বৈদেশিক-সম্পর্ক
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলার বাংলাদেশ সফরের আগ্রহ প্রকাশ
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বাংলাদেশ সফরের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এ সফর দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক আরও জোরদার করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।
স্থানীয় সময় সোমবার (১৩ অক্টোবর) রোমে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) আয়োজিত বিশ্ব খাদ্য ফোরামের (ডব্লিউএফএফ) প্রধান অনুষ্ঠানের ফাঁকে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠককালে প্রেসিডেন্ট লুলা এ এ আগ্রহের কথা জানান।
প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, এই দুই নেতা বিশ্ব খাদ্য ফোরামে মূল বক্তব্য প্রদান করেন এবং পরে এফএও সদরদপ্তরে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসেন। সেখানে সামাজিক ব্যবসা, সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা, সামাজিক অন্তর্ভুক্তি ও দারিদ্র্য মোকাবিলায় কৌশলসহ পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
আরও পড়ুন: যুদ্ধ বন্ধ করুন, খাদ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করুন সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে: বিশ্বনেতাদের প্রতি অধ্যাপক ইউনূস
বৈঠকে পারস্পরিক সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের জন্য প্রেসিডেন্ট লুলাকে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানান প্রধান উপদেষ্টা। লুলা দা সিলভা আমন্ত্রণ গ্রহণ করে আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যেই বাংলাদেশ সফরের ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
প্রেসিডেন্ট লুলা বলেন, ‘আমি বাংলাদেশে যাব।’ ব্রাজিল তার নাগরিকদের জন্য সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে এবং বাংলাদেশের সামাজিক ব্যবসা ও ক্ষুদ্রঋণের পথপ্রদর্শক অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে আগ্রহী বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ‘দারুণ হবে!’
দুই নেতা গভীর সমুদ্র মৎস্য আহরণ, ফার্মাসিউটিক্যাল খাত—বিশেষ করে টিকা পেটেন্টমুক্ত ও সাশ্রয়ী করার উদ্যোগ—জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা (আসন্ন কপ-৩০ সম্মেলনের প্রেক্ষাপটে) এবং ২০২৪ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশে সংঘটিত তরুণদের নেতৃত্বে গণআন্দোলনসহ বিভিন্ন বিষয়েও সহযোগিতার সুযোগ নিয়ে আলোচনা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বৈঠকে স্মরণ করেন, তিনি ২০০৮ সালে তৎকালীন ব্রাজিল প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন এবং ২০২৩ সালের অক্টোবরে ব্রাজিলের বিভিন্ন শহরে সফর করেছেন।
৬২ দিন আগে
যুদ্ধ বন্ধ করুন, খাদ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করুন সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে: বিশ্বনেতাদের প্রতি অধ্যাপক ইউনূস
বিশ্বনেতাদের প্রতি যুদ্ধ বন্ধ করে ক্ষুধা দূর করার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, প্রতি বছর বিশ্বে সামরিক ব্যয়ে ব্যয় হয় ২.৭ ট্রিলিয়ন ডলার, অথচ ক্ষুধা দূর করতে কয়েক বিলিয়ন ডলারও জোগাড় করা যায় না। পাশাপাশি বিদ্যমান কাঠামোর রূপান্তর ঘটিয়ে বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ছয় দফা প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি।
সোমবার (১৩ অক্টোবর) জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) আয়োজিত ২০২৫ সালের ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরামে (ডব্লিউএফএফ) মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি এ আহ্বান জানান।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘ক্ষুধা দূর করতে আমরা কয়েক বিলিয়ন ডলারও তুলতে পারি না, অথচ অস্ত্র কেনায় সারা বিশ্বে ব্যয় হয়েছে ২.৭ ট্রিলিয়ন ডলার। এটাকেই কি আমরা উন্নয়ন বলব?’
