শনিবার রাজধানীতে বিএনপি আয়োজিত এক জনসভায় সিনিয়র নেতারা অংশগ্রহণমূলক ও অর্থবহ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সরকারের কাছে দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ সব রাজনৈতিক বন্দীর বিরুদ্ধে থাকা ‘মিথ্যা মামলা’ প্রত্যাহার ও তাদের মুক্তির দাবি জানান।
বিএনপির ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের শত শত নেতা-কর্মী রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমি সর্বস্তরের জনগণ, সব গণতান্ত্রিক দল ও সংগঠনের প্রতি আহ্বান জানাতে চাই, আসুন সব ভেদাভেদ ভুলে ও দ্বন্দ্ব সরিয়ে রেখে দেশ ও গণতন্ত্রকে রক্ষা করি।’
খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়ে গেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি যে একটি জাতীয় ঐক্য হবে। যারা জাতীয় ঐক্য গড়ার কাজ করছেন তাদের স্বাগত জানাই। স্বৈরাচারী সরকারকে পরাজিত করে জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য বৃহত্তর ঐক্য গড়তে আমরা তাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।’
ফখরুল আরো বলেন, গুরুতর অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার জন্য তাকে মুক্তি দিতে সরকারকে অবশ্যই পদক্ষেপ নিতে হবে।
সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে আগামী নির্বাচন আয়োজনের জন্য দলের কিছু দাবি পুনরায় তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে অবশ্যই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে এবং নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে।’
সেই সাথে তিনি সেনাবাহিনীকে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব দেয়ার দাবি জানান।
ফখরুলের অভিযোগ, সরকারের সাথে জনগণ না থাকায় তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে নানা পরিকল্পনা করছে। ‘জনগণ তাদের রক্ষা করবে না বলে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে তারা এখন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের চেষ্টা করছে। জনগণ আওয়ামী লীগকে ত্যাগ করেছে এবং এটি এখন রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া দলে পরিণত হয়েছে।’
জনসভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকার আরেকটি একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রাখতে ভোটে ইভিএম ব্যবহারের ষড়যন্ত্র করছে। জনগণ ক্ষমতাসীন দলের কোনো ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন এবং ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি নির্বাচন মেনে নেবে না বলে হুঁশিয়ারিও দেন তিনি।
সরকার আগামী নির্বাচন থেকে বিএনপি ও খালেদা জিয়াকে দূরে সরিয়ে রাখতে তাকে অন্যায়ভাবে কারাগারে বন্দী করে রেখেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করা বিএনপির জন্য পরীক্ষা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ তাকে স্বেচ্ছায় ছেড়ে দেবে না। আমাদের কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে তাকে মুক্ত করতে হবে।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যাতে নির্বাচনের সময় জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারে সে জন্য তাদের পক্ষপাতমূলক মনোভাব পরিবর্তন করার আহ্বান জানান মোশাররফ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করা সম্ভব হবে না। ‘রাস্তায় আন্দোলন হলো তাকে কারাগার থেকে মুক্ত করার একমাত্র উপায়।’
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে সরকারকে অবশ্যই সংসদ ভেঙে দিতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সংসদ কার্যকর রেখে সংসদ নির্বাচন করা বিশ্বে নজিরহীন।’
জাতীয় ঐক্যের চেষ্টা করা ড. কামাল হোসেন ও বি চৌধুরীসহ অন্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে মওদুদ বলেন, আমরা জাতীয় ঐক্য গঠন করে আন্দোলন শুরু এবং দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করব।’
কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলকারীদের সরকার যেভাবে নিপীড়ন করেছে সে জন্য তরুণ প্রজন্ম কখনো আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে না বলে মন্তব্য করেন এ বিএনপি নেতা।
সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ।