স্থানীয় কৃষকরা জানান, নানা ধরনের সবজিসহ বেগুন চাষ করে একদিকে যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন তারা, অন্যদিকে দেশের সবজির চাহিদা পূরণে উল্লেখযোগ্য ভুমিকা রাখতে সহায়তা করছেন।
সদরপুর উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের শৌলডুবী, মাঠ শৌলডুবী, আবুলের মোড়, বাঁধানোঘাট এলাকায় গত ১৫ বছর ধরে বিভিন্ন মৌসুমে জমিতে ধান, পাট ও গম চাষ না করে বেগুন চাষ করছেন কৃষকরা।
সদরপুর কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, চলতি বছর এ উপজেলায় ২৯০ হেক্টর জমিতে বেগুনের চাষ করা হয়েছে। গত বছর বেগুন চাষের জমির পরিমাণ ছিল ২৫০হেক্টর। চলতি মৌসুমে আরো ৪০ হেক্টর বেশি জমিতে বেগুনের চাষ করা হয়েছে।
উপজেলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বিধান রায় জানান, এ এলাকার কৃষকরা অত্যন্ত পরিশ্রমী। পাশাপাশি চাষাবাদের বিভিন্ন কলাকৌশল জানার জন্য তারা বিভিন্ন কৃষিবিষয়ক সেমিনারে অংশগ্রহণ করে থাকে। বেগুন চাষ অধিক লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা বেগুন চাষে উৎসাহী হয়েছে।
তিনি বলেন, এ অঞ্চলের কৃষকরা বেগুন চাষে অভাবনীয় বিপ্লব ঘটিয়েছেন যা দেখে অন্যান্য জেলার কৃষকরা উৎসাহিত হতে পারেন।
সদরপর উপজেলার কয়েকজন কৃষকের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, এ এলাকার কৃষকরা বিপি হাইব্রিট, আইরেট, সিন্দুরী, সাদা, লাফাসহ বিভিন্ন জাতের বেগুন চাষ করেন।
শৌলডুবী গ্রামের কৃষক আবুল বাশার জানান, প্রতিবছর ২০ হাজার টাকায় ৪০ শতাংশ জমি ইজারা নিয়ে গত তিন বছর ধরে বেগুন চাষ করছেন। তিনি বলেন, অন্যান্য সবজির তুলনায় সারা বছরই বেগুনের একটু ভালো দাম পাওয়া যায়। বেগুন চাষ করে তার সংসারে স্বচ্ছলতা এসেছে।
মাঠ শৌলডুবী গ্রামের কৃষক শাহেদ আলী মোল্লা জানান, তার নিজস্ব এক বিঘা জমিতে তিনি বেগুনের ক্ষেত করেছেন। বেগুন বিক্রি করে তিনি লাভবান হয়েছেন।
বাঁধানো ঘাঠ গ্রামের কৃষক জামাল উদ্দিন তার ১০ কাঠা জমিতে, ভাষানচর গ্রামের শাহজাহান খাঁ ৭ কাঠা জমিতে ও মারুফ শিকদার ৯ কাঠা জমিতে এবং আজিজ মোল্লা ১৫ কাঠা জমিতে এবার বেগুনের চাষ করেছেন।
তারা জানান, বেগুন চাষে বোরো ধান আবাদের চেয়ে পানি কম লাগে। সার ও শ্রমিক খরচও কম। তুলনামূলকভাবে বাজারে মূল্য বেশি পাওয়া যাচ্ছে। এক বিঘা জমিতে বেগুন আবাদ করলে সব মিলিয়ে খরচ পড়ে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। ওই জমি থেকে বেগুন পাওয়া যায় ১২০ থেকে ১৫০মন। খরচ বাদ দিয়ে লক্ষাধিক টাকা আয় হয় তাদের।
ওই এলাকার বেগুন চাষি হাফিজ মাতুব্বর, জলিল পরামানিক, কালাম পরামানিকসহ আরো অনেকেই জানান, বেগুন চারা রোপনের এক মাস পর থেকেই ফলন শুরু হয়। এক টানা ৬ মাস এ ফলন অব্যাহত থাকে। ফলন শুরু হওয়ার পর থেকেই সপ্তাহে দুবার করে ক্ষেত থেকে বেগুন তোলা হয়। সপ্তাহের দুদিনে ৮ থেকে ১২মন তোলা হয়।
তারা বলেন, বাজার ভালো হলে প্রতি মন বেগুন ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা দরে বিক্রি করা যায়। প্রতি বিঘা জমিতে গড়ে ১৩০ মন বেগুন উৎপাদন ধরা হলে এক বিঘা জমি থেকে এক মৌসুমে লক্ষাধিক টাকা আয় করা সম্ভব।
সদরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কাজি শফিকুল ইসলাম জানান, উপজেলার শৈলডুবির বেগুনের সুনাম দীর্ঘ দিনের। তিনি বলেন, কৃষকের বেগুন বিক্রি করতে তাদের বেশি কষ্ট করে হাটে-বাজারে যেতে হয় না। স্থানীয় শৌলডুবী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ, মজুমদার বাজার, সাদিপুর বাজার, বাড়ৈরহাট, নীল মনির বাজার, কৃষ্ণপুর বাজার, বাঁধানোঘাট, পোস্ট অফিস মোড় এলাকায় প্রতিদিন সকাল-বিকাল দুই দফা বেগুনের হাট বসে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকাররা এসে হাট থেকে হাজার হাজার মন বেগুন কিনে বস্তাবন্দি করে দেশের বিভিন্ন বাজারে পাঠায়।
তিনি আরো বলেন, এছাড়া পাইকারী কাঁচা তরকারী ব্যবসায়ীরা সরাসরি ক্ষেত থেকে কিনে নগদ টাকা দিয়ে যায়। এতেও কৃষকরা বেশি লাভবান হচ্ছেন।
পাইকারী বেগুন ক্রেতা আমজাদ হোসেন জানান, সদরপুরের বেগুনের কদর রয়েছে দেশের বিবিন্ন বাজার ও হাটে। তারা এখান থেকে বেগুন কিনে ঢাকার কাওরান বাজার, শ্যামবাজার, যাত্রাবাড়ি, দোহার বাজার, নারিশা বাজার, কার্তিকপুর, শ্রীনগর, মাদারীপুর, বরিশাল, খুলনা, সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করে থাকেন।
তিনি বলেন, বিভিন্ন বাজারে এখানকার বেগুন এক হাজার দুশ’ থেকে শুরু করে দেড় হাজার টাকা মন দরে বিক্রি হয়।
ফরিদপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কান্তিক চন্দ্র চক্রবর্তী জানান, জেলার শৌলডুবীর বেগুন চাষিদের আমরা মৌসুমের সময়ে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিয়ে থাকি। এছাড়াও আমাদের কৃষি কর্মকর্তারা বেগুন ক্ষেতগুলোতে বিশেষ নজর রাখে। যেকোনো সমস্যায় দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হয়। তাই চাষীরা বেগুন চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।