তিনি বলেন, ‘ক্ষুধা ও সংঘাতের দুষ্টচক্র ভাঙতে হবে। আমাদের অবশ্যই যুদ্ধ থামাতে হবে, সংলাপ শুরু করতে হবে এবং সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে খাদ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে।’
ছয় দফা প্রস্তাব তুলে ধরে অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করুন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিন এবং ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে টিকে থাকার সক্ষমতা গড়ে তুলতে সহায়তা করুন।’
এ সময় খাদ্য সরবরাহের শৃঙ্খল (সাপ্লাই চেইন) স্থিতিশীল রাখতে আঞ্চলিক খাদ্য ব্যাংক গঠনের প্রস্তাব দেন তিনি। এছাড়া অর্থায়ন, অবকাঠামো ও বৈশ্বিক অংশীদারত্বের মাধ্যমে স্থানীয় উদ্যোক্তা, বিশেষত তরুণ উদ্যোক্তা গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘বাণিজ্যনীতি যেন খাদ্য নিরাপত্তাকে ব্যাহত না করে, বরং সহায়তা করে।’
তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের সুযোগ নিশ্চিত করুন, বিশেষ করে গ্লোবাল সাউথের, গ্রামের তরুণ-তরুণীদের জন্য।’
৬৩ দিন আগে
রোমে এফএও সদরদপ্তরে প্রধান উপদেষ্টাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা
ইতালির রোমে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সদরদপ্তরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়েছে।
সোমবার (১৩ অক্টোবর) প্রধান উপদেষ্টা এফএও সদরদপ্তরে পৌঁছালে সংস্থাটির মহাপরিচালক ড. কু দংইউ প্রধান ফটকে এসে তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এ তথ্য জানান।
এফএও সদরদপ্তরে ব্রাজিলের কৃষিবিজ্ঞানী ও লেখক জোসে গ্রাজিয়ানো দা সিলভার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন প্রধান উপদেষ্টা।
আরও পড়ুন: আইএফএডিকে সামাজিক ব্যবসা তহবিল গঠনের আহ্বান জানালেন প্রধান উপদেষ্টা
বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টার পর ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরামের (ডব্লিউএফএফ) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি মূল বক্তব্য দেবেন।
৬৩ দিন আগে
আইএফএডিকে সামাজিক ব্যবসা তহবিল গঠনের আহ্বান জানালেন প্রধান উপদেষ্টা
আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিলকে (আইএফএডি) বাংলাদেশের তরুণ কৃষি উদ্যোক্তাসহ নারী, কৃষক ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণে যুক্ত ব্যক্তিদের সহায়তার জন্য সামাজিক ব্যবসা তহবিল গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
স্থানীয় সময় রোববার (১২ অক্টোবর) ইতালির রোমে ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরামের সাইডলাইনে আইএফএডি প্রেসিডেন্ট আলভারো লারিওর সঙ্গে বৈঠকে তিনি এই প্রস্তাব দেন।
বৈঠকের এ তথ্য জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, সামাজিক ব্যবসা তহবিল গঠনের জন্য তিনি আইএফএডিকে উৎসাহিত করেন। এ ধরনের একটি তহবিল দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবাসহ বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখবে এবং তরুণ, কৃষক, নারী ও মৎস্যখাতের সঙ্গে জড়িতদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করবে বলেও মনে করেন তিনি।
বৈঠকে দুই নেতা বাংলাদেশের গভীর সমুদ্র মৎস্য আহরণ শিল্প চালু করা, আম ও কাঁঠালের রপ্তানি বৃদ্ধি, জলবায়ু সহনশীল কৃষি উদ্যোক্তা তৈরি এবং মহিষের দুধ থেকে মোজারেলা চিজসহ দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনে খামারিদের সহায়তা– এসব কৌশলগত বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
আরও পড়ুন: রোমের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন প্রধান উপদেষ্টা
এ সময় আইএফএডি প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান প্রধান উপদেষ্টা। পাশাপপাশি কৃষি, সামাজিক ব্যবসা ও প্রযুক্তি খাতে সহযোগিতার সম্ভাবনা যাচাইয়ে একটি প্রতিনিধি দল পাঠানোরও আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টার আহ্বানের প্রতিক্রিয়ায় আইএফএডি প্রেসিডেন্ট বলেন, তারা বাংলাদেশে সামাজিক ব্যবসা উদ্যোগে অংশীদার হতে এবং বেসরকারি খাতের সঙ্গে সহযোগিতা জোরদারে আগ্রহী।
তিনি জানান, বর্তমানে বাংলাদেশে ছয়টিরও বেশি কৃষি প্রকল্পে অর্থায়ন করছে আইএফএডি।
বৈঠকে ফল প্রক্রিয়াজাতকরণ, কোল্ড স্টোরেজ, গুদামজাতকরণ এবং আম-কাঁঠালের মতো গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ফলের রপ্তানি সম্প্রসারণে প্রযুক্তিগত সহায়তা ও বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে আম রপ্তানি শুরু করেছি, তবে পরিমাণ এখনো সীমিত। চীন বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণে আম ও কাঁঠাল আমদানিতে আগ্রহ দেখিয়েছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ফরিদা আখতারও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এবং কীভাবে বাংলাদেশি নারী দুগ্ধশিল্পীরা ভেড়ার দুধ থেকে মোজারেলা চিজ উৎপাদন করছেন তা উপস্থাপন করেন।
আরও পড়ুন: কর্মী নিয়োগে সৌদি আরবের সঙ্গে প্রথমবারের মতো চুক্তি সই
আইএফএডির সমর্থনের মাধ্যমে দেশে চিজ ও অন্যান্য দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে, বঙ্গোপসাগরের গভীর সমুদ্র মৎস্য আহরণের অনাবিষ্কৃত সম্ভাবনা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বিনিয়োগ ও প্রযুক্তিগত জ্ঞানের ঘাটতির কারণে বেশিরভাগ জেলে এখনো অগভীর পানিতে মাছ ধরেন। আমরা এখনো গভীর সমুদ্রে যেতে সাহস পাই না। আইএফএডির অর্থায়ন ও প্রযুক্তিগত সহায়তার মাধ্যমে এই খাতে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি সম্ভব।
১৯৭৮ সালে বাংলাদেশে আইএফএডির কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে তারা ৩৭টি প্রকল্পে অংশীদারিত্ব করেছে, যার মোট মূল্য ৪ দশমিক ২৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যার মধ্যে সরাসরি অর্থায়ন হয়েছে ১ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে দেশে ছয়টি প্রকল্প (মোট ৪১২ মিলিয়ন ডলার) চলমান রয়েছে এবং আরও একটি প্রকল্প পরিকল্পনায় রয়েছে।
এর আগে, ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরামের ফ্ল্যাগশিপ ইভেন্টে দিতে রোববার বিকেল ৫টার দিকে রোমে পৌঁছান প্রধান উপদেষ্টা। অনুষ্ঠানে তিনি বক্তৃতা দেবেন এবং উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
৬৩ দিন আগে
ভারত ভ্রমণে নতুন নিয়ম, বেনাপোলে যাত্রী যাতায়াত নেমেছে ২০ শতাংশে
বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতগামী যাত্রীদের যাতায়াত কমে নেমে এসেছে ২০ শতাংশে। ভিসা জটিলতা ও নতুন নিয়মের কারণে যাত্রী কমছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সম্প্রতি পাসপোর্টধারী যাত্রীদের ভারত ভ্রমণের আগে অনলাইনে আগমন ফরম পূরণ করা বাধ্যতামূলক করেছে ভারতীয় দূতাবাস। গত ১ অক্টোবর থেকে এই নিয়ম কার্যকর হওয়ার পর থেকেই এটিকে ভোগান্তি ও হয়রানি বলে অভিযোগ করে আসছেন যাত্রীরা।
পাসপোর্ট যাত্রীরা জানান, ভ্রমণের ৭২ ঘণ্টা আগে ‘ইন্ডিয়ান ভিসা অনলাইন এরাইভেল’ ওয়েবসাইটে গিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করে ফরমের প্রিন্ট কপি সঙ্গে নিতে হচ্ছে। কিন্তু সার্ভার সচল না থাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে তাদের।
আগে ভারতগামী যাত্রীদের ইমিগ্রেশনে গিয়ে হাতে লিখেই আগমন ফরম পূরণ করতে হতো বলেও জানান তারা।
গত বছরের ৫ আগস্ট-পরবর্তী প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণ দেখিয়ে ট্যুরিস্ট, বিজনেস ও স্টুডেন্ট ভিসা বন্ধ করে দেয় ভারত সরকার। মেডিকেল ভিসা চালু থাকলেও নানা শর্ত যুক্ত হওয়ায় সেই ভিসা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এছাড়া ভিসা ফি ও ভ্রমণ ফি বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।
ভুক্তভোগী পাসপোর্টধারী সুনীতি পাল বলেন, স্ত্রীকে চিকিৎসার জন্য ভারতে নিতে গিয়ে নতুন ফরম পূরণে ১০০ টাকা খরচ করতে হয়েছে। সার্ভার সমস্যার কারণে এক ঘণ্টা অপেক্ষা করে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।
আরেক এক যাত্রী উজ্জল কুমার অভিযোগ করে বলেন, ভিসা পেতে আমার প্রায় ১৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ভোগান্তির শেষ নেই। হয় ভিসা সহজ করুক, না হয় বন্ধ করে দিক। একের পর এক শর্তে ভ্রমণ ও ভিসা প্রাপ্তি দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে।
বেনাপোল বন্দরের পরিচালক শামীম হোসেন বলেন, ভিসা প্রাপ্তির হার কমে আসায় পাসপোর্টধারী যাত্রী চলাচলও স্বাভাবিকভাবে কমে এসেছে। শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত তিনদিনে তিন হাজার ৭৮১ জন পাসপোর্টযাত্রী যাতায়াত করেছেন।
তিনি জানান, একের পর এক শর্ত আরোপের ফলে ভারতগামী যাত্রীদের যাতায়াত কমে এখন ২০ শতাংশে নেমে এসেছে। স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করলেও বর্তমানে তা নেমে এসেছে এক হাজারের নিচে।
