মধ্যপ্রাচ্য
ইসরায়েলে লক্ষ বছরের পুরনো সমাধি আবিষ্কার, প্রাচীন মানুষ দিচ্ছে নতুন ধারণা
সম্প্রতি ইসরায়েলে অবস্থিত একটি গুহায় একটি প্রাচীন সমাধিস্থলের সন্ধান পেয়েছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। সেখানে প্রায় এক লাখ বছর আগের প্রাচীন মানবজাতির দেহাবশেষ বেশ ভালোভাবে সংরক্ষিত ও সুশৃঙ্খলভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে বলে দাবি করেছেন তারা।
চলতি বছরের মার্চ মাসে মধ্য ইসরায়েলের টিনশেমেত গুহায় ওই সমাধিস্থানটি আবিষ্কার করা হয়ে বলে নেচার হিউম্যান বিহেভিয়ার নামের একটি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
এই আবিষ্কার প্রাচীন মানুষদের দেহাবশেষ ও কবর নিয়ে চলমান গবেষণাকে আরও সমৃদ্ধ করবে বলে ধারণা করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রত্নতাত্ত্বিকরা জানান, দেহাবশেষের পাশে কিছু বস্তু পাওয়া গেছে। সেগুলো মৃতদের সম্মান জানাতে আচার-অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা।
প্রাচীনকালের মানুষদের আধ্যাত্মিকতা ও পরকাল সম্পর্কে কী ভাবতেন এ ধরনের বস্তু থেকে জানার চেষ্টা করা হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা।
টিনশেমেত গুহার খনন কাজে অংশ নেওয়া জেরুজালেমের হিব্রু ইউনিভার্সিটির প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ইয়োসি জেইডনার বলেন, মানব প্রজাতির জন্য এই কবরস্থান আবিষ্কার একটি অসাধারণ ও বিপ্লবাত্মক উদ্ভাবন।
২০১৬ সাল থেকে টিনশেমেতে কাজ করা প্রত্নতাত্ত্বিকরা বিভিন্ন প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার থেকে ১ লাখ বছর আগের পাঁচজন প্রাচীন মানবদেহের অবশেষ আবিষ্কার করেছেন।
জেইডনার বলেন, কঙ্কালগুলো গর্তে পাওয়া গেছে। সেগুলো প্রচলিত সমাধিস্থ করার রীতিতে ভ্রূণাকৃতি অবস্থায় সাজানো ছিল। অনেক কঙ্কালের সঙ্গেই ব্যাসল্ট পাথরের নুড়ি, প্রাণীর দেহাবশেষ বা গেরুয়া রঙের খনিজ পদার্থের টুকরো পাওয়া গেছে। এসব খনিজ লৌহসমৃদ্ধ শিলা থেকে তৈরি এক ধরনের লালচে রঞ্জক।
এসব বস্তু প্রাত্যহিক জীবনে ব্যবহার উপযোগী নয়। এগুলো মৃতদের সম্মান জানাতে আচার বা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল বলে ধারণা করছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা।
আরও পড়ুন: মাথা-ঘাড়ের ক্যানসারে দ্বিগুণ কার্যকরী ওষুধ আবিষ্কার
কী জানা গেল এই সমাধি থেকে
টিনশেমেত গুহাটি হলো মধ্য ইসরায়েলের পাহাড়ি ঢালের মধ্যে একটি অন্ধকার ফাটলের মতো। গুহাটিতে শোনা যায় অসংখ্য বাদুরের চেঁচামেচি। গুহার ভেতর ও চারপাশে রয়েছে একটি সাধারণ পাথরের ঢিবি। এই গুহাটিকে মানব বিবর্তন ও প্রাগৈতিহাসিক যুগে মানুষের আচরণ বোঝার জন্য বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিন-চারটি স্থানের একটি বলে অভিহিত করেছেন প্রত্নতত্ত্ববিদ ইয়োসি জেইডনার।
প্রস্তরযুগ হিসেবে পরিচিত প্যালিওলিথিক যুগ শুরু হয়েছিল প্রায় ৩৩ লাখ বছর আগে এবং তা স্থায়ী ছিল আনুমানিক ১০ হাজার বছর আগ পর্যন্ত। টিনশেমেত গুহাটি মধ্য-প্যালিওলিথিক যুগের, যা প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৩০ হাজার বছর আগের সময়কালকে নির্দেশ করে।
ওই গুহায় আবিষ্কারের মধ্যে ছিল পাঁচজন প্রাচীন মানুষের দেহাবশেষ। এর মধ্যে দুটি সম্পূর্ণ কঙ্কাল এবং তিনটি বিচ্ছিন্ন খুলি যেগুলোর সঙ্গে অন্যান্য হাড় ও দাঁতও ছিল।
আরও গুরুত্বপূর্ণ বন্তুর মধ্যে ছিল— বিভিন্ন আকারের শতাধিক লাল ও কমলা রঙের গেরুর টুকরো। সেগুলো লৌহসমৃদ্ধ পাথর যা নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় গরম করে তৈরি রঞ্জক পদার্থ। এটি প্রমাণ করে যে প্রাচীন মানুষেরা অলঙ্কার বা সাজসজ্জার বস্তু তৈরির কৌশল জানত।
জেইডনারের ভাষ্যে, এখানে আমরা মানুষের এমন একটি জটিল আচরণ দেখতে পাচ্ছি যেটি শুধু খাদ্য বা বেঁচে থাকার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের কনেকটিকাট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউশনের হিউম্যান অরিজিনস প্রোগ্রামের গবেষণা সহযোগী ক্রিশ্চিয়ান ট্রায়ন বলেন, বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে সময়ের সঙ্গে হারিয়ে গেলেও ইসরায়েলের এই অঞ্চলের জলবায়ুর কারণে টিনশেমেতে হাড়, সরঞ্জাম ও অলংকারের নিখুঁত সংরক্ষণ সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘প্রায়ই জ্বলে ওঠা অগ্নিকুণ্ড থেকে ছড়ানো ছাইয়ের কারণে দেহাবশেষ ও বস্তুগুলো এতো ভালোভাবে সংরক্ষিত হয়েছে।’
‘সম্ভবত ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের জন্য আগুন জ্বালানো হতো। এই বিপুল পরিমাণ ছাই বৃষ্টির পানি এবং ইসরায়েলের অম্লধর্মী চুনাপাথরের সঙ্গে মিশে সংরক্ষণের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করেছে।’
এক খননকারী জানান, একটি কঙ্কাল এতটাই ভালো অবস্থায় ছিল যে গবেষকেরা দেখতে পেয়েছেন, দুই হাত মাথার নিচে রাখা অবস্থায় আঙুলগুলো কীভাবে একে অপরের ভেতরে গুঁজে রাখা ছিল।
আরও পড়ুন: বানরেরাও অপহরণ করে! বিজ্ঞানীদের অদ্ভুত আবিষ্কার
আগের গবেষণার ভিত্তি মজবুত করেছে এই গবেষণা
টিনশেমেতের আবিষ্কার উত্তর ইসরায়েলের স্কুল গুহা ও কাফজে গুহার আগের আবিষ্কারগুলোকে আরও মজবুত ভিত্তি দিচ্ছে বলে জানান ট্রায়ন। স্কুল গুহা প্রায় ১০০ বছর আগে এবং কাফজে প্রায় ৫০ বছর আগে খনন করা হয়েছিল।
ট্রায়ন বলেন, ‘ওই স্থানগুলো নিয়ে বহু অনিশ্চয়তা ছিল। কিন্তু টিনশেমেত প্রমাণ করছে যে এটি একটি নির্দিষ্ট ধারা এবং গবেষকেরা এখন তারিখ নির্ধারণেও নির্ভুল হতে পারছেন।’
টিনশেমেত প্রত্নতত্ত্ববিদদের ধারণা, ওই সময় মানুষের মধ্যে কবর দেওয়ার রীতি অনেক বেশি ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। তাছাড়া প্রাচীন মানুষ কীভাবে মৃতদের সম্মান জানাতো সেক্ষেত্রে মৌলিক পরিবর্তনেরও ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
কিছু প্রত্নতত্ত্ববিদ বিশ্বাস করেন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সমাধি দেওয়ার প্রক্রিয়া আরও আগেই শুরু হয়েছিল। দক্ষিণ আফ্রিকায় হোমো নালেদি নামক এক প্রাচীন মানব প্রজাতি হয়তো ২ লাখ বছর আগেও গুহায় তাদের মৃতদের ইচ্ছাকৃতভাবে দাফন করত।
তবে এই দাবিকে ঘিরে বিতর্ক রয়েছে এবং অনেক গবেষক মনে করেন, এটি প্রমাণ করার মতো যথেষ্ট উপাত্ত এখনও পাওয়া যায়নি।
দুই মহাদেশের সংযোগস্থল ছিল ইসরায়েল
প্রাচীনকালে ইসরায়েল ছিল ইউরোপ থেকে আসা নিয়ান্ডারথাল এবং আফ্রিকা থেকে আসা হোমো সেপিয়েন্স প্রজাতির মানবজাতির মধ্যে এক সেতুবন্ধন। প্রত্নতত্ত্ববিদরা এই অঞ্চলে প্রাচীন মানব প্রজাতির আরও কিছু উপশাখা চিহ্নিত করেছেন। তারা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করত এবং এমনকি বিবাহবন্ধনেও আবদ্ধ হতে পারে বলে মনে করেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা।
টিনশেমেত থেকে পাওয়া দুটি সম্পূর্ণ কঙ্কালের ওপর গবেষণা বহু বছর ধরেই চলছে। তবে তারা নিয়ান্ডারথাল নাকি হোমো সেপিয়েন্স, নাকি সংকর জনগোষ্ঠী কিংবা একেবারে অন্য কোনো প্রজাতির তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
জেইডনার বলেন, এই উপশাখাগুলোর মিশ্রণের ফলে বিভিন্ন মানবগোষ্ঠীর মধ্যে জ্ঞান বিনিময় বা নিজেদের পরিচয় প্রকাশের সুযোগ তৈরি হয়েছিল। এই সময় থেকেই প্রত্নতত্ত্ববিদরা প্রাথমিক অলঙ্কার বা শরীর রাঙানোর প্রমাণ দেখতে শুরু করেন যা সম্ভবত একধরনের সামাজিক চিহ্ন বা গোষ্ঠীভুক্তির ইঙ্গিত, অর্থাৎ ‘আমরা’ বনাম ‘তারা’— এই সীমারেখা তৈরির চিহ্ন।
আরও পড়ুন: গবাদিপশুর ম্যাসটাইটিস ভ্যাক্সিন আবিষ্কার করলেন বাকৃবির অধ্যাপক
ভূমির মালিকানা দাবি
তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরবৃত্তীয় নৃতত্ত্ববিদ ও টিনশেমেত প্রকল্পের সহ-পরিচালক ইসরায়েল হার্শকোভিৎস বলেন, প্রাগৈতিহাসিক জীবনে সমাধির ধারণাটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি একটি নিজস্ব এলাকাকে বোঝায়।
তিনি বলেন, ‘এই অঞ্চলে আজও পূর্বপুরুষের সমাধি যেখানে রয়েছে, সেই ভূমি নিজেদের দাবি করার ঐতিহ্য আমরা দেখি। এটি প্রতিবেশীদের প্রতি একধরনের বার্তা, ‘এই জমি আমার বাবার, দাদার, তারও আগের প্রজন্মের। অর্থাৎ, আমাদের পূর্বপুরুষদের।’
১৩১ দিন আগে
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত অস্ত্র ত্যাগ করবে না হামাস
একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত অস্ত্র ত্যাগ না করার ঘোষণা দিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এ ঘোষণার মাধ্যমে গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে চলমান আলোচনায় ইসরায়েলের একটি প্রধান দাবি প্রত্যাখ্যান করল সংগঠনটি।
স্থানীয় সময় শনিবার (২ আগস্ট) এ ঘোষণা দেয় হামাস। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফের এক বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় হামাস এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।
এর আগে উইটকফ বলেছিলেন, হামাস অস্ত্র ত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। তবে তা সত্য নয় বলে দাবি হামাসের।
এদিকে, ঘোষণাটি এমন এক সময়ে এসেছে যখন গাজা যুদ্ধ বন্ধ ও ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির লক্ষ্যে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা স্থবির হয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, মিসর ও কাতারের মধ্যস্থতায় চলমান ওই আলোচনায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির কথা ছিল।
বিবিসি বলেছে, হামাস অস্ত্রত্যাগ না করলে কোনো চুক্তিতে আসতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ইসরায়েল। অন্যদিকে হামাস বলছে, জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন, পুরোপুরি সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত সশস্ত্র প্রতিরোধের অধিকার ত্যাগ করা হবে না।
গত কয়েকদিনে বেশ কিছু আরব সরকারও হামাসকে নিরস্ত্র হয়ে গাজার নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিতে আহ্বান জানিয়েছে।
শুক্রবার (১ আগস্ট) ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়ায়াল জামির সতর্ক করে বলেন, দ্রুত জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে আলোচনা ব্যর্থ হলে গাজায় যুদ্ধের কোনো বিরতি থাকবে না।
আরও পড়ুন: যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ‘ইতিবাচক’ সাড়া দেওয়ার দাবি হামাসের
এদিকে, ফ্রান্স ও কানাডাসহ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ আগামী সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। যুক্তরাজ্য জানিয়েছে, ইসরায়েল সেপ্টেম্বরের মধ্যে যদি নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ না করে, তবে তারাও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে।
বর্তমানে গাজায় চলমান দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি নিয়ে ব্যাপক চাপের মুখে রয়েছে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এ পর্যন্ত গাজায় অনাহারে অন্তত ১৬৯ জনের মৃত্যু হয়েছে যার মধ্যে রয়েছে ৯৩টি শিশু।
এমন পরিস্থিতিতে তেল আবিব সফরে রয়েছেন উইটকফ। হামাসের হাতে জিম্মিদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন তিনি।
উইটকফ বলেন, সংঘাতের অবসান ও সব জিম্মিকে বাড়ি ফিরিয়ে আনাকে কেন্দ্র করেই শান্তি প্রচেষ্টা হওয়া উচিত।
সফরের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার তিনি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক করেন এবং শুক্রবার গাজার দক্ষিণাঞ্চলে এক বহুল সমালোচিত ত্রাণ বিতরণকেন্দ্র পরিদর্শন করেন।
আরও পড়ুন: অগ্রগতি ছাড়াই শেষ ইসরায়েল-হামাসের যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের আলোচনা
