এশিয়া
এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনা: যেসব প্রশ্নের উত্তর এখনও অজানা
ভারতের আহমেদাবাদে গত ১২ জুন লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়ার এআই১৭১ ফ্লাইটটি (বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার) আকাশে ওড়ার অল্প সময়ের মধ্যেই একটি আবাসিক এলাকায় বিধ্বস্ত হয়। এটি ছিল গত এক দশকের সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা।
ওই দুর্ঘটনায় বিমানে থাকা ২৪২ জনের মধ্যে ২৪১ জনই নিহত হন। তাছাড়া, যে এলাকায় বিমানটি বিধ্বস্ত হয়, সেখানকারও ১৯ জন নিহত হন।
এই দুর্ঘটনায় ভারতের এয়ারক্রাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরোর (এএআইবি) প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। ফ্লাইটটি উড্ডয়নের কয়েক সেকেন্ড পরই জ্বালানি শেষ হয়ে গিয়েছিল বলে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
তবে এই তদন্তে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর মিললেও নতুন করে আরও অনেক প্রশ্নও উঠেছে।
প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে, বিমানটি স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ৩৮ মিনিট ৪২ সেকেন্ডে ১৮০ নট ইন্ডিকেটেড এয়ারস্পিড (আইএস) গতি অর্জন করে। ঠিক তার পরপরই ইঞ্জিন ১ এবং ইঞ্জিন ২–এর জ্বালানি সরবরাহ সুইচগুলো ‘রান’ থেকে ‘কাট-অফ’ অবস্থায় চলে যায়। এটি মাত্র এক সেকেন্ডের ব্যবধানে এই অবস্থায় চলে যায়। এর ফলে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে ইঞ্জিন দুটির এন১ ও এন২ মান কমতে শুরু করে।
প্রতিবেদন আরও জানানো হয়েছে, রানওয়ের সীমানা প্রাচীর অতিক্রম করার আগেই বিমানটির উচ্চতা কমতে শুরু করে। ককপিট ভয়েস রেকর্ডার থেকে জানা গেছে, এক পাইলট অপর পাইলটকে ওই সময় জিজ্ঞেস করেন, ‘তুমি কেন জ্বালানি বন্ধ করলে?’ জবাবে অপর পাইলট বলেন যে, তিনি জ্বালানি বন্ধ করেননি।
তবে ওই দুই পাইলটের মধ্যে মূল পাইলট এবং কে সহকারী পাইলট ছিলেন—প্রতিবেদনে তা স্পষ্ট করা হয়নি।
প্রতিবেদনের একটি অংশে বলা হয়, ইঞ্জিন-১ কাট-অফ হওয়া সত্ত্বেও কিছুটা পুনরুদ্ধার শুরু করেছিল, তবে ততক্ষণে বিমানের গতি কমে যাওয়ায় তা আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইঞ্জিন ১–এর ‘কোর ডেসিলারেশন’ বন্ধ হয়ে উল্টো ঘুরে গিয়ে কিছুটা পুনরুদ্ধার শুরু করে, তবে ইঞ্জিন ২ ‘রিলাইট’ (পুনরায় চালু) হলেও গতি কমা ঠেকাতে পারেনি।
এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে দুর্ঘটনার মূল কারণ হিসেবে ইঞ্জিনে ‘জ্বালানি শেষ’ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি উঠে এলেও, কীভাবে তা হলো—সেই প্রশ্নটি থেকেই যাচ্ছে।
রান থেকে কাটঅফ, কিন্তু কীভাবে?
প্রতিবেদনে জ্বালানির সুইচ বন্ধের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু কীভাবে তা বন্ধ হয়ে গেল, তা এখনও অস্পষ্ট।
এটি ইচ্ছাকৃত ছিল, না দুর্ঘটনাবশত, নাকি কোনো যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে হয়েছে—সে বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলেনি তদন্ত সংস্থা।
বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার বিমানে এই সুইচটি থাকে দুই পাইলটেরর সিটের মাঝখানে, থ্রটল লিভারের ঠিক পেছনে (থ্রটল লিভার মানে হলো ইঞ্জিনের গতি ও শক্তি বাড়ানো বা কমানোর হাতল)।
সুইচের পাশে ধাতব সুরক্ষা-কাঠামো থাকে, যাতে তা ভুলবশত চাপা না পড়ে। এই সুইচগুলো চালু বা বন্ধ করতে হলে দুটি ধাপ অনুসরণ করতে হয়—সুইচটিকে প্রথমে উপরের দিকে টেনে আনতে হয়, তারপর নিচের দিকে চাপতে হয়।
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ও বহু বিমান দুর্ঘটনার তদন্তে যুক্ত জিওফ্রি ডেল বলেন, ‘এটি ভুল করে করা প্রায় অসম্ভব। প্রতিটি সুইচ চালু বা বন্ধ করতে কমপক্ষে দুটি শারীরিক পদক্ষেপ লাগে। যদি একসঙ্গে দুটি সুইচ বন্ধ করা হয়, সেটি সাধারণত ল্যান্ডিংয়ের পর করা হয়, যখন বিমান পার্ক করা হয়।’
তার ভাষ্য, টেক-অফের সঙ্গে সঙ্গে কেউ ইঞ্জিনে জ্বালানি কেটে দেবেন, এমন উদ্ভট বিষয় আসলে কল্পনাও করা যায় না। তিনি বলেন, ‘বিশ্বে কোথাও এমন ঘটনা দেখা যায়নি।’
তদন্ত প্রতিবেদন একটি সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেছে। ২০১৮ সালে মার্কিন ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছিল, বোয়িং ৭৮৭ বিমানের জ্বালানি সুইচে থাকা লকিং ফিচার নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এফএএ এটিকে ‘বিপজ্জনক ত্রুটি’ হিসেবে চিহ্নিত না করায় এয়ার ইন্ডিয়া সেই সময় কোনো বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামায়নি।
ডেল বলেন, ব্ল্যাক বক্সে থাকা বিস্তারিত ডেটা বিশ্লেষণ করলে বোঝা যেতে পারে, কীভাবে সুইচগুলো বন্ধ হয়েছিল। কিন্তু ভারতের তদন্ত সংস্থা এখনও পাইলটদের কথোপকথনের সম্পূর্ণ ট্রান্সক্রিপ্ট প্রকাশ করেনি। যেটি তদন্তের জন্য জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
দায় কী তবে পাইলটদের?