৭০ দিন আগে
কর্মী নিয়োগে সৌদি আরবের সঙ্গে প্রথমবারের মতো চুক্তি সই
বাংলাদেশ থেকে সাধারণ কর্মী নিয়োগে সৌদি আরবের সঙ্গে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিক চুক্তি হয়েছে। সোমবার (৬ অক্টোবর) রিয়াদে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
বাংলাদেশের পক্ষে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং সৌদি আরবের পক্ষে মানবসম্পদ ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার আহমেদ বিন সোলাইমান আল-রাজী চুক্তিতে সই করেন।
রিয়াদে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, সৌদি আরব-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের দীর্ঘ ৫০ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম সাধারণ কর্মী নিয়োগসংক্রান্ত কোনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি সই হলো।
বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরবে ১৯৭৬ সাল থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে কর্মী নিয়োগ শুরু হলেও সাধারণ কর্মী নিয়োগসংক্রান্ত কোনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি ছিল না। ২০১৫ সালে গৃহকর্মী নিয়োগ এবং ২০২২ সালে দক্ষতা যাচাইসংক্রান্ত দুটি বিশেষ চুক্তি সই হয়।
দূতাবাস জানায়, নতুন চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে বিভিন্ন পেশায় দক্ষ কর্মী নিয়োগ বৃদ্ধি পাবে এবং কর্মী ও নিয়োগকর্তার অধিকার ও স্বার্থ অধিকতর সুরক্ষিত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এটি ভ্রাতৃপ্রতিম উভয় দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে।
৭০ দিন আগে
রোহিঙ্গাদের জন্য যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের ৯৬ মিলিয়ন ডলারের নতুন সহায়তা ঘোষণা
রোহিঙ্গাদের জন্য ৯৬ মিলিয়ন ডলারের নতুন সহায়তা ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। এরমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ৬০ মিলিয়ন ডলার ও যুক্তরাজ্য ৩৬ মিলিয়ন ডলারের অনুদান ঘোষণা করেছে।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে রোহিঙ্গা বিষয়ে প্রথম উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রোহিঙ্গাদের সঙ্গে হওয়া অন্যায় অবিচাররের প্রসঙ্গ দিয়ে সম্মেলনের সূচনা করেন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি আনালেনা বেয়ারবক। মিয়ানমারের ক্রমবর্ধমান সংকট গোটা অঞ্চলের স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে বলে সতর্ক করেন তিনি।
বেয়ারবক বলেন, ৫০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশু একই ধরনের অভিজ্ঞতা বহন করছে। শুধু বাংলাদেশের কক্সবাজার শরণার্থী শিবিরেই ৮ লাখ শিশু বিদ্যালয়ের বাইরে আছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি জানান, ২০২৫ সালের মানবিক সহায়তা পরিকল্পনা এখনো মাত্র ১২ শতাংশ অর্থায়ন পেয়েছে। এটি সবাইকে ‘লজ্জিত’ করার মতো বিষয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ সময় সহায়তা বাড়াতে উপস্থিত দেশগুলোর প্রতি তিনি আহ্বান জানান। সেইসঙ্গে নিরাপদ, স্বেচ্ছামূলক ও টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য রাজনৈতিক সমাধানের ওপর জোর দেন।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, এই সংকটের কেন্দ্রে রয়েছেন রোহিঙ্গা মুসলিমরা, যাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব অস্বীকার করা হয়েছে, ঘরবাড়ি থেকে উৎখাত করা হয়েছে এবং আশ্রয়শিবির কিংবা নির্বাসনে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে বসবাস করছে, আর অসংখ্য মানুষ মিয়ানমারের ভেতরে বাস্তুচ্যুত অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছে।
আরও পড়ুন: নিউইয়র্কে রোহিঙ্গা সম্মেলনের লক্ষ্য রাজনৈতিক সমাধান: মৌনির সাতৌরি
রোহিঙ্গাকর্মীদের সঙ্গে উদ্যোগে পদক্ষেপ নিতেই জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে জাতিসংঘের শীর্ষ কর্মকর্তারা, রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা একত্রিত হয়েছিলেন
এ সময় প্রতিবেদন ও সংবাদ সম্মেলনে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে রোহিঙ্গাদের ভয়াবহ বাস্তবতা তুলে ধরা হয়। যারমধ্যে রয়েছে জোরপূর্বক নিয়োগ, যৌন সহিংসতা, বিমান হামলা, অনাহার আর গণ-বাস্তুচ্যুতি।
রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তার তহবিল ফুরিয়ে আসছে বলে সতর্ক করে মানবিক সংস্থাগুলো বলেছে, শরণার্থীরা অপুষ্টিতে ভুগছে এবং অনেকেই বিপজ্জনক সমুদ্রযাত্রাযর দিকে ঝুঁকছে।
রোহিঙ্গাদের মূল আবাসভূমি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের অবস্থা কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বলে উল্লেখ করেছে মানবিক সংস্থাগুলো। সেখানে সাধারণ মানুষজন সেনাবাহিনী ও জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বের মাঝে আটকা পড়েছে বলে মন্তব্য করা হয়।
মানবাধিকার পদদলিত
জাতিসংঘ মহাসচিবের ক্যাবিনেট প্রধান কোর্টনি রাট্রের মাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের এই সংকট লাখ লাখ মানুষের মানবাধিকার, মর্যাদা ও নিরাপত্তাকে পদদলিত করেছে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
অবিলস্বে ৩টি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। সেগুলো হলো—আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বেসামরিক মানুষকে সুরক্ষা, মানবিক সহায়তার প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা এবং শরণার্থী ও আশ্রয়দাতা সম্প্রদায়ের ওপর চাপ কমাতে বিনিয়োগ বাড়ানো।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের তবহিল নভেম্বরের মধ্যেই ফুরাবে, বিশ্বজুড়ে জরুরি পদক্ষেপের আহ্বান ডব্লিউএফপির
বিবৃতিতে জোর দিয়ে আরও বলা হয়, রোহিঙ্গা সংকটের উৎপত্তি মিয়ানমারে, সমাধানও সেখানেই নিহিত। রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করতে হবে এবং পূর্ণাঙ্গ নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে।
জরুরি পদক্ষেপের দাবি
রোহিঙ্গা কর্মীদের কাছে এই সম্মেলন কেবল সচেতনতা তৈরির সুযোগ নয়, বরং ন্যায়বিচারের দাবি জানানোর একটি মঞ্চ।
মিয়ানমার উইমেনস পিস নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা ওয়াই ওয়াই নু প্রতিনিধিদের বলেন, ২০১৭ সালে যখন ৭ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশু সহিংসতা থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসে, সেখানে কিন্তু নৃশংসতা শেষ হয়নি বরং আরও ভয়াবহ হয়েছে।
তিনি বলেন, মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ও সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে রোহিঙ্গাদের হত্যা, জোরপূর্বক সেনা নিয়োগ, যৌন সহিংসতা ও অনাহারে ফেলে দেওয়ার ঘটনা অব্যাহত রয়েছে।
ওয়াই নু সতর্ক করে বলেন, এখনই কোনো পদক্ষেপ না নিলে ততক্ষণ পর্যন্ত রোহিঙ্গারা নিজভূমির বাইরে পাড়ি জমাতেই থাকবে, যতক্ষণ না মিয়ানমারে আর কোনো রোহিঙ্গা অবশিষ্ট থাকে।
তাছাড়া সীমান্ত পেরিয়ে মানবিক সহায়তা করিডর, লক্ষ্যভিত্তিক নিষেধাজ্ঞা ও নৃশংসতার বিচার দাবিও জানান তিনি।
মানবতার জন্য পরীক্ষা
আরাকান ইয়ুথ পিস নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা রফিক হুসন নিজ অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে জানান, কীভাবে জান্তা বাহিনী রোহিঙ্গা পুরুষ ও ছেলেদের জোর করে সেনা হিসেবে প্রায়শই মানবঢাল বানিয়ে ব্যবহার করেছে। এক সপ্তাহেই অন্তত ৪০০ জন নিহত হয়েছে বলে তিনি জানান।
আরও পড়ুন: টেকসই সমাধানে রোহিঙ্গাদের ক্ষমতায়িত কণ্ঠস্বরকে গুরুত্ব দিচ্ছে ইইউ
গ্রাম পোড়ানো, ড্রোন হামলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০২৪ সালের মে মাসের এক হামলায় একদিনেই ২ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিল।
হুসন আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তাহীনতার এ সংকট নিরসন করা কেবল এই পরিষদের নয়, মানবতারও পরীক্ষা।
এ সময় উত্তর রাখাইনে আন্তর্জাতিক তদারকিতে নিরাপদ অঞ্চল তৈরির আহ্বান জানান তিনি।
শান্তির কোনো স্পষ্ট রূপরেখা নেই
জাতিসংঘের বিশেষ দূত জুলি বিশপ বলেন, মিয়ানমারের বহুমাত্রিক সংকট ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর সৃষ্ট রাজনৈতিক অস্থিরতার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
কোনো যুদ্ধবিরতি না থাকার কারণে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ছে। এ বছর পরবর্তী নির্বাচনের পরিকল্পনা বৈধতা নয়, সহিংসতা বাড়াবে বলেও সতর্ক করেন তিনি।
শান্তির কোনো স্পষ্ট রুপরেখা নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তাছাড়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মিয়ানমারের জান্তা সরকাররে প্রতি নিন্দা ক্রমশ কমছে, অথচ নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে বলেও দুঃখ প্রকাশ করেন জুলি।
অবশ্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা জাগ্রত করা গেলে এখনো সমাধান সম্ভব বলে মনে করেন অনেকে।
সম্মেলনের সমাপনী বক্তব্যে বেয়ারবক বলেন, রোহিঙ্গারা আট বছরের দুঃসহ জীবন, বাস্তুচ্যুতি ও অনিশ্চয়তা সহ্য করেছে। তাদের সহনশীলতা বিস্ময়কর। আমাদের প্রতিক্রিয়াও সেই মানের হতে হবে।
এ দিকে শুধু ঘোষণা যথেষ্ট নয় বলে জানিয়েছে রোহিঙ্গা কর্মীরা। ওয়াই ওয়াই নু বলেন, ন্যায়বিচার কোনো ঐচ্ছিক বিষয় নয়। সেটিই একমাত্র প্রতিরোধ, একমাত্র শান্তির পথ।
৭৫ দিন আগে
আসন্ন নির্বাচন ঘিরে জাতিসংঘ মহাসচিবের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আগামী কয়েক মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে উল্লেখ করে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের কাছে সহায়তা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় বাংলাদেশে চলমান গণতান্ত্রিক উত্তরণ ও সংস্কার উদ্যোগে পূর্ণ সমর্থন ও সংহতি প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব।
স্থানীয় সময় সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ সংহতি প্রকাশ করেন।
বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আগামী কয়েক মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন আয়োজনে আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন।’
তিনি অভিযোগ করেন, ক্ষমতাচ্যুত শাসকগোষ্ঠী ও তাদের দোসররা চুরি করা অর্থ ব্যবহার করে ভুয়া তথ্য ছড়ানোর মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
এর জবাবে মহাসচিব গুতেরেস বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ ও সংস্কার উদ্যোগের প্রতি জাতিসংঘের দৃঢ় সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। পাশাপাশি রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে বৈশ্বিক পর্যায়ে জাতিসংঘের ধারাবাহিক ভূমিকারও প্রতিশ্রুতি দেন।
আরও পড়ুন: সম্পদ তার প্রকৃত মালিকদের ফিরিয়ে দিন: প্রধান উপদেষ্টা
বৈঠকে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া এবং এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ।
বৈঠকে রাজনৈতিক সংস্কার, আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন, জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত নৃশংসতার দায় নিরূপণ, সংরক্ষণবাদী শুল্ক নীতির কারণে বৈশ্বিক বাণিজ্য উদ্বেগ এবং আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় আন্তর্জাতিক রোহিঙ্গা সম্মেলনসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়।
প্রধান উপদেষ্টা মহাসচিবকে জানান, অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে যেসব সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে, তা অব্যাহত থাকবে এবং তারা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টার ১৪ মাসের প্রচেষ্টা ও নেতৃত্বের প্রশংসা করে গুতেরেস বলেন, বাংলাদেশের এ কঠিন উত্তরণ প্রক্রিয়ায় অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বকে তিনি সম্মান ও শ্রদ্ধার সঙ্গে দেখছেন।
আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর উচ্চপর্যায়ের আন্তর্জাতিক রোহিঙ্গা সম্মেলন আহ্বান করার জন্য মহাসচিবকে ধন্যবাদ জানান প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, এ সম্মেলন রোহিঙ্গা সংকটকে বৈশ্বিক আলোচনায় অগ্রাধিকারে এবং আশ্রয় শিবিরে মানবিক সহায়তার জন্য জরুরি তহবিল সংগ্রহে ভূমিকা রাখবে।
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশের প্রতি সমর্থন ও সংহতি অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতিও পুনর্ব্যক্ত করেন জাতিসংঘ মহাসচিব।
৭৬ দিন আগে
সম্পদ তার প্রকৃত মালিকদের ফিরিয়ে দিন: প্রধান উপদেষ্টা
অবৈধভাবে পাচার হওয়া সম্পদ গচ্ছিত রাখতে সুযোগ দেওয়া দেশ ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে ওই সম্পদ প্রকৃত মালিকদের ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। বিশ্বের বিদ্যমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থা উন্নয়নশীল দেশ থেকে সম্পদের এই অবৈধ পাচার কার্যকরীভাবে প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
