহর’ হিসেবে অভিহিত করেছে। তাছাড়া অনেকে মনে করছেন, এই পদক্ষেপ আসলে গাজার প্রায় ২০ লাখ মানুষকে জোরপূর্বক সরিয়ে নেওয়ার পূর্বাভাস, যেটি এই ভূখণ্ডে ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনারই অংশ।
বুধবার (৯ জুলাই) রাতে দেওয়া এক বিবৃতিতে হামাস জানিয়েছে, গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার এখনও আলোচনার প্রধান অন্তরায়। তবে তারা মোরাগ করিডরের কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেনি। অবশ্য গাজা থেকে পুরোপুরি সেনা প্রত্যাহার না করলে কোনো চুক্তি না করার কথা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে হামাস।
আরও পড়ুন: অগ্রগতি ছাড়াই শেষ ইসরায়েল-হামাসের যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের আলোচনা
এর আগেও ইসরায়েল ভিন্ন আরেকটি করিডরে সৈন্য রাখার শর্ত দেওয়ায় কয়েক মাস ধরে যুদ্ধবিরতির অগ্রগতি আটকে ছিল। তবে মোরাগ করিডরের ভূমিকা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয়।
চলতি সপ্তাহে ওয়াশিংটন সফরে যান নেতানিয়াহু। সেখানে যুদ্ধবিরতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। হামাস ও ইসরায়েল উভয় পক্ষকে গাজায় যুদ্ধ থামাতে চাপ দিয়ে আসছেন ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, মঙ্গলবার মার্কিন, ইসরায়েলি ও কাতারি শীর্ষ কর্মকর্তাদের আলোচনার অন্যতম প্রধান বিষয় ছিল গাজায় সেনা রাখা।
পরে বুধবার এই আলোচনা-সংশ্লিষ্ট এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা শান্তি চাই। আমরা জিম্মিদের ফিরে পেতে চাই। আর আমার মনে হচ্ছে, আমরা সেই লক্ষ্য থেকে খুব একটা দূরে নেই।’
গাজা ভাগ করা তিন করিডরের একটি মোরাগ
চলমান আগ্রাসনে গাজার বেশিরভাগ ভূমি দখলে নিয়েছে ইসরায়েল। এর মধ্যে রয়েছে তিনটি পূর্ব-পশ্চিম করিডর, যেগুলো গাজা উপত্যকাকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে মোরাগ করিডরের দখল নেয় ইসরায়েল। ২০০৫ সালে গাজা ছেড়ে যাওয়ার সময়কার বসতি ‘মোরাগের’ নামে এটির নামকরণ করা হয়েছে।
গাজার দক্ষিণে রাফাহ শহর ও দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খান ইউনিসের মাঝখানে অবস্থিত এই করিডরটি প্রায় ১২ কিলোমিটার বা ৭ মাইল দীর্ঘ, যা ইসরায়েল সীমান্ত থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত এবং প্রস্থে প্রায় ১ কিলোমিটার বা অর্ধ মাইল।
নেতানিয়াহু মোরাগ করিডরকে ‘দ্বিতীয় ফিলাডেলফি’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। ফিলাডেলফি গাজার সঙ্গে মিসরের সীমান্ত বরাবর আরেকটি করিডর।
আরও পড়ুন: যুদ্ধবিরতি আলোচনার মধ্যেও গাজায় ৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত
ইসরায়েল বহুদিন ধরেই দাবি করে আসছে, সীমান্তপারের অস্ত্র চোরাচালান ঠেকাতে ফিলাডেলফি করিডরে তাদের নিয়ন্ত্রণ থাকা দরকার। কিন্তু তাদের সীমান্ত দিয়ে অস্ত্র গাজায় প্রবেশ করার বিষয়টি বরাবর অস্বীকার করেছে মিসর।
গত মার্চে প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি ভেঙে পড়ার পর ইসরায়েল ফের নেতজারিম করিডরের নিয়ন্ত্রণ নেয়। গাজার উত্তরের এক-তৃতীয়াংশ এলাকাকে বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে ওই করিডরটি। এই স্থান দিয়ে এর আগেও উত্তর গাজায় ফিলিস্তিনিদের ফিরে যাওয়া ঠেকিয়েছিল ইসরায়েল।
