জনস্বার্থে করা এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে মানুষের জীবন নিয়ে বাণিজ্য করা যাবে না উল্লেখ করে আদালত জানায়, সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন ১১টি সরকারি হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করেছে। অভিযানকালে ঢাকায় ৪০ শতাংশ এবং ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ৬২ শতাংশ চিকিৎসককে কর্মস্থলে তারা পাননি। এতেই বোঝা যায় দেশের স্বাস্থ্যখাতে কী অবস্থা বিরাজ করছে।
‘ডিউটি টাইমে’ সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদনটি করেন অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তার পালোয়ান। শুনানিতে তিনি বলেন, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক অনুপস্থিতির কারণে যথাযথ চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না জনগণ।
দ্য মেডিকেল প্র্যাকটিস অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিকস অ্যান্ড ল্যাবরেটরিজ (রেগুলেসন্স) অর্ডিন্যান্স-১৯৮২ এর ৪ ধারায় চাকরির সময়ের বাইরে প্রাইভেট প্র্যাকটিসের সুযোগ রাখা হয়েছে।
আইনজীবী আব্দুস সাত্তার আদালতে বলেন, লক্ষ্মীপুরে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক নিজ ক্লিনিকে থাকায় একজন রোগী চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। এ কারণে অর্ডিন্যান্সের ৪ ধারাটি বাতিল ঘোষণা করা হোক।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার শুনানিতে বলেন, জনগণের স্বাস্থ্য সেবা যাতে নিশ্চিত হয় সে জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাসপাতালে চিকিৎসকদের উপস্থিতির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
এ পর্যায়ে আদালত বলে, চিকিৎসকরা তো মানুষ। এখন কোনো সার্জন যদি রাত ২টা পর্যন্ত প্রাইভেট হাসপাতাল বা ক্লিনিকে চিকিৎসা দেন তাহলে তিনি কীভাবে সরকারি হাসপাতালে গিয়ে সকালে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন? তাকে তো শারীরিক ও মানসিকভাবে ফিট থাকতে হয়।
আদালত আরও বলে, ১৯৮২ সালের মতো পরিস্থিতি তো দেশে এখন আর নেই। প্রতিবছরই প্রচুর সংখ্যক চিকিৎসক বের হচ্ছেন। কিন্তু সমস্যা হলো সবাই ঢাকার হাসপাতালে থাকতে চান।
শুনানি শেষে হাইকোর্ট নীতিমালা প্রণয়নে কমিশন গঠনের নির্দেশ দেন। একইসাথে অর্ডিন্যান্সের ৪ ধারাকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে।
স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বিএমডিসি ও বিএমএ সভাপতিকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
পরে আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, চিকিৎসা পেশা নিয়ে অনেকগুলো আইন রয়েছে। আইনগুলো পর্যালোচনা করে একটি সমন্বিত প্র্যাকটিসিং নীতিমালা প্রণয়ন করতে বলেছে হাইকোর্ট।