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানায়, এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এখনই পাইলটদের ওপর দোষ চাপানো উচিত হবে না বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক পাইলট এহসান খালিদ।
তিনি বলেন, ‘এএআইবির প্রতিবেদন শুধু এটুকুই নিশ্চিত করে যে ইঞ্জিনে জ্বালানি বন্ধ হওয়ার কারণেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।’
তিনি বলেন, ‘পাইলটরা বুঝতে পেরেছিলেন ইঞ্জিনে শক্তি নেই এবং তারা এটাও নিশ্চিত ছিলেন যে, তারা এই পরিস্থিতি তৈরি করেননি।’
তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ পেতে আরও কয়েক মাস লাগবে বলে জানা গেছে।
ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রী রাম মোহন নাইডু সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই মুহূর্তে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো ঠিক হবে না।’
এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, তারা তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করে যাবে এবং প্রাপ্ত প্রতিবেদনের আলোকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
আরও পড়ুন: উড্ডয়নের পরপরই জ্বালানি ‘শেষ হয়ে গিয়েছিল’ এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটের
১৫৪ দিন আগে
উড্ডয়নের পরপরই জ্বালানি ‘শেষ হয়ে গিয়েছিল’ এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটের
ভারতের আহমেদাবাদে দুর্ঘটনার শিকার হওয়া এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটটি উড্ডয়নের কয়েক সেকেন্ড পরই জ্বালানি শেষ হয়ে গিয়েছিল বলে জানা গেছে। ভারতের এয়ারক্রাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরোর (এএআইবি) প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য।
গত ১২ জুন লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়ার এআই১৭১ ফ্লাইটটি (বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার) আকাশে ওড়ার অল্প সময়ের মধ্যেই একটি আবাসিক এলাকায় বিধ্বস্ত হয়। এতে বিমানে থাকা ২৪২ জনের মধ্যে ২৪১ জনই নিহত হন। তাছাড়া, যে এলাকায় বিমানটি বিধ্বস্ত হয়, সেখানবকারও ১৯ জন নিহত হন। এটি ছিল গত এক দশকের সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা।
আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল বিধি মতে, দুর্ঘটনার ৩০ দিনের মধ্যে তদন্তকারী রাষ্ট্রকে প্রাথমিক প্রতিবেদন দিতে হয়।
ভারতের তদন্ত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, দুর্ঘটনায় বোয়িং কিংবা ইঞ্জিন নির্মাতা জিই’র কোনো ত্রুটি পাওয়া যায়নি। বরং ককপিটের যে সুইচগুলো দিয়ে ইঞ্জিনে জ্বালানি সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করা হয়, সেগুলো ‘কাট-অফ’, অর্থাৎ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিমানটি স্থানীয় সময় দুপুর ১ টা ৩৮ মিনিট ৪২ সেকেন্ডে ১৮০ নট ইন্ডিকেটেড এয়ারস্পিড (আইএস) গতি অর্জন করে। ঠিক তার পরপরই ইঞ্জিন ১ এবং ইঞ্জিন ২–এর জ্বালানি সরবরাহ সুইচগুলো ‘রান’ থেকে ‘কাট-অফ’ অবস্থায় চলে যায়। এটি মাত্র এক সেকেন্ডের ব্যবধানে এই অবস্থায় চলে যায়। এর ফলে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে ইঞ্জিন দুটির এন১ ও এন২ মান কমতে শুরু করে।
আরও পড়ুন: এবার ভারতে যাত্রীবাহী হেলিকপ্টার বিধ্বস্তে নিহত ৭
প্রতিবেদন আরও জানানো হয়েছে, রানওয়ের সীমানা প্রাচীর অতিক্রম করার আগেই বিমানটির উচ্চতা কমতে শুরু করে। ককপিট ভয়েস রেকর্ডার থেকে জানা গেছে, এক পাইলট অপর পাইলটকে ওই সময় জিজ্ঞেস করেন, ‘তুমি কেন জ্বালানি বন্ধ করলে?’
জবাবে অপর পাইলট বলেন যে, তিনি জ্বালানি বন্ধ করেননি।
তবে কোন পাইলট এই কথা বলেছিলেন কিংবা কে ‘মে ডে, মে ডে, মে ডে’ সংকেত পাঠিয়েছিলেন, সে বিষয়ে প্রতিবেদনে কিছু উল্লেখ নেই।
দুর্ঘটনায় নিহত বিমানটির কমান্ডার ছিলেন ৫৬ বছর বয়সী সুমিত সাবরওয়াল, যার ১৫ হাজার ৬৩৮ ঘণ্টার বেশি ফ্লাইট পরিচালনার অভিজ্ঞতা ছিল। এ ছাড়া এয়ার ইন্ডিয়ার প্রশিক্ষক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন তিনি। সহকারী পাইলট ক্লাইভ কুন্ডারের বয়স ছিল ৩২ বছর, তার মোট ফ্লাইট অভিজ্ঞতা ছিল ৩ হাজার ৪০৩ ঘণ্টা।
তবে সুইচগুলো কীভাবে কাট-অফ অবস্থায় গেল, প্রতিবেদনে সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু উল্লেখ করা হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের বিমান নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ জন কক্স বলেন, ‘পাইলটের পক্ষে ভুল করে এই সুইচ টেনে ফেলা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ‘এই সুইচগুলো এমন নয় যে হঠাৎ ধাক্কা লাগলে নিজেরা সরবে।’ সুইচগুলোর কাট-অফ মোডে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায় বলে জানান এই বিশেষজ্ঞ।
আরও পড়ুন: আহমেদাবাদে বিমান বিধ্বস্ত: ২৪১ জন নিহত, একমাত্র জীবিত উদ্ধার
সাধারণত রানওয়েতে পৌঁছানোর পর ফ্লাইটের ইঞ্জিন বন্ধ করতে কিংবা বিশেষ জরুরি পরিস্থিতিতে, যেমন: ইঞ্জিনে আগুন লাগলে এই সুইচ ব্যবহার করা হয়। কিন্তু ওই ফ্লাইটে এমন কোনো জরুরি পরিস্থিতির কথা প্রতিবেদনে বলা হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের আরেক বিমান নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি ব্রিকহাউস বলেন, ‘যদি পাইলট সুইচ ঘুরিয়ে থাকেন, তাহলে তিনি তা কেন করলেন?’ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুটি সুইচ এক সেকেন্ডের ব্যবধানে কাট-অফ অবস্থায় চলে যায়।
বিশেষজ্ঞ জন ন্যান্সের মতে, সময়ের এই ব্যবধান দেখেই বোঝা যায়, একজন ব্যক্তি প্রথমে একটি এবং পরেই আরেকটি সুইচ ঘোরালে এমনটি হতে পারে। তিনি বলেন, ‘উড্ডয়নের ঠিক পরপরই পাইলট কখনোই স্বেচ্ছায় এই সুইচ বন্ধ করবেন না।’