স্থানীয় সময় শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে ৮০তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে (ইউএনজিএ) বক্তব্য দিতে গিয়ে এসব বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, ‘যেসব দেশ ও প্রতিষ্ঠান এ পাচারকৃত সম্পদ গচ্ছিত রাখবার সুযোগ দিচ্ছে, তাদের আমি আহ্বান জানাচ্ছি, তারা যেন এই অপরাধের শরিক না হয়— এ সম্পদ তার প্রকৃত মালিককে অর্থাৎ কৃষক, শ্রমিক ও সাধারণ করদাতাদের নিকট ফিরিয়ে দিন।’
তা ছাড়া অনেক ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়মই বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ ট্যাক্স হেভেনে পাচার করতে সুযোগ করে দিচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন অধ্যাপক ইউনূস।
তিনি বলেন, দেশের পাচার হওয়া অবৈধ সম্পদ পুনরুদ্ধার করা বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্যতম শীর্ষ অগ্রাধিকার।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘গত ১৫ বছরে দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি ডলার অবৈধভাবে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। আমরা নিরলসভাবে এই সম্পদ ফেরত আনার চেষ্টা করছি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর আইনি প্রক্রিয়া এবং অন্যান্য নানাবিধ প্রতিবন্ধকতার কারণে আমাদের এই প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর দৃঢ় সদিচ্ছা ছাড়া বাংলাদেশ এই সম্পদ পুনরুদ্ধার করতে পারবে না বলে মনে করেন তিনি।
আরও পড়ুন: শিক্ষার্থীদের কিছু কর্মকাণ্ডের কারণে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের উত্তেজনা দেখা দিয়েছে: অধ্যাপক ইউনূস
তিনি উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে সম্পদ পাচার ঠেকাতে এবং পাচার হওয়া সম্পদ ফেরত আনতে শক্তিশালী আন্তর্জাতিক নিয়ম-কানুন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের প্রস্তাব দেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘দায়িত্ব গ্রহণের পর আমরা একে একে আবিষ্কার করি দুর্নীতি ও জনগণের সম্পদ চুরি কি ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করেছিল এবং তার ফলশ্রুতিতে দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা কি ভয়ানক নাজুক ও ভঙ্গুর হয়ে পড়েছিল। আমরা এর অবসান ঘটাচ্ছি যেন আর কখনোই উন্নয়নকে জনগণের সম্পদ আত্মসাতের অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা না যায়।‘
তিনি আরও বলেন, দেশের নাজুক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মজবুত করতে তারা কঠিন হলেও প্রয়োজনীয় সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থার সংস্কার।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন সংস্থাকে পৃথক করার জন্য আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে, এবং রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি পাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এসব পদক্ষেপ সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এফএফডি৪ সম্মেলনে গৃহীত সেভিলা অঙ্গীকারের সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ যেভাবে সেভিলা অঙ্গীকার অনুযায়ী সংস্কার বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে, সেভাবে উন্নত দেশগুলোও যেন তাদের যৌথ অঙ্গীকার পূরণ করে— এমন আশা প্রকাশ করেছেন অধ্যাপক ইউনূস।
তিনি বলেন, `আন্তর্জাতিক অর্থায়ন ব্যবস্থায় বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া ও ব্যবস্থাপনার সংস্কার, একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক আন্তর্জাতিক কর সহযোগিতার বৈশ্বিক কাঠামো, অবৈধ আর্থিক প্রবাহ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সমন্বিত বৈশ্বিক পদক্ষেপ গ্রহণ এবং অবৈধ ও দুর্নীতিলব্ধ অর্থ ও পাচারকৃত সম্পদ পুনরুদ্ধারেও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।‘
৭৯ দিন আগে
শিক্ষার্থীদের কিছু কর্মকাণ্ডের কারণে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের উত্তেজনা দেখা দিয়েছে: অধ্যাপক ইউনূস
আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেনপ্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তবে তিনি উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের কিছু কর্মকাণ্ডের কারণে বর্তমানে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে এশিয়া সোসাইটি ও এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউট আয়োজিত অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে প্রফেসর ইউনূস বলেন, ‘এ ধরনের সহযোগিতার মাধ্যমে আঞ্চলিক অর্থনীতিতে সবাই উপকৃত হয়। তাই আমি বলেছি, আমাদের আঞ্চলিক অর্থনীতির কথা ভাবা উচিত। এটাই আমাদের করা উচিত। কিন্তু বর্তমানে আমাদের ভারতীয়দের সঙ্গে সমস্যা হচ্ছে, কারণ তারা শিক্ষার্থীদের কার্যকলাপ পছন্দ করছে না।’
তিনি আরও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও তরুণদের মৃত্যুর জন্য দায়ী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত আশ্রয় দিয়েছে। এটি ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ককে উত্তেজনাপূর্ণ করেছে। পাশাপাশি ভারত থেকে অনেক মিথ্যা খবরও ছড়ানো হয়েছে যা খুবই খারাপ বিষয়।
ভারতের সংবাদমাধ্যমে ইসলামি আন্দোলনের ভুয়া খবরের দিকে ইঙ্গিত দিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এসবের সঙ্গে তালেবানের প্রশিক্ষণ সম্পর্কিত খবর যুক্ত করা হয়েছে। ‘এমনকি তারা বলেছে, আমি নিজেও নাকি তালেবান। আমার দাড়ি নেই, বাড়িতে রেখে এসেছি,’ মজার ছলে বলেন তিনি।
এ সময় সার্কসহ আঞ্চলিক সংস্থার গুরুত্বও তুলে ধরেন তিনি। আঞ্চলিক অর্থনীতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘আপনারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারেন। বাংলাদেশও আপনার অঞ্চলে বিনিয়োগ করবে। এটাই সার্কের ধারণা।’
সার্ক সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সার্কের পুরো ধারণা বাংলাদেশে জন্মেছে এবং বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশের রাজধানীতে এই ধারণা প্রচার করেছে। সার্ক একটি পরিবারের মতো, যার মূল ভাবনা ছিল দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে একত্রিত করা। তরুণরা যেন একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারে, শিক্ষা ও ব্যবসায় অংশগ্রহণ করতে পারে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, একে অপরের দেশে সফর করা, বন্ধুত্ব গড়ে তোলা, বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে পড়াশোনা করা এবং দেশের মধ্যে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
হাসিনা ও তার ঘনিষ্ঠদের বিচার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার: ফিনিশ প্রেসিডেন্টকে প্রধান উপদেষ্টা
তিনি বলেন, ‘এটাই মূল ধারণা। তবে কিছুকাল আগে এটি কোনো এক দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খায়নি। তাই আমরা এটিকে স্থগিত করতে বাধ্য হই। আমরা দুঃখিত, এবং সবাইকে আবারও একত্রিত করতে চাই। এটাই আমাদের সমস্যার সমাধানের একমাত্র পথ।’
'আমি বলেছিলাম, প্রতিবেশী দেশগুলো যেমন নেপাল, ভুটান, এবং ভারতের সাতটি রাজ্যের কথাও ভাবুন। বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে সাতটি রাজ্য রয়েছে, যাদের সমুদ্র সংযোগ নেই। এগুলো ল্যান্ডলকড অঞ্চল।’
আসিয়ানের বর্তমান চেয়ার মালয়েশিয়া। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গেই সমঝোতায় আসা সহজ নয়, বিশেষ করে মায়ানমার, যাদের রোহিঙ্গা বিষয়ক সমস্যা রয়েছে, উল্লেখ করেন অধ্যাপক ইউনূস।
তিনি বলেন, ‘তারা হয়তো এগিয়ে আসবে না, তবে আমরা কাজ চালিয়ে যাব। আমরা মনে করি না, এটি মিয়াননমার ও বাংলাদেশের মধ্যে স্থায়ী দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করবে। আমাদের তা করার দরকার নেই। তাই সব সমস্যা সমাধান করতে হবে। রোহিঙ্গারা চাইলে মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারবে, তাদের ঘরবাড়ি, ব্যবসা ও পেশায় ফিরে যেতে পারবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মিয়ানমারের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকবে। একে অপরের সঙ্গে বিরোধ করা কারো জন্যই উপকারী নয়। তাই সমস্যার সমাধান করতে হবে।’
তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের অনানুষ্ঠানিকভাবে আসিয়ানের সদস্য হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে প্রধান উপদেষ্টাকে পাকিস্তানে আমন্ত্রণ
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমরা এটা করতে পারি। আসিয়ান একটি ভালো প্ল্যাটফর্ম, যেখানে আঞ্চলিক সমন্বয় ও আন্তঃসংযোগ গড়ে তোলা সম্ভব।’
একটি পৃথক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা জানান, দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিচার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার।
এ সময় তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
৮১ দিন আগে