বিশ্ব
চীন-মার্কিন শুল্ক হ্রাসে বাজারে স্বস্তি এলেও কাটছে না অনিশ্চয়তা
বেইজিং-ওয়াশিংটন শুল্ক হ্রাস চুক্তির খবরে বাজার ঘুরে দাঁড়ালেও ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা থেকেই যাচ্ছে চীনের ব্যবসায়ীদের মধ্যে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চুক্তির পর বিজয়ের ঘোষণা দিলেও বাস্তব পরিস্থিতি এখনও স্পষ্ট নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এপ্রিল মাসে পরস্পরের ওপর আরোপিত শুল্ক কমাতে সম্মত হয় উভয় দেশ। পরে একটি সাময়িক চুক্তির আওতায় চীনের ওপর আরোপিত ১৪৫ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ৩০ শতাংশে আনে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে, মার্কিন পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক ১২৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনে চীন।
স্থানীয় সময় বুধবার (১৪ মে) থেকে এই চুক্তি কার্যকর হয়েছে। চলতি সপ্তাহের শেষে জেনেভায় এই শুল্ক হ্রাসের ঘোষণাকালে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, ‘আমরা বাণিজ্য চাই।’
আরও পড়ুন: চীন-মার্কিন শুল্ক আলোচনায় অগ্রগতির আভাস
এ চুক্তির খবরে বাজার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করলেও ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন চীনের ব্যবসায়ীরা। চীনের দক্ষিণাঞ্চলের গুয়াংডং প্রদেশের রান্নার সামগ্রী উৎপাদনকারী কারখানার মতো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় কাজ শুরু করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।
ওই কারখানার কর্মকতারা জানান, মঙ্গলবার (১৩ মে) তারা মার্কিন ক্রেতাদের অন্তত চারটি স্থগিতাদেশে থাকা অর্ডার পুনরায় উৎপাদনে এনেছেন।
গুয়াংডং প্রদেশের ওই কারখানার বিক্রয় প্রতিনিধি মার্গারেট ঝুয়াং বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম আলোচনার ফলে কিছুটা শুল্ক হ্রাস পাবে, কিন্তু এতটা কমবে তা আশা করিনি।’
একই ধরনের পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইয়াংজিয়াং হংনান ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড ট্রেড কোম্পানির সেলস ম্যানেজার কাহলি ইউ জানান, ‘তিনি আবারও আমেরিকান ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন।’
‘আমরা দুই পক্ষের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে কিছুটা আশাবাদী। তবে শুল্কনীতি আবার পরিবর্তিত হতে পারে। এতে আমাদের মার্কিন ক্রেতাদের কাছ থেকে কোনো অর্ডার না-ও আসতে পারে,’ বলেন তিনি।
‘যদিও তারা আপাতত খুশি, তবে এপ্রিল মাসে ঘোষিত শুল্কে কারণে এরইমধ্যে ক্ষতির মুখে পড়েছেন। আগের তুলনায় কম অর্ডার পাচ্ছেন তারা।’ এই অনিশ্চয়তা নতুন বিনিয়োগের ইচ্ছাও কমিয়ে দিয়েছে বলে মনে করেন অনেকে।
গুয়াংডং প্রদেশের ডংগুয়ানে কার্বন ফাইবার অটো পার্টস উৎপাদনকারী অ্যাকশন কম্পোজিটসের সেলস ডিরেক্টর কেলভিন লিয়াও জানান, ‘তিনি মূলত একটি জমি কিনে নতুন কারখানা নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিলেন, কিন্তু শুল্ক পরিস্থিতির কারণে এখন ভাড়ায় কারখানা নিয়ে কাজ করছেন।’
তিনি বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি হওয়া ভালো। কিন্তু মানুষ ইতোমধ্যে ট্রাম্পের ওপর আস্থা হারিয়েছেন। আমাদের বিশ্বাস, এই চুক্তি কেবলমাত্র একটি বিরতি, যুক্তরাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য হলো চীনের উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ করা।’
আরও পড়ুন: চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধ: ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক শি জিন পিংয়ের
তবে সব শিল্প খাত এ চুক্তির আওতায় আসেনি। হংকংয়ের অ্যালুমিনিয়াম-কোটিং কারখানার মালিক ড্যানি লাউ জানান, তার কোম্পানি এখনো প্রায় ৭৫ শতাংশ শুল্কের মুখে রয়েছে, যেগুলো ২০১৮ সাল থেকে বিভিন্ন ধাপে আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তা সত্ত্বেও চুক্তির খবরে স্বস্তি প্রকাশ করে তার মার্কিন ক্রেতাদের সঙ্গে আবারও যোগাযোগ করবেন বলে জানান তিনি।
২১৪ দিন আগে
২৫ বছর পর সিরিয়ান নেতার সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বৈঠক
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দীর্ঘ ২৫ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল শারার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বুধবার (১৪ মে) সৌদি আরবের রিয়াদে এই বৈঠক করেন এই দুই দেশের নেতারা। ধারণা করা হচ্ছে আন্তর্জাতিকভাবে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার জন্য বৈঠকটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের সূচনা করতে পারে।
উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের নেতাদের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠকের ফাঁকে এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। সিরিয়ানরা দীর্ঘ ৫০ বছরের আসাদ পরিবারের শাসন থেকে বেরিয়ে জীবনকে খাপ খাইয়ে নিতে চেষ্টা করছেন। এক সময় আল-শারাকে গ্রেপ্তার করার জন্য এক কোটি মার্কিন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল মার্কিন প্রশাসন।
আল-শারার সঙ্গে বৈঠক শেষে ট্রাম্প বলেন, ‘তিনি তরুণ, আকর্ষণীয় ও সাহসী যুবক। তার শক্তিশালী অতীত রয়েছে, যোদ্ধা।’
এর আগে মধ্যপ্রাচ্যে তিনদিনের সফর শুরুর আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত বাশার আল আসাদ পরিবারের সদস্যদের নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে দেশটির ওপর আরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের এমন ঘোষণায় মঙ্গলবার রাতে সিরিয়ার বাসিন্দারা রাস্তায় নেমে এসে আতশবাজি করে উল্লাস প্রকাশ করেন। কারণ এখন তাদের অনেক বেশি বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রয়োজন এবং সেই সুযোগ উন্মুক্ত হয়েছে। একই সঙ্গে সিরিয়ানরা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে আবার যোগ দিতে পারবেন।