প্রতিবেদনের একটি অংশে বলা হয়, ইঞ্জিন ১ কাট-অফ হওয়া সত্ত্বেও কিছুটা পুনরুদ্ধার শুরু করেছিল, তবে ততক্ষণে বিমানের গতি কমে যাওয়া তা আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইঞ্জিন ১–এর ‘কোর ডেসিলারেশন’ বন্ধ হয়ে উল্টো ঘুরে গিয়ে কিছুটা পুনরুদ্ধার শুরু করে, তবে ইঞ্জিন ২ ‘রিলাইট’ (পুনরায় চালু) হলেও গতি কমা ঠেকাতে পারেনি।
এয়ার ইন্ডিয়া এক বিবৃতিতে জানায়, তারা ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সহযোগিতা করছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনো মন্তব্য করেনি।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড এক বিবৃতিতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছে, এই প্রতিবেদনটিতে বোয়িং ৭৮৭ জেট বা জিই ইঞ্জিন পরিচালকদের জন্য কোনো সতর্কতামূলক সুপারিশ নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বলছে, তারা তদন্তে বেরিয়ে আসা সত্যের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে এবং কোনো ঝুঁকি চিহ্নিত হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে।
আরও পড়ুন: আহমেদাবাদে বিমান বিধ্বস্ত: ৫ মেডিকেল শিক্ষার্থী নিহত, আহত ৪০
তাছাড়া বোয়িং জানিয়েছে, তদন্তকাজে তারা এয়ার ইন্ডিয়াকে সহায়তা করছে। তবে জিই অ্যারোস্পেসের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান।
বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ফলে অন্তত পাঁচটি ভবন ধ্বংস হয়েছে এবং নিচে থাকা ১৯ জন মারা গেছেন। বিধ্বস্ত হওয়া ভবনগুলোর মধ্যে একটি ছিল বাইরামজি জিজিভয় মেডিকেল কলেজ ও সিভিল হাসপাতালের ছাত্রাবাস।
দুর্ঘটনার কয়েকদিন পর দুটি ব্ল্যাক বক্স উদ্ধার হয়। ১৩ জুন একটি ব্ল্যাক বক্স দুর্ঘটনাস্থলের একটি ভবনের ছাদ থেকে এবং ১৬ জুন অপরটি ধ্বংসস্তূপের ভেতরে পাওয়া যায়।
তবে পাখির সঙ্গে ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনার আশঙ্কা প্রতিবেদনে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। ওই ফ্লাইটপথে পাখির তেমন উপস্থিতির প্রমাণ মেলেনি বলেও জানানো হয়েছে।
বিমানটিতে ১৬৯ জন ভারতীয় নাগরিক, ৫৩ জন ব্রিটিশ, সাতজন পর্তুগিজ, একজন কানাডীয় এবং ১২ জন ক্রু সদস্য ছিলেন।
এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় একমাত্র যাত্রী হিসেবে বেঁচে যান ব্রিটিশ নাগরিক বিশ্বাস কুমার রমেশ। তিনি বিমানের ধ্বংসস্তূপের একটি ফাঁকা জায়গা দিয়ে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন।
হাসপাতালের শয্যা থেকে গত মাসে রমেশ বলেছিলেন, ‘উড্ডয়নের ঠিক পরপরই মনে হয়েছিল বিমানটি যেন আকাশে আটকে গেছে। এরপর বিমানের লাইটগুলো জ্বলা–নেভা শুরু করে।’
তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই বিমানটি একটা ভবনে ধাক্কা মেরে বিস্ফোরিত হয়।’
‘আমি ভাবতেই পারিনি বেঁচে যাব। এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিল, আমিও মারা যাব। কিন্তু যখন চোখ খুলে চারপাশে তাকালাম, তখন বুঝলাম বেঁচে আছি। এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না—কীভাবে বেঁচে ফিরলাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি নিজের সিটবেল্ট খুলে পা দিয়ে ধাক্কা দিয়ে সেই ফাঁকা জায়গা দিয়ে বেরিয়ে আসি। জানি না কীভাবে বেঁচে গেছি। আমার চোখের সামনেই মানুষ মরতে দেখেছি—এয়ার হোস্টেসরা, আমার পাশের দুজন… আমি হাঁটতে হাঁটতে ধ্বংসস্তূপ থেকে বেরিয়ে এসেছি।’
১৫৬ দিন আগে
মহারাষ্ট্রে হিন্দি ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ, রাজ্যজুড়ে উত্তেজনা
ভারতের সবচেয়ে ধনী রাজ্য মহারাষ্ট্রে হিন্দি ভাষা শিক্ষা বাধ্যতামূলক করাকে কেন্দ্র করে কয়েক সপ্তাহ ধরে উত্তেজনা চলছে। সম্প্রতি রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে মারাঠি ভাষা অধিকার রক্ষার দাবিতে বিক্ষোভ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
খবরে বলা হয়, ভাষা নিয়ে চলমান এই বিতর্কের সূত্রপাত এপ্রিল মাসে। সে সময় মহারাষ্ট্র সরকার ঘোষণা দেয়, রাজ্য পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ইংরেজি ও মারাঠির পাশাপাশি তৃতীয় ভাষা হিসেবে হিন্দি ভাষাও শেখানো হবে। রাজ্য সরকারের দাবি, এটি কেন্দ্রীয় সরকারের জাতীয় শিক্ষানীতির (এনইপি) অংশ।
১৯৬৮ সালে চালু হওয়া এনইপি দেশটির শিক্ষাব্যবস্থাকে উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যেই প্রণয়ন করা হয়। সময়ে সময়ে এই নীতিতে সংশোধন আনা হয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার পাঁচ বছর আগে এর সর্বশেষ সংস্করণ চালু করেন, যা ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তবে এটি নিয়ে এর আগেও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল।
রাজ্যটির ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন, বিরোধী দল ও নাগরিক সমাজ এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। তাদের অভিযোগ, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে মারাঠি ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর হিন্দিকে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন: খাবার নিতে আসা শিশুদের ওপর ইসরায়েলের ‘অমার্জনীয়’ হামলা
এ নিয়ে রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মধ্যে সহিংসতার ঘটনাও ঘটে। এপ্রিল মাসে রাজ্যের থানে জেলায় দুই নারীকে মারাঠি না বলার কারণে হামলার শিকার হতে হয়। একই মাসে মুম্বাইয়ে এক নিরাপত্তাকর্মী মারাঠি না জানায় মারধরের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া, গত সপ্তাহে মুম্বাইয়ের এক দোকানদারকে মারাঠি না বলায় মারধরের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।
এই পরিস্থিতিতে বিজেপি নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার সিদ্ধান্তটি বাতিল করে এবং বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য একটি কমিটি গঠন করে। তবে, এখানেই বিতর্কের অবসান হয়নি। আসন্ন স্থানীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে স্থানীয় রাজনীতিও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
যদিও ভাষা বিতর্কটি সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করেছে, তবুও এটি দুই পুরনো রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে প্রায় দুই দশক পর এক মঞ্চে নিয়ে এসেছে।
আরও পড়ুন: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে ‘বাণিজ্যযুদ্ধ’ নিয়ে সতর্ক করলেন আনোয়ার ইব্রাহিম
দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক বিরোধ ভুলে হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দল শিবসেনার প্রধান উদ্ধব ঠাকরে এবং তার চাচাতো ভাই মারাঠি জাতীয়তাবাদী দল এমএনএস প্রধান রাজ ঠাকরে একসঙ্গে একটি জনসভায় অংশ নেন। তারা হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে মারাঠি ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার আহ্বান জানান।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ভাষা ও পরিচয় ঘিরে এই ইস্যুটি আগামী নির্বাচনে ভোটারদের প্রভাবিত করতে পারে। তবে অনেকে বলছেন, ভাষাকেন্দ্রিক রাজনীতি দিয়ে দীর্ঘস্থায়ী জনপ্রিয়তা ধরে রাখা কঠিন।
১৫৭ দিন আগে
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে ‘বাণিজ্যযুদ্ধ’ নিয়ে সতর্ক করলেন আনোয়ার ইব্রাহিম
বৈশ্বিক বাণিজ্য এখন ‘অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। এ কারণে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোকে ‘বাণিজ্যযুদ্ধে’ না জড়িয়ে পড়ার বিষয়ে সতর্ক করেছেন তিনি।
স্থানীয় সময় বুধবার (৯ জুলাই) আসিয়ান জোটের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এই সতর্কতার আহ্বান জানান।
যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্কের কারণে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলো বর্তমানে উদ্বিগ্নতার মধ্যে রয়েছে। এরই মধ্যে এই সতর্কতা দিলেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১০টি দেশের আঞ্চলিক জোট হচ্ছে আসিয়ান। বিশ্বের সবচেয়ে বাণিজ্যনির্ভর অর্থনীতির দেশগুলোর বেশ কয়েকটি এই জোটের সদস্য বলে মনে করা হয়। তবে জোটের ১০টির মধ্যে আটটি দেশই পড়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কের মুখে, যা আগামী ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।
জোটের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে আনোয়ার বলেন, বিশ্ব এখন এমন এক যুগে প্রবেশ করেছে, যেখানে নীতিকে অস্থির করে তুলছে ক্ষমতা। একসময় যে বিষয়গুলো প্রবৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত হতো, এখন তা চাপ সৃষ্টি, একঘরে করা ও নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।
এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের নাম সরাসরি উল্লেখ না করলেও চলমান বাণিজ্য হুমকি মোকাবিলায় আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
জোটভুক্ত দেশগুলোকে পারস্পরিক বাণিজ্য বাড়ানো, আঞ্চলিক সংহতি জোরদার এবং বাইরের শক্তির ওপর নির্ভরতা কমানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, ‘আমাদের সংহতি কেবল ঘোষণার মধ্যে সীমিত থাকলে চলবে না। এই বাণিজ্য হুমকি কোনো ক্ষণস্থায়ী ঝড় নয়। এটি আমাদের সময়ের নতুন বাস্তবতা।’
চলতি বছরের এপ্রিলে প্রথম এই শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন ট্রাম্প। অবশ্য সমঝোতার সুযোগ দিতে সে সময় ৯০ দিনের জন্য শুল্ক স্থগিত করা হয়। এরপর সোমবার (৭ জুলাই) ও বুধবার (৯ জুলাই) নতুন করে ২০ থেকে ৪০ শতাংশ হারে, কোনো দেশের ওপর আবার ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। কোনো সমঝোতায় না এলে ১ আগস্ট থেকে এই হারে শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। একই সঙ্গে, কোনো দেশ পাল্টা পদক্ষেপ নিলে তার বিরুদ্ধে আরও শুল্ক বাড়ানোর হুমকিও দিয়েছেন তিনি।
প্রথমবারে শুল্ক আরোপের পর কেবল ভিয়েতনামই একটি চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক হার ৪৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে নামাতে পেরেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী, ব্রাজিলের ওপর সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার ওপর ৩৬ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার ওপর ৩২ শতাংশ, মালয়েশিয়া ও ব্রুনাইয়ের ওপর ২৫ শতাংশ, ফিলিপাইনের ওপর ২০ শতাংশ, আর লাওস ও যুদ্ধবিধ্বস্ত মিয়ানমারের ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ হতে পারে। বাংলাদেশের ওপরও শুল্কের এই খড়্গ নেমে এসেছে ৩৫ শতাংশ হারে।
আসিয়ানভুক্ত অনেক দেশ এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা শুরু করেছে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি বছরের শেষ দিকে আসিয়ান-যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে, যেখানে তারা যৌথ অবস্থান তৈরির চেষ্টা করবে।
১৫৮ দিন আগে
ভিসা নীতিতে বড় পরিবর্তন চীনের, মিলতে শুরু করেছে সুফল
পর্যটক টানতে ভিসা নীতি শিথিল করেছে চীন। ৭৪টি দেশের নাগরিকদের বিনা ভিসায় ভ্রমণের সুযোগ দিয়েছে দেশটি। এর ফলে ধীরে ধীরে আবারও বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ছে চীনে।
নতুন নীতি অনুযায়ী, ৭৪টি দেশের নাগরিকরা চীনে প্রবেশের পর টানা ৩০ দিন পর্যন্ত ভিসা ছাড়াই অবস্থান করতে পারছেন যা আগের নিয়মের তুলনায় অনেক বড় পরিবর্তন।
ইউরোপ, এশিয়া, লাতিন আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের মোট ৭৪টি দেশকে এ পর্যন্ত ৩০ দিনের ভিসা ছাড় দিয়েছে চীন। চলতি মাসের ১৬ জুলাই এই তালিকায় আজারবাইজান যুক্ত হলে মোট দেশের সংখ্যা দাঁড়াবে ৭৫টিতে।
মূলত পর্যটন, অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি বা ‘সফট পাওয়ার’ বাড়াতে ধারাবাহিকভাবে ভিসা-মুক্ত প্রবেশাধিকার বাড়াচ্ছে চীন।
দেশটির জাতীয় অভিবাসন প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ২ কোটির বেশি বিদেশি পর্যটক ভিসা ছাড়াই চীনে প্রবেশ করেছেন, যা মোট বিদেশি পর্যটকের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এবং আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি।
ভিসা ছাড়াই চীন ভ্রমণ করা অস্ট্রিয়ায় বসবাসকারী জর্জিয়ার নাগরিক জর্জি শাভাদজে বেইজিংয়ের বিখ্যাত ‘টেম্পল অব হেভেন’ ঘোরার সময় বলেন, ‘ভিসা আবেদন ও প্রক্রিয়া নিয়ে যে ঝামেলা, তাতে চীনের এই সিদ্ধান্ত ভ্রমণপিপাসুদের অনেক সুবিধা দেবে।’
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত: ট্রাম্প
তারপরও চীনে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা তুলনামূলক কম, দেশটির বেশিরভাগ পর্যটনকেন্দ্রই এখনও দেশীয় পর্যটকে ঠাসা। তা সত্ত্বেও গ্রীষ্মের ছুটিতে বিদেশি পর্যটকের বড় ঢল নামতে পারে বলে আশা করছে পর্যটন ব্যবসা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও ট্যুর গাইডরা।
দীর্ঘ ২০ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ইংরেজিভাষী গাইড গাও জুন বলেন, ‘আমি পর্যটক সামলাতে হিমশিম খাচ্ছি। সবটা আমি একা সামলাতে পারছি না।’
জুন জানান, চাহিদা সামলাতে তিনি এখন নতুন একটি ব্যবসা শুরু করেছেন, যেখানে ইংরেজিভাষী ট্যুর গাইড তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
কঠোর কোভিড-১৯ বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার পর ২০২৩ সালের শুরুতে চীন বিদেশি পর্যটকদের জন্য সীমান্ত খুলে দেয়। তবে ওই বছর মাত্র ১ কোটি ৩৮ লাখ পর্যটক চীন সফর করেন, যা মহামারি শুরু হওয়ার আগের বছর, অর্থাৎ ২০১৯ সালের তুলনায় অনেক কম।
২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, স্পেন ও মালয়েশিয়ার নাগরিকদের জন্য ভিসা-মুক্ত প্রবেশের অনুমতি দেয় চীন। এরপর থেকে ইউরোপের প্রায় সব দেশকেই এই সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে।
গত মাসে লাতিন আমেরিকার পাঁচটি দেশ এবং উজবেকিস্তান এই সুবিধা পায়, এরপর যুক্ত হয় মধ্যপ্রাচ্যের আরও চারটি দেশ। তবে এই সুবিধা দেওয়া দেশগুলোর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের জন্যই এটি এক বছরের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে।
নরওয়ের পর্যটক ওইস্টেইন স্পরসেইম জানান, নতুন নিয়মে তার পরিবারকে আর চীনের পর্যটন ভিসার জন্য ওসলোতে অবস্থিত চীনা দূতাবাসে দুইবার যেতে হবে না। তিনি বলেন, ‘ওরা দূতাবাস খুব কমই খোলে। তাই আগের নিয়মে ভিসা পাওয়া খুব কঠিন ছিল।’
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রে বিষাক্ত ছত্রাক পাচারের অভিযোগে চীনা বিজ্ঞানীর বিরুদ্ধে মামলা
‘ওয়াইল্ডচায়না’ নামের বিলাসবহুল পর্যটন সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেনি ঝাও বলেন, ‘নতুন ভিসা নীতির সুবিধা আমাদের জন্য শতভাগ ইতিবাচক।’ মহামারির আগের তুলনায় বর্তমানে তাদের ব্যবসা অন্তত ৫০ শতাংশ বেড়েছে বলেও জানান তিনি।
ঝাও আরও বলেন, এখন পর্যন্ত পর্যটন ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রই তাদের সবচেয়ে বড় বাজার, যা বর্তমানে তাদের মোট ব্যবসার প্রায় ৩০ শতাংশ। তবে ইউরোপীয় পর্যটকদের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ২০১৯ সালের আগে যা ৫ শতাংশের নিচে ছিল, এখন তা ১৫ থেকে ২০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ভিসা নীতির চলমান এই সুবিধা যেন স্থায়ী হয়—এমনটাই আশা করছেন তিনি।
অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি ‘ট্রিপ ডটকম’ জানিয়েছে, মুক্ত ভিসা নীতির কারণে চীনে পর্যটন ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এ বছরের প্রথম তিন মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় চীনগামী বিমান, হোটেলসহ অন্যান্য বুকিং প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। তাদের তথ্য অনুযায়ী, এসব পর্যটকের ৭৫ শতাংশই ভিসা-মুক্ত সুবিধা দেওয়া দেশগুলোর।
তবে, লক্ষণীয় বিষয় হলো, চীনের সঙ্গে তুলনামূলক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলেও আফ্রিকার কোনো বড় দেশ এখনও এই সুবিধার আওতায় আসেনি।
১০ দিনের ‘ট্রানজিট’ সুযোগ
ভিসা-মুক্ত তালিকায় না থাকা দেশের নাগরিকদের জন্য বিকল্প পথও চালু করেছে বেইজিং। ওইসব দেশের দেশের নাগরিক যদি ভিন্ন কোনো দেশে যাওয়ার পথে চীন হয়ে ট্রানজিট করেন। যদিও ৫৫টি দেশের জন্য এই ট্রানজিট নীতি চালু রয়েছে, কিন্তু এদের অধিকাংশই ৩০ দিনের ভিসা-মুক্ত তালিকায় রয়েছে।
তবে এই সীমিত সুযোগটি কার্যত যে ১০টি দেশের জন্য সেগুলো হলো— চেক প্রজাতন্ত্র, লিথুনিয়া, সুইডেন, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, ইউক্রেন, ইন্দোনেশিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকো। ইউরোপের ধনী দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্যকে বাদ দিলে শুধু সুইডেনই ৩০ দিনের তালিকায় স্থান পায়নি।
সুইডেনের সঙ্গে চীনের সম্পর্কে টানাপড়েনের পেছনে ২০২০ সালে সুইডিশ বই বিক্রেতা গুই মিনহাইকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া বড় কারণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
২০১৫ সালে থাইল্যান্ডে সমুদ্রতীরবর্তী বাড়ি থেকে গুই নিখোঁজ হন। পরে চীনের মূল ভূখণ্ডে পুলিশের হেফাজতে দেখা যায় তাকে।
১৫৮ দিন আগে
পোষা সিংহ দেওয়াল টপকে রাস্তায়, পাকিস্তানে আহত ৩