তবে নেতজারিম ও ফিলাডেলফি করিডরে ইসরায়েলি সেনা উপস্থিতির বিষয়টি বর্তমানে চলমান যুদ্ধবিরতি আলোচনায় কতটা প্রভাব ফেলছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে পরিষ্কার হয়নি।
রাফাহকে ‘মানবিক শহর’ বানানোর পরিকল্পনা
মোরাগ করিডরে ইসরায়েলি সেনারা অবস্থান নেওয়ার ফলে রাফাহ শহর গাজার বাকি অংশ থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
এদিকে, ইসরায়েলের আগ্রাসনে কয়েক হাজার মানুষের শহর রাফাহ এখন প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত। শহরটি এরই মধ্যে ইসরায়েলি উচ্ছেদ আদেশে জনশূন্য হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতির মধ্যেই রাফাহকে হামাসমুক্ত ‘নিরাপদ অঞ্চল’ বা ‘নিরস্ত্র এলাকা’ বানানোর দাবি তুলেছে ইসরায়েলে। সেখানে তারা লাখ লাখ ফিলিস্তিনিকে সরিয়ে নিতে চায়, যার নাম দিয়েছে মানবিক শহর।
গাজার বেশিরভাগ মানুষ যুদ্ধের সময় বারবার নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। ছোট ছোট এলাকায় ঠাসাঠাসি করে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগ, দক্ষিণে সরানোর এই নতুন পরিকল্পনা মূলত জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতিরই আরেকটি ধাপ।
ইসরায়েলের নিরাপত্তা–সম্পর্কিত দুটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ গবেষক কোবি মাইকেল জানান, মোরাগ করিডরটিকে ব্যবহার করা হবে এক ধরনের ‘পরীক্ষা-নিরীক্ষার এলাকা’ হিসেবে। যাদের দক্ষিণে সরানো হবে, তাদের মধ্যে হামাস যোদ্ধারা আছে কি না—তা শনাক্তের জন্য এটি ব্যবহার করা হবে। এতে ইসরায়েলি বাহিনী আরও উত্তরে অভিযানে সুবিধা পাবে এবং ফিলিস্তিনি বেসামরিক মানুষদের সেখানে সংঘর্ষের মুখে পড়তে হবে না বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
আরও পড়ুন: খাবারের অভাবে হাড্ডি-চর্মসার হয়ে গেছে গাজার শিশুরা: চিকিৎসক
মাইকেল আরও বলেন, ‘এই পরিকল্পনার মাধ্যমে ইসরায়েল হামাসের ওপর চাপ আরও বাড়াতে পারবে এবং সম্ভব হলে উত্তর গাজায় হামাসকে পরাজিতও করতে পারবে, যেখানে গেরিলা যুদ্ধ এখনও ইসরায়েলি সেনাদের ভোগাচ্ছে।’
এর মাধ্যমে যুদ্ধ শেষের পথ তৈরি হতে পারে বলেও মনে করেন তিনি। যদিও ইসরায়েল বলছে, হামাস ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ থামবে না।
তবে ফিলিস্তিনিদের দক্ষিণে সরানোর এই পরিকল্পনা আসলে গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক বের করে দেওয়ার পথ প্রশস্ত করছে বলে মনে করেছেন এই প্রস্তাবের সমালোচকরা। তাদের আশঙ্কা, এর মাধ্যমে গাজায় ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি দখল প্রতিষ্ঠার সুযোগ তৈরি হবে—যেটি নেতানিয়াহুর ডানপন্থী জোটের প্রধান এজেন্ডাগুলোর একটি।
অবশ্য এই স্থানান্তর জোরপূর্বক হবে না বলে দাবি করেছেন নেতিনিয়াহু। তবে যে এলাকায় যুদ্ধের ভয়াবহতা চরমে, সেখানে এত মানুষকে জড়ো করলে অবকাঠামোহীন দুর্বিষহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা করছেন ফিলিস্তিনিরা ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো। তাছাড়া, এতে ফিলিস্তিনিরা গাজা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হবেন বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
ইসরায়েলের ফিলিস্তিন-বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও সাবেক সামরিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা মাইকেল মিলস্টেইন মোরাগ করিডর ব্যবহার করে দক্ষিণে ফিলিস্তিনিদের স্থানান্তরের পরিকল্পনাকে একটি ‘উদ্ভট কল্পনা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘এই ইসরায়েলি শর্তে বর্তমান আলোচনাও ভেঙে পড়তে পারে। কারণ এতে হামাস নিশ্চিত হবে যে, যুদ্ধবিরতি শেষ হলেও ইসরায়েল সেনা সরাবে না, যা হামাস কোনোভাবেই মেনে নেবে না।’
তিনি বলেন, ‘হামাসের জন্য এটি একেবারেই অসম্ভব শর্ত। যদি এটাই শর্ত হয়, তাহলে আমি হামাসের পক্ষ থেকে সম্মতি দেখতে পাচ্ছি না।’
১৫৮ দিন আগে
ভিসা নীতিতে বড় পরিবর্তন চীনের, মিলতে শুরু করেছে সুফল
পর্যটক টানতে ভিসা নীতি শিথিল করেছে চীন। ৭৪টি দেশের নাগরিকদের বিনা ভিসায় ভ্রমণের সুযোগ দিয়েছে দেশটি। এর ফলে ধীরে ধীরে আবারও বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ছে চীনে।
নতুন নীতি অনুযায়ী, ৭৪টি দেশের নাগরিকরা চীনে প্রবেশের পর টানা ৩০ দিন পর্যন্ত ভিসা ছাড়াই অবস্থান করতে পারছেন যা আগের নিয়মের তুলনায় অনেক বড় পরিবর্তন।
ইউরোপ, এশিয়া, লাতিন আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের মোট ৭৪টি দেশকে এ পর্যন্ত ৩০ দিনের ভিসা ছাড় দিয়েছে চীন। চলতি মাসের ১৬ জুলাই এই তালিকায় আজারবাইজান যুক্ত হলে মোট দেশের সংখ্যা দাঁড়াবে ৭৫টিতে।
মূলত পর্যটন, অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি বা ‘সফট পাওয়ার’ বাড়াতে ধারাবাহিকভাবে ভিসা-মুক্ত প্রবেশাধিকার বাড়াচ্ছে চীন।
দেশটির জাতীয় অভিবাসন প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ২ কোটির বেশি বিদেশি পর্যটক ভিসা ছাড়াই চীনে প্রবেশ করেছেন, যা মোট বিদেশি পর্যটকের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এবং আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি।
ভিসা ছাড়াই চীন ভ্রমণ করা অস্ট্রিয়ায় বসবাসকারী জর্জিয়ার নাগরিক জর্জি শাভাদজে বেইজিংয়ের বিখ্যাত ‘টেম্পল অব হেভেন’ ঘোরার সময় বলেন, ‘ভিসা আবেদন ও প্রক্রিয়া নিয়ে যে ঝামেলা, তাতে চীনের এই সিদ্ধান্ত ভ্রমণপিপাসুদের অনেক সুবিধা দেবে।’
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত: ট্রাম্প
তারপরও চীনে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা তুলনামূলক কম, দেশটির বেশিরভাগ পর্যটনকেন্দ্রই এখনও দেশীয় পর্যটকে ঠাসা। তা সত্ত্বেও গ্রীষ্মের ছুটিতে বিদেশি পর্যটকের বড় ঢল নামতে পারে বলে আশা করছে পর্যটন ব্যবসা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও ট্যুর গাইডরা।
দীর্ঘ ২০ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ইংরেজিভাষী গাইড গাও জুন বলেন, ‘আমি পর্যটক সামলাতে হিমশিম খাচ্ছি। সবটা আমি একা সামলাতে পারছি না।’
জুন জানান, চাহিদা সামলাতে তিনি এখন নতুন একটি ব্যবসা শুরু করেছেন, যেখানে ইংরেজিভাষী ট্যুর গাইড তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
কঠোর কোভিড-১৯ বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার পর ২০২৩ সালের শুরুতে চীন বিদেশি পর্যটকদের জন্য সীমান্ত খুলে দেয়। তবে ওই বছর মাত্র ১ কোটি ৩৮ লাখ পর্যটক চীন সফর করেন, যা মহামারি শুরু হওয়ার আগের বছর, অর্থাৎ ২০১৯ সালের তুলনায় অনেক কম।
২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, স্পেন ও মালয়েশিয়ার নাগরিকদের জন্য ভিসা-মুক্ত প্রবেশের অনুমতি দেয় চীন। এরপর থেকে ইউরোপের প্রায় সব দেশকেই এই সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে।