আজকের বৈঠকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ, আল শারা বা মোহাম্মদ আল-গোলানি একসময় আল-কায়েদার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের হয়ে যুদ্ধ শুরুর আগে ইরাকে মার্কিন বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। এমনকি তিনি মার্কিন সেনাদের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারেও আটক ছিলেন।
বৈঠকটি এমন সময়ে হলো, যখন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করতে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে অনুরোধ করেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সবশেষ পদক্ষেপ গাজার হামাস ইস্যুতে হোয়াইট হাউস ও ইসরায়েল সরকারের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষকে আবারও স্পষ্ট করে তুলেছে।
আরও পড়ুন: সংকট নিরসনে পরোক্ষ আলোচনায় সিরিয়া-ইসরায়েল; মধ্যস্থতায় আরব আমিরাত
আল শারার সঙ্গে বৈঠক শেষে ট্রাম্প উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদকে বলেন, ‘আমি সিরিয়ার বিরুদ্ধে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের নির্দেশ দিচ্ছি, যাতে তারা নতুন করে শুরু করতে পারে।’ ‘এটি তাদের শ্রেষ্ঠ হওয়ার সুযোগ করে দেবে। নিষেধাজ্ঞাগুলো সত্যিই পঙ্গু করে দেয়, খুবই শক্তিশালী।’
ঐতিহাসিক রুদ্ধদ্বার বৈঠক
মঙ্গলবার ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি সিরিয়ার নেতা আল শারার সঙ্গে সৌদি আরবে সরাসরি বৈঠক করবেন। এজন্য সিরিয়ার এই নেতা সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে গিয়েছিলেন।
সিরিয়ায় ২০১১ সালে ধ্বংসাত্মক গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে থেকে কঠোর সমাজতান্ত্রিক শাসন জারি ছিল। সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগে ১৯৭৯ সাল থেকে দেশটি মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় রয়েছে।
ট্রাম্পের সঙ্গে আল শারার রুদ্ধদ্বার বৈঠকের সময় সাংবাদিক ও দর্শনার্থীদের জানার সুযোগ দেওয়া হয়নি। পরে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, শারার সঙ্গে ৩০ মিনিট বৈঠক করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। জেনেভায় ২০০০ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সঙ্গে সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সঙ্গে হওয়া বৈঠকের পর শারার সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই বৈঠকটি হলো।
বৈঠকটিতে ফোনকলে যোগ দিয়েছিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেফ তাইয়্যেপ এরদোগান ও সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। আল শারা ও তার নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর প্রধান সমর্থক হলো তুরস্ক।
সিরিয়া সম্পর্কে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি খুব দৃঢ়ভাবে অনুভব করেছি যে এটি তাদের একটি সুযোগ এনে দেবে।’ ‘তবে এটি সহজ হবে না, তবুও তাদের একটি ভালো শক্তিশালী সুযোগ দিয়েছে। তাদের জন্য এটি করতে পারা আমার জন্য সম্মানের।’
নিজের সিদ্ধান্তের বিষয়ে যুবরাজ মোহাম্মদের হস্তক্ষেপকে মূল চাবিকাঠি হিসেবে উল্লেখ করেন ট্রাম্প।
আরও পড়ুন: সিরিয়াকে অস্থিতিশীল করে তুলছে ইসরায়েল: এরদোগান
২১৫ দিন আগে
ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যে: ইসরায়েলি হামলায় ২২ শিশুসহ ৬০ ফিলিস্তিনি নিহত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফরের মধ্যেই ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হামলায় ৬০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে অন্তত ২২টি শিশু রয়েছে। এ ঘটনাকে আঞ্চলিক রাজনীতির নতুন মোড় হিসেসে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (১৪ মে) সকালে হাসপাতালসহ গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে এই হামলা হয়েছে। স্থানীয় চিকিৎসা সূত্রের বরাতে ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান এমন খবর দিয়েছে।
কিন্তু ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা বলছে, সকাল থেকে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৭০ জন নিহত হয়েছেন। যদিও কতজন নিহত হয়েছেন, তা এখন পর্যন্ত পরিষ্কার করে বলা যাচ্ছে না।
বার্তা সংস্থা এপির খবরে বলা হয়েছে, এই হামলায় অন্তত ২২টি শিশুর প্রাণহানি ঘটেছে।
গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়, খান ইউনিসের কাছে একটি হাসপাতালে হামলা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে মাটিতে বড় গর্ত তৈরি হয়েছে, হাসপাতালের আঙিনায় ফাটল ধরে গেছে।
আরও পড়ুন: গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৩৬
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থার ছবিতে দেখা গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত একটি বাসের পিছনের অংশ মাটির ভেতরে ঢুকে গেছে। আমরো তাবাস নামের একজন আলোকচিত্রি বলেন, ‘হাসপাতালের রোগী ও আহতরা ভয়ে দৌড়াতে শুরু করেন। শিশুরাও চিৎকার ও কান্নাকাটি করছিল হামলার সময়।’
হামাস নেতা মোহাম্মদ সিনওয়ার ওই হাসপাতালে অবস্থান করছিলেন বলে এই হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম। এরআগে ২০২৪ সালে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হন তার ভাই ইয়াহইয়া সিনওয়ার। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর দাবি, হাসপাতালের নিচে হামাসের কমান্ড সেন্টার রয়েছে।
