তেমনি ভারতের বেঙ্গালুরুর এক তরুণীর ভালবাসার গল্প, যা হার মানিয়েছে নানান সিনেমার কাহিনীকেও। তার গোটা কাহিনীই যেন একটা ক্রাইম কমেডি।
তরুণীর নাম প্রিয়াঙ্কা পরসানা। বয়স ২০ বছর। বাবা- মার সাথে বেঙ্গালুরুতে থাকেন। তার বাবা একজন ধনী ব্যবসায়ী। তিনি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সি নিয়ে পড়াশোনা করছেন। প্রাইভেট টিউশনে গিয়ে তাঁর আলাপ হয় হেট শাহ নামের এক যুবকের সঙ্গে। হেটও একই বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করছেন। গল্পের সূত্রপাত হয় এখান থেকেই। খবর আনন্দবাজারের।
হেট চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সি নিয়ে পড়লেও তাঁর ইচ্ছা পাইলট হওয়ার। কিন্তু পাইলটের ট্রেনিংয়ের জন্য ২০ লাখ টাকার প্রয়োজন। সেটা বাড়িতে জানাতে পারছিলেন না হেট। তা ছাড়া এতো টাকাও বাড়িতে চাওয়ার মতো সাধ্যও ছিল না তাঁর।
ইতিমধ্যেই হেট ও প্রিয়ঙ্কার প্রেম বেশ পাকা পোক্ত হয়ে উঠেছে। আর সেই সুযোগেই প্রেমিকার কাছে নিজের মনের কথাটা বলে ফেলেন হেট। প্রেমিকের কথা শুনে প্রেমিকা ভাবলেন যে তাঁকে যে করে হোক প্রেমিকের কথা রাখতে হবে।
কিন্তু ঝামেলাটা হল প্রেমিককে পাইলট বানানোর জন্য এত টাকা কোথায় পাবেন? এই চিন্তায় বিভোর হয় পড়েন প্রিয়াঙ্কা। তখনই এক ফঁন্দি মাথায় আসে তাঁর। টাকা যদি জোগাড় করতেই হয় তা হলে নিজের বাড়ি থেকেই করবে। সোজা পথে তা পাওয়া যাবে না জানতেন তিনি, তাই বেছে নিলেন বাঁকা পথটাই । নিজের বাড়িতেই ডাকাতি করলেন প্রিয়াঙ্কা।
গত ২৯ নভেম্বর প্রিয়াঙ্কার বোনকে নিয়ে বাইরে ঘুরতে গিয়েছিলেন তাঁর মা। বাড়িতেই ছিলেন প্রিয়াঙ্কা। এই সুযোগটাকে হাতছাড়া করতে চাইলেন না তিনি। আলমারি খুলে সোনার-রুপোর গয়না, নগদ টাকা একটা ব্যাগে ভরে নেন। তারপর বাড়ির ভিতরে ভাঙচুর চালান। আলমারি ওলটপালট করে রাখেন। ঘরদোর অগোছালো করে দেন। যেন দেখলেই মনে হয় বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে।
এরপর দুপুর দেড়টা নাগাদ ঘর থেকে বেরিয়ে যান প্রিয়াঙ্কা। আড়াইটা নাগাদ তাঁর বাবা বাড়িতে ফিরেই চমকে ওঠেন। দেখেন ঘরদোর ওলটপালট হয়ে রয়েছে। সে সময় বাড়িতে প্রিয়াঙ্কা না থাকায় তিনি ধরেই নেন যে বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে। পুলিশেওেএ বিষয়ে একটা অভিযোগ দায়ের করেন।
পরে ১ ডিসেম্বর প্রিয়ঙ্কার মা বাড়িতে ফিরলে সোনাদানা হারানোর বিষয়টিও সামনে আসে। তদন্তে নেমে ক্রাইম ব্রাঞ্চের অফিসাররাও চমকে ওঠেন। তাঁরা সব খতিয়ে দেখে বুঝতে পারেন, বাইরের কেউ নয়, চোর ওই ঘরেরই কেউ। তদন্ত আরও এগোলে বিষয়টা আরও স্পষ্ট হয়।
শুক্রবার তদন্তকারীদের হাতে উঠে আসে আসল কাহিনি। তাঁরা জানিয়ে দেন, বাইরের কেউ নয়, চুরি করেছেন প্রিয়াঙ্কাই। কথাটা শুনে যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না প্রিয়ঙ্কার বাবা-মা।
তদন্তকারীরা জানান, তাদের সন্দেহটা হয় কয়েকটা বিষয় দেখে। প্রথমত, বাইরের কেউ ডাকাতি করলে দরজা বা তালা ভাঙা থাকত। এ ক্ষেত্রে সে রকম জোর করে ঢোকার কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। দ্বিতীয়ত, আলমারি ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে খোলা হয়েছিল। তদন্তকারীরা জানান, ৩ কেজি সোনা, ২ কেজি রুপো এবং নগদ ৬৪ হাজার টাকা চুরি করেছিলেন প্রিয়াঙ্কা। সব মিলিয়ে এর মূল্য প্রায় এক কোটি টাকা।
তদন্তকারীরা সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখেন। প্রিয়ঙ্কাকে জেরা করতেই অসংলগ্ন কথা বলতে থাকেন তিনি। তখনই সন্দেহটা আরও গাঢ় হয় তাঁদের। রাজকোট পুলিশ কমিশনার মনোজ আগরওয়াল জানান, জেরায় প্রিয়ঙ্কা জানিয়েছেন তাঁর প্রেমিকের স্বপ্নপূরণ করতেই এ কাজ করেছেন তিনি।
পরে প্রেমিক হেটের বাড়িতেও হানা দেয় পুলিশ। সেখান থেকেই গয়না ও টাকা উদ্ধার হয়। হেট পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি এবং প্রিয়ঙ্কা ডাকাতির ফন্দি এঁটেছিলেন।