জাতিসংঘের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মে মাসের থেকে এ পর্যন্ত খাবার নিতে গিয়ে অন্তত ১ হাজার ৩৭৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
নিহতদের অধিকাংশই ইসরায়েলি ও যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) বিতরণকেন্দ্রের আশপাশে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন বলে দাবি তাদের।
তবে ইসরায়েলে দাবি, এসব বিতরণকেন্দ্রের আশেপাশে বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে হামাস। ইসরায়েলি সেনারা ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক মানুষকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় না।
১৩৪ দিন আগে
আমরা ধীরে ধীরে মরে যাচ্ছি: ক্ষুধার্ত গাজাবাসীর আর্তনাদ
একটা সময় পর্যন্ত বিশ্ব মানবাধিকার, আন্তর্জাতিক সহায়তার ওপর মানুষের চরম বিশ্বাস ছিল। কিন্তু ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে গাজার আজকের বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে সেসব যেন ধুলোয় ঢাকা কোনো গল্প।
এখন সেখানে প্রতিদিনকার দৃশ্য— শুকিয়ে যাওয়া শিশুদের কঙ্কালসার দেহ, খাবারের আশায় হাত বাড়িয়ে থাকা মানুষের সারি এবং বাবা-মায়ের অসহায় কান্না—যাদের চোখের সামনেই অনাহারে ধুঁকে ধুঁকে মরছে সন্তানরা।
‘আমার ৫ বছরের মেয়ের ওজন এখনও মাত্র ১১ কেজি,’ বলছিলেন গাজার ৩৮ বছর বয়সী জামিল মুঘারি। তিনি বলেন, আমার ছেলের শরীরে চামড়া আর হাড় ছাড়া কিছু নেই। যুদ্ধ শুরুর পর আমি নিজেও ৩০ কেজি ওজন হারিয়েছি।
এটিই এখন গাজার প্রত্যাহিক চিত্র— শুধু যুদ্ধ নয়, এখন ক্ষুধাই হয়ে উঠেছে এখানকার নতুন মারণাস্ত্র।
দুর্ভিক্ষ: এখন আর আশঙ্কা নয়, বাস্তবতা
গত সপ্তাহে জাতিসংঘ-সমর্থিত ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেইজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) জানিয়েছে, গাজা এখন চরম মাত্রার দুর্ভিক্ষে পতিত হয়েছে।
আইপিসি জানায়, গাজায় ২২ লাখ মানুষকে যেন একটি বন্দি চেম্বারে আটকে রাখা হয়েছে। সেখানে বাইরে থেকে ত্রাণ সহায়তা প্রবেশ করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে, আর ভেতরে কোনো খাদ্য নেই, কর্মসংস্থান নেই, আশ্রয় নেই— আছে শুধু ধ্বংসস্তূপ আর কান্না।
পড়ুন: গাজায় আগ্রাসনের প্রতিবাদে ইসরায়েলের সঙ্গে অস্ত্র বাণিজ্য বন্ধ করল স্লোভেনিয়া
মুঘারি বললেন, ‘আমি ও আমার পরিবার এমনও দিন কাটাই যেদিন খাবারের জন্য একেবারেই কিছু খুঁজে পাই না। সেসব দিন শুধু পানি খেয়ে পেট ভরাতে হয়। খাবার না পেয়ে এমন হয়েছে, মাঝেমধ্যে হাঁটতে গিয়েও দুর্বলতার কারণে পড়ে যেতে যেতে নিজেকে সামলাই। কারণ, সন্তানরা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।’
১৩৫ দিন আগে
গাজায় আগ্রাসনের প্রতিবাদে ইসরায়েলের সঙ্গে অস্ত্র বাণিজ্য বন্ধ করল স্লোভেনিয়া
গাজায় সামরিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের অস্ত্র আমদানি, রপ্তানি ও পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য দেশ স্লোভেনিয়া।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) রাতে দেওয়া এক সরকারি ঘোষণায় স্লোভেনিয়া সরকার জানায়, এটি ইউভুক্ত কোনো সদস্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নেওয়া প্রথম নিষেধাজ্ঞা।
স্লোভেনিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদসংস্থা এসটিএ’র খবরে বলা হয়, এর আগে স্লোভেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট গোলোব বেশ কয়েকবার বলেছিলেন, ইইউ যদি সম্মিলিতভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তার দেশ এককভাবে পদক্ষেপ নেবে।
দেশটির সরকারি বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়, ‘ইইউ অভ্যন্তরীণ বিভাজনের কারণে এই মুহূর্তে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে অক্ষম। এমন ব্যর্থতার কারণে লজ্জাজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। পদ্ধতিগতভাবে মানবিক সহয়াতায় ইসরায়েলি বাধার কারণে (গাজায়) অসংখ্য মানুষ মারা যাচ্ছে। তারা পানীয় জল, খাদ্য ও প্রাথমিক চিকিৎসা না পেয়ে মারা পড়ছে।’
যদিও স্লোভেনিয়ার সঙ্গে ইসরায়েলের অস্ত্র বাণিজ্য প্রায় নেই বললেই চলে, তবু এ নিষেধাজ্ঞাটি কূটনৈতিকভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: অনাহারে ১২৭ প্রাণহানির পর গাজায় ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি ইসরায়েলের
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অস্ত্র বাণিজ্য বিশ্লেষক জাইন হুসেইন বলেন, ‘স্লোভেনিয়ার এই নিষেধাজ্ঞা প্রতীকী হলেও তাৎপর্যপূর্ণ।’
এর আগে স্লোভেনিয়া সরকার জুলাই মাসে চরম সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে দুইজন কট্টর ডানপন্থী ইসরায়েলি মন্ত্রীর দেশটিতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
সম্প্রতি, ইসরায়েলে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র সহায়তা বন্ধের তদবির করা আর্মস কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী পরিচালক ড্যারিল কিমবাল বলেন, ‘স্লোভেনিয়ার এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইন এবং মানবতার মৌলিক মূল্যবোধকে সম্মান দেখানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’
২০২৪ সালের জুনে স্লোভেনিয়ার পার্লামেন্ট ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়। এর আগে ইউরোপের আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে ও স্পেনও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছিল।
ইতোপূর্বে স্পেন, নেদারল্যান্ডস ও যুক্তরাজ্য আংশিক অস্ত্র রপ্তানি বন্ধ করলেও স্লোভেনিয়ার মতো পূর্ণাঙ্গ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি। স্লোভেনিয়ার এই পদক্ষেপ ইউরোপে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান প্রতিক্রিয়ারই একটি বহির্প্রকাশ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