অভিযানের ঘাঁটি হিসেবে হামাস বিভিন্ন হাসপাতাল ভবন ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করে আসছে ইসরায়েলি বাহিনী। যদিও তা অস্বীকার করেছে হামাস।
নারী ও শিশুসহ বেশির ভাগ নিহত হয়েছেন উত্তর গাজায় জাবালিয়া এলাকায় বসতবাড়িতে হামলায়। এক বিবৃতিতে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘হতাহতদের অনেকে এখনো রাস্তায় পড়ে আছেন। কেউ কেউ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন।’
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৫২ হাজার ৯২৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আর গেল ১৮ মার্চ থেকে নিহত হয়েছেন দুই হাজার ৭৯৯ ফিলিস্তিনি।
এদিকে সিরীয় প্রেসিডেন্ট আহমাদ আল-শারার সঙ্গে বৈঠক করছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরমধ্য দিয়ে ২৫ বছর পর কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সিরীয় কোনো নেতার বৈঠক হয়েছে।
সিরিয়ার ওপর থেকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার বিষয়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াকে জানিয়েছেন ট্রাম্প। এই সফরে তিনি ইসরায়েলেও যাত্রাবিরতি দিয়েছেন। ট্রাম্প বলেন, ‘আমি তাকে (নেতানিয়াহু) বলেছি যে আমরা নিষেধাজ্ঞা শিথিল করছি।’
আরও পড়ুন: গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৪৫ ফিলিস্তিনি নিহত
আহমাদ আল-শারার সঙ্গে বৈঠকে তাকে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিতে আব্রাহাম চুক্তি সই করতে বলেছেন ট্রাম্প। পাশাপাশি, সিরিয়া থেকে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের বের করে দিতেও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এরআগে হামাসের হাতে থাকা ইসরায়েলি-আমেরিকান জিম্মি এডান আলেক্সান্ডারকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। এ ঘটনা নতুন যুদ্ধবিরতির আশা জাগিয়েছিল।
২১৫ দিন আগে
শেষ জীবিত মার্কিন জিম্মিকে মুক্তি দিল হামাস
হামাসের কাছে জিম্মি সর্বশেষ জীবিত মার্কিন সেনা সদস্য এডেন আলেকজান্ডারকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সময় সোমবার (১২ মে) তাকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা রেড ক্রসের হাতে হস্তান্তর করে হামাস।
বিনাশর্তে আলেকজান্ডারকে মুক্তি দেওয়াকে গাজা যুদ্ধ অবসান ও বাকি জিম্মিদের ঘরে ফেরানোর জন্য হামাসের ‘সদিচ্ছা’ হিসেবে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) খবরে বলা হয়েছে, রেড ক্রসের কাছে আলেকজান্ডারকে হস্তান্তর করার পর হেলিকপ্টারে করে তাকে তেলআবিবের একটি হাসপাতালে নিয়ে যায় দেশটির সেনাবাহিনী।
পরে আলেকজান্ডারের ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করে ইসরায়েলের কর্মকর্তারা। হাসপাতালে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে পরিবারের সঙ্গে পুনর্মিলিত হন তিনি।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, দ্বৈত নাগরিকত্বের অধিকারী ২১ বছর বয়সী আলেকজান্ডার ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীতে (আইডিএফ) কর্মরত ছিলেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে তাকে জিম্মি করে নিয়ে যায় হামাস। তার প্রায় ১৯ মাস পর গতকাল (সোমবার) তিনি পরিবারের কাছে ফিরেছেন।
মার্চ মাসে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে গাজায় পুনরায় ইসরায়েলের হামলার শুরুর পর এই প্রথম কোনো জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: শেষ জীবিত মার্কিন জিম্মিকে আজ মুক্তি দিতে পারে হামাস
আলেকজান্ডারের মুক্তির জন্য গাজায় কোনো যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়নি, যদিও হস্তান্তরের জন্য কিছু সময় লড়াই বন্ধ রেখেছিল। এক বিবৃতিতে হামাস জানায়, ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি নবায়নসহ গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের উদ্যোগের অংশ হিসেবে আলেকজান্ডারকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগের পর তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ ছাড়া যুদ্ধের অবসানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতা অব্যাহত রাখার জন্য ট্রাম্প প্রশাসনকে অনুরোধ করেছে হামাস। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসনকে অনুরোধ করছি যেন তারা এই নির্মম যুদ্ধের অবসানের জন্য তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে।’
সম্প্রতি গাজায় যুদ্ধবিরতি আলোচনায় গতি আনতে আগ্রহ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র। মধ্যপ্রাচ্য সফরে যাওয়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন ট্রাম্প।
রবিবার (১১ মে) নিজের সামাজিকমাধ্যম ট্রুথে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, হামাসের এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্র এবং মধ্যস্থতাকারী কাতার ও মিসরের প্রচেষ্টার প্রতি সদিচ্ছার একটি পদক্ষেপ।
হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাকি জিম্মিদের মুক্ত করার লক্ষ্যে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ ও তেল আবিবে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি বৈঠক করেছেন। এ সময় আলেকজান্ডারের মুক্তিতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার প্রশংসা করেন।
এদিকে, গাজায় অভিযান আরও জোরদার করার ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। গাজা দখল করে সেখানকার জনসংখ্যার একটি বড় অংশকে আবারও স্থানচ্যুত করার পরিকল্পনাও রয়েছে তার।
আরও পড়ুন: ‘আত্মসমর্পণের’ শর্তে দেওয়া যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখান করল হামাস
