জীবনযুদ্ধ: আহমদ জুলকারনাইন জন্মেছিলেন ইন্দোনেশিয়ার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। অন্য অনেক শিশুর মতো স্বাভাবিক জন্ম হয়নি তাঁর। জন্মলগ্ন থেকেই সে শারীরিক বিকলাঙ্গ। তাই ছোট থেকেই তাকে কঠিন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে বেড়ে উঠতে হয়েছে। দেখতে দেখতে পার করলেন জীবনের ২৫টি বছর। পঁচিশ বছরের এ যুবকের হাত-পা না থাকায় বাল্যকাল থেকেই সংগ্রাম আর প্রত্যয়ই তার নিত্যসঙ্গী।
প্রতিবন্ধকতা জয়: সহস্র প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে জীবনযুদ্ধে সফল হয়েছেন জুলকারনাইন। ছোটবেলা থেকেই পরিবারের তাকে নিয়ে ছিল নানা চিন্তা। কী করবে সে? তার তো হাত-পা নেই, তবে কী ছেলের ভবিষৎ অন্ধকার? এমন নানা প্রশ্ন মাথায় নিয়ে বিষন্ন হয়ে পড়তো পিতামাতা ও আত্মীয় স্বজনরা। কেউ কেউ তাকে প্রতিবন্ধী বলে মশকরা করতো। এতে সে ভীষণ কষ্টও পেতো মনে। কিন্তু সব কিছুর ঊর্ধ্বে যে ইচ্ছাশক্তি, প্রবল মনোবল আর আত্মবিশ্বাসের এক জলন্ত উদাহরণ হতে চলেছে জুলকারনাইন, সে চিন্তাটা বোধহয় তার পিতামাতা কেনো কেউই চিন্তা করার কথা নয়। অথচ সব কিছুকে উপেক্ষা করে, জীবনের প্রতিটি প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে তিনি পৌঁছেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। বিকলাঙ্গ হয়েও চমৎকার সব ছবি তুলে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। রীতিমত ছবি তোলার গুরুর খেতাব পেয়েছেন ২৫ বছরের দূরন্ত বালক জুলকারনাইন।
যেভাবে এলেন ফটোগ্রাফিতে: এক সময় স্থানীয় একটি ইন্টারনেট ক্যাফেতে কাজ করতেন জুলকারনাইন। সেখানে ছিল একটি ফটোগ্রাফি সার্ভিসও। প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ ক্যাফেটিতে ছবি তুলতে আসতেন। আর তা দেখেই ছবি তোলার প্রেমে পড়েন তিনি। পরিবার ততটা স্বচ্ছল ছিল না তাঁর। আর তাই ক্যামেরা কেনার টাকাও ছিল না। একটা সময় ধার করা টাকা দিয়ে ক্রয় করেন একটি ক্যামেরা এবং নেমে পড়েন ছবি তোলার কাজে। প্রথম প্রথম নিজের এলাকার ভোটার আইডি কার্ডের ছবি তুলতেন তিনি। এক সময় পেশাদার ফটোগ্রাফার হয়ে উঠেন। শুধু সমতলেই ছবি তোলেন না তিনি, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৮০০ মিটার উঁচুতেও ছবি তুলেছেন। একবার নাকি একটি জলপ্রপাতের ছবি তুলতে গিয়ে পাহাড় থেকে নিচে পড়ে যাওয়ার একটা বাজে অভিজ্ঞতা হয়েছিল তাঁর। ভাগ্যিস বেঁচে গেলেও পেয়েছিলেন চোট।
জুলকারনাইন এখন কোম্পানির মালিক: ভালবাসা থেকে শুধু মাত্র শখের বসে যে ছবি তোলা শুরু করেছিলেন তিনি তা-ই এখন তাঁর পেশা হিসাবে দাঁড়িয়েছে। গড়ে তুলেছেন নিজের কোম্পানি। নাম দিয়েছেন ‘ব্যাঙ ডেজোয়েল’। বিভিন্ন দেশি-বিদেশি গনমাধ্যমেও তাঁর তোলা ছবি ছাপা হচ্ছে। আলজাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে জুলকারনাইন বলেন, “যদি সেরা হতে চাও, তাহলে তোমার সীমাবদ্ধতাকে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দেও। তুমি যা করো সেখানে সেরা হতে তোমাকে নিখুঁত হতে হবে না।”
তাঁর ছবি এখন ভাইরাল: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁর ছবি এখন ভাইরাল। হাত-পা না থেকেও যে এত ভাল ছবি তুলতে পারেন সেজন্যই রাতারাতি তাঁর দৃষ্টিনন্দন ফটোগ্রাফিগুলো ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী। তাকে এখন পুরো বিশ্বের মানুষই চিনে এক নামে। ফেসবুক, টুইটার থেকে শুরু করে সমস্ত সামাজিক মাধ্যমেই তাকে নিয়ে চলে আলোচনা। যে ছেলেটির জীবন নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিল তাঁর পরিবার ,সে ছেলেটিই এখন অনেক বিজ্ঞ লোকের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তার কথায় ফুটে উঠে অনুপ্রেরণা: যারা ফটোগ্রাফি শিখতে চান, তাঁদের ও সাহায্য করতে চান জুলকারনাইন। তিনি বলেন, যারা স্বাভাবিক, শুধু তাদের কাছ থেকেই নয়- যারা ভিন্নভাবে সক্ষম তাঁদের কাছ থেকেও অনুপ্রেরণা নেয়ার মতো অনেক কিছু রয়েছে। তিনি বলেন, আমি আমার সীমাবদ্ধতা নিয়ে গর্বিত। আমি ডিজাবলড; কিন্তু পরাজিত নই।