অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল আলমের যোগসাজশে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে অনুপস্থিতির বিষয়টি গোপন রেখে ভুয়া ছুটি দেখিয়ে তিনি এক বছর চার মাস ধরে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বিদ্যালয়ের কয়েকজন সহকারী শিক্ষকের অভিযোগ, উপজেলার দক্ষিণ কেওয়াবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মেহেরুন নেছা ২০১০ সালে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকেই প্রধান শিক্ষক নুরুল আলমের সাথে আতাত করে বিদ্যালয়ে না এসে প্রায়ই হাজিরা সিটে স্বাক্ষর করতেন। গেল বছর ৫ মার্চ থেকে ২৯ আগস্ট পর্যন্ত তিনি ৬ মাসের চিকিৎসা ছুটি নেন। ছুটির মধ্যে প্রধান শিক্ষক নিজ হাতে হাজিরা খাতায় জাল স্বাক্ষর দিয়ে ওই শিক্ষিকাকে উপস্থিত দেখিয়েছেন।
তারা আরও জানান, ছয় মাসের ছুটি শেষ হতেই আবার মেহেরুন নেছা ওই বছর ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চার মাসের চিকিৎসা ছুটি নেন। ৩১ ডিসেম্বর তার ছুটির মেয়াদ শেষ হয়। এ বছর তিনি বিদ্যালয়ে যোগদান না করে ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত পুনরায় চিকিৎসা ছুটি নেন। ২০১৮ সালের মার্চ মাস থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত তিনি এক বছর চার মাস চিকিৎসা ছুটি কাটিয়েছেন। এক বছর চার মাস চিকিৎসাকালীন ছুটির মধ্যে আবার প্রধান শিক্ষক নুরুল আলম ছয় দিন অনুপস্থিত লিখে রেখেছেন। বিদ্যালয় হাজিরা খাতায় চিকিৎসা ছুটি লেখা থাকলেও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে কোনো ছুটির আবেদন নেই। প্রধান শিক্ষকের সাথে যোগসাজশে বিদ্যালয়ে ভুয়া ছুটি দেখিয়ে ওই শিক্ষিকা এক বছর চার মাস ধরে অনুপস্থিত রয়েছেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল আলম ওই শিক্ষিকারর বিদ্যালয়ে আসার গাফলতির কথা স্বীকার করে বলেন, গত বছর মার্চ মাসে সে অসুস্থ হয়ে পরেন। এরপর তার স্বামী এসে নিয়ে গেছেন। পরে আমাকে জানিয়েছেন সে চিকিৎসা ছুটিতে আছেন। এরপর থেকে সে আর বিদ্যালয়ে আসেননি। সে বিদ্যালয়ে না আসায় তাকে দুবার শোকজ করা হয়েছে। শোকজেরও কোন জবাব দেননি তিনি। পরে বিষয়টি প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে জানানোর পরে তিনি বিদ্যালয়ে পরিদর্শন করে তার বেতনভাতা বন্ধ করে দিয়েছেন।
তবে চিকিৎসা ছুটির মধ্যে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর ও অনুপস্থিত লেখার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক এর কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
আমতলী উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের মার্চ থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে মেহেরুন নেছা কোনো চিকিৎসা ছুটির আবেদন করেননি। তিনি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবহিত না করে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন। কিন্তু বিদ্যালয়ের মাসিক রিটার্ন ফরমে তার স্বাক্ষরসহ প্রধান শিক্ষক নুরুল আলম প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে জমা দিয়েছেন। ওই অনুসারে প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ওই শিক্ষকের বেতন ভাতা ছাড় দিয়েছেন।
মেহেরুন নেছা ভুয়া চিকিৎসা ছুটি দেখিয়ে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি আমতলী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান এ বছর জানুয়ারি মাসে অবগত হন। পরে তিনি ওই বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন। শিক্ষা অফিসার তদন্ত সাপেক্ষে প্রধান শিক্ষক নুরুল আলম ও মেহেরুন নেছাকে বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন কেন অনুপস্থিত তার জবাব চেয়ে শোকজ করেন। কিন্তু মেহেরুন নেছা শোকজের কোনো জবাব দেননি।
এ বিষয়ে জানতে সহকারী শিক্ষিকা মেহেরুন নেছা সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।