১৩৫ দিন আগে
ত্রাণ নিতে গিয়ে প্রাণ গেল আরও ৪৮ ফিলিস্তিনির
গাজা উপত্যকায় ত্রাণ নিতে গিয়ে আরও অন্তত ৪৮ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরও অনেকে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৩০) এ হতাহতের তথ্য জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
এই হামলা ও হতাহতের ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটেছে, যখন চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য ইসরায়েল সফরে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিফ উইটকফ।
গাজা শহরের শিফা হাসপাতাল জানিয়েছে, নিহত ও আহতরা জিকিম ক্রসিং এলাকায় জড়ো হয়েছিলেন। এটি উত্তর গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের প্রধান পথ। তবে কে গুলি চালিয়েছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট হয়নি এবং ওই ক্রসিংয়ের নিয়ন্ত্রণে থাকা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে, আল-সারায়া ফিল্ড হাসপাতাল জানিয়েছে, তাদের হাসপাতালে শতাধিক আহত ও নিহতদের নিয়ে আসা হয়েছে।
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জরুরি বিভাগের প্রধান ফারেস আওয়াদ জানান, কিছু লাশ অন্য হাসপাতালেও নেওয়া হয়েছে। এ কারণে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত ইসরায়েলি বিমান হামলা ও গুলিতে অন্তত ৪৬ ফিলিস্তিনি নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই খাবারের খোঁজে জড়ো হয়েছিলেন।ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এই হামলাগুলোর বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। সেনাবাহিনীর দাবি, তারা কেবল যোদ্ধাদের লক্ষ্য করেই হামলা চালায়। তাছাড়া বেসামরিক মৃত্যুর জন্য হামাসকেই দায়ী করে। কারণ তাদের ভাষ্যে, হামাসের যোদ্ধারা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় অবস্থান নেন।
আরও পড়ুন: ইসরায়েলি আগ্রাসনে ফিলিস্তিনিদের প্রাণহানি ছাড়ালো ৬০ হাজার
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, অনাহারে এক শিশুসহ আরও সাত ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে অনাহারে ৮৯ শিশু প্রাণ হারিয়েছে। প্রাপ্তবয়স্ক ৬৫ ফিলিস্তিনি মারা গেছেন।
ত্রাণ প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করলেও রয়ে গেছে বাধা
গাজায় ত্রাণ প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কারণে উপত্যকাটি ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের মুখে পড়েছে। একের পর এক অনাহারে মৃত্যুর পর আন্তর্জাতিক চাপের কারণে গাজায় ত্রাণ প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা কিছুটা শিথিল করেছে ইসরায়েল।
তবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দাবি, গাজায় যে পরিমাণ ত্রাণ প্রয়োজন, তা সম্পূর্ণভাবে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশে কাজ করা ইসরায়েলি সামরিক সংস্থা কোগাট জানিয়েছে, মঙ্গলবার গাজায় ২২০টিরও বেশি ট্রাক প্রবেশ করেছে।
তবে চলতি বছরের শুরুর দিকে যুদ্ধবিরতির সময় প্রতিদিন গড়ে জাতিসংঘের ৫০০–৬০০ ট্রাক ত্রাণ প্রবেশ করত। সে তুলনায় বর্তমানে পর্যাপ্ত ত্রাণ পাচ্ছেন না গাজাবাসী। তাছাড়া এখনো গাজায় প্রবেশ করা সহায়তা যথাযথভাবে বিতরণে হিমশিম খাচ্ছে জাতিসংঘ। কারণ অধিকাংশ ট্রাক ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় ভিড় করা জনতার মাধ্যমে খালাস হয়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: ত্রাণ প্রবেশে সীমিত যুদ্ধবিরতি নিয়ে উদ্বিগ্ন ফিলিস্তিনিরা
অন্যদিকে, ইসরায়েল-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) থেকে খাবার নিতে গিয়ে মে থেকে এ পর্যন্ত অন্তত এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।
দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানে এবার কানাডা ও মাল্টার সম্মতি
এদিকে, গাজায় ইসরায়েলের ক্রমাগত হামলা ও অনাহারে একের পর এক মৃত্যুতে নড়েচড়ে বসেছে পশ্চিমা বিশ্বও।
দ্বি-রাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধানের ভিত্তি ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের পর আগামী সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে কানাডা ও মাল্টা।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কারনি মন্ত্রিসভার এক বৈঠক শেষে এই ঘোষণা দেন। এর আগে মাল্টার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিব ক্রিস্টোফার কুটাজার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানবিষয়ক অধিবেশনে মাল্টার অবস্থান ঘোষণা করেন।
তবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার অর্থ হামাসের ‘সন্ত্রাসবাদ’ পুরস্কৃত করার শামিল হবে বলে মন্তব্য করেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
আরও পড়ুন: অনাহারে ১২৭ প্রাণহানির পর গাজায় ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি ইসরায়েলের
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা জানালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে নেতানিয়াহু লেখেন, ‘আজ ইসরায়েলের সীমান্তে একটি জিহাদি রাষ্ট্র গড়া হলে, কাল সেটি আপনাদের জন্যেই হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।’
১৩৭ দিন আগে
ইসরায়েলি আগ্রাসনে ফিলিস্তিনিদের প্রাণহানি ছাড়ালো ৬০ হাজার
ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনিদের নিহতের সংখ্যা ৬০ হাজার ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। এছাড়া ইসরায়েলের চলমান আগ্রাসনে গাজার প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) এ তথ্য জানায় গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তাদের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের অক্টোবরের পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় ৬০ হাজার ৩৪ জন নিহত এবং এক লাখ ৪৫ হাজার ৮৭০ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে অর্ধেকই নারী ও শিশু। তবে হতাহতের এ সংখ্যা নিয়ে সন্দিহান ইসরায়েল। যদিও তারা নিজেরা কোনো সংখ্যা প্রকাশ করেনি।
এদিকে, ২০ লাখ ফিলিস্তিনি বর্তমানে ইসরায়েলি হামলার পাশাপাশি ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের মুখে রয়েছে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ত্রাণ আনতে গিয়ে
গাজার আল-আওদা হাসপাতাল জানিয়েছে, সোমবার (২৮ জুলাই) নুসেইরাত আশ্রয়কেন্দ্রে ১২ শিশু ও ১৪ নারীসহ ৩০ জন নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে, দক্ষিণ গাজায় ত্রাণ নিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন আরও ৩৩ জন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ত্রাণের জন্য কিছু লোক জড়ো হলে তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
আবার, মধ্য গাজায় ‘গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন’ থেকে ত্রাণ নেওয়ার সময় মঙ্গলবার আরও ১৪ ফিলিস্তিনি নিহত হন।
এ নিয়ে মে মাস থেকে এ পর্যন্ত ত্রাণ নিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। যদিও ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, তারা কেবল হুমকি মনে করলে সতর্কতামূলক গুলি ছোড়ে। এছাড়া হামাসের উপস্থিতি টের পেলেই কোনো স্থাপনায় হামলা চালায় তারা।
আরও পড়ুন: রাতভর ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত ৭২
অনাহারে মৃত্যু
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, চলতি মাসে অপুষ্টিজনিত কারণে গাজায় ৬০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু রয়েছে ২৪ জন।
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অপুষ্টিজনিত কারণে মোট ৮৮ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শুধু চলতি মাসেই অপুষ্টিজনিত কারণে ৫৮ জন প্রাপ্তবয়স্কের মৃত্যু হয়েছে।
খাদ্য সংকট নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) জানিয়েছে, গাজা গত দুই বছর ধরে দুর্ভিক্ষের ধারপ্রান্তে রয়েছে। তবে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলেছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘গাজায় সৃষ্ট এই দুর্ভিক্ষ নিয়ে তথ্য-প্রমাণ স্পষ্ট— এবং সেগুলো অস্বীকার করার উপায় নেই।’
তবে ইসরায়েলের কারণে গাজায় দুর্ভিক্ষ তৈরি হয়েছে— এমন অভিযোগ অস্বীকার করে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডন সার বলেন, দুর্ভিক্ষ নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যে আলোচনা চলছে, তা বিকৃত আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগের একটি অংশ।
আকাশ থেকে ফেলা ত্রাণ সাঁতরে নিচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা
সম্প্রতি গাজায় ত্রাণ প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করেছে ইসরায়েল। এর পরপরই জর্ডান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিমানবাহিনীর কার্গো বিমান গাজায় আকাশপথে ত্রাণ ফেলতে শুরু করে। ফ্রান্স ও জার্মানিও এই কার্যক্রমে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছে।
তবে আকাশ থেকে ফেলা ত্রাণের বেশিরভাগই পড়ছে ‘রেড জোনে’, যেখান থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আগেই ফিলিস্তিনিদের সরে যেতে বলেছে।
মঙ্গলবার অনেককে ত্রাণের জন্য ভূমধ্যসাগরে ঝাঁপ দিতে দেখা গেছে। অনেককে ভেজা চায়ের প্যাকেট বা আটা নিয়ে ফিরতে দেখা গেছে। একজনের হাতে ছিল এক ক্যান শস্যদানা।
আরও পড়ুন: গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ৯৪ ফিলিস্তিনি নিহত
মোমেন আবু আতাইয়া নামে এক ফিলিস্তিনি বলেন, ‘আমি ত্রাণ নিতে সাগরে নেমেছিলাম। প্রায় ডুবে যাচ্ছিলাম। শেষ পর্যন্ত মাত্র তিন প্যাকেট বিস্কুট সংগ্রহ করতে পেরেছি।’
জাতিসংঘ ও অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরেই গাজায় আকাশপথে ত্রাণ পাঠানো নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে আসছে। তাদের মতে, এই পদ্ধতিতে ত্রাণ দেওয়া ব্যয়বহুল এবং স্থলপথে সহায়তা পাঠানোর তুলনায় অনেক কম ত্রাণ পৌঁছায়।
তাছাড়া ত্রাণের প্যাকেটগুলো ভিড়ের মধ্যে পড়লে আহত বা নিহত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। সেই সঙ্গে হাজারো মানুষ একত্রে ছুটে আসায় মারাত্মক পদদলিত হওয়ার ঘটনাও ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা জানিয়েছেন তারা।
১৩৮ দিন আগে
ত্রাণ প্রবেশে সীমিত যুদ্ধবিরতি নিয়ে উদ্বিগ্ন ফিলিস্তিনিরা
গত কয়েক সপ্তাহে অনাহারে বহু ফিলিস্তিনির মৃত্যুর পর অবশেষে গাজা উপত্যকায় বাইরে থেকে খাদ্য সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে ইসরায়েল। এই খাদ্য সহায়তা পৌঁছানোর জন্য প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত অভিযান বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। তবে এই সীমিত যুদ্ধবিরতি নিয়ে উদ্বিগ্ন ফিলিস্তিনিরা।
স্থানীয় সময় রবিবার (২৭ জুলাই) থেকে আকাশ ও স্থলপথে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী ও পক্ষ থেকে গাজায় ত্রাণ ঢুকতে শুরু করে।
এর আগে এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, গাজায় মানবিক পরিস্থিতির অবনতি মোকাবিলায় নেওয়া পদক্ষেপের অংশ হিসেবে তিনটি এলাকার চলমান অভিযানে ‘কৌশলগত বিরতি’ ঘোষণা করা হবে। রবিবার থেকে পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন স্থানীয় সময় সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মুওয়াসি, দেইর আল-বালাহ ও গাজা শহরে সামরিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। তবে অন্যান্য এলাকায় অভিযান অব্যাহত থাকবে।
দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের কঠোর অবরোধের কারণেই গাজার এই খাদ্যসংকট তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে জাতিসংঘ। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেছে ইসরায়েল।
আরও পড়ুন: অনাহারে ১২৭ প্রাণহানির পর গাজায় ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি ইসরায়েলের
রবিবার রাতে বিমান থেকে ফেলার একটি ভিডিও প্রকাশ করে ইসরায়েল। এতে দেখা যায়, আটা, চিনি ও টিনজাত দ্রব্য ফেলা হচ্ছে। এছাড়া, জর্ডান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতও রবিবার দুপুরে ত্রাণবাহী বিমান থেকে সহায়তা ফেলেছে।
ইসরায়েল আরও জানিয়েছে, জাতিসংঘ যেন খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ করতে পারে সে জন্য মানবিক করিডর চালু করা হবে এবং একটি পানি পরিশোধন কেন্দ্র চালু করে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে।
তবে গাজার বাসিন্দারা এই ত্রাণবিরতিকে সন্দেহের চোখে দেখেছেন। অনেকেই নানা ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
কারণ, রবিবার যুদ্ধবিরতির পরপরই গাজার একটি ভবনে ইসরায়েলি বিমান হামলায় এক নারী ও তার চার সন্তান নিহত হন। এছাড়াও, মধ্য গাজার আল-আকসা ও আল-আওদা হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা মানুষের ওপর ইসরায়েলি গুলিতে অন্তত ১৭ জন নিহত হয়েছেন।
গাজার গণিত শিক্ষক ও সাত সন্তানের বাবা ইয়াদ আল-বান্না বলেন, ‘মানবিক করিডর খোলা হলেও মজুদ সংকট এত গভীর, এটি এক বা দুই সপ্তাহ চললেও তেমন পরিবর্তন আসবে না। দুর্ভিক্ষ সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে।’
তিনি আরও জানান, রবিবার বাজারে আটা ছাড়া অন্য কোনো পণ্যের সরবরাহ বা দামে তেমন পরিবর্তন দেখা যায়নি; আটার দাম রাতারাতি প্রায় ২০ শতাংশ কমেছে।
আল-নাসের হাসপাতালে কর্মরত এক চিকিৎসক জানান, অপুষ্ট শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় কোনো চিকিৎসা সহায়তা এখনো হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছেনি।
এছাড়া, আকাশপথে ত্রাণ সরবরাহ নিয়েও অনেকে সমালোচনা করেছেন। উত্তর গাজার এক শিক্ষাবিদ হিকমাত আল-মাসরি বলেন, ‘আকাশপথে ত্রাণ সরবরাহ পদ্ধতিটি ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য অপমানজনক। যুদ্ধের শুরুতে এই ব্যবস্থা বহু বেসামরিক নাগরিকের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল।’
আরও পড়ুন: ইরানে আদালতে সশস্ত্র হামলায় নিহত ৯, আহত ২২
রবিবারও আকাশ থেকে ফেলা ত্রাণের প্যাকেটের আঘাতে ১০ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা প্রধান টম ফ্লেচার জানান, রবিবার গাজায় কিছু ক্ষেত্রে চলাচলের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা শিথিল করেছে ইসরায়েল। এক সপ্তাহের জন্য সহায়তা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি।তিনি বলেন, ‘এটা কিছুটা অগ্রগতি, তবে দুর্ভিক্ষ ও স্বাস্থ্য সংকট রোধে বিশাল পরিমাণ ত্রাণ প্রয়োজন।’
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত গাজায় অনাহারে অন্তত ১৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি শিশু। তবে গাজায় দুর্ভিক্ষ চলছে—এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইসরায়েল। তাদের অভিযোগ, জাতিসংঘ যথাযথভাবে সহায়তা বিতরণ করতে ব্যর্থ।
তবে জাতিসংঘ বলেছে, তারা গাজায় ত্রাণ পাঠানোর জন্য যে অনুরোধগুলো করেছে, তার বেশিরভাগই ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বাতিল করেছে। অক্সফামের অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড বিষয়ক প্রধান বুশরা খালিদি বলেন, ‘এখন যা প্রয়োজন, তা হলো গাজার সব সীমান্ত অবিলম্বে খুলে দিয়ে পূর্ণ, নিরবচ্ছিন্ন ও নিরাপদ সহায়তা প্রবেশ নিশ্চিত করা এবং একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি। এর কম কিছু হলে তা কেবল একটি কৌশলগত চাল হিসেবেই বিবেচিত হবে।’
এদিকে, স্কটল্যান্ড সফরে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইসরায়েলকে গাজা পরিস্থিতি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
তিনি আরও জানান, গত সপ্তাহে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ও বন্দিমুক্তির আলোচনা থেকে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র সরে দাঁড়িয়েছে। এরপর কী ঘটবে, তা তিনি জানেন না।
১৪০ দিন আগে
অনাহারে ১২৭ প্রাণহানির পর গাজায় ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি ইসরায়েলের
অনাহারে একের পর এক ফিলিস্তিনি মৃত্যুবরণ করায় আন্তর্জাতিক চাপের পরিপ্রেক্ষিতে অবশেষে গাজায় বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে ইসরায়েল। ইতোমধ্যে মিসর থেকে ত্রাণের ট্রাকগুলো গাজার থেকে যাত্রা শুরু করেছে বলে জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ব আল কাহেরা নিউজ টিভি।
স্থানীয় সময় শনিবার (২৬ জুলাই) গাজায় ত্রাণ প্রবেশের জন্য পুনরায় মানবিক করিডর চালুসহ আকাশ থেকে ত্রাণ ফেলার (এয়ারড্রপ) কার্যক্রম শুরু করার কথা জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
গাজায় চলমান দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েল।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গাজায় মানবিক পরিস্থিতির অবনতি মোকাবিলায় নেওয়া পদক্ষেপের অংশ হিসেবে তিনটি এলাকার চলমান অভিযানে ‘কৌশলগত বিরতি’ ঘোষণা করা হবে। রবিবার থেকে পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন স্থানীয় সময় সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মুওয়াসি, দেইর আল-বালাহ ও গাজা শহরে সামরিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
