সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার রাত ১২টায় মুখোমুখি হবে দু’দল।
১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে তাদের সবশেষ দেখা হয়। তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ওই ম্যাচে বেলজিয়ামকে ৪-২ গোলে হারায় ফ্রান্স। এছাড়া আটটি আন্তর্জাতিক প্রীতিম্যাচে মুখোমুখি হয় ফ্রান্স-বেলজিয়াম। এর মধ্যে মাত্র দু’টি ম্যাচ জিতে বেলজিয়ানরা।
তবে এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। সোনালী প্রজন্মের দূর্দান্ত এক দল নিয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপে এসেছে বেলজিয়াম। একঝাঁক তারকা ফুটবলারে ঠাসা বেলজিয়াম বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত কোনো ম্যাচ হারেনি । জি গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে নকআউট পর্বে উঠে তারা।
শেষ ষোলোর ম্যাচে, জাপানের বিপক্ষে প্রথমে দুই গোলে পিছিয়ে থেকেও দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে জয় ছিনিয়ে নেয় বিশ্বকাপের কালো ঘোড়ারা।
এরপর কোয়ার্টার ফাইনাল বিশ্বকাপের হট ফেভারিট ব্রাজিলকে ২-১ গোলে বিদায় করে সেমিফাইনালে জায়গা করে নেয় রবার্তো মার্টিনেজের শিষ্যরা।
৩২ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো শেষ চারে জায়গা পেয়েছে বেলজিয়াম। এর আগে ১৯৮৬ সালে সেমিতে খেলেছিল তারা।
এবারের বিশ্বকাপে পাঁচ ম্যাচ খেলে সর্বোচ্চ ১৪ গোল করেছে বেলজিয়াম। তারকা রোমেলু লুকাকু, এডেন হ্যাজার্ড, কেভিন ডি ব্রুনেইদের গোল করার ও করানোর প্রখর ক্ষমতা রয়েছে।
এদিকে ফ্রান্সও কোনো অংশে কম যায় না। ১৯৯৮ এর বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক দিদিয়ের দেশমের কোচিংয়ে আবারো বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তুলতে চায় ফ্রান্স। সি গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে নকআউট পর্বে পাড়ি জমায় ফ্রান্স।
প্রথম রাউন্ডে তাদের পারফর্মেন্স খুব ভালো না হলেও দ্বিতীয় রাউন্ডে নিজেদের সামর্থের প্রমাণ দেখায় দেশমের শিষ্যরা। দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনাকে ৪-৩ গোলে হারিয়ে শেষ চারে ওঠে ফ্রান্স। কোয়ার্টার ফাইনালে সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন উরুগুয়েকে ২-০ গোলে সহজেই হারিয়ে সেমিতে জায়গা করে নেয় তারা।
দারুণ ফর্মে রয়েছেন ১৯ বছর বয়সী পিএসজি ফরোয়ার্ড কিলিয়ান এমবাপ্পে। তার গতির কাছে হেরে শেষ ষোলোতে বাদ পড়ে ফেভারিট আর্জেন্টিনা। ওই ম্যাচে ব্রাজিলের কিংবদন্তি ফুটবলার পেলের পর প্রথম টিনএজার হিসেবে বিশ্বকাপের কোনো ম্যাচে একাধিক গোলের রেকর্ড গড়েন।
ফ্রান্সের অ্যাটাকিং ফুলব্যাক বেনজামিন পাভার্ড বলেন, আমরা কাউকে ভয় করছি না। আমরা শুরু থেকেই আত্মবিশ্বাসী ছিলাম এবং এখনো আছি।
তবে এখনই পুরোপুরি সন্তুষ্ট না হয়ে বিশ্বকাপে আরো সামনে যাওয়ার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ কোচ দিদিয়ের দেশম। ২০০০ সালে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নজয়ী তার শিষ্যদের তাই ফাইনালে ওঠার ব্যাপারে প্রত্যয়ী থাকতে প্রতিনিয়ত অনুপ্রেরণা দিয়ে যাচ্ছেন।
চমৎকার ফর্মে রয়েছেন বেলজিয়ামের গোলরক্ষক থিবো কোর্তায়া। ব্রাজিলের বিপক্ষে অসাধারণ অনেক গোল বাঁচিয়ে নিজেকে আবারো প্রমাণ করেছেন চেলসির গোলবারের প্রহরী।
ভালো খেলছেন ফ্রান্সের গোলরক্ষক হুগো লরিসও। উরুগুয়ের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালের দারুণ এক গোল বাঁচান টটেনহ্যামের এই গোলরক্ষক।
এই দু’জনকেই সেমিফাইনালে গোল ঠেকানোর কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে।
বেলজিয়ানদের উচ্চতা আর হেড করার দারুণ ক্ষমতা রয়েছে ডিফেন্ডার ভিনসেন্ট কোম্পানি, ভের্তোঘেন ও ফেলানির। ডিফেন্ডার থমাস মিউনিয়ারের দ্রুতগতি বেলজিয়ামের আক্রমণকে আরো ধারালো করে।
বেলজিয়াম শিবিরে ত্রাস ছড়াতে পারেন এবারের তরুণ তারকা এমবাপ্পে। তারকা ফরোয়ার্ড অলিভিয়ের জিরুদ এবারের বিশ্বকাপে গোল না পেলেও এমবাপ্পে-গ্রিজম্যানদের করে দিয়েছেন গোলের জায়গা ও সুযোগ।
সব মিলিয়ে তারকা সমৃদ্ধ দুই দলের জমজমাট এক লড়াই দেখার অপেক্ষায় পুরো ফুটবল বিশ্ব। ম্যাচের ফলাফলই বলে দেবে ১৫ জুলাই সোনালী ট্রফি জয়ের লড়াইয়ে কে খেলবে মস্কোর লুজনিকি স্টেডিয়ামে।