চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ২২ সেপ্টেম্বর (ইউএনবি)- চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাণিজ্যিকভাবে পুষ্টিগুণসম্পন্ন ভিনদেশি ফল ড্রাগন চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। জেলার বরেন্দ্র অঞ্চল নাচোল উপজেলার কেন্দবোনা মাঠে রফিকুল ইসলাম ও তার তিন বন্ধু পরীক্ষামুলকভাবে ড্রাগন ফলের চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। এখন তারা স্বপ্ন দেখছেন আরো বড় পরিসরে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ড্রাগন চাষের।
কয়েক বছর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিউব থেকে ড্রাগন ফলের বিষয়ে জানতে পেরে এ ফল চাষে আগ্রহী হন চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার বালুগ্রামের রফিকুল ইসলাম। পরে কৃষি বিভাগ ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে ৪ বন্ধু মিলে নাচোল উপজেলার কেন্দবোনা মাঠে ৬ কাঠা জমিতে গড়ে তুলেছেন ড্রাগন ফলের বাগান। বাগানে রয়েছে ৩০০ ড্রাগনের গাছ।
রফিকুল ইসলাম বলেন, এই বাগান গড়তে তাদের ব্যয় হয়েছে এক লাখ টাকা। প্রথম বছর তেমন ফলন না হলেও পরের বছর ভালো ফলন আসে। এতে করে বাগানে যে ব্যয় হয়েছে তার প্রায় পুরোটাই উঠে আসে।
হর্টিকালচার সেন্টার, চাঁপাইনবাবগঞ্জের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. মো. সাইফুর রহমান বলেন, ২০১০ সালে আমরা আমাদের সেন্টারে ড্রাগন ফলের পরীক্ষামুলক চাষ করে সফলতা পাই। এ জেলার মাটি ও আবহাওয়া ড্রাগন চাষের উপযোগী। বিদেশে যে ধরনের ড্রাগন পাওয়া যায় তার চেয়ে এখানকার ড্রাগন স্বাদেগুণে কোনো অংশে খারাপ নয়।
ড্রাগন চাষ লাভজনক উল্লেখ করে তিনি বলেন, মে মাস থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ড্রাগন পাওয়া যায়। আর সেপ্টেম্বর অক্টোবর মাসে দেশীয় ফল বাজারে তেমন পাওয়া যায় না, তখন ড্রাগন পাওয়া যায়। এতে করে চাষীরা এ ফলের ভালো দাম পান।
ড্রাগন চাষী রফিকুল ইসলাম বলেন, ড্রাগন চাষ লাভজনক। উৎপাদন খরচও কম। এ বছরই বাগানে বিনিয়োগ করা এক লাখ টাকা উঠে আসবে তাদের।
এই উদ্যোক্তা আরো জানান, ড্রাগন চাষ পদ্ধতিও সহজ। ড্রাগনের একটি ডগা মাটিতে লাগালেই এর গাছ হয়ে যায়। ঠিকতম পরিচর্যা, জৈব সার ব্যবহার করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। এর রোগ বালাইও কম, যার কারণে কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না।
ক্যাকটাসের মতো দেখতে এই গাছগুলো ২০ থেকে ৩০ বছর একাধারে ফল দিয়ে থাকে। প্রতিটি গাছে ২৫ থেকে ৩০টি ড্রাগন ফল ধরে। দেশে ড্রাগন ফল নতুন হলেও এর চাহিদা রয়েছে। প্রতি কেজি ড্রাগন ফল ৩০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়ে থাকে বলে জানালেন এর সাথে জড়িতরা।
রফিকুল ইসলামের ব্যবসায়ী বন্ধু নুরে আলম সিদ্দিকী বাবু জানান, এ ফল দেখতে যেমন সুন্দর, খেতেও তেমন সুস্বাদু। দেশে নতুন হলেও দিন দিন ড্রাগনের চাহিদা বাড়ছে।
তিনি বলেন, আমরা এই ড্রাগন ফল ঢাকায় বাজারজাত করি। সেখানে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে এ ফল বিক্রি করে থাকি।
এলাকায় প্রথম ড্রাগন ফলের বাগান দেখতে আসছেন অনেকে। উচ্চমূল্যের এই ফসল চাষের সাফল্যে অনেকেই স্বপ্ন দেখছেন ড্রাগন আবাদের। এমনই একজন জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট পুকুরিয়ার মনিরুজ্জামান জানালেন, আমার বন্ধু রফিকুলের ড্রাগন ফলের বাগান দেখে আমি খুবই উৎসাহিত, এ ধরনের ড্রাগন ফলের বাগান আমার এলাকায় করার ইচ্ছা আছে আমার।
কৃষিবিদ ড. মো. সাইফুর রহমান বলেন, ড্রাগন ফল অত্যন্ত পুষ্টিকর। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট সহায়ক।
প্রদর্শনী খামার ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উচ্চমূল্যের এই ফল আবাদে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে বলে জানালেন এই কৃষি কর্মকর্তা।