৩৩ মামলায় ‘ভুল’ আসামি জেলে থাকার অভিযোগের বিষয়ে দুদকের ব্যাখ্যা দাখিলের সময় রবিবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
দুদককে উদ্দেশ করে আদালত বলেন, আমরা আপনাদের কাজে হস্তক্ষেপ করতে চাই না। দুদক স্বাধীনভাবে কাজ করুক এটা আমরাও চাই। আপনাদের (দুদক) আগেও ব্যাংকের দুর্নীতি মামলায় সাবধান করেছি। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। অথচ অনেক মামলায় দেখেছি, আপনারা কোনো ব্যাক্তির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের নামার আগেই তাকে একটি নোটিশ দেন। অথচ পরে অনুসন্ধান করে দেখা যায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগই নেই। তাহলে কেন নোটিশ দিচ্ছেন? প্রায় দুই বছরেরও বেশি সময় একজন অপরাধী না হওয়া সত্ত্বেও জেল খাটতে হলো কেন? দুদককে স্বচ্ছ হতে হবে।
গত ২৮ জানুয়ারি ২৬ মামলায় ‘ভুল’ আসামি জেলে থাকার অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি ও মামলার বাদীসহ চারজনকে তলব করেছিলেন হাইকোর্ট। দুদক চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি, মামলার বাদী, স্বরাষ্ট্র সচিবের একজন প্রতিনিধি ও আইন সচিবের একজন প্রতিনিধিকে উপস্থিত থেকে এ ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।
এর আগে একটি জাতীয় দৈনিকে ‘৩৩ মামলায় ‘ভুল’ আসামি জেলে’ ‘‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না…” শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাসগুপ্ত। প্রতিবেদনটি উপস্থানের পর স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বিচারপতি নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দিয়েছিলেন।
আজ এ বিষয়ে শুনানিকালে আদালত আরও বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) একটি স্বাধীন সংস্থা। দুদক স্বাধীনভাবে কাজ করলে দেশের উন্নয়নের ধারা স্থায়ী হবে, নইলে দেশ পাকিস্তান হতে বেশি সময় লাগবে না, আমাদের ভিক্ষা করতে বসতে হবে।
আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান। ভুক্তভোগী জাহালমের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী অমিত দাস গুপ্ত।
শুনানির সময় দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা, মামলার বাদী জাহিদ, স্বরাষ্ট্র সুরক্ষা বিভাগে যুগ্ম সচিব ও আইন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব আদালতে হাজির হন।
শুনানিতে দুদক আইনজীবী খুরশীদ আলম খান ‘ভুল’ আসামি জাহালমের বিরুদ্ধে মামলা করা নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা (প্রসিকিউশন) ভুল করেছে বলে আদালতকে জানান।
দুদকের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, সোনালী ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তথ্য পাওয়ার পর আমরা আবু সালেকের (সত্যিকার আসামি) বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করি। এরপর ২০১২ সালের ১০ এপ্রিল আব্দুল্লাহ্ আল জাহিদ মামলার অনুসন্ধান করেন। পরে চার্জশিটে জাহালমের নাম উঠে আসে। টাঙ্গাইলের স্থানীয় চেয়ারম্যান জাহালমকে সনাক্ত করেন।
এ পর্যায়ে আদালত বলেন, এ মামলায় যাকে আসামি করা উচিত ছিল তাকে আসামি না করে সাক্ষী বানালেন। জজ মিয়া নাটক আরেকটি বানালেন নাকি?
এরপর আদালত তার আদেশে জাহালমের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ২৬ মামলায় অব্যাহতি প্রদান করেন।
প্রসঙ্গত, একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আবু সালেক নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির দায়ে ৩৩টি মামলা হয়েছে। কিন্তু আবু সালেকের বদলে জেল খাটছেন, আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন জাহালম। তিনি পেশায় পাটকলশ্রমিক।
জাহালমের কারাবাসের তিন বছর পূর্ণ হবে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি। পত্রিকাটি তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করে দুদক বলছে, জাহালম নিরপরাধ প্রমাণিত হয়েছেন। তদন্ত করে একই মত দিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও। ফলে একটি মামলায় তার জামিন হয়েছে। আরো ৩২টি মামলায় জামিন পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন তিনি।'