যদিও বর্তমানে এসব এলাকায় সক্রিয়ভাবে অভিযান চালাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তারা। তবে গত কয়েক সপ্তাহে এসব এলাকায় লড়াই ও হামলা হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আরও জানিয়েছে, গাজায় ত্রাণ সংস্থাগুলোকে খাদ্য ও অন্যান্য সহায়তা পৌঁছাতে সহায়তার জন্য নিরাপদ রুটও নির্ধারণ করবে তারা।
রবিবার (২৭ জুলাই) আল কাহেরা টিভির সংবাদদাতা জানিয়েছেন, মিসর ও গাজার মধ্যবর্তী রাফাহ সীমান্ত থেকে দক্ষিণ গাজার কারাম আবু সালেম (কেরেম শালোম) ক্রসিংয়ের উদ্দেশে বেশ কয়েকটি ট্রাকে করে শত শত টন ত্রাণসামগ্রী পাঠানো হয়েছে।
এর পাশাপাশি ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ‘বিতর্কিত’ এয়ারড্রপও শুরু করেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সিএনএন।
আরও পড়ুন: ‘গাজায় বোমার চেয়ে বিধ্বংসী হয়ে উঠেছে ক্ষুধা’
এদিকে, মিডল ইস্ট আইয়ের খবরে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলোর সহযোগিতায় পরিচালিত এয়ারড্রপে সাতটি প্যালেটে ময়দা, চিনি এবং টিনজাত খাদ্যদ্রব্যের মতো সামগ্রী থাকবে, যেগুলো বিদেশি অংশীদাররা সরবরাহ করবে।
তবে মানবিক সংস্থাগুলোর মতে, এই ধরনের এয়ারড্রপ মূলত প্রতীকী পদক্ষেপ এবং এটি কোনোভাবে স্থলপথে ত্রাণ সরবরাহের বিকল্প হতে পারে না।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আরও জানিয়েছে, তারা গাজায় একটি পানি পরিশোধন প্ল্যান্ট সম্প্রসারণে সহায়তা করবে এবং সেটিকে ইসরায়েলি বিদ্যুৎ সংযোগে যুক্ত করবে, যদিও গত ২১ মাসের অব্যাহত অভিযানে গাজার অধিকাংশ পানি ও বিদ্যুৎ অবকাঠামো ধ্বংস করেছে ইসরায়েল।
এরই মধ্যে গাজার দিকে ত্রাণবাহী জাহাজ নিয়ে আসার পথে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ফ্রান্সের ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য ও গাজামুখী হানদালা মিশনের সদস্য এমা ফোরো জানিয়েছেন, ইসরায়েলি বাহিনী তাদের জাহাজের কাছে চলে এসেছে।
তিনি আরও জানান, নিজেদের মোবাইল ফোন তারা সাগরে ছুঁড়ে ফেলার পরিকল্পনা করছেন।
এদিকে, গাজায় পুনরায় ত্রাণ প্রবেশ করতে দেওয়ার সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন কট্টরটন্থি নেতা ও ইসরায়েলে জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গাভির।
আরও পড়ুন: খাবার নিতে গিয়ে নিহত আরও ৯৩ ফিলিস্তিনি, ‘বর্বরতা’ বন্ধের আহ্বান পোপের
সিএনএননের খবরে অনুযায়ী, গাজায় এই ত্রাণ প্রবেশ করতে দেওয়াকে ‘হামাসের কাছে আত্মসমর্পণ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
গত মার্চে গাজায় জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার ত্রাণ প্রবেশ নিষিদ্ধ করে ইসরায়েলে। এতে প্রায় ২০ লাখ গাজাবাসী চরম খাদ্যসংকটে পড়েন। বিভিন্ন বিশেষজ্ঞরা অনেকদিন ধরেই দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা জানিয়ে আসছিলেন। পাশাপাশি অবরোধ পুরোপুরি প্রত্যাহার করে এবং মানবিক সহায়তার জন্য অবাধ প্রবেশাধিকার দিতে ত্রাণ সংস্থাগুলো এবং জাতিসংঘের কর্মকর্তারা ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন।
তবে হামাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে জাতিসংঘ বা অন্য কোনো মানবাধিকার সংস্থার ত্রাণ এত দিন ঢুকতে দেয়নি ইসরায়েল। মাঝে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে চলতি বছরের মে থেকে গাজা হিউম্যানেটিরিয়ান ফাউন্ডেশন চালু করে তারা। তবে এই সংস্থাটির দেওয়া ত্রাণ ছিল গাজাবাসীর জন্য খুবই অপ্রতুল। ফলে উপত্যকাটিতে ছড়িয়ে পড়ে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ।
দুর্ভিক্ষে এখন পর্যন্ত ১২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে মিডল ইস্ট আই। এর মধ্যে অন্তত ৮৫টি শিশু বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি। গত ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই দুই শিশুসহ পাঁচ ফিলিস্তিনির অনাহারে মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক।
১৪১ দিন আগে
ইরানে আদালতে সশস্ত্র হামলায় নিহত ৯, আহত ২২
পাকিস্তান ও আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী ইরানের সিস্তান ও বেলুচিস্তান প্রদেশের একটি আদালতে সশস্ত্র হামলায় অন্তত ৯ জন নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন অন্তত আরও ২২ জন।
শনিবার (২৬ জুলাই) প্রদেশের রাজধানী জাহেদানে এই ঘটনাটি ঘটে। এই হামলার দায় স্বীকার করেছে সুন্নি সশস্ত্র গোষ্ঠী জাইশ আল-আদল বালুচ।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ইরনার তথ্যনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে তিনজন হামলাকারী, একজন শিশু, ৬০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধা এবং তিনজন নিরাপত্তারক্ষী ও সেনা রয়েছে। বাকি একজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
প্রদেশের ডেপুটি পুলিশ কমান্ডার আলিরেজা দালিরি বলেন, হামলাকারীরা দর্শনার্থীর ছদ্মবেশে ভবনে প্রবেশ করে।
প্রাদেশিক বিচার বিভাগের প্রধান জানান, হামলাকারীরা বিস্ফোরকভর্তি ভেস্ট ও গ্রেনেড বহন করছিল। তারা আদালতের বিচারকদের কক্ষ লক্ষ্য করে হামলা চালায়। তবে বিস্ফোরকগুলো তারা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে কিনা—তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
হামলার পর জাইশ আল-আদল এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, তারা বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা বাহিনীর অন্তত ৩০ সদস্যকে হত্যা করেছে। বলেছে, বালুচ নাগরিকদের মৃত্যুদণ্ড ও ঘরবাড়ি ধ্বংসের আদেশ দেওয়া বিচারক ও আদালত কর্মীদের লক্ষ্য করেই এই অভিযান চালানো হয়েছে।
পড়ুন: থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সীমান্ত সংঘর্ষের নেপথ্যে কী?