তাছাড়া গাজায় সব ধরনের মানবিক সহায়তা বন্ধ রেখেছে ইসরায়েল। এই অবরোধ তুলে না নিয়ে গাজায় দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহল। ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে পাঁচ লাখ ফিলিস্তিনি অনাহারের মুখে পড়েছেন বলে সতর্ক করেছেন জাতিসংঘের কয়েকজন বিশেষজ্ঞ।
২১৬ দিন আগে
সন্তানকে উদ্দেশ্য করে মাহমুদ খলিলের হৃদয়বিদারক চিঠি
পৃথিবীতে এসেছে প্রথম সন্তান, কিন্তু সদ্যজাত সন্তানকে কোলে নেওয়ার সৌভাগ্য হয়নি। তাই বুকভরা যন্ত্রণা নিয়ে লুইজিয়ানার আটককেন্দ্র থেকে নবজাতকের উদ্দেশ্যে একটি হৃদয়বিদারক চিঠি লিখেছেন কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোচিত ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিল।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানে মাহমুদের চিঠিটি প্রকাশ করা হয়েছে।
পুত্র দীনকে উদ্দেশ্য করে মাহমুদ লিখেছেন, ‘আমি যখন ভাবি, তোমাকে প্রথমবার কোলে নিতে পারিনি, তোমার প্রথম কান্না শুনতে পারিনি, তোমার মুঠোবাঁধা হাত খুলে দিতে পারিনি, কিংবা তোমার প্রথম ডায়াপার বদলাতে পারিনি; আমার হৃদয় ব্যথিত হয়ে ওঠে।’
নিজের সন্তানের জন্মের সময় তার অনুপস্থিতিকে তিনি ফিলিস্তিনের বহু পিতার অভিজ্ঞতার প্রতিচ্ছবি হিসেবে উল্লেখ করেছেন মাহমুদ।
আরও পড়ুন: আমি যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক বন্দি: মাহমুদ খলিল
বেদনা জড়িত বাক্যে তিনি লেখেন, ‘বর্ণবাদী শাসন ও দূরবর্তী কারাগারে বন্দি হয়ে আমিও অন্যান্য ফিলিস্তিনি পিতাদের মতো তোমার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছি।’‘প্রতিদিন জন্ম নেওয়া যেসব শিশুর পাশে তাদের বাবারা থাকেন না— তারা স্বেচ্ছায় যান না কোথাও। যুদ্ধ, বোমা, কারাগার কিংবা দখলদারত্বের নির্মম যন্ত্রের মাধ্যমে তাদের ছিনিয়ে নেওয়া হয়। তোমার মা ও আমি যে শোক অনুভব করছি, তা ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোর বহু প্রজন্ম ধরে ডুবে থাকা দুঃখের সাগরের একটি ক্ষুদ্র ফোঁটা মাত্র’, বলেন মাহমুদ।
নিজেকে একজন রাজনৈতিক বন্দি হিসেবে বর্ণনা করে মাহমুদ চিঠিতে আরও লেখেন, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার প্রতি অটল সমর্থনের কারণেই তিনি আজ বন্দি।
সন্তানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘একদিন হয়তো তুমি জানতে চাইবে কেন ফিলিস্তিনের পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য মানুষকে শাস্তি পেতে হয়, কেন সত্য ও সহানুভূতি ক্ষমতার জন্য বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।’‘এই প্রশ্নগুলো কঠিন, কিন্তু আমি আশা করি আমাদের গল্প তোমাকে এটা শেখাবে; এই পৃথিবীর প্রয়োজন আরও সাহস। এমন মানুষ প্রয়োজন যারা সুবিধা নয় বরং ন্যায়কে বেছে নেন।’
গত বসন্তে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গাজা যুদ্ধের বিরুদ্ধে সংঘটিত বিক্ষোভে জড়িত থাকার কারণে এ বছরের ৮ মার্চ মাহমুদ খলিলকে গ্রেপ্তার করেছিল দেশটির অভিবাসন কর্মকর্তারা। এরপর থেকে লুইজিয়ানার জেনা শহরে একটি অভিবাসী আটককেন্দ্রে রয়েছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ইহুদিবিদ্বেষী বিক্ষোভ বন্ধের অভিযানের প্রথম শিকার ৩০ বছর বয়সী এই ফিলিস্তিনি যুবক। মাহমুদ খলিল কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের শিক্ষার্থী। যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের গ্রিনকার্ড রয়েছে তার। গ্রেপ্তারের পরই তার গ্রিনকার্ড বাতিলের কথা জানায় ওয়াশিংটন।
আরও পড়ুন: খলিল মাহমুদকে আটক: ট্রাম্প টাওয়ারে ইহুদিদের বিক্ষোভ
২১৭ দিন আগে
শেষ জীবিত মার্কিন জিম্মিকে আজ মুক্তি দিতে পারে হামাস
ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি নবায়নসহ গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের উদ্যোগের অংশ হিসেবে নিজেদের কাছে থাকা সর্বশেষ জীবিত মার্কিন জিম্মি এডান আলেক্সান্ডারকে মুক্তি দেওয়া হবে জানিয়েছে হামাস।
স্থানীয় সময় রবিবার (১১ মে) হামাসের দুই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই আলেক্সান্ডারকে মুক্তি দেওয়া হতে পারে। এছাড়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
হামাসের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আলেক্সান্ডারকে সোমবার (১২ মে) মুক্তি দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। হামাসকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল— প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে একটি উপহার দাও এবং বিনিময়ে তিনি আরও বড় একটি উপহার দেবেন।’
এমন এক সময়ে এই ঘোষণা এসেছে, যখন মধ্যপ্রাচ্য সফরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ট্রাম্প। সম্প্রতি যুদ্ধবিরতি আলোচনায় গতি আনতে আগ্রহ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র।
এরপরই মার্চে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেস্তে যাওয়ার পর প্রথমবারের মতো কোনো বন্দিমুক্তির কথা এসেছে। উইটকফ বলেন, ‘ট্রাম্পের প্রতি সদিচ্ছা প্রদর্শনের প্রতীক হিসেবে আলেক্সান্ডারকে মুক্তি দিতে সম্মত হয়েছে হামাস।’
রবিবার নিজের সামাজিকমাধ্যম ট্রুথে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, হামাসের এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্র এবং মধ্যস্থতাকারী কাতার ও মিসরের প্রচেষ্টার প্রতি সদিচ্ছার একটি পদক্ষেপ।
আরও পড়ুন: এক মার্কিন জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস, ইসরায়েলের সন্দেহ
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আশাকরি, এটি সেই চূড়ান্ত ধাপগুলোর প্রথমটি, যা এই নিষ্ঠুর সংঘাতের অবসান ঘটাবে। আমি সেই উদযাপনের দিনের অপেক্ষায় আছি।’
এ বিষয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিনাশর্তে আলেকজান্ডারকে মুক্তি দিতে সম্মত হয়েছে হামাস। এই পদক্ষেপটি একটি যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আলোচনার পথ খুলে দিতে পারে।
