তবে সরকার ব্রহ্মপুত্রের যৌবন ফেরানোর উদ্যোগ নেয়ায় শেরপুরবাসীসহ এর তীরবর্তী মানুষের মনে নতুন স্বপ্ন-সম্ভাবনা জেগে উঠেছে।
ব্রহ্মপুত্র পাড়ের বাসিন্দা সদর উপজেলার চরপক্ষিমারি ইউনিয়নের ডাকপাড়া গ্রামের মো. কুতুব উদ্দিন বলেন, আগে রৌমারি থাইক্কা বরমপুত্র (ব্রহ্মপুত্র) দিয়া মালামাল-মানুষের ময়মনসিংহ হয়ে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ চলাচল ছিল। বড় বড় নৌকা, ট্রলার চলতো। কিন্তু নদী ভইরা যাওনে সেই পথ বন্ধ হইয়া গেছিল। নদীতে পানি হইলেই জেলেরা মাছ ধরতো। মাঝে মাঝে নদীর পানি উপচে পইড়া বন্যা অইতো। কিন্তু সেই নদীতো এখন খাল হইয়া গেছে।
কুতুব উদ্দিন বলেন, অহন হুনতাছি বরমপুত্র খনন অইবো। তাইলে তো আবার ব্যবসা-বাণিজ্য চাঙ্গা অইবো। মানুষের চলাচল বাড়বো, সহজ যোগাযোগ গইরা উঠবো। কৃষকরা নদীর পানি পাইবো। আবার মাঠেও ফসল ফলবো।
জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্র নদী খনন মহাপরিকল্পনা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন হয়েছে। প্রায় ৪ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা ব্যয়ে ব্রহ্মপুত্রসহ আরও তিনটি ধরলা, তুলাই ও পুনর্ভবা নদী খনন, নাব্যতা উন্নয়ন ও পূনরুদ্ধারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুস সামাদ ফারুক বলেন, গত মঙ্গলবার একনেক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
শেরপুরে উন্নয়ন মেলা উদ্বোধন উপলক্ষে সেখানে অবস্থান নেয়া নৌ-পরিবহন সচিব ইউএনবিকে বলেন, বর্তমান সরকারের সদিচ্ছায় যমুনার মুখ জামালপুরের বাহাদুরাবাদ থেকে ভৈরব পর্যন্ত প্রায় ২২৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের হ্মপুত্র নদী খননের আওতায় থাকবে ময়মনসিংহ বিভাগের শেরপুর, জামালপুর, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোণাসহ পার্শ্ববর্তী কিশোরগঞ্জ জেলা।
তিনি বলেন, নদী খননের মাধ্যমে উত্তোলিত মাটি রাস্তা-ঘাট, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন উন্নয়নকাজে ব্যবহার করা হবে। আর ওই নদী খননের মাধ্যমে নদী যোগাযোগ ব্যবস্থা সচলকরণসহ এলাকায় এলাকায় গড়ে তোলা হবে জলাধার।
চৈত্র মাসে নদীর পানি শুকিয়ে গেলে সেই জলাধারে আহরিত পানি থেকে এলাকার কৃষকরা সেচ সুবিধা ভোগ করবেন। এ মাসেই ব্রহ্মপুত্র নদের খনন কাজ উদ্বোধন করা হবে, বলেন নৌ-পরিবহন সচিব।
পরিকল্পনা কমিশনের তথ্যমতে, ব্রহ্মপুত্র নদী খনন মহাপরিকল্পনার আওতায় বেসরকারি ড্রেজারের মাধ্যমে চারটি নদীর ক্যাপিটাল ড্রেজিং করা হবে ১০ কোটি ঘনমিটার। সংরক্ষণ ড্রেজিং করা হবে আট কোটি ঘনমিটার। আর মাটির ডাইক নির্মাণ করা হবে ৬০ লাখ ঘনমিটার। ব্রহ্মপুত্র নদটির ২২৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যে ১০০ মিটার প্রস্থ ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে তিন মিটার গভীর করে নৌপথটি ক্লাস-২ নেভিগেশনাল রুটে উন্নীত করা হবে।
নৌ-পরিবহন আব্দুস সচিব সামাদ ফারুক জানান, নদী যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল হলে সমুদ্র ট্যুরের মতো বৃদ্ধি পাবে নৌ-ট্যুর। উৎসাহিত হবেন পর্যটকরা। পর্যটকদের এখন বিশেষ আকর্ষণ হচ্ছে গারো পাহাড়, সমুদ্র ও নদী ট্যুর। এজন্য শেরপুরের সীমান্ত সড়কের পরিধি বাড়িয়ে তামাবিল, জাফলং হয়ে সিলেট-রৌমারী পর্যন্ত সীমান্ত সড়ক ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে। ফলে শেরপুর সীমান্তের গজনী, মধুটিলা ও জামালপুর সীমান্তের লাউচাপড়াসহ গারো পাহাড় অঞ্চলের প্রতি পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষিত হবে। একইসাথে নাকুগাঁও স্থলবন্দরকে আরও সক্রিয় ও শক্তিশালী করতে বাংলা-ভুটান-কাঠমান্ডু পর্যন্ত সরাসরি সড়ক ব্যবস্থা গড়ে তুলতেও কাজ চলছে। এছাড়া শেরপুরে ও জামালপুরে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কার্যক্রমও বেগবান হবে।
জনউদ্যোগ শেরপুর জেলা কমিটির আহ্বায়ক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, যেকোনো একটি জনপদের উন্নয়নের জন্য অন্তত তিনটি যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। এক্ষত্রে নৌ-পথ অনেক কার্যকর ভুমিকা পালন করে।
তিনি বলেন, আমাদের শেরপুর জেলায় কেবলমাত্র সড়ক পথে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সাথে সংযুক্ত থাকায় কাঙ্খিত উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে না। আমরা দীর্ঘদিন ধরে রেলপথের উন্নয়ন এবং নদ-নদী খনন করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনার দাবি আসছি। ব্রহ্মপুত্র নদী খননের মহাপরিকল্পনা সরকার অনুমোদন দেয়ায় অভিনন্দন জানাই। যতদ্রুত সম্ভব আমরা প্রকল্পটির বাস্তবায়ন দেখতে চাই।
শেরপুরের জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদী খনন হলে এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটবে। পর্যটন এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। অর্থনৈতিকভাবে কর্মচাঞ্চল্য বাড়বে। বাড়বে কর্মসংস্থান। এতে এলাকার উন্নয়ন এবং মানুষের অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে।