ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং জড়িত জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওছমান গণি পাঠানসহ অন্য চার পুলিশ সদস্যের কঠিন শাস্তির দাবিতে রাজপথে নেমেছে ক্ষুব্ধ জনতা। তাদের শাস্তির দাবিতে মঙ্গলবার নগরীর পিকচার প্যালেস মোড়ে নাগরিক সংগঠন ‘জনউদ্যোগ’ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।
এ সময় নাগরিক সংগঠনের নেতারা বলেন, রেলওয়ে পুলিশ রেলের যাত্রীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থার পরিবর্তে একজন নারীকে থানায় আটকে রেখে ওসিসহ পাঁচ পুলিশ ধর্ষণ করেছে, এর চেয়ে আর জঘন্য কোনো কাজ হতে পারে না। তাই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তদন্তের সুবিধার্থে অভিযুক্তদের স্বপদ থেকে সরিয়ে দিতে হবে। কোনোভাবে যেন আসামিরা এই অভিযোগটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে না পারে সেদিকে নজর রাখতে হবে। গণধর্ষণকারীরা যেন কোনোমতে পালিয়ে না যেতে পারে তার জন্য প্রশাসনকে সজাগ থাকতে হবে।
এদিকে এ ঘটনায় রেলওয়ে পুলিশের কুষ্টিয়া সার্কেলের সিনিয়র এএসপি ফিরোজ আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি মঙ্গলবার দুপুর থেকে তদন্ত শুরু করেছে। তবে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত থানায় সাংবাদিকরা উপস্থিত থাকলে ওসির রুম তখনও তালাবদ্ধ ছিল। এ সময় পরিদর্শক রুমের বাইরে তালা ঝুললেও জানালা দিয়ে দেখা যায় ভেতরে ওসি অবস্থান করছেন। সেখান থেকে তার বক্তব্য নেয়ার চেষ্টা করা হলে তিনি পর্দার আড়ালে মুখ লুকান। এমনকি ওইদিন রাতে যারা থানায় কর্তব্যরত ছিলেন এবং যাদের নামে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে তারা গত দুদিন ডিউটিতে আসেননি বলে থানা সূত্রে জানা গেছে।
তদন্ত কমিটির প্রধান এএসপি ফিরোজ আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, তারা থানার পুলিশ সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং সাক্ষ্য গ্রহণ করছেন। ‘ওই নারীকে ফুলতলা থেকে ৫ বোতল ফেনসিডিলসহ আটক করা হয়েছিল।’ সেই ঘটনাস্থলও তারা পরিদর্শন করবেন। এছাড়া তারা অভিযোগকারীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও কথা বলবেন।
সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আদালত থেকে তারা কোনো কাগজপত্র বা নির্দেশনা পাননি। অভিযোগ প্রমাণ হওয়ার আগে কারও বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। নির্দেশনা অনুযায়ী সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ওসির সাংবাদিকদের এড়িয়ে যাওয়া ঠিক হয়নি। তার বক্তব্য মিডিয়ার কাছে তুলে ধরার উচিত ছিল।
উল্লেখ্য, গত ২ আগস্ট যশোর থেকে ট্রেনে খুলনায় আসার পথে খুলনা রেলস্টেশনে কর্তব্যরত জিআরপি পুলিশের সদস্যরা ওই গৃহবধূকে মোবাইল চুরির অভিযোগে আটক করে। পরে গভীর রাতে জিআরপি থানার ওসি উছমান গণি পাঠানসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য তাকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ ওঠে। পরদিন শনিবার তাকে ৫ বোতল ফেনসিডিলসহ একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে খুলনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত ফুলতলায় পাঠানো হয়। ৪ আগস্ট আদালতে জামিন শুনানিকালে জিআরপি থানায় গণধর্ষণের বিষয়টি আদালতের সামনে তুলে ধরেন তিনি। এরপর আদালতের নির্দেশে গত সোমবার তার ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়।
ভুক্তভোগী নারীর পরিবার অভিযোগ করেছে, ধর্ষণের ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ওসি ওসমান গনি মোটা অংকের টাকা দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। সমঝোতায় রাজি না হওয়ায় হুমকিও দেয়া হচ্ছে বলে জানান তারা।
এ ঘটনায় পাকশী রেলওয়ে জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের নির্দেশে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
এদিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ও ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের (ওসিসি) সমন্বয়কারী ডা. অঞ্জন কুমার চক্রবর্তী জানান, ডাক্তারি পরীক্ষা শেষে ওই নারী এখন কারাগারে। নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় ডিএনএ ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে রিপোর্ট আসতে এক মাস সময় লাগতে পারে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ওসি উছমান গণি পাঠান বলেছেন, ‘ওই নারীকে ট্রেন থেকে ৫ বোতল ফেনসিডিলসহ হাতেনাতে আটক করে মামলা দেয়া হয়। সে কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে সে এবং তার পরিবার ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগ করছে।’