তবে এর আগে হামাসের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি আলোচনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন নেতানিয়োহু। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি করার শর্তে আলেকজান্ডারসহ চার জিম্মির মরদেহ ফেরত দেওয়ার প্রস্তাব দেয় হামাস। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যেই আবার যুদ্ধ শুরু করে ইসরায়েল।
উইটকফ বলেন, আলেক্সান্ডারকে মুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে হামাসের লক্ষ্য হলো যুদ্ধবিরতি আলোচনা পুনরায় শুরু করা, আরও বন্দিমুক্তি নিশ্চিত করা এবং গাজায় মানবিক সহায়তার প্রবাহ বাড়ানো।
এদিকে, হামাসের নেতা খালিল আল-হায়া বলেন, গত কয়েক দিনে দলটি যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতি, যুদ্ধের সমাপ্তি, গাজায় বন্দি থাকা ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি বন্দিদের বিনিময়, এবং গাজার শাসনক্ষমতা একটি নিরপেক্ষদের হাতে হস্তান্তর করার লক্ষ্যে আলোচনায় অংশ নিতে প্রস্তুত রয়েছে হামাস।
এদিকে গাজায় অব্যাহত রয়েছে ইসরায়েলের হামলা। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, শনিবার রাত ও রবিবার সকালের বিমান হামলায় গাজায় ১৫ জন নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এ নিয়ে ইসরায়েলে হামলায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর থেকে গাজায় প্রায় ৫২ হাজার ৮০০ প্রাণহানি হয়েছে।
২১৭ দিন আগে
পাকিস্তানে হামলায় শতাধিক ‘সন্ত্রাসবাদী’ নিহতের দাবি ভারতের
পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মির ও দেশটির অন্যান্য অংশে সাম্প্রতিক সেনা অভিযানে শীর্ষস্থানীয় নেতাসহ শতাধিক ‘সন্ত্রাসবাদী’ নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে ভারত।
রবিবার (১১ মে) দিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য দিয়েছেন ভারতের সামরিক কার্যক্রমের মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজীব ঘাই।
তিনি জানান, পাকিস্তানের ৯টি জঙ্গি ঘাঁটি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে ভারতীয় বাহিনী। হামলার লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে লস্কর-ই-তৈয়বার ঘাঁটিও ছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি।
লস্কর-ই-তৈয়বা নামক সংগঠনটি ভারত সরকার জঙ্গি সংগঠন হিসেবে গণ্য করে এবং দেশটির অভ্যন্তরে ও কাশ্মিরে একাধিক হামলার জন্য এদেরকেই দায়ী মনে করে।
রাজিব ঘাই আরও বলেন, ‘আমরা তাদের (লস্কর-ই-তৈয়বার সদস্য) পুরোপুরি অপ্রস্তুত অবস্থায় ধরেছিলাম।’
সাম্প্রতিক সময়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান এই উত্তেজনা গত কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত ২২ এপ্রিল ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে হামলা চালিয়ে ২৬ পর্যটককে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়ায় চিরবৈরি এই দুই প্রতিবেশি দেশ।
এই হত্যাকাণ্ডের জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে ভারত। তবে ইসলামাবাদ তা অস্বীকার করেছে। পরবর্তীতে দুপক্ষই একে অপরের কূটনীতিক ও নাগরিকদের নিজেদের দেশ থেকে বহিষ্কার করেছে। পাশাপাশি সীমান্ত ও আকাশপথ বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেয়।
এরপরই গত ৬ মে দিবাগত রাতে পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। এতে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে শুরু করলে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় শনিবার (১০ মে) যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ভারত-পাকিস্তান।
যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী, উভয় দেশ স্থল, জল এবং আকাশপথে সব ধরনের সামরিক তৎপরতা বন্ধ করতে রাজি হয়।
আরও পড়ুন: পাল্টাপাল্টি যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ ভারত-পাকিস্তানের
ভিন্ন ভিন্ন হতাহতের সংখ্যা
ঘাই জানান, গত কয়েকদিনে এলওসি বা নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর লড়াইয়ে অন্তত ৩৫-৪০ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছেন, পাশাপাশি ভারতের পাঁচজন সেনাও প্রাণ হারিয়েছেন।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার দাবি করেন, তাদের পাল্টা হামলায় ৪০-৫০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছেন।
ভারতের এয়ার মার্শাল এ.কে. ভারতী জানান, পাকিস্তান থেকে আসা একাধিক ড্রোন অনুপ্রবেশ ব্যর্থ করা হয়েছে। পাশাপাশি পাকিস্তানি বিমান ঘাঁটিতে আরও বিমান হামলা চালানো হয়েছে।
তবে পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার পাকিস্তানের দাবির বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করেননি। তাছাড়া, ভারতীয় বাহিনীও কয়েকটি পাকিস্তানি বিমান ভূপাতিত করেছে বলে জানান তিনি, যদিও তার বক্তব্যের সপক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাননি।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) জানিয়েছে , তারা কোন পক্ষের দাবিই স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি।
এদিকে, যুদ্ধবিরতির পরও কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আবার সহিংসতা শুরুর খবর পাওয়া গেছে। কাশ্মির ও ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে নতুন করে গোলাগুলি ও ড্রোন দেখা গেছে বলে এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। গতকাল সংঘর্ষ কিছুটা কমে আসলেও স্থানীয়দের মনে আতঙ্ক রয়ে গেছে। ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের পুঞ্চ জেলার এক শিক্ষার্থী সোসান জেহরা বলেন, ‘পুরো এলাকা বিশৃঙ্খলার মধ্যে ছিল। শেল পড়তেই মানুষ দৌড়ে পালাচ্ছিল।’
পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণাধীন নীলম উপত্যকার বাসিন্দা মোহাম্মদ জাহিদ হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘যুদ্ধবিরতির পর আমরা আশাবাদী ছিলাম, কিন্তু এখন আবার অনিশ্চয়তা শুরু হয়েছে।’
কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
শনিবার নিজের সামাজিকমাধ্যম ট্রুথে দেওয়া এক পোস্টে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরে উভয় দেশই বিষয়টি নিশ্চিত করে।
তবে পাকিস্তান এই মধ্যস্থতার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানালেও ভারত এ বিষয়ে নীরব থাকে।
এ ছাড়া, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘এটি দীর্ঘমেয়াদী শান্তি ও মূল সমস্যাগুলোর সমাধানের পথ খুলে দিতে পারে।’
এদিকে, পরে পরিস্থিতি মূল্যায়নের জন্য রবিবার উচ্চপর্যায়ের একটি বৈঠক করেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অন্যদিকে, উভয় দেশের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা আজ (সোমবার) সরাসরি বৈঠকে বসবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: যুদ্ধবিরতিতে সম্মত ভারত-পাকিস্তান: ট্রাম্প
গত কয়েক দিন ধরে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর গোলাগুলিতে লিপ্ত ভারত-পাকিস্তান। হামলার জন্য একে অপরকে দোষারোপ করে আসছে। আবার দুই দেশেরই দাবি, প্রতিপক্ষের হামলা প্রতিরোধেই গুলি চালিয়েছে তারা। এমনকি যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন নিয়েও পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করে চলেছে চিরবৈরি এই দুই প্রতিবেশি দেশ।
কাশ্মির নিয়ে এই ভারত-পাকিস্তানের এই বিরোধ বহু পুরনো। উভয় দেশই পুরো কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ চায়। এরই মধ্যে অঞ্চলটি নিয়ে দুবার যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে দেশ দুটির মধ্যে। এখনও এই অঞ্চল নিয়ে তীব্র সংঘাত চলছে।
২১৭ দিন আগে
জামিনে মুক্তি পেলেন টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই শিক্ষার্থী
গ্রেপ্তারের প্রায় ছয় সপ্তাহ পর লুইজিয়ানার একটি অভিবাসী আটককেন্দ্র থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুমিয়াসা অজটুর্ক। এ সময় তার মুক্তির জন্য কাজ করেছেন কিংবা সমর্থন দিয়েছেন, এমন সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
স্থানীয় শুক্রবার (৯ মে) তাকে মুক্তির আদেশ দেন একটি ফেডারেল আদালত। ছাড়া পাওয়ার পরদিনই (শনিবার) বোস্টনে ফিরে এসেছেন রুমিয়াসা। ৩০ বছর বয়সী রুমিয়াসা তুরস্কের নাগরিক। তিনি টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেসের পিএইচডি গবেষক ছিলেন।
শনিবার (১০ মে) বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের রুমিয়াসা বলেন, ‘অত্যন্ত কঠিন একটি সময় অতিবাহিত করার পর লেখাপড়ায় ফিরে যেতে চাই।’
‘গত ৪৫ দিনে আমার স্বাধীনতা ও শিক্ষা দুটিই হারিয়েছি আমি। তবে যারা আমাকে সমর্থন, সহায়তা কিংবা এই খারাপ সময়ে খোঁজ নিয়েছেন তাদের সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ’, বলেন তিনি।
এর আগে গত ২৫ মার্চ ম্যাসাচুসেটসের সামারভিলে নিজের বাসা থেকে বের হলে তাকে অনেকটা ‘অপহরণের’ কায়দায় গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন তার ঘনিষ্ঠরা। অ্যাসোসিয়েটস প্রেসের (এপি) ভিডিওতে দেখা যায়, মুখঢাকা সাত ব্যক্তি তাকে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন, তখন তিনি চিৎকার করছিলেন।
এরপর তাকে নিউ হ্যাম্পশায়ার ও ভার্মন্টে নিয়ে যান ম্যাসাচুসেটসে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা। পরে লুইজিয়ানার বাসিলের একটি আটক কেন্দ্রে পাঠানো হয় রুমিয়াসাকে। তার ভিসাও বাতিল করা হয়।
পরে তার আটকের বিরুদ্ধে মামলা করেন রুমিয়াসা। মামলাটি বর্তমানে ভার্মন্টের বার্লিংটনে ইউএস ডিস্ট্রিক্ট জজ উইলিয়াম সেশন্সের কাছে বিচারাধীন রয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘অপহরণের’ কায়দায় তুর্কি শিক্ষার্থীকে তুলে নিল মার্কিন পুলিশ
ওই শিক্ষার্থীর অভিযোগ, গত বছর ইসরায়েল ও গাজা যুদ্ধ সম্পর্কে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিক্রিয়ার সমালোচনা করে আরেকজন লেখকের সঙ্গে মিলে একটি কলাম লিখেছিলেন তিনি। একারণেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এতে সাংবিধানিক অধিকার ও বাকস্বাধীনতার ভয়াবহ লঙ্ঘন হয়েছে বলে দাবি করেন রুমিয়াসা।
রুমিয়াসার এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার দাবির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত তাকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
তুরস্কের এই শিক্ষার্থী জানান, তিনি আদালতে তার মামলা চালিয়ে যাবেন। পাশাপাশি আমেরিকার ন্যায়বিচার ব্যবস্থায় ওপর তার ভরসা রয়েছেন বলেও মত দেন তিনি।
এদিকে রুমিয়াসার জামিনের খবরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন ম্যাসাচুসেটসের ডেমোক্র্যাট সিনেটর এড মার্কি। তিনি বলেন, ‘এই দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা তোমাকে ফিরে পেয়ে আনন্দিত রুমিয়াসা। তোমার লড়াই আমাদের দেশের কোটি কোটি মানুষকে গর্বিত করেছে।’
এর আগে জামিন শুনানিতে ভিডিওর মাধ্যমে উপস্থিত হয়ে নিজের হাঁপানির সমস্যা বাড়ার কথা এবং সোশ্যাল মিডিয়া ও শিশুদের নিয়ে তার ডক্টরেট সম্পন্ন করার কথা জজকে বর্ণনা করেন তিনি।
পরে কোনো ধরনের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ছাড়াই তাকে জামিনে মুক্তির আদেশ দেন জজ সেশন্স। তিনি বলেন, রুমিয়াসা সমাজের জন্য কোনো ঝুঁকি নন। তাছাড়া তার পলায়নের ঝুঁকিও নেই। তবে ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইসিই) পরামর্শে মুক্তির শর্তাবলীতে যেকোনো পরিবর্তন আনতে পারেন জজ।