গত মাসে লাতিন আমেরিকার পাঁচটি দেশ এবং উজবেকিস্তান এই সুবিধা পায়, এরপর যুক্ত হয় মধ্যপ্রাচ্যের আরও চারটি দেশ। তবে এই সুবিধা দেওয়া দেশগুলোর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের জন্যই এটি এক বছরের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে।
নরওয়ের পর্যটক ওইস্টেইন স্পরসেইম জানান, নতুন নিয়মে তার পরিবারকে আর চীনের পর্যটন ভিসার জন্য ওসলোতে অবস্থিত চীনা দূতাবাসে দুইবার যেতে হবে না। তিনি বলেন, ‘ওরা দূতাবাস খুব কমই খোলে। তাই আগের নিয়মে ভিসা পাওয়া খুব কঠিন ছিল।’
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রে বিষাক্ত ছত্রাক পাচারের অভিযোগে চীনা বিজ্ঞানীর বিরুদ্ধে মামলা
‘ওয়াইল্ডচায়না’ নামের বিলাসবহুল পর্যটন সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেনি ঝাও বলেন, ‘নতুন ভিসা নীতির সুবিধা আমাদের জন্য শতভাগ ইতিবাচক।’ মহামারির আগের তুলনায় বর্তমানে তাদের ব্যবসা অন্তত ৫০ শতাংশ বেড়েছে বলেও জানান তিনি।
ঝাও আরও বলেন, এখন পর্যন্ত পর্যটন ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রই তাদের সবচেয়ে বড় বাজার, যা বর্তমানে তাদের মোট ব্যবসার প্রায় ৩০ শতাংশ। তবে ইউরোপীয় পর্যটকদের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ২০১৯ সালের আগে যা ৫ শতাংশের নিচে ছিল, এখন তা ১৫ থেকে ২০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ভিসা নীতির চলমান এই সুবিধা যেন স্থায়ী হয়—এমনটাই আশা করছেন তিনি।
অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি ‘ট্রিপ ডটকম’ জানিয়েছে, মুক্ত ভিসা নীতির কারণে চীনে পর্যটন ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এ বছরের প্রথম তিন মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় চীনগামী বিমান, হোটেলসহ অন্যান্য বুকিং প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। তাদের তথ্য অনুযায়ী, এসব পর্যটকের ৭৫ শতাংশই ভিসা-মুক্ত সুবিধা দেওয়া দেশগুলোর।
তবে, লক্ষণীয় বিষয় হলো, চীনের সঙ্গে তুলনামূলক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলেও আফ্রিকার কোনো বড় দেশ এখনও এই সুবিধার আওতায় আসেনি।
১০ দিনের ‘ট্রানজিট’ সুযোগ
ভিসা-মুক্ত তালিকায় না থাকা দেশের নাগরিকদের জন্য বিকল্প পথও চালু করেছে বেইজিং। ওইসব দেশের দেশের নাগরিক যদি ভিন্ন কোনো দেশে যাওয়ার পথে চীন হয়ে ট্রানজিট করেন। যদিও ৫৫টি দেশের জন্য এই ট্রানজিট নীতি চালু রয়েছে, কিন্তু এদের অধিকাংশই ৩০ দিনের ভিসা-মুক্ত তালিকায় রয়েছে।
তবে এই সীমিত সুযোগটি কার্যত যে ১০টি দেশের জন্য সেগুলো হলো— চেক প্রজাতন্ত্র, লিথুনিয়া, সুইডেন, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, ইউক্রেন, ইন্দোনেশিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকো। ইউরোপের ধনী দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্যকে বাদ দিলে শুধু সুইডেনই ৩০ দিনের তালিকায় স্থান পায়নি।
সুইডেনের সঙ্গে চীনের সম্পর্কে টানাপড়েনের পেছনে ২০২০ সালে সুইডিশ বই বিক্রেতা গুই মিনহাইকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া বড় কারণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
২০১৫ সালে থাইল্যান্ডে সমুদ্রতীরবর্তী বাড়ি থেকে গুই নিখোঁজ হন। পরে চীনের মূল ভূখণ্ডে পুলিশের হেফাজতে দেখা যায় তাকে।
১৫৯ দিন আগে