অভিযোগ রয়েছে, জটিল ও মুমূর্ষু অনেক রোগীও জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকদের সেবা পাচ্ছেন না। এমনকি করোনায় চিকিৎসা দেয়ার জন্য জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকদের রোস্টার করা হলেও তাদের দু-একজন ছাড়া কেউ না মানেননি। সহকারী অধ্যাপক বা কনসালটেন্ট পদমর্যাদার কয়েকজন চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হলেও তাদের কেউ এ সংক্রান্ত দায়িত্বে ছিলেন না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধিকাংশ জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক নিয়মিত আসেন না। অন্যদিকে, সদর করোনা হাসপাতালের চিকিৎসকদের ডিউটি রোস্টার বিশ্লেষণ করে দেখা যায় দু-একজন ছাড়া বেশির ভাগ চিকিৎসকই ৩৯তম বিসিএসের মাধ্যমে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত নতুনরা। তাদের সাথে দু-একজন মধ্যম সারির চিকিৎসক রয়েছেন। চিকিৎসকদের মধ্যে যারা বর্তমানে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে আছেন তাদের মধ্যে একজন মধ্যম সারির চিকিৎসক এবং বাকিরা সবাই সম্প্রতি নিয়োগপ্রাপ্ত নতুন।
হাসপাতাল সূত্রে পাওয়া জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকদের একটি রোস্টার সম্প্রতি করোনা হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া একাধিক ব্যক্তিকে দেখানো হলে তারা নিশ্চিত করেছেন যে এ জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকরা সেখানে যাননি। কোনো রোগীর সাথে ভিডিও কনফারেন্সেও কথা বলেননি।
এদিকে, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন সেন্টারের রোস্টারেও সবাই নতুন চিকিৎসক। শুধুমাত্র মধ্যম সারির একজন চিকিৎসককে সহকারী রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব দেয়া রয়েছে।
খুমেক হাসপাতাল ও সদর হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে রোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সিনিয়র চিকিৎসক অর্থাৎ আগে যেমন বিভাগীয় প্রধান বা অধ্যাপক পদমর্যাদার চিকিৎসকরা রাউন্ড দিতেন, তারা এখন আর কেউ তেমন ওয়ার্ডে আসেন না। ফলে জটিল ও মুমূর্ষু অনেক রোগীর অপারেশনসহ প্রতিদিনকার অপারেশনও বন্ধ রয়েছে।
খুমেক হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, মধ্যম সারির চিকিৎসকরাই এককভাবে হাসপাতাল চালাচ্ছেন। বিশেষ করে সহকারী রেজিস্ট্রার পদমর্যাদার চিকিৎসকরাই বেশিরভাগ রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। কিন্তু প্রতিদিন কনসালটেন্ট বা অধ্যাপক মর্যাদার চিকিৎসকদের যে রাউন্ড হত এখন তা হচ্ছে না বলে রোগীরা জানিয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, খুমেকের রেডিওলোজি বিভাগের কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এক্সরে, সিটিস্ক্যান এবং আলট্রাসনো বিভাগের বেশির ভাগ চিকিৎসকই হাসপাতালে আসেন না। ফলে মেডিকেল টেকনোলোজিস্টরাই চালিয়ে নিচ্ছেন যাবতীয় কার্যক্রম। যে কারণে হরহামেশাই ভুল হচ্ছে। সম্প্রতি এক পুলিশ সদস্যের এক্সরে প্লেটে ভুল হলে তা ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র।
এছাড়া সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক, গাইনি ওয়ার্ডের বিভাগীয় প্রধানসহ জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকরা ওয়ার্ডে যান না বলে জানিয়েছেন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রোগী ও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মচারী।
তবে, খুমেকের অধ্যক্ষ ডা. আব্দুল আহাদ, উপাধ্যক্ষ ডা. মোহদী নেওয়াজ, সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, ডা. খসরুল আলম মল্লিকসহ করোনা চিকিৎসার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাথে সরাসরি জড়িত কয়েকজন চিকিৎসক নিয়মিত হাসপাতালে আসেন বলে জানা গেছে।
বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ওয়ার্ডে একজন মাত্র চিকিৎসক থাকায় বিভাগীয় প্রধান ডা. তরিকুল ইসলাম নিয়মিত রোগী দেখছেন বলেও জানান ওয়ার্ডের রোগীরা।
এছাড়া জ্যেষ্ঠ কয়েকজন চিকিৎসক কলেজে নিয়মিত আসলেও হাসপাতালে তাদের দেখা যায় না।
তবে রোগীদের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে উপাধ্যক্ষ ডা. মেহেদী নেওয়াজ বলেন, ‘করোনা চিকিৎসায় সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একই সাথে সব চিকিৎসক হাজির না হয়ে তালিকা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া মধ্যম সারির চিকিৎসক যারা বিভিন্ন ওয়ার্ডের দায়িত্বে রয়েছেন তারা সংশ্লিষ্ট বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের সাথে আলাপ আলোচনা করেই রোগী দেখছেন।