সেশন্স বলেন, একটি কলাম লেখা ছাড়া রুমিয়াসারর গ্রেপ্তারের কারণ হিসেবে অন্য কোনো প্রমাণ দেয়নি সরকার। এছাড়া তার অভিবাসনের বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য ইমেইল পাঠানো হলেও তার কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।
আরও পড়ুন: ফিলিস্তিনি অ্যাক্টিভিস্ট আটক: যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন
গত বছর ফিলিস্তিনি গণহত্যা স্বীকার করতে এবং ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কিত কোম্পানিগুলো থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করার আবেদন জানিয়েছিল টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিক্রিয়ার সমালোচনা করে ক্যাম্পাস পত্রিকা ‘দ্য টাফটস ডেইলিতে’ কলাম লেখেন রুমিয়াসাসহ চার শিক্ষার্থী।
সূত্র: ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান
২১৮ দিন আগে
ইউক্রেনের সঙ্গে ফের আলোচনায় বসতে চায় রাশিয়া
ইউক্রেনের সঙ্গে ফের ‘সরাসরি আলোচনা’ শুরু করার প্রস্তাব দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। কোনো শর্ত ছাড়াই আগামী ১৫ মে তুরস্কের ইস্তানবুলে তিনি এই বৈঠক করতে চাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।
এমন এক সময় তিনি এই প্রস্তাব দিয়েছেন, যখন রাশিয়াকে নিঃশর্তভাবে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ইউক্রেন ও তার মিত্র দেশগুলো। এই যুদ্ধবিরতিতে সম্মত না হলে আরও নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়বে মস্কো বলেও হুঁশিয়ারে দেন তারা। যদিও তাদের এই আল্টিমেটাম প্রত্যাখ্যান করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার কয়েকদিন পর ২০২২ সালের মার্চে ইস্তানবুলে হওয়া অসফল বৈঠকের উদহারণ টেনে সেই আলোচনাই ফের শুরু করার প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। রবিবার (১১ মে) টেলিভিশনে দেওয়া এক বিরল বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘স্থায়ী ও ফলপ্রসূ শান্তির দিকে এগিয়ে যেতে আন্তরিক আলোচনা করতে চাচ্ছে রাশিয়া।’
ইউক্রেনের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা চলাকালীন একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে একমত হওয়ার বিষয়টিও উড়িয়ে দেননি তিনি। এরআগে শনিবার ইউরোপের শক্তিধর চার দেশ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, ‘মস্কো যদি নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতিতে সম্মত না হয়, তাহলে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।’
ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও পোল্যান্ডের নেতারা বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সমর্থিত তাদের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব সোমবার থেকে শুরু হবে। এরআগে এ বিষয়ে ট্রাম্পকে অবগত করা হয়েছে।’
এরআগে ‘খুবই উচ্চ পর্যায়ের’ বৈঠকের জন্য রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘তিনবছর ধরে চলা এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধে তারা একটি চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছেছেন।’ এদিকে, শান্তি আলোচনায় প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তবে শর্ত দিয়ে তিনি বলেন, ‘সেটা তখনই হবে, যখন যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে।’
আরও পড়ুন: ইউক্রেনে ৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি ঘোষণা রাশিয়ার
মস্কোর প্রস্তাব
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রাশিয়া বেশ কয়েকটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে বলে দাবি করেন পুতিন। যার মধ্যে রয়েছে—জ্বালানি অবকাঠামোয় হামলা বন্ধ রাখা, যাতে ইউক্রেনও রাজি হয়েছে; ইস্টার সানডেতে ত্রিশ-ঘণ্টার একতরফা অস্ত্রবিরতি; এছাড়াও গেল ৮ থেকে ১০ মে দুদিনের একতরফা অস্ত্রবিরতি।
ইউক্রেন বারবার এসব পদক্ষেপ ব্যর্থ করে দেওয়ার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ করেন রুশ প্রেসিডেন্ট। বিপরীতে রাশিয়া নিজেই এসব অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘন করেছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ।
গেল মার্চে, ত্রিশ দিনে সীমিত একটি অস্ত্রবিরতির প্রস্তাব দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র, যাতে রাজি হয়েছিল ইউক্রেন। কিন্তু নিজস্ব শর্ত জুড়ে দিয়ে তা আটকে দিয়েছিল রাশিয়া।
রবিবার পুতিন বলেন, ‘ক্রেমলিনের এমন একটি যুদ্ধবিরতি দরকার, যা তাদের একটি স্থায়ী শান্তির দিকে নিয়ে যাবে। তারা এমন যুদ্ধবিরতি চায় না, যাতে ইউক্রেন নতুন করে অস্ত্র মজুত ও সামরিক বাহিনীতে নতুন জনশক্তি নিয়োগের সুযোগ পায়।’
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের সঙ্গে কথা বলে আগামী ১৫ মে শান্তি আলোচনার আয়োজনের অনুরোধ করবেন বলেও জানান পুতিন।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে বৈঠকের আয়োজন করেছিল তুরস্ক, যদিও তা সফল হয়নি। প্রস্তাবিত চুক্তিতে ইউক্রেনের ‘নিরপেক্ষ মর্যাদা, দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর আকার কতটা হবে, সেই সীমা আরোপ করে দেওয়ার কথা ছিল। পাশাপাশি রাশিয়া অধিকৃত অঞ্চলগুলোর মর্যাদা নিয়ে আলোচনা বিলম্বিত করা হয়েছিল।
সেই আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার জন্য ইউক্রেন ও পশ্চিমা দেশগুলোকে দায়ী করে রাশিয়া। পুতিন বলেন, ‘যারা সত্যিই শান্তি চাচ্ছেন, ফের শান্তি আলোচনা শুরুর প্রস্তাব নাকচ করে দিতে পারেন না তারা।’
আরও পড়ুন: ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সিআইএ কর্মকর্তার ছেলে নিহত
খুবই গুরুত্বপূর্ণ সংকেত