গোষ্ঠীটি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, ‘বিচার বিভাগের সব কর্মচারী ও বিচারকরা মনে রাখবেন, বেলুচিস্তান আর তাদের জন্য নিরাপদ থাকবে না। প্রতিশোধ না নেওয়া পর্যন্ত মৃত্যু তাদের ছায়ার মতো অনুসরণ করবে।’
বালুচ মানবাধিকার সংস্থা হালভশ প্রত্যক্ষদর্শীদের উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, হামলায় একাধিক বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা সদস্য নিহত বা আহত হয়েছেন।
সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশটি আফগানিস্তান ও পাকিস্তান সীমান্তবর্তী এবং ইরানের সংখ্যালঘু সুন্নি মুসলিম বালুচ জনগোষ্ঠীর আবাসস্থল। অঞ্চলটি দীর্ঘদিন ধরে নিরাপত্তা বাহিনী ও সুন্নি বিদ্রোহী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘর্ষের কেন্দ্রস্থল।
দীর্ঘদিন ধরে তেহরানের অভিযোগ, এসব গোষ্ঠীর কিছু বিদেশি শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক এবং চোরাচালান ও বিদ্রোহে সম্পৃক্ত। প্রদেশটি ইরানের অন্যতম অনুন্নত অঞ্চল। বেলুচরা সাধারণত সুন্নি মুসলমান, যেখানে ইরানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ শিয়া।
সূত্র: বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা
১৪২ দিন আগে
‘গাজায় বোমার চেয়ে বিধ্বংসী হয়ে উঠেছে ক্ষুধা’
ইসরায়েলি আগ্রাসনে ক্ষুধার রাজ্যে পরিণত হওয়া গাজা উপত্যকায় খাবার না পেয়ে আরও অন্তত ১০ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে মধ্য গাজা থেকে সাংবাদিক তারেক আবু আজ্জুম বলেছেন, ‘এখানে ক্ষুধা বোমার চেয়ে বিধ্বংসী হয়ে দাড়িঁয়েছে। বাসিন্দারা এখন পর্যাপ্ত খাবারের আশা করেন না। তারা যেকোনো খাদ্যবস্তুর জন্যই আশায় বুক বাঁধছেন।’
কাতারভিত্তিক মার্কিন সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এই প্রতিবেদক বলেন, ‘ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর সৃষ্ট দুর্ভিক্ষের ফলে এখানকার মানুষ ধীরে ধীরে যন্ত্রণাদায়ক পাশবিক মৃত্যুর দিকে ঢলে পড়ছে।’
২০২৩ সালের অক্টোবরে শুরু হওয়া সংঘাতে এখন পর্যন্ত ১১১ জন ফিলিস্তিনি খাদ্য সংকটে মারা গেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটছে বলে জানিয়েছেন গাজার স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
বুধবার (২৩ জুলাই) গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৪ ত্রাণপ্রত্যাশীসহ অন্তত ১০০ ফিলিস্তিনি ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য মতে, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ২১টি শিশু অপুষ্টিতে ভুগে মারা গেছে। মার্চ থেকে মে পর্যন্ত প্রায় ৮০ দিন তারা ত্রাণ সরবরাহ করতে পারেনি। এর ফলেই অপুষ্টিতে মৃত্যুর ঘটনা বেড়েছে। সংস্থাটি জানায়, গাজায় খাদ্য সরবরাহ পুনরায় চালু হলেও তা চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট নয়।
মার্সি কর্পস, নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল, রিফিউজি ইন্টারন্যাশনালসহ ১১১টি মানবিক সংস্থা এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘ক্ষুধাস্ত্র’ ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছে, যা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।
বিবৃতিতে বলা হয়, উপত্যকায় ‘গণঅনাহার’ ছড়িয়ে পড়ছে। অথচ হাজার হাজার টন খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও চিকিৎসাসামগ্রী গাজা সীমান্তের কাছেই ফেলে রাখা হয়েছে। সেখানে সাহায্য সংস্থাগুলোর কার্যক্রমকেও বাধা দেওয়া হচ্ছে।
পড়ুন: ‘ফিলিস্তিনপন্থি’ বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করল কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
গত মার্চে ইসরায়েল গাজায় ত্রাণ সহায়তা প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এরপর আন্তর্জাতিক চাপের মুখে গত ২৬ মে থেকে ইসরায়েলের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচটি) নামে নতুন ত্রাণ বিতরণ কাঠামো চালু হয়েছে।
গাজায় চলমান চরম মানবিক সংকটের মধ্যে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো জানিয়েছে, ইসরায়েল গাজায় খাদ্য সরবরাহ কার্যত বন্ধ করে দিয়েছে, যেখানে সীমান্তে ত্রাণবাহী ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকলেও তা বিতরণের সুযোগ নেই।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির পরিচালক রস স্মিথ বলেন, ‘মে মাস থেকে ত্রাণ সাহায্য বিতরণকেন্দ্রে গুলিতে শত শত ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
ডব্লিউএইচওর ফিলিস্তিন প্রতিনিধি রিক পিপারকর্ন বলেন, ‘ত্রাণ নিতে আসা ব্যক্তিদের ওপর বারবার হামলার ফলে গাজায় অবশিষ্ট কয়েকটি হাসপাতাল ‘বৃহৎ ট্রমা ওয়ার্ডে’ পরিণত হয়েছে।
তিনি জানান, খাদ্যাভাব এতটাই প্রকট যে শিক্ষক, সাংবাদিক, এমনকি স্বাস্থ্যকর্মীরাও স্বাভাবিক কাজ করতে পারছেন না।
গাজার আল-শিফা হাসপাতালের যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী চিকিৎসক নূর শরাফ বলেন, ‘মানুষ কয়েকদিন ধরে কিছু খেতে পায়নি। অনেক সময় ডাক্তাররাও না খেয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করছেন।’
এদিকে গাজা সিটিসহ বিভিন্ন এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনীর তীব্র হামলা অব্যাহত। সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় আরও দুই ফিলিস্তিনি সাংবাদিক— ফটোজার্নালিস্ট তামের আল-জা’আনিন ও সম্পাদক ওয়ালা আল-জাবারিকে হত্যা করা হয়েছে।
এর ফলে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা বেড়ে ২৩১-এ দাঁড়িয়েছে।
এর মধ্যে আল-জা’আনিন বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফটোজার্নালিস্ট হিসেবে কাজ করতেন এবং ওয়ালা আল-জাবারি বিভিন্ন সংবাদপত্রে সম্পাদকীয়র দায়িত্বে ছিলেন।
পড়ুন: খাবার নিতে গিয়ে নিহত আরও ৯৩ ফিলিস্তিনি, ‘বর্বরতা’ বন্ধের আহ্বান পোপের
এমন পরিস্থিতিতে, গাজা যুদ্ধবিরতি ও বন্দিমুক্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে ইউরোপের পথে রওনা হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, তিনি মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ও বন্দিমুক্তি আলোচনার বিষয়ে আলোচনা করবেন।
কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় গাজায় যুদ্ধবিরতি ও অন্তত ৫০ বন্দির মুক্তি নিয়ে আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন দিচ্ছে। তবে মার্চে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ভেঙে দেওয়ার পর থেকে এ নিয়ে কোনো কার্যকর অগ্রগতি হয়নি।
১৪৪ দিন আগে