পাকিস্তানের লাহোরে খাঁচা থেকে বেরিয়ে দেওয়াল টপকে এক নারী ও দুটি শিশুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে একটি পোষা সিংহ। পরে সেটির মালিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাঁচ ও সাত বছর বয়সী শিশু দুটিসহ আক্রান্ত ওই নারীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সিএনএনের খবরে বলা হয়, গত বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) জোহান শহরের একটি গ্রামের খামারবাড়ি থেকে সিংহটি পালিয়ে যায়। এরপর একটি গলির মোড়ে ওই নারী ও শিশুদের আক্রমণ করে।
শহরের নিরাপত্তা ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, লাফ দিয়ে একটি কংক্রিটের দেওয়াল পার হচ্ছে সিংহটি। এরপর পেছন থেকে এক নারীর ওপর আক্রমণ করে মাটিতে ফেলে দিয়েছে সেটি। তখন ওই খামারবাড়ি থেকে এক ব্যক্তিকে লাঠি হাতে দৌড়ে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়।
তিনি সিংহটির কবল থেকে ওই নারীকে রক্ষা করেন। লোকটির তাড়া খেয়ে ছুটে সামনের সড়কে গিয়ে শিশুদুটির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে সেটি।
সিংহের আক্রমণে শিশুরা মুখমণ্ডল ও বাহুতে আঘাত পেয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েট প্রেস (এপি)। তারা বর্তমানে স্থিতিশীল অবস্থায় আছে বলে খবরে বলা হয়েছে।
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও শেয়ার করে লাহোর পুলিশ জানিয়েছে, খামারবাড়িতে একটি উন্মুক্ত খাঁচা থেকে সিংহটি পালিয়ে যায়। পরে এটিকে ধরে নিয়ে আসেন এর মালিক। বন্য প্রাণীটিকে একটি গাড়িতে তুলে অন্য একটি জেলায় পালিয়ে যান তিনি।
লাহোর পুলিশ অপারেশনসের উপ-মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ ফয়সাল কামরান বলেন, এ ঘটনায় শুক্রবার সকালে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। সিংহটিকেও ধরে এনে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, সিংহ পোষার বৈধ অনুমোদন ছিল না ওই ব্যক্তির। পাকিস্তানের বন্যপ্রাণী আইন অনুসারে তার বিচার করা হবে। এতে তার সাত বছরের কারাদণ্ড কিংবা সাড়ে সতেরো হাজার ডলার পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।
পাঞ্জাবের বন্যপ্রাণী ও পার্ক বিভাগের প্রধান রেঞ্জার সৈয়দ কামরান বুখারি বলেন, ‘আটক তিনজনকেই কঠিন সাজার মুখোমুখি হতে হবে। এভাবে বন্যপ্রাণী আটকে রাখা সম্পূর্ণভাবে অবৈধ।’
পাকিস্তানে বন্যপ্রাণী পোষা মর্যাদার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দেশটিতে বন্যপ্রাণী পোষা অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়, তবে তার জন্য অনুমোদন নিতে হয়। আর সিংহের মতো বড় কোনো বন্যপ্রাণী পুষতে হলে তা শহরের বাইরে করতে হবে বলে নিয়ম রয়েছে।
আরও পড়ুন: মেছো বিড়ালসহ বিপন্ন বন্যপ্রাণী রক্ষায় সচেতনতা বাড়াতে বিশেষ ভ্যান
১৬০ দিন আগে
আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে প্রথম দেশ হিসেবে স্বীকৃতি রাশিয়ার
২০২১ সালের আগস্টে আফগানিস্তানের ক্ষমতাগ্রহণ করা তালেবান সরকারকে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে রাশিয়া।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) এক বিবৃতিতে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
বিবৃতিতে মস্কো জানায়, তারা তালেবান নিযুক্ত নতুন আফগান রাষ্ট্রদূত গুল হাসান হাসানের পরিচয়পত্র গ্রহণ করেছে।
এতে আরও বলা হয়, `আমরা বিশ্বাস করি, ইসলামিক এমিরেট অব আফগানিস্তানের সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার এই পদক্ষেপ দুইদেশের গঠনমূলক সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করবে।’
আফগানিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাশিয়ার সিদ্ধান্তকে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে সঙ্গায়িত করেছে।
সামাজিক মাধ্যম এক্সে সিদ্ধান্তটিকে স্বাগত জানিয়ে কাবুলে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত দিমিত্রি ঝিরনভের সঙ্গে বৈঠকের ভিডিও পোস্ট করেন আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকী। ওই ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘এই সাহসী সিদ্ধান্তটি অন্য দেশগুলোর জন্য অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে।
এর আগে, চলতি বছর রাশিয়ার সুপ্রিম কোর্ট তালেবানকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’র তালিকা থেকে বাদ দেয়।
২০২১ সালে আফাগানিস্থান থেকে মার্কিন ও ন্যাটো জোটের সেনা প্রতাহ্যারের পর তালেবান সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। তখন থেকেই গোষ্ঠিটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবি করে আসছে। আফগান সরকার বেশ কিছু দেশের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেছে। চীন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করলেও এবারই প্রথম কোনো দেশ ইসলামী গোষ্ঠীটিকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল ওয়ানে সম্প্রচারিত এক বক্তব্যে আফগানিস্তানে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত দিমিত্রি ঝিরনভ জানিয়েছেন, তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এ বিষয়ে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের পরামর্শ গ্রহণ করেন।
রাষ্ট্রদূত ঝিরনভ বলেন, ‘আফগানিস্তানের সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিকাশে সচেষ্ট রাশিয়া।’
আরও পড়ুন: গাজার জনাকীর্ণ ক্যাফেতে ইসরায়েলের ৫০০ পাউন্ডের বোমা হামলা
যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান
তবে, পশ্চিমা সরকার ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো তালেবান সরকারের কঠোর সমালোচনা অব্যাহত রেখেছে। তাদের অভিযোগ, তালেবান সরকার নারীদের স্বাধীনতা খর্ব করছে। তালেবান সরকার ২০২১ সালে ক্ষমতা দখলের দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে নারীদের চাকরি ও বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং ষষ্ঠ শ্রেণির ওপরে নারীদের শিক্ষাগ্রহণ করতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ পশ্চিমা গোষ্ঠীগুলোর। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র তালেবান সরকারের শীর্ষ নেতাদের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি রেখেছে। একইসঙ্গে আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৯ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ অবরুদ্ধ করে রেখেছে।
তবে, এর মধ্যেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে গেছে আফগানিস্তান। ২০২৩ সালে একটি চীনা তেল কোম্পানির সঙ্গে তেল উত্তোলনের চুক্তি সই করে তারা। এর আগে, রাশিয়া ২০২২ সালে আফগানিস্তানের সঙ্গে চুক্তিতে সই করে। ওই চুক্তি অনুযায়ী, আফগানিস্তানকে তেল, গ্যাস এবং গম সরবরাহে রাজি হয় তারা।
এদিকে, সিএনএনের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতি আদায়ের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে তালেবান সরকার। চলতি বছরের শুরুর দিকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এই প্রচেষ্টা আরও জোরদার হয়েছে বলে জানা গেছে।
চলতি বছরের মার্চে আফগানিস্তান দুই মার্কিন নাগরিককে মুক্তি দেয়। একই সময়ে তিন তালেবান নেতা, যাদের যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত মাথার মূল্য কোটি ডলার—তাদের বিরুদ্ধে সেই পুরস্কারও তুলে নেয় মার্কিন সরকার।
সংশ্লিষ্টদের বরাতে সিএনএন জানিয়েছে, তালেবান নেতৃত্ব যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈঠকে নানা প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে দূতাবাসের মতো অফিস খোলার প্রস্তাবও। তবে, যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি।
সূত্র: বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা
১৬৪ দিন আগে
জাপানি দ্বীপপুঞ্জে দুই সপ্তাহে ৯ শতাধিক ভূমিকম্প
জাপানের দক্ষিণাঞ্চলের একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপপুঞ্জে গেল দুই সপ্তাহে ৯ শতাধিক ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। এখন সামনে কী ঘটতে যাচ্ছে, সেই আতঙ্কে সেখানকার নাগরিকদের ঘুম পর্যন্ত হারাম হয়ে গেছে। যদিও এসব ভূকম্পে বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর আসেনি।
ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান এমন খবর দিয়েছে। ভূমিকম্পের এই প্রবণতা কখন থামবে, তা বলতে পারছে না জাপানের আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বুধবার (৩ জুলাই) এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির ভূমিকম্প ও সুনামি পর্যবেক্ষণ বিভাগের পরিচালক আয়াতাকা এবিতা বলেন, ‘গেল ২১ জুন থেকে তোকারা দ্বীপপুঞ্জের সমুদ্রে ভূকম্পনীয় তৎপরতা খুবই সক্রিয়।’
দক্ষিণাঞ্চলীয় কিয়ুশু দ্বীপে পাঁচ দশমিক পাঁচ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হওয়ার পরই তিনি এই সংবাদ সম্মেলন ডাকেন। এই ভূকম্পবিশারদ বলেন, ‘আজ ৪টা পর্যন্ত ভূমিকম্পের সংখ্যা ৯ শতাধিক ছাড়িয়ে গেছে।’
আরও পড়ুন: নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচন: মুসলমানদের মধ্যে আশা জাগাচ্ছেন মামদানি
অঞ্চলটিতে আরও বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে শঙ্কায় বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া উচিত বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
জাপানি সংবাদমাধ্যম দ্য মেইনিচি শিম্পুন জানিয়েছে, মঙ্গলবার পর্যন্ত আগের ১০ দিনে অঞ্চলটিতে ৭৪০টি ভূমিকম্প নথিভুক্ত করা হয়েছে। সাত মাত্রার ভূমিকম্পের তীব্রতার স্কেলে এক বা তার চেয়ে বেশি মাত্রার ছিল এগুলো। জাপানে ভূমিকম্পের কাঁপুনির মাত্রা বোঝাতে এই স্কেল ব্যবহার করা হয়, যেখানে সাত হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী মাত্রা।
পাঁচ মাত্রার ভূমিকম্প হলে মানুষকে সতর্ক করার জন্য সেটি যথেষ্ট বলে বিবেচনা করা হয়। কারণ, এই মাত্রার ভূমিকম্পে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াতে পারে, টাল সামলাতে অবলম্বন হিসেবে কিছু একটা ধরে রাখতে বাধ্য হতে হয়।
নিজেদের ওয়েবসাইটে তোকারা গ্রাম জানিয়েছে, ভূমিকম্পের ভয়ে লোকজন ঘুমাতে না পেরে ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন।
‘মনে হচ্ছে, গ্রামটি সবসময় কাঁপছে। যে কারণে ঘুমাতে গেলে আতঙ্ক তৈরি হয়,’ বললেন একজন বাসিন্দা। কখন এই ভূমিকম্প শেষ হবে, তা স্পষ্ট না বলে মন্তব্য করেন আরেক বাসিন্দা। তিনি বলেন, ‘সন্তানদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিতে হবে কিনা; সেটা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে।’
সরকারি উপাত্ত থেকে জানা যায়, ২৩ জুন একদিনেই ১৮৩টি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। ২৬ জুন এই সংখ্যাটি ছিল ১৫; ২৭ জুন ১৬। কিন্তু পরেরদিন থেকে আবার বাড়তে থাকে ভূকম্পের সংখ্যা। ২৮ জুন ৩৪টি ভূমিকম্প হয়েছে, ২৯ জুন ৯৮টি। আর ৩০ জুন ৬২টি ভূমিকম্প হয়েছে।
এরআগে ২০২৩ সালে তোকারা অঞ্চলে একই ধরনের ভূকম্পনীয় প্রবণতা দেখা গেছে। তখন ৩৪৬টি ভূমিকম্প নথিভুক্ত করা হয়েছে।
বিচ্ছিন্ন তোকারা দ্বীপপুঞ্জের সাতটিতে মানুষ বাস করেন। এসব দ্বীপে সবমিলিয়ে ৭০০ বাসিন্দা রয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তোকারা দ্বীপপুঞ্জের আশপাশের অঞ্চলের ভূতাত্ত্বিক গঠন অস্বাভাবিক হওয়ায় সাগরতলের নিচে গিয়ে চাপ জমা পড়ে সহজভাবে, পরে তা ভূমিকম্পের আকারে বেরিয়ে আসে।