শনিবার ইউরোপীয় নেতাদের পাশাপাশি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। চার ইউরোপীয় দেশের নেতাদের সঙ্গে তার বৈঠককে ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ সংকেত’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন তিনি।
জেলেনস্কির সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা এক যৌথ বিবৃতিতে সোমবার থেকে পরবর্তী ত্রিশ দিনের একটি যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন তারা। যুদ্ধ বন্ধে কূটনৈতিক উদ্যোগের সুযোগ তৈরি করার উদ্দেশ্যে তারা এই প্রস্তাব দিয়েছেন বলে দাবি করেন।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন বলেন, ‘ইউরোপীয় দেশগুলোর সহায়তায় প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণের নেতৃত্ব দেবে যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়া যদি এই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে, তাহলে তাদেরকে ইউরোপ ও আমেরিকার ব্যাপক সমন্বিত নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হবে।’
২১৮ দিন আগে
পাল্টাপাল্টি যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ ভারত-পাকিস্তানের
পাল্টাপাল্টি যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে দক্ষিণ এশিয়ার পরমাণু শক্তিধর দুই প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তান। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দীর্ঘ আলোচনার পর শনিবার (১০ মে) যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়েছে।
তবে রবিবার (১১ মে) ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের শ্রীনগর ও জম্মুতে বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রির দাবি, ‘পাকিস্তান বারবার যুদ্ধবিরতির চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। তারা হামলা চালিয়েছে, পরে ভারতীয় সেনারা তার জবাব দিয়েছে।’
নয়াদিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘চুক্তি লঙ্ঘনের এই কার্যকলাপগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া ও পরিস্থিতির মোকাবেলায় যথাযথ গুরুত্ব ও দায়িত্বশীলতা প্রদর্শন করার জন্য আমরা পাকিস্তানের প্রতি আহ্বান জানাই।’
অন্যদিকে, পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে ভারতের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করা হয়েছে। বিবৃতিতে জানানো হয়, ‘ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নে তারা ‘পূর্ণ নিষ্ঠার সঙ্গে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’।
আরও পড়ুন: পাল্টা আঘাত না এলে বৈরিতা বাড়াতে চায় না ভারত-পাকিস্তান
সাম্প্রতিক সময়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান এই উত্তেজনা গত কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত ২২ এপ্রিল ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে হামলা চালিয়ে ২৬ পর্যটককে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়ায় চিরবৈরি এই দুই প্রতিবেশি দেশ।
এই হত্যাকাণ্ডের জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে ভারত। তবে ইসলামাবাদ তা অস্বীকার করেছে। পরবর্তীতে দুপক্ষই একে অপরের কূটনীতিক ও নাগরিকদের নিজেদের দেশ থেকে বহিষ্কার করেছে। পাশাপাশি সীমান্ত ও আকাশপথ বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেয়।
এরপরই গত ৬ মে দিবাগত রাতে পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। এতে পাকিস্তানে অন্তত ৩৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন বলে জানায় দেশটির সরকার। আবার পাকিস্তানও পাল্টা অভিযান ঘোষণা করে। পাকিস্তানের হামলায় ২১ ভারতীয় নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ভারত সরকার।
এতে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে শুরু করলে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ভারত-পাকিস্তান।
শনিবার নিজের সামাজিকমাধ্যম ট্রুথে দেওয়া এক পোস্টে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় রাতে দীর্ঘ আলোচনার পর তারা যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছেন। আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, পূর্ণাঙ্গ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে ভারত-পাকিস্তান।’
পরে যুদ্ধবিরতির বিষয়টি নিশ্চিত করেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। প্রায় তিন ডজন দেশের কূটনৈতিক সহায়তায় এই চুক্তি সম্ভব হয়েছে বলে জানান তিনি।
পরে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এস. জয়শঙ্করও চুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, উভয়পক্ষই শত্রুতা বন্ধ করতে সম্মত হয়েছে। পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের দৃঢ় অবস্থানের কথাও পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফও একে বৃহত্তর স্থিতিশীলতার পথে একটি পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেন। এর আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানান, নিরপেক্ষ জায়গা থেকে এক গুচ্ছ বিস্তৃত বিষয়ে আলোচনা শুরু করতে রাজি হয়েছে দুই দেশ।
আরও পড়ুন: যুদ্ধবিরতিতে সম্মত ভারত-পাকিস্তান: ট্রাম্প
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পাকিস্তানের শাহবাজ শরিফসহ দুই দেশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে গেল ৪৮ ঘণ্টা বৈঠক করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ও মার্কো রুবিও।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবং যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানিয়ে আশা প্রকাশ করেন যে, এটি দীর্ঘমেয়াদে বজায় থাকবে।
সূত্র: বিবিসি
২১৮ দিন আগে