২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের হয়। বিস্ফোরক ও হত্যা আইনের দুই মামলার যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন রায়ের জন্য আজকের দিন ধার্য করেন।
২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় গ্রেনেড হামলা হয়। শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই এই হামলা হয়েছে বলে মামলার অভিযোগে উল্লেখ এবং আওয়ামী লীগ থেকে দাবি করা হয়। হামলায় সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেন বেশ কয়েকজন।
এ হামলার ঘটনায় বিএনপি নেতা তারেক রহমানসহ আসামির সংখ্যা ৫২জন। তবে ইতিমধ্যে তিনজন মারা যাওয়ার কারণে আজ ৪৯ আসামির বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করবেন আদালত।
আলোচিত এই মামলায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাম প্রথম দিকে ছিল না। এছাড়া ২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও নতুন তদন্ত ও চার্জশিটেও তার নাম আসামির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ফের এই মামলাটির তদন্ত শুরু করে সরকার। এসময় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, হারিছ চৌধুরী, জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদসহ ৩০ জনকে নতুন করে আসামি করে ২০১১ সালের ৩ জুলাই সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। এরপর দুই অভিযোগপত্রের মোট ৫২ আসামির মধ্যে তারেক রহমানসহ ১৮ জনকে পলাতক দেখিয়ে বিচার শুরু হয়।
তবে, মামলায় তারেক রহমানের নাম অন্তর্ভুক্তির বিষয়টিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রনোদিত হিসেবে দেখছে বিএনপি। দলটির দাবি, তারেক রহমানের জনপ্রিয়তা ঈর্ষান্বিত এবং বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার প্রয়াসে দলের ভাইস চেয়ারম্যানকে এই মামলায় আসামি করা হয়েছে।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলার তদন্ত ও আসামি নিয়ে বিএনপি জোট সরকার আমলে ‘জজ মিয়া’ নাটকে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ভিন্নখাতে নিতে চেষ্টা হয়। নষ্ট করা হয় হামলার আলামত। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে নতুন করে তদন্ত শুরু হলে মামলার অনেক অজানা তথ্য বেরিয়ে আসে। উদঘাটিত হয় ‘জজ মিয়া’ নাটকও।
মামলায় অভিযোগে বলা হয়, শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ২১ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ওই হামলা চালানো হয়। হামলায় অংশ নেয় হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশের (হুজি) জঙ্গিরা।
মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- তারেক রহমান, লুৎফুজ্জামান বাবর, হারিছ চৌধুরী, জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, সাবেক সাংসদ শাহ মোহাম্মদ কায়কোবাদ, খালেদা জিয়ার ভাগনে সাইফুল ইসলাম (ডিউক), এনএসআইয়ের সাবেক দুই মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আবদুর রহিম ও মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার, ডিজিএফআইয়ের মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আমিন ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল (বরখাস্ত) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, পুলিশের সাবেক তিন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক ও খোদা বকশ চৌধুরী, সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি খান সাইদ হাসান ও মো. ওবায়দুর রহমান, জোট সরকারের আমলে মামলার তিন তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান ও এএসপি আবদুর রশিদ, হানিফ পরিবহনের মালিক মো. হানিফ এবং হুজি-বির ১০ জন নেতা।
বর্তমানে বাবর, পিন্টুসহ ২৩ আসামি কারাগারে আটক। পলাতক রয়েছেন ১৮ জন।
আসামি জামায়াত নেতা মুজাহিদ, মুফতি হান্নানসহ তিন আসামির অন্য মামলার রায়ে ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।