সম্প্রতি সিলেটের পিয়াইন নদীর নিকটবর্তী বিছনাকান্দি ও সারি-গোয়াইন নদীর মিলিত প্রবাহ চেঙ্গেরখাল নদী তীরের মিঠা পানির জলারবন রাতারগুলের বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে এ দাবির কথা জানান বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) একটি পর্যবেক্ষক দল।
বাপা’র প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক শরীফ জামিল। এতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাপার জাতীয় পরিষদ সদস্য ও সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম, বাপা সিলেট শাখার বদরুল ইসলাম চৌধুরী প্রমুখ।
বাপা প্রতিনিধিদের পরিদর্শনকালে এলাকা দুটির সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অপরিকল্পিতভাবে পাথর উত্তোলন করার কারণে বিছনাকান্দি ও অনিয়ন্ত্রিত পর্যটনের কারণে রাতারগুল সঙ্কটাপন্ন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে অবিলম্বে বিছনাকান্দি ও রাতারগুলকে পরিবেশগত সঙ্কটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা প্রয়োজন।

বাপার পর্যবেক্ষণে বলা হয়, দীর্ঘদিন থেকেই অপরিকল্পিতভাবে পাথর উত্তোলন করার কারণে বিছনাকান্দি পর্যটন এলাকায় এমন কিছু মৃত্যুকূপ তৈরি হয়েছে যা পর্যটকদের জীবন বিপন্ন করতে পারে। বোমা মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন করার ফলে পরিত্যক্ত পাথর কোয়ারিতে সৃষ্টি হওয়া চোরাবালিতে অসাবধানতাবশত পর্যটকরা আটকে যেতে পারেন। অনিয়ন্ত্রিত ও অপরিকল্পিত পর্যটন বিছনাকান্দি এলাকাকে একটি মেলাস্থলে পরিণত করেছে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিছানাকান্দির সৌন্দর্য দর্শনে পর্যটকদের আকৃষ্ট করা হলেও এখনো গড়ে তোলা হয়নি পর্যটকবান্ধব সুব্যবস্থা। হাজার হাজার পর্যটকের উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও এখানে কোনো ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ নেই ।
এছাড়া বিরূপ আওহাওয়ায় নারী-শিশুদের জন্য নেই আশ্রয়স্থল, রয়েছে শৌচাগারের অভাব। আকস্মিকভাবে উজান থেকে ঢল নেমে আসার সতর্কীকরণ ব্যবস্থা না থাকায় ভবিষ্যতে ভয়াবহ দুর্ঘটনার আশংকা করেছেন বাপা'র পর্যবেক্ষকেরা। পর্যবেক্ষক দল বিছনাকান্দি এলাকায় সারাদিন অবস্থান করলেও পর্যটক পুলিশের কোনো টহল দেখতে পাননি।
পানিতে ভাসমান বেসরকারি উদ্যোগে স্থাপন করা একটি খাবার হোটেল রয়েছে, যার বিরুদ্ধে অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিবেশনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিনিধি দলটি পিয়াইন নদী পথে যাত্রাকালে লক্ষ্য করেন যত্রতত্র গ্রামের ভেতর ক্রাশার মেশিনের ব্যাবহার। এছাড়া নদীর তট ও ঢালের গঠনগত পরিবর্তন করে বিভিন্ন স্থানে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি, যা নদী আইনে অপরাধ।
রাতারগুল জলারবন পরিদর্শনকালে বাপার প্রতিনিধি দল অনিয়ন্ত্রিত ও অপরিকল্পিত পর্যটনে সরব এই বিশেষায়িত ক্ষুদ্র বনকে একটি বিনোদন পার্ক হিসেবে প্রত্যক্ষ করেন।
পর্যবেক্ষক দলের পক্ষ থেকে বলা হয়, দেশের একমাত্র মিঠাপানির বন হিসেবে স্বীকৃত রাতারগুলে অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন চলছে। পর্যটকদের উচ্চস্বরে চিৎকার, বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার, যত্রতত্র প্লাস্টিক বোতল ও খাবারের প্যাকেট ফেলা নিয়ন্ত্রণে বন-বিভাগ গত ছয় বছরেও কোনো পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে পারেনি।
এছাড়া পর্যবেক্ষক দলটি কংক্রিটের ওয়াচ টাওয়ারে শতাধিক পর্যটকের উপস্থিতি প্রত্যক্ষ করেছেন। অত্যন্ত নিম্নমানের সামগ্রি দিয়ে তৈরি এই ওয়াচ টাওয়ার যেকোনো সময় ভেঙে পড়ে পর্যটকদের প্রাণহানি ঘটাতে পারে বলে প্রতিবেদনে আশংকা প্রকাশ করা হয়।
.jpg)
এছাড়া পর্যবেক্ষক দল গত ছয় বছরে রাতারগুল বনের জীববৈচিত্র্য চরমভাবে হ্রাস পেয়েছে বলে প্রত্যক্ষ করেছেন। স্থানীয় মানুষের সাথে কথা বলেও এর সত্যতা পাওয়া গেছে। পর্যবেক্ষক দল বিভিন্ন স্থানে হিজল-করচ গাছ নিধনের চিহ্ন দেখেছেন। পর্যটকদের বনের গাছে চড়ে ছবি তোলার দৃশ্যও দেখা গেছে। রাতারগুলকে বন বিভাগ বিশেষ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এলাকা ঘোষণা করা হলে বন বিভাগের অপেশাদারিত্ব ও গাফিলতির কারণে রাতারগুলের জীববৈচিত্র্য বিলুপ্ত হচ্ছে।

প্রতিবেদনে রাতারগুল, বিছনাকান্দি, জাফলং, ভোলাগঞ্জ, লোভাছড়াসহ প্রতিটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থান রক্ষায় স্থানীয় নাগরিকদের সম্পৃক্ততা বাড়িয়ে নাগরিক আন্দোলন অব্যাহত রাখার মতামত তুলে ধরা হয়।