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ভূকম্পনপ্রবণ দেশগুলোর একটি হচ্ছে জাপান।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বে আদেশ কার্যকর হচ্ছে
প্রশান্ত মহাসাগরীয় ‘রিং অফ ফায়ারের’ পশ্চিম প্রান্ত বরাবর চারটি বড় টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত জাপান। সাড়ে ১২ কোটি জনসংখ্যার দেশটির বাসিন্দারা বছরে দেড় হাজারের বেশি ভূকম্পের মুখে পড়েন। যা বিশ্বের মোট ভূমিকম্পের আঠারো শতাংশ।
তবে এগুলোর বেশিরভাগই মৃদু হওয়ায় অবস্থান ও ভূমিকম্পের গভীরতার ওপর ভিত্তি করে ক্ষয়ক্ষতি ঘটে।
১৬৫ দিন আগে
বরখাস্ত হওয়া থাইপ্রধানমন্ত্রী পেলেন সংস্কৃতি মন্ত্রীর দায়িত্ব
থাইল্যান্ডের নতুন মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছেন দেশটির বরখাস্ত হওয়া প্রধানমন্ত্রী পেতাংতার্ন সিনাওয়াত্রা। এতে দেশটির মন্ত্রিসভার বৈঠকে অংশ নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে তার জন্য। যদিও নিজের অসদাচরণ নিয়ে সাংবিধানিক আদালতের পর্যালোচনার অপেক্ষায় রয়েছেন দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশটির এই রাজনীতিবিদ।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) ব্যাংককে তেরো সদস্যের থাইল্যান্ডের নতুন মন্ত্রিসভার শপথ হয়েছে। গেল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে থাইল্যান্ডের সিনাওয়াত্রা পরিবারের এই সদস্যকে। একইদিন নতুন মন্ত্রিসভার অনুমোদন দিয়েছেন থাই রাজা। এতে পেতাংতার্ন সিনাওয়াত্রাকে সংস্কৃতি বিষয়কমন্ত্রী হিসেবে দেখা গেছে।
শপথ অনুষ্ঠানে মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যদের সঙ্গে যখন সরকারি ভবনে আসেন পেতাংতার্ন, তখন তাকে খুব হাসিখুশি অবস্থায় দেখা গেছে। এ সময়ে সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্ন নেননি তিনি। নতুন মন্ত্রিসভার নেতৃত্ব দেন ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী সুরিয়া জুংরুংগ্রেয়াংকিত।
পেতাংতার্ন সিনাওয়াত্রার কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রীত্বের কর্তৃত্ব কেড়ে নেওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে মন্ত্রিসভায় এই রদবদল হয়েছে। সম্প্রতি থাইল্যান্ডের রক্ষণশীল ভুমজাথাই পার্টি ক্ষমতাসীন জোট থেকে বেরিয়ে গেছে। এখন ক্ষমতা ধরে রাখতে ছোট ছোট দলগুলোর কাছ থেকে সমর্থন আদায়ে মরিয়া ক্ষমতাসীন জোট।আরও পড়ুন: ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনায় থাইপ্রধানমন্ত্রী বরখাস্ত
দেশটিতে নতুন করে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আসন্ন বাজেটসহ গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রণয়নে সরকারের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন পেতাংতার্নের বাবা থাকসিন সিনাওয়াত্রা।
গেল মাসে কম্বোডিয়ার সাবেক নেতা হুন সেনের সঙ্গে পেতাংতার্নের ফোনালাপের পর সাম্প্রতিক রাজনৈতিক এই অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়েছে। এতে তারা দুই দেশের মধ্যকার বিতর্কিত সীমান্ত নিয়ে আলোচনা করেন। ওই ফোনকল ফাঁস হওয়ার পরে পেতাংতার্নের বিরুদ্ধে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, তার জনপ্রিয়তায়ও ধস নেমেছে।
ব্যাংককভিত্তিক অর্থনীতিবিদ টিম লিলাহাফান বলেন, ‘ফেউ থাই পার্টির নেতৃত্বাধীন জোটের ঐক্য নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। আসছে দিনগুলোতে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়তে পারে। এরসঙ্গে যোগ হয়েছে থাই-কম্বোডিয়ার মধ্যকার সীমান্ত উত্তেজনা। এতে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা নিয়ে নিতে পারে বলেও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।’
পেতাংতার্ন সিনাওয়াত্রার বিরুদ্ধে অভিযোগের জবাব দিতে ১ জুলাই থেকে ১৫ দিনের সময় দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার দিন শেষে বিশেষ মন্ত্রিসভার বৈঠকে সভাপতিত্ব করতে পারেন ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী সুরিয়া জুংরুংগ্রেয়াংকিত।
১৬৫ দিন আগে
ইন্দোনেশিয়ায় বালির কাছে ফেরিডুবি, নিহত ৪, বহু নিখোঁজ
ইন্দোনেশিয়ার জনপ্রিয় পর্যটন দ্বীপ বালির কাছে একটি ফেরিডুবির ঘটনায় অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আরও অন্তত ৩৮ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সময় বুধবার (২ জুলাই) গভীর রাতে পূর্ব জাভার কেতাপাং বন্দর ছাড়ার প্রায় আধঘণ্টা পর ‘কেএমপি তুনু প্রতমা জয়া’ নামের ফেরিটি ডুবে যায়। ফেরিটি ৫০ কিলোমিটার দূরের বালির গিলিমানুক বন্দরের উদ্দেশে যাত্রা করেছিল বলে জানিয়েছে জাতীয় উদ্ধারকারী সংস্থা।
সুরাবায়া সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ এজেন্সি জানিয়েছে, এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজন নিহত হয়েছে এবং ২৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও অন্তত ৩৮ জন নিখোঁজ রয়েছেন, যাদের খোঁজে আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল থেকে ফের উত্তাল সমুদ্রে অভিযান চালাচ্ছে উদ্ধারকারীরা।
ফেরিটিতে ৫৩ জন যাত্রী, ১২ জন ক্রু এবং ২২টি যানবাহন ছিল বলে জানানো হয়েছে।
বানিউয়াঙ্গি পুলিশের প্রধান রামা সামতামা পুত্র বলেন, উত্তাল ঢেউয়ের মধ্যে দীর্ঘ সময় ভেসে থাকার পর অনেককে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
তিনি বলেন, নিখোঁজদের সন্ধানে এখন পর্যন্ত দুটি টাগবোট ও দুটি ইনফ্ল্যাটেবল বোটসহ মোট ৯টি নৌযান অংশ নিয়েছে। প্রায় ২ মিটার (সাড়ে ৬ ফুট) উচ্চতার ঢেউয়ের মধ্যে রাতভর উদ্ধার কাজ চালিয়েছে দলটি।
১৭ হাজারের বেশি দ্বীপ নিয়ে গঠিত ইন্দোনেশিয়া। দেশটিতে ফেরি যোগাযোগের জনপ্রিয় মাধ্যম হলেও প্রায়ই সেখানে নিরাপত্তা বিধিনিষেধ মানা হয় না। এর ফলে নৌ-দুর্ঘটনাও ঘটে হরহামেশা।
১৬৫ দিন আগে