অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করে এর পরিবর্তে দারিদ্র্য বিমোচন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব লাঘবে ব্যয় করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘জলবায়ুর প্রতিকূলতা থেকে মানবজাতিকে রক্ষার জন্য এখন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য অস্ত্র উন্নয়ন ও প্রতিযোগিতার জন্য অর্থ সরবরাহ করা যেতে পারে। আর এই অর্থ দরিদ্র শিশুদের খাবারের পাশাপাশি সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতেও ব্যবহার করা যাবে।’
বুধবার (২৯ মে) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস-২০২৪ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে আওয়ামী লীগ অঙ্গীকারবদ্ধ: প্রধানমন্ত্রী
যেসব দেশ অস্ত্র উন্নয়ন ও অস্ত্র প্রতিযোগিতায় বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করছে তাদের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘আমরা শান্তির কথা বলি। কিন্তু কেন আপনারা সংঘাতে জড়াচ্ছেন?’
শেখ হাসিনা বলেন, অস্ত্র প্রতিযোগিতার জন্য ব্যয় করা এই অর্থ যদি ক্ষুধার্ত মানুষের খাবার, শিক্ষা ও গরিবদের চিকিৎসার পেছনে ব্যয় করা হতো তাহলে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হতো। মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হতো এবং তারা উপযুক্ত উপায়ে জীবনযাপন করতে পারত।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, গাজায় ইসরাইলের গণহত্যা, মিয়ানমারের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সংঘাত ও যুদ্ধ আজ বিশ্বশান্তি বিঘ্নিত করছে।’
তিনি বলেন, যুদ্ধ ও সংঘাত মানবজাতির জন্য ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
সংঘাত ও যুদ্ধের কারণে তরুণরা প্রাণ হারাচ্ছে এবং নারী ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অস্ত্র প্রতিযোগিতা যত বাড়তে থাকে, মানুষের জীবন ততই দুর্বিষহ হয়ে উঠছে।’
আরও পড়ুন: মার্কিন ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা ও বিরোধ নিষ্পত্তির প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। আমরা আলোচনার মাধ্যমে সবকিছুর সমাধান করতে চাই। বিশ্বের বিপুলসংখ্যক মানুষ এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে।’
অনুষ্ঠানে যুদ্ধাহত তিনজন শান্তিরক্ষীকে পদক দিয়ে সম্মাননা প্রদান করা হয় এবং প্রধানমন্ত্রী তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
প্রধানমন্ত্রী 'আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস জার্নাল-২০২৪' (খণ্ড-১০) উন্মোচন করেন।
বর্তমানে বিশ্বের ১৩টি দেশে ৪৯৩ জন নারীসহ ৬ হাজার ৯২ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিয়োজিত রয়েছেন। বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের মধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৪ হাজার ৯৭০ জন, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ৩৫২ জন, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ৪০৬ জন এবং বাংলাদেশ পুলিশের ৩৬৪ জন সদস্য রয়েছেন।
এ পর্যন্ত ১৬৮ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিহত হয়েছেন।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধগুলো দ্রুত মেরামতের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর